দ্বিতীয় সূচনা পর্ব-৩১+৩২+৩৩+৩৪+৩৫+৩৬

0
509

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৩১
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

হুট করে এইভাবে মামা বাড়ি এসে বিপাকে পড়ে গেছে অয়নন্দিতা। সে আসতে চায়নি। মামা কয়েকবার বলার পর আর না করতে পারেনি। এখানে এসে মন বসছে না তার। বোন, ভাবী সবাই আছে। কিন্তু অয়নন্দিতার মন ওই বাড়িতেই পড়ে আছে। ফারহানকে ফোন করে বলতেও পারেনি। কয়েকবার ফোন করার পরেও ফারহান ফোন রিসিভ করেনি। তাই বলতেও পারেনি।
মিলি অয়নন্দিতার পাশে এসে বসে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, অয়নন্দিতা অপেক্ষায় আছে। অপেক্ষাটা হয়তো ফারহানের জন্য৷
মিলি অয়নন্দিতার কাঁধে হাত রাখতেই অয়নন্দিতা চমকে গিয়ে পেছনে তাকায়। মিলিকে দেখে জোর করেই হাসে অয়নন্দিতা। জোরপূর্বক হাসিটা দেখে মিলিও হালকা হাসে।
‘জোর করে হাসছ?’
মিলির চোখে ধরা পড়ে গিয়ে অয়নন্দিতা মাথা নিচু করে রাখে। মিলি আবারও বলে,
‘মন চাইছিল না এখানে আসতে। তাই না?’
প্রশ্নের উত্তরটা হ্যাঁসূচক ইশারা করে। কিন্তু মুখে বলতেও দ্বিধা। নীরবতাই শ্রেয়। কিন্তু অয়নন্দিতার নীরবতার কোনো অর্থ নেই। মিলি নিজের মতো করেই বলতে শুরু করে।
‘সহজে কাউকে মন দেওয়া যায় না। কিন্তু এই মন একবার কাউকে দিয়ে দিলে তখন আর উপায় থাকে না। এই মন তখন বার বার ভুল করতেও দ্বিধা করে না। এই মন তখন সব কিছু একপাশে রেখে দিয়ে তাকেই প্রায়োরিটি দেয়। মন যখন চায়মি কেন এলে?’
এবার মুখ খোলে অয়নন্দিতা।
‘এমন কিছুই না।’
‘চোখ মুখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, তুমি ফারহান ভাইকে মিস করছ। অপেক্ষায় আছো কখন মানুষটা তোমায় ফোন করবে। এরপরেও বলবে, এমন কিছুই না।’
সব শুনে অয়নন্দিতা নিঃশ্বাস ফেলে। উঠে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ায়। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। অয়নন্দিতা বৃষ্টি দেখছে। মস্তিষ্কের চারপাশে একজন মানুষই ঘুরঘুর করছে। মিলি উঠে গিয়ে অয়নন্দিতার পাশে দাঁড়ায়।
‘কী হলো, কিছু বলছ না যে?’
অয়নন্দিতা পাশে তাকায়।
‘আচ্ছা, ভালোবাসা যখন হয় তখন কি সব কিছুতে ওই ভালোবাসার মানুষটাই বিরাজ করে?’
মিলির মুখে হাসি।
‘হ্যাঁ। ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি যার কোনো সময়, বয়স লাগে না। হয়ে যাওয়ার হলে হয়ে যায়। তখন সব কিছু ওই মানুষটাকে ঘিরেই থাকে। একটা কথা বলব?’
‘বলো, কী বলবে।’
‘মন দিয়ে ফেলেছ। তাই না?’
অয়নন্দিতার হাসিটা মলিন কিন্তু অর্থবহ।
‘মন তো সেদিনই দিয়েছিলাম যেদিন শুনেছিলাম তার সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে জড়াব। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ভালোবেসে ফেলেছি।’
‘তাই বুঝি ছাড়তে ইচ্ছে করে না।’
‘নাহ। বলতে পারো এখানে খুব জোর করেই আছি।‘
‘দেখেছ, ভালোবাসা কী অদ্ভুত এক জিনিস।’
‘হয়তো।’
‘আজ ফারহান ভাইকে এখানে আসতেই হবে। তোমায় আজ আটকে রাখব। দেখব তার টান কতটুকু। সে এখানে আসে কি না।’
‘আসার সময় ফোন দিয়েছিলাম। রিসিভ করল না।’
‘ব্যস্ত ছিল হয়তো।’
‘পরে কলব্যাক করতে পারত। করল না কেন কে জানে।’
‘চিন্তা কোরো না। এরপর থেকে বাবা অথবা মা গেলে তুমি আসবে না। ডিরেক্ট বলবে, আমি আমার বরকে ছাড়া থাকতে পারব না। পরে যাব।’
‘হা হা। এভাবে বলা যায়?’
‘যায় তো। আমি তো বলি।’
‘হাসান ভাইয়া অনেক ভাগ্যবান তাহলে।’
‘তবে ফারহান ভাইয়ের কপাল খারাপ।’
‘কেন?’
‘কারণ, এই যে তুমি বলতে পারো না।’
দু’জনের কথার মাঝেই অয়নন্দিতার ফোনটা বেজে ওঠে। অয়নন্দিতা ফোনটা হাতে নিতেই ফারহানের ফোন। এক মুহুর্তও দেরি না করে ফোনটা রিসিভ করে কানে নেয়। ওপাশ থেকে ফারহানের কন্ঠস্বর শোনা যায়,
‘হ্যালো।’

চলবে……………….

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৩২
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

আজ দু’দিন হলো রাতে ঠিক মতো ঘুম হচ্ছে না অয়নন্দিতার। ঘুম না আসার কারণটা জানা খুব সহজ, যা অয়নন্দিতা নিজেই জানে। গতকাল সন্ধ্যায় ফারহান ফোন দিয়েছিল। বলেছিল, আবার ও বাড়ি গিয়েছ। কেন, আমার বাড়িটা বুঝি ভালো লাগে না তোমার?
বার কয়েক বোঝাবার চেষ্টাও করেছিল সে ফারহানকে যে, সে আসতে চায়নি। মামা জোর করাতে আসতে হলো তাকে। মামা মামীর আদরের সে। বাবা মায়ের পর মামা মামী-ই তার আপন। তাই তাদের কথা ফেলতে পারে না অয়নন্দিতা। প্রতিউত্তরে ফারহান বলেছিল, আমি বুঝি কেউ নই তোমার? আমায় ফেলে দুই দিন পর পরই চলে যাও। কেন এমন করো তুমি?
ফারহানের অভিযোগগুলো বেশ ভালো লেগেছিল অয়নন্দিতার। ভালো লাগার বিশেষ কারণ হলো, অয়নন্দিতা বুঝতে পেরেছে অভিযোগগুলোর মাঝে ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। ফারহানের লুকায়িত ভালোবাসাটুকু প্রকাশ পাচ্ছে অভিযোগের মাধ্যমে।
সন্ধ্যায় মামা মামী আর হাসানকে কথা বলতে দেখেছে অয়নন্দিতা। হাসান অয়নন্দিতাকে তাদের কাছে বসতে বললে অয়নন্দিতা মিলির পাশে গিয়ে বসে। অয়নন্দিতার মামা ফারহানকে বলেছেন এ বাড়ি আসতে। ফারহান নাকি বলেছে তার ব্যস্ততা বেশি। যদি পারে তবে আসবে। অয়নন্দিতা বুঝতে পারছে না ফারহানের এই না করার কারণ কী হতে পারে? সে কি আসলেই ব্যস্ত নাকি অয়নন্দিতার সঙ্গে রাগ করেছে। অয়নন্দিতা মনে মনে পণ করেছে আগামী কয়েক মাস এই বাড়ি আসবে না। তাহলে আর ফারহানও রাগ করবে না।
দুপুর বেলা ঘুমানোর কারণে মাথাটা ধরে আছে অয়নন্দিতার। দু’কাপ কড়া লিকারও খেয়েছে কিন্তু ব্যথা কমছে না। ফারহানকে একবার ফোনও দিয়েছিল, লাভ হয়নি। সে রিসিভ করেনি। অয়নন্দিতা মনে মনে বলতে থাকে, লোকটার ভাবভঙ্গি ভালো ঠেকছে না। তার মাথায় কখন যে কী হয় তা বোঝার উপায় নেই।

ঘড়িতে সময় নয়টা।
অয়নন্দিতা তখনও শুয়ে আছে। মিলি হুট করেই ঘরে চলে আসে। দ্রুত পায়ে ঘরে ঢুকেই সে অয়নন্দিতাকে জোর করে তুলে দেয়।
‘ওঠো না, শুয়ে আছো এখনও। খাবা না?’
‘ভাবী, আমার মাথা ব্যথা করছে। এইভাবে নাড়াচাড়া দিচ্ছো কেন?’
‘হা হা। কারণ একটা নাড়াচাড়া মার্কা খবর আছে।’
‘নাড়াচাড়া মার্কা খবর! এমন খবরের কথা জীবনেও শুনিনি।’
‘শোননি তাতে কী হয়েছে? আজ তো শুনলে। চলো। বসার ঘরে চলো।’
‘আচ্ছা আচ্ছা। এইভাবে নাড়িও না আমায়। যাচ্ছি আমি। তুমি যাও, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’
‘ফ্রেশ হওয়া লাগবে না। এমনিতেই চলো।’
‘উফফ ভাবী, যা শুরু করেছ তুমি।’
মিলি অয়নন্দিতাকে জোর করে বিছানা থেকে তুলে দেয়৷ অয়নন্দিতা না চাইতেও উঠে বসে। শালটা ঠিকঠাক মতো শরীরে জড়িয়ে নিয়ে যেই না নামতে যাবে ওমনি কারো কন্ঠস্বর শুনতে পায় অয়নন্দিতা। একটা ভারী কন্ঠস্বর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
‘এই সময়ে শুয়ে থাকলে মোটা হয়ে যাবে তো।’
অয়নন্দিতা হকচকিয়ে ওঠে। নজর দরজার দিকে ঘোরায়। এই মুহুর্তে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। ভূত নয়তো। ফারহান স্ব শরীরে দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। ব্ল্যাক জিন্স হোয়াইট টি-শার্ট পরা ফারহানকে একদম সাধারণ একজন পুরুষ মানুষ লাগছে। অয়নন্দিতা হা করে তাকিয়ে দেখছে তার বরকে। পাশে দাঁড়িয়ে মিলি মুচকি হেসে দু’জনকে দেখছে। দু’জন দু’জনকে এমন ভাবে দেখছে যেন মনে হচ্ছে দু’জনেরই চোখে চোখে কথা হচ্ছে। মিলি আর দাঁড়িয়ে না থেকে পাশ থেকে কেটে পড়ে। মিলি চলে গেলে ফারহান অয়নন্দিতার সামনে এসে দাঁড়ায়। ফারহান বুঝতে পারছে না তার কাছে অয়নন্দিতাকে এত সুন্দর লাগছে কেন। দু’দিন না দেখাতেই কি এত সুন্দর লাগছে নাকি অয়নন্দিতা এমনিতেই এত সুন্দর। লাল জামার সাথে সাদা শালটা বেশ মানিয়েছে অয়নন্দিতাকে। ফারহান মুচকি হেসে অয়নন্দিতার আরও কাছে চলে আসে। আলতো করে অয়নন্দিতার কপালে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায় ফারহান। দু’গালে হাত রেখে অয়নন্দিতার চোখের দিকে তাকায় ফারহান। ভেজা স্বরে বলে ওঠে,
‘অবাক হয়েছ?‘
অয়নন্দিতাও ফারহানের দু’হাত জড়িয়ে ধরে। বলে,
‘অনেকটা।’
‘কেমন দিলাম সারপ্রাইজ?’
‘ভাবী কি এইজন্যই আমায় ডাকতে এসেছিল?’
‘হ্যাঁ। পরে ভাবলাম। নাহ, আমিই যাই আমার বউয়ের কাছে।’
‘হঠাৎ চলে এলেন। ফোন দিয়েছিলাম, রিসিভ করেননি কেন?’
‘সারপ্রাইজ দিব সেইজন্যই রিসিভ করিনি।’
‘এত সারপ্রাইজ দিতে কে বলেছে?’
‘তুমিই বাধ্য করেছ।’
‘আমি!’
‘জি। আমায় রেখে চলে আসো কেন এখানে। জানো না, তোমার পেছনে আমি আমার ভালোবাসার খানিকটা অংশ ইনভেস্ট করেছি। সেই ভালোবাসার অংশটুকু খাটাতে হবে তো। না হলে প্রফিট কিংবা লসের হিসাব পাবো কী করে?’
ফারহানের কথা শুনে অয়নন্দিতা শব্দ করে হেসে দেয়। হাসির শব্দ যেন ঘরের বাইরে না যায় সেইজন্য ফারহান সঙ্গে সঙ্গে অয়নন্দিতার মুখ চেপে ধরে। এরপর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
‘আস্তে হাসো নারী। হাসির শব্দে অন্যরা না জ্ঞান হারায়।’
কথাটা শোনার পর পরই অয়নন্দিতা তার কানের নিচে উষ্ণ স্পর্শ অনুভব করে। সেই স্পর্শে অয়নন্দিতার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে যায়। ফারহানকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে অয়নন্দিতা। ফারহানও অয়নন্দিতাকে জড়িয়ে ধরে পরম ভালোবাসায়।

চলবে…………………………….

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৩৩
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

রাত দুইটা প্রায় ছুঁই ছুঁই। ফারহানের চোখে ঘুম নেই। সে এপাশ ওপাশ করছে। কেন যেন অস্বস্তি বোধ করছে ফারহান। অয়নন্দিতা ফারহানের এমন অবস্থা দেখে শোয়া থেকে উঠে বসে। ফারহান সিগারেটে আগুন জ্বালায়। অয়নন্দিতা ফারহানের পাশে এসে বসে। ফারহান তখন সিগারেট টানছে। এত রাতে ফারহানকে যে কেন সিগারেট টানতে হয় এটাই অয়নন্দিতা বোঝে না। সকাল নয়টা থেকে শুরু করে রাত দশটা পর্যন্ত সে যে কয়টা সিগারেট টানে তার হিসাব রাখা মুশকিল। কিন্তু মাঝে মাঝে গভীর রাতে যে কেন সিগারেট টানতে হয় তাকে এটাই অয়নন্দিতার বুঝে আসে না।
অয়নন্দিতাকে নিজের পাশে বসতে দেখে ফারহান চোখ তুলে তাকায় অয়নন্দিতার দিকে। দেখতে পায় অয়নন্দিতা তার পাশে বসে তাকে দেখছে। ফারহান বুঝতে পারছে অয়নন্দিতার মনে এখন কী চলছে। সে এটাও বুঝতে পেরেছে যে, অয়নন্দিতা মনে মনে ভাবছে এত রাতে কেন সে সিগারেট টানছে। অয়নন্দিতার ঘুমে যাতে ডিস্টার্ব না হয় সে জন্য সে ঘর থেকে বের হয়ে বারান্দায় এসে বসেছিল কিন্তু অয়নন্দিতা কীভাবে যেন টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে যায়।
অয়নন্দিতা পাশে বসেই প্রশ্ন করে,
‘এত রাতেও সিগারেট টানা লাগে?’
‘ঘুম আসছিল না। তাই ভাবলাম এখানে বসে হাওয়া খাই আর সাথে সঙ্গী হিসেবে সিগারেট তো আছেই।’
ফারহানের কথা শুনে অয়নন্দিতাও বুঝতে পারে জায়গা নাড়া পড়ায় হয়তো ফারহানের ঘুম হচ্ছে না। কী মনে করে সে আজ এখানে এসেছে সেটা তো সে নিজেই জানে। অয়নন্দিতা গলা ঝাড়া দিয়ে বলে,
‘এখানে শুধু শুধু আসতে গেলেন কেন? এখন তো ঠিক মতো থাকতে পারছেন না।’
‘তোমায় কে বলল যে, আমি এখানে আসায় ঠিক মতো থাকতে পারছি না। আমি কি একবারের জন্যও অভিযোগ করেছি?’
‘নাহ।’
‘তবে?’
‘এই যে রাতের বেলায় না ঘুমিয়ে চুপচাপ বারান্দায় বসে বসে সিগারেটের সঙ্গে নিজেকে পোড়াচ্ছেন। এতে কি বোঝা যায় না যে, আপনি ঠিক নেই।’
অয়নন্দিতার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে ফারহান। বোঝার চেষ্টা করছে অয়নন্দিতার চোখের ভাষা। মেয়েটা তাকে যে বেশ ভালো বুঝতে পারে এতে সন্দেহ নেই। ফারহান কিছু না বলে হালকা হেসে জ্বলন্ত সিগারেটটা নিজের ঠোঁটে ছোঁয়ায়। অয়নন্দিতা ফারহানের ঠোঁট থেকে সিগারেটটা নিয়ে নিজের হাতে রাখে। জ্বলন্ত সিগারেট পর্যবেক্ষণ করছে অয়নন্দিতা। ফারহান গালে হাত দিয়ে অয়নন্দিতাকে দেখছে। অয়নন্দিতা এমন ভাবে সিগারেটটাকে দেখছিল মনে হচ্ছিল সে আগে কখনও সিগারেট দেখেনি। সিগারেটটা মুখের সামনে ধরে আছে অয়নন্দিতা।
ফারহান সিগারেট নিতে চাইলে অয়নন্দিতা হাত সরিয়ে নেয়।
‘ওয়েট, আমি একটু পরীক্ষা করছি।’
‘আরেহ, কী পরীক্ষা করছ তুমি? শেষ হয়ে যাচ্ছে তো।’
‘আগে বলুন এটা খেলে কী হয়?’
‘কিছুই হয় না। দাও।’
‘নাহ, দেব না।’
‘কেন, দেবে না কেন?’
‘আমার ইচ্ছা।’
‘অয়নন্দিতা, প্লিজ সিগারেটটা দাও। বিরক্ত কোরো না।’
‘নাহ। আমিও টানব?’
‘কী টানবা?’
‘সিগারেট।’
‘তুমি সিগারেট টানবা?’
‘হ্যাঁ।’
ফারহান জানে, অয়নন্দিতা মজা করছে। সে আর যাই করুক, সিগারেট টানবে না। তাই সেও বলে,
‘ওকে। টানো তাহলে। দেখি কেমন টানতে পারো।’
‘হ্যাঁ। টানব।’
‘টানো।’
অয়নন্দিতা সিগারেটটা যেই না ঠোঁটে ছোঁয়াতে তখনই অয়নন্দিতার ঠোঁট জোড়া ফারহানের দখলে চলে যায়।

চলবে………………………

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৩৪
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

কয়েক সেকেন্ডের আদুরে আক্রমণের পর যখন দু’জন একটু দূরে সরে গেল তখনও অয়নন্দিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ফারহানের দিকে। এই মুহুর্তটার জন্য অয়নন্দিতা প্রস্তুত ছিল না। ভালোবাসাময় স্পর্শ সব নারী-ই চায় তবে এইরূপ কিছু আশা করা যায় না। অয়নন্দিতা মনে মনে এমন কিছু চাইলেও ঘটনাটা যে এইভাবে ঘটবে এটা সে ভাবতেও পারেনি। ফারহানও অয়নন্দিতার দিকে তাকিয়ে আছে। অয়নন্দিতার ডান হাতে এখনও সিগারেট জ্বলছে। ফারহান ধীর ভঙ্গিতে অয়নন্দিতার হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে নেয়।
অয়নন্দিতা প্রশ্ন করে,
‘এটা কী হলো?’
‘কী হলো?’
‘এই যে এখন যা ঘটে গেল।’
‘ঘটার ছিল বলেই ঘটে গেল।’
‘তাই বলে এভাবে?’
‘বার বার বলেছিলাম, সিগারেটটা দিয়ে দাও, দিয়ে দাও। তুমি দিয়েছিলে? উল্টো বললে, তুমি নাকি সিগারেট টানবে। এমনভাবে বললে যেন মনে হচ্ছে, সিগারেট একটা চকলেট। খেতে ভীষণ মজা। তুমি সেই মজার খাবার মিস করতে চাও না। শোন, সিগারেট নিয়ে ছেলেখেলা করতে নেই। সিগারেট একবার যাকে ধরে তাকে নিঃশেষ করে তবে ছাড়ে।’
‘আপনি নিঃশেষ হয়েছেন?’
‘বোঝাতে পারব না তোমায় কতটা ক্রাইসিসের মধ্যে আমি থেকেছি। তুমি জানো না, কত রাত আমি নির্ঘুম কাটিয়েছি৷ আমার সেই নির্ঘুম রাতগুলোর সঙ্গী তোমার মতো কোনো সুন্দরী রমনী হয়নি। আমার সেই নির্ঘুম রাতের সঙ্গী হয়েছে এই সিগারেট। আমার শত যন্ত্রণার ভাগ তোমার মতো কোনো রূপবতী মেয়ে নেয়নি। নিয়েছে এই সিগারেট। আমার জীবনে এই সিগারেটের ভূমিকা অনেক। বুঝলে?’
অয়নন্দিতা এতক্ষণ মন দিয়ে ফারহানের কথাগুলো শুনেছে। অয়নন্দিতা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, ল্যাম্পপোস্টের আলোতে ফারহানের চোখ চিকচিক করছে। জমাট বাঁধা পানিটুকুন ফারহানের শত কষ্টের প্রমাণ।
অয়নন্দিতা অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করে,
‘আপনার চোখে পানি কেন?’
অয়নন্দিতার প্রশ্ন শুনে ফারহানের খেয়াল হয় কথাগুলো বলতে গিয়ে তার চোখে পানি এসে জমাট বেঁধেছে। ফারহান ঘাড়টা উঁচু করে চোখের পানি উধাও করার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অয়নন্দিতা বুঝতে পেরে বলে ওঠে,
‘চোখের পানি ওইভাবে উধাও করা যায় না। চোখের পলক ফেলে পানি বের করে দিতে হয়।’
‘নাহ। পুরুষ মানুষ চোখের পানি ফেলে না।’
‘আপনি কখনও ফেলেননি?’
বোকার মতো বলে তো দিয়েছে যে, পুরুষ মানুষ চোখের পানি ফেলে না। অথচ একটা সময় সে নিজেই ঘরের দরজা আটকে প্রচুর চোখের পানি ফেলেছে। কিন্তু অয়নন্দিতার প্রশ্নের উত্তর নেই বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে। এই প্রশ্নের যে কোনো উত্তর নেই তা অয়নন্দিতা জানে। জানে বলেই দ্বিতীয় বার আর প্রশ্ন করেনি।
অয়নন্দিতার মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছা করে ফারহানের অতীত কী ছিল। কিন্তু অয়নন্দিতা সাহস পায় না। কেউ একজন যদি তার অতীত সম্পর্কে বলতে না চ্য তাহলে তাকে জোর করা যায় না। অয়নন্দিতা ফারহানকে জোর করতে চায় না। কিন্তু আজ ফারহানকে এইভাবে দেখে অয়নন্দিতার জানতে ইচ্ছে করছে।
ফারহান৷ হাতের সিগারেটটা শেষ করে অয়নন্দিতার হাতটা ধরে বলে,
‘ঘুমাবে না? চলো, অনেক রাত হলো।’
‘আপনার সিগারেট টানা শেষ হয়েছে?’
অয়নন্দিতার কথা শুনে ফারহান হেসে দেয়।
‘হ্যাঁ, শেষ। চলো।‘
অয়নন্দিতাও ফারহানের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,
‘চলুন।’

পাশাপাশি দু’জন মুখোমুখি হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। ফারহানের একটা হাত অয়নন্দিতার চুল এবং মুখশ্রীকে স্পর্শ করছে। ফারহানের ছোঁয়ায় অয়নন্দিতা নিরাপদ অনুভব করে। জরুরী নয় যে, সব ছোঁয়া নোংরা হবে। আবার এটাও জরুরী নয় যে, সব ছোঁয়া নিরাপদের হবে। কিন্তু এই ছোঁয়া নিরাপদের, এই ছোঁয়া শান্তির।
অয়নন্দিতা হালকা হেসে ফারহানকে বলে,
‘সকালে অফিসে যাবেন তো। ঘুমিয়ে পড়ুন।’
‘সকালে অফিসে যাব না। আগে তোমায় নিয়ে বাসায় যাব। তোমার রেখে ফ্রেশ হয়ে এরপর অফিস যাব।’
‘আপনি আমায় নিয়ে যাবেন?’
‘হ্যাঁ। কেন, যাবে না আমার সঙ্গে?’
ফারহানের কথাটা অয়নন্দিতার কানে অসহায়ত্বের মতো শোনাল। অয়নন্দিতা এক সেকেন্ড সময় না নিয়েই বলে দিল যে সে ফারহানের সঙ্গেই যাবে।
মিনিট পাঁচেক পর ফারহান একটা আবদার জুড়ে দেয় অয়নন্দিতার কাছে।
‘অয়নন্দিতা, শুনছো?’
ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে অয়নন্দিতা ফারহানের দিকে তাকায়।
‘শুনছি। বলুন।’
‘আমার বুকে মাথা রাখবে?’
এমন আশ্চর্যজনক আবদার শুনে এত রাতে অয়নন্দিতা সত্যিই অবাক হয়। সে এর আগেও অনেক রাত ফারহানের সঙ্গে একই বিছানায় কাটিয়েছে। ফারহান কখনও এইভাবে তাকে বলেনি। অয়নন্দিতার নির্বাক চাহনি দেখে ফারহান বলে,
‘অবাক হবার তেমন কিছুই হয়নি। আমি শুধু পরখ করতে চাই।‘
‘কী পরখ করতে চাচ্ছেন?’
‘তোমার মাথা এই বুক স্পর্শ করলে কেমন অনুভূতি হবে। এটাই পরখ করব।’
‘অনুভব মাপতে চাইছেন?’
‘হয়তো তাই-ই।’
‘একটা প্রশ্ন করি?’
‘করো।’
‘রাগ করা যাবে না কিন্তু।’
‘করব না।’
‘অতীতে যিনি ছিলেন সে বুকে মাথা রাখার পর কেমন অনুভূতি হয়েছিল?’
ফারহান অয়নন্দিতার দিকে তাকিয়ে আছে। অদ্ভুত প্রশ্ন করেছে অয়নন্দিতা। হয়তো জানার কৌতূহল অনেক বেশি তার। নয়তো দেখতে চাইছে কার প্রতি কেমন অনুভূতি। ফারহান বেশি কিছু না বলে অয়নন্দিতাকে ইশারা করে। ইশারায় সম্মতি জানিয়ে অয়নন্দিতা ফারহানের বুকের এক পাশে তার মাথা রাখে। অয়নন্দিতার চুলের ঘ্রাণ তখন পুরোপুরি ভাবে ফারহানকে কাবু করে ফেলেছে। এক হাত দিয়ে অয়নন্দিতার এক বাহু জড়িয়ে রাখে ফারহান।
অয়নন্দিতা ভাবছে সম্পর্কটা আরেকটু এগোলে ভালো হতো। মানুষটা খারাপ না। এমন একজন মানুষ কী করে এতটা কষ্ট পায়? মানুষটার অসম্ভব এক ক্ষমতা আছে। তার ভালোবাসার ক্ষমতা এতটাই বেশি যে, অন্য কেউ খুব সহজেই তার প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে।
বুকের যে পাশটায় অয়নন্দিতা মাথা রেখেছে সেই পাশটা কিছু সময় পর স্যাতস্যাতে হয়ে যায়। ফারহান বুঝতে পেরে অয়নন্দিতা মাথায় হাত রেখে বলে,
‘তুমি কাঁদছ কেন? কেঁদো না। আমার দুঃখে খুব কম মানুষ কেঁদেছে। আমি কখনও কাউকে আমার কষ্ট দেখাইনি সেইভাবে। শতভাগের মধ্যে মাত্র বিশ ভাগ দেখাতেই তোমার এই অবস্থা। একেবারে কেঁদে অস্থির। বাকি আশি ভাগ দেখালে তো তোমায় বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। এইভাবে কখনও কাঁদবে না। জানি না কতটা সত্যি হবে, তবুও বলি তোমায়, হয়তো জীবনে কোনো না কোনো সময় একটা খারাপ সময় তোমার পার করতে হবে। ভেঙে পড়বে না। ভেঙে পড়লেই তুমি দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাবে। শক্ত থাকবে সব সময়। দেখবে একটা সময় পর সমস্ত কষ্ট চেপে রাখার অসাধারণ ক্ষমতাটা তুমি জব্দ করতে পেরেছ।’
ফারহানের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকা অয়নন্দিতা কখন যে ঘুমিয়ে গেছে সেটা আর ফারহান উপলব্ধি করতে পারেনি। সাড়াশব্দ না পেয়ে যখন অয়নন্দিতার দিকে তাকায় তখন দেখতে পায় অয়নন্দিতা ঘুমিয়ে আছে তার বুকে। ঘুমন্ত অয়নন্দিতার মুখখানা একটা নিষ্পাপ বাচ্চার মতো লাগছে ফারহানের কাছে। ফারহান একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে অয়নন্দিতার দিকে। এইভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ফারহানও ঘুমিয়ে পড়ে তার খবর ছিল না।
বাইরে তখন নিস্তব্ধতা। আকাশে অর্ধচাঁদ সেই সাথে কিছু তারা। হালকা হিম বাতাসও বইছে। ঘরের ভেতর এক জোড়া দম্পতি পরম নিশ্চিন্তে একজন অন্যজনকে আঁকড়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।
ভালোবাসতে এর থেকে বেশি কিছু আর কী লাগে?

চলবে………………………….

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৩৫
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

ফারহান অয়নন্দিতার সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও গভীর আকার ধারণ করছে। ইদানীং সময়ে তাদের দু’জনের প্রতি দু’জনের ভালোবাসা তীব্র হচ্ছে। ফারহান অয়নন্দিতার সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে যোগাযোগ করতে চায়। অয়নন্দিতা ফারহানের কন্ঠস্বর না শুনে থাকতে পারে না। তাদের দেখে মনে হয় তারা যেন সদ্য প্রেমে পড়া কোনো এক তরুণ তরুণী। যারা সবে মাত্র আঠারোতে পা দিয়েছে। বাসায় যতটা সময় থাকে দু’জন দু’জনের আশেপাশে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় অয়নন্দিতা রান্নাঘরে থাকলে ফারহান কোনো না কোনো কিছুর বাহানায় রান্নাঘরে এসে অয়নন্দিতাকে দেখে যায়। আবার অয়নন্দিতা চায়ের ছুতো ধরে ফারহানের কাছে যায়। ফারহান অফিস চলে গেলে কয়েক মিনিট পর পর সময় করে ফারহান অয়নন্দিতাকে ভিডিও কলে দেখে।
বিকেল বেলা অয়নন্দিতা চুপচাপ বসে আছে নিজের ঘরে। ফারাশ ঘরের দরজায় নক করে। অয়নন্দিতা ভেতর থেকে শব্দ করলে ফারাশ ঘরে ঢোকে। অয়নন্দিতাকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে ফারাশ পাশে গিয়ে বসে। এই সময় সাধারণত ফারাশ বাসায় থাকে না। আজ ফারাশকে বাসায় দেখে খানিকটা অবাক হয় অয়নন্দিতা। ফারাশ প্রশ্ন করে,
‘কী খবর রাজরানী?’
‘কী খবর জানতে চাও?’
‘যে খবর শোনাবে। সেই খবরই জানব।’
‘আজ বের হওনি?’
‘নাহ। আজ আর বের হবো না।’
‘কেন? বান্ধবীর সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে নাকি?’
অয়নন্দিতার কথা শুনে ফারাশ চমকে যায়। মূলত সে এই বিষয়েই কথা বলতে এসেছিল। ফারাশের এতো বিন্দাস লাইফেও ট্র‍্যাজেডি চলছে। অয়নন্দিতার সঙ্গে শেয়ার করবে বলেই এই ঘরে আসা। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, অয়নন্দিতা ধরে ফেলেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এটা তার অনুমান নাকি কোনো না কোনো ভাবে সে জানতে পেরেছে। ফারাশ জবাবে বলে,
‘নারীর মন এমন কেন?’
‘কেমন?’
‘এত চাহিদা কেন তাদের মনে?’
‘আমার মনে তো নেই। তাহলে কি আমি নারী নই?’
‘সেই কথা কখন বললাম। তুমিও নারী সেও নারী। শুধু তফাৎ আছে মনের দিকে।’
‘কী হয়েছে? মনটা,ভীষণ বিষন্ন লাগছে। খুলে বলা যায় আমায়?’
‘রাজরানী, তুমি কি জানো, আমি নায়াকে অনেক বেশি ভালোবাসি। নায়াও আমায় ভালোবাসে। তবে,,,’
‘যেখানে দু’জনার প্রতি দু’জনার এতো ভালোবাসা সেখানে তবে নামক ছোট্টো শব্দটা কেন আসে?’
‘তবে নামক ছোট্টো শব্দটা আসার কারণ আছে। নায়ার বাবা সেই ছোট্টো শব্দের সঙ্গে মিশ্রিত।’
অয়নন্দিতা এবার আরও কনফার্ম হয়েছে যে, নিশ্চয়ই গুরুতর কিছু হয়েছে। অন্যান্য সময় ফারাশ তাকে হাসায় কিন্তু আজ ফারাশের মুখে হাসি নেই। ফারাশ চুপচাপ বসে আছে।
‘নায়া’র বাবা কী চাচ্ছেন আর নায়া-ই বা কী চাচ্ছেন?’
‘নায়া’র বাবা যা চায়, নায়াও তার সাথে হ্যাঁ হ্যাঁ করছে।’
‘একটা কাজ করলেও তো পারো। তোমার ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারো।’
‘কী কথা বলব?’
‘নায়া এবং তার বাবার চাহিদা নিয়ে কথা বলবে।’
‘নায়া’র বাবা লোকটাকে আমার সুবিধার বলে মনে হয় না।’
‘ভবিষ্যতে তোমার শ্বশুর হবে।’
‘ধুর, শ্বশুর। শ্বশুর না, উনি অসুর।
ফারাশের কথা শুনে অয়নন্দিতা শব্দ করে হেসে দেয়। অয়নন্দিতার হাসির শব্দে ফারাশের মুখেও হালকা হাসি আসে।
হাসি বন্ধ করে অয়নন্দিতা বলে,
‘তোমার ভাইয়া আসুক। আমি কথা বলব। নায়া তোমার ঘরেই আসবে। আর নায়া’র বাবা, তোমার শ্বশুর হবেই হবে।’
‘ওই লোকটাকে আমি এমন শিক্ষা দিব। হাড়ে হাড়ে বুঝবে আমি ফারাশ কী জিনিস।

চলবে………………….

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৩৬
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

ফারহানের পাশে বসে অয়নন্দিতা ভাবছে ফারাশের ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলার এমন ভালো সুযোগ আর হবে না। ফারাশ আর নায়া’র ব্যাপারটা ফারহানকে বলতে হবে। বললে হয়তো ফারহান কিছু একটা করতে পারবে। যেই ভাবা সেই কাজ। অয়নন্দিতা ফারহানের দিকে তাকায়। ফারহান অয়নন্দিতার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘কিছু বলবে?’
‘হ্যাঁ, একটা কথা বলার ছিল।’
‘একটা কেন, যতটা মন চায় বলো। আমি এখন ফ্রী আছি।’
‘ফারাশ ভাইয়ার ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।’
ফারাশের নাম শুনে ফারহান কিঞ্চিৎ ভ্রু জোড়া কুঁচকে অয়নন্দিতার দিকে তাকায়।
‘ফারাশের ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছো। কী হয়েছে?’
অয়নন্দিতা তার নিজের মতো করে ফারহানের কাছে ফারাশ এবং নায়া সম্পর্কে বলতে শুরু করে।

নিজের কেবিনে বসে অয়নন্দিতার কথা ভাবছে ফারহান। মেয়েটাকে যত দেখে ততই অবাক হয় সে। যত দিন বাড়ছে ততই অয়নন্দিতা তার দায়িত্বগুলো বুঝে নিচ্ছে। আর এক অদ্ভুত ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে ফেলেছে তাকে। এই বন্ধন এমন এক বন্ধন যা থেকে বের হওয়া ফারহানের পক্ষে সম্ভব না।
রোজ সকালে স্যুট রেডি করা থেকে শুরু করে ওয়ালেটটা পর্যন্ত গুছিয়ে রাখে অয়নন্দিতা। ফারহান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে সব কিছুই হাতের কাছে পায়। তার আর এক্সট্রা করে কিছু খুঁজে নিতে হয় না। অয়নন্দিতা তার সমস্ত টুকু দিয়ে চেষ্টা করে ফারহানকে ভালো রাখতে।
ফারহান ভাবে এমন একজন মানুষকে ছাড়া তার পক্ষে সম্ভব হবে না। ভালো না বেসে থাকাও যাবে না। ভালো তো সে বাসেই তবে এই ভালোবাসা আরও দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেছে। ইদানীং ফারহানের একটা বদভ্যাস হয়ে গেছে। রোজ রাতে অয়নন্দিতার গলায় গান শোনা। রোজ রাতে ঘুমানোর আগে অয়নন্দিতাকে নিজের পাশে বসিয়ে আকাশের চাঁদ দেখায় ফারহান। যেদিন আকাশে চাঁদ থাকে না সেদিন দু’জন মিলে তারা গুনতে শুরু করে। আকাশ ভর্তি তারা তাদের দু’জনের পক্ষে গুনে শেষ করা সম্ভব না এটা দু’জনেই জানে। তবুও মিছি মিছি গুনতে আরম্ভ করে। এরপরেই শুরু হয় ফারহানের আবদার — অয়নন্দিতা, খোলা গলায় গান ধরো। প্রথম প্রথম না করত অয়নন্দিতা। কিন্তু এখন আর না করে না। ফারহান শুনতে চাইলেই সে গান শোনায়। কখনও রবীন্দ্রসংগীত কখনও বা আধুনিক। ফারহানের মনে হয় অয়নন্দিতা যদি গানটা কন্টিনিউ করত তবে অনেক নাম ডাক করতে পারত। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ভাবে, নাম ডাক হয়নি ভালোই হয়েছে। নয়তো আমি তাকে কীভাবে পেতাম।
দিন যাচ্ছে। রাতগুলো পার হচ্ছে। সময় বয়ে যাচ্ছে। তাদের দাম্পত্য জীবনে এখন আর আগের মতো দূরত্ব নেই৷ আছে শুধু ভালোবাসা। দু’জনের প্রতি দু’জনের অগাধ বিশ্বাস। আর কী চাই। ফারহান এখন ভালোই আছে। আগের ক্ষতগুলো এখন আর তাকে জ্বালায় না তেমন। অতীত তাড়া করলেও অতীতকে তাড়া করে না ফারহান। অতীতকে পেছনে ফেলে বর্তমান নিয়ে সামনে এগোচ্ছে সে। অয়নন্দিতারও এখন তেমন মন খারাপ লাগে না। স্বামী সংসার নিয়ে বেশ ভালো আছে। অন্যদিকে পড়াশোনাতেও এগোচ্ছে। মাঝে মাঝে মামা বাড়ি ঘুরে আসে। তবে এখন আর রাতে থাকে না সেখানে। কারণ এখন যে সে ফারহানকে ছাড়া থাকতে পারে না।
কে বলেছে মানুষ একবার হেরে গেলে দাঁড়াতে পারে না। জীবন মানুষকে দ্বিতীয়বারও সুযোগ দেয়। ফারহানকে নতুম করে ভাবতে শেখানোর জন্য জীবন তাকে অয়নন্দিতার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে। অয়নন্দিতার সঙ্গে দ্বিতীয় সূচনা করে ভুল করেনি সে। সে যে ভুল ছিল তা এখন সে ক্ষণে ক্ষণে বুঝতে পারে। সব নারী তো এক হয় না। কিছু নারী ব্যতিক্রমও হয়। সেই ব্যতিক্রম নারীই হচ্ছে অয়নন্দিতা।
ফোনের শব্দে হঠাৎ ধ্যান ভাঙে ফারহানের। মোবাইলের স্ক্রিনে মায়ের নাম্বারটা ভাসছে। মায়ের নাম্বার থেকে ফোন আসায় ফারহানের কপালে ভাজ পড়ে। কারণ, সাধারণত এই সময়ে তার মা ফোন করে না। আর তাছাড়া ঘন্টা খানেক আগেই তো অয়নন্দিতার সঙ্গে কথা হয়েছিল তার। ফারহান ফোন রিসিভ করতেই রওশন বেগম কেঁদে ওঠেন। কান্নার শব্দটা শুনতে পেয়ে ফারহানের বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে। কান্নার শব্দগুলো যেন বলছে কারো বিপদ হয়েছে। ফারহান উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করে,
‘মা, কী হয়েছে? কাঁদছ কেন?’
ছেলের মুখে প্রশ্ন শুনে রওশন বেগম কান্নার মাত্রা বাড়িয়ে বললেন,
‘ফারহান, অয়নন্দিতা পড়ে গেছে।’
‘পড়ে গেছে! মানে কী? কীভাবে পড়ে গেছে?’
‘গাছে পানি দিতে গিয়ে পড়ে গেছে।’
রওশন বেগমের কান্নার জন্য ফারহান কিছুই বুঝতে পারে না। এই মুহুর্তে ফারহান চোখের সামনে অন্ধকার দেখছে। ফারহান অফিস থেকে হুড়োহুড়ি করে বের হয়ে যায়। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার কিছুক্ষণ পর সাজির ফোন পায় ফারহান। হন্তদন্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করে সে।
‘ভাইয়া, বাসায় যেও না। সোজা মেডিকেলে চলে আসো।’
‘কী হয়েছে, একটু বলবি?’
‘হাইপার হয়ে গাড়ি না চালিয়ে ঠান্ডা মাথায় গাড়ি চালাও। ভাবী সুস্থ আছে এখন। মা ঘাবড়ে গিয়েছিল তাই কান্নাকাটি করেছে বেশি।’
‘কীভাবে পড়েছে?’
‘হসপিটালে এসো। এরপরই বলছি।’
সাজির ফোন কেটে ফারহান পাগলের মতো গাড়ি চালাতে শুরু করে। গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে হবে তাকে। যত দ্রুত সম্ভব অয়নন্দিতার কাছে যেতে হবে তাকে। কে জানে কেমন আছে সে।

চলবে……………………….