নবপ্রণয় পর্ব-০৪

0
138

#নবপ্রণয় (৪)
#হৃদিতা_রহমান

টিভিতে আবিদের মৃত্যু সংবাদ শুনে কয়েক মুহূর্তের জন্য রুহি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। চিন্তা -ভাবনার শক্তি হারিয়ে ফেললো সে।হাত থেকে পরে গেলো ফুসকার প্লেট। সেই শব্দ হুস হলো রুহির। একটা চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালো রুহি। আবির কাঠের পুতুলের মত সোফায় বসে টিভির দিকে চেয়ে আছে। নিজেন কান আর চোখকেই অবিশ্বাস হচ্ছে তার। সে চেয়ে রইলো টিভির পর্দায় ভাসা ভাইয়ের ছবির দিকে।

জামান সাহেব আর আবিদা বেগম রুমে ছিলেন। তারা রুহির চিৎকার শুনে দৌড়ে এলো। রুহিকে সোফায় পড়ে থাকতে দেখে দুজনেই চাইলো আবিরের দিকে। আবির এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে টিভির দিকে। আবিরকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগ মূহুর্তে চোখ পড়লো টিভির পর্দায়। আবিদের ছবি আর তার নিচের লেখাটা দেখা মাত্র জ্ঞান হারালেন আবিদা বেগম। জামান সাহেব মাড়ি শক্ত করে নিজেকে সামলে নিলেন মুহূর্তের মধ্যেই। স্ত্রীকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে। আবিররের কাধ ধরে ঝাকি দিলেন। অনন্ত কাল পরে যেনো আবিরের ঘোর ভাঙ্গলো। ঝাপসা চোখে বাবার দিকে তাকিয়েই তাকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করে দিলো। জামান সাহেব আবিরকে জরিয়ে ধরে চোখ মুছলেন।

মূহুর্তের মধ্যেই বাড়ির টেলিফোন বাজতে লাগলো এক নাগারে। কিন্তু, সেটা ধরার মত আগ্রহ দেখা গেলো না কারো মধ্যেই। আধ ঘন্টার মধ্যে রুহিদের বাসা থেকে মানুষ জন চলে এলো। জামান সাহেব ডাক্তারকে ফোন করে আসতে বললেন। রুহি আর আবিদা বেগমকে স্যালাইন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখলেন। দুই ঘন্টার ব্যবধানে বাড়িটা মানুষে ভর্তি হয়ে গেলো। বাবা,মা,ভাবির দিকে তাকিয়ে আবির নিজেকে শক্ত করলো। সবার সাথে সেই কথা বললো। গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করে আবিদের মৃত্যু সংবাদ দিলো। আবিরের মনে হলো দুই ঘন্টার ব্যাবধানে সে যেনো অনেক বড় হয়ে গেছে। অনেক বড় একটা দায়িত্ব তার কাধে।

চার ঘন্টা পরে রুহি আর আবিদা বেগমের ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম থেকে উঠেই তারা চিৎকার করে কান্না করলেও কিছুক্ষনের মধ্যে রুহি নিজেকে সামলে নিলো। একদম চুপ হয়ে গেলো সে। চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু গড়িয়ে পড়লেও মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না।

আর্মি হেডকোয়ার্টার থেকে ফোন আসলো, জামান সাহেব কথা বললেন তাদের সাথে। দুই ঘন্টা পরে কয়কে জন আর্মি অফিসার এলেন। তারা নানা রকম শান্তনা বানী শুনাতে লাগলো। জামান সাহেবের সাথে একান্ত ভাবে কথা বললেন। শক্ত মনের অধিকারি বাবাকে আবির সারা জিবন অপছন্দ করতো। কিন্তু, এই মূহুর্তে সে বুঝতে পারলো এরকম পরিস্থিতিতে পাশে একটা কঠিন হৃদয়ের মানুষকে কতটা প্রয়েজন হয়। রাত থেকেই একের পর এক আর্মি জিপ এসে থামলো বাড়ির সামনে। আবিদের ক্যাডেট কলেজের বন্ধুরা এলো,ব্যাচমেটরা এলো, আরো অনেক সামরিক বাহিনীর লোক এলো যাদের আবির চিনলো না৷ আবিদের পরিচিত হয়ত।

সকাল ভোরে হেলিকপ্টারে করে আবিদের লাশ এলো। আবির দূর থেকে দেখলো জিবনের প্রথমবার ভাইয়া বাড়িতে এসে তাকে চমকে দিলো না। তার জন্য কোনো উপহার ছাড়াই বাড়িতে এলো। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো আবিরের। আবিদের একটা অভ্যাস ছিলো বাড়িতে আসার আগে কখনো বলতো না সে আসছে। হুট করে এসে আচমকা চমকে দিতো সবাইকে। কিন্তু, এবারের বাড়ি ফেরাটা যে অন্যরকম।

আবিরের কিছুই করার নেই যেনো৷ শুধু চেয়ে ছেয়ে দেখা ছাড়া। সব কিছু সামরিক বাহিনীর লোকেরাই করলো। সিভিলিয়ান কাউকে লাশের আশেপাশে ঘেসতে দিলো না। এমনকি পরিবারের কাউকেও না। জামান সাহেব আবিদের কমান্ডিং অফিসারকে অনুরোধ করলো ছেলেকে একবার দেখতে চায়। জামান সাহেব এক সময় বাহিনীতে ছিলো, এবং সে অনেক সিনিয়র। তাই অনুরোধ রাখলেন ব্রিগেডিয়ার। তবে,পরিবারের বাইরে কেউ দেখতে পারবে না। জামান সাহেব আবিরকে ডাক দিলেন। আবির যানালো সে দেখতে চায় না। ছেলের মুখের দিকে এক পলক চেয়ে থেকে জামান সাহেব চলে গেলো। আবির ঠ্যায় দাড়িয়ে রইলো। কি হবে মৃত মানুষের মুখ দেখে। সাদা কাফনে ঢাকা আবিদের মুখটা কিছুতেই মানতে পারবে না সে। যে মুখের কথায় আবির নিজের জিবন দিয়ে দিতে পারতো৷ যে মুখের দিকে তাকিয়ে আবির ভাবতো এটা তার সুপার ম্যান। সেই ভাইকে এভাবে কফিনে মোড়া দেখতে পারবে না সে। ভাইয়ার মৃত মুখের চেয়ে জীবিত অবস্থায় হাসি মুখটা হাজার গুন দামী। ভাইয়াকে শেষ দেখার স্মৃতিটা বেচে থাকা অবস্থায় যেমন ছিলো সেই হাসি মুখটা থাক।

গতকাল বিকাল থেকে আবির যেনো দুঃস্বপ্নের মধ্যে আছে। বার বার শুধু মনে হচ্ছে ঘুম ভেঙে গেলেই দেখবে এসব কিছু না। সব কিছু ঠিক আছে। ভাইয়া বেঁচে আছে। আচ্ছা, দুনিয়ায় তো কত শত কাকতালীয় ব্যপার ঘঠে। ভাইয়া যদি এখন বেচে উঠতো, এরকম কাকতালীয় কোনো কিছু কি ঘঠতে পারে না? কেনো পারে না?

ভেতর থেকে মায়ের চিৎকার শুনে আবির দৌড়ে ভিতরে এলো আবিদকে দেখেই তিনি চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। মাকে ধরে রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। তারপর আবিদের লাশটা মাঠে নিয়ে যাওয়া হলো যানাযার জন্য। স্থানীয় কবরস্থান মাঠে যানাযা শেষে সেনা সদস্যর সম্মানার্থে আবিদকে “গার্ড অব অনার” প্রদান করা হয়। দাফন-কাফন শেষে মৃত আত্মার মাগফিরাত কামনা করে,দোয়া শেষে বাসায় ফেরে সবাই।

ব্রিগেডিয়ার আশরাফ রুহির হাতে তুলে দেয় আবিদের সামরিক পোশাক। তারপর ডয়িংরুমে ডাকে পরিবারের সদস্যদের৷ মা অসুস্থ তাই বাবা,আবির আর রুহি এসে বসে অফিসারের সামনে। ব্রিগেডিয়ার আশরাফ জামান সাহেবকে বলেন,
‘ স্যার, আবিদের মত একজন চৌকস সেনাসদস্য হারিয়ে আমারও কষ্ট পাচ্ছি।আমাদের পরিবারের একজন সদস্য এভাবে হারিয়ে যাবে এটা মোটেও কাম্য নয়। আমি আবিদকে চিনি বিএমএ ক্যাডেট থাকা অবস্থা থেকে। আবিদের মত,বুদ্ধিমান, সাহসী এবং পরিশ্রমী ক্যাডেট আমি আমার সামরিক জিবনে খুব একটা বেশি দেখি নি। আবিদ এমন একজন ছিলো যার উপর চোখ বন্ধ করে নির্ভর করা যেতো। আমিই আবিদকে আমার আন্ডারে কাজ করার জন্য নিয়ে যাই। আপনিতো যানেন, আমাদের দেশে প্যবত্য এলাকা কতটা ভয়ংকর। কিন্তু, আবিদের মত হাতে গোনা কিছু অফিসার আছে যারা যে কোনো পরিস্থিতিতে ঠিকে থাকতে পারে। নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে দক্ষতার সাথে। আবির তার প্রতিটা মিশন দক্ষতার সাথে শেষ করেছে। আর ছয় মাস পর কমিশন লাভ করতো আবিদ। তারপর, পাঠিয়ে দিতাম ঢাকা। কিন্তু…

একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো অফিসার। তারপর বললেন,
” ঘঠনাটা ছিলো এমন, আবিদ বিকালে জিপ নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলো। হঠাৎ চোখে পরে চারজন মানুষকে। যাদের দুইজন ইয়াবা ব্যাবসায়ী বলে পরিচিত ছিলো। আবিদকে দেখেই তারা পালাতে থাকে। আবিদ সিগনাল পাঠায় ক্যাম্পে।কিন্তু ক্যাম্প থেকে ঘঠনা স্থান অনেকটা দূরে হওয়ায় আবিদ টিমের জন্য বসে থাকে নি। সে জিপ নিয়েই ধাওয়া করে সন্ত্রাসীদের। এবং চার জনের মধ্যে তিনজনকে কৌশলে ধরে ফেলে। আসামিদের যখন জিপে করে নিয়ে ফিরে আসছিলো তখন পাশের জঙ্গল থেকে আচমকা হামলা করে দুষ্কৃতকারীরা। আবিরের কাছে রিভালবার ছিলো। সে আরো দুইজনকে গুলিবিদ্ধ করে। কিন্তু আবিদের বিপরীতে ওরা সংখ্যায় ছিলো অধিক। হঠাৎ একটা গুলি এসে বুকে লাগে। আবিদ পরে যায়। স্কল করে জিপের পেছনে চলে আসে। আবিদ আহত হয়েছে বুঝতে পেরে সন্ত্রাসীরা দ্বিগুন গতিতে আক্রমণ করে। আরো দুইটা বুলেট আবিদের শরিরে লাগে। ঠিক সেই মুহূর্তে ইউনিট থেকে ব্যাকাপ টিম পৌছায়। হেলিকপ্টারে করে আবিদকে চট্টগ্রাম নেওয়ার পথে সে মৃত্যু বরণ করে। ”

থামলেন অফিসার। ফুপিয়ে কেদে উঠলো রুহি। আবির এসে রুহির পাশে বসে রুহির হাত ধরে শান্ত হতে বললো। অফিসার বললেন,
‘ দেশের জন্য যারা জিবনদেয় তারা মরে না, তারা অমর। হাশরের ময়দানে তাদেরকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হবে। এরকম মৃত্যুটা সম্মানের। সামরিক বাহিনীর আমরা সবাই সৈনিক। কিন্তু প্রকৃত যুদ্ধা হয় হাতে গোনা কয়েক জন। আবিদ ছিলো সত্যিকারের একজন যোদ্ধা, আমাদের হিরো।আবিদের জন্য আমার ব্যটালিয়ন গর্বিত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গর্বিত।”

বাড়িটা প্রায় ফাকা হয়ে গেছে। পাড়া-প্রতিবেশি,আত্মীয়-স্বজন,পরিচিত মানুষ যারা এসেছিলো। যাবার আগে সবাই দুই একটা শান্তনার বানী শুনেছে চলে গেলো। রয়ে গেলো শুধু চাচা-চাচি,ফুপা-ফুপু আর রুহিদের বাড়ির মানুষ।

আবির রুমে এলো। বিছানায় গা দিতেই অনুভব করলো কতটা ক্লান্ত সে। গতকাল বিকাল থেকে এখন পযান্ত একটা ঘোরের মধ্যেই কেটে গেলো সময়। আবির চোখ বন্ধ করলো। সাথে সাথে চোখের পর্দায় ভেসে উঠলো আবিদের সাথে শেষবার দেখা হবার মুহূর্ত।

প্রতিবারে মত আবির আবিদকে স্টেশন পযান্ত এগিয়ে দিতে গিয়েছিলো। আবিদ ট্রেনে উঠার আগ মূহুর্তে আবিরের কাধে হাত রেখে বরলো,

‘ আবির,আমি সব সময় তোকে আমার মনের মত করে মানুষ করতে চেয়েছি। আমার চাওয়াটা ছিলো বাবার চাওয়ার ঠিক বিপরীত। কিন্তু তুই বড় হয়েছিস। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়। আমি যানি তুই এখনো বাচ্চা। বাস্তবতার সাথে তোর তেমনটা পরিচয় নেই। কিন্তু, এখন থেকে নিজেকে বাচ্চামী থেকে একটু একটু করে বের করে নিয়ে আয়। বাস্তবতার সাথে পরিচয় হ। যেনো কখনো কোনো ঝড় এলে ভেঙ্গে না পড়িস। কোনো বিপদ হলে তোকে মাথা ঠান্ডা রেখে সেই বিপদ সামলে নিতে হবে। বাবার সামনে প্রমান করতে হবে আমি তোকে অপদার্থ তৌরি করি নি।”

আবির ভাইয়ের মুখের দিকে চেয়ে রইলো। আবিদ দম নিয়ে বললো,
‘ আমার যে প্রফোশন, তাতে যে কোনো মূহুর্তে যা কিছু হতে পারে। চব্বিশ ঘণ্টা রিক্সে থাকতে হয়। কখনো যদি আমার কিছু হয়ে যায়, বাবা-মা,রুহির দায়িত্ব তোকেই নিতে হবে। সেদিন যেনো তুই এলোমেলো না হয়ে যাস। পরিবার,সংসারের হালটা শক্ত হাতে ধরে রাখতে পারিস। সেভাবে নিজেকে গড়ে তুলার এখনই সময়।”

‘ এসব বলছিস কেনো? তোর কিছু হবে না। তোর কিছু হলে আমি বাচতে পারবো না। বাবা-মা,ভাবীর কি হবে ভাবতে পারিস?’

‘ আবারো বাচ্চাদের মত কথা বলছিস। তুই দশম শ্রেণির ছাত্র না আবির। বড় হয়েছিস, বড়দের মত ভাবতে শিখ। যেদিন আর্মিতে জয়েন করেছি সেদিন থেকে আমি আর তোদের নেই। আমি নিজের জিবনটা দেশের নামে লিখে দিয়েছি। দেশের জন্য নিশ্চিত মৃত্যু যেনেও আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হয়। চোখের সামনে অনেক,সৈনিককে মরতে দেখেছি। অনেক লাশ নিজে কাধে নিয়ে ইউনিটে ফিরেছি। এরকম কোনো একদিন তো আমার ভাগ্যেও খারাপ থাকতে পারে। হয়ত আমাকেও কোনো সৈনিকের কাধে লাশ হয়ে ফিরে আসতে হবে।সেদিন, আমি দূর থেকে দেখবো তুই বাচ্চা নেই। বড় হয়েছিস। দায়িত্ব নিতে শিখেছিস। তাহলেই আমার জিবন সার্থক হবে।’

আবিদের কথা শুনে মন খারাপ হলো আবিরের। ভাইয়ার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না সে। আবির জিজ্ঞেস করলো,
‘ ভাইয়া তোর কি হয়েছে বলতো? কখনো তো এসব কথা বলিস নাই। তাহলে আজ বলছিস কেনো? ‘

‘ আগে বলি নাই কারন তুই ছোট ছিলি। এখন বড় হয়েছিস। তোকে তোর ইচ্ছে মত যদি চলার স্বাধিনতা দিতে পারি। তাহলে,তোকে দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলার দায়িত্বও আমার।’

‘ আচ্ছা, বুঝলাম।’

‘ বাবা-মা আর রুহিকে তোর দায়িত্বে রেখে গেলাম। তোর উপর আমার ভরসা আছে। পরিস্থিতি যেমনই হোক,সামলে নিস।’

হঠাৎই আবিদ জরিয়ে ধরলো আবিরকে। কয়েক সেকেন্ড পর ছেড়ে দিয়ে ট্রেনে উঠে পড়লো। যতক্ষণ ট্রেন দেখা গেলো আবির চেয়ে রইলো সেদিকে।

সেদিনের কথা মনে পড়তেই বুকটা কেপে উঠলো আবিরের। সে যদি যানতো, সেটাই ভাইয়ার সাথে শেষ দেখা তাহলে কিছুুতেই সেদিন ভাইয়াকে ছাড়তো না সে। আরো কিছুক্ষণ জরিয়ে ধরে রাখতো।

মানুষ নাকি মারা যাবার আগে কিছুটা অনুভব করতে পারে। মন হয়ত বুঝতে পারে সে আর ফিরবে না। আবিদও কি বুঝতে পারছিলো? এইজন্যই কি বলেছিলো কথা গুলো? সামনে মৃত্যু অপেক্ষা করছে যানার পরও কি অন্য কোনো পেশার মানুষ সাসনে এগিয়ে যাবে? নাকি এটা শুধু আর্মিরাই পারে? আবির গর্ব অনুভব করলো ভাইয়ের জন্য।

আবিদের মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি ভেঙ্গে পড়েছিলো রুহি। সবার আগে সেই নিজেকে সামলে নিলো। আগের অবস্থায় ফিরে আসতে যুদ্ধ করে চললো নিজের সাথে। এবং, বৃদ্ধ শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলো সে।

আবিদের মৃত্যুর কয়েক মাস পর যখন সবাই আঘাতটা সামলে নিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হলো। তখন নতুন করে একটা ঝড় এলো পরিবারে। প্রশ্ন
উঠলো রুহিকে নিয়ে। সে কোথায় থাকবে? রুহির পরিবার বললো আবিদ যখন নেই তখন এখানে থাকার কোনো মানে হয় না। আর আবিদের বাবা মা বুঝলো রুহি চলে গেলে তারা বাচতে পারবে না। ছেলেকে হারিয়েছে কয়েক মাস আগে। তারপর রুহির জন্যই যেনো বেচে আছে তারা। রুহিকে তারা কখনো ছেলের বউয়ের চোখে দেখেনি। সব সময় মেয়ে মনে করেছে। এখন, মেয়েকে যদি বাবা মায়েক কাছ থেকে নিয়ে যায়,সেই বাবা মা বাচতে পারে না। তারাও বাচবে না। ছেলেকে হারানোর শোক কাটিয়ে উঠলেও মেয়েকে হারানোর কষ্টে মরেই যাবে তারা।

‘আবিদ নেই,তাহলে রুহি এখানে থাকবে কেনো?’
রুহির পরিবারের এমন প্রশ্নের উত্তর হিসেবে কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিলেন জামান সাহেব।

চলবে…..?