দূরত্ব পর্ব-১১+১২

0
155

#দূরত্ব
#part:11+12
#writer:Maliha Islam Tafsi (jeba)

রাহাত আর প্রীতি গাড়ি তে বসে আছে। রাহাত ড্রাইভ করছে। প্রীতি জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাহিরের সৌন্দর্য উপভোগ করছে আর রাহাত প্রীতির দিকে কিছুক্ষণ পর পর তাকিয়ে তার বেগুনী পরীর সৌন্দর্য উপভোগ করছে।।

-আচ্ছা পুচকি ☺
-কিইইইইই😠
-না না পুচকি না প্রীতি😃
-😅😅😅
-হাসছো যে?
-আপনার মুখ টা দেখে।।
-আমার মুখ টা দেখে হাসার কি হলো? (ভ্রু কুঁচকে বলল রাহাত)
-আমি যখন রাগ দেখাইছি তখন আপনার মুখ টা ভয়ে একদম বাচ্চাদের মতো হয়ে গিয়েছিল।
(কথা টা বলে আবার হাসতে লাগল প্রীতি)

-এইভাবে সবসময় হেসো বেগুনী পরী। তোমার দুঃখজনক মুখ টা আমাকে খুব কষ্ট দেয় আর তোমার হাসিজনক বুক টা আমার হৃদয়ে শান্তির ঢেউ এনে দেয়।(ড্রাইভ করছে আর সামনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল রাহাত)


রাহাত এর কথা শুনে প্রীতি আবার জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইল একদম নিশ্চুপ হয়ে।এইভাবে কিছুক্ষণ নিরবতা রইল দুজনের মাঝে।
নিরবতা ভেঙে রাহাত আবার প্রীতি কে ডাক দিলো।
প্রীতি বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল- বলুন ?
:
-ফুচকা খাবে?

(রাহাত জানে প্রীতি ফুচকা খেতে খুব পছন্দ করে। কারন সে তার বেগুনী পরী টা কে প্রথম ফুচকা খাওয়া দেখেই প্রেমে পরেছিল । তার পরীটা যখন ফুচকা খাচ্ছিল তখন পরী টার মুখ টা আরো সুন্দর লাগছিল )

-না খাবো না।(রাহাত এর দিকে না তাকিয়ে বলল প্রীতি)
-কেনো খাবে না?
-ভালো লাগছে না।
-তুমি জানো আমাকে ফুচকা খাওয়ায় কেউ হারাতে পারে না । আমি মেয়েদের চেয়ে বেশি ফুচকা খায়।
-তাই নাকি?
-হুম,,,তাই।
-তাহলে চলুন কম্পিটিশন হয়ে যাক।
-চলো।



রাহাত আর প্রীতি দুইজনে ত্রিশ টা করে মোট ষাট টা ফুচকা খেলো😋। কেউ কাউকে হারাতে পারলো না। প্রীতি আর রাহাত গাড়িতে এসে বসল।
-বাব্বা,,,,আপনি এতো ফুচকা খেতে পারেন? (প্রীতি)
-হুম। আমার কাছে ফুচকা অনেক ভালো লাগে। আগে লাইক করতাম না কিন্তু একদিন একটা ফুচকা পাগলি কে দেখে ফুচকার প্রেমে পরে গেলাম ।
-কে সেই ফুচকা পাগলি? (হেসে জিজ্ঞেস করল প্রীতি)
-আমার পাশেই বসে আছে ফুচকা পাগলি টা। যার ফুচকা খাওয়া দেখে আমি ফুচকার প্রেমে পরে গেছি।

রাহাত এর কথায় লজ্জা পেয়ে প্রীতি আর কিছু বলল না। গাড়ি এসে প্রীতিদের বাসার কাছে পৌছালো । প্রীতি আর গাড়ি থেকে নেমে ব্যাগ গুলো নিয়ে নিলো। তারপর দুজনে মিলে উপরে চলে গেল।
প্রীতির মা রান্না ঘরে রান্না করছে মেয়ে আর জামাই আসবে তাই। প্রীতির বাবা সোফায় বসে পেপার পড়ছে। হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে তিনি গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। প্রীতি তার বাবাকে দেখে জরিয়ে ধরল বাবা বলে। তার বাবা ও মেয়ে কে দেখে খুশিতে চোখের জল ফেলতে লাগলেন।




বাবা মেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে খুশিতে কাদছো আর আমার জামাই টা কে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখেছ কাজ টা কিন্তু ভালো করো নাই তোমরা ।
প্রীতির মায়ের কথায় প্রীতি..বাবা..রাহাত.. মা সবাই হেসে দেয়। রাহাত ভিতরে এসে প্রীতির বাবা মার পা ছুঁয়ে সালাম করল।

-আচ্ছা তোরা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি নাস্তার ব্যবস্থা করছি।(প্রীতির মা)
-মা এখন আমরা কিছু খাবো না।(প্রীতি)
-কেন রে মা?খাবি না কেন? (প্রীতির বাবা)
-বাবা তোমার জামাই আসার সময় আমার সাথে ফুচকা নিয়ে কম্পিটিশন করেছিল।
-কে জিতল? (প্রীতির মা)
-কেউ নয় মা। আমাদের মধ্যে ড্র হয়েছে।(রাহাত)
-কি বলো জামাই তুমি এতো ফুচকা খেতে পারো?আমার মেয়ে তো ফুচকা পাগলি।।তুমিও কি আমার মেয়ের মতো ফুচকা পাগল নাকি? (প্রীতির বাবা)

প্রীতির বাবার কথা শুনে সবাই আবার হো হো করে হেসে উঠল।



প্রীতি আর রাহাত প্রীতির রুমে আসল। নিরব বাসায় নেই । নিরব বাসায় আসলে সবাই কে একসাথে গিফট গুলো দেওয়া হবে।
প্রীতি রুমে এসে রাহাত কে বলল আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আগে তারপর আমি ফ্রেশ হবো।
রাহাত প্রীতির কথায় আগে ফ্রেশ হতে গেল। প্রীতি বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগল-

আমরা মানুষ চিনতে কতো ভুল করি। যে আমাদের সত্যিকারে ভালোবাসে তাঁদের ভালোবাসা আমরা কখনও বুঝি না আর যে মিথ্যা ভালোবাসে আমরা তাদের একটু ভালোবাসার জন্য তাঁদের পিছনে ছুটে চলে যায় । রোহান শেখ আর ছুটবো না তোমার মিথ্যে ভালোবাসার পিছনে। আর রাহাত এর মতো এতো ভালো মানুষ টা কে ও ঠকাবো না আমি। হে আল্লাহ,,,আমাকে একটু রহমত করো। আমি যে জীবনে দুটানায় পড়ে আছি । আমার যে কারো মনে কষ্ট দেওয়ার একটু ও ইচ্ছে নেই। আমি যদি দূরে চলে যাই তাহলে আমার পরিবার রাহাত এর পরিবার রাহাত সবাই কষ্ট পাবে। আমি তাঁদের কষ্ট দিতে চাই না। আমি যেনো রাহাত কে স্বামীর অধিকার দিতে পারি।আমার কষ্টের জন্য আমি অন্য কাউকে কষ্ট পেতে দিবো না। রোহান ভালো থাকুক নাজিফা কে নিয়ে আর আমি যেনো ভালো থাকতে পারি রাহাত কে নিয়ে ।



কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো বন্ধ করল প্রীতি।
-কি হলো ফ্রেশ হবে না?
রাহাত এর কথায় প্রীতি চোখ খুলে রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলল -হু,,,
প্রীতির এক সেট থ্রি পিচ নিয়ে চলে গেল ফ্রেশ হতে। রাহাত ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে গিয়ে নিরব আর বাবার সাথে আড্ডা দিতে লাগল।সাথে নিহা ও।
প্রীতি ও ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে আসল। ও নীল কালার এর একটা থ্রি পিচ পড়েছে। রাহাত মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রীতির দিকে।
ওফফফ,,,এই মেয়ে টা একদম ঘায়েল করে দিয়েছে আমাকে।(মনে মনে বলল রাহাত)



নিহা প্রীতি কে দেখে জরিয়ে ধরে বলল-কেমন আছিস?
-ভালো।
-তুই কেমন আছিস?
-ভালো।
-তুই এইসময় আমাদের বাসায় ব্যাপার কি? (হেসে বলল প্রীতি)
-তুই এসেছিস শুনে আসলাম।(ভেংচি কেটে বলল নিহা)
-তুই কোথায় শুনলি যে আজকে আমি আসবো?
-নিরব ভাইয়ার কাছ থেকে রাস্তায় শুনলাম

-নিরব ভাইয়া???? (মূচকি হেসে বলল প্রীতি)
-তা নয়তো কি?
-বুঝেছি এইবার তোকে ভাবি বানিয়ে আনতেই হবে।
-ইশশশ,,,চুপ থাকবি তুই?
-হু,,,

রাহাত এর প্রীতি মিলে সবাই কে গিফট গুলো দিল। আর নিহার জন্য ও একটা গিফ্ট আনল রাহাত। প্রীতির তো খেয়ালই ছিলো না। প্রীতি মনের অজান্তেই বলতে লাগলো সত্যি আপনি খুব ভালো রাহাত।।।।

চলবে,,,,,,,

#দূরত্ব
#part:12
#writer:Maliha Islam Tafsi (jeba)

সবাই মিলে ডিনার করল। ডিনার শেষে রাহাত রুমে এসে প্রীতির রুম টা খুব ভালো করে দেখতে লাগল। অনেক সুন্দর করে সাজানো প্রীতির রুম টা। এমনিতেই মেয়েরা অনেক গুছালো হয়। হঠাৎ প্রীতির পড়ার টেবিলের দিকে নজর গেল রাহাত এর। ঐখানেই গিয়ে রাহাত অসংখ্য গল্পের বই দেখতে পেল। একটা বই হাতে নিয়ে অনেক মুগ্ধ হলো রাহাত। সবগুলো বই এর নাম গুলো দেখল । এর মধ্যে একটা বই হাতে নিয়ে বইটা খুলল রাহাত। বই টার প্রেমাতাল। অনেক শুনেছি এই বইটার নাম বাট কখনও পড়া হয় নি মনে মনে বলল রাহাত।
বইটা খুলে অবাক হলো রাহাত একটা চিরকুট দেখে। চিরকুট টা খুলে পড়তে লাগল-

কলিজা তোমার ভালোবাসার মানুষের দেওয়া খুব স্পেশাল একটা গিফট। আশা করি তোমার খুব ভালো লাগবে আর তোমার কাছে আমার দেওয়া সবচেয়ে বেষ্ট গিফট মনে হবে। তোমার সবচেয়ে পছন্দকরে লেখক মৌরি মরিয়ম এর বই💕


লেখাটা দেখে মুচকি হাসল রাহাত তার মানে পুচকি টার প্রিয় লেখক মৌরি মরিয়ম । তার জন্য মৌরি মরিয়ম এর লেখা অভিমানিনী ,,তোমায় হৃদ মাঝারে বই ও দেখি আছে। তারপর হঠাৎ খেয়াল হলো রাহাত এর একটা কথা কলিজা তোমার ভালোবাসার মানুষের দেওয়া স্পেশাল একটা গিফট। তার মানে প্রীতির কারো সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল?প্রীতি অন্য কাউকে ভালোবাসে?তাহলে প্রীতি আমার সাথে বিয়েতে কেনো রাজি হলো? বিড়বিড় করে কথাগুলো বলল রাহাত।


বাকি বইগুলো ভালো করে দেখতে লাগল রাহাত কিন্তু বাকি গুলোতে আর এমন চিরকুট নেই।
তাহলে আমি কি ভুল বুঝছি প্রীতি কে? (মনে মনে বলল রাহাত)
তবুও সে ভালো করে আবার বইগুলো ঘাঁটতে লাগল। কিছু না পেয়ে বইগুলো গুছিয়ে রেখে দিল ঠিক আগের মতো। হঠাৎ তার নজর পড়ল বইগুলোর একদম নিচে রাখা একটা ডায়েরির দিকে। সে ডায়েরি টা নিতে যাবে তখনি প্রীতি রুমে আসল।

-কি করছেন?
-কিছু না। এইতো ল্যাপটপে আমাদের বিয়ের পিক দেখছি।
-ওহ,,,আচ্ছা । কফি খাবেন?
-হু,,,
-ওকে আমি নিয়ে আসছি। আর শুনুন।
-বলো,,,
-ছাদে যাবেন?
-ওকে,,,আমি যাচ্ছি তুমি কফি নিয়ে এসো।
-ওকে।।।


রাহাত ছাদে গিয়ে শুধু ওই চিরকুট এ লিখা কথাগুলো নিয়ে ভাবতে লাগল । যেভাবেই হোক জানতে হবে কেন প্রীতি আমাকে মেনে নিতে পারছে না আর কেনোই ও অন্য কাউকে ভালোবাসলে আমার সাথে বিয়েতে রাজি হলো?

-এই যে আপনার কফি। আপনার মতো এতো ভালো করে বানাতে পারি না আর কেমন হয়েছে জানাবেন।
-হুম,,,
রাহাত কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল-খুব ভালো হয়েছে।
রাহাত এর কথার স্টাইল টা কেমন যেন অন্য রকম লাগছে এখন প্রীতির কাছে।

-আচ্ছা আপনার কি কোনো কারণে মন খারাপ?
-আচ্ছা প্রীতি তুমি কি আমায় পছন্দ করো?
-আপনাকে না পছন্দ করার মতো কি আছে?সবাই তো আপনাকে খুব পছন্দ করে।
-আমি সেইভাবে বলি নাই।
-কিভাবে বলেছেন? (কফি কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল প্রীতি)
-আচ্ছা রোহান আর আমার মধ্যে কে বেশি স্মার্ট?
-,,,,,,,,,,,
;
;
রাহাত এর এমন প্রশ্ন শুনে মনের মধ্যে কেমন যেন ছ্যাত করে উঠল প্রীতির।
রাহাত আপনি ভালো । শুধু ভালো না খুব ভালো। আর আপনি খুব স্মার্ট ও কিন্তু আমার চোখে যে রোহান ই আমার দেখা সবচেয়ে স্মার্ট ছেলে। সবার চোখে নিজের ভালোবাসার মানুষই সবচেয়ে সুন্দর হয়। হোক না রোহান এর ভালোবাসা অভিনয় কিন্তু আমার ভালোবাসা যে সত্যি। পারছি না বের হতে এই ভালোবাসার মায়া জাল থেকে। যতইভাবি এগিয়ে যাবো আপনার হাত ধরে ততই বেশি মন জুরে থাকে রোহান শেখ(মনে মনে বলল প্রীতি)



প্রীতির খেয়াল হলো রাহাত এমন প্রশ্ন কেনো করল?ওনি কি তাহলে আমার আর রোহানের ব্যাপারে জেনে গেছে?না এইটা তো সম্ভব না কারণ আমি রোহান নিহা ছাড়া সম্পর্কের কথা তো কেউ জানে না। আর নিহা তো কখনও বলবে না। আমি হয়তো একটু বেশিই ভাবছি।


রাহাত প্রীতি কে ডেকে বলল কি হলো কিছু বলছো না যে?
-আপনারা দুই ভাই খুব স্মার্ট । কারো থেকে কেউ কম নয়।
রাহাত প্রীতির কথায় হাল্কা হেসে বলল-ছাদে অনেক ঠান্ডা চলো রুমে চলো। ঘুমাবো।
-ওকে চলুন।।

রাহাত রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
মাঝখানে কোল বালিশ রেখে তারপর প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল-বেগুনী পরী আজ অনেক ঠান্ডা ফ্লোরে ঘুমাতে পারবো না আর তোমার রুমে তো সোফা নেই তাই মাঝখানে কোল বালিশ রাখলাম। প্লিজ একটু এডজাস্ট করে নিও।
কথাগুলো বলে রাহাত অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়ল। প্রীতি আর কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে গেল।


সকাল হলে প্রীতির ঘুম ভেঙে গেলে প্রীতি ওঠে রাহাত কে বিছানায় দেখল না। তারপর দেখল ওয়াশরুমে ও নেই। পরে ভাবলো হয়তো ছাদে গেছে। ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রুমে গিয়ে দেখল বাবা চা খাচ্ছে । তারপর প্রীতি দেখে একটা চিরকুট প্রীতির দিকে এগিয়ে দিল তার বাবা। প্রীতি তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল কি এইটা বাবা?

– জামাই দিতে বলল তোমাকে।
-কেনো?ওনি কোথায়?
-বলে গেলো একটা কাজে নাকি যাচ্ছে ।

প্রীতি চিরকুট টা খুলে দেখল – বেগুনী পরী একটা কাজে বাহিরে যাচ্ছি তোমাকে না বলেই যেতে হলো তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তাই।

প্রীতি চিরকুট টা নিয়ে রুমে চলে গেল। কারণ তার চিরকুট নিয়ে কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল। বাবার সামনে চোখের জল ফেলতে চায় না তাই রুমে চলে আসল।


রাহাত এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে একজনের মুখোমুখি । আজ তার চোখে হাজারো প্রশ্ন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা ঠিকি বুজতে পারছে।।।

চলবে,,,,,,