নাম না জানা পাখি পর্ব-০৫

0
537

#নাম_না_জানা_পাখি
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পর্ব_৫

খুব সকালে কারো মিস্টি ভয়েসে ঘুম ভাঙ্গে মাহিরের।মাহিরের কাছে ভয়েস টা কেমন চেনা চেনা লাগছে। ঘুম ঘুম চোখে যেই দিক দিয়ে কথা বলার শব্দ আসছে সেদিকে যায় মাহির। বারান্দায় এসে দেখে কালকের ছেলেটা একটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলছে আর মেয়েটাও কথা বলছে টুকটাক। মাহির মেয়েটার মুখ দেখতে পাচ্ছে না কারণ উল্টো দিকে ঘুরে আছে মেয়েটা।তাই মাহির ছেলেটাকে ডাক দেয়।

“রাহুল!(ছেলের নাম রাহুল)

মাহিরের ডাকে ছেলেটা সহ মেয়েটাও তাকায়। দুই জন দুইজনকে দেখে বেশ অবাক হয়। কারণ এটা খুশি অন্য কেউ না। খুশি মাহির কে এখানে দেখে অবাকের শেষ সীমানাই চলে গেছে। খুশি ভাবতেও পারেনি মাহিরকে এখানে পাবে। রাহুল মাহিরকে বলে।

” মাহির আংকেল কাল তোমাকে বলেছিলাম না আমার নতুন ম্যাম আসবে।এই দেখো এটা আমার নতুন ম্যাম অনেক কিউট তাই না? আমার না খুব পছন্দ হয়েছে ম্যাম কে তোমার কেমন লেগেছে?

রাহুলের প্রশ্নে মাহির মনে মনে উত্তর দেয়।

“ভালোই তো লাগে,, কিন্তু একে আমার ভালো লেগে কোনো লাভ নেই আমি আমার কাজ করেই যাবো। (মনে মনে)

” কি হলো আংকেল কিছু বলছো না কেনো তুমি কি আমার ম্যামের সামনে লজ্জা পাচ্ছো?(মাহিরের উত্তর না পেয়ে রাহুল বলে)

এই দিকে খুশি নিরব দর্শকের মতো রাহুল মাহিরের কান্ড দেখছে। খুশি কিছুই বুঝতে পারছে না হচ্ছে টা কি এখানে। মাহির রাহুলের কথার উত্তর দেয়।

“তোর নতুন ম্যাম মোটেও কেউট না পেত্নির মতো দেখতে।

মাহিরের এই কথায় চেতে যাই খুশি, তাকে পেত্নি বলা হচ্ছে কত্তো বড়ো সাহস। খুশি রেগেমেগে বলে উঠে।

” আপনি কি হ্যাঁ আপনি কি একটা খাম্বা, চেহারার নেই কোনো কিউটনেস জিরাফের মতো দেখতে সাদা বিলাই একটা আসছে আমাকে পেত্নি বলতে।

“এই মেয়ে এই তুমি কাকে কি বলছো খেয়াল আছে?(রেগে মাহির বলে)

” হ্যাঁ দিব্বি খেয়াল আছে একটা অসভ্য অভদ্র নিজেকে সেলিব্রিটি ভাবে তাকেই বলছি।

মাহির রাগে ফুসফুস করছে সেদিকে খেয়াল নেই খুশির সে তার মতো বলেই যাচ্ছে। খুশি রাহুল কে উদ্দেশ্য করে বলে।

“এই যে ছেলে শুনছো এই লোকের থেকে ১০ হাত দূরে থাকবে নয়তো তুমিও এই লোকের মতো অসভ্য হয়ে যাবে। এখন আসো রুমে আমি তোমাকে পড়াই আর মানুষ তৈরি করি। (খুশি রাহুলের হাত ধরে রুমে নিয়ে যেতে লাগে তখন রাহুল বলে)

” কিন্তু ম্যাম আম্মু যে বললো বারান্দায় পড়তে বসতে। আর মাহির আংকেল তো অনেক ভালো তুমি এমন কেনো বলছো??

খুশি পরখনেই খেয়াল আসে সে কথায় আছে আর কি করতে এসেছে। খুশি কোনো রকম ঝামেলা চাই না আর প্রথম দিনে এসেই ঝামেলা করলো এখন যদি রাহুল তার আম্মু কে বলে দেই। আর খুশিকে বের করে দেই তখন কি হবে এই টিউশনির টার অনেক দরকার খুশির কাছে। খুশি মাহিরের দিকে এবার ভালো করে তাকিয়ে দেখে পরনে একটা টি শার্ট আর থ্রি কোয়াটার পান্ট পরা। রাগে মুখ টা লাল হয়ে আছে আর চোখ দিয়ে যেনো গিলে খাচ্ছে খুশিকে। খুশি পরিবেশ সাভাবিক করার জন্য বলে।

“দেখুন মিস্টার মাহির আমি কোনো ঝামেলা চাচ্ছি না,,এই টিউশনি টা আমার খুব দরকার। তাই আপনিও আমার সঙ্গে কথা বলতে আসবেন না আর আমিও কথা বলবো না। একটু আগে যা বলেছি তার জন্য সরি।

মাহির খুশির দিকে কিছুখন তাকিয়ে থেকে কিছু না বলেই নিজের রুমের ভিতরে চলে যায়। এই দিকে খুশি সস্তির নিসসাস নিয়ে রাহুল পড়াতে বসে। পড়ার মাঝে খুশি রাহুলকে জিজ্ঞেস করে।

” তোমার এই আংকেল টা কি এখানে থাকে?

“হ্যাঁ ম্যাম অনেক আগে থেকেই অনেক ভালো এই আংকেল আমাকে চকলেট কিনে দেয় অনেক আদর করে।

” ওহ আচ্ছা! পড়ো তুমি।

খুশি মাহিরের বারান্দার দিকে দুই এক বার উকি ঝুকি মারে কিন্তু মাহিরকে দেখতে পায়না। খুশি আবার পড়াতে লাগে রাহুলকে।

এই দিকে মাহির ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে,, রুম থেকে পাসের বারান্দায় কে আছে তা খুব ভালো করে দেখা যাচ্ছে। মাহির খুশিকে মন থেকে কখনই হেইট করতে পারে না কিন্তু কিছু চাপা অভিমান রাগ খুশিকে ভালোলাগতেও দিচ্ছে না। খুশির কথা ভাবতে গেলেই মনে পরে যায় সেই দিনের কথা যেখান থেকে অপমান করে গ্রামের সবার সামনে বের করে দিয়েছিল গ্রাম থেকে। সেদিন চাইলে খুশি সত্যি টা বলতে পারতো কিন্তু খুশি সেদিন আসেনি মাহিরের কাছে আসেনি মাহিরকে অপমান থেকে বাচাতে। মাহিরের মনে পরে যায় খুশির সঙ্গে কাটানো কিছু সরনিও মহুরত্ব।

অতীত

খুশির বয়স তখন ১৫ বছর ক্লাস ৯ এ পড়ে। মাহিরের এইচ এস সি পরিক্ষা হয়ে গেছিল,, মাহির শহরের ছেলে পরিক্ষা শেষ হয়েই পরিবারের সাথে দাদূর বাড়ি বেরাতে আসে। রামপুর গ্রামে মাহিরের দাদুর বাড়ি ছিলো। রামপুর গ্রামের মাতব্বর ছিলেন মাহিরের দাদু গ্রামের সবাই অনেক সম্মান করতো মাহিরের দাদুকে।

মাহির গ্রামে এসে আসে পাসে ঘুরছিলো ঠিক তখনি তার চোখে পরে কিছু মেয়ে আম গাছে আম চুরি করছে। মাহির সেদিকে যায় আর বলে।

“এই এই কে তোমরা আর আম কেনো পারছো? এগুলা তো এখনো কাচা হয়ে আছে খাওয়া যাবে না।

মাহিরের গলা শুনে সবাই ভয় পেয়ে যায় কিন্তু মাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখে একে তারা চিনে না কখনো গ্রামে দেখেও নি। এই দিকে মাহিরের চোখ আটকে যায় সাদা ড্রেশ পরা মেয়েটার দিকে।

” এই তুমি কে? আগে তো এই গ্রামে দেখিনি।

“আমি মাহির এই গ্রামে আমার দাদুর বাড়ি ঘুরতে এসেছি।

” ওহ তুমি ঘুরতে এসেছো? খুব ভালো আমার নাম খুশি আমি এই গ্রামেই থাকি। ওর নাম চুমকি, ওর নাম ঝুমকি ও সাবা, ও জান্নাত আর ও পিংকি।

খুশি সবার নাম বলে দিলো। মাহির সবার সাথে পরিচিত হয়ে নেয়। তখন খুশি বলে,,

“তুমি আম পারতে পারবে ওই যে ওই ডাল থেকে।(আংগুল দিয়ে দেখিয়ে)

” আমি তো কখনো গাছে উঠিনি,, তবে আমি ঢিল ছুরে পেরে দিচ্ছি ওয়েট কিন্তু এই গুলো তো কাছা খাবে কি করে?

মাহিরের বোকাসকা প্রশ্নে সবাই হেসে দেয়, মাহির জানে না কাছা আম খেতে কতটা টেস্টি। খুশি বলে,,

“আরে শহরের ছেলে তুমি জানো না কাচা আমের স্বাদ কেমন।আগে পেরে দাও তার পর দেখবে।

খুশির কথায় মাহির অনেক কষ্ট করে কয়েকটি আম পেরে দেয় ঠিক তখনি আম গাছের পাহাদার চলে আসে। খুশি আম গুলো তার বাকি বান্ধবীদের হাতে দিয়ে মাহিরের হাত ধরে ভো দৌড় লাগাই। মাহির বুঝতে পারছে না খুশি তার হাত ধরে এভাবে দৌরাচ্ছে কেনো।

” আরে খুশি আমরা এভাবে দৌরাচ্ছি কেনো? (মাহির)

“তারাতাড়ি দৌরাও নয়তো আম গাছের পাহারা দার ধরে নিয়ে যাবে।(খুশি)

” বাট ওয়াই?(মাহির)

“আমরা তাদের গাছের আম চুরি করেছি তাই।

” কি তুমি আমাকে চুরি করালে আগে কেনো বলোনি স্টুপিড।

বেচারা মাহির বুঝতেই পারেনি তারা আম চুরি করছে,, না যেনে সেউ আম চুরি করেছে। অনেক দূর পর্যন্ত দৌরে এসে একটা জায়গায় থামে। মাহির পুরো হাপিয়ে গেছে,, খুশি কাগজে জরানো নুন মরিচ বের করে। আম কে ফাটিয়ে খাওয়া শুরু করে সব গুলোই। মাহির খুশির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আম খাচ্ছে আর অনেক রকমের মুখ টাকে বানাচ্ছে। খুশি কিছুটা আম নুন মাখিয়ে মাহিরের মুখে পুরে দেয়। মাহির খাট্টাই ঝালে শেষ মুখ থেকে সব ফেলে দেয় আর বলে।

“আরে তোমরা কাচ্ছো কি করে এতো টক আর ঝাল।

” শহরের ছেলে তুমি কিছুই বুঝোনা এগুলাই কতো মজা তা। (খুশি)

মাহিরের খুশিকে অনেক ভালো লাগে প্রথম দেখাতেই। তাই খুশির কথা রাখতে চুরি পর্যন্ত করলো,, খুশি ও খুব মিশুক একটু তেই মাহিরকে তাদের দলে নিয়ে নিয়েছে। মাহিরের মনে ইচ্ছা জাগে খুশির খুব ভালো ফ্রেন্ড হতে।মাহির বলে।

“এই গ্রামে কথায় থাকো তুমি?আর কোন ক্লাসে পড়ো?

” ক্লাস ৯ এ। তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?আর কার বাড়ি এসেছো?

“আমি এবার এইচ এস সি দিলাম,, আর এই গ্রামের মাতব্বর আছে যে সে আমার দাদু তার বাড়িতেই এসেছি।

মাহিরের মুখে মাতব্বর শুনে আর মাতব্বরের নাতি শুনে খুশি ও তার দলের সবাই ভো দৌড়। মাহির কিছুই বুঝলো না সবাই এভাবে চলে গেলো কেনো? মাহির ও নিরাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে। বাড়িতে ফিরেই দেখে তার দাদু খুব রেগে আছে তাই মাহির জিজ্ঞেস করে।

” দাদু কি হয়েছে?

“আর বলোনা দাদুভাই এই গ্রামে একটা মেয়ে আছে যে আমার গাছের একটা আম ও রাখে না সব চুরি করে খেয়ে নেয়।

” কে দাদু সে?

“মানিকের মেয়ে খুশি আজও আম চুরি করেছে।

তার দাদুর মুখে খুশি নাম শুনে চোখ বেরিয়ে আসে তার।। তার মানে খুশি মাহিরকে তার দাদুর গাছের ই আম চুরি করিয়েছে? তাই তার পরিচয় জেনে এভাবে সব গুলাই চলে গেলো। এখন মাহির বুঝতে পারছে। মাহির মনে মনে বলছে।

” হাইরে শেষ মেষ একটা মেয়ের চক্করে নিজের গাছের আম চুরি করলাম। (মনে মনে)

“কিছু বললে দাদুভাই।

” না না কিছু না তো, আমি আসছি দাদু।

বলেই মাহির কেটে পরে সেখান থেকে।

।।

বর্তমানে।

খুশির সঙ্গে দেখা টা হয়েছিলো এমন করেই। এখনো খুব হাসি পায় মাহিরের এই কথা গুলো মনে পরলে। মাহির খেয়াল করে খুশি রাহুলকে পড়িয়ে চলে যাচ্ছে। মাহির ও বেরিয়ে পরে।

চলবে?

(বানান ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)