নিশি পর্ব:৩

0
1636

নিশি
পর্ব:৩
—–অন্না
,
,
,
, নিশির পায়ে ফোসকা পরে গেছে যার কারনে নিশির হাটতে খুবই কষ্ট হচ্ছে ,,, তার পরেও হাটছে,,,, নিশি যেতে যেতেই দেখে নিরব দাড়িয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,,,,,,
,
নিরবকে দেখেই নিশির বুকের মধ্যে ছ্যাত করে উঠে,,,, এটাই হয়,,, মেয়েরা যখন কাউকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসে তখনই তার প্রিয়মানুষকে দেখলে বুকের মধ্যে ঘন্টা বাজতে থাকে,,,, নিয়তির পরিহাসে আজ নিশি তার প্রিয় মানুষটার কাছ থেকে দুরে সরে গেছে,,, ইচ্ছা করলেও নিশি আর নিরবের কাছে ফিরে যেতে পারবে না,,,,
,
নিরব:::: ক’টা বাজে??
,
নিশি:::: ৯:১৫,,,
,
নিরব:::: এতো রাতে তুমি এখনও বাসার বাহিরে? কেনো??
,
নিশি;::: কাজ ছিলো তাই?
,
নিরব:::: কি কাজ?
,
নিশি;::: সব কিছুর এক্সকিউজ তোমাকে দেবার সময় নাই আমার,,,,
,
নিরব:::: হুম তাই তো,,, আমি বা কে বলো তোমার কাছে প্রশ্ন করছি,,, সরি নিশু,,,,,, সরি নিশি,,,,,
,
নিরবের কথা শুনে নিশি নিরবের মুখের দিকে তাকায়,,,,নিশির নাম টা ভালোবেসে নিশু বলেই ডাকতো,,, নিরব বলেছিলো নিশু ছারা কখনই ওকে নিশি বলে ডাকবে না,,,,,
,
নিশি:::: আমার কাজ আছে নিরব বাসায় যেতে হবে,,, তোমার সাথে কথা বলার সময় আমার নাই,,,,
.
নিরব;;:: হুম জানি আমার কোনো মুল্য নাই তোমার কাছে,,,,
,
নিশি;::…..
,
নিরব:::: কাল আমার বিয়ে নিশু,,,
.
নিরবের কথা শুনে নিশি নিরবের দিকে চোখ তুলে তাকায়,,, নিশির অজান্তেই চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গরিয়ে চলেছে,,
নিরব নিশির হাত দুটো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো,,,
,
নিরব::: প্লিজ নিশু একবার বলো,, শুধু একবার তুমি আমাকে চাও,,,, প্লিজ,,, আমার প্রয়োজন তোমাকে,,, তোমাকে ছারা আমার জীবনটা হেল হয়ে যাবে,,, আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো,,, যতটুকু কষ্ট আমি পাচ্ছি তার থেকে বেশি কষ্ট তুমি পাচ্ছো,, কেনো এমন করছো কেনো? আমি কিচ্ছু চাইনা শুধু তোমার পাশে থাকতে চাই,, প্লিজ নিশু আমায় ফিরিয়ে দিও না,,,,
,
নিশি:::: আচ্ছা তুমি কি চাচ্ছো বলোতো,,, আমাকে সুখে থাকতে দিবা না তাই তো,,,,,,,,
,
নিরব:;:; নিশু,,,,,,,,,,,
,
নিশি:::: প্লিজ নিরব,,,,, আমি বাসায় যাবো,,,,,
,
নিরব::::: ঠিক আছে,,,,আর কোনোদিনও ভালোবাসার দাবি নিয়ে তোমার সামনে আসবো না,,,,,
,
নিশি পাশ কাটিয়ে যেতে লাগলো,,,,
,
নিরব:::: নিশু,,,,,,,,,
,
নিশি থমকে দাড়ায় নিরবের কথা শুনে,,,,,
,
নিরব:::: চলোনা তোমায় বাসায় ছেরে দিয়ে আসি,,,,,,
,
নিশি:::: আমি একা যেতে পারবো,,,,
,
নিরব:::: নিশু প্লিজ,,,,,, শেষ বারের মতো,,,, নিরব আর কখনও তোমার সামনে এভাবে আসবে না,,,, কথা দিচ্ছি,,, প্লিজ
,
নীরা আর কিছু বললোনা,,, নিরবের বাইকে উঠে চলে আসলো বাসায়,,,,,
,
নিশি’:::: বাসায় আসবেনা???
,
নিরব:::: সেই অধিকারটা আমার আর নাই নিশু,,,,, ,,,,,,
,
সত্তিই তো যেই নিরব কাল পর্যন্ত নিশির জীবনে সব কিছু ছিলো আজ সেই নিরব এর ওপর কোনো অধিকার রাখেনি,,, কাল অন্য কেউ নিরবের সব দায়িত্ব অধিকার নিয়ে নিবে,, নিরবের জীবনে নিশি নামের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না,,,,,
,
নিশি পা বাড়ালো বাড়ির দিকে,,,,,
,
নিরব ::::: নিশু,,,,
,
নিশি দাড়িয়ে যায়,,,
,
নিরব’:::: একটা কথা রাখবে লাস্টবারের মতো?
,
নিশি:::: বলো,,,,
,
নিরব:::: একটা বার জরিয়ে ধরতে দিবে তোমাকে??
,
নিশি:::: নি,,,,
,
নিরব:::: না ঠিক আছে,,,, তুমি না চাইলে থাক,,,
,
নিশি আর নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারে না দৌড়ে গিয়ে নিরবকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না করতে দেয়,,,,,
নিরব খুব ভালোভাবেই অনুভব করতে পারে নিশির ভালোবাসা,,,, অনেকক্ষন ওরা ওভাবে দাড়িয়ে আছে,,, কেউ কাউকে ছারার নামই করছে না,,,,,,,,
,
নিরব::::: নিশু,,,,,
,
নিশি::::: হুম,,,
,
নিরব::: বড্ড ভালোবাসো আমায় তাই না,,,,
,
নিশি নিরবের কথায় হকচকিয়ে যায়,,, নিরবের থেকে নিজেকে ছারিয়ে নিতে গেলে নিরব আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে,,,,,,
,
নিশি:::: হচ্ছে টা কি,,, ছারো আমায়,,,,
,
নিরব:::: ভুলে যেওনা নিশু আমি তোমাকে ভালোবাসি,, আর যে ভালোবাসে সে তার ভালোবাসাকে পাবার জন্য সব কিছু করতে পারে সব কিছু,,,,,
,
নিশি:::: হ্যা তো সেটাই করো না,,, বিয়ে করে আমার পিছু ছারো,,,,,
,
নিশির কথা শুনে নিরব নিশিকে ছেরে দেয়,,, আর এক মুহুর্ত ও দাড়ায় না,, বাইক নিয়ে চলে যায়,,,, ,,, নিশিও আর দাড়িয়ে থাকে না,,,,, বাসায় চলে আসে,,, সেদিন রাতে আর নিশি কিছু খেতে পারে না,,,,,,, সারারাত ফ্লোরে শুয়ে কাটিয়ে দেয় ,,,,
পরদিন সকালে নিশি আর কোথাও বের হয় না,,,, রুমে ঘাপটি মেরে বসে থাকে,,,,,
,
নিশির মা::: কি রে খাবি না? কাল রাতেও তো খেলি না,,, না খেলে চলবে কি করে মা বল,,,
,
নিশি:::: আমার খেতে ইচ্ছা করছে না মা,,,, তুমি খেয়ে নাও,,,,,
,
নিশার মা::::: এভাবে নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস আর ছেলেটাকেও কষ্ট দিচ্ছিস,,,,
,
নিশি:::: কোনো কষ্ট ও পাবে না,,,আজ বিয়ে করলেই সব কষ্ট দুর হয়ে যাবে,,,,
,
নিশির মা:::: কাজটা তুই মোটেই ঠিক করছিস না,,, এখনও সময় আছে,,,
,
নিশি:::: কোন কাজটা ভুল তুমি বলতে পারো মা? সব ছেলের বাবা,মার ই একটা ইচ্ছা থাকে তার ছেলের বউ বড় কোনো ধনী ঘর থেকে বিলং করবে,,, ছেলের বিয়েতে ভালো ভালো আসবাব,জিনিসপত্র,টাকা পয়সা গিফট্ পাবে,,, কিন্তুু নিরব আমায় বিয়ে করলে কি পাবে বলো মা,,,, আমার কিচ্ছু নাই যা দিয়ে ওর পরিবারকে খুসি রাখবো,,,, আর আমার এখন অনেক দায়িত্ব ,,,, আমি তোমাদেরকে কারো বোঝা হতে দিবো না মা,, আমি চাইনা আমায় কেউ করুনা করুক…. আমি নিজের দায়িত্বে তোমাদের আগলে রাখতে চাই, আমি জানি নিরব আমায় অনেক ভালোবাসে,,,,, কিন্তুু আমি কি করি বলো তো,,, ওকে কেনো আমার এই কষ্টের জীবনে আটকে রাখবো,,, তুমি কি চাও,, তোমার মেয়ের জন্য তারো কষ্ট হোক, ওর ও তো ভালোভাবে বাচার অধিকার আছে,,, আমার জন্য কেনো ও নিজের জিবনের সুখ আটকিয়ে রাখবে,,,,, আমি চাই ও ভালো থাকুক, ওর ভালোটা আমাকে বুঝতে দাও মা,,,,
,
নিশির মা:::: কিন্তুু,,,
.
নিশি:::: কোনো কিন্তুু না,,, আমি একা থাকতে চাই,,, প্লিজ,,,,
,
নিশির মা চলে গেলো আর নিশি চুপ করে বসে নিরবে কান্না করতে থাকে,,,,,
,
,
,
,
দেড় বছর পর,,,,,,,,
,
আপু,,,,,,,,, তোর পার্সেল এসেছে,, নিশি বের হয়ে দেখে নিশির সমান একটা ফুলের বুকি,,,, নিশি তো হা হয়ে যায়,,, বুকিতে একটা কার্ড…. নিশি কার্ড টা নিয়ে পরতে শুরু করে,,
.
Happy Birthday My dear Nishi,,,,,
,
নিশি কার্ড টা নিয়ে বুকিতে রেখে চলে আসে,,,,,
,
নিশির মা:::: কি রে আজ কি এলো,,,,
,
নিশি:::: বুকি,,,,
,
নিশির মা”::: দেড় বছর ধরে কে যে তোকে দিনের পর দিন এ সব পাঠায়,,, আল্লাই জানে,,,,,
,
নিশি:::: জানিনা আমি, আর জানতেও চাই না,,,,
,
নিশির মা:::: আচ্ছা নিরব,,,,
,
নিশি:::: মা,,,,
,
নিশি রুমে চলে গেলো,,, কারন সেদিনের পর থেকে নিরব কখনও নিশির সাথে যোগাযোগ করে নি,,,, হয়তো নিরব সুখে আছে ওর বউ কে নিয়ে,,, নিশি নামের কেউ ওর জিবনে ছিলো নিরবের হয়তো মনেই নাই,,,,
,
নিশি একটা ছোট্ট চাকরি পেয়ে যায়,,, খুব ভালোভাবে কাজ করায় দেড় বছরে খুব উন্নতি করেছে,,,, কিছুদিন আগে প্রমোশোন পেয়েছে,,, অফিস থেকে একটা বাড়ি পেয়েছে থাকার জন্য,,,,
,
সব কিছু ভালোভাবেই চালায় নিশি,,, সারাদিন সবার সাথে হই হুল্লোর করে কাটিয়ে দিলেও রাতে বালিশের মাঝে বুক ফাটা কান্না দিয়ে নিজের কষ্ট বের করে,,,, নিশি নিজেও জানে না নিরব কেমন আছে,কোথায় আছে,,,, নিরব এতোটাই কষ্ট পেয়েছে যে নিশির সাথে কোনো যোগাযোগই রাখেনি,,, নিশি অনেকবার নাম্বার তুলেও ফোন করতে পারে নি,,, তিল তিল করে শেষ হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা,,, নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে,,,,,
,
নিশির মা:::: কি রে কোথায় যাচ্ছিস?
,
নিশি:::: অফিসে,,,,
,
নিশির মা:::: আজকের দিনে অফিসে না গেলে হয় না???
,
নিশি:::: আমার জীবনে সব দিন একই সমান,,,, আমার জিবনে স্পেসাল বলতে সব কিছু চলে গেছে,,,,,
,
নিশির মা:::: এভাবে আর কতদিন বল,,, মেয়ে মানুষ হয়ে জন্মেছিস,,, বিয়ে তো করতেই হবে ,,,, এখন তো সব ঠিক হয়ে গেছে,, সব ভুলে গিয়ে নতুন করে সব ঠিক কর মা,,,,,
,
নিশি:::: নিরবকে ভোলা আমার পক্ষে সম্ভব না মা,,,, প্লিজ এ নিয়ে আর কোনো কথা হবে না,,,
,
নিশি বেরিয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্যে ,,,, অফিসে ঢুকতেই কারো সাথে ধাক্কা খায়,,,,,, নিশি পরে যায় ফ্লোরে ,,,,আর সামনে থেকে কেউ কর্কশ কন্ঠে চাল্লাতে থাকে,,,,,
,
>>> এটা অফিসে আসার টাইম,টাইমিং বলে কিছু আছে নাকি? ইউজলেস কোথাকার,,,
,
নিশি মুখ তুলে তাকিয়ে সামনের মানুষটাকে দেখে টাসকি খেয়ে যায় ,,,,,,,,,,,
,
be continue ♥♥♥