নীল কণ্ঠ পর্ব-০৯

0
294

#নীল_কণ্ঠ💜
#পর্ব-০৯ (রহস্যের অবসান😒)
#সাদিয়া

–দেখ রাফাত এটা আমিও জানি তুইও জানিস শুধু টাকার জন্য তুই এমনটা করিস নি। আর নীরা? ওকেও তুই ব্যবহার করেছিস। কেন এসব করেছিস ফটাফট বলে দে। যত তাড়াতাড়ি তুই সত্যিটা বলবি ততই মঙ্গল তোর জন্য।

রাফাত মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। রাফাতকে চুপ থাকতে দেখে শৈবাল আবারো সুইচ অন করলো আর সাথে সাথে রাফাতের শরীরে কারেন্টের জোরকা ঝাটকা লাগলো। কণ্ঠ ভ্রু কুঁচকে শৈবালের দিকে তাকিয়ে বললো,
–তোমাকে বলেছিলাম?

–সরি ম্যাম। আসলে এই হা’রামি মুখ খুলছিলো না তাই।

–তাই বলে টুয়েন্টি ফোর সেভেন আওয়ার একই থ্যারাপি এপ্লাই করবা?

–সরি ম্যাম।

–ইট’স ওকে শৈবাল। আমি কিছু মনে করি নি। তবে পরের বার থেকে খেয়াল রাখবা।
এবার রাফাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
— তো মিষ্টার রাফাত শিকদার আপনি মুখ খুলবেন না তাই তো?

রাফাত নিশ্চুপ।

–ওয়েল। তবে আমি অন্য পন্থা অবলম্বন করছি। আচ্ছা রাফাত তোর বড় একটা বিধবা বোন আছে তাই না? যার একটা ছোট্ট সাত বছর বয়সী ছেলে আছে। যে তোর বোনের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। তো আমরা যদি তোর বোনের সেই একমাত্র সম্বলকে গু’ম করে দেই বা মে’রে ফেলি তবে তোর কেমন লাগবে?
রাফাতের চোখে এবার স্পষ্ট ভয় দেখতে পেলো কণ্ঠ। রাফাতের ভীত চাহনি দেখে বাঁকা হাসলো কণ্ঠ। তার আর কষ্ট করা লাগবে না। এবার রাফাত নিজেই গড়গড় করে সব বলে দেবে। একটা মানুষকে শারীরিকভাবে আঘাত করে যতটা দূর্বল করা যায় মানসিক ভাবে আঘাত করে আর চাইতে কয়েকগুন বেশি দূর্বল করা যায়। কণ্ঠ একবার বাঁকা চোখে রাফাতের দিকে তাকিয়ে কাউকে একটা ফোন করলো।

–হ্যালো শাফিন শোনো একটা বাচ্চাকে..

–প্রতিশোধ নিতে সব করেছি। নীলের থেকে প্রতিশোধ।
রাফাত এক প্রকার চেচিয়ে কথাটা বললো। কণ্ঠ কান আবারো বাঁকা হেঁসে কান থেকে ফোনটা নমালো।

–নীল তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছিলো যে তুই ওর থেকে প্রতিশোধ নিতে এসেছিস?

–ও একটা খু’নি। খু’ন করেছে ও আমার বোনকে।

কণ্ঠ প্রচন্ড অবাক হলো। কি বলছে এই ছেলে? মাথা ঠিক আছে এই ছেলের?
–নীল? আর খু’ন? মাথা ঠিক আছে তোর?

–মাথা আমার ঠিকই আছে। তোমার নীল একটা খু’নি। ওর জন্য শুধু মাত্র ওর জন্য আজ আমার ছোট বোন এই দুনিয়াতে নেই। কি দোষ করেছিলো আমার বোন? শুধু ওকে ভালোবেসেছিল এটাই কি ওর দোষ ছিলো? কেন? ভালোবাসা কি কোনো অপরাধ? কেন নীলকে ভালোবাসার জন্য আমার বোনকে মর’তে হলো?

কণ্ঠের মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। রাফাতের কোনো কথাই তার বোধগম্য হচ্ছে না।
–দেখ ভাই সহজ ভাষায় সবটা বল যাতে আমি বুঝতে পারি।

–তখন আমার বোন সবে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলো। কলেজের নবীণবরণ অনুষ্ঠানে রাফিয়া নীলকে প্রথম দেখেছিলো। আর প্রথম দেখাতেই ও নীলকে ভালোবেসে ফেলে। একদিন সাহস করে ও নীলকে নিজের মনের কথাটা বলেও ছিলো। কিন্তু নীল কি করলো? ভরা ক্যাম্পাসে ওকে অপমান করলো। রাফিয়া সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে বাসায় এসে আত্ম’হত্যা করে। আমার বোনটার কি দোষ ছিলো বলো তো? কোনো অপরাধ করেছিলো কি? ভালোবাসা তো কোনো অপরাধ নয়। তাহলে আমার বোনের ফুলের মতন জীবনটা কেন অকালে ঝ’ড়ে গেলো?

–নীলকে একটা মেয়ে প্রপোজ করেছিলো? কই আমি তো জানি না। এটা কিভাবে সম্ভব?

–সম্ভব কারণ তখন তুমি দেশে ছিলে না। তুমি তখন জার্মানিতে ছিলে তোমার খালার কাছে।

কণ্ঠের এবার মনে পড়লো, তখন তারা অনার্স তৃতীয় বর্ষে উঠলো সবে। তার খালা অনেক অসুস্থ ছিলো বলে তারা জার্মান গিয়েছিলো খালার কাছে। জার্মান যাওয়ার পর নীলের ফোন প্রায় পাঁচ দিনের মতো বন্ধ ছিলো। কারণ জানতে চাইলে নীল বিভিন্ন ভাবে বিষয়টা এড়িয়ে যেতো।

–নীলকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। নীল কোনো মেয়েকে অপমান তো দূরে থাক আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে ও কথা বলে নি। তুই কিভাবে বলছিস নীল তোর বোনকে ভরা ক্যাম্পাসে অপমান করেছে? তুই বলবি আর আমি বিশ্বাস করে নেবো?

–বিশ্বাস করা বা না করা সম্পূর্ণ তোমার ব্যপার। কিন্তু সত্যি এটাই। আমার বোনের ডায়েরিতে স্পষ্ট লেখা আছে ও নীলকে প্রপোজ করেছিলো। আর নীল ওকে অপমান করে। কাউকে ভালোবাসার অপ’রাধে নিজের জীবনটা দিয়ে দিলো আমার বোন।
শেষ কথাটা তাচ্ছিল্য করেই বললো রাফাত। কণ্ঠ রাফাতের কথার কোনো প্রতিত্তোর না করে উঠে এক পাশে গিয়ে কাউকে ফোন করলো। কিয়ৎক্ষণ পর এসে আবারো রাফাতের সামনে বসলো।

–মানলাম তোর বোন নীলকে ভালোবাসতো। নীলকে প্রপোজ করেছিলো আর নীলও ওকে অপমান করেছিলো। আমাকে এখন একটা কথা বল তোর বোন নীলকে কেমন ভালোবাসতো যে ভালোবাসার মানুষের দুয়েকটা শক্ত কথা হজম করতে পারলো না? তোর বোন তো নিজেকেই ভালোবাসতে জানে না সে কি করে অন্যকে ভালোবাসবে? নীল ওকে প্রত্যাখান করেছে বলে কি টাটা বাই বাই ওন দ্যা স্কাই হয়ে যেতে হবে? এতে কি তোর বোনের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো? কি লাভ হলো ম’রে গিয়ে? আত্ম’হ’ত্যা কখনোই কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তোর বোন কি পারতো না মুভ অন করতে? আর তুই অপমানের কথা বলছিস? এমন হাজারটা অপমান সহ্য নীল করে। তাই বলে কি সে নিজের জীবন দিয়ে দেয়? আগে নিজেকে ভালোবাসতে জানতে হয়। যে নিজেকে ভালোবাসতে জানে না সে অন্যে ভালোবাসার অধিকার রাখে না।
কণ্ঠ একটু দম নিয়ে বললো,
–আমাকে একটা কথা বল নীরার সাথে বিয়ে হলে বি’চ্ছে’দ হলে তো নীলের বিশেষ কোনো ক্ষতি হতো না। আর তাদের এতটা বদ’নামও হতো না। কারণ আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বিবাহবিচ্ছেদ হলে দোষটা মেয়েদের ঘাড়ে এসেই পড়ে। ছেলেদের দোষ কেউ দেখে না। তাহলে কি আ’ন্ডার প্ল্যান করেছিলিস তুই?

কণ্ঠের কথায় রাফাত হাসলো। রাফাতকে হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো কণ্ঠ।
–ওয়ে দাঁত ক্যা’লানো বাঞ্ছারাম দাঁত কেলানো বন্দ করে বল।

–নীরার সাথে একবার নীলের বিয়ে হলে ওর পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না।

–কেন রে নীরা কি নীলের বাড়ির সব চেয়ার আর সোফা নিলামে তুলতো?

–তোমরা হয়তো জানো না নীলের বাবা গতবছর নতুন একটা দলিল করেছেন। সেখানে তিনি নিতুকে দিয়েছেন নিজের ফিফটি পার্সেন্ট প্রোপার্টি আর ফিফটি পার্সেন্ট দিয়েছেন নীলের বউয়ের নামে। মানে যে নীলের বউ হবে সে নীলের বাবার ফিফটি পার্সেন্ট প্রোপার্টির মালিক হবে। এসবের কিছু নীল বা তার মা জানে না। নীলের বাবা খুব গোপনো কাজটা করেছেন। নীলের সাথে নীরার বিয়ে হলে নীরা সেই ফিফটি পার্সেন্ট প্রোপার্টির মালকিন হতো। আর নীরার থেকে প্রোপার্টি নেওয়া কোনো ব্যপার ছিলো না আমার জন্য।
কণ্ঠ অবাক হয়ে রাফাতের কথা শুনলো।
–নীলের বাবা যদি গোপনে কাজটা করে তুই জানলি কি করে?

–নীলের বাবা যখন উকিলের সাথে কথা বলছিলো তখন আমি শুনে নিয়েছিলাম।

–আড়িপাতছিলিস তুই? ছিঃ এসব ভালো না জানিস না। আর নীরা? ওকে কেন ব্যবহার করেছিস?

–ও আমার প্রেমে পাগল ছিলো। আমার সব কথা বিনা প্রশ্নে শুনতে রাজি ছিলো। আর আমার প্ল্যানে এমব একজনকেই আমি খুঁজছিমা। আর পেয়েও গেলাম। ও তো শুধু আমার প্ল্যানের একটা গুটি ছিলো মাত্র।

কণ্ঠ কিছু বলতে যাবে তখন টুং করে কণ্ঠের ফোনে এসএমএস আসে। এসএমএসটা ওপেন করতেই কণ্ঠের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। কণ্ঠ ফোনটা রাফাতের সামনে ধরে বললো,
–তোর বোন নীলকে নয় নিলয়কে ভালোবাসতো। ডায়েরিতে নীল লেখার কারণ হলো রাফিয়া ভালোবেসে নিলয়কে নীল বলে ডাকতো। ওদের সাত মাসের সম্পর্ক ছিলো। নিলয় তোর বোনকে নীলকে প্রপোজ করার ডেয়ার দিয়েছিলো। ডেয়ার অনুযায়ী রাফিয়া নীলকে প্রপোজ করে আর নীল তা প্রত্যাখান করে। ক্যাম্পাসের মাঠে প্রত্যাখান করায় নিলয় তোর বোনকে অনেক কথা শুনায়। তোর বোন কিন্তু সে কারণে আত্ন’হ’ত্যা করে নি।
রাফাত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে কণ্ঠের দিকে।

–তোর বোন গর্ভবতী ছিলো। আর বাচ্চাটা নিলয়ের ছিলো। নিলয় সুন্দর করে সেই বাচ্চাকে অস্বীকার করে আর তোর বোনকে যা নয় তা বলে অপমান করে। নিলয়ের ব্যবহারে রাফিয়া ভেঙে পড়ে। তোদের কাছে জবাব দেওয়ার ভয়ে সে আ’ত্মহ’ত্যা করে।

রাফাত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে কণ্ঠের দিকে। কণ্ঠের একটা কথাই তার কানে বাজছে “রাফিয়া গর্ভবতী ছিলো”।

–নিলয়ের বর্তমান অবস্থা জানিস কি?

রাফাত অস্পষ্ট সুরে বললো,
–কি?

–ওর গত বছর এইচআইভি ধরা পড়েছে। অবস্থা তেমন ভালো না। যেকোনো দিন তোর বোনের কাছে চলে যেতে পারে।
রাফাত নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে। আশেপাশের কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না।

–এবার বল তোকে কি শাস্তি দেওয়া যায়? আমার নীল তো তোর চৌদ্দ পুরুষের কোনো ক্ষতি করেনি তবুও যে তুই নীলের ক্ষতি করতে উঠে পড়ে লেগেছিলিস এখন তোর কি করবো আমি?
রাফাত এবারো কোনো উত্তর দিলো না।

#চলবে….ইনশাআল্লাহ