নেশাময় ভালোবাসার আসক্তি পর্ব-১১+১২

0
111

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -১১
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম দিয়ে পোস্ট করবেন)

মেঘা অঝোরে কান্না করছে আদ্রিয়ান এর রুমের বাইরে। যে মানুষ টাকে সে দেখতেই পারে না আজ তার জন্যই সে ঠিক ভাবে নিশ্বাস নিচ্ছে। কিন্তু ওই মানুষ টা মৃত্যুর পাঞ্জার সাথে লড়ছে।

ফ্ল্যাশব্যাক –

“উইল ইউ মেরি মি স্নিগ্ধ পরী??”

মেঘা আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে রইলো সে কি বলবে বুঝতে পারছে না। অনেক্ষন বসে থাকার পরও যখন কোনো উত্তর আসলো না তখন আদ্রিয়ান উঠে দাড়ালো। এরপর পকেট থেকে ব্লু কালারের একটি ছোট্ট বক্স করে তার ভিতর থেকে ডায়মন্ডের রিং বের করে মেঘার হাতে পরিয়ে দিলো। মেঘা যেনো এক স্বপ্নের জগতে আছে। মনে হচ্ছে কোনো রাজ্যের প্রিন্সেস। আর সামনে প্রিন্সের সরুপ ভিলেন তাকে প্রপোজ করছে। কিন্তু তার কোনো মতামত না নিয়েই কি সুন্দর রিং পরিয়ে দিলো। রিং পড়ানো হলে হাতটি তে ঠোঁটের খুব নিখুঁত ভাবে গভীর স্পর্শ দিলো। এরপর মেঘাকে কাছে টেনে কপালেও ঠোঁট ছোঁয়ালো। মেঘাও এক অন্য জগতে বিরাজ করছে। হঠাৎ করেই তার সব কিছুই ভালো লাগছে। এরপর তারা ডিনার সেরে নিলো। আজ সব কিছুই মেঘার পছন্দের ছিলো। কিন্তু আদ্রিয়ান তার সেই বিখ্যাত অখাদ্য গুলোই খেলো। ডিনার শেষে আদ্রিয়ান মেঘাকে নিয়ে ছাদে উঠলো। ছাদটাও সুন্দর করে সাজানো। এরপর ছাদের দোলনায় মেঘাকে বসিয়ে তার পাশে বসে মাথাটা মেঘার কুলে রাখলো। মেঘা মাথাটা সরিয়ে দিতে চাইলে

মেঘু একটু রাখতে দাও না। তোমার সংস্পর্শে আসলে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। তুমি আরো আগে কেনো আসো নি আমার জীবন মেঘু। তাহলে হয়তো আমার জীবন টা আরও রঙিন হতো। আজ আমার মায়ের জন্মদিন মেঘু। তাই এই শুভ দিনে তোমাকে আপন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমার আঠারো বছর হতে এখনো কয়েক মাস বাকি। তাই আজকের দিনটা স্পেশাল করার জন্য এই আয়োজন মেঘু

মেঘা আদ্রিয়ান এর কথা শুনে অবাক হলো।প্রথমত নিজের নাম ধরে ডাকার জন্য। এখনও পর্যন্ত উনাকে নাম ধরে ডাকতে দেখেনি। আর দ্বিতীয়ত উনার মায়ের জন্মদিন কিন্তু আণ্টি কোথায়? মনের কথা জমিয়ে রাখতে না পেরে

আচ্ছা আণ্টি কোথায়? ওনার জন্মদিন উনাকে ঘিরেই তো

হুস স স,,

হঠাৎ করেই মেঘার মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো। এরপর মেঘার দিকে লক্ষ্য করে দেখলো কেউ লাল লাইট দিয়ে নিশানা দিচ্ছে। সাথে সাথে উঠেই মেঘাকে নিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়লো। আর ওমনিই কিছু ভাঙ্গার বিকট আওয়াজ হলো।

আদ্রিয়ান পকেট থেকে রিভলবার নিয়ে মেঘাকে সামনে এনে আগলে রাখলো। মেঘা প্রচন্ড ভয় পেয়েছে দেখে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এরপর কানের ব্লুটুথ দিয়ে গার্ড দের উপরে জলদি আসতে বলল। গার্ডরা সাথে সাথে এসে প্রটেকশন এর সাথে ঘিরে ধরলো। আদ্রিয়ান আসাফ এর দিকে গরম চোখে তাকালো। কিন্তু সে দিকে তার খেয়াল নেই সে গার্ড দের সাথে মিলে কাজ করছিলো। মেঘা ভয়ে আদ্রিয়ান কে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে রাখলো যেনো ছেড়ে দিলেই সর্বনাশ হবে।

ভয় নেই জান। এই হৃদপিণ্ড যতদিন পর্যন্ত বিট করবে ততদিন এই ছোট্ট জানটার কিছুই হতে দেবো না। আর এই ভয় অন্য কিছুতে নয় আমাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে

মেঘা সব শুনলেও কিছুই বললো না। শক্ত করে ধরে রাখলো। আদ্রিয়ান মেঘাকে নিয়ে রুমে আসলো। এরপর কোনো মতে ছাড়িয়ে বেডে বসিয়ে পানি খাওয়ালো। পানি খাওয়া শেষে যখন একটু স্বাভাবিক হলো তখন আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে দেখলো। আদ্রিয়ান প্রচন্ড ঘামছে, আর নিশ্বাস নিচ্ছে ঘন ঘন। হটাৎ করে কি হলো কিছুই বোধগম্য হলো না মেঘার।

কি হয়েছে আপনার? আপনাকে এই রকম
দেখা যাচ্ছে কেনো?

হঠাৎ করেই মেঘা খেয়াল করলো শার্টের কিছু অংশ ভিজে। মেঘা কাপা কাপা হাতে সেই জায়গা ধরে সামনে এনে দেখলো রক্ত। মেঘা তা দেখে অশ্রু যুক্ত নয়নে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকালে দেখে আদ্রিয়ান মেঘার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। মেঘা আদ্রিয়ান কে কিছু বলতে নিলেই আদ্রিয়ান মেঘার উপর ঢলে পড়ে।

আদ্র,, এই আদ্র শুনছেন?

মেঘা আদ্র কে নিয়েই বিছানায় বসে কোনো মতে মাথাটা তার বুকে রেখে গালে হাত দিয়ে ডাকছে

আপনার শরীর থেকে তো রক্ত বের হচ্ছে। দেখুন না অনেক রক্ত। এই আদ্র ,, আদ্র

প্রথম কথা গুলো আস্তে বললেও পরের কথা গুলো জোরে জোরে বললো আর গালে হালকা থাপ্পড় দিয়ে ডাকতে লাগলো

কেউ কি আছেন? এই আদ্র কথা বলুন না, কোথায় আপনারা প্লিজ দেখুন না উনি কথা বলছে না

বলেই অঝোরে কাঁদতে লাগলো আর পাগলামি করতে লাগলো। আসাফ নিচে নামলে মেঘার চিৎকার শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি মেঘার রুমে গিয়ে দেখলো মেঘা আদ্রিয়ান কে ধরে ডাকছে। কিন্তু আদ্রিয়ান কোনো সাড়া শব্দ দিচ্ছে না। তাড়াতাড়ি আসাফ গিয়ে আদ্রিয়ান কে ধরে একজন গার্ড কে বললো

তাড়াতাড়ি ডক্টর কে আসতে বলো। গো ফাস্ট।

বলেই আদ্রিয়ান কে আসাফ আর আরেকজন গার্ড সহ ধরে আদ্রিয়ান এর রুমে নিয়ে গেলো। এই দিকে মেঘাও তাদের পিছু পিছু গেলো। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ডক্টর চলে আসলো। এরপর ভেতরেই ট্রিটমেন্ট হতে লাগলো। কিন্তু মেঘার এখনও বুঝতে পারছে না আদ্রিয়ান এর কি হয়েছে। তাই তার ক্লারিফিকেশন দূর করার জন্য রুশের কাছে গেলো

ভাইয়া, ভাইয়া। উনার কি হয়েছে? রক্ত কোত্থেকে আসলো? কিছু ক্ষন আগেও তো ঠিক ছিল

আসলে মেম

বলেই রুশ মাথা নিচু করে ফেললো

কি হয়েছে বলুন না ভাইয়া?

মেম ছাদে যখন আপনার উপর অ্যাটাক হয় তখন আদ্রিয়ান স্যার আপনাকে বাঁচাতে গিয়েই গুলি লাগে স্যারের বাম কাঁধে।

আরো কিছু বলতে লাগলে রুশ এর ফোন বাজে। কল টা ইম্পর্ট্যান্ট দেখে মেঘার সাথে পরে কথা বলবে বলে চলে যায়। আর তখন থেকেই মেঘা এসব ভেবে কান্না করতে থাকে।
আর আদ্রিয়ান এর রুমের বাইরে ওয়েট করতে থাকে

………………………………………………………………….

বর্তমান –

প্রায় দুই ঘণ্টা পর –

ডক্টর ও আসাফ এক সাথে বের হয়ে কিছু নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো। এর মাঝেই তাড়াতাড়ি মেঘা এসে

ডক্টর আংকেল উনি এখন কেমন আছে? সুস্থ আছে তো?

তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না মামনি?

মেঘা কি বলবে বুঝতে পারছে না দেখে হাত কচলাতে লাগলো। ডক্টর আসাফ এর দিকে তাকালে আসাফ কিছু একটা ইশারা করলে ডক্টর অবাক নয়নে মেঘার দিকে তাকালো। মেয়েটা তো এখনও অনেক ছোটো। এত ছোটো মেয়েকে আদ্রিয়ান ভেবেই দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করলো।

মামনি, আদ্রিয়ান এখন মুটামুটি সুস্থ। কিন্তু শরীর থেকে পইজন বের করা হলেও শরীরে তার প্রভাব এখনও রয়ে গেছে।

কিসের পইজন আংকেল? উনার তো গুলি লেগেছিল

গুলিটা বাম কাঁধে লাগলেও তা ছুটে বের হয়ে গেছে। কিন্তু বুলেটে পইজন ছিলো। যা মানুষের ভারসাম্য অকেজো করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। আল্লাহর অশেষ রহমত যে সময় মতো ট্রিটমেন্ট হয়েছে। তানাহলে অনেক বড়ো কিছু হতে পারতো

বলেই ডক্টর মেঘার মাথায় হাত বুলিয়ে আসাফ কে কিছু মেডিসিনের প্রেসক্রিপশন দেন। এরপর মেঘাকে চিন্তা না করতে বলে ডক্টর তাদের থেকে বিদায় নেই।

ভাইয়া আমি কি উনাকে দেখতে যেতে পারবো?

জ্বি মেম। অবশ্যই

আমি আপনাকে যখন ভাইয়া বলে ডেকেছি তখন আমি আপনার বোন হয়। এই ভাবে আমাকে মেম ডাকবেন না। আমার খুব লজ্জা লাগে। আপনি আমার নাম ধরেই ডাকবেন

কিন্তু মেম, স্যার শুনলে প্রচন্ড বকবে

কোনো কিন্তু না ভাইয়া। আর উনার ব্যাপার টা আমি দেখবো

তবুও,,,,

এই ছোটো বোনের আবদার রাখবে না ভাইয়া?

মেঘার এরূপ বাচ্চা সরুপ আচরণ দেখে রাজি হয়ে যায়। এরপর মেঘা আদ্রিয়ান এর রুমে গেলে আসাফও বাইরে দরজা টা ভিড়িয়ে দিয়ে নিচে চলে যায়। এখন তার অনেক কাজ।

…………………………………………………………………

পিঠের চিনচিনে সূক্ষ্ম ব্যাথায় ভ্রু কুঞ্চিত করে ফেলে। এরপর আস্তে আস্তে চোখ মেলে নিজেকে নিজের রুমে আবিষ্কার করে। এরপর হাত উঠাতে লাগলে কিছু একটার সাথে আটকে যায়। চোখ ফিরিয়ে তা দেখতে লাগলে মুগ্ধময় দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। তার ছোট্ট বক্ষ পিঞ্জরের জান টা তার হাত ধরে কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে। এরপর হাত না নড়িয়ে উঠতে লাগল পিঠের ব্যাথায় টনটন করে উঠে। তবুও কোনো টু শব্দ না করে মেঘার কাছে গিয়ে সামনের চুল গুলো সরিয়ে চুলের এক পাশে ঠোঁট ছোঁয়ায়। এরপর মাথায় হাত বুলিয়ে দেই আস্তে আস্তে। এর মাঝেই মাথায় ছোয়া লাগলে মেঘার ঘুম টা হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। এরপর মাথা উপর করে আদ্রিয়ান কে এতটা কাছে দেখলে হালকা চিৎকার করে উঠতে লাগলে হতে টান পরে আদ্রিয়ান এর উপর পড়ে যায়। আদ্রিয়ানও মেঘা কে নিয়ে বেডের সাইডে পড়লে পিঠে আবার সূক্ষ্ম ব্যাথাটা তাজা হয়ে উঠে

আচ্ছা তুমি এত চিৎকার করো কেনো? এই বয়সেই মনে হয় আমাকে হাটকালা হতে হবে।

কানে হাত দিয়ে হালকা ঝাড়তে ঝাড়তে বললো আদ্রিয়ান। মেঘা তাড়াতাড়ি আদ্রিয়ান থেকে উঠে সোজা হয়ে দাড়ালো। এরপর টেবিল থেকে স্যুপ এর বাটি নিয়ে

ডক্টর আংকেল বললো যে আপনার জ্ঞান ফিরলে স্যুপ টা খাওয়াতে

আচ্ছা তোমার কী কোনো কমন সেন্স নেই?

কিসের কমন সেন্স?

এই যে তোমার সামনে একজন অসুস্থ রুগী শুয়ে আছে। তার সাথে সে হাতে ব্যাথা পেয়েছে কিন্তু তুমি কি করছো! আমি এই ব্যাথা নিয়ে নিজের হাতে করে কিভাবে খাবো

মেঘা নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেলো। এরপর নিজেই বিছানায় বসে আদ্রিয়ান কে খাইয়ে দিলো। এরপর ওষুধ খাইয়ে নিজের ওড়না দিয়েই মুখ মুছিয়ে দিলো। মেঘার এরূপ কাজে খুবই অবাক হলো আদ্রিয়ান।

শুনেন এখন একটু রেস্ট নেন অনেক রাত হয়েছে। আর কোনো প্রব্লেম হলে ভাইয়া কে ডাকবেন। ঠিক আছে!

আদ্রিয়ান অবাকতার সাথে মাথা নাড়ালো। এরপর মেঘা আদ্রিয়ান কে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে দরজাটা ভিড়িয়ে চলে গেলো। কিন্তু রেখে গেলো সুখ মিশ্রিত এক প্রেমিক পুরুষ কে।

#চলবে_কি?

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-১২
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম দিয়ে পোস্ট করবেন)

আজ মেঘা নিজের হাতে নাস্তা বানাচ্ছে আদ্রিয়ান এর জন্য। সে আদো বুঝতে পারছে না কেনো করছে এসব। কিন্তু তার অনেক ভালো লাগতেছে এসব করতে। মনে হচ্ছে বসন্তের ছোয়া তার হৃদমাঝারে দুলিও মান ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। নতুন প্রেমের আগমন ঘটছে ওই ছোট্ট কঠুরে। কারো চোখে মুখে হাসির জোয়ার তো কারো চোখে ভয়ের আবাস।

কিচেনের সার্ভেন্ট দের দাড় করিয়ে মেঘা একা হাতে আজ নাস্তা বানাচ্ছে। কিন্তু সেসব যদি আদ্রিয়ান স্যার জানতে পারে তাহলে তাদের চাকরি থেকেই আউট করে দেবে। এত মানা করা সত্তেও মেঘা মেম কে সরানো গেলো না। সেসব ভেবেই একজন সার্ভেন্ট তার কপালের ঘাম মুছলো। এখন স্যার নিচে না আসলেই হলো।

দুই ঘণ্টার মধ্যেই নাস্তা তৈরি করে ফেললো। রুটি, সবজি, ডিম টোস্ট আর ফলের জুস। এসব করেই মেঘার নাজেহাল অবস্থা। মাথার কাপড় টাও সরাতে পারছে না। এদের সামনে অস্বস্থি লাগছে। তাই তাড়াতাড়ি টেবিলে খাবার সার্ভ করতে বলে নিজের রুমে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে লাগলে দেখে আদ্রিয়ান সোফায় বসে পেপার পড়ছে। মেঘা মাথা নিচু করে আস্তে করে টেবিলের দিকে যেতে লাগলো। ওমনিই ভরাট কণ্ঠের পুরুষালি কণ্ঠ শুনতে পেলো

মেঘ..

হঠাৎ করে আদ্রিয়ান এর মুখে মেঘ নাম শুনে হালকা কেপে উঠলো। এই লোকটার মুখে নিজের একেক সময়ে একেক নাম শুনলেই কেমন জানি ভালো লাগা ছুঁয়ে যায়। এই যে এখনও নিজের নাম ধরে ডাকছে। এতেও মনে হচ্ছে কত আকুলতার মধ্য দিয়েই তাকে ডাকছে।

সার্ভেন্ট থেকে শুনলাম তুমি এখনও নাকি নাস্তা করো নি?

আসলে এত সকালে খেয়ে অভ্যেস নেই তাই

সকাল নয়টা বাজে। এখনও তোমার জন্য এত সকাল মনে হচ্ছে?

আদ্রিয়ান এর হালকা উঁচু কণ্ঠের ধমক শুনে মেঘা মাথা নিচু করে রাখলো

এই দিকে আসো

হঠাৎ আদ্রিয়ান এর এরূপ ডাকাতে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো। এরপর আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে, লোকটার কি কোনো কমন সেন্স নেই। এইভাবে ডাকছে কেনো? যদি কেউ দেখে ফেলে তখন তো তাকেই খারাপ ভাববে। এসব ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান এর কাছে গেলেও দূরত্ব নিয়েই দাড়ালো

আদ্রিয়ান এতক্ষন মেঘা কেই লক্ষ করছে। মেয়েটা বেশিই লজ্জা কাতুরে। এই যে তাকে ডাকাতে কেমন করে নিজের আখিপল্লব চারিদিকে অবলোকন করছে। মেঘার নজর আদ্রিয়ান এর দিকে পড়লে দেখে আদ্রিয়ান তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। এরপর কুঞ্চিত ভ্রু হালকা সাভাবিক করে আদ্রিয়ান এর পাশে বসতে বলে মেঘাকে। কিন্তু মেঘা তো মেঘাই সে ঐখানেই দাড়িয়ে আছে।

কি হলো বসতে বললাম যখন তখন ঐখানে সংয়ের মত দাড়িয়ে আছো কেনো?

আদ্রিয়ান এর আবার ধমক শুনে সুর সুর করে মেঘা কোনো কথা না বাড়িয়ে সুন্দর করে লক্ষী মেয়ের মতো আদ্রিয়ান থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসলো। আদ্রিয়ান পেপার টা রেখে ডান হাত মেঘার কোমরে গলিয়ে দিয়ে কাছে এনে কানের কাছে গিয়ে স্লো ভয়েসে

এই যে জান এখন তুমি হচ্ছো আমার প্রপার্টি। তোমার প্রতিটা নিশ্বাস আমার, প্রতিটা অনুভূতিও আমার। তোমার সব কিছুর মধ্যই আমি অন্তর্নিহিত হবো ধীরে ধীরে। আর সেই সব প্রতিক্রিয়া তেই তুমি বিমোহিত হবে ক্ষণে ক্ষণে

বলেই মেঘার কানের লতিতে হাল্কা কামড় দিলো।

মেঘার সর্বো অঙ্গ কাটা দিয়ে উঠলো। মস্তিষ্কের নিউরন গুলো কেমন জানি অবস মনে হচ্ছে। নিজের অনুভূতি গুলো কেমন জানি এলোমেলো লাগছে। এসব কিছু সহ্য করতে না পেরে নিজের ভর আদ্রিয়ান এর উপর ছেড়ে দেই। আর জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে।

মেঘাকে এরূপ দেখে আদ্রিয়ান রহস্যময় বাকা হাসে। এরপর মেঘাকে নিজের আরেকটু কাছে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে স্বাভাবিক হাওয়ার জন্য সময় দেই। কিছুক্ষন পর মেঘা স্বাভাবিক হলে দেখে, সে আদ্রিয়ান এর বুকে মাথা দিয়ে অর্ধো শোয়া হয়ে আছে। কিছুক্ষন আগের কথা ভেবে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে। নিজের কাজের প্রতি নিজেই বিরক্ত হয়। এরপর নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে কারণ আদ্রিয়ান এর ওষুধের সময় হয়ে গেছে।

টেবিলে নাস্তা দেওয়া হয়েছে, আপনি নাস্তা সেরে নিন । এরপর তো আপনার মেডিসিন নিতে হবে

তুমিই তো আমার একমাত্র মেডিসিন। যেই মেডিসিন কে দেখলে আমি এমনিতেই সুস্থ হয়ে যাবো। কৃত্রিম ওষুধের কি প্রয়োজন যেখানে জীবন্ত মেডিসিন উপস্থিত

ঠিক বুঝলাম না আপনার কথাটা

তোমার বুঝে কাজ নেই। ওই ছোট্ট মাথায় এসব প্রেসার দিতে হবে না।এখন তোমার কাজ শুধু আমাকে ঘিরেই। কি বলতে চেয়েছি বুঝতে পারছো

মেঘা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল যেনো কোনো পুতুলের সাথে কথা বলছে আর সে তার মালিকের উপদেশ নাকি আদেশ শুনছে। যা তার ছোট্ট মাথাই ঢুকছে না। এসব কিছু বাদ দিয়ে আদ্রিয়ান কে নাস্তা করতে বললো। কিন্তু হঠাৎ করে মেঘার মুখে এসব শুনে চরম আশ্চর্য হলো। যেই মেয়েকে নিজের থেকে খাইয়ে দিতে হয় সেই মেয়ে আজকে বউদের মতন খাবার খেতে বলছে। কিন্তু চেহারায় কোনো বিস্ময় এর রেশ না এনেই টেবিলে গেলো খেতে। কিন্তু টেবিলে বসেই দেখলো রুটি, সবজি, ডিম টোস্ট। হয়তো মেঘার জন্যই এগুলো। তাই সার্ভেন্ট কে নিজের খাবার আনার জন্য বলল

স্যার, আজ এগুলোই করা হয়েছে (সার্ভেন্ট)

মানে? (আদ্রিয়ান)

আসলে স্যার, আজ নাস্তা আমরা কেউ তৈরি করিনি। (সার্ভেন্ট)

যা বলবে ক্লিয়ারলি বলো (আদ্রিয়ান)

আমি বলছি (মেঘা)

হঠাৎ মেঘার কথাই আদ্রিয়ান এর দৃষ্টি মেঘার উপর পড়লো। মেঘা মাথা নিচু করে হাত কচলাতে কচলাতে

এখানে আসছি থেকেই কোনো কিছুই করছি না। তাই খুব বোরিং লাগছিলো। তাই আজকে এই নাস্তা গুলো করেছি। আপনি তো সারাক্ষণ ঐসব কুখা__ না মানে আধ-সিদ্ধ খাবার খান। আর ওইগুলো আমি ঠিক করে বানাতে পারিনা। তাই এই গুলোই করেছি

মেঘার কথা গুলো শুনে খুব খুশি হলো আদ্রিয়ান। তার জান নিজের হাতে কিছু করেছে আর সেই গুলো তার জন্যই। নিজের খুশিকে দমিয়ে রেখে মেঘাকে নিজের পাশের চেয়ারে বসালো। এরপর সার্ভেন্ট দের খাবার সার্ভ করতে বললো। সার্ভেন্ট রাও ভয়ে ভয়ে খাবার দিলো। কিন্তু যখন দেখলো আদ্রিয়ান কিছু বলছে না তখন তারাও ভয় মুক্ত হলো। কারণ তাদের স্যার যা রাগী চুন থেকে নুন খসলেই খবর করে ছাড়ে।

খাবার দেওয়া হয়ে গেলে আদ্রিয়ান না খেয়ে মেঘার দিকে মাসুম চেহারা বানিয়ে তাকিয়ে থাকলো। মেঘা এতক্ষন আদ্রিয়ান এর কার্যকলাপ দেখছিল। কিন্তু যখন তার খাবার গুলো সার্ভ করতে বললো তখন সে খুবই খুশি হল যা তার চেহারায় দৃশ্যমান হলো। আদ্রিয়ান এর নজর তা এড়ায়নি। কিন্তু আদ্রিয়ান না খেয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলে সেও অসস্থির কারণে খেতেও পারছে না ঠিক মত। তাই সাহস জুগিয়ে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকালো

এই ভাবে দেখে আছেন যে? খাবার কি পছন্দ হয়নি?

তোমার হাতের নুনও আমার জন্য বিশেষ। এসব তো এলাহী ভুজ জান

আদ্রিয়ান এর এসব কথাই মেঘার গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। সার্ভেন্ট দের সামনে এসব কি সব বলছে এই লোক? লাজলজ্জা নেই, অসভ্য!

এখনও তো কিছুই করিনি জান। তুমি আমাকে এখনই অসভ্য বলছো? তাহলে একটু অসভ্যতামী করেই ফেলি! কি বলো

লোকটা কি মনের কথাও বলতে পারে নাকি? অন্তর্যামী নাকি। আর কিসব কথা বার্তা শুরু করলো। উফ আল্লাহ তুমি এই কোন মছিবতে ফেললে আমায়

এই যে ভাবনাকুমারী আপনার ভাবা শেষ হলে এখন একটু এই অসভ্য লোকের উপর একটু দয়া করুন। এমনিতেই পিঠে ব্যাথা হাতও নাড়াতে পারছি না। আপনি যদি এই বান্দার উপর একটু দয়া করতেন তাহলে আপনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকিতাম

মেঘা আদ্রিয়ান এর কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো। হঠাৎ করেই মেঘার মুখে হাসি দেখে সেও মুখে হাসি আনলো।

এরপর মেঘা আদ্রিয়ান এর খাবার নিয়ে তাকে খাইয়ে দিতে লাগলো। কারণ যাই হোক লোকটার তো তার জন্যই এই অবস্থা। কিন্তু লোকটা দিন দিন কেমন জানি বাচ্চা সুলব আচরণ করছে। গুলি খেয়ে কি গন্ডার থেকে বানরে রুপান্তর হচ্ছে নাকি?

আদ্রিয়ানও তৃপ্তি সহকারে তার প্রেয়সীর হাতে খাচ্ছে। খাবার গুলো মজাই হয়েছে। তার মেঘ বানিয়েছে মজা তো হবেই। খাচ্ছে আর মেঘার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

“মেঘজান তুমি ফেঁসে গেছো। আমার নেশার মায়াজালে তুমি ফেঁসে গেছো। বন্ধিনি তো আগেই ছিলে এই মঞ্জিলে কিন্তু এখন তো আমার অন্তর্ণিলে আটকে গেছো #নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি তে।”

#চলবে_কি?