নেশাময় ভালোবাসার আসক্তি পর্ব-৭+৮

0
113

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-৭
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম দিয়ে পোস্ট করবেন)

আভিজাত্যে ঘেরা বেড রুমে এক এলোকেশী নারী শুয়ে আছে। গভীর ঘুমে মগ্ন সে। সব কিছুই একদম নিরব যেনো নারীটির ঘুমের বেঘাত না ঘটে। তারই ঘুমের মাধুর্যের প্রতি চেয়ে আছে এক তৃষ্ণার্ত প্রেমিক পুরুষ। যেনো অনেক দিন না দেখার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। হালকা নীল বাতির সংমিশ্রণে প্রেমিক পুরুষ টির চোখ গুলো খুবই নেশালো লাগছে। যেনো ওই চোখের নেশা ধারায় এলোকেশী নারীটিকে সম্মোহন করবে। হঠাৎ করেই দেখার দৃষ্টি সরল হলো। ক্ষিপ্ত মান হলো ষষ্ট ইন্দ্রিয়।

কি স্নিগ্ধ পরী? আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছিলে! কি এত সহজ! অবশ্য ক্রেডিট তো শশুর আব্বু কে দিতে হয়। উনি যদি একটু ভুল না করতো তাহলে আজকে তুমি আমার এত কাছে থাকতে না। আর তোমার বাপ তোমাকে যেখানেই লোকাক না কেনো আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই। কিন্তু তোমারও ভুল আছে তুমি অন্যত্রে যাওয়ার সাহস কিভাবে পেলে? এর শাস্তি তো তোমাকে পেতে হবে সোনা।

বলেই মেঘার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। মাথার হিজাব টা আগেই খুলে ফেলা হয়েছে। তানাহলে তার স্নিগ্ধ পরীর ঘুমাতে কষ্ট হবে। এরপর সামনে ছোটো ছোটো চুল গুলো কানের এক পাশে গুজে দিয়ে আলতো করে কপালে তার ওই উষ্ণ ঠোঁটের গভীর স্পর্শ দিলো। কিছু ক্ষন চেয়ে থেকে সোফাতে গিয়ে ল্যাপটপে কাজ করতে লাগলো।আজ অনেক ধকল গিয়েছে তার জন্য কিছু কাজ পেন্ডিং ছিলো। আপাতত কাজ গুলো শেষ করতে হবে। যেহেতু অনেক ক্ষন হয়েছে মেঘাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়ানোর । হয়তো কিছু ক্ষন পর ঘুমের নিশা টা কেটে যাবে।

প্রায় দুই ঘণ্টা কাজ করার পর হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত দশ টা বাজে। এরপর মেঘার দিকে তাকিয়ে দেখলো এখনও ঘুমোচ্ছে মেঘা। এরপর ল্যাপটপ টা শাট ডাউন করে মেঘার কাছে যেতে লাগলে হঠাৎ করেই কল আসলো। গুরুত্বপূর্ণ কল দেখে রিসিভ করে বারান্দায় গেলো।

………………………………………….……………..………

মাথাটা হঠাৎ জিম জিম করে উঠলো। ঘুমটা যখন হালকা হয়ে আসলো তখন আস্তে আস্তে চোখ মেলল। কিন্তু প্রথমেই চোখের সামনে সব ঝাপসা লাগলো। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো। পরে আবার খুললে সব কিছু আস্তে আস্তে পরিষ্কার লাগতে শুরু করলো।

কি ব্যাপার এই রুম টা কার? পরিচিত মনে হচ্ছে, একটু ভেবে চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে ফেললো। এটা তো সেই ভয়ংকর লোকটার রুম। আমি এখানে কেনো? এক মিনিট আমি তো গাড়িতে ছিলাম। আব্বু তো আমাকে সিলেটের গাড়িতে তুলে দিয়েছিল। এরপর তো !! না পরে কি হয়েছিলো? ওফ মনে পড়ছে না কেনো? নিশ্চই এই লোকটা কিছু করেছে । আব্বু হয়তো আমার খবর না পেয়ে চিন্তা করছে। না না এই লোকটার আশে পাশে থাকা যাবে না। লোকটা মনে হয় এখন নেই। পালাতে হবে এখনই। হ্যা সেটাই করি

বলেই তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠেই দরজা খুলতে গেলে পিছন থেকে কেউ হাত চেপে ধরলো। আকস্মিক ভাবে ধরাতে মেঘা ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠলে সাথে অপর হাত দিয়ে আদ্রিয়ান মেঘার মুখ চেপে ধরে মেঘাকে দেওয়ালে পিট ঠেকালো। এরপর আদ্রিয়ান মেঘার দিকে ঝুকলে ভয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো। মনে হয় এখনই অজ্ঞান হবে হবে অবস্থা।

এই মেয়ে কই যাচ্ছিলে? আমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য বাপ মেয়ে মিলে খেল শুরু করছো? এই মেয়ে এই তোমাকে আমি কি বলেছিলাম, যে তুমি সব সময় আমার নজর বন্দী হয়ে থাকবে তাহলে কোন সাহসে অন্য কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে। জানের ভয় নেই কি ?? বলো,,,

বিকট চিৎকার করে উঠলো আদ্রিয়ান। আর সেই চিৎকারে মেঘা এতটাই ভয় পেয়েছে যে বড়ো বড়ো করে নিশ্বাস নিতে লাগলো। হঠাৎ করেই নিশ্বাস খুব দ্রুত হতে লাগলো। মেঘা নিজের ভর ছেড়ে দিলো। আদ্রিয়ান হঠাৎ করেই ভয় পেয়ে গেলো। এমন করছে কেনো তার স্নিগ্ধ পরী

এই এই মেয়ে, এই কি হয়েছে। এই কি হলো সোনা। এমন করছো কেনো পরী? দেখো আমি তো এই ভাবে বলতে চাইনি জান। আমার দিকে তাকাও। এই সোনা এই

বলেই মেঘাকে তাড়াতাড়ি জড়িয়ে ধরে পিট মালিশ করতে লাগলো। এরপর হঠাৎ CPR এর কথা মনে পড়লো। এই ভাবে স্পর্শ করাটা কি ঠিক হবে। কিন্তু তার স্নিগ্ধ পরী । না না এসব ভেবে লাভ নেই ভেবেই তাড়াতাড়ি মেঘার নাক দান হাত দিয়ে চেপে ধরে আদ্রিয়ান উষ্টের সাথে মেঘার উষ্ট মিলিয়ে নিশ্বাস দিতে লাগলো। এই ভাবে কয়েক মিনিট দেওয়ার পর আস্তে আস্তে মেঘার নিশ্বাস নরমালি হলো। আদ্রিয়ান মেঘার চোখের পানি গুলো মুছে দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। এরপর ফোন নিয়ে তাদের ফ্যামিলি ডক্টরের কাছে কল দিয়ে এমার্জেন্সি আসতে বললো। যেহেতু মেঘার চুল গুলো খোলা আর শরীরের জামাটার অবস্থাও সুচনিও নয় সেহেতু গার্ড কে ডাকলো না। সে চাইনা তার স্নিগ্ধ পরিকে এই রূপে দেখুক কেউ। এরপর মেঘাকে পাজা কোলে নিয়ে বিছানায় আসতে করে রেখে তার বুকের মধ্যে মাথাটা রেখে ওড়না দিয়ে চুল গুলো হালকা ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করলো। মুটামুটি সফল হলো। এতক্ষন মেঘা এসব দেখলেও শরীর দূর্বল থাকার কারণে কিছুই বলতে পারলো না। কিন্তু লোকটা কিভাবে ওকে কিস করলো। ভাবতেই মেঘার কান্না আসলো। বিয়ের আগে পর পুরুষের ছোঁয়া লাগলো। আর সে কিছুই করতে পড়লো না। আদ্রিয়ান হাত বোলানো তে আর শরীর দূর্বল থাকায় মেঘা আদ্রিয়ান এর বুকেই বিড়াল ছানার মত ঘুমিয়ে পড়লো।
আদ্রিয়ান মেঘা কে দেখতে ব্যাস্ত তখনই দরজায় শব্দ হলো

স্যার, ডক্টর রেহানা এসেছে

ঠিক আছে ভেতরে পাঠিয়ে দাও

ওকে স্যার

এরপর ডক্টর ভেতরে ঢুকলে, আদ্রিয়ান মেঘার মাথাটা বালিশে রেখে এক পাশে দাঁড়ালো। কিছু ক্ষন ডক্টর রেহানা মেঘাকে চেক আপ করার পর

মেয়েটা কে হয় তোমার, আদ্র?

সেটা আপনার না জানলেও চলবে। কি দেখলেন? কি হয়েছে ওর?

যা দেখে বুঝলাম কোনো কিছুতে খুব ভয় পেয়েছে। মেয়েটা হয়তো খুব নাজুক টাইপের। তাই বেশি ভয় পেলে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারে না।

কিন্তু ডক্টর এর আগেও তো ভয় পেয়েছিল তখন তো এমন নিশ্বাসের সমস্যা হয়নি। জাস্ট সেন্স লেস হয়েছিলো।

দেখো এরকম পেশেন্ট রা একেক সময় একেক রকম রিয়্যাক্ট করে। হয়তো আজকের ভয় পাওয়া আগের ভয় পাওয়া একই সিচুয়েশনের না। তাই হয়তো আজ নিশ্বাসের প্রব্লেম হয়েছিলো। যেহেতু CPR করা হয়েছে তাই বড়ো বিপদ থেকে মুক্ত হয়েছে। নাহলে বড়ো কিছু হতে পারতো। আর হয়তো আজকে সারাদিন না খাওয়া তাই শরীর খুবই উইক। আমি কিছু ওষুধ দিচ্ছ আর চিন্তার কোনো কারণ নেই। ঠিক মত খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। এখন কিছু খাওয়াও। এরপর ওষুধ গুলোও দিয়ে দাও। আশা করি কালকেই ঠিক হয়ে যাবে।

হুম,,

আদ্র মেয়েটি খুবই গুরত্ব পূর্ণ তোমার জন্য। কিন্তু এতো ছোটো মেয়ে কে ভয় দেখিয়ে নয় একটু আদর যত্ন করে রাখতে হয়। মেয়েটিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটি কতটা নাজুক। এখন আসি, ভালো থেকো

বলেই ডক্টর রেহানা চলে গেলো। উনি হলেন আদ্রিয়ান দের ফ্যামিলি ডক্টর। পঁয়তাল্লিশ বছরের এক সুন্দর রমণীর। প্রায় দশ বছর ধরে আদ্রিয়ান দের সাথে পরিচয়। দাদীর ডক্টর।

আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি কর নিচে গিয়ে ফ্রিজ থেকে মাংস বের করলো।প্রায় অনেক ক্ষন পর চিকেন স্টু তৈরি করে উপরে গিয়ে সাইট টেবিলে রাখলো। এরপর মেঘা কে তোলে বুকের মধ্যে শুইয়ে খাওয়াতে লাগলো। মেঘাও ঘুমের মধ্যেই খেতে লাগলো। এরপর মেডিসিন খাইয়ে মুখ মুছিয়ে সব কিছু টেবিলে রেখে মেঘাকে ঠিক করে শুইয়ে দিলো। এরপর তাকিয়ে থাকতে থাকতে মেঘার হাত ধরেই ঘুমিয়ে পড়লো। আর এই দুই নর – নারীর সুন্দর দৃশ্য গুলো ওই আলোক সজ্জার রূপালী চাঁদ আর তারারা উপভোগ করতে লাগলো। মনে হয় যেনো তারাও আনন্দিত।

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-৮
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম দিয়ে পোস্ট করবেন)

ভোরের স্নিগ্ধ আলোড়নের প্রহরে পাখির কিচিরমিচির শব্দের মাঝেই এলোকেশী নারীর ঘুমের বেঘাত ঘটলো। হঠাৎ করেই ঘুম টা হালকা হয়ে গেলো। চোখ মেলে নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করতে লাগলো। এরপর ধীরে ধীরে সব কিছুই স্পষ্ট হলো। গতকালকের সেই রুম টাতে এখনও আছে। কিছু একটা মনে পড়তেই চোখের দৃষ্টি গুলো নোনাজলে পরিপূর্ণ হলো। নিরবেই চোখের অশ্রু গুলো ফেলতে লাগলো।

আব্বু তুমি কোথায়? আমার এখানে একদম ভালো লাগছে না। আমাকে প্লিজ নিয়ে যাওনা । আমার এখানে দম বন্ধ লাগছে। ওই লোকটা ভীষণ খারাপ আব্বু। আব্বু আমি তোমার কাছে যাবো। কোথায় তুমি আব্বু?

মনে মনে কথা গুলো বলেই মেঘা চোখের অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো।

হালকা কান্নার শব্ধ শুনতেই আদ্রিয়ান এর ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। এরপর তার স্নিগ্ধ পরীর দিকে তাকালেই কান্নার উৎস খুঁজে পাই। তাড়াতাড়ি মেঘার কাছে গিয়ে গালে হাত দিয়ে

কি হয়েছে সোনা? কান্না করছো কেনো? কোথায় কষ্ট হচ্ছে? আমাকে বলো জান! ডক্টর ডাকবো কি?

হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান এর স্পর্শ আর কথা শুনে মেঘা চমকে উঠলো। ঘৃণার চোখে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে হাত ঝাড়া মারলো। এরপর বেডের কর্নারে গিয়ে

একদম ছুবেন না আমাকে! আপনার স্পর্শ গুলোকে আমি ঘৃনা করি। জাস্ট অসহ্য লাগে। কেনো আটকে রেখেছেন আমাকে এখানে। আমি সরল সোজা হতে পারি কিন্তু বোকা না। শরীর চান তো আমার কিন্তু মরে যাবো তবুও আপনার ইচ্ছে পূরণ করবো না।

চিৎকার করে বলেই তাড়াতাড়ি দরজার দিকে দৌড় দিতে লাগলে আদ্রিয়ান হাত দিয়ে টান মেরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জোরে এক শব্ধ করে। আর তখনই মেঘা নিচে পড়ে যায়। আদ্রিয়ান আবার মেঘাকে তোলে নিজের সামনে দার করাই

কি বলেছিস তুই? তুই আমাকে ঘৃনা করিস? আমার স্পর্শ কে ঘৃনা করিস? আমি তোর শরীর চাই? আরে মেয়েদের লাইন লেগে যাই এই আদ্রিয়ান এর সাথে এক রাত কাটানোর জন্য। আর তোর মধ্যে এমন কিছু নেই যে তোর শরীর চাইবো। আমাকে কি তুই বাদশাদের কাতারে ফেলেছিস?

বলেই ঝাকাতে লাগলো মেঘা কে। মেঘা নিচের দিকে তাকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। যদি আদ্রিয়ান এর চোখের দিকে তাকাতো তাহলে হয়তো বুঝতে পারতো সে কত বড়ো ভুল করে ফেলেছে।

চুপ করে আছিস কেনো? এখন কি কথা বন্ধ হয়ে গেছে? শোন ভেবেছিলাম তোর সাথে কোনো খারাপ ব্যাবহার করবো না কিন্তু তুই খারাপ টাই চাস। আজকে থেকে তোর এই রুম থেকে বের হওয়া বন্ধ।

বলেই ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিয়ে বের হয়ে দরজা লক করে দিলো। এই দিকে মেঘা কান্না করতে লাগলো। গাল টা খুব ব্যাথা করছে তার। হাত দিয়ে ধরতে নিলে ব্যাথায় টনটন করে উঠলো। ওইভাবেই শুয়ে কান্না করতে লাগলো আর তার আব্বু কে ডাকতে লাগলো। হঠাৎ করেই নিজের মোবাইলের কথা মনে পড়লো। ঘরের চারদিকে খুঁজেও নিজের মোবাইল পেলো না। হয়তো ওই লোকটা নিয়ে গেছে। না যে করেই হোক আমাকে আব্বুর কাছে যেতে হবে।

…………………………………………………………………

আসাফ ,, আসাফ

ইয়েস্ স্ স্যার

গাড়ি বের করো

জ্বি স্যার। এখনই বের করছি

বলেই তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেরেজ থেকে গাড়ি বের করে আদ্রিয়ান এর সামনে আনলে গার্ড দরজা খুলে দেই আদ্রিয়ান উঠে বসে। গাড়ি অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দেই। আদ্রিয়ান একে বারে অফিসিয়াল ড্রেস আপ করেই বের হয়েছে। মেঘার রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিয়েছে।
আজ অফিসে ফরেইন থেকে ক্লায়েন্ট আসবে।

………………………………………………………………

কলেজে –

তন্বী ক্লাস শেষে তার এক ক্লাস মেটের সাথে কথা বলতে বলতে লাইব্রেরী তে যাচ্ছিলো । তখনই সামনের দিকে তাকিয়ে তার মুখের হাসি উধাও হয়ে গেলো।

সামনের গাছের নিচে এক সুন্দরী মেয়েকে কোমর জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে এক ছেলে। আর মেয়েটি ছেলেটির গলায় হাত দিয়ে হেসে হেসে কথা বলছে। অবশ্য ছেলেটিও মেয়েটির দিকে মুগ্ধ ভাবে চেয়ে আছে। হ্যা ছেলেটি আর কেউ নয় তন্নীর ভালোবাসার মানুষ সায়ন। তন্বীর এসব দেখে মাথা ঘুরতে লাগলো। সায়ন অবশ্য এই ভার্সিটি তেই পড়ে। অবশ্য এখানে কলেজ ভার্সিটি এক সাথে। তন্বী আস্তে আস্তে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হঠাৎ করেই সায়ন তন্বী কে দেখে ঘাবড়িয়ে গেলো।

তনু তুমি? তুমি না বললে আজ কলেজে আসবে না?

কেনো আমি আসাতে কি খুব ক্ষতি হয়ে গেলো নাকি আপনার??

আরে না তুমি আ, আ,,সলে ক্ষ,, ক,,তি হবে কেনো?

না, আপনার কেনো ক্ষতি হবে? ক্ষতি তো আমার হয়েছে। আপনাকে বিশ্বাস করে।

দেখো তনু তুমি যা ভাবছো এরকম কিছুই নেই আমাদের মধ্যে। আমার কথা,,

ব্যাস,, অনেক বলেছেন আর আমি অনেক শুনেছি। আর নয়। এখন আমি বলবো আপনি শুনবেন। এখন বুঝতে পারছি কেনো আপনাকে কল দিলে কল ওয়েটিং পেতাম। এর নমুনা আজকে দেখিয়েই দিলেন। আরে না ভুল বললাম আমি যদি সঠিক সময়ে না আসতাম তাহলে তো আপনার দুই নৌকায় পা দেওয়া দেখতামই না।

কিসব আজে বাজে কথা বলছেন আপনি? সায়ন কে এই মেয়ে?

জেরিন , আসলে ও হচ্ছে আমার এক ফ্রেন্ডের বোন। জুনিওর আর কি। ওই মাঝে মাঝে প্রব্লেম হলে আমার কাছে আসে। হয়তো কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়ছে

সে যাইহোক এগুলো তাড়াতাড়ি সলভ করো। এসব থার্ড ক্লাস মেয়েদের সাথে যে তুমি কেনো মেশো!!

আরে জেরিন ছোটো মানুষ। প্লিজ এই ভাবে বলো না। আচ্ছা তুমি ক্যান্টিনে যাও আমি আসছি

সায়ন জেরিন কে বললে জেরিন তন্নীর দিকে বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে ক্যান্টিনে চলে যাই

এবার বলো তনু কি বলবে?

এই জানু*য়া*র ওই মুখে আমার নাম একদম নিবি না। সরল সোজা মেয়ে পেয়ে যেভাবে ইচ্ছা সেই ভাবে নাচবো ভেবেছিস?

শোনো যেই মেয়েটা কে দেখলে ও হচ্ছে আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে। ছোটো বেলা থেকেই আমাদের বিয়ে ঠিক। এতো বছর লন্ডনে ছিলো। কিছুদিন আগেই দেশে ফিরেছে। আমার মাস্টার্স শেষ হলেই আমাদের বিয়ে

তাহলে এতদিন আমার সাথে কি ছিল?

ওইটা জাস্ট টাইম পাস। আর তোমার মত মেয়েদের সাথে দুইদিন প্রেম করে ফু*র্তি করা যায়। বিয়ে নয়।

আর শোনো তোমার সাথে এতদিন প্রেম করেও তোমাকে রুম ডেট এ নিতে পারিনি। যা জেরিন দুইদিনে এসেই আমার সাথে রুম ডেট এ গিয়েছে। ওর মতো তুমি তো মডার্ন না। কি দেখে যে তোমার সাথে প্রেম করেছি কে জানে। সে যাই হোক সব কিছু যখন খুলাশা হয়েই গেলো তখন নতুন করে কিছুই বলার নেই। তুমি তোমার মত খেত দেখে একটা ছেলে ঠিক করে বিয়ে করে নিও। বাই ভালো থেকো

বলেই সায়ন ক্যান্টিনের উদ্দেশ্য হাঠা দিলো। এইদিকে তন্বী যেনো এক ঘোরের মধ্যে আছে। তার সাথে থাকা ক্লাসমেট অনেক আগেই লাইব্রেরী তে চলে গেছে। তন্বী সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে কলেজ ফেলে অনেকটায় দূরে চলে আসলো কিন্তু সেই বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই। যখনই রাস্তার মাঝখানে চলে গেছে তখনই অপর দিক থেকে দ্রুত বাহী এক ট্রাক আসতে লাগলে তখনই কেউ টান দিয়ে তার বুকে ফেললো

………………………………………………………………….

আদ্রিয়ান কিছুক্ষন আগেই মিটিং রুম থেকে বের হয়ে নিজের কেবিনে আসলো। এরপর নিজের কাজ করতে লাগলো। কখন যে বিকেল হয়ে গেলো আর খবর নেই। হঠাৎ করে আদ্রিয়ান এর মেঘার কথা মনে পড়লো। তাড়াতাড়ি বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন করলো।ঐখানের এক সার্ভেন্ট ফোন পিক করলো

তোমাদের মেম কি করছে? খাবার খেয়েছে?

আ,,,স,,,,লে স্যার,, না মানে

কি আসলে, মানে করছো? আই নীড আনসার।

জ্বি স্যার, মেম কে খাবারের জন্য রুমে গিয়েছিলাম। কিন্তু মেম খাবার গুলো খাইনি।

হোয়াট,,, আর সেই খবর এখন বলছো? যত্তসব ইরেছপঞ্চিবল লোকদের রেখেছি। তুমি এখনই খাবার রেডি করো। অবশ্যই তোমার মেমের পছন্দের খাবার গুলো করবে। আমি কিছুক্ষন পর আসছি

ঠি,,ক,, আছে স্যার

আদ্রিয়ান ফোন কেটে ল্যাপটপ শাট ডাউন করে বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। নিচে এসে গাড়িতে উঠলে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো। অবশ্য তার গাড়ির পিছনে গার্ড দের গাড়িও আছে। আদ্রিয়ান নিজের টাই টা হালকা লুজ করে কপালে হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে

সকালের ডোজে হয়তো কম কাজ হয়েছে। আবার আমাকে কঠোর করতে চাইছো? যতো ভাবি তোমার সাথে নরম ভাবে ব্যবহার করবো কিন্তু না তোমার কঠোর স্বভাব পছন্দ। তোমার স্নিগ্ধ রূপকে আমার পছন্দ, কঠোর রূপকে নয় জান।

” আমি নাহয় তোমার জন্য কঠোর হবো
তুমি নাহয় আমার জন্য স্নিগ্ধ পরী হয়ে থেকো ”

…………………………………………………………………

আসাফ একটু কাজের উদ্দেশে এক জায়গায় এসেছিল। তখনই দূর থেকে দেখলো একটি মেয়ে রাস্তার কিনারা ধরে হাঁটছে। ঢাকা শহরের রাস্তা মানেই গাড়ির সমাহার। মেয়েটির কি কোনো ভয় দর নেই নাকি। এসব বলতে বলতেই দেখলো মেয়েটি রাস্তার মাঝ খানে চলে গেছে। তখনই একটি ট্রাক পিছন দিক দিয়েই দ্রুত গামী হয়ে আসছে, আসাফ দৌড়ে মেয়েটিকে তাড়াতাড়ি হাত ধরে টান দিলে তার বুকের মধ্যে পড়ে। আসাফ খুবই ভয় পেয়েছিল যায় হোক মেয়েটিকে বাঁচাতে পারলো। কিন্তু এখন মেয়েটির উপর খুব রাগ হচ্ছে তাই মেয়েটিকে বুক থেকে টেনে মুখো মুখী করলো তখনই মেয়েটিকে দেখে আসাফ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে

আরে আপনি সেই ঝগড়ুটে মেয়েটা না? আর কার সাথে ঝগড়া করে এসে গাড়ির নিচে পড়তে চাইছেন? আরে কি হলো কথা বলছেন না কেনো?

বলেই তন্বীকে ঝাকাতে লাগলো। ঝাকানুর ফলে সে বাস্তবে ফিরে আসলো। আর বোঝার চেষ্টা করলো সে কোথায় আছে? এরপর সামনের ব্যাক্তিটি কে দেখে হাত ঝাড়া দিয়ে দূরে গিয়ে দাড়ালো

আপনি আমাকে টাচ করেছেন কেনো? মেয়ে দেখলেই কি গায়ে হাত দিতে ইচ্ছে করে নাকি?

ও হেলো মেডাম,, আপনি এতো সুন্দর না যে আপনাকে টাচ করার জন্য আমার হাত নিশপিশ করবে? এক তো বাঁচালাম কোথায় ধন্যবাদ দিবে তা নই ঝগড়া করার ধান্দা।

এই এই আপনি ঝগড়ুটে কাকে বলছেন?

এখানে কি আপনাকে ছাড়া অন্য কাও কে দেখতে পারছেন? না তো? তাহলে যে দাড়িয়ে আছে তাকেই বলছি

দেখুন,,,

কি দেখবো? দেখুন আমি নিতান্তই ভদ্র ছেলে তাই অভদ্র কথা বলবেন না

আপনি কিন্তু মাত্রা ছড়াচ্ছেন।

আমি কি মাত্রা ছাড়াবো আপনি যা বলছেন তারই তো উত্তর দিচ্ছি

তখনই এক লোক এসে সামনে দাড়ালো

এই মেয়ে তোমার কি কোনো হোস নেই? এখনই তো ট্রাকের নিচে পড়তে। ভাগ্যিস ছেলেটি এসে বাঁচালো। নয়তো কোনো অঘটন ঘটলে কি হতো? আজ কাল প্রজন্ম দের যে কি হয়েছে কে জানে। কোনো সতর্কতা অবলম্বন করে না। শোনো পরের বার থেকে সাবধানে চলা ফেরা করবে।

বলেই লোকটি চলে গেলো। আর তন্বী অশ্রু যুক্ত চোখে আসাফ এর দিকে তাকালো। যদি আজকে লোকটি তাকে ঠিক সময়ে না বাচাতো তাহলে কি হতো?

কি মেডাম এখন বুঝছেন তো আপনাকে আমি ইচ্ছেকৃত ছুঁই নি। আর আপনি তো ঝগড়া করেই যাচ্ছিলেন

তন্বী আসাফ এর দিকে তাকিয়ে একটি রিক্সা ডেকে উঠে নিজ গন্তব্যে যাওয়া শুরু করলো। আর এই দিকে আসাফ বোকার মত তাকিয়ে থাকলো

কি হলো ব্যাপার টা? মেয়েটা না কোনো থ্যাংক ইউ আর না কোনো সরি বললো। উল্টো কোনো কথা না বলেই রিক্সা তে উঠে চলে গেলো? আজকাল করো উপকার করতে নেই। ধুর

বলেই আসাফও নিজের কাজের উদ্দেশ্য গেলো

#চলবে_কি?