নন্দিতা পর্ব-০৬

0
250

#নন্দিতা
পর্ব -০৬
#kheya

নন্দিতার মায়ের চাপা আহা/জারিতে ভাড়ি হয়ে আছে বাড়িটা।
ক্ষণে ক্ষণেই তিনি বিলাপ করে কেঁ/দে উঠছে।আর আর্তনাদ যেন রায়াজের কলিজা চিরে বেরিয়ে আসছে।
মেয়েকে হারানোর শোকে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন নন্দিতার মা।

আজ তিনটে দিন নন্দিতার কোনো খোঁজ নেই। নন্দিতা যে বাড়ি ছেড়ে পালানোর মেয়ে না তা রায়াজ জানে।তাই তো নিশ্চিত কোনো বিপদ আশংকা করে এদিকওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে মেয়েটার খোঁজে।এই তিনদিন রাসেলকেও সে ফোনে পাইনি।সাহস করে বাসায় কিছু বলতে না পারলেও পুলিশকে জানিয়েছে রাসেলের ব্যাপারে সব।

তিনটে রাত কারো চোখে ঘুম নেই।নন্দিতাকে ব্যক্তিগত ভাবে খুব একটা পছন্দ না হলেও এভাবে নন্দিতার নিখোঁজ হওয়াটা মেনে নিতে পারছেনা রায়াজ।কেবল নিশপলক ভাবে নন্দিতার মায়ের দিকে চেয়ে থাকে।তার বিলাপ শুনে যে কোনো উন্মাদ মানুষ ও অনুভব করতে পারবে সন্তান হারানোর তীব্র শোক।

” রায়াজ বাবা আমার মেয়েটা একটা বার আমার কাছে এনে দে।আমি কথা দিচ্ছি ও আর তোকে বিরক্ত করবেনা।
শুধু একটা বার আমি আমার মেয়েটাকে চোখের দেখা দেখতে চাই।তাকে একটা বার ছুঁয়ে অনুভব করতে চাই সে ঠিক আছে।আমার মেয়টাকে এনে দে না রে বাবা।”

নন্দিতার মায়ের এমন আহাজারিতে রায়াজের চোখের কার্নিশে জল জমে গেলো।কী জানে মেয়েটা কোথায় আছে। কেমন আছে।

এদিকে রায়াজের মনটাও ভালো নেই।রিয়া কীভাবে পারলো এমন করতে।আসলেই কী প্রথম ভালোবাসা কেউ ভুলেনা।
রিয়া অবশ্য পরে অনেকবার ফোন দিয়েছিল রায়াজকে।তবে রায়াজ ফোন ধরেনি।
____________

সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে নন্দিতার লা/শ।
পাশেই অবাক দৃষ্টিতে নন্দিতার দিকে তাকিয়ে আছে রাসেল।
মেয়েটা কী সত্যি ম/রে গেলো।কথাটা ভাবতেই হেসে উঠে রাসেল।
মেয়েটা তো ম/রে/ছেই । অনেকদিন আগেই মরেছে।শরীরের কিছু জায়গায় প/চন ধরেছে। দুগর্ন্ধে থাকা যাচ্ছে না। তবুও কী মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে রাসেল।

” এই যে নন্দিতা শুনছো।বলেছিলাম না কোনেদিনও ছেড়ে যেতে দেবোনা আমায়। তাহলে আমাকে ছেড়ে পালানোর কথা ভাবলে কীভাবে।
তোমায় কেমন আটকে দিলাম দেখলে তে।”

বলেই বিকৃত স্বরে হেসে উঠল রাসেল।
নন্দিতার মুখটা খুব ভ/য়া/নক দেখাছে।মুখের একদিকের মাংসে পচ/ন ধরেছে আর এক দিকটা এ/সিডে ঝল/সানো,,,,

হাতের সিগারেট টা প্রায় ফুরিয়ে এসেছে।সেটা ফেলে আরও একটা নতুন সিগারেট জ্বালালো।আনমনে বলে উঠলো

” তুৃৃমি ঠিকই বলেছিলে নন্দিতা – আমরা সবসময় ভুল মানুষকে ভালোবাসি।”

মেয়েটা যে আহামরী সুন্দর তা কিন্তু নয়।তবুও রাসেল নন্দিতার মায়ার অদ্ভুত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আবারো বিকট শব্দে হেসে উঠলো রাসেল।নন্দিতার লা/শের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,সেদিন তুমি ছিলে বৃষ্টিতে আধভেজা মায়াবতী আর আজ তুমি হলো আধ?পচা একটা লা/শ। তবুও তো তুমি আমারই বলো,,,,

___________

সাতটা দিন পার হলেও নন্দিতার কোনো খবর পায়নি কেউ।পুলিশ গোয়েন্দা কম লাগানে হয়নি।তবুও সব নির্বিকার,,,,

,,,,

চোখের সামনে নিজের মেয়ের এমন বি/কৃত লা/শ দেখে মুহুর্তেই জ্ঞান হারালেন নন্দিতার মা।
তবে অবশ্য এটাকে লা/শ বলা চলেনা। একটা পচে যাওয়া মাংস/পিন্ডের মতো লাগছে।
দুর্গন্ধ আশেপাশে থাকা যাচ্ছেনা।
,,,,,,

এই চঞ্চল মেয়েটা আর কখনোই তাকে ভালেবাসি ভালোবাসি বলে জ্বালাবেনা ভাবতেই চোখদুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে রায়াজের। এমন পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিবে জানা নেই রায়াজের।কীভাবে ফুফুর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিবে জানা নেই তার।

আপাতত মাথা কাজ করছেনা তার।ইচ্ছে ভীষণ জোরে মন খুলে চিৎকার করে কাঁদতে।তবে সে ভেঙে পড়লে তো হবেনা।বাকি মানুষ গুলোকে সামলাবে কে।

___

লা/শটা যে সত্যি নন্দিতার তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন।তবে লা/শটার যা ভয়া?নক অবস্থা কাছে এগেতো সাহস পাচ্ছেনা কেউ।তবুও যতটুক যা করা সম্ভব তা করা হবে।

দ্রুত দাফনকাজ শেষ করা হলো নন্দিতার।আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়ত আরো খারাপ অবস্থা হতো লাশ/টার।

ক্ষণে ক্ষণে জ্ঞান হারাচ্ছেন নন্দিতার মা।জ্ঞান ফিরলেই বিলাপ শুরু করছে

” আমার মেয়েটা কী এমন দোষ করেছিল।যে এমন নিষ্ঠুর পরিণতি হলো তার।কোন অমানুষ আমার নিষ্পাপ মেয়েটার সাথে এমন করল।”

তাকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা আজ কারো জানানেই।
লা/শ দাফন শেষেই আমার থানায় ছুটল রায়াজ।লা/শটা যে নন্দিতার এটা সে মানতেই পারছেনা।লাশের অবস্থা এমন বিকৃ/ত ছিল যে বোঝার কোনো উপায় নেই।তবে পরণের জামা ঘড়ি এমনকী ব্যাগটাও নন্দিতারই ছিল।

“”””
রায়াজকে ভীষণ বিধ্বস্ত লাগছে।থানার ওসি ওকে বসিয়ে একগ্লাস পানি দিলো।

” খেয়ে নাও।”

রায়াজ একনিঃশ্বাসে সবটা শেষ করে বলল
” লা/শটা কোথায় পেলেন কী ভাবে পেলেন। ”

” তোমার সন্দেহই ঠিক ছিল রায়াজ।নন্দিতা নিঁখোজের প্রায় সাতদিন পর আমাদের কাছে একটা কল আসে।সেখানে একটা ঠিকানা দিয়ে বলা হয় নন্দিতাকে ওখানে পাবে।আমরা প্রথমে পাত্তা দেয়নি।তবে চেষ্টায় কোন ত্রুটি রাখতে চাইনা বলেই সেখানে গিয়েছিলাম।
পরে অবশ্য নাম্বারটার খোজ বের করেছিলাম।সিমটা রাসেলের নামে রেজিস্ট্রার।তবে আমরা রাসেলের কোন হদিস পাচ্ছিনা।আমাদের ধারণা সবটা রাসেলেরই করা।”

” কপালের কোণে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো বা’হাত দিয়ে মুছে নেয় রায়াজ।রাসেল একটা উন্মাদ আর নিকৃষ্ট হয়েগেছে জানা ছিল না তার।বড্ড ভেঙে পড়েছে সে নিজেও।কারো এমন পরিণতি চোখে দেখা যায় না।

” আপনি লোক লাগান।যতজন লাগে,, যতটাকা লাগে আমি দেবো। তবে রাসেলকে যতদ্রুত সম্ভব খুঁজে বের করুন।নয়ত আরও মেয়ের প্রাণ নিবে সে এমম নৃ/শংস/ভাবে।”
_____

দীর্ঘ সাতদিন পর আজ বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো রায়াজ। এতকিছু আর সহ্য হচ্ছেনা তার।মাথাটা বড্ড ধরে আছে।
এই এখনই বুঝি নন্দিতা এসে বলবে ” চা করে দিবো রায়াজ ভাই।”

তবে পরক্ষণেই তার মনে পড়লো।নাহ! নন্দিতা তো আর আসবেনা।আর নক না করেই তার রুমে ঢুকে যাবেনা।ভালোবাসি বাসি করবেনা।কথায় কথায় আর তো কারো কান্না দেখা হবেনা রায়াজের।
এসব ভাবনায় রায়াজের চোখের কার্নিশ ভেদ করে একফোঁটা জল নিচে পড়ে গেলো।
রায়াজ কখনো কাঁদে না।ছোটবেলা থেকে একটাই শিখে এসেছে সে ছেলেদের কাঁদতে নেই।এমনকি রিয়া চলে যাওয়ার পরও কাঁদেনি সে।
তবে আজ তার বুক ফেটে কান্না আসছে।বাড়ির লোকহগুলোর সামনে কান্নাগুলো আটকে রাখলেও এখন আর আটকে রাখতে

এখন আর আটকে রাখতে পারলোনা সে।
কলিজাটা যেন দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে তার।নন্দিতাকে ভালোবাসেনি সে। তবে ছোটবোনের মতো স্নেহ করে এসেছে এতগুলো বছর।
কান্না থামিয়ে আনমনে বলে উঠে,,
” তোর সাথে যে এমন করেছে তার পরিণতি আরও ভ/য়াবহ হবে।”

——-

নাওয়া খাওয়া প্রায় বন্ধ নন্দিতার মায়ের।ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।মাঝে কেটেছে চারটা দিন।পুরো এগারোটা দিন হলো নন্দিতা বাসায় নেই।
আগে একটা মুহুর্ত সে অন্য কোথাও গিয়ে থাকতো না।তার নাকি অন্য কোথাও শান্তি লাগতোনা।

নন্দিতার মা রায়াজের হাতদুটো ধরে বলে

” আমাকে একবার নন্দিতার কাছে নিয়ে যাবি বাবা।কতদিন হয় মেয়েটাকে একটু ছুৃয়ে দেখা হয়না।”

” আচ্ছা চলো।”
______

নন্দিতার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রায়াজ আর ওর মা।কব/রের কাছে যাওয়ার সাহস আর হলোনা।সেখানেই হুহু করে কেঁদে উঠলেন নন্দিতার মা
” কী এমন পাপ আমি করেছিলাম, আল্লাহ।তুমি নন্দিতার বাবাকেও এত দ্রুত নিয়ে গেলে আমার থেকে।এখন আমার মেয়েটার ও এমন করুণ পরিণতি হলো।কী পাপ করেছিলাম আমি যার জন্য আমার মেয়েটার এমন পরিনতি হলো।না জানি কতদিন ধরে কত কষ্ট পেয়েছে আমার মেয়ে’টা।”

ফুফুকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা রায়াজের জানা নেই।সত্যি ভীষণ খারাপ লাগে তার নন্দিতার কথা মনে পড়লে।
শেষ গোসলটাও কপালে জোটেনি মেয়েটার।কোনমনে প/চা মাংসগুলো পলিথিনে পেচিয়ে কব/রস্থ করা হয়েছে।
যে অমা/নুষ একটা নিষ্পাপ মেয়ের সাথে এমন করলো তাদের কী সৃষ্টিকর্তা শাস্তি দিবেন না।ভেবেই রায়াজের চোখ দিয়েও দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
অকপটে রায়াজের ফোনটা বেজে উঠতেই,,,

চলবে..?