নন্দিতা পর্ব-৪+৫

0
245

#নন্দিতা
পর্ব-০৪+৫
#kheya

সকাল থেকেই বেশ হুলস্থুল চলছে বাড়িয়ে।রায়াজের মামাবাড়ির সবাই আজ এবাড়িতে আসবে।রান্নার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে সকাল থেকেই।উদ্দেশ্য নন্দিতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেখতে আসা।তবে নন্দিতা এখবর জানেনা।
নন্দিতার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তার মা-ই মিসেস রহমান কে এনিয়ে কথা আগাতে বলে।

রায়াজের মামাবাড়ির লোকেরা এবাড়িতে খুব কমই আসেন।কুটুম বাড়িতে বেশি আসলে কদর কমে যায়, এ চেতনায় বিশ্বাসী তারা।তাই যখন আসে তখন মিসেস রহমানের উচ্ছ্বাসের শেষ থাকেনা।মিসেস রহমানের হাতে হাতে কিছু কাজ করে দিয়ে সবে বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিয়েছে সে।তখনই দুচোখে রাজ্যের ঘুম ভর করলো।

——

গোসল সেরে সবে বেরিয়েছে নন্দিতা।মাথায়থেকে টাওয়ালটা খুলে বিছানায় ছুড়ে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ায়। আয়নায় রায়াজকে দেখে চমকে যায় সে।হঠাৎ উনি এখানে
হাতে তোয়ালেটা নিয়ে বসে আছে সে।নন্দিতা কী তবে এটা রায়াজের মুখেই ছুড়ে দিয়েছিল।

নন্দিতার আকাশকুসুম ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে রায়াজ বলে উঠলো

” আজকে তোকে বেশ খুশি দেখাচ্ছে।খুব তাড়া না তোর বিয়ে করার।”

” কিসের তাড়া রায়াজ ভাই।”

” এমন ভাব করছে যেন কিছুই জানোনা। বলেছিলাম না পড়াশোনা করো মন দিয়ে।এসব বাদ দেও।”

অবাক চোখে নন্দিতা আবার ও জিজ্ঞেস করে

” কী বাদ দেব রায়াজ ভাই।”

” মামা মামিরা আজকে কেন আসছে জানিস?তোর আর রাসেলের বিয়ের কথা পাকাপাকি করতে।শোন নন্দিতা রাসেল ওপর ওপর যতই ভালোমানুষ হোক না কেন। ওর সাথে নিজপর জীবন জরানো মানে নিজেকে পচা লাশ বানিয়ে ফেলার পথে চলা।”

নন্দিতা থমকে গেলো।সে তো তার মাকে বলেছিল সেদিন আবেগের বসে ওমন কথা বলে ফেলেছিল।সে বিয়ে করতে চাইনা।রায়াজকে না পেলে অন্যকাউকে লাগবেনা না।মাথা নিচু করে রায়াজের দিকে না তাকিয়েই বলে

” আমি তো পরে বলেছিলাম আমি বিয়ে করতে চাইনা।
রায়াজ ভাই! বিয়েটা বন্ধ করে দিবেন প্লিজ।আমি বিয়েটা করতে চাইনা।”

” ফুফুই বিয়ের কথা পাকা করতে বলেছে। ”

নন্দিতার চোখ দিয়ে রায়াজের আড়ালেই এক ফোটা পানি টপকে গেলো।মা কীভাবে পারলো এটা,,,

______

সূর্য প্রায় ডুবে এসেছে।রাসেলের বাবা মাও চলে গেছে।বেশ মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে তারা।নন্দিতা তাদের সামনে যায়নি।স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে সবাইকে।সে মানা করার পরও কেন এমন করা হলো।নন্দিতার মা তাকে বোঝাতে এসেছিল।তবে কিছু শোনার দরকার মনে করেনি সে।

ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছে সে। কোনকিছু ভালোলাগছেনা তার।জীবনে কোনো কিছুই কী সে তার মন মতো পাবেনা।
মাথায় কারো আলতো স্পর্শ পেয়ে চোখখুললো নন্দিতা।এদিক ওদিক তাকানোর দরকার মনে করলোনা। সে জানে এটা কে।

নন্দিতার মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো

” এমন করিস না মা।রাসেলকে বিয়ে করলে তুই ভালো থাকবি। রায়াজকেও ভুলে যেতে পার,,,”

কথার পিঠেই নন্দিতা বলে উঠল

” তুমি কী আসলেই আমার মা! তুমি কী আমাকে একটুও বুঝোনা।আমার কথা আমার ইচ্ছার কোনো দাম কী তোমার কাছে নেই।আমি না করার পরও কেন করলে এমন।নাকি ভাইয়ের কাছে ভালো সাজতে গিয়ে বারবার আমাকে বলির পাঠা বানাতে চাও।
আমি রায়াজ ভাইকে ভুলতে চাইনা বুঝেছো।তাকে ভুলে যাওয়ার জন্য ভালোবাসিনি আমি।”

বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে কথাগুলে বলে উঠলো নন্দিতা।নন্দিতার মা কাঁদে কাঁদো গলায় ওর তাকাতেই সে আবার বলল

” তুমি যদি আমার এতই ভালো চাও তাহলে আমার কিছু নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা।আমি যদি তোমার ওপর এতই বোঝা হয়ে যায় তাহলে বলে দাও যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবো।”

নন্দিতার মা কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
দুহাতে মাথা চেপে বসে পড়লো নন্দিতা। অনেক বেশি বলে ফেলেছে সে। মাকে এতকষ্ট দেওয়া ঠিক হয়নি।সে কী আসলেই উন্মাদ হয়ে গেছে রায়াজের ভালোবাসায়।

এলোমেলো পা ফেলে এগিয়ে যায় রায়াজের রুমে।
নন্দিতাকে দেখে চমকালো না রায়াজ।সে প্রায়ই তার রুমে উঁকিঝুঁকি দেয়।তবে মেয়েটা যে ভীষণ কান্না করেছে তা বোঝাই যাচ্ছে।নন্দিতাকে আজ অন্যরকম সুন্দর স্নিগ্ধ লাগছে রায়াজের।চোখগুলো এখনও ছলছল করছে।ঠিক বৃষ্টির শেষে কচুপাতার ওপর থাকা শেষ বিন্দুকণাটা যে ভাবে গড়িয়ে পড়ে সেভাবেই নন্দিতার চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

রায়াজের দিকে এগিয়ে এসে বললো

” আপনাকে ভালোবেসে আমি ভীষণরকম ভুল করে ফেলেছি তাইনা, রায়াজ ভাই।আমি আমার ভুল শুধরে নিতে চাই।”

রায়াজ নির্বিকার

” আপনাকে ভালোবাসার পর থেকেই আমি পাগল হয়ে গেছি জানেন।একটু একটু করে আমার নিউরন গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে।প্রতি মুহুর্তে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
জানেন রায়াজ ভাই,আমার সাথে তো চাঁদের ও বিরহ হয়ে গেছে, এখন পুর্ণিমা বেলায়ও সে আমার দিকে মুখ করে উঠে না। জোনাকি পোকারাও আর আমার রাতের আঁধারে দ্বীপ জ্বালিয়ে খোঁজে না।আমি আপনাকে আর ভালোবাসতে চাইনা রায়াজ ভাই।একটু বলবেন কী করলে আমি আপনাকে ভালোবাসবোনা আর।”

রায়াজ চুপ রইলো।কী উত্তর দিবে জানা নেই। তার।

________

কালকের ঘটনার পর থেকেই বাড়ির পরিবেশ বেশ থমথমে।মন মেজাজ কারোরই ভালো নেই।
নন্দিতার সামনে খাবারের থালা রেখে মিসেস রহমান বললেন
” খেয়ে আমাদের উদ্ধার করেন, মা জননী।”

এমন কথায় নন্দিতা বেশ অবাক হলো।মামি তো কখনো তার সাথে এমন করেনি।

” আমি খাবোনা মামি।আমার খিদে নেই।”

” কেন খাবেনা? সবার সামনে আমাদের নাক কাটিয়ে শান্তি হয়নি। এখন কী না খেয়ে অসুস্থ হয়ে সবাইকে এটা বোঝাতে চাইছো যে আমরা তোমাকে খেতে দেই না।”

নন্দিতা নির্বিকার।মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো তার।সবাই বলতো মামিরা কখনো আেন হয়না।তবে নন্দিতার মামিকে দেখার পর নন্দিতার এ ধারণা বদলে গিয়েছিল।তবে কী মামিও বাকি সবার মতোই,,,,,

আর ভাবতে পারলোনা নন্দিতা। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।তবে আজ আর কান্না এলো না।কী আশ্চর্য। নন্দিতাকী তবে বড় হয়ে গেলো!

দূর থেকে সবই লক্ষ্য করছিল রায়াজ।রাসেল যে তার মায়ের প্রাণ সেটা সে জানে।ছোট থেকেই রাসেলকে রায়াজের থেকেও বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন তিনি।রাসেলের কোন আবদার সে ফেলেনা।রায়াজ যতদূর জানো রাসেলই নন্দিতাকে বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিলো।
তার মা যে এখন যেকোন ভাবে এই বিয়েটা দিয়েই ছাড়বে জানে রায়াজ।তবে সেও দৃঢ় সংকল্প করে নিলো নন্দিতাকে কিছুতেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবেনা সে।

———
একটা ক্যাফেতে বসে আছে রায়াজ আর রিয়া

রিয়া অস্থির।কিছু একটা বলতে চাইছে সে।কিন্তু বলতে পারছেনা।রায়াজ বেশ বিরক্ত হচ্ছে এটাই।

” রিয়া কেন ডেকেছো।কী বলবে।বলে দাও প্লিজ।”

” আসলে রায়াজ তুমি তো সবই জানো।”

” কী জানি!”

” আবিরের ব্যাপারে তো তুমি সবই জানো,,,,”

একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে রায়াজ।সে হয়ত এটারই অপেক্ষায় ছিল।নিজেকে নরম করে বলে

” চলে যাবে ওর কাছে।”

” আসলে জানোই তো, আমি আবিরকে কতটা ভালোবেসেছিলাম।কিন্তু মাঝে একটা ভুলবোঝাবুঝির জন্য ও আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তখন তুমিই আমাকে সামলে নিয়েছিল।সে থেকেই তোমার প্রতি আমার ভালোলাগা।তুমি আমায় ভালোবাসো আমি জানি।তবে আমি এখন উপলব্ধি করতে পারছি তোমার প্রতি আমার সবটাই শুধু ভালোলাগা।”

” আবির তোমার জীবনে ফিরে এসেছে।”

” হুম। আমাদের ভুল বুঝাবুঝি মিটে গেছে।আসলে তোমার থেকে একটা ব্যাপার লুকিয়েছিলাম আমি,আমরা লুকিয়ে বিয়েও করেছিলাম।”

ভীষণ খারাপ লাগলো রায়াজের।তার থেকেও বেশি রাগ হলো।এতবড় একটা কথা রিয়া কীভাবে লুকিয়েছিলো।তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলল

” তবে আমার সাথে বিয়ের নাটক টার কী দরকার ছিল।”

” আসলে রায়াজ,,,”

” ভালো থেকো।আশাকরি আর কখনো তোমার মুখটা দেখতে হবেনা।”

গটগট করে বেড়িয়ে গেলো রায়াজ।রিয়ার ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার।সে তো ওকে ভালবেসেছিল তবে,,,,

ভালোবাসার মানুষকে হারানোর কষ্ট টা এখন খুব ভালোই বুঝতে পারছে রায়াজ।নন্দিতাকে এত কষ্ট অবহেলা দেওয়ার শাস্তি বোধহয় প্রকৃতি ফিরিয়ে দিলো তাকে।

—–

তোর বাবার তো টাকা পয়সা সম্পদ কোনটাই কম নেই।তবে কিসের লোভে তুই নারী পা/চা /রের মতো জ/ঘ/ন্য একটা অপরাদে জড়িয়ে গেলি,রাসেল।”

রাসেল দরদর করে ঘামছে।রায়াজ যখন ডাকে ডেকেছিল তখনই সে বুঝেছিল কিছু একটা হবে।তবে এমন একটা পরিস্থিতির সামাল দিবে কীভাবে রাসেল জানেনা।কপট রা/গ দেখিয়ে বলল

” কী যা তা বলছিস তুই।আমি কেন এমন কাজ করবো।”

” মিথ্যা বলিস না রাসেল।আমার কাছে সব কাগজ আছে।তুই যে ভীষণ বা/জে ভাবে নে/শায় আ/শক্ত তার মেডিকেল প্রমাণও আছে।কিসের অভাব তোর,কোন কারণে কোন লোভে তুই নারী পা/চা/রের মতো এমন জ/ঘ/ন্য নি/কৃ/ষ্ট কাজে জড়িয়ে গেলি।”

হো হো করে উচ্চস্বরে হেসে উঠে রাসেল।

” সব যখন জেনেই গেছো তখন আর লুকিয়ে লাভ নেই তাইনা রায়াজ।তবে তোমার জানার একটু ভুল আছে। আমি নারী পা/চা/র করিনা।তাদের কে/টে টুক/রো টুক?রো করে বিক্রি করে দেয় তাদের অঙ্গ/প্রত্য/ঙ্গ। মেয়ে মানুষের গায়ের গন্ধ বেশ ভালোলাগে আমার জানিস তো রায়াজ।ওদের টুক/রো টুক/রো করার সময় স্ব/র্গীয় সুখ পায় আমি ”

রায়াজের মাথা ঝিম ধরে যায় এসব কী বলছে সে।সে কী আসলেই উ/ন্মাদ হয়ে গেছে। নাহ ” জলদি ওর একটা ব্যবস্থা করতে হবে।নয়ত আরও কত নিষ্পাপ মেয়ের ক্ষ/তি করবে সে।তবে জোড়ালো প্রমাণের অভাবে চুপ আছে রায়াজ।প্রমাণ ছাড়া কেউ তার কথা বিশ্বাস করবেনা।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো

” নন্দিতার সাথে কী শ/ত্রু/তা।”

” নেই তো।ভালোলাগে ওকে আমার।আমার ওকে নিজের করে চাই।”

” তোর ওকে ভালোলাগে রাসেল,তুই ওকে ভালোবাসিস না।তাহলে এত পাগ/লামি কেন?”

আবারও বি/কৃ/ত স্বরে হেসে উঠে রাসেল।তখন তার হাতে জল/ন্ত সিগারেট বিদ্যমান।সিগারেটে একটান দিয়ে বলে

” ছোট থেকেই তোর প্রিয় সব জিনিস আমি নিজের করে নিয়েছি।নন্দিতাকে বাদ দেই কেমনে।ও তোকে ভালোবাসে, কিন্তু তুই ওকে ভালোবাসিস না জানি।তবে ওর প্রতি আমার কোন রা/গ নেই।ও আমার হয়ে এলে ওকে আমি ভালোরাখবো।তবে আমার সাথে চা/লা?কি করলে ভীষণ খারাপ হবে,,,,”

” রাসেল”

রায়াজের কথায় পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো রাসেল।রায়াজ ঠাই দাঁড়িয়ে রইল।ভ/য়া/নক কিছু একটা হবে হয়ত।
_______

নন্দিতার মনটা বেশ ভালো।আজকে একটা সুখবর পেয়েছে সে।কথায় কথায় মামির মুখ থেকে বের হয়ে গেছে।রাসেলের মা কখনোই নন্দিতাকে রাসেলের বউ করতে চাইনা।তবে ছেলের জেদের কাছে তারা অপারগ।
নন্দিতা মেয়েটা মন্দ নয়,তবে তারা ছেলের বউ হিসেবে আরো সুন্দরী মেয়ে চাই।

কথাটা নন্দিতার জন্য অ/প/মান জনক হলেও নন্দিতা বেশ খুশি হয় এটা শুনে।আনমনে বলে উঠে,,,,

” জীবনে প্রথমবার নিজের চেহারা আহামরি সুন্দর না হওয়ায় আপসোস হচ্ছেনা।”

” আগে আপসোস হতো বুঝি ”

রাসেলের শান্ত গলায় বলা কথাটা নন্দিতার মাঝে অন্যরকম শীতলতা সৃষ্টি করলো।খানিকটা ভ/য়ও পেলো সে।রাসেল কে হুটহাট আশা করেনা সে।তবুও লোকটা হুটহাট এসে যায়।

” আপনি হঠাৎ,, ”

” রায়াজের সাথে কাজ ছিল একটু।আমি চলে যাচ্ছি।বাসার সবাইকে বলে দিও।”

নন্দিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায় রাসেল।নন্দিতা পিছন ফিরতেই শুনতে পাই কেউ তার কানে কানে বলে গেলো

” সবাই কিন্তু আহামরি চেহারা খোঁজেনা।কেউ কেউ মায়ায় পড়ে।মাকড়সার জালের মতো মায়ার জালে আটকে পড়ে ভীষণ বাজে ভাবে।”

শীরদাড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায় নন্দিতার।রাসেল ছেলেটা এমন কেন বুঝে পায়না সে।কেমন রহ/স্য/ময়।
_____

মামাকে অনেক বলে একটা গার্লস কলেজে ভর্তি হয়েছে নন্দিতা।রায়াজ ছাড়া অন্যকোন ছেলের সান্নিধ্য তার মোটেও ভালোলাগেনা।

প্রথম কদিন মামাই দিয়ে এসেছে তাকে।পরে রায়াজ নিয়ে এসেছে।এখন অবশ্য সে একাই যায়। এতদিনেও একটা বন্ধু বানানো হয়নি তার।
একা থাকাটাই তার কাছে শ্রেয়।

“”””

রাতের খাবার খাচ্ছিলো সবাই।তখন মিস্টার রহমান বলে উঠলো,,,

” রায়াজ! গুনে গুনে বয়স তো কম হলোনা।এবারে বিয়ে সাদীর ব্যাপারে একটু ভাবো।”
রায়াজ ভাবলেশহীন ভাবে বলল

” তোমরা ভাবো। ”

নন্দিতার মুখটা কালো মেঘে ছেয়ে গেলো।বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠল তার।রায়াজ তার হবেনা জেনেও কেন যে বারবার তাকে পাওয়ার ক্ষুদ্র আশার সঞ্চার হয় তার মনে।

“”””

রাত বারোটা অথচ নন্দিতা এখন ছাদেঁ। এমন রাতে রোজই রায়াজ ছাঁদে আসে।আজও এসেছিল।তবে নন্দিতা কখনোই এত রাতে ছাদে আসেনা।আজ তাকে এখানে দেখে অবাক হয়না রায়াজ।সে জানে তার মনের মাঝে কী চলছে।

” নন্দিতা।”

” কিছু বলবেন রায়াজ ভাই।”

নন্দিতার কন্ঠ মলিন।মুখটা একদম চুপসে গেছে।চোখমুখ ফোলা ফোলা লাগছে।কান্না করছিল হয়ত।

” আপনাকে আমি এত কেন ভালোবাসি বলতে পারেন রায়াজ ভাই।জানি আমার বয়সটা আবেগের তবে। সবটা যে আবেগ নয়।আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি।আপনি কোনদিন আমার হবেন না জেনেও কেনো আপনাকে অন্যের হতে দেখতে পারিনা আমি বলতে পারেন।”

” নন্দিতা,,,জীবনে অনেক মানুষ আসবে যাবে।

সবাই যে তোর মনের মতো হবে এমন নয়।সবার প্রতি এত দুর্বল হতে নেই।নিজেকে শক্ত করতে শিখ।
একটা উপন্যাসে পড়েছিলান জানিস সব মানুষেরই প্রথম ভালোবাসা অনুভূতিগুলো হয় ভুল মানুষকে ঘিরে।একতরফা ভালোবাসা কষ্ট ছাড়া কিছু দিতে পারেনা।তুই আমাকে ভুলে যা।নিজেও ভালো থাকবি। আমাকেও ভালো থাকতে দে।”

এতক্ষণ কান্না চেপে রাখলেও এবার আর কান্নাগুলো আটকে রাখতে পারেনা নন্দিতা।হু হু করে কেঁদে উঠে।নন্দিতার এ কান্না যেন রায়াজের শিরা উপশিরায় বয়ে যাচ্ছে।একটা মেয়ে তার জন্য এতটা কষ্ট পাচ্ছে এটা সে কিছুতেই মানতে পারছেনা।
মেয়েটা কেঁদেই চলেছে।শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে তার।
এত বোঝানোর পরও কান্না থামলোনা যখন তখন পরম স্নেহে নন্দিতাকে বুকের মাঝে আগলে নিলো রায়াজ।
এ মুহুর্তে নন্দিতার প্রতি যা কাজ করছে তা কেবল সহানুভূতি। তবে নন্দিতার প্রতি অন্যরকম কিছুই তার নেই।

——

মাঝে কেটেছে অনেকগুলো দিন।রাসেলকে সবাই অনেক বুঝিয়েছে।অবশেষে সে বিয়ের প্রসঙ্গ বাদ দিয়েছে।তবে নন্দিতার প্রতি তার ঝোক কমেনি।
সেদিনের পর নন্দিতা অনেকটাই বদলে গেছে।রায়াজের প্রতি বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আর সে প্রকাশ করেনা। রায়াজ তো আর কাছে ভালো থাকতে চেয়েছে।এ আবদার সে ফেলবে কীভাবে।

এখন অবশ্য কলেজে একাই যাওয়া আসা করে নন্দিতা। গরম কাল এখন।টানা রোদ।দুপুর দুটোয় কলেজ ছুটি হলো।
রাজ/নৈতিক কোনো ঝামেলার কারণে আজকে রাস্তাঘাটে যানবাহন অবরুদ্ধ করেছে।
কোনো রিক্সা না পাওয়ার শটকার্ট একটা গলি মতন রাস্তায় হাঁটা শুরু করলো নন্দিতা। রাস্তাটা বেশ ফাঁকা।তবে রাস্তাটা সে চিনে।
রায়াজ চিনিয়ে দিয়েছিল।তাড়াহুড়োর সময় কাজে লাগবে।

একেই ভর দুপুর। তার ওপর হেঁটে যাচ্ছে। ঘেমে একাকার হয়ে গেছে সে।
বারবার তার মনে হচ্ছেকে যেন তার পিছু নিচ্ছে। তবে পেছনে সে কাউকে দেখতে পায়না।
ভূ/তের চেয়ে তার মনে মানুষের ভয় বেশি।বর্তমানে তো ভূতের চেয়েও ভয়ানক মানুষ।

পা যেন চলছেনা নন্দিতার।বেশ ভয় লাগছে তার।ভাবছে রায়াজকে একটা ফোন করে দিলে ভালো হতো।একা এসে ভুল হয়ে গেছে।

ভয়ে ভয়ে এগোচ্ছে সে।এখনও অর্ধের রাস্তা বাকি।মনে মনে পড়ে নিলো

আয়াতুল কুরসি,” আল্লা-হু লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া আল হাইয়ুল কাইয়ূমু লা-তা’খুযুহূ ছিনাতুওঁ ওয়ালা-নাওমুন লাহূ মা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদি মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূইল্লা-বিইযনিহী ইয়া‘লামুমা-বাইনা আইদীহিম ওয়ামা-খালফাহুম ওয়ালা-ইউহ ীতূনা বিশাইইম মিন ‘ইলমিহীইল্লা-বিমা-শাআ ওয়াছি‘আ কুরছিইয়ুহুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদা ওয়ালা-ইয়াঊদুহু হিফজু হুমা-ওয়া হুওয়াল
‘আলিইয়ূল ‘আজীম। (সূরা বাক্বারাহ,)”
বুজে ফু দিয়েও যেন ভয় কমলোনা নন্দিতার। হঠাৎই সমানে কিছু একটা দেখে বিকট চিৎকার দিতে গেলো তার আগেই,,,,,
_____

বিকেল গড়িয়ে সন্ধা হয়ে এসেছ। তবুও নন্দিতা বাড়ি ফিরেনি।নন্দিতার মা প মামির ভীষণ টেনশন হচ্ছে।দুপুর তিনটের মাঝেই ফিরে আসে সে।তবে আজ এখনও আসেনি।

রায়াজকে কল দিয়ে সবটা জানালে। রায়াজ তার দুই বন্ধুকে নিয়ে নন্দিতার খোঁজে গেলো।

চলবে,,