নেশময় ভালোবাসার আসক্তি পর্ব-১+২

0
140

#নেশময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-১
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

ঠাস,,, স,,,, স,,,,,তোর এত বড় সাহস তুই এই আদ্রিয়ান চৌধুরীর সাথে বেড শেয়ার করতে চাস।

রক্ত রঞ্জিত লাভার মত অক্ষী যুগল নিক্ষেপ করে আছে এক সুন্দরী রমণীর দিকে যে কিছু ক্ষণ আগেই তার সামনে দাড়িয়ে থাকা সুপুরুষ এর সাথে এক রাত কাটাতে চেয়েছিল। আর তার জন্যই সেই সুপুরুষ টির হাতের দাবাং মার্কা চর খেলো

এখনো দাড়িয়ে আছিস কেনো , দূর হো চোখের সামনে থেকে যদি আরেকবার আমার চোখের সামনে পড়িস ওইদিনই তোর শেষ দিন হবে সেই বিষয়ে তোকে বলতে হবে না নিশ্চয়,

দাঁতের সাথে দাঁত চেপে কথাটি বলার সময় প্যান্টের পকেট থেকে চকচক করা কালো জিনিস টা বের করতে করতে বলে,
সেই জিনিসটা পরিলক্ষিত হতেই মেয়েটির ভয়ে হাঁটু কাপতে থাকে, মনে হয় এখনই জ্ঞান হারাবে

আসাফ,,,, আসাফ,,,,,,,,,,,,,

ডাকটি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কালো কোট পড়া একটি ছেলে তাড়াতাড়ি করে রুমে প্রবেশ করলো যে আদ্রিয়ান চৌধুরীর পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট

ইয়েস স্যার,,,

একটু ভয়ে কাপতে কাপতে বললো ,,, কারণ ঢোকার সাথে সাথে তার স্যারের ওই রক্তরঞ্জিত চোখ গুলো এক পলক দেখেছিল, যার জন্যই তার বুকের বাম পাশে ওই ছোট্ট হৃদপিন্ডটা ধুপ ধুপ করে অতি অস্বাভাবিক মাত্রায় বিট করছে,, একইভাবে এই অল্প সময়ে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম,,,

তুমি আমার সাথে এই পজিশনে কাজ করো কতদিন,,,

হিসহিসিয়ে বললো,,,

স্যারের কথা শুনে সামান্য ঢুক গিললো

জ্বি স্যার,, বিগত ৬ বছর ধরে স্যার

হালকা কাপতে কাপতে বললো আসাফ,,

তাহলে তুমি কেনো এই প্রস্টিটিউট কে ঢুকালে,, তুমি কি জানো না যে এই সব নারীদের কে আমি ঘিন্না করি,, বলো….. ড্যাম এট,,,,,,,,

চিৎকার করে একটা বিকট আওয়াজ করলো
আসাফ ভাবছে হয়তো মেয়েটি আজকে কেল্লাপথে,,, কেনো যে এই মেয়ে এত বেহায়া,,, এত বলার পরও আমাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রুমে প্রবেশ করলো,,, মাইরি দম আছে বলতে হবে,,, এখন বুঝো বাছাধন কত গমে কত আটা,,, কিন্তু সামনে চোখ তুলে দেখে মেয়েটি ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আর মেয়েটির পিছনের ফুলদানি টা খণ্ডবিখণ্ড হয়ে আছে

এমন হাবার মত তাকিয়ে আছো কেন?? এই আবর্জনা টাকে নিয়ে যাও চোখের সামনে থেকে,,,

বলে সে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো

আর এইদিকে আসাফ তাড়াতাড়ি দুইজন গার্ড কে ডেকে এনে মেয়েটিকে নিয়ে গেলো
তারপর রুমটি হোটেল স্টাফ কে দিয়ে তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করে দিল,,, তারপর তার স্যারের জন্য ব্ল্যাক কফি আনতে গেলো ,,, কারণ সে জানে তার স্যারের এখন ওইটা দরকার হবে

এইদিকে

ওয়াশরুমে ঝর্না ছেড়ে তার নিচে এক বলিষ্ঠ পুরুষ দাড়িয়ে আছে,, যার চুলের উপরিভাগ থেকে ঝরঝরিয়ে পানির বিন্দু বিন্দু পানি কনা গুলো গড়িয়ে গড়িয়ে পুরো শরীর টাকেই শীতল করার তাগিদা দিচ্ছে,, কিন্তু ওই বলিষ্ঠ পুরুষটির চোখে আক্রোশ,, যেনো সব ধ্বংস করে দিবে,,,চোখের ওই কালো খয়েরী মধ্যে সাদা অংশ গুলো যখন রক্তরঞ্জীত হয় তখন এই চোখের দিকে তাকালেই মনে হয় প্রলয় সৃষ্টি হয়,, এমনিতেই আজ একটি মানবপাচার বিরোধী গ্যাং কে অনেক পরিকল্পনার পড়ে ধরতে সক্ষম হলেও মেইন লিডার কে ধরতে সক্ষম হয়নি,,, তার উপর এই উঠকো ঝামেলা,,, রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে,,,

প্রায় ৪৫ মিনিট পর একটি সাদা টাওয়েল পরে আদ্রিয়ান বের হলো , সামনে আসাফ কফি হাতে দাড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে,,, আদ্রিয়ান কফি মগটি নিয়ে চুমুক দিতে দিতে বিশাল বড় থাই গ্লাসের সামনে দাড়িয়ে লন্ডনের এক কোলাহল হীন রাস্তা দেখছে,, আর ক্ষণে ক্ষণে কফিটির তিক্তময় স্বাদ উপভোগ করছে,,,

আদ্রিয়ান চৌধুরী,,, যে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মাফিয়া কিং,,, যার কথা শুনলে সবাই ভয়ে কাপে,,, সাথে টপ ৫ এর মধ্যে একজন সফল বিজনেস মেন,,,তার বাবা মা ছোটো বেলায় গাড়ি অ্যাকসিডেন্টে মারা যায়,,, এর পর সে তার দাদির কাছে মানুষ হয়,,, তার এক ফুপিও আছে,,, তিনি তার পরিবার কে নিয়ে ফ্রান্সে সেটেল,,, আদ্রিয়ান এক বলিষ্ঠ ৬ ফুট ২ ইঞ্চি চাদের মত গায়ের রং দেখতে ২৯ বছরের এক সুপুরুষ,, রেশম কালো সিল্কি ছোটো ছোটো চুল গুলো যেনো তাকে আরো বেশি আকর্ষণ করে,,, তার বিশেষত্ব তার চোখ,,, কালো খয়েরী চোখে যেমন প্রেমে পড়বে তেমনই তার সেই চোখেই তার বিনাশ ঘটবে,,,

আদ্রিয়ান গ্যাং টিকে ধরতে লন্ডনে এসেছিল,,, আর তার বিজনেসের কয়েক টা অফিস লন্ডনেই আছে ,,,, আর মেইন বিজনেস তার বাংলাদেশেই,,, সে তার দাদীকে অনেক বার বলেছিল লন্ডনেই সেটেল হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু তার দাদী নিজের জন্মস্থান ছেড়ে আসতে চাইনি,,, যার জন্য সেও আর লন্ডনে সেটেল হতে পারেনি,,, কিন্তু তার বেশির ভাগ কাজেই লন্ডনে আসতে হয়,,, এখন সে তার লন্ডনের বিলাস বহুল দুইতলা বাড়িটিতে আছে,,, কালকেই সে বাংলাদেশ রওনা দিবে,,, আপাতত তার কাজ এই খানেই সমাপ্তি,,,
কফি টি খেয়ে সে ল্যাপটপ নিয়ে নিজের কিছু কাজ করছে,,, কাজ করতে করতে প্রায় ৩ টার দিকে সে ঘুমিয়ে পড়ে ,,, সকাল ১০ টাই তার ফ্লাইট,,,

…………………………………………..……………

রোদ্রতাপ সময়ে গাড়ির যানজটে মানুষের অবস্থা কাহিল,, কেউ ছুটছে অফিসে, কেউ স্কুলে, কেউ আবার অন্যত্র,,, গরমে অতিষ্ঠ অবস্থা সবারই যেনো সূর্য মামা তাদের কে ভস্ম করার উদ্বেগ নিয়েছে , কি এক যা তা অবস্থা,, তেমনই রোদ্রের উত্তাপে এক কলেজে পড়া কিশোরী তার বেস্টির সাথে কথা বলে বলে রাস্তার চত্বরে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে,, আর বিভিন্ন আলাপের অন্তরালে তার হাসির ঝঙ্কার তুলছে ক্ষণে ক্ষণে,,, সাথে যুগ হচ্ছে তার সামনের পড়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো যা বার বার বিরক্ত করছে তাকে,,, কিন্তু তার পাশের বেষ্টি গাল ফুলিয়ে তার সাথে হাঁটছে

ইশ মেঘু কত্ত দেরি হয়ে গেলো রে আজ ,,, তাড়াতাড়ি চল আর মাত্র ১০ মিনিট আছে ক্লাস শুরু হওয়ার,,

হ্যা রে তন্বী,,, আজকে একটা রিকশাও পাচ্ছিনা,, সময় এ কিছুই পাওয়া যায় না

আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে তাড়াতাড়ি চল

ক্লাস শুরু হওয়ার ৩ মিনিট আগে তারা ক্লাসে প্রবেশ করলো,, এর পর কলেজ শেষ করে তারা নিজেদের বাড়িতে রওনা দিল,,, একই পথে তাদের বাড়ি হওয়ায় তারা একটি রিকশা নিয়ে চলে গেলো,, আগে তন্বী নামলো তারপর এর ২ মিনিট পর মেঘা নামলো,,

মেঘা বাসাই এসে গোসল করে,, ওযু করে নামাজ পড়ে নিলো,, তারপর দুপুরের লাঞ্চ করে শুয়ে পড়লো,, ভাত ঘুম দেওয়ার জন্য,, বিকেলে ২ টা টিউশন করাই,,

তাহমিনা আক্তার মেঘা,,, মা তাকে জন্ম দেওয়ার সময় মারা যায়,, বাবা আলতাফ মাহমুদ কে নিয়েই তার দুনিয়া,,, বাবা একটি কোম্পানি তে সাধারণ কর্মকর্তা পদে অধ্যয়নে আছেন,, মেঘা দেখতে খুবই মায়াবী,, তার গায়ের রং হলুদ ফর্সা,,, ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি,, হাঁটু পর্যন্ত তার চুল,, হালকা কুক্রানু বেশ ঘন,, বাবা প্রতিদিন তার চুলের যত্ন নেই,, চোখ গুলো টানা টানা,, তার বিশেষত্ব জোর ভ্রু,,, আর হাসলে বাম গালে একটা টোল পরে,,,কিছুদিন পর ১৮ বছরে পড়বে,,, ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী,, বাবার আদরের বিড়াল ছানা,, একদম শান্ত শিষ্ট নরম সভাবের মেয়ে,,,

বিকেল ৪ টাই ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে একটা নরমাল নীল সাদা রঙের থ্রি পিস পড়ে ,, চুলগুলো স্টিকের সাহায্য মুটামুটি ভাবে বেধে নিলো,, তারপর ওড়না মাথায় ভালোভাবে দিয়ে টিউশন জন্য বের হলো,, বাসা থেকে ১০ মিনিট সময় লাগে একটাতে যেতে ,, আরেকটা তে সেই জায়গা থেকে ১০ মিনিট,,, বাসাই আসতে আসতে ৭ টা বেজে যায়,, তার বাবা তাকে নিয়ে আসে,, তার বাবার অফিসের ছুটি হই ৬ টাই,, মেঘা টিউশন থেকে বের হলে বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দেই,, তারপর তার বাবা নিয়ে যায়,, আসলে তার বাবা তাকে টিউশন করতে বারণ করেছে,, কিন্তু একা বাবার পক্ষে তো এত কিছু সম্ভব না তাই বাবাকে সাহায্য করার ক্ষুদ্র প্রয়াস,, বাবাকে অনেক বুঝিয়ে টিউশন করাচ্ছে,,

………………………………………………………

পরদিন সকালে-

আদ্রিয়ান আর আসাফ বাংলাদেশে আসার জন্য ফ্লাইটে উঠে,, সাথে প্রায় ৫০ জনের মত গার্ড,,, এটা ওদের নিজস্ব পার্সোনাল প্ল্যান,,,

কলেজে-

মেঘা আর তন্বী তিনতলা থেকে নামছিল তখন একটি ছেলে ডেকে উঠে মেঘা নাম নিয়ে,, মেঘা ভয় এ তন্নীর হাত টা চেপে ধরে,, তন্বী ও বিরক্ত হয় ছেলেটার আসাতে,,

কেমন আছো মেঘা???

মেঘা তন্বীর হাত চেপে খানিকটা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল

আলহামুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া, আপনি??

ভালো আর থাকতে দিলে কই?? তোমার আশায় বসে থাকি কখন একটু তোমার সাথে কথা বলবো, কিন্তু তোমাকে তো খুঁজেও পাওয়া যায়না,, আচ্ছা এত ভয় পাও কেনো??

আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে ভাইয়া ,, আসি ভাইয়া

বলেই তন্বীর হাত ধরে মেঘা দ্রুত নিচে নেমে গেট এর দিকে চলে গেলো,, তারপর রিক্সা নিয়ে নিজেদের গন্তব্যে চলে গেলো,, আর রেখে গেলো অদম্য এক প্রেমিককে,, মেঘাদের কলেজেই ভার্সিটি লেভেলে অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ছে,, নাম প্রান্ত,, যে মেঘা কে প্রথম দেখেই নিজের সুপ্ত অনুভূতি জাগত করেছিল,,যার সাথে একটু কথা বলতে প্রতিদিন ছটপট করে,, অনেক দিন পর আবার মেঘার সাথে কথা বলতে পারলো,, যদিও স্বল্প সময় তবুও কথা বলার প্রবল তৃষ্ণার্ত মিটলো,, কথাই আছে নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল,,

……………………………………………………….

রাতে –

কি করছে আমার মামনি টা

আলতাফ মেয়ের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো

এইতো আব্বু পড়ছিলাম,,

আচ্ছা তেল আর চিরণী টা নিয়ে আসো মামনি

মেঘা ড্রেসিং টেবিল থেকে সেগুলো নিয়ে এসে বসলো,, তারপর তার আব্বুর সাথে গল্পঃ জুড়ে দিল, সারাদিন কি করলো না করলো,, অবশ্য প্রান্তর কথাটা চেপে গেলো,, অযথা না হয় আব্বু চিন্তা করবে,,, তার আব্বুও তার মেয়ের কথা শুনতে শুনতে সুন্দর করে মাথা তেল দিয়ে চুল গুলো বেনী করে দিলো,, একদম মায়ের মত চুল গুলো হয়েছে,, মেহরুরও এমন চুল ছিল,, মেয়েটাও মায়ের কার্বন কপি,, দেখেছো মেহেরু আমাদের মেয়েটা কত বড় হয়ে গিয়েছে,,, একদম তোমার মত হয়েছে গো,, তোমার মত বড্ড নরম সভাবের,, ওর জন্য চিন্তা হয় যদি আমি কখনো না থাকি তাহলে ওর যত্ন কে নিবে, মেয়েটা যে একদম ফুলের মত ,, ”হ্যা রব” তুমি আমার এই ফুলটার জন্য তাকে আগলে রাখার জন্য কাও কে পাঠিয়েও,,, বলেই মেয়ের চুলের বেনুনী গাঁথা শেষ করলো

তারপর মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল,,কিছুক্ষনের মধ্যেই মেঘা ঘুমিয়ে পড়লো,, তারপর কপালে চুমো দিয়ে গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে তার আব্বু রুমের দরজা টেনে বেড়িয়ে নিজের ঘরে গেলো

চলবে…….

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-২
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

৬ দিন হলো আদ্রিয়ান বাংলাদেশে এসেছে, ঢাকায় তাদের ঐতিহ্য বাহী বিলাস বহুল বাড়িটি অবস্থিত। যা চৌধুরী মেনসন হিসেবে আখ্যায়িত, এই বাড়িটিতে তার দাদী থাকে আর সাথে রয়েছে প্রায় ৬/৭ জনের মতো কাজের লোক আর নিজেদের সেফটি অনুযায়ী গার্ড দ্বারা আবৃত।

ব্যাস্ত শহরের মধ্যে ৫ টা গাড়ি একে একে চলছে ,
মজার বিষয় হচ্ছে সব গাড়ি ব্ল্যাক, এর মধ্যে একটি গাড়ি সব থেকে বিলাস বহুল যার ভেতরে রয়েছে গম্ভীর এক বলিষ্ঠ সুপুরুষ যে তার বড় বড় আঙ্গুল গুলো খুবই ব্যাস্ত ভাবে চালনা করছিলেন তার অফিস নিয়ন্ত্রিত ল্যাপটপে,, এমন ভাবেই কাজ করছিলেন যেনো বাহিরে কিছুতেই তার যায় আসে না,, সাথে মুখটাও অবিরাম চলতেই আছে ইংলিশ কনভারসেশন এর মাধ্যমে,, যা তার কানের ওই ছোট্ট যন্ত্রের দ্বারা আদান প্রদান করছে,,,কিছু ক্ষন পর তার ভিডিও মিটিং শেষ হয়,,, আর সে খেয়াল করে গাড়িটি স্থির হয়ে আছে বুঝতে পারে সে জ্যামে আটকে রয়েছে,, এটার জন্যই তার এই শহরটি বড্ড অপছন্দের,, মুখ দিয়ে উফফ জাতীয় শব্দ বের করলো,, তারপর বাতাস আসার জন্য সে গাড়ির জানলা টা খুলে দিলো,,, তারপর ফোন টাইপিং করতে থাকলো,,,

হঠাৎ বাতাসের কলরবের মত এক মিষ্টি হাসির রেখা শুনা যাচ্ছে যা হঠাৎ করেই মনের মধ্যে সূক্ষ্ম অনুভূতির জাগরণ করছে,, মনে হচ্ছে এই হাসির অধিকারিণী খুব নিখুঁত ভাবে তাকে ক্ষত বিক্ষত করার ক্ষমতা রাখে,, মনে এক অদ্ভুত আসক্তির সৃষ্টির দোলা জাগিয়ে দিচ্ছে মনে,,, অনেকক্ষণ আগেই ফোনের মধ্যে হাতের আঙ্গুল গুলির কাজ স্থির হয়ে গিয়েছিল,,আসতে আসতে ফোনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তার বাম পাশের কলেজের বিপরীত পাশে ফুসকা স্টলের পাশেই দুই কিশোরী দাড়িয়ে দাড়িয়ে মনের আনন্দে ফুসকা খাচ্ছিল, আর সেখান থেকেই আওয়াজ টা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বারে বারে,,ঘুমটা দেওয়া রমণী
তার পাশে দাড়িয়ে থাকা রমণীর সাথে কথা বলছে আর হাসছে,, খানিক ক্ষণ পর পর যখন ফুসকা মুখে দিচ্ছে তখন মুখের বিকৃতি এমন করছে যেনো এটা পৃথিবীর সব থেকে বেস্ট ডিস,,,

আর এই দিকে মুগ্ধতার চোখে তাকিয়ে আছে যেনো হাজার বছরের দেখার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে,, লাল সাদা কম্বিনেশনে একটি সাধারণ থ্রি পিস পরে আছে,,, কিন্তু সাধারণের চেয়েও যেনো অসাধারণ লাগছে এই স্নিগ্ধপরিকে ,,, তার হাসির অন্তরালে নিজের ঠোঁটেও স্নিগ্ধ হাসির আমেজ দেখা যাচ্ছে,,,
যেনো সব কিছু সেখানেই থেমে গেছে,,

আসাফ তার স্যারকে অনেকক্ষণ ধরেই লক্ষ করছে গাড়ির মিরর থেকে,, কিন্তু যখন দেখলো তার স্যার এর হালকা হাসির রেখা তখন সে যেনো চরম আশ্চর্য্য হয়ে গেলো,, যেই স্যার কে কখনো তার দাদীকে ছাড়া হাসতে দেখে নি,, সে নাকি একা একা হাসছে,, কেমন যেনো তার তালগুল পাকিয়ে যাচ্ছে,, স্যার কে কি কোনো ভূতে ধরলো নাকি,, এমনিতেই দিনকাল ভালো না,, তার এক দূর সম্পর্কের ভাইয়ের বউকে নাকি জ্বীন এ ভর করছিল ,, সে নাকি একা একা হাসে একা একা কথা বলে,, আবার জামাইকেও নাকি লাঠি নিয়ে দৌড়ানি দেই মারার জন্য,, গতকালই তার দূর সম্পর্কের ফুফী কল দিয়ে বললো,, প্রথমে বিশ্বাস হয়নাই,,, এখন তো মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি হয়তো,,, স্যারকেও তাহলে সেই জ্বিনে ধরেছে, তা নাহলে যেই স্যার সবসময় মুখ গম্ভীর আর রাগের মুড নিয়ে থাকে সেই স্যারের মুখে এমন মুচকি হাসি,,,

হঠাৎ করেই গাড়ি চলতে শুরু করল আর আদ্রিয়ান এর ধ্যান ভাঙলো,, এতক্ষন সে কি ভাবছিল,, অহেতুক জিনিসের প্রতি সে মুগ্ধ হচ্ছিল,, না না না,, এইসব মায়াজাল কে সে টিকতে দিবে না তার বক্ষ পিঞ্জরে,,, নিজেকে নিজে ধিক্কার জানালো,, তারপর সে আরেক পলক সেই রমণীর দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে কাচের জানলা বন্ধ করে দিল,,
তার পর সে তার অফিসে যাওয়ার উদ্দেশে যেতে থাকলো,, সাথে গার্ড দের গাড়িও একই গতিতে চলমান ছিল,,,

…………….…………………………………………………

এত ক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেঘা আর তন্বী ফুসকা খাওয়ার কম্পিটিশন করছিল,, দুইজনেই ফুসকার জন্য জান পরান,, দুই জনেরই ঝাল ফুসকা মানেই এক আকাশ সম ভালোবাসা,, অবশ্য আমরা মেয়েরা ফুসকা চোখের সামনে পড়লেই হলো,, দিক বেদিক ভুলে আমাদের প্রেমিক ফুসকার মধ্যে প্রেম নিবেদন করতে পিছুপা হইনা,, আর এমন ভাবেই নিবেদন করি যে ফুসকা মহাশয় তার বিপরীত ভালোবাসা টা আমাদের মুখে তৃপ্তিময় স্বাদ টা ঢেলে দেই,,,

প্রায় তারা ৬ প্লেট ফুসকা সাবার করে ফেলছে,, অনেক ঝাল থাকায় দুইজনের হাল বেহাল দশা,, অবশ্য মেঘাই কম্পিটিশন জিতেছে, তাই ফুসকার বিল দেওয়ার টার্গেট তন্বীর হলো,, কারণ যে জিতবে সেই বিল পরিশোধ করবে এমনই শর্ত ছিল,,, এরপর তারা আইস ক্রিম কিনে খাওয়া শুরু করলো,,,

আচ্ছা মেঘু তুই প্রান্ত ভাইয়ার সাথে কথা বলিস না কেনো, যখনই কথা বলতে আসে তখনই তুই এড়িয়ে যাস, নয়তো প্রান্ত ভাইয়া যখন ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে তখন তুই শুধু সেই টুকু উত্তর দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসিস,, আর আরেকটা জিনিস খেয়াল করেছি আমি, যখনই ওনাকে দেখিস তখনই আমার হাতটা শক্ত করে ধরিস,, যেনো ওনি তোকে খেয়ে ফেলবে,, আর এই দিকে তোর রাক্ষসী নক আমার বারোটা বাজায়,,

প্রান্তর কথা বলতেই মেঘা মিইয়ে যায়,, কারণ সে ছেলেদের সাথে তেমন একটা মিশতে পারে না,, তার উপর ছেলেটি বার বার এসে তার সাথে কথা বলতে চাই,, যা মেঘা খুবই অস্বস্থি বোদ করে,, আবার ভয়ও পাই,, কারণ ছেলেটি রাজনীতি করে,, এসব রাজনীতি, মাফিয়া, হট্টগোল করা মানুষদের মেঘা প্রচন্ড ভয় পায়,, যাকে বলে হার জাপানি ভয়,, তাই প্রান্ত আসলেও তার খুবই ভয় করে,,

কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি??

হালকা ধাক্কা দিয়ে তন্বী মেঘাকে জিজ্ঞেস করলো

আব,,, না,, আসলে তুইতো জানিস আমি ছেলেদের সাথে তেমন একটা কথা বলিনা,, আর ওনি তো রাজনীতি করে,, এসব মানুষ দের আমার খুব ভয় করে আর আমার ওদেরকে দেখতেও ইচ্ছে করে না,, তাইতো এড়িয়ে যাই,,

ওহ,,, আমিও না,, বোকার মত প্রশ্ন করছি,, আমার মেঘু রাণীযে এসব ভয় পাই আমিতো ভুলেই গেছি,,, আসলে মাথাটাই গেছে,, এমনিতেই সায়নের সাথে ঝগড়া হয়ে আমার মাথার মেমোরি টা একদম গেছে,,, সরি বনু

তনু ভাইয়া আবার তোর সাথে ঝগড়া করেছে?? আচ্ছা এত ঝগড়া হলেও তো ভাইয়াকে কখনই দেখিনি তোর রাগ ভাঙ্গাতে,, ওলটো তুই ওর রাগ ভাঙাস,, এমন প্রেম করার কি দরকার বলতো?? আমি হলেতো এমন প্রেম করতাম না,,

আরে না না,, আমি ঝগড়া করেছি রে,,

আমি জানি তনু তুই এখন মিথ্যা বলছিস,, তোর চোখ দেখেই বলতে পারি আমি,,

হাত ধরে বললো মেঘা তনুকে,, তনু হঠাৎ করেই মেঘাকে জড়িয়ে ধরে বললো

নারে মেঘু,, আসলে মাঝে মাঝে ওর যে কি হই আমি নিজেও জানি না,, নিজেকে তার কাছে কখনো কখনো ভিত্তিহীন মনে হয়,, আবার কখনো উদারময়,, কি করবো বল ,, বড্ড যে ভালোবাসি তাকে

বলেই ফুফিয়ে কাদতে লাগলো তন্বী,, আর মেঘাও তাকে পিট ছুঁইয়ে সান্ত্বনা দিতে থাকলো আর নীরবে চোখের পানি ফেলতে থাকলো

আচ্ছা হয়েছে হয়েছে ,, এইবার দেখি আমার লক্ষী তনু টা তো খুব স্ট্রং তাইনা?? আমি না হয় দুর্বল প্রজাতির মেয়ে,, কিন্তু তুইতো আমার ভরসার কেন্দ্র বিন্দু,, আমাকে বিভিন্ন কাজে সাহস জোগায়,, আজ সেই ষ্ট্রং মেয়েটার চোখে এমন অহেতুক পানি আসার তো কোনো মানে হয়না,, তাইনা,, উপর ওয়ালার কাছে ছেড়ে দে,, যা হচ্ছে হতে থাক,,তুই এটা নিয়ে এত ভাবিস না,,

তন্বী একটু শান্ত হলো,, তারপর দুইজনই রিক্সায় উঠে নিজেদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রওনা হলো

চলবে-