নেশাময় ভালোবাসার আসক্তি পর্ব-২৭ এবং বোনাস পর্ব

0
105

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -২৭
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম উল্লেখ করে পোস্ট করবেন)

মেঘা ভয়ে যখন ছটপট করছিলো তখন সামনের ব্যাক্তিটি মেঘার গালের সাথে সেই ব্যাক্তির গাল মেশালো। হঠাৎ করেই ঠান্ডা অনুভব হলো। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো। কিন্তু যখন চোখ মেললো তখন সামনে তাকিয়ে দেখলো রুম অন্ধকার। আর কারো আবাস পাওয়া যাচ্ছে না। তাড়াতাড়ি রুমের লাইট অন করে সব জায়গায় চেক করে দেখলো কেউ নেই। তাহলে কিছুক্ষন আগে তার সাথে কে ছিল। নাকি হেলিসিয়েশন হচ্ছিলো। কিন্তু স্পর্শ গুলোতো তাজা। তাই তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে দেখলো কেউ বাইরে আছে কিনা। কিন্তু দেখলো কেউ নেই। এদিক দিয়েই একজন মেয়ে সার্ভেন্ট যাচ্ছিলো। তখন মেঘা জিজ্ঞেস করলো যে এদিকে কাও কে যেতে দেখেছে কিনা বা তিনি কি মেঘার রুমে ঢুকেছিল কিনা। কিন্তু সার্ভেন্ট এর উত্তরে বুঝতে পড়লো সে ঢুকেনি। আর কাও কে ওইদিকে যেতেও দেখেনি। মেঘা এরূপ উত্তর শুনে হতাশ হলো। এরপর সার্ভেন্ট কে তার কাজে যেতে বলে মেঘা নিজের রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলো। এরপর ড্রেস নিয়ে চেঞ্জ করতে ওয়াশরুমে ঢুকলো। চেঞ্জ করে এরপর যখন মুখের প্রসাধনী ধোয়ার জন্য ওয়াশরুমে মিররের মধ্যে চোখ পরলো তখন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলো। কারণ বাম গালে প্রায় অনেক খানি হলুদ লেগে আছে। তার যতো টুকু মনে পড়ছে সে হলুদ লাগায়নি। আর না কাও কে লাগাতে দিয়েছে। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে এতক্ষন অনুষ্ঠানে ছিলো। কিন্তু আর ভালো লাগছিলো না দেখে হলুদ নিয়েও আর মাতামাতি করেনি। সবসময় দাদীমার পাশেই ছিলো। তাহলে কি মনের ভুলে কেউ লাগিয়ে দিয়েছে? হয়তো হতে পারে। এরূপ ভাবনার মাঝেই কিছুক্ষন আগে হওয়া ঘটনা টা মাথা থেকে বেরিয়ে গেলো। এরপর আর মাথা না ঘামিয়ে ভালো ভাবে হাত মুখ ধুয়ে নিলো। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে। তাই আর দেরি না করে শুয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো। কারণ ভোরেই এই বাড়ী ছেড়ে তার আব্বুর সাথে চলে যাবে। কিছুক্ষন না ঘুমালে হবেই না। এমনিতেই কয়দিন ধরে শরীর টা দুর্বল লাগছে। মানসিক যন্ত্রণা উপরে প্রকাশ না করলেও ভেতরে ভেতরে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। যা শরীরেও প্রভাব পড়ছে। আর পারছে না নিতে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে বেডে শুয়ে পড়লো নিজেই জানে না। সাথে সাথেই ঘুমে তলিয়ে গেলো।

মেঘা যখন ঘুমিয়ে গেলো তখন বারান্দা থেকে কেউ বেরিয়ে এসে মেঘার পাশে বসলো। এরপর মেঘার কানের লতিতে উষ্ঠো ধারা স্পর্শ করলো। এতে মেঘা ঘুমের মধ্যেই হালকা কেপে উঠলো। কিছুক্ষন মেঘার দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে গেলো। এরপর ঠোঁটে রহস্য ময় হাঁসি দিয়ে খুব সাবধানে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। কালকে ভোরের অপেক্ষা করছে নতুন কিছু ঘটার।

____________________________

সময় টা ভোর ৪.৩০ টা। চারিদিকে মধুর আযানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সেই আওয়াজ মেঘার কানেও পৌঁছলো। ঘুমটা হালকা হয়ে উঠলো। আস্তে আস্তে চোখ মেলে চারিদিকে বোঝার চেষ্টা করলো। এরপর হঠাৎ করে কিছু মনেই পড়াই তাড়াতাড়ি লাফ দিয়ে উঠে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ১০ মিনিটের মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো এই বাড়ির সার্ভেন্ট দের ড্রেস পরে। আগে থেকেই এই ড্রেস লুকিয়ে রেখেছিল মেঘা। কাল যখন সবাই ব্যাস্ত ছিলো তখন একজন সার্ভেন্ট এর রুমে লুকিয়ে ঢুকেছিল। এরপর প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বেরিয়ে আসে। সাথে একটি বাটন ফোনও। যাতে তার একটি সিম ঢুকিয়েছিল শেষ রাতের দিকে। এরপর তার আব্বুকে ম্যাসেজ দিতে গিয়ে দেখলো আগে থেকেই অন্য একটা নম্বর থেকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এই সিমের নম্বর তো শুধু মাত্র তার আব্বু জানে। আর তো কেউ নয়। মেসেজ ওপেন করে দেখে যে তার আব্বুর ফোন কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এই নম্বর দিয়ে তাকে মেসেজ পাঠিয়েছে। আর তাকে আজ ভোরেই বের হতে বলেছে। বাইরে গেলেই চুপি সাড়ে বেরিয়ে যেতে বললো। আর যখন বেরোবে তখন রাস্তার বাম দিকে আসতে বললো। আর তার ঠিক একটু দূরেই গাছের আড়ালে তার আব্বুর ঠিক করা কালো রঙের একটি গাড়ি থাকবে। মেঘা যা বোঝার বুঝে গেলো। বর্তমান সে তাড়াতাড়ি নিজেকে তৈরি করে বেরিয়ে গেলো। বাড়ির কেউই জেগে নেই তাই তেমন কোনো অসুবিধা হলো না। যখন বাড়ির দরজার দিকে গেলো তখন দেখলো কোনো প্রহরী নেই। বিষয়টা অদ্ভুত লাগলো। বাইরে এসেও কোনো কাও কে দেখতে পেলো না। হয়তো আব্বু কোনো ভাবে প্ল্যান করে লোক গুলোকে সরিয়েছে। তাই সেই দিকে আর মাথা না ঘামিয়ে সোজা বের হয়ে গেলো। যখন মেইন গেট দিয়ে বের হবে তখন পিছু ফিরে বাড়িটিকে আরেকবার পর্যবেক্ষণ করলো। দীর্ঘ তিন মাস এই বাড়িটিতে কাটিয়েছে সে। তাই ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। এই বাড়িটিকে নিজের বাড়ির মতোই ভেবেছিল। সাথে বাড়ির মালিককেও। কিন্তু,, এসব ভেবেই দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো। চোখের কোনে অশ্রুরা ভীড় করলো। কিন্তু নিজেকে ধাতস্ত করে বেরিয়ে গেলো। পিছে ফিরে তাকিয়ে লাভ নেই।

_____________________________

সকাল ১১ টা,,,

সূর্যের প্রকোপ বাড়তে লাগলো। বাড়তে লাগলো উত্তাপ। বেশ উত্তপ্ত হয়ে আছে আবহাওয়া। সাথে পরিবেশটাও গরম হয়ে আছে। সেই গরমের প্রকোপ কারো গায়ে লাগছে তো কারো গায়ে হিম শিতলের ছোঁয়া। মেঘা আপাতত বউ সেজে বসে আছে,, বসে আছে বললে ভুল হবে। তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে গোল আলিশান খাটে। মুখে কোনো রকম প্রসাধনীর ছিটে ফোটাও নেই। অনেক ছোটা ছোটির চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু পারছে না। হাতের দড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো হাতের চামড়া ফেটে রক্ত পড়ছে। আজ তার একটা ভুলের কারণে এই জায়গায় সে। কি করে যে এই ব্লান্ডার টা করলো। ভোরের কথা ভাবতে লাগলো। ভাইরে যখন গেট থেকে বেরিয়ে বাম দিকের রাস্তায় হেঁটে কালো গাড়িটি দেখতে পারলো তখনই বুঝে গেলো এটিই তার আব্বুর বলা গাড়িটি। তাই কোনো কিছু যাচাই বাছাই না করেই সেই গাড়িটিতে উঠে গেলো। দরজা খোলাই ছিল। কিন্তু যখন উঠলো তখন সেখানে পরিচিত কেউই ছিলো না। তার আব্বুকেও দেখতে পেলো না। তার জানা মতে তার আব্বুর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখনই পাশে থেকে কেউ একজন মেঘার নাকে কিছু একটা স্প্রে করলো। হঠাৎ এমন হওয়াতে মেঘা কিছুই বুঝলো না। কিন্তু যখন বিষয় টা বুঝতে পারলো তখন অনেকটায় দেরি হয়ে গেছে। চারদিকে ঘোলা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। এরপর কেউ একজন তার মাথাটা কুলে রাখলো। আর তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট করতে বললো।

“আদ্রিয়ান,, দেখলি তো সিংহের রাজ্য থেকেই সিংহিনি কে বশ করে নিয়ে যাচ্ছি। আর তুই কিচ্ছুটি করতে পাড়লি না। সব সময় তুই জিততে পারবি না। এইবার তোর কলিজার উপর হাত দিয়েছি। দেখি কিভাবে আমার হাত থেকে তাকে বাচাস। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা এরপর সে চিরদিনের জন্য আমার হয়ে যাবে। আর কোনোদিন তুই মায়াবতীর টিকিটাও পাবি না।”

কথা গুলো বলতে বলতেই মেঘার দিকে তাকালো সেই লোকটি। যে মেঘাকে এতো কষ্ট করে এই ভাবে নিয়ে এসেছে। অনেক বেগ পেতে হয়েছে এর জন্য। কিন্তু শত কষ্ট পানি হয়ে গেলো যখন মেঘাকে তার নিকটে দেখলো। প্রাপ্তির হাসি হাসলো। এখন শুধু আসল কাজ বাকি। দ্রুত করতে হবে। নইলে সব প্লেন ভেস্তে

মেঘা সম্পূর্ণ জ্ঞেয়ানে থাকলেও কিছু কিছু কথা কানে স্পষ্ট বারি খাচ্ছিল। এই মুহুর্তে এসব মনে করছে আর নিজেকে দোষারূপ করছে। কেনো যে তার আব্বুকে ফোন না করে বের হয়ে ছিলো কে জানে। এখন পড়েছে বিপদে। আদো কি কেউ জানে সে কিডন্যাপ হয়েছে। অবশ্য এটাকে তো কিডন্যাপ বলেনা। নিজে নিজে যে গাড়িতে উঠে তাকে কি কেউ কিডন্যাপ বলে। এটা তো সে ফাঁদে পড়েছে। সেই ফাঁদের বিষয়টা শুধু সেই জানে। আর তো কেউ নয়। হঠাৎ করেই নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। মন থেকে বার আদ্রোর কথা আসছে। কিন্তু আদ্র তো এখন নিজের বিয়ে নিয়ে ব্যাস্ত। সে আদো বাড়িতে আছে কি নেই তার খবর কি আর রাখবে? রাখবে না তো। আব্বুও তো জানে না সেই বাড়ি থেকে তার মেয়ে বেরিয়ে গেছে। এখন সে কিভাবে পালাবে এখান থেকে। পালাতেই তো চেয়েছিল। যার জন্য এখন তাকে বাধা রাখা হয়েছে। আগের বার যেই লোকটি তাকে কিডন্যাপ করে ছিলো সেই লোকটি আবার তাকে কিডন্যাপ করেছে। মানুষটি কে সচক্ষে এখনও পুরোপুরি দেখেনি। কারণ মুখে রুমাল বাধা। আর তার থেকে বড়ো কথা লোকটি নাকি এখন তাকে বিয়ে করবে। এটা শুনেই তো মেঘার কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো। কি করবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। দুইজন মেয়ে সার্ভেন্ট দিয়ে কোনো মতে লাল একটু বেনারসি পরিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে আছে। কোনো প্রসাধনী লাগাতে দেইনি। এতে ওই লোকটি আর বাধা দেয়নি। তার কথা হলো যতো টুকু হয়েছে এতেই কাজ চলে যাবে। কিছুক্ষনের মধ্যে দুইজন সার্ভেন্ট এসে মেঘাকে জোর করে নিচে নিয়ে যায়। এতে মেঘা হোচট খেলেও কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেনি। পায়ে ব্যাথাও পেয়েছে।

নিচে গিয়ে দেখে একজন কাজী আর দুইজন কালো কোর্ট পড়া দুটো লোক বসে আছে। বজায় যাচ্ছে এরা উকিল। এরপর মেঘা জোর করে অচেনা লোকের পাশে বসিয়ে দিলে মেঘা উঠতে চাইলে লোকটি মেঘার হাত চেপে ধরে। মেঘার চিৎকারে পুরো হলরুমের দেয়াল গুলো কেপে উঠছে। কাজী যখন বললো “মেয়েতো মনে হয় বিয়েতে রাজি না, এমন বিয়ে করানো তো আমার পক্ষে,,, ” আর বলতে পারলো না অচেনা লোকটি পকেট থেকে গান বের করে কাজীর মাথায় নিক্ষেপ করে ধরলো। “আপনাকে বেশি কথা বলা হয়নি, যা বলা হয়েছে তাই করেন” কাজী ভয়ে আর কিছু বলতে পারে নি। বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। এইদিকে মেঘা চিৎকার করছে দেখে লোকটি মেঘার গলায় গান ধরে রাখলো। এতে মেঘা ভয় পেয়ে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না করতে লাগলো। কি এক পরিস্থিতিতে পড়ে গেলো সে। এখন এই লোকটা কে বিয়ে করতে হবে তার। কাজী যখন কবুল বলতে বলে তখন মেঘা চুপ করে থাকে কোনো মতেই কবুল বলে না। লোকটি যখন মেঘাকে কিছু বলতে যাবে তখনই কোত্থেকে গুলাগুলির আওয়াজ হতে থাকে। লোকটি তাড়াতাড়ি মেঘাকে নিয়ে দাড়িয়ে যায়। কাজী আর উকিল গুলো নিজেদের প্রাণ রক্ষার জন্য সোফার নিচে লুকিয়ে পড়লো। দরজা দিয়ে আদ্রিয়ান পুরো কিলার রূপে দুই হাতে গান নিয়ে ঢুকলো। এরপর পুরো ভিলেনি স্মাইল দিয়ে মেঘা আর ওই লোকটার দিকে তাকিয়ে

“কিরে শা*লা,, তোরা আমার পিচ্ছি বউ টাকে নিয়ে এত টানাটানি করিস কেনো? আমার বউ কে আমিই এখনও ভালো ভাবে টানাটানি করতে পারি নাই। আর তোরা কি করছিস? আবার বিয়ে করাচ্ছিস? দম আছে মাইরি তোদের।”

#চলবে_কি?

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#সারপ্রাইজ_পর্ব
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম উল্লেখ করে পোস্ট করবেন)

“কিরে শা*লা,, তোরা আমার পিচ্ছি বউ টাকে নিয়ে এত টানাটানি করিস কেনো? আমার বউ কে আমিই এখনও ভালো ভাবে টানাটানি করতে পারি নাই। আর তোরা কি করছিস? আবার বিয়ে করাচ্ছিস? দম আছে মাইরি তোদের।”

আদ্রিয়ান এর এরূপ কথাতে অচেনা লোকটি ঘাবড়িয়ে গেল। কারণ আদ্রিয়ান এর তো এখানে আসার কথা না। আদ্রিয়ান কেনো কারোরই এখানের ঠিকানা পাওয়ার কথা না। এটা একটা সিক্রেট বাড়ি। যা শহর থেকে প্রায় অনেকটায় দূরে। আর প্রায় জঙ্গলের ভেতরে ওর এই গুপ্ত সাম্রাজ্য। না না এখন মেঘাকে তুলে দিলে চলবে না। তার মায়াবতি কে তার থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। তাকে কিছু করতে হবেই। তাই মেঘার গলায় বন্ধুক নিক্ষেপ করলো। এখন এটাই এক মাত্র পন্থা

“কি বললি তুই? তোর পিচ্ছি বউ? নাকি পিচ্ছি রক্ষিতা? যাকে এই তিন মাস নিজের কাছে রেখেছিস! কিন্তু কোনো বাড়তি পরিচয় ছাড়াই? আর কি যেনো বললি বউ? হাহাহাহা হাশালি।”

“চুপ কর শা*লা,, সে আমার বউ হোক আর রক্ষিতা। আমার সম্পত্তি সে। অনেক আগেই ওকে আমি নিজের নামে করে নিয়েছি। তার কৈফিয়ত আমি তোকে দেবো না। তার বোঝা পড়া এখান্তই আমার আর আমার বউয়ের মধ্যে থাকবে।”

মেঘা এতক্ষন আদ্রিয়ান কে দেখে খুশি হলেও এখন আদ্রিয়ান এর কথা পুরোটাই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান তাকে প্রথমে পিচ্ছি বউ বলাই অবাক হয়েছিল। কিন্তু যখন রক্ষিতা উচ্চারণ করলো তখন চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পড়লো। আদ্রিয়ান তাকে রক্ষিতার সাথে তুলনা করেছে। এটা ভাবতেও তার কষ্ট হচ্ছে।

“সে যাই বল তুই। আমাকে ভুলাতে পারবি না। আমি যদ্দুর জানি আজ তোর নিশির সাথে বিয়ে। তাহলে নিজের হবু বউকে রেখে এখানে কি করছিস? তুই তোর হবু বৌয়ের কাছে যা। আর আমাকে আমার হবু বৌয়ের কাছে থাকতে দে। এসেই যখন পড়েছিস তখন আমাদের বিয়েটাও দেখে যা।”

মেঘাকে নিয়ে সামনে আগাতে লাগলে পিছন থেকে কেউ সেই লোকটির বাম হাতে ( যেই হাতে বন্ধুক মেঘার গলায় ধরা ছিলো) গুলি করলো। গুলি করার সাথে সাথে মেঘা ছিটকে দূরে গিয়ে পড়তে লাগলে আদ্রিয়ান এসে ধরে ফেললো। আর মেঘা ভয়ে আদ্রিয়ান এর জ্যাকেট খামচে ধরলো। আদ্রিয়ানো মেঘাকে সোজা করে দার করিয়ে এক সাইটে জড়িয়ে ধরে সেই লোকটির দিকে ট্রিগার বাটন চেপে ধরলো। লোকটি যখন পরে গেলো তখন দুইজন বডিগার্ড এসে তাড়াতাড়ি করে ছেলে টিকে ধরলো। আর ছেলেটিও ব্যাথায় কাতরাতে থাকলো। এই বাড়ির যতো গুলো গার্ড ছিলো সব গুলোকেই কব্জা করে নিয়েছে। তাই লোকটিকে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসলো না। হয়তো আজ তার সব কিছুই ফাঁস হয়ে যাবে

আদ্রিয়ান মেঘাকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে আরাম করে বসলো। এরপর লোকটিকে সামনে সোফায় বসানোর জন্য ইশারা করলো। তখনও লোকটির মুখে রমাল বাধা। আদ্রিয়ান রুমাল টা খুলার জন্য গার্ড কে ইশারা করলো। রুমাল টা খুলার সাথে সাথে মেঘা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। ও একটু আন্দাজ করতে পেরেছিল। কিন্তু এখন দেখছে তার আন্দাজ টায় সঠিক।

“নিদ্র ভাইয়া আপনি?”

“তো কি মিস্টার নিদ্র খান! এতদিন রুমালের আড়ালে থেকে আমার ব্যাক্তিগত সম্পত্তির উপরে নজরদারি করলি। আবার আমার নাকের নিচ থেকে দুইবার কিডন্যাপও করলি। দম আছে তোর খুব। হুম হবে নাইবা কেনো পিমনির ছেলে বলে কথা। একই রক্ত বহমান আছে আমাদের শরীরে তাই এই সাহস টা দেখিয়েছিস।”

নিদ্র ধরা খেয়েও কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালো না। এতে অবশ্য আদ্রিয়ান এর তেমন কোনো যাই আসছে না। কারণ সে আগে থেকেই জানতো। শুধু সামনাসামনি আসার অপেক্ষায় ছিলো। কিন্তু মহরা মেঘাকে বানাতে হয়েছিলো।

“তো মিস্টার আদ্রিয়ান উফস দাদাভাই। তো এখন বল তোর পিচ্ছি বউ অর রক্ষিতার খবর কি করে পেলি?”

আদ্রিয়ান তা শুনে মুচকি হাসলো। এরপর পায়ের উপর পা তুলে নিদ্রর দিকে তাকিয়ে

“এই যে দেখছিস আমার পিচ্ছি বউ সে আমার ব্যাক্তিগত সম্পত্তি। আর ব্যাক্তিগত সম্পত্তিকে কি কেউ এমনিতেই উড়তে দেই। তাকে উড়ানোর জন্য যতো টুকু সীমা দেওয়া দরকার ততটুকুই দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে যাতে যেতে না পারে তার দায়িত্ব টাতো আমার তাইনা?”

আদ্রিয়ান এর এরূপ কথা শুনে নিদ্র তার কুচকানো ভ্রু আরো কুচকালো। সে জানে যে মেঘা আদ্রিয়ান এর জন্য কি! কিন্তু যখন শুনেছে যে আদ্রিয়ান তার বোন নিশুকে বিয়ে করছে। তখন তার মাথায় একটা কথাই ঘুরছিল যে মেঘাকে আদ্রিয়ান বৈধ ভাবে কখনোই হয়তো স্বীকৃতি দিবে না। রক্ষিতা হিসেবে রাখবে। কিন্তু এখানে আদ্রিয়ান বার বার পিচ্ছি বউ বলাতে ব্যাপারটা কেমন ঘেঁটে যাচ্ছে।

“তুই বার বার মেঘাকে পিচ্ছি বউ বলে সম্বোধন করছিস কেনো? আমি যতদূর জানি তোদের কখনো বিয়ে হয়নি। তো পিচ্ছি বউ না ডেকে রক্ষিতা বললেই পারিস। তোর অবশ্য কি আমার বোনকেও বিয়ে করবি আর মেঘার জীবন টাও নষ্ট করবি। সেটাতো আমি কখনো হতে দিতে পারিনা। তাই আমি মেঘাকে তুলে নিয়ে এসেছি নিজের কাছে। জানি সে আসবে না খুবই জিদ্দি মেয়ে। আর সে আমাকে ভালো ভাবে চিনেও না। একজন অপরিচিত ব্যাক্তির সাথে আসা কখনোই সে কম্পর্ট ফিল করবে না। ভেবেছি আজকে বিয়ে করে আমি মেঘাকে নিয়ে লন্ডনে চলে যাবো। সব প্ল্যান করাই ছিলো। কিন্তু তুই এসে সব ঘেঁটে দিলি।”

নিদ্রর বার বার রক্ষিতা উচ্চারণ করাতে আদ্রিয়ান বসা থেকে উঠে নিদ্রর নাক বরাবর ঘুষি দিলো। এতে নিদ্রও সোফা থেকে ফ্লোরে পড়ে গেলো।

“কাবিননামায় স্বাক্ষর করা এক মাত্র বউ আমার। তাও তার আব্বুর থেকে পারমিশন নিয়ে বউ বানিয়েছি। এখন কি তোদের সবাই কে ঢোল পিটিয়ে বলতে হবে যে আদ্রিয়ান বিয়ে করেছে। তোদের কি! তখন আবার বলবি বাল্য বিবাহ করেছি। এরপর আমার বউ টাকে নিয়ে আবার টানাটানি করতী! এমনিতেই আমার বউ টার ঘাড়ের রগ একটা বাকা। যে যা বলে তার উল্টোটাই বুঝে। এটাকে এখনও ঠিক করতে পারলাম না আর তুই কোত্থেকে টপকে এসে আমার বউ টাকে নিয়ে ভ্যানিশ হয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছিস। এটা তো আমি আদ্রিয়ান থাকতে কখনোই হতে দিতাম না। তাইনা ভাই আমার??”

বলেই আদ্রিয়ান আবার গিয়ে মেঘার পাশে গেসে বসলো। মেঘা এতক্ষন আদ্রিয়ান এর কথা শুনছিল। কিন্তু যখন শুনলো আদ্রিয়ান আর মেঘার আগে থেকে বিয়ে হয়েছে তখন থেকেই বিস্ময়ে বাক রুদ্য হয়ে গেলো। আবার এটাও বলছে যে তার আব্বু নিজে পারমিশন দিয়েছে। কই তার আব্বু তো এরূপ কোনো কথা তাকে বলেনি। সব কিছুই কেমন গোলপাক খাচ্ছে। এতো রহস্য কেনো সব কিছু। কিছুই মাথার মধ্যে ঢুকছে না তার উপর সব কিছু ওই ছোট্ট মাথায় হ্যান্ডেল করতে পারলো না। তাই আদ্রিয়ান এর উপর ঢলে পড়লো। আর আদ্রিয়ানো বোধয় এই অপেক্ষায় ছিল। কারণ এখন যা হতে যাচ্ছে তা তার জান দেখতে পারবে না। তাই এতক্ষন বসে বসে সময় নষ্ট করছিলো এই বা*স্টার টার সাথে। না হলে কখন যে একে উপরে পাঠিয়ে দিতো। তার সাথে আরো অনেক কিছুই স্পষ্ট হওয়ার আছে। এর আগে এটাকে মারা যাবে না। মেঘার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো আর মেঘাকে কোলে করে উঠিয়ে ঐখানে একটি রুমে শুইয়ে দিয়ে আবার আসলো। এরপর নিদ্রর দিকে রক্তরঞ্জিত চোখে তাকিয়ে কাও কে ভেতরে আসার জন্য বললো।

#চলবে_কি?