নীল কণ্ঠ পর্ব-১১

0
337

#নীল_কণ্ঠ💜
#পর্ব-১১
#সাদিয়া

নীল কণ্ঠের পিছন পিছন রুমে গেলো। ততক্ষণে কণ্ঠ ব্ল্যাংকেট চাপা দিয়ে শুয়ে পড়েছে। নীল কণ্ঠের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। এত গরমে কেউ ব্ল্যাংকেট চাপা দেয়? তাও আবার এসি অফ করে? আচমকাই নীলের মাথায় একটা শয়তা’নি বুদ্ধি এলো। নীল একটা বাঁকা হাসি দিয়ে কাবার্ড থেকে আরো দুটো ব্ল্যাংকেট এলে কণ্ঠের গায়ে সুন্দর করে চাপা দিয়ে দিলো।
কিয়ৎক্ষণ পর কণ্ঠ সকল ব্ল্যাংকেট সরিয়ে উঠে বসলো। সে ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। সেই সাথে সে ঘেমে একাকার।
নীল একটা মুখ ভেংচি দিয়ে নিচে চলে গেলো। আ’কাম করে তার মনটা এখন কফি চাইছে।
নীল নিচে গিয়ে দেখলো ওর বাবা মা চলে এসেছে। মাকে দেখে নীল দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
–আমি তোমাকে খুব মিস করেছি আম্মু।

নীলিমা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
–এ আর নতুন কি? তুই তো সবসময়ই আমাকে মিস করিস। বিয়ে দিলাম কই নিজের বউকে মিস করবে৷ তা না মাকে মিস করে। আচ্ছা কণ্ঠ কোথায়?

–ও রুমে আছে। দাঁড়াও ডাকছি।

–না থাক। ডাকার দরকার নেই। ফ্রেশ হয়ে তারপর নাহয় দেখা করবো।

–ঠিক আছে যাও।

রাতে পুরো পরিবার এক সাথে খাবার খেলো, আড্ডা দিলো। নিতু তো নিজের কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে।

পরদিন সকাল বেলা….
সবাই নাস্তার টেবিলে বসে ধীরে সুস্থে নাস্তা করছে। শুধু নীল একটু ব্যতিক্রম। সে তাড়াতাড়ি করে কিছু খেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বলে বেরিয়ে আসলো। পার্কিংয়ে এসে নীল কণ্ঠের গাড়ির সামনে দাঁড়িলো। মিষ্টি হেঁসে কণ্ঠের গাড়ীর সাথে কিছুক্ষণ একান্তে সময় কাটালো। অতঃপর শয়তানি হাসি দিয়ে নিজের গাড়ীতে আরাম করে বসলো। কিয়ৎক্ষণ পর দূর থেকে কণ্ঠকে আসতে দেখে নিজের ফোনটা কানে ধরে কারো সাথে কথা বলার এক্টিং করতে থাকলো।
কণ্ঠ পার্কিংয়ে এসে নীলকে গাড়ীতে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। এতো অনেক আগেই বেরিয়েছিলো। এখনো যায়নি কেন? কণ্ঠ নীলকে বিশেষ পাত্তা না দিয়ে নিজের গাড়িতে বসলো। প্রথমে গাড়ি স্টার্ট হলো কিন্তু চললো না। দ্বিতীয় বারও একই অবস্থা। কণ্ঠ কি হয়েছে গাড়ি থেকে নেমে দেখলো টায়ারে হাওয়া নেই। যা বাবা এটা কখন হলো। কাল রাতেও তো ঠিল ছিলো।
কণ্ঠকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীল গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো। এসে জিজ্ঞেস করলো,
–কি হয়েছে? দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

কণ্ঠ বিরক্ত হয়ে বললো,
–টায়ারে হাওয়া নেই।

–অহ্। আচ্ছা চল আমি তোকে তোর অফিসে নামিয়ে দিয়ে আসছি।

–লাগবে না। আমি ক্যাব বুক করে নিবো।

–হ্যাঁ সে তুই করতেই পারিস। কিন্তু ভাব কখন ক্যাব বুক করবি? কখন ক্যাব আসবে? আর কখন তুই অফিস যাবি। আর তোর তো আজকে ইম্পর্ট্যান্ট মিটিংও আছে। দেরি হয়ে গেলে কিন্তু ডিল ফাইনাল হবে না।

কণ্ঠ কিয়ৎক্ষণ নীলের দিকে তাকিয়ে থেকে তার সাথে যেতে রাজি হলো।
–আচ্ছা চল।

–হুম চল।
কণ্ঠ বড় বড় কদমে গাড়িতে উঠে বসলো। কণ্ঠ গাড়িতে গিয়ে বসতেই নীল বাঁকা হাসি দিলো।
–ত্যাড়া বউকে সোজা করতে একটু শয়তানী বুদ্ধি তো খাটাতেই হয়।
নীল স্টাইল মে’রে সানগ্লাস চোখে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। কণ্ঠ বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর নীল বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে কণ্ঠের দিকে। এক পর্যায়ে নীল কণ্ঠের বাহুতে চিমটি কা’টলো।

–কি সমস্যা তোর?

–চিমটি দিলি কেন?

–আমার সমস্যায় পরে আসা যাবে। আগে বল তোর সমস্যা কোথায়? বাইরে কি দেখিস তুই?

–প্রকৃতি দেখি।

–সিরিয়াসলি কণ্ঠ? তুই ঢাকা শহরে প্রকৃতি দেখিস? দেখ বাহিরে তাকিয়ে জ্যাম ছাড়া কিছু দেখা যায় না।

–এটাই ঢাকার সৌন্দর্য।

–তুই আসলেই একটা বেরসিক মানুষ। তোর পাশে এত সুন্দর এত ড্যাশিং স্মার্ট কিউট একটা ছেলে বসে আছে। কোথায় তুই তাকে দেখবি। অপলক ভাবে দেখবি। দেখতে দেখতে নিজের চোখের জ্যোতি কমিয়ে ফেলবি। তাও তোর আমাকে দেখা শেষ হবে না। আর আমি যখন তোর দিকে তাকাবো তুই লাজুক হেসে মাথা নত করবি। তাহলে না বিষয়টা জমবে।
কণ্ঠের কোনো উত্তর না পেয়ে নীল কণ্ঠের দিকে তাকালো। আর যা দেখলো তাতে ওর মেজাজ তুঙ্গে।

কণ্ঠ কানে হেডফোন লাগিয়ে আরাম করে গান শুনছে। নীল টান দিয়ে হেডফোন নিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিলো।
কণ্ঠ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–কি করলি এটা?

–ফেলে দিলাম।

–কেন দিলি?

–কারণ এটাকে এই মূহুর্তে নিজের সতিন বলে মনে হচ্ছিল।

–হুয়াট? মানে কি?

–মানে হলো তুই আমার দিকে তা তাকিয়ে গান শুনছিলি।

–তোর কি রূপ বেড়েছে নাকি পাখনা গজিয়েছে যে আমি তোকে দেখবো। দুই বছর আগে যেমন ছিলিস এখনও একই রকম আছিস।

–কে বলেছে এক রকম আছি? দুই বছর আগে আমি পিউর সিঙ্গেল ছিলাম। আর এখন আমি পিউর মিঙ্গেল। আমার একটা দস্যি বউ আছে।

–তোর কি মনে হচ্ছে না তুই ইদানীং উদ্ভট আচরণ করছিস?

–পাপী নারী। স্বামীকে তুই বলার অপরাধে তোর গর্দা’ন নেওয়া উচিত। অস’ভ্য মহিলা একটা। স্বামীকে কেউ তুই করে বলে? সম্মান দিবি, বুঝলি?

–তুই কোন দেশের প্রেসিডেন্ট তোকে সম্মান দেবো? আর শোন বেস্টফ্রেন্ড জাতির জন্ম সম্মান পেতে নয় সম্মান হারাতে হয়।

–নিজের বেস্টফ্রেন্ডকে না হয় সম্মান না দিলি তাই বলে কি নিজের স্বামীকে সম্মান দিবি না? আর কালকে তুই আমাকে প্রপোজ করতে এসে প্রপোজ করলি না কেন?

–কে বলছে আমি তোরে প্রপোজ করতে গেছিলাম? আমি তো একটা সিরিয়াস কথা বলতে গিয়েছিলাম।

–শোন দুনিয়াতে প্রেমে পড়ার আর প্রেমকে ইজহার করার চেয়ে দ্বিতীয় কোনো কিছু সিরিয়াস হতে পারে না। প্রেম বিষয়টাই সিরিয়াস। হেলাফেলা করলেই সর্ব-নাশ। মা-রা-ত্মক সর্ব-নাশ। এমন একটা সিরিয়াস ব্যপার কে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা ঠিক নয়।

–হয়েছে নিজের ভাষণ বন্ধ করে গাড়ি থাকা। আমার অফিস এসে গিয়েছে।

–এত তারাতাড়ি কিভাবে আসলো?

–ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আপনি বিগত চল্লিশ মিনিট যাবত ফালতু বকবক করে চলেছেন।

–আমার কথা তোর কাছে ফালতু মনে হয়?

–অবশ্যই মনে হয়। আর নীল? তুই তো আগে এমন ছিলিস না। বো’ম ফাটা’লেও তো পেট থেকে কথা বের করানো যেতো না। আর এখন? এখন হাজার বলেও চুপ করানো যায় না। কি হয়েছে কি তোর?

–প্রেমে ধরেছে রে পাগলি। প্রেমে ধরেছে। তু নেহি সামঝেগা।

কণ্ঠ কোনো কথা না বলে চুপচাপ বেরিয়ে আসলো। এই ছেলের কাছে আর দুই মিনিট থাকলে ফর শিউর সে পাগল হয়ে পাবনা চলে যাবে।

দুপুর বেলা….
কণ্ঠ নিজের কেবিনে বসে কাজ করছে। এমন সময় হুড়মুড় করে কেবিনে প্রবেশ করে নীল। নীলকে দেখে কণ্ঠ অবাক হলো। কারণ সে এই মূহুর্তে এখানে নীলকে আশা করে নি।

–তুই এই সময়ে? এখানে?

–কেন তোর বাপের অফিসে কি আমি আসতে পারি না?

–সোজা উত্তর দেওয়া যায় না?

–যায়। কিন্তু সেটা ডিপেন্ড করে উত্তর কোন টাইপের মানুষকে দেওয়া হচ্ছে তার উপর। বাদ দে ওসব কথা। লাঞ্চ করেছিস?

–নাহ্।

–গ্রেট। আমিও করি নি। চল আজকে এক সাথে লাঞ্চ করবো।

–ঠিক আছে তুই বস। আমি অর্ডার করছি খাবার।

–তোকে কি আমি নিরামিষ শখে বলি? তুই আসলেই একটা অকর্মন্য মেয়ে। বেশি বকবক না করে চল এখন আমার সাথে।

–কোথায় যাবো?

–তোকে বললাম না চুপ থাকতে।
বলেই কণ্ঠকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।

–আরে এভাবে টানছিস কেন?

–তোর কি ইচ্ছে তোকে আমি কোলে করে নিয়ে যাবো? যদি এমন ভেবে থাকিস তবে এসব ভাবনা মাথা থেকে ছেড়ে ফেল। তোর মতো আলুর গোদামকে আমি কোলে দিতে পারবো না। সরি।
আবারো সে কণ্ঠকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। অফিসের সকল স্টাফ ওদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। কারণ তারা কণ্ঠ এবং তার রাগ সম্পর্কে অবগত।

নীল কণ্ঠকে কণ্ঠের অফিসের সামনে থাকা একটা রেস্তোরাঁয় নিয়ে এলো।
–এখানে আসবি বলেই পরতি। অযথা টেনে আনার কোনো মানেই ছিলো না।

–আরে ধুর গা’ধী। বললে তো তুই সুন্দর করে আসতি। তখন কি তোকে আর টানতে পারতাম।

কন্ঠ কিছু বললো না। আজকাল নীলের কথার পৃষ্ঠে বলার মতো সে কোনো শব্দ খুঁজে পায় না। আসলে নীলের এমন ব্যবহারে সে এত অবাক হয় যে নিজের অবাকতা কাটিয়ে উঠায় আগেই নীল অন্য কিছু বলে আর কণ্ঠ আবারো তলিয়ে যায় অবাকতার অতল গহ্বরে।

#চলবে…..ইনশাআল্লাহ