নাম না জানা পাখি পর্ব-০৪

0
524

#নাম_না_জানা_পাখি
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পর্ব_৪

“খুশি তুই বলছিলি না টিউশনি করাবি, একটা স্টুডেন্ট পেয়েছি ক্লাস ৪ এ পড়ে। সকালে তাদের বাড়িতে গিয়ে পড়াতে হবে, কিন্তু ওদের বাড়ি একটু দূরে তোর আশা যাওয়া করতে সময় লাগবে।

পুরা দমে কথা গুলো বলে থামলো অধরা। ভার্সিটিতে আশা মাত্রই অধরা খুশির কাছে এসে বলতে লেগেছে কথা গুলো। খুশি, খুশি হয়ে অধরা কে জরিয়ে ধরে বলে।

” ধন্যবাদ অধু তুই না থাকলে এতো বড়ো শহরে আমি টিকে থাকতে পারতাম না। সেই প্রথম থেকে আমাকে সাহায্য করে আসছিস তুই রেস্টুরেন্টের জব টাও তুই করে দিছিস আজ আমি এখানে এমন ভাবে আছি তার কারণ তুই। তোর এই ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না আমি।

খুশি ইমোশনাল হয়ে কথা বলছিলো তখনি অধরা বলে।

“আবার এসব কথা বলছিস তুই? তোর মনে নেই ছোটো বেলায় খেলা করতে যেয়ে আমি নদী তে পরে গেছিলাম। সেদিন তুই নিজের জীবনের পড়ুয়া না করে আমাকে বাচিয়ে ছিলি, সেই ঋণ আমি এসব করেও শোধ করতে পারবো না।

” তবুও তুই না থাকলে আমি কলকাতা শহরের রাস্তায় থাকতাম আমার আম্মু কে নিয়ে, হয়তো এতো দিনে মরেও যেতাম।

” আরে বাদ্দে তো তুই না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আর আমি বেস্ট ফ্রেন্ড এর এই টুকু সাহায্য করতে পারবো না? বাদ্দে চল ক্লাসে যায়।

“আচ্ছা দিলাম বাদ তবে আজ তোকে ট্রিট দিবো আমি যেই রেস্টুরেন্টে কাজ করি সেটাই ওকে?(খুশি)

অধরা খুশি হয়ে বলে,

” ওকে ওকে।

তারপরে দুই জনে ক্লাসে চলে যায়। অধরা আর খুশি ছোটো থেকেই খুব ভালো বন্ধুত্ব তাদের,, এক গ্রামেই বড়ো হয়েছে তারা কিন্তু অধরার আব্বু বিজনেস শুরু করে শহরে তাই অধরার ফ্যামিলি ও চলে আসে শহরে গ্রাম থেকে। অধরা গ্রাম থেকে চলে আসলেও খুশির সঙ্গে জগাজগ ছারে নি তাদের ফোনে রোজ কথা হতো। ২বছর আগে যখন গ্রাম থেকে খুশি ও তার আম্মু চলে আসে তখন প্রথমে কিছু দিন অধরা দের বাড়িতেই ছিলো। অচেনা শহরে দুটো মেয়ে মানুষ কি করে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না। অধরার আব্বু আম্মু ও অনেক ভালো মানুষ কিন্তু খুশি পরের বাড়িতে বেশি দিন থাকতে চাইনি, তাই অধরার সাহায্যে রেস্টুরেন্টের জব আর একটা বাড়ি ভারা করে। অধরার কাছে কিছু টাকা নেয় যাতে এই শহরের ভালো করে সেটেল হতে পারে। আস্তে আস্তে দিন যেতে লাগে আর খুশিও সব কিছু মানিয়ে নিতে শিখে যায়। অধরার টাকাও ফিরিয়ে দিয়েছে যদিও অধরা নিতে চাইনি কিন্তু খুশি তবুও দিয়েছে। বলতে গেলে খুশি এই নতুন জীবন টা গরিয়ে দিয়েছে অধরা।

ভার্সিটি শেষে খুশি অধরাকে স্কুটিতে নিয়ে রেস্টুরেন্টে চলে যায়। রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে খুশি বলে।

“তুই ভিতরে গিয়ে বস আমি স্কুটি রেখে আসি।

খুশির কথায় অধরা ভিতরে যেতে লাগে তখনি কারোর সঙ্গে ধাক্কা লেগে পরে যেতে নেয় অধরা। কিন্তু পরে যায় না দুটো হাত অধরা কে ধরে ফেলে অধরা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে কিন্তু যখন দেখলো এখনো পরে যায় নি তখন চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে তাকে ধরে আছে। ছেলেটা বেশ সুন্দর অধরা দেখে ক্রাশ খায়, অধরা ভালো করে ছেলেটাকে দেখতে লাগে। অধরা দেখে ছেলে টাও তার মতো চশমা পরে। পরক্ষনেই খেয়াল হয় অধরার সে একটা ছেলেকে নির্লজ্জ ভাবে দেখছে ছি ছি। এটা ভেবেই অধরা ছেলেটাকে অধরা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়। ছেলেটা অবাক হয়ে বলে।

” আজব মেয়ে তো, একে আমি আপনাকে হেল্প করলাম আর আপনি আমাকে এভাবে ধাক্কা দিবেন?

“ওই মিয়া ধাক্কা টা কে দিয়েছিল? আপনিই তো কানা চোখ নিয়ে হেটে আসছিলেন আর আমাকে ধাক্কা দিলেন। তবুও একটা সরি না বলে আমাকে কথা শুনাচ্ছেন?(অধরা রেগে বলে)

” আমি কানা নাকি আপনি ভালো করে দেখুন চশমার নাম্বার দেখুন বেরে গেছে নাকি কমে গেছে। চাশমিশ একটা।

“আমি চাশমিশ না আপনি চাশমশ।

” চাশমিশ শুনেছি, কিন্তু চাশমশ কি?( ছেলে টা চিন্তা করে বলে)

“চাশমশ হচ্ছে চাশমিশ এর মেল ভারসন হুহহ।(অধরা)

” পাগল আপনি?

“আমি পাগল না আপনি পাগল।

এরা ঝগড়া করতেই আছে তখনি খুশি আসে,, আর এসেই এদের ঝগড়া করা দেখে অবাক কি ভাবে বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছে দুই জনে। খুশি অধরা আর ছেলেটার মাঝে গিয়ে জরে বলে।

” চুপ!!!!

খুশির ধমকে দুই জনেই চুপ হয়ে যায়। খুশি বলে,,

“এভাবে ঝগড়া করছিস কেনো দুই জনে? কি হয়েছে?

” এই ছেলেটা আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে চেয়েছিলো। (অধরা)

“না খুশি এই মেয়েটা আগে ধাক্কা দিয়েছে আমাকে।

” আপনি আমার বেস্টুকে কেনো নাম ধরে ডাকছেন? আর আপনি নাম জানেন কি করে?(অধরা)

“চুপ কর দুই জনে,,আর ঝগড়া করলে আমি চলে যাবো এখান থেকে। (খুশি)

অধরা আর ছেলেটা দুই জনে মুখে আংগুল দিয়ে চুপ হয়ে যায়। খুশি আবার বলে

” অধরা এটা রোদ যার কথা তোকে বলেছিলাম। আর রোদ এটা অধরা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

রোদ অধরা একে অপরের দিকে কিছুখন তাকিয়ে থেকে মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে ফিরে যায়। খুশি অধরা কে ভিতরে নিয়ে যায় রোদ ও আসে সঙ্গে, খুশি বলে।

“অধু কি খাবি অর্ডার দে আমি নিয়ে আসছি।

অধরা তার পছন্দ মতো কিছু খারাপ বললো তাই এনে দিলো খুশি। খাওয়া দাওয়া করে কিছুখন আড্ডা দিয়ে অধরা নিজের বাড়িতে চলে গেলো আর খুশি নিজের কাজে লেগে পরে। ৯ টার আগে তো আর যেতে পারবে না খুশি।

” আর কতোদিন এভাবে থাকবি তুই মাহির? আমি সেই কবে থেকে বলছি বিয়ে করে নিতে আমার কথা কি তোর কানে যায়না? আর তুই নিজের বাড়ি রেখে এখানে এই ফ্লাটে কেনো থাকিস বল তো?

মাহিরের আব্বু রেগে বলে কথা গুলো মাহিরকে।

“আব্বু আমাকে আর কিছু দিন সময় দাও আমি খুব জলদি বিয়ে করে নিবো।

” ওকে আর কিছু দিন সময় দিলাম তোমাকে তুমি নিজে মেয়ে খুজে নাও। নয়তো আমি যাকে পছন্দ করবো তাকেই বিয়ে করতে হবে তোমার আর এই ফ্লাট ছেরে নিজের বাড়িতে থাকতে হবে বউ নিয়ে। (কথা গুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় মাহিরের আব্বু)

মাহির একটা সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় চলে যায় আর কিছু একটা ভাবতে লাগে আর শয়তানি হাসি হাসে। মাহিরের মাথায় কি চলছে সেটা মাহির নিজেই ভালো বুঝে। মাহির সিগারেট খেতে আর ভাবতে যখন ব্যাস্ত তখন পাসের বিল্ডিং এর বারান্দা থেকে একটা ১০ বছরের ছেলে বলে উঠে।

” আঙ্কেল তুমি বিয়ে করে নিচ্ছো না কেনো? রোজ রোজ তোমার আব্বুর কাছে বোকা খাও শুধু। তুমি কতো লাকী জানো?

ছেলেটার কথায় ব্রু কুচকে মাহির বলে।

” লাকী কি করে হলাম?

ছেলেটা আবার বলে।

“তোমাকে তোমার আব্বু বিয়ে করার জন্য বোকা দেয়, পড়াশোনা করার জন্য বোকা দেয়না। আর আমার আব্বু আমাকে শুধু পড়াশোনা করার জন্য বোকা দিবে। আমাকে যদি তোমার মতো বিয়ে করতে বলতো আমি কবেই বিয়ে করে নিতাম। তুমি তাহলে লাকী হলে না বলো?

ছেলেটার কথা শুনে মাহির শব্দ করে হেসে দেয়। ছেলেটা আবার বলে।

” জানো আঙ্কেল থেকে আমাকে একটা ম্যাম পড়াতে আসবে।

“পাকা বুড়ো যা পরতে বস নয়তো নতুন ম্যামের কাছে আবার বোকা খাবি।

মাহির কথা গুলো বলে চলে যায় রুমের ভিতরে। মাহিরের নিজের একটা বাড়ি আছে কিন্তু সেই বাড়িতে মাহির থাকে না একা একটা ফ্লাট কিনে থাকে। পাশাপাশি দুটো বিল্ডিং মাহিরের রুমের বারান্দার ওই পাসে আরেকটা বিল্ডিং এর বারান্দা আছে। অখানে একটা ছোট ছেলে থাকে মাহিরের ফ্লাটের বারান্দা থেকে ওই ছেলের ফ্লাটের বারান্দা খুব কাছা কাছি। নিশ্চিন্তে কথা বলা যায়, এমন কি এই বারান্দা থেকে ওই বারান্দা যাওয়া যায়।

চলবে?

( রিচেক করা হয়নি বানান ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)