নবপ্রণয় পর্ব-০৫

0
147

#নবপ্রণয় (৫)
#হৃদিতা_রহমান

আবিরের সাথে নিজের বিয়ের কথা শুনে রুহি যেনো আকাশ থেকে পড়লো। প্রথমে যে কথাটা মনে হলো, তা হলো অসম্ভব। আবিরকে সে কখনো সেই চোখে দেখে নি। কখনো দেখতে পারবেও না। তাছাড়া আবির তার চেয়ে দুই বছরের ছোট। কিন্তু, জামান সাহেব যখন রুহিকে বুঝালো তখন কিছুটা বুঝলো সে। অনেক ভেবে চিন্তে দেখলো শ্বশুড় এমনি এমনি তাকে এমন প্রস্তাব দেয় নি। তার যথার্থ কারন আছে। বাবা মা চায় সে বাসায় ফিরে যাক। জিবনের মাত্র শুরু। সারা জিবন এভাবে থাকা সম্ভব নয়। তারা চায়, সব কিছু ভুলে রুহি আবার নতুন করে জিবন শুরু করুক। আর নতুন করে সব কিছু শুরু করা মানেই আবারো বিয়ে করা। কিন্তু, রুহি এই পরিবার ছেড়ে কোথাও যেতে চায় না। বিয়ের পর রুহি আবিদের বাবা মাকে কখনো শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি মনে করে নি। নিজের বাবা মায়ের মতই ভালোবেসেছে। এখন, তাদের ছেড়ে চলে যেতে পারবে না সে। এই মানুষ গুলোকে ছেড়ে সে কখনো ভালো থাকতে পারবে না, সুখী হবে না, কখনো না। রুহি ভেবে দেখলো বাবা মায়ের সাথে বাসায় ফিরে গেলে আবারো তাকে বিয়ে করতে হবে। এবাড়িতে থাকতে হলেও বিয়ে করতে হবে। বিয়ে যখন করতেই হবে তাহলে আবিরের সাথেই বিয়েটা হোক। তবুও অন্তত বাবা মায়ের পাশে থাকা যাবে। আবিদের কথা কিছুটা হলেও রাখা হবে। তাই,আবিরকে বিয়ে করতে রাজি হলো রুহি। তবুও বাবা মায়ের সাথে ফিরে যেতে রাজি হলো না।

রুহির সাথে নিজের বিয়ের কথা শুনে প্রথমে রুহির মত আবিরও যেনো আকাশ থেকে পড়লো। হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো বাবার দিকে। আবিরের মনে হলো ভাইয়ার শোকে বাবা পাগল হয়ে গেছে। তা নাহলে এরকম চিন্তা ভাবনা মাথায় আসে কি করে? জামান সাহেব ছেলের মনের কথা বুঝতে পারলো মনে হয়, তিনি বললেন,

‘ আমার কথা শুনে নিশ্চয় আমাকে পাগল মনে হচ্ছে তোর। তুই কি ভাবছিস আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? শোন, হঠৎ করে আমি এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেই নি। অনেক ভেবেছি, দিন রাত এক করে ভেবেছি। তারপর এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ এছাড়া, রুহিকে আমাদের বাড়িতে রাখার অন্য কোনো অপশন নেই। রুহি থাকতে চাইলেও ওর পরিবার এখানে রাখবে না। আমি বা তোর মা দুজনের কেউ চাই না রুহি আমাদের ছেরে চলে যাক।’

জামান সাহেব থামলেন। আবির বললো,
‘ আমিও চাই না ভাবি চলে যাক। কিন্তু তাই বলে…’

জামান সাহেব বললেন,
‘ তুই কি চাস আবিদের সন্তান পৃথিবীতে এসে জানুক সে এতিম? তার বাবা বলে ডাকার কেউ নেই। কেউ না যানুক আমি যানি আবিদ তোকে কতটা ভালোবাসতো। তুই কি আবিদের সন্তানকে নিজের সন্তান মনে করতে পারবি না? তুই কি চাস না, আবিদের সন্তান কষ্টহীন বাঁচুক,বেড়ে উঠুক? সে কাউকে বাবা বলে ডাকুক।বাবার ভালোবাসা,আদর,স্নেহ,যত্ন পাক?

বাবার কথা শুনে আবির মনে মনে বললো,
এটাই কি প্রকৃতির হিসাব? প্রকৃতি কি এটাই চায়? এই জন্যই কি আবিদ তাকে এতটা ভালোবাসতো? এই জন্যই কি আবিদ এত তারাতাড়ি মারা গেলো। আবিদ তাকে যতটা ভালোবাসতো প্রকৃতি চায় আবিদের সন্তানকে আবির ঠিক ততটাই ভালোবাসুক? কারো ভালোবাসা পেলে, তাকেও সম পরিমাণ ভালোবাসা ফেরত দিতে হয়। আবিদ তো নেই, তাহলে আবিরের ভালোবাসা আবিদের সন্তানই নাহয় পেলো।

আবির রুহির সাথে এই বিষয়ে কথা বলে যানলো রুহির বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই। সে রাজি। আবির আর কিছু বললো না। পরিবারের সবাই যেটা চায়, সেও তাতেই সুখি। আবির রাজি হয়েছে দেখে সবাই খুশি হলো। কিন্তু খুশি হলো না রুহির পরিবার। রুহির এমন সিদ্ধান্ত তারা কিছুতেই মানতে পারছে না। বিয়ের সময় শুধু রুহির বাবা মা উপস্থিত থাকলো নিঃস্কিয় দর্শক হিসেবে। যেনো থাকার জন্যই থাকা। বিয়ের কার্যক্রম শেষ হতেই তারা চলে গেলো। যাবার আগে রুহির সাথে একটা কথা বলারও প্রয়েজন মনে করলো না।

এক প্রকার ঘরোয়া ভাবেই আবিরের সাথে রুহির বিয়ে হয়ে গেলো।

কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘোর ভাঙলো আবিরের। চোখ তুলে চেয়ে দেখে রুহি দাড়িয়ে আছে। আবিরকে চেয়ে থাকতে দেখে রুহি জিজ্ঞেস করলো,
‘ এত রাতে ছাদে কি করছো তুমি?’

‘ কিছু করছি না, এমনিতেই বসে আছি।’

‘ দেখি উঠে দাড়াও। তোমাকে সার্চ করবো।’

‘ মানে?’

‘ মানে, তোমার কাছে সিগারেট, গাজা,আফিম ইত্যাদি কিছু একটা নিশ্চয়ই আছে। তুমি ছাদে বসে বসে এসব খাচ্ছো। তা নাহলে এত রাতে ছাদে কি করো তুমি?’

‘ দূরু, কি বলো এসব? আমি এসব খাই না।’

‘ সেটা সার্চ করলেই বুঝা যাবে। হাত উচু করো।’

‘ আরে অদ্ভুত, এত রাতে কি শুরু করলে?’

রুহি দাত কটমট করে বললো,
‘ এত রাতে তুমি কি শুরু করছো?’

আবির বুঝতে পারলো রুহি তাকে সার্চ করবেই। না করে লাভ নেই। আবির হাত উচু করলো। রুহি এক এক করে আবিরের সমস্ত পকেট খুজে দেখলো। তারপর ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে ছাদে খুজে দেখলো। কয়েক মিনিট খুজা-খুজি করেও কিছু পাওয়া গেলো না। ছাদে ছাই বা এ জাতীয় কিছুর চিহ্ন নেই। রুহি বললো,

‘ ওকে, বিশ্বাস করলাম তোমাকে। চলো।’

‘ বিশ্বাস করলে মানে?’ অবাক হলো আবির।’ এই তোমার বিশ্বাসের নমুনা? খুজার পর বলছো বিশ্বাস করলাম।’

‘ বেঁচে গেলে, কিছু পাই নি। কিছু পাওয়া গেলে কানে ধরে সোজা বাবার কাছে নিয়ে যেতাম। তারপর বাবা তার পাখি মারা বন্দুক দিয়ে তোমাকে গুলি করতো।’

‘ থাকলে তো পাবে। আমি ওসব খাই না। সেভেনে থাকতে একবার সিগারেট খাওয়ার সময় ভাইয়ার হাতে ধরা পড়েছিলাম। ভাইয়া অবশ্য তখন কিছু বলে নি। ছুটি শেষে যাবার সময় বলেছিলো। আর যেনো কখনো ওসব না খাই। তারপর আমি সিগারের খাওয়া তো দূরের কথা ছুয়েও দেখি নি।’

ঘুম থেকে রুহি উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল আটটা বাজে। তারাতাড়ি করে বিছানা থেকে নামলো সে। এত দেড়ি তো কখনো হয় না ঘুম ভাঙ্গতে। আজ দেড়ি হলো কেনো? আবির ও আগেই উঠে পড়েছে। অথচ তাকে ডাক দেয় নি। রুহি তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে কিচিনে এসে অবাক হলো আদিবা বেগম সকালের নাস্তা তৌরি করছেন। পাশে একটা ১৬/১৭ বছর বয়সী মেয়ে দাড়িয়ে আছে। রুহি বললো,

‘ মা, আপনি কিচেনে কেনো? যান,ডয়িংরুমে যেয়ে বসেন। আমি রান্না করছি। সকালে একটু ডাক দিলেই পারতেন। কত বেলা হয়ে গেছে।’

আদিবা বেগম রুহির দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখে বললো,
‘ তোমাকে আর কিচেনে আসতে হবে না। রান্না করা তো দূরের কথা, তুমি কিচেনের সীমানাতেও পা দিবে না। এখন থেকে তোমাকে পুরোপুরি রেষ্টে থাকতে হবে। কিচেনের দায়িত্ব এখন থেকে আমার আর জুলেখার।’

আদিবা বেগম পাশের মেয়েটিকে দেখিয়ে বরলো,
‘ ওর নাম জুলেখা, আজ থেকে আমাদের বাসায় কাজ করবে।’

রুহি বললো,
‘ জুলেখার সাথে আমি কাজ করছি। আপনি যান।’

আদিবা বেগম রুহির দিকে কৃত্রিম রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বরলো,
‘ এই মেয়ে, এত বেশি বুঝো কেনো তুমি? ‘

‘ সব কাজ যদি আপনি করেন তাহলে সারাদিন আমি কি করবো?’

‘ বসে থাকবে, শুয়ে থাকবে আর খাবে।’

‘ এটা কিন্তু বারাবাড়ি। আমার এখনো কাজ করতে তেমন সমস্যা হচ্ছে না।’

‘তোমার বারাবাড়ি মনে মনে হলে তাই। এখন এখান থেকে যাও।’

‘ কি আজব, আমি যাবো না। এখন নিজের হাতে চা বানাবো। তারপর চা খাবো।’

আদিবা বেগম কোনো কথা না বলে রুহির হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে, ডয়িংরুমে সোফায় বসিয়ে দিয়ে গেলো। রুহি হা করে চেয়ে রইলো শ্বশুড়ির দিকে। তার কয়েক মিনিট পর নিজের হাতে চা নিয়ে এলো। রুহি, শ্বাশুড়ির হাত থেকে চা’য়ের কাপ নিতে নিতে বরলো,
‘ আমার মনে হচ্ছে, আমি হলাম শ্বাশুড়ি। আর আপনি বউ।’

আদিবা বেগম হেসে বললেন,
‘ এখন থেকে তাই৷’

শ্বাশুড়িকে অনেেক দিন পর এমন হাসিখুশি দেখে মনটা আনন্দে ভরে উঠলো রুহির। পরিবারে যেনো আবারো আগের মত হাসি, খুশি, আনন্দ ফিরে আসছে। হঠাৎই চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো রুহির৷ গাল বয়ে এক ফোটা নোনা জল টুপ করে চায়ের কাপে পড়লো।

বিকালে বারান্দায় বসে আদিবা বেগম রুহির চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছিলো আর নানা ধরনের গল্প করছিলো। শ্বাশুড়ির গল্প শুনে রুহি হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছিলো শ্বাশুড়ির কোলো। এরকম হাসার জন্য রুহিকে আদিবা বেগম মাঝে মাঝে ধমক দিলেও রুহির হাসি মুখটা দেখতে খুব ভালো লাগছিলো তার। আদিবা বেগম তেল দেওয়া শেষ করে চলে গেলেন৷ রুহি রুমে এসে দেখে আবির পড়ছে। সামনে তার পরিক্ষা। রুহি আবিরের পাশে বিছানায় বসে বললো,

‘ শোনো?’

আবির রুহির দিকে তাকালো। রুহি বরলো,

‘চাউল ভাজা খেতে ইচ্ছে করছে। সাথে কাচা মরিচ,চানাচুর, আর ছোলা লাগবে। এসব দিয়ে মাখিয়ে খেতে অনেক ভালো লাগে। আমি জুলেখা কে দিয়ে চাউল ভাজি করছি, তুমি নিচ থেকে চানাচুর আর ছোলা এনে দাও।’

আবির বললো,
‘ মা তোমাকে এসব ভাজি-পোড়া খেতে বারন করেছে না? আমি পারবো না। মা, যানতে পারলে আমার কপালে দুঃখ আছে।’

‘ আরে মা যানবে না ৷ যাও।

‘ পারবো না।নিজে নিয়ে এসে খাও।’

‘ যাওনা, এমন করো কেনো? আগেই তো ভালো
ছিলে। মুরুব্বিরা বলে গর্ভবস্থায় কিছু খেতে ইচ্ছে করলে সেটা খেতে হয়। নাহলে সন্তান জম্মের পর মুখ থেকে লালা পড়ে। তখন বুঝবে কেমন লাগে। কোলে নিলেই লালা দিয়ে সার্ট ভিজিয়ে দিবে। সবাই বলবে পচা বাচ্চা।’

রুহি বাচ্চাদের মত করে বললো কথা গুলো। আবিরের মায়া হলো।এরকম করে বরলে কখনো না করা যায়? ‘ এই শেষ বার ‘ বলে আবির নিচে গেলো। রুহি জুলেখা কে দিয়ে চাউল ভাজিয়ে, কাচা মরিচ কুচি কুচি করে কেটে সেগুলো নিয়ে ছাদে এলো। এ জন্য অবশ্য জুলেখাকে ঘুষ দিতে হলো একশ টাকা। আবির চানাচুর আর ছোলা নিয়ে ছাদে এসে রুহির পাশে বসলো। রুহি আবিরকে বললো ছাদের দরজা আটকে দিয়ে আসতে৷ আবির যেয়ে দরজা আটকে এলো। চাউল ভাজা,চানাচুর,ছোলা, কাচা মরিচ সব গুলো একসাথে মাখাতে বললো আবিরকে। আবির মাখিয়ে দিলো। রুহি খাওয়া শুরু করলো। রুহি চাউল ভাজা মুখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে চিবুচ্ছিলো। যেনো অমরিত্ব খাচ্ছে। আবির অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো রুহির দিকে। কে যেনো বলেছিলো মা হবার সময় মেয়েদের চেহারা মায়াবী হয়ে যায়। আবিরের মনে হলো কথা সত্যি। রুহিকে সত্যি অনেক মায়াবী লাগছে।

রাতে শুয়ে রুহি আবিরকে জিজ্ঞেস করলো,
‘ আচ্ছা, বলো তো আমার কি বাচ্চা হবে? ছেলে না মেয়ে? ‘

আবির জবাব দিলো,
‘ আমার অনুমান শক্তি খুবই খারাপ। তাই বলতে পারছি না। তবে যাই হোক, আমরা তাতেই খুশি।। শুধু চাই বাচ্চা, এবং বাচ্চার মা সুস্থ থাক।’

‘ সুস্থই তো আছি, তোমার ভাইয়া কিন্তু বলতো প্রথমে যেনো আমার মেয়ে হয়। একটা ফুটফুটে পরীর মত মেয়ে বাচ্চার শখ ছিলো ওর। আমি বলতাম আমার ছেলে হবে। এই নিয়ে তর্ক হতো আমাদের মাঝে। কিন্তু, এখন আমি চাই আমার যেনো একটা মেয়ে বাচ্চা হয়। ঠিক আবিদ যেমনটা চাইতো।’

আবির কিছু বললো না। রুহি বরলো,
‘ সেদিন ডাক্তারকে নিষেধ করলে কেনো? কি বাচ্চা হবে বলতে?’

‘ তুমি যদি কাউকে সারপ্রাইজ দিতে চাও তাহলে কি তাকে জিজ্ঞেস করবে কি দিবে? যে আমাদের পরিবারে আসছে সে তো আমাদের জন্য আস্ত একটা সারপ্রাইজ। আগে থেকে যদি যেনে যাই ছেলে না মেয়ে তাহলে তো হলো না। ও যেদিন দুনিয়ায় আসবে সেদিনই যানবো। তার আগে না।’

‘ হুমমম,বুঝলাম। আচ্ছা, একটা কথা বলি?’

‘ বলো’

‘ না মানে ডেলিভারির সময় তো অনেক মা মারা যায়। আমি যদি মারা যাই, তাহলে তুমি তারাতাড়ি আরেকটা বিয়ে করে ফেলবে। আমার সন্তানটা যেনো মা ছাড়া বড় না হয়।’

‘ ফালতু কথা বলো কেনো? সেরকম কিছু হবে না।’

‘ আমিও যানি হবে না। সত্যি কথা কি যানো? মানুষ যখন মৃত্যু চায় তখন সে মারা যায় না। অথচ,বাঁচতে চাইলেই মারা যায়।’

‘ তোমার সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। আমি ঘুমাবো। তুমিও ঘুমাও, ফালতু কথা অনেক বলোছো।’

‘ আমার ঘুম আসছে না। আচ্ছা শোনো,এখন ভালো কথা বলি। তোমার কোনো মেয়ে পছন্দ আছে? মানে বিয়ে করতে চাও?’

‘ আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে।’

‘ শুধু বিয়েই হয়েছে। বউ তো পাও নি।’

‘ তুমি কি থামবে? নাকি আমি কাথা,বালিশ নিয়ে ছাদে চলে যাবো?’

‘ আচ্ছা, থামছি। কিন্তু ঘুম আসছে না। তোমার যদি ঘুম না পায় তাহলে একটা কাজ করে দাও।’

‘ কি?’

‘ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও। আমি ঘুমিয়ে যাবো। আমার যখন ঘুম না আসে তখন মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে ঘুমিয়ে যাই।’

আবির আলতো করে রুহির মাথায় হাত রাখলো। রুহি চোখ বন্ধ করে নিলো। মনের পর্দায় ভেসে উঠলো স্মৃতি। সেদিন, রুহির মাথা ব্যর্থা করছিলো। সে আবিদ কে বলতেই আবিদ উঠে বসে রুহির মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো যত্ন করে। আরামে রুহি কখন ঘুমিয়ে গেছে যানে না। ঘুম ভাংলো রাত দুইটায়। তখনও আবিদ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রুহি উঠে বসে জিজ্ঞেস করলো,
‘ ঘুমাও নি?’

‘ নাহ’

‘কেনো?’

ডিউটির সময় ঘুমালে চাকরি থাকবে?’

‘ঠিক আছে এবার ঘুমাও।’

‘ তোমার কি মাথা ব্যথা কমেছে?’

‘ হুমমম’

আবিদ রুহিকে জরিয়ে ধরে কানে কানে দুটো কথা বলতেই রুহির হার্ডবিট মিস হবার যোগার হলো।

সেই রাতের কথা মনে পড়তেই রুহির চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আবির এখনো মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রুহির বলতে ইচ্ছে হলো, ‘ আবির হাত সড়াও।’ কিন্তু বলতে পারলো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো।

চলবে….?