নেশাময় ভালোবাসার আসক্তি পর্ব-৩+৪

0
125

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-৩
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

গগনের ঐ রক্তিম আভা সূর্য তার আলোড়নের প্রভাব ধীরে ধীরে সল্প মাত্রাই করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে,, যেনো তার অভ্যাসের কাজ শেষ হতে চললো,, সন্ধ্যা ৬.৩০ টা, শরতের ছোয়া চারিদিকেই বহমান হচ্ছে তার প্রকৃতির আলো ছড়িয়ে,,

সময়টা গোধূলি লগ্ন,, প্রত্যেক দিনের মত আজও মেঘা টিউশন শেষ করে সেই বাসা থেকে বের হলো,, সামনেই ২ টা বড় গলি,, প্রথম গলি টা সামান্য জনবসতি হলেও,, পরের গলিতে এই সময় টা একদম নিরব থাকে,, আজকে তাড়াতাড়ি টিউশন শেষ হতে গিয়েছে,, আর তাই আব্বু কে আর ফোন দিয়ে বিরক্ত করেনি,, হইতো এখনই বাসায় আসছে,, এই ক্লান্ত শরীর টাকে আর ক্লান্ত করতে চাইছে না,, তাই আজ একা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো,, এমনিতেই হঠাৎ হঠাৎ একা একা আসা যাওয়া করে,, যার জন্য আব্বুর বকা শুনতে হয়,, আব্বু তেমন একটা বকে না,, কিন্তু অবাধ্য হলে মাঝে মাঝে বকা শুনতে হই,, আজকেও বকা শুনবে কিন্তু বকা শুনোক সমস্যা নেই,, মাঝে মাঝে বকা না শুনলে জীবন টা বিরক্ত লাগে,, তাই আদরের সাথে সাথে বকা খাওয়াও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী,, এই সব ভাবছে আর হাঁটছে,, কখন যে দ্বিতীয় গলিতে আসলো খবরই নেই,, এই জায়গা টা একদম নিরব যার জন্য একটু একটু ভয় করছে,, তবুও হালকা সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো,, আর কয়েক মিনিট গেলেই বড় রাস্তা পাবে,, তারপর একটু গেলেই তাদের বাসা,, হঠাৎ করেই একটা বিকট আওয়াজ হলো,, চলন্ত পা সেই শব্দের সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেলো,, চোখ খিচে বন্ধ করে জামার অংশবিশেষ জোরালো ভাবে চেপে ধরলো,, হৃদপিণ্ড অস্বাভাবিক মাত্রাই বিট করতে লাগলো,, কিছুক্ষন পর আবার একই আউয়াজ করলো,, সাথে কারো ধমকানুর আওয়া_জ মনে হচ্ছে অনেক রেগে আছে,, আমাদের মানুষের মাঝে একটা কৌতহল থেকেই থাকে,, যেমন কোনো কিছু কেনো হচ্ছে বা কে কি করতে চাইছে তা দেখার আগ্রহ সবারই কম বেশি থাকে,, তখন সেই ব্যাক্তির অবস্থান কোন জায়গায় তার খেয়াল থাকে না,, তেমনই মেঘার মনেও কৌতহল জাগছে কিন্তু সে যে এত ভয় পাচ্ছে তবুও তার কৌতহল এর বশে সে সামনের পুরাতন গ্যারেজ এ দেখার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে,,

আর গিয়েই তার শরীর কাপনি দিচ্ছে,, সামনে একজন কালো কোট পরিহিত লম্বা চওড়া এক লোক আর তার সাথে প্রাই দশ বারো জন লোক,, লোক গুলো মাথা নিচু করে আছে,, আর কালো কোট পরিহিত লোকটি সামনের হাঁটু গেড়ে বসে থাকা লোক গুলোকে নির্মম ভাবে গুলি করে মারছে,, অলরেডি ২ জন কে মেরে ফেলছে,, আরো একজনের হাঁটুতে গুলি করেছে,, এখন মাথায় গুলি ধরে রেখেছে,, ওই জা়গায় রক্তের মাখামাখি অবস্থা,, এমন ভয়ানক অবস্থা দেখে মেঘার গা গুলিয়ে যাচ্ছে,, যখনই লোকটি গুলি করে সঙ্গে সঙ্গে মেঘা চিৎকার করে উঠে আর সেই জায়গায় জ্ঞান হারায়,,

আর এইদিকে হঠাৎ সেই চেনা সংমিশ্রিত মেয়েলি কণ্ঠের চিৎকার শুনে তৎক্ষণাৎ পিছন ফিরে,, আর চিৎকার করার সঙ্গে সঙ্গে তার গার্ড রা নিজেদের রিবল বার নিক্ষেপ করে প্রটেকশন এর জন্য,, কিন্তু লোকটি তার হাতের ইশারা দিয়ে থামতে বলে,, এর পর সে ধীর গতিতে সামনে এগিয়ে যাই, আর তারপর সেই চেনা সংমিশ্রিত মেয়েটির পাশে হাঁটু গেড়ে বসে,, ঘামে জর্জরিত এক নিষ্পাপ রমণী শুয়ে আছে কংকর মিশ্রিত রাস্তায়,, তার মুখের ছোটো ছোটো চুল গুলো মুখটিকে হালকা আবৃত করে আছে,, লোকটি তার হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে স্নিগ্ধ রমণীর চুল গুলোকে কানের পিছে খুব যত্ন সহকারে গুজে দিলো,, যেনো একটু অযত্ন ভাবে ছোয়া
লাগলেই ব্যাথা পাবে,, হঠাৎ করেই সেই রমণীর পুরো মুখশ্রী নজরে আসলো,, আর এতেই যেনো সামনের বলিষ্ঠ পুরুষটির হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক মাত্রাই কম্পন হতে থাকলো,, মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকলো তার স্নিগ্ধ পরিকে,, যার জন্য প্রায় এতদিন অঘুমন্তই ছিলো,, যাকে ভোলার জন্য দিন রাত নিজেকে কাজে ব্যাস্ত রেখেছে,, এমন কি রাত জেগেও কাজ করেছে,, কিন্তু মন তো আর সেই সব জিনিস মানে না,, সেতো তার চাওয়ার জিনিস চাইবেই,, কেউ আটকাতে পারবে না এমনকি নিজেও না,, হঠাৎ করেই সামনের লোকটির তার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কথা হোস আসলো,, এর পর সেই রমণীকে নিজে কোলে তুলে তার পার্সোনাল গাড়িতে সামনের সিটে ভালো ভাবে বসিয়ে সিতবেলট বেঁধে দিলো,, এরপর গাড়ির দরজা বন্ধ করে ,, গার্ড দের কিছু একটা ইশারা করে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো,, খুবই যত্ন সহকারে চালাচ্ছে যাতে স্নিগ্ধ পরীর কোনো সমস্যা না হয়।।

..………………………………………………………………

দখিনা হাওয়ার আদলে থাই গ্লাস বিশিষ্ট বড় বারান্দার পর্দা গুলো নিমিষেই উড়ে বেড়াচ্ছে,, আর সেই বাতাসের বৌদলোতে র ছোয়া আঁচ_ রে পড়ছে গোল বেডে সজ্জাসায়িত রমণীর মুখমণ্ডলে

এর বেশ কিছুক্ষন পর, ধীরে ধীরে সে রমণীর
নেত্র পল্লব খুললো,, প্রথম বার কিছুই বোধগম্য হলো না,, তাই নিরবেই কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো,, এর পর আস্তে আস্তে চারদিকে তার টানা টানা নেত্র পল্লব গুলো পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো,, প্রথমেই আকর্ষণ করলো বিশাল বড় থাই গ্লাস ধারা আবৃত বারান্দা,, যা মিনি ছাদ সিস্টেম করা হইতো,, এর পর আসে পাশে চোখ বিলিয়ে দেখতে পেলো খুবই সুন্দর একটি ড্রেসিং টেবিল, সোফা, পাশে কাচ বিশিষ্ট খুব সুন্দর একটি টেবিল,, আরো অনেক বিলাসিত অনেক আসবাবপত্র দেখতে পেলো,, যে এই ঘরের মালিক সে খুবই বিলাসিতা সম্পূর্ণ,, আর রুচিবোধ ও উচ্চ পর্যায়ে,, হঠাৎ করেই মগজের নিউরনে আবিষ্কার হলো

আমি এখানে কি করছি?? স্বপ্ন দেখছি কি!! কিন্তু স্বপ্ন এমন বাস্তব কিভাবে হবে??

এর পর আস্তে আস্তে তার হঠাৎ করেই ওই ভয়নক দৃশ্য মনে পড়লো!! আর সাথেই সে বড় বড় নিশ্বাস নিতে থাকলো ,, এসি থাকা সত্তেও ঘামতে থাকলো,, হাত পা মৃদু কাপতে থাকলো,, হঠাৎ করেই দরজার নঢ় ঘুরিয়ে ঘরে কেউ প্রবেশ করলো দ্রুত,, মেঘা আবছা আলোই তাকে দেখে নিজেকে গুটিয়ে নিলো,,
কিন্তু তার ভয় আরো বেড়ে গেলো, মুখ দিয়ে হা করে নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করলো

সেই লোকটি তাড়াতাড়ি এসে মেঘার দুই বাহুতে ধরতে নিলে সে নিজেকে আরো গুটিয়ে নেই,, কিন্তু পাশের মানুষ টি হইতো পণ করেছে তাকে নিজের কাছে আবদ্ধ করার জন্য,, তাই জর করে বাহুতে ধরে শক্ত জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরে মাথায় অনবরত হাত বুলাতে থাকলো

রীলেক্স স্নিগ্ধ পরী, শান্ত হও, কিচ্ছু হইনি,, ভয় পেয়েছো?? এইতো দেখো কিচ্ছু হইনি,, আস্তে আস্তে ব্রেথ নাও,, রিলেক্স রিলেক্স,,

এই বলে হাত বোলাতে থাকলো মাথায়,, এর পর আস্তে আস্তে শান্ত হতে থাকলো মেঘা,, হ্যাঁ এতক্ষন যে স্নিগ্ধ পরী বলে ডেকেছে সে আর কেউ নই আদ্রিয়ান চৌধুরী,,

এর পর বেড এর পাশের টেবিলে থেকে গ্লাসে ঢাকনা দেওয়া জুস টা হাতে নিয়ে মেঘার মুখের সামনে ধরে রেখে খাওয়াতে লাগলো, আর মেঘার ও মনে হই এটারই প্রয়োজন ছিল,, তাড়াতাড়ি আদ্রিয়ান এর হাত থেকে সেটা ঢকঢক করে পুরো গ্লাস টা খালি করে ফেললো,, এর পর নিজেকে স্বাভাবিক লাগলেও ভয় টা কমেনি,, আড়চোখে আদ্রিয়ান কে দেখছে আর হাত কচলাচ্ছে,, আদ্রিয়ান গ্লাস টা ছোট্ট টেবিলে রেখে মেঘাকে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে বসলো,, যাতে তার স্নিগ্ধ পরীর মনে কোনো খারাপ মনোভাব না তৈরি হই,,

লোকটিকে একটু দূরে দেখে একটু স্বস্তি মিললো,, তবুও তার অবস্থান এর কথা সে বুঝতে পারছে না,, তাই শত সংকুচের ভেতরে থেকেও মেঘা বললো

আমি এখানে কেনো ,, না মানে আমিতো ,,,,,

আর বলতে পারলো না হঠাৎ করেই ওই কোট পরিহিত লোকটার কথা মনে পড়লো আর লোকটির দিকে তাকালো ,, সেই লোকের চেহারা দেখেনি কিন্তু ওই লোকটার সাথে অনেক টাই মিলছে,, তাহলে কি সেই ভয়ানক লোকটা আর এই লোকটা একই,,

তুমি ওই জায়গায় কি করছিলে?? এমন নিরিবিলি স্থানে একা একা যাওয়াটা কতটা রিস্কি তুমি কি জানো না?? দেখতে তো পিচ্ছি বাচ্চা মনে হচ্ছে,, বলো কি করছিলে ঐখানে??

গম্ভীর কণ্ঠে আদ্রিয়ান জিজ্ঞেস করলো,, আসলে তার তখন বাজে চিন্তা ভাবনা আসছিল,, যদি তার জায়গায় অন্য কেউ থাকতো তাহলে কি হতো,, এসব ভেবে ভেবে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে

…………………………

কি হলো চুপ করে আছো কেনো বলো??

আব… অা… আ…সলে আমি টিউশন করিয়ে ওইদিক দিয়েই বাসায় যাচ্ছিলাম ,, কিন্তু,,,

কিন্তু কি!! তুমি কি কচি খুকি?? আর কখনো যাতে তোমাকে একা একা চলাফেরা করতে না দেখি,, অবশ্য এর পর থেকে তুমি আমার নজর বন্দী ই থাকবা,,

বলেই একটা রহস্য ময় হাসি দিলো,,

আর এইদিকে মেঘার লাস্টের কথা শোনে আদ্রিয়ান এর দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে ছেয়ে আছে,, কারণ তার বোধগম্য হলো না ,, উনার নজর বন্দী মানে!!

আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে ডি_ নার করে নাও,, অনেক রাত হয়েছে শোনে হঠাৎ দেওয়াল ঘড়ি র দিকে নজর দিলো,, রাতের ১১.৫০ বাজে,, সে এতক্ষন বাসার বাইরে,, আব্বু তো চিন্তা করছে,, আর মোবাইলটাও তো রাস্তায় মনে হই ফেলে আসছে,, আব্বু নিশ্চই চিন্তা করতে করতে প্রেসার বাড়িয়ে ফেলছে,, আদ্রিয়ান হইতো তার স্নিগ্ধ পরীর সমস্যাটা বুঝতে পেরেছে,, তাই বললো –

এত চিন্তা করতে হবে না আমি তোমার আব্বুকে তোমার ফোন থেকে মেসেজ পাঠিয়ে দিয়েছি যে তুমি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড তন্নীর বার্থডে তে গিয়েছ,, আর আজকে তোমাকে ওই খানে থাকতে হবে বলে তন্বী বেশি জোর করছিল,, তাই আজকের রাত টা থেকে যাবে,,

মেঘা হা করে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে,, মানে তার সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,, লোকটা এত কিছু জানে কিভাবে??

হইছে তোমার ওই ছোটো মাথায় এত কিছু ঢুকাতে হবে না,, খেয়ে নাও!!

গম্ভীর করে বললো,,

আমার খিদে নেই,, আমি বাসায় যাবো,, প্লিজ আমাকে দিয়ে আসুন,,

এখন আর যাওয়া যাবে না , তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পরো,, যত দেরি করবে তত দেরি হবে তোমার বাসায় যেতে দিতে,, এখন ডিসিশন তোমার,, সকালেই আমি দিয়ে আসবো তোমাকে,, আমার পারমিশন ছাড়া কেউ আমার নাগালের বাইরে যেতে পারে না,, আর তুমি হচ্ছো পার্সোনাল অ্যাসেট,, তাই যা বলছি লক্ষ্মী মেয়ের মত করো,,

এর পর আর সাহস হইনি কিছু বলার,,

যাও,, ঐযে ওয়াসরুম দেখছো, ঐখানে, ফ্রেশ
হয়ে খেয়ে নাও, গো ফাস্ট,,,,,

মেঘা তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ে,, কিন্তু তার খুব অস্বস্থি হচ্ছে আদ্রিয়ান কে দেখে,, লোকটা এখনও দাড়িয়ে আছে,, খারাপ হলে তো এত ক্ষণে ক্ষতি করে দিতো,, যেহেতু করেনি তাহলে খারাপের অন্তরে একটু মনুষ্যত্ব আছে হইতো আবার না,,,,

এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে,, কারণ পানির সাথে ঘুমের মেডিসিন ছিলো,, ডক্টর সাজেশন এ,, যেহেতু অনেক ভয় পেয়েছে সেহেতু পর্যাপ্ত ঘুমের দরকার,, তাহলেই ভয়টা কাটবে,, তার জন্য পানির সাথেই মিশিয়ে খেতে নিয়েছে মেঘা,,

আর এইদিকে মুগ্ধ নয়নে তার স্নিগ্ধ পরী কে দেখছে মন ভরে,, কিন্তু তবুও মন ভরছে না,, এই যে এতক্ষন অজ্ঞান ছিলো,, তখনও ওই মুখশ্রী তে আটকে ছিলো,, দেখেই গেলো কিন্তু তবুও তৃষ্ণা মিটছে না,, মনে হচ্ছে সারাজীবন চোখের সামনে বসিয়ে রাখি আমার এই মায়াবতীকে,,, এসব ভাবতে ভাবতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে এক ভালোবাসার প্রশ দিলো,, এরপর সেই রুম থেকে বেরিয়ে গেইস্ট রুমে ঢুকে সিসিটিভি চেক করতে লাগলো,, সারারাত তাকে দেখেই পার করবে বলেই পণ করেছে 🙃

#চলবে_কি?

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-৪ (প্রথম পরিচ্ছেদ)
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

সকালের স্নিগ্ধ আলোই আলোকিত হচ্ছে চারিদিক,, পাখির কলরবে বিকশিত হচ্ছে প্রকৃতির শোভায়,

শুভ্র রোদের ছোয়াই আমার ঘুমটা হালকা হলো,, ধীরে ধীরে চোখ খুললাম,, এরপর আশে পাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম কোথায় আছি আমি,,, ধীরে ধীরে গতকালকের ঘটনা মনে পড়লো,, তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াশ রুম খুঁজে তার ভেতরে ঢুকলাম,, ভেতরে ঢুকে হা হয় এ গেলাম,, এটা কি ওয়াস রুম নাকি কোনো রুম?? এখানে অনায়াসেই দশ বারো জন থাকতে পারবে,, এত বিলাসিতা বাথরুমে,, লোকটির কি বাথরুম প্রিয় নাকি,,, এসব ভাবতে ভাবতে মেঘা ফ্রেশ হয়ে নিলো,, এরপর তাড়াতাড়ি বের হয়ে দরজার বাহিরে গেলো,, বাইরে গিয়ে হা হয়ে গেলো,, ওকি কোনো রূপকথার রাজপ্রাসাদে এসেছে নাকি স্বপ্ন দেখছে,, নিজেকে নিজে চিমটি কেটে উফ করে আওয়াজ করলো,,স্বপ্ন না এটা সত্যিই,, বিশাল বড় দুইতলা বিশিষ্ট বাড়িটি,, আভিজাত্যে ভর পূর্ণ বাড়িটি,, হঠাৎ করেই গম্ভীর পুরুষালি কণ্ঠে কেউ বললো –

নিচে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসো,, নাস্তা করে নাও,,

মেঘা আমতা আমতা করে বলল

আ,, আ,, আমার খিদে নেই, ঠিক আছি আমি, বলছিলাম যে আমি বাসায় যাবো, এখন তো আমি ঠিক আছি , তাই আর কি —

ওই বিষয়ে পরে কথা হবে,, আর আমি এত কথা পছন্দ করিনা, তাই যা বলছি তাই করো

গম্ভীর ভাবে দাতে দাত চেপে বললো

মেঘা হঠাৎ করেই ভয় পেতে লাগলো, তাই সুড়সুড় করে নিচে নেমে ডাইনিং চেয়ারে বসলো, তার পিছন পিছন আদ্রিয়ান এসেও তার পাশের চেয়ারে বসলো,

সার্ভেন্ট দুইজন তাড়াতাড়ি খাবার সার্ভ করে দিলো,, আদ্রিয়ান অবশ্য অয়েলি খাবার পছন্দ করে না,, তাই তার জন্য নির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট অনুযায়ী খাবার দেওয়া হলো,, ফ্রুট,জুস, আর সালাদ,, মেঘা ওনার খাবার দেখে নাক সিটকায়, এরপর তার জন্য ব্রেড জেম এর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টাই,, ওকেও এসব খাবার দিয়েছে,, ওর সকাল সকাল ফ্রুট একদম পছন্দ করে না,, অবশ্য ওর ফ্রুট বলতেই এলার্জি,, এরপর একটা ব্রেড নিয়ে তাড়াতাড়ি কামড় বসিয়ে জুস টা খেয়ে উঠে পড়লো,,

যা যা দেওয়া আছে সব ফিনিশ করো,, আই অ্যাম নট তলেরেট ইগনোর এবাউট ফুড,, সো ফিনিশ ইট কুইকলি,,

ধমক দেওয়াতে হালকা কেপে উঠলো মেঘা,, এরপর তাড়াতাড়ি নাক চিপে খাওয়া শুরু করলো,, আর এইদিকে আদ্রিয়ান এসব আড়চোখে দেখে বাকা হাসলো,, যা কারোই দৃষ্টিতে আসলো না,, এরপর দুইজনই খাবার ফিনিশ করলো,,

উপরে গিয়ে দেখো একটা শপিং ব্যাগ আছে, কালকের ড্রেসটা ময়লা হয়ে গিয়েছে যাও চেঞ্জ করে আসো,,

না না লাগবে না,, আমি এটাতেই ঠিক আছি, একটু পর তো বাসায় যাবো, সমস্যা হবে না,

তোমাকে কি আমি কিছু বলতে বলেছি?

আব – আসলে –

আসলে নকলে কিছুই না যা বলেছি তাড়াতাড়ি করো, গো ফাস্ট,

ধমক দিয়ে বললো আদ্রিয়ান

মেঘা ভয়ে তাড়াতাড়ি উপরে যেই রুমে ছিলো সেইখানে গিয়ে তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে নিচে নেমে গেলো,

এরপর আদ্রিয়ান মেঘার হাত ধরে গাড়ির পেছনের এক সাইডে বসিয়ে অপর সাইডে গেলো, তখন গার্ড দরজা খুলে দিলো, এরপর গাড়ি স্টার্ট হলো,

মেঘা আড়চোখে আদ্রিয়ান কে দেখছে আর হাত কচলাচ্ছে,,

শুনো মেয়ে, আমি এখন যা বলবো মন দিয়ে শুনবে, আর যা যা করতে বলবো মন দিয়ে করবে, কি বলেছি ঠিক আছে??

মেঘা চোখ বড় বড় করে তাকালো আদ্রিয়ান দিকে,, আর ভাবছে এমন কি কথা হয়ে উনি আমাকে বলবেন, আমার জানা মতে তো কোনো কথা নেই, এরপর হঠাৎ করেই কিছু একটা মনে পড়লো,, পর পর কয়েক টা ঢোক গিললো,,

বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে আপনার ওই মার্ডার করার দৃশ্য দেখিনি, আমি তো ওইদিক টিউশন করিয়ে যাচ্ছিলাম, আর হঠাৎ করেই আওয়াজ পেলাম, তাই দেখেছি, সত্যি বলছি আমি ,, আমি কাউকে বলবো না এসব তবুও আপনি আমাকে মারবেন না ,

চলবে কি??

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-৪ (দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

( কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, যদিও পোস্ট করেন অবশ্যই লেখিকার নাম উল্লেখ করবেন)

মেঘা চোখ বড় বড় করে তাকালো আদ্রিয়ান এর দিকে,, আর ভাবছে এমন কি কথা আছে যা উনি আমাকে বলবেন, আমার জানা মতে তো কোনো কথা নেই, এরপর হঠাৎ করেই কিছু একটা মনে পড়লো,, পর পর কয়েক টা ঢোক গিললো,,

বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে আপনার ওই মার্ডার করার দৃশ্য দেখিনি, আমি তো ওইদিকে টিউশন করিয়ে যাচ্ছিলাম, আর হঠাৎ করেই আওয়াজ পেলাম, তাই দেখেছি, সত্যি বলছি আমি ,, আমি কাউকে বলবো না এসব তবুও আপনি আমাকে মারবেন না ,

আদ্রিয়ান মেঘার এসব কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ থেকে কিছু একটা ভাবলো

শুনো মেয়ে, আমি কেমন যেহেতু তুমি জানো সেহেতু আমার কথার অবাধ্য হলে কি হতে পারে বুঝতেই পারছো?

মেঘ ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ালো, মানে সে জানে

এখন থেকে তোমার সাথে দুই জন মহিলা গার্ড থাকবে, আর কোনো ছেলের সাথে কথা বলাতো দূর ধারে কাছেও যাতে না দেখি, চুপচাপ কলেজে যাবে আর বাসায় আসবে, আর বাসায় গিয়ে গিয়ে কোনো টিউশন করার প্রয়োজন নেই

কিন্তু আমি টিউশন না করলেতো হবে না। আমার আব্বু কে

শুনো মেয়ে তোমার আব্বুর সাথে আমি যা কথা বলার বলবো , এর হের ফের যাতে না হয়। কথার অবাধ্য হলে কি হবে সেটা জানোই

মেঘা ভয়ে ভয়ে ঢুক গিললো। ওর সব কিছু কেমন জানি মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মানে সে বুঝছে না এই লোক এত কিছু কেনো করতে বলছে? ওর জীবন ও বুঝবে। যেখানে আব্বু তাকে কোনো কিছুর নিষেধাজ্ঞা করে না, সেখানে এই লোক কোন জায়গা থেকে উড়ে এসে জোড়ে বসছে? আমিতো টিউশন করবই। আমারতো টিউশন করতে ভালো লাগে। এই লোকের জন্য নিজের ইচ্ছা কেনো বিসর্জন দেবো।

এই যে ভাবনারানী, নিজের ভাবনা হয়ে গেলে এখন গাড়ি থেকে বের হও। তোমার বাসার সামনে চলে আসছি! সময় নষ্ট করা আমার একদম পছন্দ না

মেঘা বাইরে তাকিয়ে দেখলো গাড়ি সত্যিই তার বাসার সামনে চলে আসছে, তাই তাড়াতাড়ি কোনো কথা না বলে গাড়ি থেকে বের হয়ে এক দৌড় মারলো যে পিছনে যে একজন চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে বুঝতেই পারল না।

মেয়েটা এত চটপটে কেনো? এই ভাবে দৌড় দেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল? বেয়াদব মেয়ে। আরেকদিন এই ভাবে ছুটুক পা ভেঙে রেখে দেবো।

রাগে গজ গজ করতে করতে ড্রাইভার কে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললো। এরপর নিজের অফিসের উদ্দেশ্য গাড়ি যেতে লাগলো

……………….….….……….…………………………………

মেঘা বাসার সামনে এসে যখন কলিং বেল বাজাল তখন তার আব্বু দরজা খুলে দিল, ভয়ে ভয়ে তার আব্বুর দিকে তাকালো কারণ এখনতো আব্বু তাকে খুব বকবে সারারাত বাসার বাইরে ছিল, কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে

মামনি এত তাড়াতাড়ি চলে আসলে যে, তোমার তো কলেজের ক্লাস শেষ করে আসার কথা ছিল, তন্বী তো এসএমএস করে তাই বলল আমাকে।

মেঘা তার আব্বুর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে, কারন তার বোধগম্য হচ্ছে না এখানে তন্বী কোত্থেকে টপকে পড়লো? তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে

আসলে আব্বু কালতো ব্যাগ আর বই নিয়ে যাই নি। তাই ঐগুলোই নিতে আসলাম আব্বু

আচ্ছা ঠিক আছে , তুমি কি নাস্তা করে আসছ?

হ্যাঁ আব্বু, আব্বু আমার কলেজ এর জন্য লেট হয়ে যাচ্ছে,

বলেই সে রুমে তাড়াতাড়ি গিয়ে ব্যাগ নিয়ে কলেজ এর উদ্দেশ্য রওনা দিলো

তার আব্বু মেয়ের তারাহুরা দেখে মুচকি হেঁসে নিজের কাজের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলো ।

……………………………………………………………

চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিতে-

স্যার, মিস্টার খান আমাদের সাথে করা ডিল টি ক্যান্সেল করতে চাইছে

তার কোনো উপযুক্ত কারণ কি বলেছে?

আসলে স্যার গোপন সূত্র থেকে জানা গিয়েছে কোনো এক ঈগল গ্রুপের সাথে মিস্টার খান হাত মিলিয়েছে, যার জন্য উনি এই ডিল টা ক্যান্সেল করে তাদের বিশ্বাস যোগ্য লোক হওয়ার চেষ্টা করছে, কারণ বেশির ভাগ শেয়ার আমাদের কোম্পানি ইনভেস্ট করেছে, এতে যদি ডিল ক্যান্সেল করা হয় তাহলেতো আমরাই বিরাট এমাউনটের ক্ষতির সম্মুখীন হবো স্যার, আর আমি এটাই বুঝতে পারছি না আমাদের সাথে ডিল ক্যান্সেল করে ওনার কি লাভ? যেখানে সবাই আমাদের সাথে কাজ করতে চাই সেখানে উনি কাজ পেয়েও হাত ছাড়া করছে!! সাথে বিশ্বাস ঘাতকতার পরিচয় দিচ্ছে

আসাফ একটা কথা আছে শুনেছ তো! বেশি বাড় বেড়ো না ঝড়ে পড়ে যাবে। মিস্টার খানেরও পাখনা গজিয়েছে। তাই আমার সাথে দুই নম্বরী করার সাহস পাচ্ছে। শুনো মিস্টার খানের পুরো ইনফরমেশন কালেক্ট করো।

ঠিক আছে স্যার

তারপর আদ্রিয়ান ল্যাপটপে নজর বুলিয়ে আবার আসাফের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো

আর শুনো, তোমার মেম এর ২৪ ঘণ্টার খবর আমার চাই, আর ওর কোনো সমস্যা যাতে না হয়।

জ্বি স্যার

এখন নিজের কাজে যাও

আসাফ মাথা নাড়িয়ে আদ্রিয়ান এর কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।

এইদিকে আদ্রিয়ান ল্যাপটপে মেঘার ঘুমন্ত ছবিটির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে বাকা হেসে

” এই যে ঘুম কুমারী, তোমার ঐ স্নিগ্ধ মুখে কি আছে বলোতো? যে আমার মতো এক গম্ভীর লোককে তোমার দিকে এই ভাবেই বিমোহিত করেছো?”

” একবার যখন ধরা পড়েছো ওই গভীর অন্তরালে, তখন সেই জায়গা থেকে তো তোমার মুক্তি নেই স্নিগ্ধপরী, চোখের বন্ধিনী তো হয়ে গেছো খুব শীগ্রই আমার মন পিঞ্জরে বন্ধী করে নিয়ে আসবো, আর কিছুদিন মুক্ত থাকো এর পর আমার অন্তরালের বেড়াজালেই বন্ধী হতে হবে যে তোমায় ”

…………………………………………………………………

মেঘা হাঁটছে আর কাল থেকে আজ এই পর্যন্ত হওয়া সব কিছুর হিসেব কষছে, আসলেই কি হলো সে এখনও পর্যন্ত বুঝছে না। প্রথমত ওই ভয়ানক লোকটা কে খুন করতে দেখলো, এরপর তারই বাসায় নিজেকে আবিষ্কার করলো, পুরো একটা রাত কাটালো সেই বাসায়, এরপর ভয়ানক লোকটা বাসায় দিয়ে গেলো, আব্বু বললো তন্বী এসএমএস পাঠিয়ে তার না আসার খবর জানালো। মানে সব তার মাথার উপরে যাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে কলেজে চলে আসলো। গেট এই তন্বী দাড়িয়ে ছিলো

কিরে তোর আজকে এত লেট হলো যে, একটা ক্লাস শেষের পথে, আর মহারানী এখন আসছেন, তোর জন্য আমিও ক্লাস করিনি

তন্বী তুই কালকে কি আব্বু কে এসএমএস পাঠিয়ে কিছু বলেছিলি?

কই না তো? কেনো?

না , এমনিতেই

আরে আর বলিস না কালকে রাতে হঠাৎ করেই ফোন টা পাচ্ছিলাম না, অনেক খুজাখুজির পর দেখি আমাদের জানালার পাশেই ফোনটি পড়ে ছিলো, ব্যাপার টা কিছুই বুঝলাম না রে

মেঘার এখন কিছু হলেও বোধ গম্য হলো যে এই ফোনের বিষয় টা, কিন্তু ওই লোকটা এমন কেনো করছে ওর সাথে। যায় হোক এসব ব্যাপার আপাতত মস্তিষ্কে ঢুকছে না তাই পরবর্তী ক্লাসের উদ্দেশ্য তারা ভবনে প্রবেশ করলো