নাম না জানা পাখি পর্ব-০৭

0
525

#নাম_না_জানা_পাখি
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পর্ব_৭

আজ ১০ দিন খুশির আম্মুর অপারেশন হয়েছে। বাড়িতেও নিয়ে এসেছে। এখন ভালো আছে আম্মু, আম্মু কে ভালো দেখে খুশি মাহিরের কথা ভুলে গেছে। খুশি দুটো পেপারে সাইন করেছিলো। সেদিন সাইন শেষে মাহির খুশিকে হস্পিটালে নিয়ে যায় সব রকম খরচা দিয়ে চলে যায়, খুশির আম্মুর সঙ্গে দেখা করেনি। সেদিন থেকে আর খুশির সঙ্গেও দেখা করেনি।খুশি ভুলে গেছে মাহিরের কথা। এখন তার আম্মু ভালো আছে আগের মতো ভার্সিটি ,রেস্টুরেন্ট, টিউশনি করতে যেতে পারবে। খুশি রাহুলের আম্মুকে ফোন করে বলে দিয়েছিলো এখন কয়দিন পড়াতে যেতে পারবে না। রাহুলের আম্মু খুশির প্রবলেম টা বুঝে তাই কিছু বলে না। খুশি আগামীকাল থেকে রাহুলকে পড়াতে যাবে খুশির আম্মু এখন বেশ ভালোই আছে। পুরোপুরি ঠিক হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

পরের দিন খুশি ভোরবেলাই উঠে নামায পড়ে। তারপর রান্না বসিয়ে দেয়, সব কিছু ঠিক করে রেখে যাবে আম্মু এখনো কাজ করতে পারে না। রান্না করে আম্মুকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নেয়। তারপরে গোসল করে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বেরিয়ে পরে রাহুলের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

।।

“তোর ম্যাম কি আর পড়াতে আসবে না রাহুল?

রাহুলকে বারান্দায় পেয়ে মাহির জিজ্ঞেস করে।

” আসবে তো, ম্যামের আম্মু অসুস্থ ছিলো তাই আসতে পারেনি আজ আসবে বলেছে এখন এলো বলে।

মাহিরের মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠে। কিছু না বলেই রুমে চলে যায়,, মাহির রুমে যেতেই খুশি রাহুলের কাছে আসে। রাহুল খুশিকে দেখে আনন্দিত হয়ে বলে।

“ম্যাম তুমি চলে এসেছো।

” হুম নাও পড়তে বসো।

খুশি রাহুল কে পড়াতে লাগে মাহির আরাল থেকে খুশিকে দেখে আর বলে।

“অধিকারের কথা বলছিলে না এখন আমার থেকে কারো অধিকার নেই তোমার অপর।

রাহুলের পড়ার শেষের দিকে এখন মাহির বারান্দায় আসে। বারান্দায় এসে মাহির গলা খাখরি দেয়, পুরুষালি কষ্ট শুনে খুশি ঘুরে তাকায় মাহির কে দেখে খুশির মনে পরে যায় ১০ দিন আগের কথা। খুশির মাথায় এখন আসে মাহির তাকে কোন পেপারে সাইন করিয়েছে। পরখনেই ভাবে হয়তো টাকা দিয়েছে সেটার প্রমান পত্র। খুশি এটাও ভাবে মাহির কে ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি ওনার জন্য তার আম্মু বেচে আছে। ধন্যবাদ দেওয়াই যায়, খুশি রাহুলকে পড়তে বলে উঠে মাহিরের দিকে একটু এগিয়ে যায়। খুশি বলে,

“ধন্যবাদ দিলেও আপনি যা করেছেন তার জন্য কম তবুও ধন্যবাদ। আপনি সাহায্য না করলে আমার আম্মু এই দুনিয়াতে হয়তো আর থাকতো না।

” পড়া শেষে আমার ফ্লাটে আসো।

মাহির কথা টা বলেই ভিতরে চলে যায় পিছনে ফিরে একবার তাকিয়ে ও দেখলো না দুটো চোখ তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। খুশি চরমভাবে অবাক মাহির হুট করে তাকে ফ্লাটে কেনো যেতে বললো বুঝতে পারছে না খুশি। খুশি কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না মাহিরের কথায় কি তার ফ্লাটে যাবে? যদি মাহিরের খারাপ উদ্দেশ্যে থাকে,। খুশি ভেবে পাচ্ছে না কি করবে সে।

“ম্যাম এটা শেষ এখন দেখুন।

রাহুলের কথায় খুশির ধ্যান আসে,, রাহুলের কাছে গিয়ে খাতা চেক করতে লাগে। রাহুল কে পড়িয়ে খুশি বেরিয়ে যায় নিচে এসে ভাবতে লাগে যাবে কি যাবে না। মাহির তার এতো বড়ো অপকার করেছে এখন যদি না যায় তো খারাপ দেখাবে। খুশি মনে মনে আয়াতুল কুরসি পরে মাহিরের ফ্লাটের দিকে চলে যায়। অনুমান করে মাহিরের ফ্লাটের সামনে এসে দাঁড়ায় খুশির হাত কাপছে বেল বাজাবে কি বাজাবে না ভাবছে। মনে সাহস নিয়ে কলিং বেলে হাত রাখতে যায় তখনি দরজা খুলে যায়। খুশি চমকে উঠে বেল না বাজাতেই আচমকা এভাবে দরজা খুলায় ভয় পেয়েছে খুশি। বুকে দুই তিন বার থু থু দিয়ে মাহির কে বলে।

” কেনো ডেকেছেন?

“ভিতরে এসো।

খুশি ভিতরে যায় মাহির দরজা বন্ধ করে দেয়, দরজা বন্ধ করতে খুশির কলিজা ছ্যাত করে উঠে মাহির কি করতে চাইছে বুঝতে পারছে না খুশি।

মাহির খুশিকে বসতে বলে খুশি ও গুটিসুটি হয়ে সোফায় বসে।মাহির দুই কাপ কফি নিয়ে আসে একটা খুশির হাতে দেয়। খুশি বিনা বাক্যে কফি হাতে নিয়ে খেতে লাগে। মাহির রুম থেকে দুটো পেপার নিয়ে আসে আসে তার মধ্যে একটা খুশির সামনে রেখে বলে।

” পড়ো!

খুশি পেপার টা হাতে নিয়ে দেখে বিয়ের কাবিন পেপার এটা। খুশি অবাক হয়ে নিচে তাকিয়ে মাহিরের সাইন টা দেখে শুধু।মেয়ের সাইন দেখার খুশির সাহস নেই। খুশির বুকে কেনো যেন চিন চিন করছে,কষ্ট হচ্ছে। এটা কি মাহিরকে হারানোর কষ্ট?তবে কি মাহির সত্যিই হারিয়ে গেলো খুশির থেকে?মাহির বিয়ে করেছে!খুশি নিজের চোখের পানি আড়াল করে মাহির কে বলে।

“আপনি বিয়ে করেছেন? কংগ্রাচুলেশন !

মাহির বাকা হেসে বলে।

” মেয়ের নাম টা পড়ো।

মাহিরের কথায় খুশি কষ্ট নিয়ে মেয়ের সাইন করা টা দেখে সেখানে লেখা “হৃদিতা আহমেদ খুশি” খুশির নাম সাইনের জায়গায় দেখে হাত থেকে কফির মগ পরে যায়। সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায় খুশি। এতোক্কজন অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে বলে কষ্ট পাওয়া খুশি রেগে মাহির কে বলে।

“এসবের মানে কি?

” মানে খুব সোজা তুমি আমাকে বিয়ে করেছো তাও নিজের ইচ্ছায় আমি কোনো রকমের জোর করিনি।

“সেদিন যেই পেপারে সাইন করিয়েছেন এটাই ছিলো?

” হ্যাঁ! (মাহির মুচকি হেসে)

“আপনি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিয়ে করেছেন আমাকে আমি জানতাম ও না এটা কাবিন পেপার ছিলো। এটা বিয়ে না। মানি না আমি এই বিয়ে।

” তুমি মানো আর নাই নামো এতে আমার কিছু যায় আসে না।

মাহির খুশির সামনে আরেকটা পেপার রাখে খুশি সেটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগে। সেখানে লিখা।

“আমি হৃিদিতা আহমেদ খুশি আমার স্বামী নুরে শাহরিয়ার মাহির তার অপর আমার কোনো রকমের অধিকার থাকবে না। উনি কি করছে না করছে তাতে আমি কোনো রকম প্রশ্ন করবো না। এক কথায় মাহির আমার নামেই স্বামী থাকবে। কিন্তু নুরে শাহরিয়ার মাহির আমার অপর সব রকমের অধিকার ফলাতে পারবে। আমার অপর সব থেকে বেশি অধিকার থাকবে তার। তার কথায় আমি চলবো ফিরবো। উনি যা বলবে তাই করবো।
(আরও অনেক কিছু লেখা আছে)

সব লেখার নিচে খুশির সাইন। পড়া শেষে মাহিরের দিকে ছলছল নয়নে তাকায়। খুশি বুঝতে পারছে না এই অতভুত চুক্তির কথা। মাহির খুশির থেকে দুটো পেপার নিয়ে নেয়। খুশি কান্না করে বলে।

” এমন কেনো করলেন? আপনি তো আমাকে দেখতে পারেন না তবুও এমন কেনো করলেন?

“তুমি অধিকারের কথা বলেছিলে না? আমি তোমার অপর সব রকমের অধিকার ফলাতে এমন করেছি এখন তোমার অপরে আমার থেকে অধিকার কারো নেই। এখন তুমি তিলে তিলে কষ্ট পাবে আমি তোমার সাথে কি কি করবো তুমি ভাবতেও পারবে না। (রেগে বলে মাহির)

” শুধু অধিকার ফলাতে এমন করলেন? আমার জীবনটাকে শেষ করলেন?

“তোমার জীবনের শেষ এখনো কিছুই হয়নি এখনো অনেক বাকি অনেক সহ্য করতে হবে তোমাকে মুখ বুঝে।

” এমন টা কেনো করলেন কি ক্ষতি করেছি আপনার আমি?

“কি ক্ষতি?

তাচ্ছিল্য করে বলে মাহির গলা ফাটিয়ে হাসতে লাগে মাহিরের হাসি খুশির অসহ্য লাগছে। অবাক ও হচ্ছে এমন পাগলের মতো হাসছে কেনো মাহির বুঝতে পারছে না খুশি।

চলবে?

(বানান ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পের নতুন মোড় নিলো কেমন হয়েছে বলবেন।)