নাম না জানা পাখি পর্ব-০৬

0
501

#নাম_না_জানা_পাখি
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পর্ব_৬

বর্তমানে।

খুশির সঙ্গে দেখা টা হয়েছিলো এমন করেই। এখনো খুব হাসি পায় মাহিরের এই কথা গুলো মনে পরলে। মাহির খেয়াল করে খুশি রাহুলকে পড়িয়ে চলে যাচ্ছে। মাহির ও বেরিয়ে পরে।

খুশি যাওয়ার আগে মাহিরের রুমের দিকে তাকায় কিন্তু কাউকে না দেখতে পেয়ে বেরিয়ে পরে ফ্লাট থেকে। খুশির মনে একটাই প্রশ্ন সব সময় ঘুরে, মাহির তাকে না চেনার ভান কেনো করে? মাহিরের ভাব ভংগী দেখে মনে হয়না মাহির সত্যি খুশি কে চেনে না। মাহির যে নাটক করছে সেটা ভালোই বুঝতে পারছে খুশি। খুশি নিজের মতো হেটে যেতে লাগে ঠিক তখন কানে আসে পিপ পিপ আওয়াজ। এটা গাড়ির হর্ন তাই খুশি সাইডে গিয়ে হাটতে লাগে তবুও পিছে তাকায়নি। সাইডে আশার পরও যখন বিরক্তিকর আওয়াজ টা বার বার কানে আসছে তখন খুশি ভাবে লোক টিকে কড়া কিছু কথা শুনাবে এবার তাই রেগে পিছনে তাকায় খুশি। গাড়িতে থাকা লোক টিকে দেখে খুশির ভাবনা আর রাগ দুইটি খাদে নেমে যায়। গাড়িতে থাকা ছেলেটা মাহির খুশি চাইছে না মাহিরের সঙ্গে ঝামেলায় জরাতে। খুশি কিছু না বলেই হনহনিয়ে নিজের স্কুটির কাছে গিয়ে স্কুটিতে চেপে চলে যায়। এক প্রকার মাহিরের থেকে পালিয়ে গেলো খুশি তা মাহির খুব বুঝলো। কিন্তু মাহির তো এটা মটেও চাইনা মাহির চাই খুশি তার পিছনে ঘুরুক। পায়ে ধরে কান্না করুক কিন্তু খুশি এমন কিছুই করছে না। মাহির রাগ নিয়ে নিজের কাজে চলে যায়।

খুশি স্কুটি নিয়ে এখন নিজের কলেজে যাওয়ার যাবে কিন্তু মাঝ রাস্তায় খুশির ফোন বাজতে লাগে। খুশি সাইডে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে তাদের পাসের বাড়ির রুমপা ভাবি ফোন দিয়েছে। খুশির মন কু ডেকে উঠে, রুমপা ভাবি তো এমনিতে ফোন করে না তাহলে কি কিছু হয়েছে আম্মুর কিছু হয়েছে। ভেবেই কলিজা শুকিয়ে আসে খুশির তাড়াতাড়ি খুশি ফোন রিসিভ করে বলে।

“ভাবি কিছু হয়েছে আম্মু ঠিক আছে তো? এই সময় ফোন করলে যে?

ওপাস থেকে রুমপা ভাবি বলে।

” কিছু ঠিক নেই গো খুশি তুমি তাড়াতাড়ি হস্পিটালে চলে এসো তোমার আম্মুর অবস্থা খুব খারাপ। সকালে আমি দেখা করতে গেছিলাম তোমার আম্মুর সঙ্গে গিয়ে দেখি মেঝেতে পরে আছে অচেতন অবস্থায়। আমি আর তোমার ভাইয়া(রুমপার হাজবেন্ড) মিলে হস্পিটালে নিয়ে এসেছি সেই কখন থেকে ফোন করছি তোমাকে তোমার ফোন লাগছিলো না। তুমি তাড়াতাড়ি আসো খুশি।

ভাবির কথা শুনে দুনিয়া থমকে যায় যেনো খুশির, আম্মু ছাড়া আর কে আছে তার এই স্বার্থপর দুনিয়াতে। খুশি ফোন ব্যাগে রেখে হস্পিটালের উদ্দেশ্যে চলে যায় খুব কান্না পাচ্ছে তার। তার আম্মুর কিছু হলে কাকে নিয়ে বাঁচবে খুশি এক এক করে তো সবাই চলে গেছে খুশিকে একা রেখে এখন কি আম্মুও চলে যাবে। না না খুশি আম্মুর কিছু হতে দিবে না প্রান থাকতে সব রকমের চেষ্টা করবে খুশি তার আম্মু কে বাচাতে।

খুশি হস্পিটালে এসে দেখে রুমপা ভাবি বসে আছে ভাইয়া নেই অফিসে চলে গেছে মনে হয়। খুশিকে দেখে রুমপা ভাবি খুশির কাছে এগিয়ে আসে খুশি জিজ্ঞেস করে।

“আম্মু.. আম্মু কেমন আছে কথায় আম্মু?

” এখন একটু শুস্ত তুমি ডক্টরের কাছে যাও তোমার সঙ্গে কথা বলবে ভক্তর।

“ধন্যবাদ ভাবি আম্মুকে এখানে নিয়ে আশার জন্য।

খুশি বলেই ডক্টরের কেবিনে যায়। রুমপা ভাবি বসে থাকে,, খুশির বাড়ির আসে পাসের লোক খুশিকে কটু চোখে দেখলেও রুমপা ভাবি খুব ভালো। খুশিকে একটু বেশি ভালোবাসে ভাবি ও ভাবির পরিবার। এক বছর আগে যখন রুমপার বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায় তখন খুব রক্তক্ষরণ হয় রুমপার। মরার পথে প্রায় চলেই যায় তখন খুশি রক্ত দিয়ে রুমপাকে বাচিয়ে ছিলো। তখন থেকেই খুশিকে ভালোবাসে রুমপা।

খুশি ডক্তরের কাছে গিয়ে বসে ডক্তর খুশিকে দেখে বলে।

” তোমার আব্বু নেই?

“না উনি দুই বছর আগে গত হয়েছেন।

” তোমার আম্মুর অপারেশন করাতে খুব জলদি,, তুমি ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়ে যাও আর দেড়ি করা যাবে না।

খুশির কাছে ৬০ হাজার টাকা নেই খুশি চিন্তাই পরে যায় কি করবে ভেবে তবুও ডক্তরকে ঠিক আছে বলে বেরিয়ে পরে। খুশি যা ইনকাম করে তাতে সংসার আর খুশির পড়াশোনাই চলে যায়। খুশি ভাবে নি এতো জলদি
অপারেশন করা লাগবে খুশি কি করবে কিছুই বুঝতে পারে না। এখন এতো টাকা কথায় পাবে কার কাছে ধার নিবে আর দিবেই বা কে? খুশি এসে রুমপা ভাবির পাসে মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে। খুশির এভাবে এসে বসে পরতে দেখে রুমপা ভাবি বলে।

“খুশি ডক্টর কি বললো?

“অপারেশন করাতে হবে। ভাবি তুমি কি আর কিছুখন এখানে আম্মুর কাছে থাকতে পারবে?

” হ্যাঁ পারবো, তুমি কথাও যাচ্ছো?

“হ্যাঁ ভাবি আমি একটু আসছি টাকার ব্যাবস্থা করতে হবে। আমি আম্মুর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে পরবো।

” আচ্ছা যাও।

খুশি তার আম্মুর সঙ্গে দেখা করে আবার বেরিয়ে পরে। খুশি এখন রেস্টুরেন্টে যাবে সেখান থেকেই যদি টাকার ব্যাবস্থা করতে পারে। অধরাও দিবে কিন্তু বার বার অধরার কাছে হাত পাত্তে খুশির ভালো লাগছে না। খুশি রেস্টুরেন্টে গিয়ে রেস্টুরেন্টের মালিকের কাছে যায়।

“স্যার আমার একটা সাহায্য লাগবে।(খুশি মাথা নিচু করে বলে)

” হ্যাঁ বলো খুশি।

“স্যার আমার আম্মু খুব অসুস্থ, অপারেশন করাতে হবে আমার ৬০ হাজার টাকা লাগবে আপনি যফি দিতেন আমি মাইনে ছাড়া রেস্টুরেন্টে কাজ করবো।

” কিন্তু এতো টাকা তো আমি দিতে পারবো না ৯-১০ হাজার হলে কথা ছিলো কিন্তু এতো টাকা।

“প্লিজ স্যার আমার আম্মুকে বাচাতে পারবো না আপনি সাহায্যে না করলে।

“সরি খুশি আমি এটা পারবো না।

খুশি অনেক কান্নাকাটি করে আকুতি মিনতি করে তবুও শুনে না রেস্টুরেন্টের মালিক। রেস্টুরেন্টের মালিক বিরক্ত হয়ে চলে যায় সেখান থেকে খুশি কান্না করতে লাগে আরও। দূর থেকে মাহির সব কিছুই দেখে, মাহির রেস্টুরেন্টে খেতে এসছিলো হটাৎ খুশিকে হন্তদন্ত হয়ে এই দিকে আস্তে দেখে সেও পিছনে পিছনে আসে। তখন মাহিরের মাথায় একটা আইডিয়া আসে। মাহির খুশির কাছে গিয়ে খুশির হাত ধরে তুলে তারপরে রেস্টুরেন্ট থেকে বাইরে নিয়ে আসে নিজের গাড়ির কাছে। খুশি কান্না করছে তার কোনো ধ্যান নেই কে তাকে কে টেনে নিয়ে আসছে তা।

খুশির ধ্যান আসে সে কথায় তখন খুশি মাহিরের দিকে তাকায় মাহিরকে দেখে খুশি দূরে সরে যায়। কিন্তু বেশি দূরে যেতে পারে না হাত ধরা আছে তাই। খুশি বলে,,

” ছারুন আমাকে এভাবে ধরে আছেন কেনো?

মাহির কিছু বলে না চুপ।

“আজব হচ্ছে কি ছারুন আমাকে।

” আমি তোমার আম্মুর অপারেশনের টাকা দিবো।

মাহিরের কথায় খুশি থেমে যায়,, মাহির খুশিকে আবার বলে।

“আমি তোমার আম্মুর সব খরচ বহন করবো,, তার বদলে আমার একটা শর্ত আছে।

” কি শর্ত?(খুশি গলা খাদে নামিয়ে বলে)

মাহির শয়তানি হেসে বলে,,

“আমার সঙ্গে আসো।

বলেই খুশিকে গাড়িতে নিয়ে কথায় যেনো চলে যায়, খুশি কিছুই বুঝতে পারছে না মাহির তাকে কথায় নিয়ে যাচ্ছে।

অনেকখন আশার পর মাহির খুশিকে একটা বড়ো বাড়িতে নিয়ে আসে, এই বাড়ি খুশি চিনে না। খুশি চুপ করে আছে, মাহির বাড়িটাই খুশি কে বসিয়ে রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। খুশি তাকিয়ে তাকিয়ে পুরো বাড়ি টা ঘুরে ঘুরে দেখে। মাহির ঘন্টা খানিক পরে বাড়িতে আসে, খুশির সামনে বসে মাহির খুশি শুধু দেখছে মাহির কি করছে।

মাহির বলে।

“এই পেপার দুটোই সাইন করে দাও।

বোকা খুশি পেপার না পড়েই সাইন করে দেয়। একবার পড়েও দেখলো না। খুশির এখন টাকার খুব দরকার তাই অন্য কিছু ভাবার কোনো কথায় মাথায় আসে না খুশির।মাহিরকে পালটা প্রশ্ন ও করে না, মাহির ভেবেছিলো সাইন করাতে অনেক কাটখড় পরাতে হবে কিন্তু এমন কিছুই করতে হলো না তাকে। মাহির এতে বেশ খুশিই হলো মনে মনে বললো ” বোকা মেয়ে” আর শয়তানি হাসলো।

চলবে?