দূরত্ব পর্ব-১৫+১৬

0
193

#দূরত্ব
#part:15+16
#writer: Maliha Islam Tafsi (jeba)


🌼
সকালে প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় চোখ মেলতে পারছিল না রাহাত। আস্তে আস্তে চোখ খুলে উঠে বসে মাথায় চেপে ধরে বসে রইল । হঠাৎ শরীরের দিকে তাকাতেই ভয়ে তার গাঁ শিউরে উঠল। কতক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে কি হয়েছিল রাতে সে এই অবস্থা তে কেন মনে করার চেষ্টা করল। মনে হতেই তার ঘৃণা হতে লাগল নিজের প্রতি।

একি করল সে? সে তো জোর করে নয় সম্মান আর ভালোবাসা দিয়ে প্রীতির মনে নিজের একটা জায়গা তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু নেশার ঘোরে একি করল সে?প্রীতি তো কখনও তাকে ক্ষমা করবে না বরং ঘৃণা করবে তাকে। কি করে বোঝাবে সে ইচ্ছে করে এমন করে নি? (কথাগুলো ভাবতেই রাহাত মাথা টা আরো ঝিমঝিম করতে লাগল)

হঠাৎ আবার খেয়াল হলো প্রীতি কোথায়? ও বিছানায় নেই। নিচে যায় নি তো?নাকি আমায় ঘৃণা করে আমাকে ছেড়ে চলে গেল? (কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রাহাত গায়ে একটা টি শার্ট জরিয়ে প্রীতি কে খুঁজতে যাবে তখন সে ভাবলো আগে একবার বারান্দায় দেখে নিই)

🌼

রাহাত বারান্দায় গিয়ে দেখল প্রীতি শরীরে কাপড় জরিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে কান্না করছে। প্রীতির এই অবস্থা দেখে রাহাত এর বুকের ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে গেল। রাহাত প্রীতির পাশে বসে আলতো করে প্রীতির হাতে ধরল। রাহাত এর হাতের স্পর্শ পেতেই প্রীতি এক ঝটকায় হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে ঘৃণার চোখে রাহাত এর দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল—-



আপনার সাহস হলো কি করে আমার সাথে এমন করার?????স্বামী হয়েছেন বলে নিজের অধিকার টা জোর করে খাটিয়ে নিলেন? দেখিয়ে দিলেন নেশার ঘোরে নিজের হিংস্র চেহারা টা???অনেক সম্মান করতাম আপনাকে।।আজ থেকে ঘৃণা করি (চিৎকার করে কথা গুলো বলল প্রীতি)

রাহাত প্রীতির কথাগুলো শুনে সেইখানে চুপ করে বসে রইল।আর কিছু বলল না।
আমাকে এতটুকু বুঝলা প্রীতি?কি বললা তুমি আমার হিংস্র চেহারা? আসলেই কি আমার হিংস্র চেহারা আছে?আমি তো তোমার মনে জায়গা করতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু নেশার ঘোরে,,,,,পারলে ক্ষমা করে দিও আমায়। আজ থেকে তোমার ধারে কাছেও ঘেষব না আমি।
কথাগুলো বলে চোখের জল মুছতে মুছতে ওয়াশিং রুমের দিকে এগিয়ে গেল রাহাত।


ওয়াশরুমে গিয়ে ঝরনা ছেড়ে দিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল।
কেন রোহান? আমার সাথেই কেন এমন হলো ভাই?আমি যে তোর প্রীতির কাছে আজ হিংস্র হয়ে উঠলাম। পারব না আর এইভাবে বাঁচতে আর পারব না তোর মরে যাওয়া নিজের চোখের সামনে দেখতে। আমি আজই বড় ডাক্তার দের সাথে যোগাযোগ করব তোর বাঁচতেই হবে প্রীতির জন্য । তোদের দুজনের মাঝে আমার আসা ঠিক হয়নি। আর আজ যা হল,,,,,,,,

আর কিছু ভাবতে পারছে না রাহাত। ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেল। প্রীতি ও ফ্রেশ হয়ে নিচে এল। বাড়িতে পিয়াশ আর ওর বাবা মা এসেছে রিহার বিয়ের কথা বলতে। আজ খুব চুপ হয়ে আছে প্রীতি। কারো সাথে কোনো কথা বলছে না। তা দেখে প্রীতির শাশুড়ি প্রীতি কে শরীর খারাপ কিনা জিজ্ঞেস করল। প্রীতি মাথা নেড়ে বলল সে ঠিক আছে।রিহার আর পিয়াশ এর বিয়ে ঠিক হলো সামনের সপ্তাহে । শেখ বাড়ির সবাই খুব খুশি আজ একমাত্র মেয়ের বিয়ে খুব বড় করে আয়োজন করতে হবে।।

সারাদিন রাহাত প্রীতির সামনে ও আসে নি। রিহার সাথেই প্রীতির সারাটাদিন কেটেছে।প্রীতি এখন আর হাসি খুশি থাকে না কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। সেদিনের পর থেকে রাহাত ও প্রীতির সামনে আসে না। আর রাতে আসলে ও প্রীতির সাথে কথা বলে না। কেমন যেন নিজের প্রতি খুব ঘৃণা আর রাগ হয় তার। তবু ও দূর থেকে প্রীতির চাওয়া পাওয়া সবকিছুর খেয়াল রাখে সে।


দেখতে দেখতে রিহার গাঁয়ে হলুদ এর দিন চলে আসল। আজ রিহার গাঁয়ে হলুদ । পুরো শেখ বাড়ি খুব সুন্দর আর জাকঝমক ভাবে সাজানো হয়েছে। একমাত্র বোনের বিয়ে তাই রোহান ও আসছে আজ লন্ডন থেকে। সন্ধ্যার দিকে পার্লার এর লোক এসে রিহা কে খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হলো। খুব কিউট লাগছে রিহা কে। প্রীতি এসে রিহাকে দেখে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।প্রীতি কে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিহা বলতে লাগল–


-ভাবি এইভাবে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন? (ভ্রুকুটি কূচকে)
আমাকে সুন্দর লাগছে না তাই না?একদম পেতনির মতো লাগছে তাই না?
-পেত্নি কে তো পেত্নিই লাগবে।
রোহান এর গলার আওয়াজ শুনে রিহা আর প্রীতি দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তার দিকে। রিহা দৌড়ে গিয়ে রোহান কে জরিয়ে ধরল-

-ভাইয়া তুমি এসেছো???আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আসবে না(রিহা)
-আমার একমাত্র বোনের বিয়ে আমি কি না এসে থাকতে পারি?
-একদমই না(হি হি করে হেসে বলল রিহা)।।
-আচ্ছা ভাইয়া আমাকে কি পেতনির মতো লাগছে?😠
-কে বলেছে?
-রোহান শেখ বলেছে।
-রোহান শেখ টা আবার কে?
-এই যে আমি যাকে জরিয়ে ধরেছি সে😅😅

🌼🌼

একি অবস্থা হয়েছে রোহান এর ওকে এমন দেখাচ্ছে কেন?চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।অনেক শুকিয়ে গেছে ও আর কেমন যেন অসুস্থ দেখাচ্ছে ওকে?আচ্ছা ওর কি শরীর খারাপ? আমি কি ওকে একবার জিজ্ঞেস করবো?
-ভাবি,,,,,,,,,
রিহার ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসল প্রীতি।
-হ্যা বলো,,,,
-কি ভাবছো???
-কিছু না।।।
-দেখো না ভাইয়া আমাকে পেত্নি বলছে।
-তুমি জানো আমি মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম কেন?
-কেনো ভাবি?
-কারণ তোমাকে এতো কিউট লাগছে যে আমি তোমার প্রেমে পরে গেছি। ছেলে হলে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম😃😃

প্রীতির কথা শুনে রিহা আর রোহান হেসে দিল। প্রীতি রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে রোহান প্রীতি বলে ডাক দিল। রোহান এর ডাকে থমকে গেল প্রীতি এতোদিন পরে তার রোহান তাকে নাম ধরে ডেকেছে। প্রীতি রোহানের দিকে না ফিরে বলল–

-হুম বলেন?
-কেমন আছো প্রীতি?
-দেখতেই তো পাচ্ছেন ।
-হুম,,,আমি কেমন আছি জিজ্ঞাসা করবা না?
-হুম,,,কেমন আছেন?
-এইতো ভালো খুব ভালো আছি। খুব বেশি।
তোমার কাছে কিছু চাই?
-আমার কাছ থেকে আরও কিছু কেড়ে নেওয়ার জিনিস আছে আপনার রোহান শেখ?
-আসলে প্রীতি আমি চাই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তোমার ক্ষমা না পেলে যে মরেও শান্তি পাবো না।(কথাটা বলে রোহান চলে গেল)


এতক্ষণ দূর থেকে আড়ালে রোহান আর প্রীতির বলা কথা গুলো শুনল রাহাত আর অপরদিকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রিহা।।।


আল্লাহ আমার দুই ভাইয়ের কষ্ট দূর করে দাও তুমি আর প্রীতি ভাবি খুব ভালো মেয়ে ওকে আর কষ্ট পেতে দিও না আল্লাহ।।।(রিহা)

প্রীতি রুমে এসে রোহান এর কথা গুলো ভাবতে লাগল। কি বললো রোহান আমার ক্ষমা না পেলে মরেও শান্তি পাবে না?হে আল্লাহ রোহান এর কিছু হয়নি তো?না না একি আজেবাজে কথা ভাবছি আমি?রোহান আমাকে যতই কষ্ট দেক না কেন তুমি ওকে সবসময় সুস্থ রেখো। কথাগুলো বিড়বিড় করে বলতে বলতে একটা শাড়ি নিয়ে রেডি হয়ে নিল প্রীতি।

সব ছেলেরা বেগুনি কালার পানজাবী পড়েছে আর মেয়েরা কাঁচা হলুদ এর মধ্যে বেগুনি পাড়ের জামদানি কাপড় । আজ আবার প্রীতি রাহাত আর রোহান এর বেগুনি পরী সেজেছে ।


🌼🌼
রেডি হয়ে রিহা কে সাথে নিয়ে নিচে নেমে এলো সে। দুইভাই দুই হাত দিয়ে বোনকে ধরে নিয়ে স্টেজের বসালো। একে একে সবাই রিহা কে হলুদ লাগালো। রাহাত একটু পর পর প্রীতির দিকে তাকাচ্ছে আর রোহানের দিকে। রাহাত আজ শুধু ভাবছে যেইভাবেই হোক প্রীতি আর রোহান কে এক করে দিয়ে বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করতে হবে তার। অপরদিকে রোহান দূর থেকে প্রীতির প্রতিটা মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি করছে।


অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে সবাই প্রীতি কে রিকয়েষ্ট করতে লাগল নাচার জন্য । রিহা একবার নিহার কাছে শুনেছিল প্রীতি নাকি খুব ভালো নাচে আর একবার ফাসর্ট ও হয়েছিল নাচে। রিহার রিকয়েষ্ট প্রীতি ফেলতে পারেনি শরীর আর মন দুইটা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও সে নাচল। নাচ শেষে হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেল প্রীতি। রাহাত আর রোহান দুইজনে এগিয়ে আসল প্রীতি কে ধরার জন্য । রোহান সাথে সাথে কোলে তুলে নিয়ে রুমে নিয়ে গেল প্রীতি কে। রাহাত ডাক্তার কে ফোন দিল। রোহান এর পিছনে পিছনে সবাই রুমে গেল।


হঠাৎ কি হয়ে গেল মেয়ে টার এইসব ভেবে সবাই কেমন যেন ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু ডাক্তার এর বলা কথা শুনে থমকে গেল তিনটা মানুষ । সবাই অনেক খুশি। কিন্তু প্রীতি বুজে উঠতে পারছে না সেকি খুশী হবে নাকি কষ্ট পাবে?রাহাত এর বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে সে। মা হওয়ার কথা শুনলে প্রতি টা মেয়ে খুশি হয় প্রীতির ও হচ্ছে কিন্তু মনের মধ্যে কোথায় যেন খুব ঘৃণা হচ্ছে । রাহাত বাবা হওয়ার খুশি অনুভব হচ্ছে কিন্তু নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে তার একি করল সে?কিভাবে এখন রোহান এর সামনে মুখ দেখাবে সে?

অপরদিকে রোহান চোখের জল মুছে রাহাত কে জরিয়ে ধরল আর বলতে লাগল—


-থ্যাংকস ভাই। আমার প্রীতি কে এইভাবে ভালো রেখো সবসময় । আমার প্রীতি এখন তোমার বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে ও এখন পরিপূর্ণ ভাবে তোমার ।
-সরি রোহান ।
-সরি বলবা না একদম। আজ খুব খুশি আমি। আমি চাচ্চু হবো আর তুমি বাবা।
-একটা কথা ছিলো আমার রাখবি তো???
-বলো??
-তুই অপারেশন করানোর জন্য রাজি হয়ে যা। আমার বিশ্বাস তুই ভালো হয়ে যাবি। আমি বড় ডাক্তার দের সাথে কথা বলে রেখেছি প্লিজ রাজি হয়ে যা তুই।
-ঠিক আছে।।কবে অপারেশন এর ডেট?
-আমি ডাক্তার দের সাথে কথা বলে সব জানাবো।
-ওকে,,,,,,,


প্রীতি অজান্তেই নিজের পেটে হাত রেখে বলছে–
-এতোদিন রোহান শেখ কে ভালোবেসে বেঁচেছি । আজ তোকে ভালোবেসে বাঁচব ।

পরেরদিন খুব ধুমধাম ভাবে রিহা আর পিয়াশের বিয়ে সম্পন্ন হলো। বিদায় এর সময় রিহা খুব কেঁদেছিল তার দুই ভাই আর ভাবি কে জরিয়ে ।

একমাস পর,,,,??????

চলবে,,,??,
(বানান ভুল হলে নিজেরা একটু বুজে পড়ে নিবেন। )

#দূরত্ব
#part:16
#writer:Maliha Islam Tafsi (jeba)

🌼

একমাস পর,,,,,,
পুরো শেখ বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একমাস আগেও কতো হাসি খুশিতে মেতে ছিল পুরো শেখ বাড়ি । শেখ বাড়ির প্রীতির বাবার বাড়ির মানুষ সব আজ হসপিটালে ।

আফসানা বেগম কেঁদেই যাচ্ছে। কারো আজ কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা নেই। শেখ বাড়ির দুই ছেলে রোহান আর রাহাত আজ মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।

প্রীতি হাসপাতালে একটা বেঞ্চে বসে আছে পাথর এর মতো। আজ সে পাথর হয়ে গিয়েছে। সে আজ বুঝতে পেরেছে কেন রোহান তাকে রাহাত এর হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু সে দিনের পর দিন রোহান কে ভুল বুঝেছে । আজ খুব ঘৃণা হচ্ছে তার নিজের প্রতি। নিহা সেই কখন থেকে প্রীতি কে ডাকছে কিন্তু সেইদিকে কোনো খেয়াল নেই তার।


আজ বিকেলে যখন রোহান ড্রইং রুমে বসে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছিল তখন সে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেল। সবাই রীতিমতো ভয় পেয়ে যায় রোহান এর এই অবস্থা দেখে। রাহাত সাথে সাথে ডাক্তার কে ফোন দিয়ে বলল তখন ডাক্তার জানাল রোহান কে অপারেশন না করালে রোহান বাঁচবে না আর অপারেশন করালেও বাঁচার চান্স আছে কিনা সেটা অপারেশন করানোর পরই বুঝা যাবে। ততক্ষণে বাসার সবাই জেনে গেল রোহান এর ব্রেইন টিউমার অনেক আগে থেকেই কিন্তু সে কাউকে জানায় নি। প্রীতি রোহান এর এই অবস্থা দেখে সবার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ল। রাহাত প্রীতি কে সামলে নিয়ে রোহান কে নিয়ে হসপিটালে গেল।



বাড়ির সবাই রাহাত এর সাথে হসপিটালে আসল। প্রীতি নিহা কে জরিয়ে ধরে কাঁদছে শুধু । নিহা অনেক বুঝালো প্রীতি কে যে এই অবস্থায় কান্না করলে এইভাবে শরীর খারাপ হবে। কিন্তু প্রীতির রোহান এর এই অবস্থা সহ্য হচ্ছিল না খুব কষ্ট হচ্ছিল তার। রাহাত হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে কোথায় যেন চলে গেল। নিজের কষ্ট চেপে রাখতে পারছিল না রাহাত। একটা জায়গায় নিরবে কতক্ষণ বসে আবার হসপিটালের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ল সে কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস চিন্তিত হয়ে গাড়ি চালানোর কারণে ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেল তার গাড়ি। আর আজ সে ও লড়াই করছে মৃত্যুর সাথে।

🌼🌼
একজন নার্স ওটি থেকে বেরিয়ে আসল। নার্স কে দেখে আফসানা বেগম এগিয়ে গিয়ে বলল আমার বড় ছেলের কি অবস্থা?
-মেম,,,এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। ওনার অবস্থা খুব খারাপ আর এখন ওনাকে কেবিনে শিফট করা হবে।

কিছুক্ষণ পর রাহাত কে কেবিনে শিফট করা হলো।দুই ভাইয়ের এই অবস্থার কথা শুনে রিহা ছুটে আসল হসপিটালে । মাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে সে। হঠাৎ সে প্রীতির কাছে গিয়ে বসল,,,,,
-ভাবী,,,,,,
প্রীতি একটু ও নড়ছে না। রোহান আর রাহাত এর এই অবস্থা দেখে একদম পাথর এর মতো হয়ে গেছে সে।
রিহা প্রীতি কে ধরে ঝাঁকিয়ে বলল-
-এইটা নাও।রোহান ভাইয়া দিতে বলেছিল তোমাকে। আমি তোমার আর রোহান ভাই এর ব্যাপারে সবকিছু জানি ভাবি। আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে । একদিকে ভালোবাসার মানুষ একদিকে স্বামী । প্লিজ তুমি নিজেকে শক্ত করো ভাবি।(কথাগুলো বলে রিহা কেঁদে দিল)

প্রীতি কাগজ টা হাতে নিয়ে খুলে পড়তে লাগল–
🌼


– হেই কলিজা,,,কলিজা বললে ভুল হবে আমার পুরো লাইফ তুমি প্রীতি। মাফ করে দিও আমাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমার ভাবি হতে বাধ্য করেছি তোমাকে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি যা করেছি সব তোমার ভালোর জন্য করেছি। আর রাহাত ভাইয়া তোমাকে সবসময় আগলে রাখার চেষ্টা করেছে। কখনও তোমাকে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করে নি রাহাত ভাইয়া । আমি ভাইয়া কে বলেছি তোমাকে যেন জোর করে হলেও ওনাকে ভালোবাসতে বাধ্য করে। আমি চাই না তুমি সারাটাজীবন আমাকে ভালোবেসে কষ্ট পাও। আমি চাই তুমি রাহাত ভাই এর সাথে যেনো সুখে থাকো সারাজীবন। আমার অনিশ্চিত জীবনে তোমাকে জরিয়ে কষ্ট দিতে চাই নি। যেইদিন থেকে জেনেছি আমি আর বাচবো না সেইদিন থেকে আস্তে আস্তে তোমাকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। আমাকে ঘৃণা করতে বাধ্য করেছি। আর নাজিফার সাথে আমার বিয়ের মিথ্যে অভিনয় করেছি। নাজিফা আমাকে সাহায্য করেছে তোমাকে দূরে সরানোর জন্য। রিহা সবকিছু জেনে ফেলেছিল । ওর কাছে আমি এই কাগজ টা দিয়ে বলেছিলাম এইটা যেনো একমাস পর তোমার হাতে দেই। আমি আর থাকবো না তোমাদের মাঝে কিন্তু স্মৃতি হয়ে থাকবো আজীবন । প্লিজ রাহাত ভাই কে কষ্ট দিও না ভালো থেকো সারাজীবন ।


লিখাগুলো পড়ে প্রীতি কাগজ টা বুকে নিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। রিহা আর নিহার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল—

-কেনো বুঝলাম না আমি রোহান কে??কেন ভুল বুঝলাম আমি রাহাত কে?একজন কে ও বুঝতে পারলাম না আমি। কারো ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার নেই আমার।

রিহা প্রীতি কে পানি খাইয়ে দিল। প্রীতির শরীর অনেক খারাপ হয়ে গেছে। আফসানা বেগম প্রীতির দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগল আর বলতে লাগল—


-মেয়ে টা কতো কষ্ট পেয়েছে কিন্তু কখনও মুখ ফুটে কিছু বলে নি। আজ ও কতো কষ্ট সহ্য করছে। আল্লাহ কেন আমার দুই ছেলেকে আজ এমন অবস্থায় এনেছে। আমার ছেলে দুইটা চোখের সামনে আজ মৃত্যুর সাথে লড়ছে।


কিছুক্ষণ পর একজন নার্স এসে বলল রাহাত সবাইকে কেবিনে ডাকছে,,,,,,,,
সবাই কেবিনে গিয়ে রাহাত এর দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগল।রাহাত তার মায়ের হাত টা ধরে বলল-রোহান এর কি অবস্থা?
-এখনও ডাক্তার রা ওটি থেকে বের হয়ে আসে নি।
-তুমি কেঁদো না মা আমি রোহান দুইজনই ভালো হয়ে যাবো খুব তাড়াতাড়ি ।

আফসানা বেগম আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে লাগল।
রাহাত প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল-একটু কাছে এসে বসবে?
প্রীতি রাহাত এর কাছে গিয়ে বলতে লাগল—

-আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেন আমি না বুঝে অনেক কিছু বলেছি। অনেক কষ্ট দিয়েছি অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। আপনি সুস্থ হয়ে ফিরুন আর কখনও আমি এমন করবো না।(কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বললপ্রীতি)

-তুমি ও আমাকে ঐ রাত এর জন্য ক্ষমা করে দিও। আর নিজের খেয়াল রেখো। কান্না করলে তোমার আর আমার সন্তানের ক্ষতি হবে।(হাল্কা হেসে বলল রাহাত)

-আমি জানি আপনি ইচ্ছে করে করেন নি। আপনি সুস্থ হয়ে আসুন এইসব নিয়ে পরে কথা হবে।

-সবাই একটু বাহিরে যাবে আমার বাবা আর মার সাথে কিছু কথা আছে।

সবাই বাহিরে চলে আসল। অপরদিকে ডাক্তার ওটি থেকে বেরিয়ে এসে বলল রোহান এর অবস্থা খুব খারাপ । রোহান এর বাঁচার চান্স খুবই কম। ডাক্তার এর কথা শুনে প্রীতি কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে পড়ল।

চলবে,,,,,,