নেশাময় ভালোবাসার আসক্তি পর্ব-৫+৬

0
108

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-৫ (প্রথম পরিচ্ছেদ)
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

রৌদ্র প্রোজ্জ্বল দিনে তাপ টা একটু বেশি হয় যার জন্য গরমে অবস্থা অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। মেঘারও ঠিক সেই অবস্থা। কলেজ ছুটি হওয়ার নিদারুণ বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিলো। তন্বী আজ কলেজে আসেনি। যার জন্য একা একা পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। এমনিতেই সে বিরক্ত তন্বী না আসার কারণে এর উপর আবার ঘেমে টেমে নাজেহাল অবস্থা। কি এক বিরক্তিকর ব্যাপার। একটা রিকশাও পাচ্ছে না, এইসব ভাবতে ভাবতে হাঁটছিলো তখনই দুইটি গাড়ি সাইট হয়ে দাড়ালো মেঘা হঠাৎ করেই ভয় পেয়ে গেলো। এই ভাবে কি গাড়ি থামাতে হয় নাকি? মনে হয় কোন প্রধানমন্ত্রী আসছে যেনো রাস্তা কিনে নিছে। যত্তসব আজাইরা পাবলিক এই বলেই সে সামনে আগাতে থাকলো। হঠাৎ করেই কালো কোট পরিহিত কোনো ব্যাক্তির বুকে ধাক্কা খেলো আর কড়া ফারপিউমের গন্ধ নাসিক্য ঠেকলো। এরপর মাথা উচু করে ব্যাক্তিটি কে দেখে ভয় এ ঢুক গিললো

তোমাকে এত বার মানা করা সত্তেও তুমি গাড়িতে না উঠে একা একা বাসায় যাওয়ার দুঃসাহস কিভাবে করো? কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলাম বলে অবাধ্য হওয়ার কাজটা করতে পারলে? বড্ড পাখনা গজিয়েছে তাইনা? এই মেয়ে তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি, পা ভেঙ্গে দিলে তবেই তোমার দস্যিপনা শেষ হবে

রাগে গজগজ করতে করতে হালকা চিৎকার করে বললো আদ্রিয়ান

মেঘা ভয়ে মাথা নিচু করে হাত কচলাতে থাকলো। এই লোকটা কে ভীষণ ভয় পাই । কিন্তু তার স্বাধীনতা হস্তক্ষেপ করাটা সে মোটেই মেনে নিতে পারে নি তাই অবাধ্য হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে লোকটা সত্যিই তার সুন্দর পা দুটো ভেঙ্গে দিবে

কোনো সিনক্রিয়েট ছাড়া গাড়িতে উঠবে। আমি এক কথা বার বার বলি না

মেঘা ভয়ে ভয়ে লোকটার দিকে তাকালো । আদ্রিয়ান সময় নষ্ট না করে মেঘার হাত ধরে গাড়ির দরজা খুলে সুন্দর করে বসিয়ে দিলো এরপর অপর দিকে গিয়ে সেও বসে দরজা লাগিয়ে কাচ উঠিয়ে দিলো

ড্রাইভার কাকা এসি টা অন করে দাও। আর তুমি হিজাব টা হালকা লুজ করে পরো। এমনিতেই ছোট্ট একটা মেয়ে হিজাব পড়েছে একদম বুড়ি দের মতো। আপাতত হালকা খুলে রিল্যাক্স হয়ে বসো

মেঘাও হিজাব হালকা লোজ করে ঠিক হয়ে বসলো। তা নাহলে আবার এই লোক কি করে বসে কে জানে?

এই যে ভাবনা রাণী এত ভাবতে হবে না। সময় হয়েছে এখন শুধু আমাকে নিয়ে ভাবার। অন্য কিছু যাতে তোমার মাথায় না আসে সেই ব্যবস্থা ও শীগ্রই করবো। তাই যা যা বলবো সব যাতে অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়, ঠিক আছে?

আমি কেনো আপনার সব কথা শুনবো? কে হোন আপনি আমার? কেউ না। তাই আমার লাইফ আমি যেভাবে ইচ্ছে হ্যান্ডেল করবো। আপনাকে বলতে হবে না। বুঝেছেন?

ভা,,, মেয়ের দেখি ভালো বুলি ফুটেছে? আর আমি কে সেটা যেহেতু জিজ্ঞেস করেছ তখন এর উত্তর দেওয়ার সময় টাও তাড়াতাড়ি হবে। ভেবেছিলাম তোমাকে কিছুদিন টাইম দেবো কিন্তু এখন সেটা দেওয়ার সুযোগ দেখছি তুমি নিজেই বন্ধ করে দিয়েছো। তৈরি থেকো আজ তোমার জন্য বড় সারপ্রাইজ রেডী থাকছে। আর খুব শীগ্রই বন্ধ পিঞ্জরে বন্ধী হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও। এইবার কোনো ছাড় নেই তোমার

বলেই বাকা হেঁসে সোজা হয়ে বসলো। এতক্ষন আদ্রিয়ান মেঘার খুব কাছাকাছি ছিলো বলেই নিশ্বাস নিতে পারছিলো না। কিন্তু সব কথাই সে শুনেছে তবুও সে কথা গুলো ধরতে পারে নি

ছোটো মাথায় এত প্রেসার দেওয়ার দরকার নেই।

মেঘার বাড়ির সামনে চলে এসেছে আদ্রিয়ান এর গাড়ি

এখন বাসায় গিয়ে গোসল করে খেয়ে ঘুমাবে!! কারণ পরে রাত টাও নির্ঘুম হবে। কি হলো যাও

হালকা চিৎকার করার ফলে তাড়াতাড়ি বের হয়ে বাসায় চলে গেলো। এইদিকে আদ্রিয়ান

তোমাকে আর দূরে রাখা যাবে না স্নিগ্ধ পরী। বন্ধ পিঞ্জরে জলদি আনতে হবে। আমার প্রশান্তি যে তুমি। আমার নির্ঘুম রাতের সঙ্গী তুমি।

বলেই গাড়ির কাচ তোলে নিজের কাজের গন্তব্যে গেলো

#চলবে_কি?

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-৫ (দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

আমি এত পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না, আমাকে অবশ্যই জানা আছে আপনার। নতুন করে আরো একবার পরিচয় দিয়ে নেই আমি আদ্রিয়ান চৌধুরী। একজন সফল বিজনেসমেন। মা বাবা নেই । আমার মা বাবার অভাব আমার দাদীমা পূরণ করেছে। শশুর আব্বু আমি আপনার মেয়ে কে বিয়ে করতে চাই। আমার কখনো মেয়েলি কোনো কেস নেই , আপনার মেয়েকে সুখে রাখার মত আমার যথেষ্ট আছে। তাই না করার কোনো কারণ দেখছি না।

সামনা সামনি বসে আছেন আদ্রিয়ান আর আলতাফ মাহমুদ। কিছু ক্ষন আগেই মেঘা দের বাসায় প্রায় ২০ জন বডিগার্ড নিয়ে এসেছে। দাদীমা কে আনতে চেয়েছিল। কিন্তু অসুস্থ হাওয়ার কারণে আদ্রিয়ান নিয়ে আসে নি। এখানে সে বিয়ের প্রপোজাল দিয়ে এসেছে। অবশ্য এটাকে প্রপোজাল বললে ভুল হবে মনে হচ্ছে বিয়ে করতে পুরো বর যাত্রী নিয়ে এসেছে।

শোনো বাবা আমরা তোমাদের মত এত বড় লোক নয় যে সম্বন্ধ করবো। আর আমার মেয়ে যথেষ্ট ছোটো। আর বাইরের দুনিয়ার মত আমার মেয়ে এতটা বুঝদার নয়। অনেক টা নরম স্বভাবের। তাই সংসার করার মত এখনও ওই বুঝ টা হয়নি।

অবুঝ বলেই এখনই নিতে চাইছি শশুর আব্বু। কারণ দুনিয়ার পরিস্থিতি বিষয়ে আপনার ধারণা আছে। আর আপনার মেয়ে এতটাও ছোটো না যে বিয়ের উপযুক্ত হয়নি।আর আমি যা চাই তা নিয়েই ক্ষান্ত হয়। আর না শব্দ আমার একদম পছন্দ নয়। তাই যা চাইছি তা যদি কোনো ঝামেলা ছাড়াই করতে চান ভালো, নয়তো অন্য পথ অবলম্বন করতে হবে

বলেই আদ্রিয়ান বাকা হাসলো। আর হাতের রিভলবার নিয়ে ঘুরাতে লাগলো। আলতাফ মনে মনে সামান্য চিন্তা গ্রস্থ হলেও নিজেকে সামনে থেকে কঠোর রাখলো।

শোনো বাবা আমি তোমাকে ছেলের মত ভাবি। কিন্তু তোমার পেশা কে আমি ভয় পাই। ঝুঁকিপূর্ণ পেশা নিয়ে তুমি যুদ্ধ করছো। তোমার জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখন মেয়ে কে তোমার কাছে দিলে সেও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। তাই তুমি তোমার মত ফিরিয়ে নিয়ে যাও বাবা। আর আমার মেয়ের পিছু ছেড়ে দাও। আমি জানি আমার মেয়েকে তুমি নজরে নজরে রাখছো। চুপ ছিলাম আমি। কারণ আমার সামর্থ নেই যে তোমার সাথে লড়াই করবো। আমি লড়াই করতেও চাইছি না। কারণ অনেক বছর আগেই নিজের স্ত্রী সন্তানের কথা ভেবেই সেই পথ ছেড়েছি। তাই চুপ চাপ চলে গেলে অনেক খুশি হব বাবা।

আদ্রিয়ান রাগে ফুঁসছে। কিন্তু কিছু একটা ভেবে বাকা হাসলো।

ঠিক আছে শশুর আব্বু আমি এখনই কোনো ঝামেলা করতে চাই না। সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠাতে চেয়েছিলাম। যখন উঠলো না তখন আঙ্গুল টা না হয় সময় সাপেক্ষে বাকাবো। এখন আমি যাচ্ছি। মেয়ে কে বিদায় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন। ভেবেছিলাম শান্ত ভাবে সব করবো। কিন্তু আপনি যখন ঝামেলা চাইছেন তখন ঝামেলা হোক। আসি শশুর আব্বু

বলেই আদ্রিয়ান বের হয়ে গেলো। এই দিকে আলতাফ চিন্তায় পড়ে গেল। কারণ আদ্রিয়ান কে সে খুব ভালো করেই চিনে। আপাতত মেঘা কে বাইরে বের হতে দেওয়া যাবে না। সময় সাপেক্ষে নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে দিতে হবে মেয়েকে। এটা ভেবেই বাম পাশের সূক্ষ্ম হৃদপিন্ডে ব্যাথা অনুভূত হলো। কখনোই মেয়েকে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখেনি। এখন পরিস্থিতির জন্য নিজের কলিজা কে দূরে পাঠাতে হবে ভেবেই মন টা হুহু করে উঠলো। এই কলিজা কে নিয়েই তো তার পুরো দুনিয়া। না নিজেকে শক্ত করতে হবে। দুর্বল হলে চলবে না । মেয়ের ভালোর জন্য তাকে কঠোর হতেই হবে। এসব ভাবতে ভাবতে দরজা বন্ধ করলো। মেঘা কলেজে গিয়েছে। আজ অফিস ছুটি ছিলো। তাই বাসায় ছিল।

………………………………….………………………………

আসাফ কথা বলতে বলতে মেঘার কলেজের গেট থেকে বের হচ্ছিল ওমনিই কারো সাথে সজোরে ধাক্কা খেলো। অপজিট ব্যাক্তিটি কে ধরার আগেই চিৎপটাং

কোন উগান্ডা রে? আমার কোমর টা শেষ মনে হয়। ও আম্মু তোমার মেয়ের বিয়ের আগেই কোমর ভেঙ্গে বসে আছে গো!! তোমার মেয়ের বিয়ে হবে না গো!

আরে আরে কি করছেন এই ভাবে চিৎকার করছেন কেনো? আপনিই তো আমাকে ধাক্কা মারলেন! আর তারপর পরে গেলেন।এখন চিৎকার করে কি গণপিটুনি দেওয়ার ফন্দি আটছেন নাকি?

তন্বী নিচে থেকে উঠে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে

কি….??? এত বড় কথা!! আমি চিৎকার করছি? এক তো আমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা মারলেন আবার বলছেন আমি ধাক্কা দিছি! আপনি কোন ঋত্বিক রওশন আসছেন যে আমি আপনাকে ধাক্কা দেবো?

দেখুন আমি কিন্তু ভালো ভাবে আপনার সাথে কথা বলছি। আপনি কিন্তু সিনক্রিয়েট করছেন। জানেন আমার বস কে? বসের নাম শুনলে আপনার চিৎকার একদম বন্ধ হয়ে যাবে

আপনার বস যেই হোক আমি ভয় পাই না। এই তন্বী অন্যায় কে কক্ষনোই সমর্থন করে নি আর করবেও না

আপনি কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? এখানে অন্যায় কি হলো সেটাই তো বুঝলাম না!!

এত বড়ো একটা অন্যায় করে বলছে অন্যায় কি হলো সেটা বুঝলো না। আহা কচি খোকা না?? পিটারে দুধ খান বুঝি

দেখুন একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না । অনেক ক্ষন ধরে আপনার অহেতুক কথা সহ্য করেছি নিতান্তই আমি একজন ভদ্র ছেলে নাহলে আপনার অভদ্র তার খেসারত দিতাম আমি

আমি অভদ্র?? তুই অভদ্র, তোর গার্লফ্রেন্ড অভদ্র তোর বউ অভদ্র

হে রব তুমি কোন পাগলের পাল্লায় ফেলছ? আজ যে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছি কে জানে? এমনিতেই বসের টেনশন নিয়ে বাঁচি না। এখন আরেক উঠকো ঝামেলা। উফফ

এই এই ফিস ফিস করে কি বলছেন? সাহস থাকলে বড়ো করে বলেন ?

দেখুন ফালতু টপিক নিয়ে আর কথা বলতে চাইছি না। আর সেই ফালতু সময়ও আমার নেই। এই নেন এটা দিয়ে ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিয়েন।

কিছু টাকা তন্বীর হাতে গুঁজে দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলো। আর এই দিকে তন্বী রাগে ফুঁসছে। কত্ত বড়ো বেয়া__দব আমাকে টাকা দেই! আমি কি ভিখারী নাকি। ওওওওফ্ আম্মু তোমার মেয়েকে ভিখারী বানিয়ে দিলো। আরেকদিন এই বেয়া__দব লোকের দেখা পাই তোরে যদি আমি নাকানি চুবানি না খাওয়াই তাহলে আমার নামও তন্বী নয়

বলেই কলেজে যেতে লাগলো। এমনিতেই মনটা ভালো নেই। মেঘা দুই দিন ধরে কলেজে আসছে না। ফোনও ধরছে না। না আজকে বাসায় গিয়ে খবর নিতে হবে।

মেঘু বেবি আই মিস ইউ। তুম কাহা হোন দেখো না মেরে কোমর তো গেই উপড়ছে উগান্ডা সেতান হাজির হোয়া। তুম জলদি আও না বেবি। আ অ্যা অ্যা অ্যা……

#চলবে_কি ?

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-৬
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম দিয়ে পোস্ট করবেন)

আব্বু তুমি আমাকে কলেজে কেনো যেতে দিচ্ছ না? জানোই তো কত ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস মিস করছি আমি। টিউশন করতেও দিচ্ছ না। কি হয়েছে আব্বু তোমার? তুমি তো এমন ছিলে না আব্বু

মামনি কোনো কারণে নয়। আসলে অফিসের ছুটি চলছে তো তাই আম্মু কে আমার সাথে রেখে দিয়েছি । আব্বু একা একা বাসায় বোর হবো তো মামনি।

আব্বু তোমার শরীর ঠিক আছে তো? তোমার কথা গুলো আমার ঠিক মনে হচ্ছে না? আমি কিন্তু অতটা অবুঝ নয় আব্বু

তাই! আমার আম্মু টা অনেক বড়ো হয়ে গেছে। তাহলে বিয়ে দিয়ে দেই আম্মু কে। কি বলো আম্মু? ছেলে দেখা শুরু করি?

আব্বু তুমিও না। আচ্ছা এখন বলো কি নাকি ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে তোমার?

আম্মু আমি কিছুদিনের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছি। অফিস থেকেই পাঠাচ্ছে। ঐখানে কাজ সারতে আমার পনেরো বা বিশ দিন সময় লাগতে পারে। তোমাকে তো একা রাখা যাবে না এখানে তাই তোমাকে কিছুদিনের জন্য আমার এক দূর সম্পর্কে আত্মীয়ের কাছে দিয়ে আসবো। কালকে সকালেই বের হবো। তুমি তাড়াতাড়ি রেডী থাকবে ঠিক আছে। তোমার প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো গুছিয়ে রেখো

কিন্তু আব্বু হঠাৎ করে এইভাবে অন্য জায়গায় কেনো পাঠাবে? আমি তো তন্নীর বাসাতেও থাকতে পারতাম।

আম্মু, আব্বু কে ভরসা করো তো?

এই পৃথিবীতে সব চেয়ে যাকে বেশি ভরসা করি সে হচ্ছো তুমি আব্বু। এই কথা কেনো উঠছে আব্বু

যখন এতো ভরসা করো, তখন আব্বুর সিদ্ধান্তে প্রশ্ন কেনো উঠাচ্ছো?

তাহলে আব্বু আমি ক্লাস কিভাবে করবো?

ঐসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। এসে পড়ার নোট গুলো তন্বী থেকে সংগ্রহ করিও। আর আমি কলেজে কথা বলে রাখবো

আচ্ছা আব্বু।

ঠিক আছে আমি একটু বের হচ্ছি। দরজা টা ভালো ভাবে লাগিয়ে দাও

মেঘা মাথা নাড়িয়ে তার আব্বুকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করলো। এরপর নিজের রুমে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো ঘুছাতে লাগলো।

……………………………………………….….………….

মে আই কামিং, স্যার?

ইয়েস কামিং,,,

স্যার মেমের বিষয়ে কিছু ইনফরমেশন নিয়ে এসেছি

আদ্রিয়ান ল্যাপটপ থেকে নজর সরিয়ে আসাফ এর দিকে তাকালো। এরপর ইশারা করলো বলতে

মেম গত দুইদিন ধরে কলেজে যাইনি স্যার। মেম কখনোই ক্লাস মিস করে না স্যার। শত কষ্ট হলেও মেম ক্লাস কন্টিনিউ করে।

ঠিক আছে। তুমি তোমার মেমের বাসায় নজর রাখো। গার্ড লাগলে আরো নিয়ে যাও। সন্দেহ জনক কোনো বিষয় দেখলেই আমাকে সাথে সাথে জানাবে।

ঠিক আছে স্যার

আচ্ছা এখন নিজের কাজে যাও

আসাফ আদ্রিয়ান এর থেকে বিদায় নিয়ে নিজের কাজের গন্তব্য চলে গেলো। আর আদ্রিয়ান পেপার ওয়েট টা ঘুরাতে লাগল। এরপর কিছু একটা ভেবে

শশুর আব্বু আপনার সাথে আমার জমবে ভালো। আমি তো খেলা শুরু করিনি এখনও কিন্তু আপনি খুব তাড়াতাড়ি মাঠে নেমে গেলেন খেলার জন্য? উফস ভুল হয়ে গেলো। আপনি গুরুজন তাই আপনি আগে নামবেন আমি নাহয় পরেই নামি। আমিও দেখতে চাই আপনি একা মাঠে কত টুকু খেলতে পারেন। এরপর না হয় আমিও আপনাকে সংঘ দেবো।

বলেই আদ্রিয়ান বাকা হাসলো। হঠাৎ করেই চোখের মনি গুলো রক্ত রঞ্জিত রূপ ধারণ করলো। পেপার ওয়েট টা মাটিতে জোড়ে আছড়ে ফেললো। আর ওমনিই চারিদিকে কাচের ছড়াছড়ি রূপ ধারণ করলো। আদ্রিয়ান নিজেকে একটু শান্ত রেখে তার বিশেষ বডিগার্ড কে ফোন লাগিয়ে কিছুক্ষন কথা বলে রেখে দিল

শশুর আব্বু। মাঠে যখন নেমেছেন তখন বেশিক্ষণ অপেক্ষা করাবো না আপনাকে। এখন শুধু আপনার পরের খেলার পদক্ষেপ উঠানুর বাকি। পরের খেলাটা আমি খেলে দেখাবো।আর জিতবো তো আমিই।

…………………………………………………………………

মেঘা কিছু কাজ করছিলো তখনই বাসার দরজার শব্ধ হলো। মনে হয় আব্বু এসেছে।তাড়াতাড়ি দরজা খুলতে গেলো।দরজা খুলেই অবাক হয়ে গেলো

কিরে তুই?

কেনো আসতে পারিনা বুঝি? মেঘূ বেবি আই মিস ইউ

বলেই তন্বী মেঘাকে জড়িয়ে ধরলো

তুই দুইদিন কলেজে যাস নি কেনো??তুই তো ক্লাস মিস দিস না! জানিস কত্ত মিস করছি? আর ফোন টাও তো বন্ধ তোর? কি হয়েছে বলতো?

তেমন কিছু নারে। এমনিতেই আব্বুর অফিস ছুটি তো তাই আর যাইনি। আর শোন আব্বু কাজের জন্য দেশের বাইরে যাবে কিছুদিনের জন্য। তাই বললো আমাদের কোন আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসবে এই কয়দিনের জন্য

কি বলিস? তুই তো আমাদের বাসাতেও থাকতে পারতি। তাছাড়া সামনে এক্সাম আছে

ভালো হয়েছে তুই এসেছিস। তুই আমাকে নোট গুলো মোবাইলে দিয়ে দিস। ঐখান থেকেই কমপ্লিট করে রাখবো

সে না হয় দেবো। কিন্তু হঠাৎ করে আংকেলের কি হলো?

আমারও সব কিছু কেমন জানি লাগছে। যায় হোক আব্বু হয়তো ভালো কিছু ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তুই এসব নিয়ে ভাবিস না।

আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে থাকবি, আর কখন যাবি?

এইতো কালকে সকালেই নাকি! এই দেখ তোকে বসতে না বলেই কথা বলছি। আচ্ছা বোস। আমি চা করে আনি

আচ্ছা করে নিয়ে আই।কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে চলে যাবো ।কখন আবার দেখা হবে কে জানে!!

মন খারাপ করে চেয়ারে বসতে লাগলেই মৃদু চিৎকার করে উঠলো।

কিরে কি হলো। ব্যাথা পেয়েছিস নাকি?? কই ব্যাথা পাইছিস দেখি

আরে আর বলিস না এক বেয়া_দবের সাথে আজ ধাক্কা লেগেছে। এরপর সব কিছু খুলে বললো

এইদিকে মেঘা সব শুনে মুচকি হেসে তাড়াতাড়ি সরিষার তেল গরম করে নিয়ে আসলো। এরপর কোমরে মেসাজ করে দিলো।এরপর দুই বান্ধবী অনেক ক্ষন গল্পঃ করলো। সন্ধার দিকে তন্বী নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। আর মেঘাও অজু করে নামাজ পড়ে পড়তে বসলো।

#চলবে_কি?