নাম না জানা পাখি পর্ব-০৩

0
573

#নাম_না_জানা_পাখি
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পর্ব_৩

রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের ড্রেস পরে কাজ করছে খুশি। কাস্টমার কে কি চাইছে অর্ডার নিচ্ছে আর এনে দিচ্ছে। সঙ্গে আরো অনেকেই আছে,।খুশি দাঁড়িয়ে দেখছিল কেউ আসছে কি না তখনি পিছন থেকে কেউ একজন খুশির মাথায় টোকা দেয়। খুশি আআ বলে পিছনে তাকিয়ে দেখে রোদ ৩২টা দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে আছে। খুশির সঙ্গে রোদ ও এই রেস্টুরেন্টে কাজ করে ফ্রি সময়। এক সঙ্গে কাজ করতে করতে দুইজনের ভালো বন্ধুত্ব হয়ে উঠেছে। খুশি রেগে রোদ কে বলে।

“তোর সব সময় শুধু আমাকে মাইর দেওয়া লাগবে তাই না?”

” হেহে তুই কত্তো কিউট তাই তোকে না মেরে থাকতেই পারি না।

“আমি কিউট হলে আমার প্রশংসা কর।সুন্দর সুন্দর সায়েরি শুনা। মাইর দেওয়া টা কি রকম কাজ।(মুখ ভেংচি দিয়ে বলে)

রোদ খুশির মতো মুখ ভেংচি দিয়ে বলে।

” আহা আসছে দেখো প্রশংসা নিতে।

“চুপ বেয়াদ্দব। চল ওখানে কাস্টমার এসেছে কি নিবে দেখি।

রোদ খুশি দুই জনেই সেদিকে যায়। খুশি কাস্টমার কে গিয়ে বলে।

” স্যার অর্ডার প্লিজ।

মেয়েলি কন্ঠ শুনে মাহির ফোন থেকে ওপরে তাকিয়ে দেখে খুশি দাঁড়িয়ে সঙ্গে একটা ছেলেও। মাহির খুশিকে এখানে দেখে অবাক হয় কারণ মাহির জানতো না খুশি এখানে জব করে। এই দিকে খুশি ও মাহিরকে দেখে অবাক হয় কিন্তু কিছুই বলে না স্বাভাবিক ওয়েটারের মতোই আবার বলে।

“স্যার অর্ডার প্লিজ।

মাহিরের রাগ হয় কারণ খুশি তাকে দেখে এমন বিহেভ করছে যেনো তাকে চিনেই না। মাহিরকে খুশির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখে রোদ বলে।

” আব খুশি তুই ওই দিক টা দেখ আমি এখানে দেখছি স্যারের কি লাগবে।

রোদের কথায় খুশি ও আর কিছু না বলে চলে যায়।এতে মাহিরের রাগ আরো বেরে যায়। মাহির খুশিকে এমন দেখতে মোটেও চাইনি।মাহির চায় খুশি তাকে দেখে কষ্ট পাক অশান্তি তে থাক। কিন্তু এমন কিছুই হচ্ছে না খুশি স্বাভাবিক বিহেভ করছে। রোদ মাহিরকে বলে।

“স্যার আপনি কি নিবেন?

মাহির রোদের কথায় রোদের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উঠে রেস্টুরেন্ট থেকে হনহনিয়ে চলে গেলো। রোদ অবাক হয়ে তাকিয়ে বিরবির করে বলে।

” আজব লোক।সিঙ্গার বলে কি সব জায়গায় এভাবে ভাব দেখিয়ে চলবে নাকি।

খুশি দূর থেকে দেখলো মাহির উঠে চলে গেলো রেগে। খুশি মনে মনে বলে।

“সেই আগের মতোই রাগী।এখনো কি বলবে তুমি আমার সেই মাহির না? তুমি আমাকে চিনো না। তোমার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তুমি আমাকে কতটা চিনো। কিন্তু তোমার এই আমাকে না চেনার নাটক টা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কি করতে চাইছো তুমি?

খুশি যখন মনে মনে এসব কথা ভাবতে ব্যস্ত তখন রোদ এসে বলে।

” আজব লোক কিছু না খেয়েই চলে গেলো। কিছু খাবে না তো কেনো এসেছিলো। (রোদ )

“হয়তো ওনার কোনো কাজ পরে গেছে তাই চলে গেছে।(খুশি)

” কিন্তু এই লোক টা তোকে কেমন রাগি রাগি ভাবে দেখছিল।(রোদ চিন্তার ভাব ধরে বলে)

“আরে না তেমন কিছু না হয়তো কোনো কারণে মন খারাপ লোকটার তাই হয়তো।বাদ দে। আর কাজে মন দে।

রোদ আর কিছু বললো না। খুশি রোদ নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। রাত ৯ টা বাজে খুশি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আসে।আজ রেস্টুরেন্ট থেকে বিরিয়ানি নিয়েছে খুশি। বাড়িতে গিয়ে আর রান্না করার এনার্জি খুশির নেই তাই। পার্কিং সাইড থেকে স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পরে খুশি।আম্মুর জন্য ওষুধ নেওয়া লাগবে। শেষের দিকে প্রায়। খুশি আশেপাশের একটা ওষুধের দোকানে গিয়ে আম্মুর জন্য ওষুধ নিয়ে নেয়। তারপর বেরিয়ে পরে।অনেকটা রাস্তা আসার পর হঠাৎ খুশির স্কুটির সামনে একটা গাড়ি চলে আসে।খুশি পরতে পরতে বেঁচে যায়। স্কুটি থেকে নেমে লোক টাকে কথা শুনাতে যাবে তখনি দেখে গাড়ি থেকে মাহির বেরিয়ে আসে খুশির সামনে। খুশি বলে।

” আপনি? আচ্ছা আপনি কি কানা?দেখে শুনে গাড়ি চালাতে পারেন না?

“এখন কি আমি গাড়ি চালানো তোমার থেকে শিখবো?কি করে গাড়ি চালাতে হয়?

” আমি এটা কখন বললাম? আপনি যেমন করে গাড়ি চালাবেন চালান এতে আমার কি।কিন্তু আপনি আমার সামনে কেনো আসছেন বার বার?(খুশি কিছুটা রাগ নিয়ে বলে)

মাহির খুশির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে এখন।একটা হলুদ কালারের সুতির থ্রিপিস পরে আছে। নতুন ও না আর খুব পুরাতন ও না। রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের ড্রেস পরে ছিলো খুশি। মাহির কে এভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে খুশি নিজের ওরনা টা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়। মাহির তা দেখে বাঁকা হাসে শুধু। খুশি বলে,

“পথ ছারুন আমি বাড়িতে যাবো।

এই বলেই খুশি স্কুটি তে বসতে নিবে তখন মাহির বলে।

” তোমার মতো মেয়েদের আমার খুব ভালো করে চেনা আছে। দুই দিন আগেও যে আমার জন্য কান্না করছিলো সে আজ অন্য ছেলের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলে বেড়াচ্ছে।দিব্বি হ্যাপি আছে। যেমন দেখলে তোমার নাটকে,কুমিরের কান্নায় আমার মন গলে না তেমন অন্য ছেলের পিছনে লেগে পরলে তাই তো?

মাহিরের কথায় খুশির খারাপ লাগলেও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে খুশি বলে।

“যার জন্য কান্নাকাটি করেছি পাগলামি করেছি সে তো আপনি না মিস্টার নূর-এ-শাহরিয়ার মাহির। আমি আমার হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে আপনি ভেবেছি তাই কান্না করে আপনার কাছে গেছি।কিন্তু আমি তো জানতাম না আমার সেই বন্ধু ৫ বছর আগেই মারা গেছে। আপনি আমার মাহির কখনোই হতে পারবেন না। দুই দিন আগে যে আমার মাহির ভেবে আপনার কাছে গিয়ে কান্না করেছি সেটাতেও আমার মাহির কে অপমান করা হয়েছে। আমি আমার মাহির কে চিনতে ভুল করেছি।

এসব কথা শুনে রেগে মাহির চিৎকার করে বলে।

” খুশিইই!!

“একদম চুপ! গলা নামিয়ে কথা বলুন।আপনি কি আমার মাহির? না আপনি আমার মাহির না। সেটা আমার গায়ে হাত তুলেই প্রমান করে দিয়েছেন আপনি। আমার মাহির আমাকে কখনো মারতে পারে না। আপনাকে আমি চিনি না।তাই আমার ওপর কোনো অধিকার খাটাতে আসবেন না। একটা মিস্টেক এর জন্য আপনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিলো। আপনি আমার মাহির না, আমি ও আপনাকে চিনি না। আর আমি আপনার সো কল্ড ফ্যান ও না। আরেকটা কথা আমি কার সঙ্গে হেসে কথা বলবো ঘুরবো সেটা একান্ত আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।আপনি এর মধ্যে আসবেন না। আল্লাহ হাফেজ।

কথা গুলো বলেই খুশি স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পরে। এই দিকে মাহির রেগেমেগে গাড়ির চাকায় খুব জোরে একটা লাত্থি মারে। রেগে পারে না খুশিকে খুন করতে। মাহির রেগে বলে।

” অধিকার দেখাচ্ছো তুমি আমাকে! অধিকার! বুঝেছি তোমাকে এমন করে কষ্ট দেওয়া যাবে না।তোমার উপর আমার কোনো অধিকার নেই না?এখন এমন ব্যাবস্থা করবো যাতে তোমার ওপর আমার থেকে বেশি আর কারো অধিকার না থাকে।

এই দিকে খুশি বাড়িতে ফিরে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। দরজা বন্ধ করে কান্না করতে লাগে।মাহিরকে কথা গুলো বলতে চাইনি খুশি। কিন্তু মাহির ওর সঙ্গে এমন বিহেভ কেনো করছে তা জানার জন্যই বলেছে এতো কথা। খুশি ভালো করে জানে মাহির একবার রেগে গেলে সব মুখ থেকে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু এতো কথা বলে খুশি এখন নিজেই কষ্ট পাচ্ছে।

“খুশি এই খুশি বাইরে থেকে এসে একেবারে রুমে চলে গেলি যে। কিছু হয়েছে?দরজা খুল খুশি।”

বাইরে থেকে আম্মুর ডাকে খুশি নিজের চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা খুলে দেয় আর বলে।

” তুমি আবার আসতে গেলে কেনো আম্মু? তোমার শরীর খারাপ,এতো হাটাহাটি করো না। আমার মাথায় একটু ব্যাথা করছে তাই রুমে চলে এসেছি।”

“আমার জন্য তোর খুব কাজ করতে হয় না রে মা। মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে।আজ তোর আব্বু বেচে থাকলে এমনটা হতো না।

” উফফ আম্মু আবার সেই এক কথা! কতবার বলেছি এসব কথা বলবে না। আমার তুমি ছাড়া আর কে আছে?তোমার জন্য করবো না তো কার জন্য করবো বলো? চলো তো চলো আজ বিরিয়ানি নিয়ে এসেছি, মজা করে খাবো দুই জনে। তুমি যাও, বসো গিয়ে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

আম্মু চলে গেলে খুশি ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় নিজেকে আয়নায় দেখে। দুই বছরের আগের খুশি আর এখনের খুশির মধ্যে কতো পার্থক্য। দুই বছর আগের খুশির মনে ছিলো চঞ্চলতা। কোনো চাপ ছিলো না।পড়াশোনা, খাওয়া আর ঘুরাঘুরি করেই যেতো। কিন্তু আব্বু মারা যাওয়ার পরে গ্রাম থেকে অপমান করে তাড়ুয়ে দিয়েছিল খুশি আর খুশির আম্মুকে। খুশির আব্বুর যত জমি জায়গা নিয়ে নিলো খুশির বড় আব্বু। তখন আম্মুর দেখা শোনা,নিজের পড়ালেখা,সংসার খরচ সব এসে পরলো খুশির ওপর। এসব সামলাতে সামলাতে নিজের যত্ন আর নেওয়া হয় না। আগের মতো সুন্দরি ও লাগে না ওতো। রোগা পাতলা হয়ে গেছে পুরো।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে আর নিজেকে আয়নায় পর্যবেক্ষণ করতে করতে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। হাত মুখ ধুয়ে আম্মুর কাছে চলে যায় খুশি খেতে। খুশির কিছু খেতে ইচ্ছা না করলেও আম্মুর জন্য খেতে হবে তাকে।নয়তো আম্মু ও খাবে না,আর ওষুধ ও খাবে না।

চলবে?