নীল কণ্ঠ পর্ব-১০

0
311

#নীল_কণ্ঠ💜
#পর্ব-১০
#সাদিয়া

রাফাতের থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে কণ্ঠ শৈবালকে ইন’জেক’শন আনতে বললো। শৈবাল রাফাতের শরীরে ইনজে’কশন পুশ করতে গেলে রাফাত মুখ খুলে,
–এটা কিসের ইনজেক’শান?

–এটা দিলে তুই প্যারা’লা’ইজড হয়ে যাবি।
রাফাত ভীত নজরে তাকালো কণ্ঠের দিকে।অস্পষ্ট সুরে বললো,
–এমনটা করো না। করো না এমনটা। আমার কিছু হলে আমার বোন আর বোনের বাচ্চাকে কে দেখবে? ওদের যে আমি ছাড়া কেউ নেই।
বলে রাফাত আবারো কণ্ঠের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালো। কণ্ঠ রাফাতের করুণ চাহনি দেখে আলতো হেঁসে বললো,
–চিন্তা করিস না এটায় কম ডোজ। জাস্ট সাতদিন প্যা’রালা’ইজড হয়ে থাকবি। অষ্টম দিন থেকে নরমাল হয়ে যাবি। আমি জানি তোর বোন আর বোনের ছেলের তুই ছাড়া আর কেউ নেই। আমি এতটাও খারাপ নই যে একটা পিতৃহীন ছেলের মাথার উপর থেকে তার ভারসার ছায়া কেড়ে নিবো। আর তুই সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত ওরা আমার দায়িত্ব। তুই চিন্তা করিস না। ওরা জানবে তুই এতদিন কাজের জন্য ঢাকার বাইরে আছিস। আর তোর চিকিৎসার সকল খরচ আমার। তুই সাত দিন রেস্ট কর।
কণ্ঠ শৈবালকে ইশারা করতেই সে ইনজে’কশন পুশ করে দিলো। রাফাত ভাবছে এটাই তার কর্মফল। কিচ্ছু করার নেই। কণ্ঠ তাও তাকে কম শাস্তি দিয়েছে। তার তো আরো বড় শাস্তি পাওনা ছিলো। সত্যিটা না জেনে একজন নির্দোষ মানুষের বিরুদ্ধে কত বড় ষ’ড়য’ন্ত্র করেছিলো। নীরার থেকেও ক্ষমা চাইতে হবে। মেয়েটা তো তাকে ভালোবেসেছিলো। সে কি করলো? মেয়েটির ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে তাকে নিজের ঘৃণ্য কাজে ব্যবহার করলো। রাফাত নিজেকে ধিক্কার জানালো। নিজের উপর রাগ হতে শুরু করলো তার।

রাফাতকে হাসপাতালে পাঠিয়ে কণ্ঠ গেলো নীরার কাছে। রাফাত এতক্ষণ যা যা বলেছে নীরা তার সবটাই শুনেছে। রাফাত তাকে ঠকিয়েছে ভাবতেই কান্নারা যেন দলা পাকিয়ে আসছে। সে এটা মানতে পারছে না রাফাত তাকে ভালোবাসতো না। বুকে অসহ্য ব্যাথা অনুভুত হচ্ছে তার।
কণ্ঠ এসে নীরার সামনে বসলো।
–কি নীরা ম্যাডাম! কেমন আছেন? প্রেমিক তো গেলো। এবার কি করবেন কিছু ভেবেছেন? বাড়িতেও তো মনে হয় না জায়গা হবে। যে কান্ড ঘটিয়েছেন। তো এখান কোথায় যাবেন বলুন? ইউএস? যাবেন?
শেষের কথাটা বলে বাঁকা হাসলো কণ্ঠ।

নীরা কণ্ঠের কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে বললো,
–তুমি কি নীলকে ভালোবাসো কণ্ঠ আপু?

–যদি ভালোই না বাসতাম তাহলে এতো কিছু করলাম কেন? ঠ্যাকা পড়ছিলো ওই ব’লদের জন্য এত কিছু করতে?

–নীল কি তোমাকে ভালোবাসে?
নীরার প্রশ্নের উত্তর নেই কণ্ঠের কাছে।
–একটা সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস। তুমি নীলের সাথে সম্পর্কটা তৈরি করেছো মিথ্যার উপর ভিত্তি করে। তোমার কি মনে হয় তোমাদের সম্পর্কটা টিকবে? আমার কিন্তু তা মনে হয় না। নীল তোমাকে বিশ্বাস করে ঠকেছে এটা যদি নীল জানে তাহলে তোমার কি হবে? ও মেনে নেবে তোমাকে? নাকি ছুড়ে ফেলে দিবে?

–কথায় আছে না ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। তোমার হয়েছে এই অবস্থা। নিজের কথা চিন্তা করো আগে। আর একটা কথা আমি কোনো ফেলনা নেই যে যখন খুশি তখন আমায় ছুড়ে ফেলে দিবে। আমি নিজের হক আদায় করতে খুব ভালো ভাবেই জানি। আমার চিন্তা না করে তুমি বরং তোমার নিজের চিন্তা কর।

–আমি তো শুধু তোমাকে তোমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটু বললাম। বাকিটা তুমি ভালো বুঝো।

কণ্ঠ নীরাকে আর কিছু না বলে শৈবালকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–শৈবাল নীরার পাসপোর্ট আর ভিসার ব্যবস্থা করো। আর যত তারাতাড়ি পরো এই ঝামেলাকে বিদায় করো। দশ বছরের আগে যেন বাংলাদেশে পা রাখতে না পারে।

আপন মনে ড্রাইভ করছে কণ্ঠ। আজ থেকে সকল ঝামেলার অবসান হলো। এখন নীলের জীবনে আর কোনো বিপদ নেই। কিন্তু কতক্ষণ নেই তা কণ্ঠের জানা নেই। কারণ বিপদ না বাড়িয়ে আনলে ওই ছেলের আবার রাতে ভালো ঘুম হয় না। ভেবে-ই কণ্ঠ মুচকি হাসলো। গাড়ির রেডিওতে একটা শো চলছে৷ শো-টা কণ্ঠের ভালোই লাগে। এতে আজকের বিষয় ❝বিশ্বাস❞।
–সম্পর্কে ভালোবাসা থাকাটা যত জরুরি বিশ্বাস থাকা ততটাই জরুরি। বিশ্বাস যেকোনো সম্পর্কের ভিত্তি। বিশ্বাস না থাকলে সম্পর্ক টিকে না। যে সম্পর্ক মিথ্যা দিয়ে শুরু হয় সে সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ থাকে না। প্রত্যেক সম্পর্কে সত্য থাকতে হয়।
শো-তে আরো অনেক কথা বলা হলো। কণ্ঠ শোয়ের প্রত্যেকটি কথা খুব মন দিয়ে শুনলো। আর নীরার বলা কথা গুলোও ভাবলো।
–আচ্ছা নীল যদি জানতে পারে বিয়ের দিন নীরাকে আমি কিড’ন্যাপ করিয়েছিলাম তাহলে ও কি করবে? আমাকে ভুল বুঝবে? ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে রাখবে?
কণ্ঠের ভেতর কেমন অস্থিরতা কাজ করছে। সে কোনো রকম বাড়ি ফিরলো। রুমে গিয়ে দেখলো নীল এখনো ঘুমাচ্ছে। কণ্ঠ একবার নীলের দিকে তাকিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে নীলের পাশে শুয়ে পড়লো। নীল আর তার সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি তা চিন্তা করতে করতে সে ঘুমিয়ে গেলো।
কণ্ঠের ঘুম ভাঙ্গলো আজানের শব্দে। ঘুম ভে’ঙ্গে পাশে নীলকে দেখতে পেলো না সে। কণ্ঠ তেমন একটা মাথা না ঘামিয়ে ওজু করে এসে নামাজ পড়ে নিলো।

বাহিরে মৃদু অন্ধকার বিরাজমান। নীল বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে গান গাইছে। কণ্ঠ রুমে দাঁড়িয়ে নীলের গান শুনছে।

এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাব, কবে পাব
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ

আজ আমি ক্ষণে ক্ষণে
কী যে ভাবি আনমনে
তুমি আসবে, ওগো হাসবে
কবে হবে সে মিলন
কাছে যাব, কবে পাব
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ

যুথিবনে ঐ হাওয়া করে শুধু আসা যাওয়া..
যুথিবনে ঐ হাওয়া করে শুধু আসা যাওয়া
হায় ,হায়রে দিন যায়রে,ঘরে আঁধারে ভুবন
কাছে যাব কবে পাব ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।

কণ্ঠ বরাবরের মতো এবারো নীলের গানে মুগ্ধ হতো। আগে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে নীল গান গাইতো আর কণ্ঠ গিটার বাজাতো।

গান শেষ করে নীল অন্ধকারে ছেয়ে থাকা আকাশের দিকে তাকালো। কতো বিশাল এই আকাশ। বিশাল আকাশ দেখতে নীলেরও বিশাল আনন্দ লাগে।
নীলের গান শেষ হলে কণ্ঠ গুটিগুটি পায়ে নীলের দিকে এগিয়ে গেলো। মৃদু স্বরে তাকে ডাকলো,
–নীল?

আকাশের দিকে মুখ করেই নীল উত্তর দিলো,
–হুম বল।

কণ্ঠ ভাবলো নীলের হয়তো মন খারাপ। নীলিমা বাসায় না থাকলে নীলের মন খারাপ থাকে তা কণ্ঠ জানে।

–নীল, আমি তোকে কিছু বলতে চাই।

এবার নীল কণ্ঠের দিকে তাকিয়ে গদগদ হয়ে বললো,
–তুই কি আমাকে প্রপোজ করবি কণ্ঠ? ওয়াও দেট’স গ্রেট। তুই জানিস আমার অনেক দিনের শখ ছিলো আমার বউ আমাকে প্রপোজ করবে। আমার এতদিনের শখ আজকে পুরন হতে যাচ্ছে। শোন সুন্দর করে হাঁটু গেড়ে সুন্দরররর করে বসে প্রোপোজ করবি। তা না হলে ওই আসল ফিলটা আসবে না। বুঝেছিস? নে শুরু কর।
কণ্ঠ দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে। এই ছেলে এসব চিন্তা করে? কণ্ঠ তাকে প্রোপোজ করবে? লাইক সিরিয়াসলি ইয়ার?
–একিরে কণ্ঠ তোর হাত খালি কেন? খালি হাতে প্রপোজ করবি নাকি? এটা কেমন কথা কণ্ঠ? এত বড় একটা কোম্পানির এমডি হয়ে তুই নিজের বরকে খালি হাতে প্রপোজ করবি? আমি তো তোর নিজের বর-ই নাকি? অন্যের তো আর না। খালি হাতে প্রপোজ করলে কেমন জানি বিধবা মার্কা লাগে। আর মানুষ জানলে আমার মান সম্মান থাকবে? আচ্ছা ঠিক আছে এক কাজ কর তুই আমার গাছের একটা ফুল দিয়ে আপাতত কাজ চালিয়ে নে।
কণ্ঠ আর সহ্য করতে না পেরে চুপচাপ রুমে চলে আসলো।
–কিরে কই যাস? ওই কণ্ঠ প্রপোজ করবি না? কিরে?
কণ্ঠ নীলকে পাত্তা না দিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।
নীল একবার কণ্ঠের দিকে তাকিয়ে বললো,
–সাচ অ্যা আনরোমান্টিক মহিলা।

#চলবে….ইনশাআল্লাহ