দূরত্ব পর্ব-৩+৪

0
235

#দূরত্ব
#part:3+4
#writer:Maliha Islam Tafsi (Jeba)

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি রোহান এর দিকে কিন্তু রোহান একটি বার ও আমার দিকে তাকালো না।ভাবি আমাকে বললেন- প্রীতি তুমি কি ভয় পেয়ে গেছ?

-না ভাবী,,,, (মাথা নিচু করে)
-এইটা আমাদের পরিবারের নিয়ম যে নতুন বউ কে তার দেবর কোলে করে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করবে।

আচ্ছা অনেক কথা হয়েছে আর কালকে কথা বলিস বউমা অনেক ক্লান্ত । তোরা ওকে রাহাত এর রুমে দিয়ে আয়।(রাহাত এর মা)

ভাবী আর আমার ননদ (রাহাত এর ছোট বোন রিহা ) মিলে আমাকে রাহাত এর রুমে দিয়ে গেল।রুমটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। গোলাপ রজনীগন্ধা ফুলের ঘ্রাণে সুরভিত হয়ে আছে পুরো টা রুম। বিছানার মাঝে খুব সুন্দর করে লিখা রাহাত +প্রীতি । গোলাপ আমার পছন্দ আর এইভাবে আমার বাসর ঘর সাজাতে হবে সেই কথাটা আমি সবসময় রোহান কে বলতাম । তাহলে কি এইভাবে রোহান সাজিয়ে দিয়েছে আমার আর রাহাত এর বাসর ঘর টা???ও কিভাবে পারল এটা করতে???

আমার পছন্দ মতো বাসর ঘর হলেও আমার কাছে তা বিষ এর মতো লাগছে। আমি আর পারছি না। হে আল্লাহ আপনি আমাকে এই কষ্ট সহ্য করার ধৈর্য দান করুন আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে ।
বিছানায় এক কোণায় ঘুঁটিসুটি মেরে বসে রইলাম ।
দু চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে অঝোর ধারায় রোহান আর আমার স্মৃতি গুলো ভেবে,,,,,,
.
.
.
এক্সকিউজ মি..আমাকে একটা টিকেট দিন কুমিল্লা যাওয়ার ।

-ওকে মেম,,,

-টিকেট টা যেন জানালার পাশে হয়।

– সরি ম্যাম,,, জানালার পাশে টিকেট তো নেই । আর বাসে সব সিট ফুল মাত্র একটা টিকেট ই আছে। আপনি চাইলে দুইঘন্টা পর আরেকটা বাসে যেতে পারেন। ওই টা তে সিট খালি আছে।

– না না আমি এখন যেই বাস টা ছাড়বে ওই টা দিয়েই যাবো। যেই একটা সিট আছে ঐটার টিকেট দেন।

-ওকে ম্যাম ,,,,,

প্রীতি: একটা ছেলে আমার পাশের সিট টা তে জানালার পাশে বসা যেইভাবেই হোক ছেলে টা কে উঠিয়ে আমার বসতে হবে।( মনে মনে)
এই যে ভাইয়া,,,,,,

ছেলেটা মুখ থেকে বই সরিয়ে প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল,,,

-জ্বী,,,আমাকে বলছেন?
-হুম,,,,,একটা সাহায্য করবেন?
-এত সুন্দর করে বলে আমার সিট টা দখল করার চিন্তা তাই না?
-সয়তান ছেলে কিভাবে বুঝল যে আমি ওনার সিট টায় বসতে চাই (মনে মনে)
আসলে ভাইয়া আমি না জানালার পাশে না বসলে বমি হয় তো আপনি যদি আমাকে আপনার সিট টা দিয়ে একটু সাহায্য করতেন এই বোন টা কে(আমতা আমতা করে বললাম )
– বমির বাহানা একদম দিবা না। মেয়েরা বাসে উঠলেই জানালার পাশের সিট টা তে বসার জন্য এরকম বাহানা দেখানো শুরু করে। আর আরেকটা কথা তুমি আমার কোন জন্মের বোন হও হে?????
নেক্সট টাইম এরকম যেন আর না শুনি। চুপচাপ নিজের সিটে বসো।(ধমক দিয়ে )

কি অসভ্য ছেলে। সয়তান ছেলে। বান্দর,,,,আমি অপরিচিত হয়েও আমাকে তুমি করে বলে।সয়তান????(মনে মনে বলে বসে পড়লাম কিন্তু আমার অসহ্য লাগছে জানালার পাশের সিট টা ছাড়া যেভাবেই হোক ঐ সিট টাই আমার চাই)

-আচ্ছা ভাইয়া,,,,,
-😡😡😡
-সরি সরি,,,,আর ভাইয়া বলব না(ভয়ে)আপনার নাম টা বলেন তাহলে আমি না হয় আপনার নাম ধরেই ডাকব।
– রোহান শেখ।
-কী?
-আমার নাম রোহান শেখ (চেঁচিয়ে )
-ওফফফ,,,,কানের পর্দা টা মনে ফাটিয়ে ফেলছে..অসভ্য ছেলে(মনে মনে)
-তোমার নাম কী?
-আমার নাম নুসাইফা আহমেদ প্রীতি ।
-ওহ,,,,,
-হুম
– তুমি কোথায় যাচ্ছ?
– ঢাকাতে ফুফির বাসায় বেরাতে এসেছিলাম এখন নিজের বাসায় কুমিল্লা যাচ্ছি ।আপনি?
– আমি ও কুমিল্লা যাচ্ছি আমার বাসায় । আর ঢাকায় থেকে আমি পড়াশোনা করি।
-ওহ,,,কিসে পড়েন?
-অনার্স থার্ড ইয়ারে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে । তুমি?
-আমি অনার্স ফাস্ট ইয়ারে নতুন ভর্তি হয়েছি ।
-কোন ডিপার্টমেন্ট?
-ম্যাথমেটিক্স ।

এইভাবে কতক্ষণ কথা চলল। বাস একটা রেসটুরেনট এর কাছে থামল।

– আচ্ছা আপনি কিছু খাবেন?(রোহান )
-না,,,,,
-ওকে,,,

রোহান বাস থেকে নেমে রেস্টুরেন্টে গেল । সুযোগ টা হাত ছাড়া করা যাবে না প্রীতি বসে পড়। কিন্তু এইটা কি ঠিক হবে? হবে হবে বসে পড় জানালার কাছে সিট ফাঁকা আছে সুযোগ টা মিস করা যাবে না.. ( মনে মনে ভাবলাম )

তাড়াতাড়ি করে রোহানের সিট টায় বসে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে থাকার ভান ধরে থাকলাম যেন রোহান কিছু বলতে না পারে।।।

রোহান এসে আমার সিট টায় বসে পড়ল।
আচ্ছা সয়তান টা কিছু বলছে না কেন?এত চুপচাপ হয়ে আছে কেন?? (মনে মনে)
এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর ঘুম ভেঙে আমি নিজেকে রোহান কাঁধে আবিষ্কার করলাম। তার মানে এতক্ষণ ওনার কাঁধে মাথা দিয়ে শুয়ে ছিলাম।।। ইসসস,,,,, কি লজ্জাজনক বিষয়,,,,,

কিছুক্ষণ পর রোহান চোখ মেলে আমার দিকে তাকালো । ওনার চোখে চোখ পড়তেই আমি মাথা নিচু করে বললাম
-আসলে,,,,,বাইরে থেকে বাতাস আসছিল আর খুব ভালো লাগছিল বাতাস টা তাই আপনার সিটে বসে পড়লাম আর কখনও যে চোখ লেগে গেছে বুঝতে পারি নি।
-ইটস ওকে, ,,, (হাসি দিয়ে )

আমি লজ্জায় আর কথা বললাম না। কুমিল্লা এসে দুইজন বাস থেকে নেমে গেলাম। হঠাৎ রোহান পিছন থেকে প্রীতি বলে ডাক দিল,,,

-বলুন,,,
-আমাকে কী তোমার ফেসবুক আইডির নাম টা বলা যাবে?
– হুম,,,,,
এইভাবে রোহান এর সাথে রেগুলার চ্যাটিং,,,,ফোনে কথা বলা একসময় আমাদের ভালোবাসায় পরিণত হলো।।।

কথাগুলো ভেবে আবার কাঁদতে লাগলাম। হে আল্লাহ কেন এমন করলেন আমার সাথে???যাকে এত ভালোবাসি তার আর আমার মাঝে কেন এত দূরত্ব তৈরি করলেন? (কথাগুলো বলে আবারো কান্নায় ভেঙে পড়লাম)

দরজা খোলার আওয়াজে তাড়াতাড়ি নিজেকে ঠিক করে নিলাম। তাকিয়ে দেখলাম রাহাত আমার দিকে এগিয়ে আসছে,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,

#দূরত্ব
#part:4
#writer : Maliha Islam Tafsi (jeba)

প্রীতি আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি। আমি জানি তোমার এই মূহুর্তে খুব কষ্ট হচ্ছে। কত স্বপ্ন দেখেছিলাম আমরা সারাজীবন একসাথে থাকার। সবসময় ভাবতাম বিয়ের পর তোমাকে খুব খুশিতে রাখব একটু ও কষ্ট পেতে দিব না কিন্তু আমি যে তোমাকে সবচেয়ে বড় কষ্ট দিয়ে ফেললাম প্রীতি । সবসময় বলতাম তোমাকে যেন আমি বউ বলে ডাকি । আমি আজ থেকে আর তোমাকে বউ বলে ডাকতে পারব না প্রীতি । আজ থেকে তুমি আমার ভাবি। জানি খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার আজকের রাত টা নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তোমার। তোমার মনে আছে প্রীতি তুমি বলেছিলে যে বাসর রাতে তুমি আমাকে বুকে লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রাখবে আর আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলব এই বউ তুমি কি লজ্জা পাচ্ছ? রাহাত ভাই তোমাকে খুব ভালোবাসে প্রীতি সময়ের সাথে সাথে তাকে মেনে নিতে পারবে তুমি। সে খুব খুব সুখী রাখবে তোমায়।
এই প্রীতি জানো খুব কষ্ট হচ্ছে আমার ।আমার এই বুকটা আজকে খুব শূন্য শূন্য লাগছে। কষ্টে বুক টা ফেটে যাচ্ছে আমার কিন্তু তুমি একদিন ঠিকি বুঝবে কেন তোমার রোহান এমন করেছিল । জান আমার তুমি প্রীতি খুব শূন্য লাগছে আজ তোমাকে ছাড়া । জানি তুমি মেনে নিতে পারবে না কিন্তু তোমার মেনে নিতেই হবে রাহাত ভাই কে মানুষটা খুব ভালোবাসে তোমায়। মাফ করে দিও আমাকে তিন বছর পর আজ সিগারেট আবার আমার সাথী হলো তুমি নেই তো জীবনে তাই।তুমি জানো আজ খুব দূরত্ব তোমার আর আমার মাঝে।খুব ভালোবাসি তোমায় খুব বলে কান্না করতে থাকল রোহান। এতক্ষণ রোহান আর প্রীতির একসাথে তোলা অনেক গুলো ছবি একটা বক্স থেকে বের করে ছবির দিকে তাকিয়ে কান্না করতে করতে কথাগুলো বলল রোহান।



প্লিজ আপনি আমার কাছে আসবেন না চেঁচিয়ে কথাটা বলল প্রীতি । প্রীতির কথা শুনে ঐখানেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল রাহাত।

-কি বলছো তুমি? (রাহাত)
-কি বলতে চাচ্ছি আপনি বুঝতে পারছেন না?
-না কি বলছো তুমি এইসব?
-দেখুন আমি আপনাকে ক্লিয়ার ভাবে আপনি আমার কাছে আসার একদম চেষ্টা করবেন না।
-কিন্তু কেন?আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমি তোমার স্বামী । আর আজকের আমাদের ফুল সজ্জা ।

-আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না। প্লিজ আপনি কাছে আসবেন না।
– তুমি তাহলে আমাকে বিয়ে করেছ কেন প্রীতি?
-প্লিজ আপনি দূরে থাকবেন। আমার এতো কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না।

– তুমি আমার আর তোমার মাঝে দূরত্ব চাইছ?

-হুম,,,,,আমি আপনার আর আমার মাঝে দূরত্ব চাইছি। আমি সহ্য করতে পারছি না আপনাকে।

কথাটা বলে রাগে প্রীতি পাশে থাকা দুধের গ্লাস টা নিচে ছুড়ে ফেলে দিল।

– প্রীতি কি করছো তুমি তোমার লেগে যাবে তো। দেখো তুমি একদম নড়বা না কাচ ঢুকবে তোমার পায়ে।

কিন্তু প্রীতি পিছিয়ে গেল রাহাত এর সামনে আগানো দেখে আর তার পায়ে কাঁচ ডুকে গেল।

-আহহহহ,,,,
-বলেছিলাম না রাগে কোনো কথাই শুনতে চাও না তুমি ।
-আপনি ধরবেন না আমায়।
– ওকে ধরবো না। চুপ করো এখন অনেক রক্ত বের হচ্ছে তোমার পা থেকে।

কথাটা বলে রাহাত প্রীতি কে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিল আর ফাস্ট এইড বক্স এনে এন্টিসেপটিক লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল পায়ে।
প্রীতি আর কোনো কথা না বলে ব্যাথায় ঘুমিয়ে পড়ল। রাহাত প্রীতির পাশে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে।

কি মায়া মেয়েটার মুখে,,,,,,তুমি জানো প্রীতি তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি । অনেক স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে নিয়ে আর ভেবেছি কবে তোমাকে বউ বানিয়ে নিজের করে নিতে পারব। কিন্তু নিয়তি কি খারাপ দেখো বউ বানিয়েছি ঠিকি কিন্তু আমি তোমার স্বামী হতে পারি নি। স্বামী তো সেইদিন হবো যেইদিন তুমি নিজে মেনে নিয়ে বলবা যে আমি তোমার স্বামী । আজকের রাত টা যে খুব স্পেশাল ছিল। কিন্তু যেইদিন তুমি চাইবা সেইদিনই তোমার সম্মতিতে তোমাকে নিজের করে নিবো। আর তুমি কেন আমাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারছো না সেই কারণটা ও আমি তোমার কাছ থেকে জানবো কিন্তু জোর করে না তোমার ইচ্ছায়। হোক না খুব দূরত্ব আজ তোমার আর আমার মাঝে কিন্তু খুব ভালোবাসি তোমায় বউ।
(মনে মনে কথা গুলো বলল রাহাত তারপর একটা বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল )



সকালের আলো এসে রাহাত এর চোখে পড়ল। সে উঠে দেখল প্রীতি এখনও ঘুমাচ্ছে।রাহাত প্রীতির পাশে বসে আস্তে করে ডাকল প্রীতি কে। রাহাত এর ডাকে আচমকা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল সে।

-ভয় পেয়ো না। আমি রাহাত। অনেক লেইট হয়ে গেছে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।



প্রীতি ঘুম থেকে ওঠছে তো তাড়াতাড়ি? রাহাত ভাই নিশ্চয়ই ডেকে উঠিয়ে দিছে। ও তো শাড়ি পরতে পারে না আর রাহাত ভাই কে তো ও কখনও বলবে না শাড়ি পড়িয়ে দিতে এখন ও কে শাড়ি পরতে সাহায্য করবে কে? (বারান্দায় দাঁড়িয়ে মনে মনে কথাগুলো ভাবছে রোহান)

আচ্ছা রোহান শোনো না,,,
বলো,,,
তুমি আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবা আমি না শাড়ি পড়তে পারি না। কারণ আমি চাই বিয়ের পর আমার বর টা আমাকে প্রতিদিন শাড়ি পরিয়ে দিবে। কি দিবা তো বর?
দিবো বউ,আমি তো অলরেডি ইউটিউব থেকে শাড়ি পড়ানো শিখে নিছি যেন বউ টা কে প্রতিদিন পরিয়ে দিতে পারি।
সত্যি???
হুম,,,,সত্যি।
আই লাভ ইউ রোহান,,,,,
আই লাভ ইউ প্রীতি,,,,,

কথাটা ভেবে অজান্তেই মুখে হাসি চলে আসল রোহান এর কিন্তু এই হাসি টা শুধু একটুর জন্য । আবার বুক টা শূন্য শূন্য লাগছে ভেবেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল রোহান এর।

হঠাৎ ও কাঁধে কারো সপর্শ অনুভব করলো। তাকিয়ে দেখল,,,,,,,,,,,,,,,

চলবে?,,,,