নেশাময় ভালোবাসার আসক্তি পর্ব-১৩+১৪

0
89

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-১৩
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম দিয়ে পোস্ট করবেন)

কুয়াশার চাদর কাটছে রোদেলা পরশে, চারিদিকে বহমান হচ্ছে ফুলের সৌরভে। শুকনো পাতা ঝরছে তো নতুন পাতার উদয় হচ্ছে। বসন্তের ছোঁয়া আসছে বলে। প্রকৃতি বসন্তকে বরণ না করলেও কারো মনের কোটরে বসন্ত এসেছে খুবই সূক্ষ্ম ভাবে। আলোড়ন হচ্ছে তার মনের অনুভূতি গুলো। যেনো স্নিগ্ধ ছোঁয়ার অন্তরালে কারো প্রতিচ্ছবি ভাসছে। সেই ভাসমান স্রোতের মতোই সেও ভেসে যাচ্ছে প্রতিচ্ছবির সেই মানবের সাথে। ইশ এত কেনো চঞ্চল হচ্ছে তার অনুভূতি। এইভাবে তো সে নির্লজ্জ হয়ে পড়বে প্রেমিক পুরুষটির কাছে। না না নিজেকে সামলাতে হবে।

কিন্তু যতোই নিজেকে বকুক। মন কি তার মানবে অমানিশার প্রাপ্ত হওয়া নতুন নতুন সুপ্ত অনুভূতি উদয় হওয়া থেকে।মানবে না তো। বড্ড অসভ্য যে সেই মনটা।

সেই দিনের পর থেকে প্রায় অনেক দিন কেটে গেছে। আদ্রিয়ানও সুস্থ হয়ে উঠেছে। অবশ্য এর পেছনে মেঘার অনেকটায় অবদান আছে। তার খুব যত্ন করেছে। কিন্তু সেসব যে কেনো করেছে তার সঠিক কারণ খুঁজে পাইনি। শুধু কি তাকে বাঁচিয়েছে বলে, নাকি কোনো কারণে। কিন্তু হয়তো এখন একটু হলেও বুঝতে পারছে তার মনের লোকানু অনুরুক্তি গুলো।
কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ কিভাবে করবে? এমনিতেই আদ্র যা পাগলামি করে ওর সাথে যদি তার মনের কথা প্রকাশ করে দেই তাহলে তো আরো বেশি!! বলেই দুই হাত দিয়ে তার মুখমণ্ডল ঢাকলো। ভাবতেই লজ্জা লাগছে সামনা সামনি হলে কি করবে সে? মরেই যাবে।

_______________________

স্যার, আদ্রিয়ান স্যারের গার্লফ্রেন্ড এর সম্পর্কে ডিটেইলস কালেক্ট করে এনেছি। এই ফাইলেই সব কিছু বর্ণিত আছে স্যার

বলেই সামনের লোকটিকে ফাইল টি দিলো। লোকটি ফাইল নিয়ে খুলতেই করো হাস্যজ্বল চেহারা দেখে আটকে পড়েছে। মাথায় শুভ্র উড়না দিয়ে ঘোমটার আড়ালে ছোট্ট এক মুখশ্রী। যার আবডালে মায়ার সাগর রঞ্জিত। প্রায় কয়েক মিনিট তাকিয়েই থাকলো এক ধ্যানে। যেনো এত বছর না দেখার তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।

স্যার,, স্যার,, ,,,,,,

সাহেবের ডাকে হঠাৎ করেই লোকটার ধেয়ান ভাঙ্গলো।

কি হয়েছে?

গম্ভীর ভাবে বললো সেই লোকটি

না মানে স্যার,, মেয়েটি তো এখন আদ্রিয়ান স্যারের সাথেই তার প্যালেসে আছে। আর কিছুদিন আগে তাদের উপর হামলা হয়েছিলো। ভাগ্যে ভালো হয়তো তাই কারো তেমন কিছু হয়নি।

হতেও দিবো না। আর মেয়েটি কি বলছো মেম বলবে। আজ থেকে মেমের উপর যতো টুকু পারো নজর রাখবে। কোনো কিছুই যাতে তার উপর বর্ষিত না হয়।

কিন্তু স্যার,, নজর কিভাবে রাখবো আদ্রিয়ান স্যার যেভাবে ওনাকে প্রটেকশন দিয়ে রেখেছে।

ঠিক আছে আপাতত যত টুকু পারো ইনফরমেশন নাও। আর হ্যা আদ্রিয়ান এর প্রত্যেক টা খবর আমাকে জানাবে। সে কি করছে না করছে। এভরিথিং। আর বাংলাদেশ যাওয়ার টিকেট কাটো। এখানের পেন্ডিং কাজ গুলো যতো দ্রুত সম্ভব শেষ করো। গট ইট?

ইয়েস স্যার

এখন নিজের কাজে যাও

সাহেদ বের হয়ে যাওয়ার পর। লোকটি আবার ফাইলের মধ্যে থাকা মেঘার ছবিটি নিয়ে বিশাল বড় বেলকনিতে গেলো। যা লন্ডনের এক আভিজাত্য ঘেরা শহরের থেকে একটু দূরে অবস্থিত। লোকটি হাত মেলে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিল।

কে তুমি প্রিন্সেস? তোমার মাঝে কি আছে? প্রথম দেখাতেই আকৃষ্ট করেছো। দেখে তো বাচ্চা মনে হচ্ছে। কিন্তু এই বাচ্চা রূপ দেখিয়েই প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষটিকে বিমোহিত করছো। উহু,,,ম,,ম,,ম একদম ঠিক করনি। এর জন্য তো তোমাকে আমার পাশে থাকতে হবে। হ্যা প্রিন্সেস যে করেই হোক তোমাকে আমার রাজ্য খুব জলদিই নিয়ে আসবো।

বলেই ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিয়ে পুরোটাই খালি করে ফেললো। এরপর মেঘার ছবিটিকে নিজের ব্যক্তিগত কাবাডে রেখে কাও কে ফোন করে কিছু বলে নিজের কাজ করতে লাগলো।

____________________

আচ্ছা তন্বী মেঘার কোনো খুঁজ জানিস? এতদিন হয়ে গেলো মেয়েটার কোনো খুঁজ নেই। সামনে পরীক্ষা, মেঘা তো পড়াশুনা নিয়ে খুব সিরিয়াস থাকে। কি হলো বলতো

আমিও তো বুঝছি না কি হচ্ছে। ওতো বললো তার কোন আত্মীয়ের বাড়িতে গেলে আমার সাথে যোগাযোগ করবে, কিন্তু কি হলো কিছুই বুঝতে পারছি না। অনেক বার ফোন দিয়েছি কিন্তু মেঘার ফোন বন্ধ পাইতেছি। আর আংকেলেরো। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারতেছি না

তন্বী আর তার এক ক্লাসমেট অরফ ফ্রেন্ড নোরা কথা গুলো বলছিলো আর রেস্টুরেন্টে যাচ্ছিলো। তন্বী এই কয় দিনে নিজেকে সামলিয়েচে। এর পুরো কৃতিত্ব তার মায়ের। ভাগ্য করে এমন মা পেয়েছে সে। এখন আর প্রেম ভালোবাসা কে সে বিশ্বাস করে না। আপাতত ফোকাস পুরোটাই পড়াশুনাতে লাগিয়েছে। আর মন খারাপ করলে মেঘার কথা মনে করে। সত্যি মেঘা থাকলে তার দিন গুলো অনেক ভালো যাই। কিন্তু তাকে ছাড়া পানসে লাগে জীবনটা।

তন্বী রেস্টুরেন্টে যখন ঢুকছিল তখন তার পাশে কেউ একজন তার সাথে ঢুকতে লাগলে দুইজনই ধাক্কা খায় একে অপরের সাথে। তন্বী বাহুতে ব্যাথা পেলে চিল্লিয়ে উঠে

ওমাগো। এই কোন উগান্ডা রে। আমার হাত কি ভেঙ্গে রেস্টুরেন্টে ঢুকবেন নাকি? চোখ কি অন্ধ নাকি? এত বড়ো মেয়েকে দেখতে পান না?কোত্থেকে চলে আসে এসব। উফফ আমার হাত

বলেই আর্তনাদ করতে লাগে

এই যে ঝগড়ুটে মিস। আমি না নয় দেখতে পাইনা! তো আপনার চোখ কি হাতে নিয়ে হাঁটেন?

তন্বী চোখ তুলে সামনের মানুষ টাকে দেখে মুখকে বিকৃতি করে। এরপর তেড়ে যাই আসাফ এর দিকে

আসাফ ক্লায়েন্ট দের সাথে মিটিং ছিলো যার জন্য এই রেস্টুরেন্টে আসা। কিন্তু হঠাৎ করে এসব হওয়াতে সে ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে

কি বললেন আপনি? আবার আপনি আমাকে ঝগড়ুটে বলছেন? আমি কি ঝগড়া করি নাকি?

না না আপনি কেনো ঝগড়া করবেন? আপনি তো অথৈ থেকে উঠে আসা কাঙ্গালী মাঝি। মাঝি রা ঝগড়া করে নাকি!! ঝগড়া করে তো কাঙ্গালীরা।

মানে?

মানে কিছুই না। এখন আপনার সাথে ঝগড়া করার সময় নেই। আপনার হয়তো অফুরন্ত সময় আছে মানুষের সাথে ঝগড়া করতে কিন্তু আমার নেই মিস,

বলেই আসাফ ভেতরে ঢোকে গেলো। আর তন্বী জিদে হাত মুট করে ফেললো। কত বড়ো সাহস লোকটার আমাকে কথা শুনিয়ে চলে গেলো। রাগে চোখে জল চলে আসলো। তন্বী একটা সমস্যা রাগ উঠলেই চোখে পানি চলে আসে।

এই তন্বী ,, কি হলো ভেতরে চল। আমার একটা ফোন আসছিল তাই আমি কলে কথা বলছিলাম। আমি তো আরো ভেবেছি তুই ভেতরে গিয়ে খাবার অর্ডার দিয়ে বসে আছিস। কিন্তু তুই ত ভেতরেই যাস নি। কি হয়েছে

কিচ্ছু হয়নি,, আমার ভালো লাগছে নারে। আজকে বাসায় চলে যাবো। আরেকদিন নাহয় খেয়ে আসবো। প্লিজ

আরে এতে এত প্লিজ বলার কি আছে আজব। আচ্ছা চল

ওরা দুইজনেই নিজেদের বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিলো। এইদিকে আসাফ আবার বের হয়ে তন্বীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো। ধাক্কা টা সে ইচ্ছে করেই দিয়েছে। ঝগড়ুটে মেয়েটার সাথে একটু ঝগড়া করার ইচ্ছে হলো। সে যাই হোক আপাতত ক্লায়েন্ট এর জন্য আবার ভেতরে ঢুকলো। আজকে একটা ডিল সাইন করবে। আদ্রিয়ান আপাতত অন্য কাজে ব্যাস্ত থাকায় তার উপর দায়িত্ব দিলো।

________________________

রাত বারোটায় আদ্রিয়ান মাত্রই ফিরলো। আজকে অনেক গুলো মিটিং অ্যাটেন্ড করতে হয়েছে। যার জন্য তার মেঘ পরীর খবর নিতে পারলেও এক পলক চোখের দেখা দেখতে পারেনি। তাই তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে উঠে মেঘার রুমের সামনে দরজা তে দাড়িয়ে দেখলো দরজা ভেতর থেকে হালকা ভেড়ানো। এরপর দরজা হালকা খুলে ভেতরে ঢুকলো। আশে পাশে চোখ বুলিয়ে মেঘাকে কোথাও খুঁজে পেলো না। কোথায় গেলো মেয়েটা? এতক্ষনে তো ঘুমিয়ে পড়ার কথা। ওয়াশরুমেও দেখলো আছে কিনা? না, নেই! এরপর কি মনে করে বেলকনিতে গিয়ে দেখলো, মেঘা তার জন্য আনা দোলনায় হেলান দিয়ে বসে বাচ্চাদের মতো গুটি মেরে ঘুমাচ্ছে।

দেখো মেয়ের কাণ্ড? এত বড়ো একটা রুম দিলাম শুয়ার জন্য। আর মহারানী কিনা বাইরে এই ঠান্ডার মধ্যে এখানে ঘুমোচ্ছে।

বলেই আদ্রিয়ান মেঘার নিকটে গিয়ে মেঘার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। এরপর মেঘার সামনের ছোটো ছোটো দলীয় মান চুল গুলো কানের পিছে গুজে দিলো। আর আদ্রিয়ান এর হাতের স্পর্শ পেয়ে মেঘা হালকা কেপে উঠলো। আদ্রিয়ান কিছুক্ষন মেঘার দিকে তাকিয়ে খুবই সাবধানে কোলে তুলে নিলো। মেঘাও দুই হাত দিয়ে আদ্রিয়ান এর গলা জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজলো সাথে নাক আর মুখ দিয়ে ঘাড়ে ঘষতে লাগলো। আদ্রিয়ান এর চলার পথ হঠাৎ করেই থমকে গেলো। হঠাৎ করেই প্রিয় সত্ত্বার স্পর্শ যেনো পুরুষালি সত্তাকে জাগিয়ে তুলছে। আদ্রিয়ান সামান্য ঢুক গিললো। মেয়েটা পাগল করে ছাড়বে। এখন যদি মেঘা জেগে কাজটা করতো তখন তো কিছু একটা অগঠন ঘটতো। কিন্তু এখনও যেনো দায় পরে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি মেঘাকে রুমে এনে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে চাদর টেনে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

এরপর নিজের রুমে এসে ওয়াশ রুমে ঢুকে চোখে মুখে পানি ঝাপটা দিলো। অনেক্ষন পর, তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হলো। সার্ভেন্ট কফি দিয়ে গেলে তা নিয়ে খেতে খেতে মেঘার বড়ো একটি ছবির নিকট যায়। যা সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। আদ্রিয়ান সেটি সরিয়ে মেঘার ছবির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কপি খেতে থাকে। হ্যা ছবিটি মেঘার ঘুমন্ত চেহারার। যা কিছুদিন আগে আদ্রিয়ান তুলেছিল।

তুমি এত ছোটো হলে কেনো স্নিগ্ধ পরী? এই যে আজকে যদি আমি নিজেকে না সামলাতাম তাহলে তো অঘটন একটা ঘটে যেতো। তখন তো তুমি আমাকে দোষ দিতে। হয়তো আমার থেকে আরো দূরে সরে যেতে। উহু,,মম,,ম আমি চাই না আমার একটা ভুলে তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাও। তার জন্য আমার যা করতে হয় তাই করবো জান।

“অপেক্ষা খুব ভয়ানক গো জান
মনের ওই নরম জিনিস টা
সহ্য করতে পারে না”

#চলবে_কি?

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব-১৪ (১৮+ এডাল্ট কনটেন্ট)
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম উল্লেখ করে পোস্ট করবেন)

যার আদলের ভালবাসার ছায়ায় এত দিন ছিলো। কিন্তু তার সাথে আজ প্রায় এক মাসের উপরে হলো কোনো কথা হয়না। কেমন আছে সে তাও জানে না। উনি কি আমার খুঁজ নেন না। হয়তো নেই, কিন্তু খুঁজ না পেয়ে কি অনেক কষ্ট পাচ্ছে? ভেবেই মেঘার চোখের এক ফোঁটা অশ্রু তার অজান্তেই গাল বেয়ে গেলো। এরপর টা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো।

দখিনা হাওয়ার তালে তার চুল গুলোও উড়ছে স্বাধীন ভাবে। যেনো মুক্ত কোনো উড়চিটির ন্যায় উড়ে বেড়াচ্ছে তার সম্মোহন চাদরে। কিন্তু সেই সম্মোহিত কিশোরী কন্যার মন যে বড্ড উদাস। তার প্রিয় মানুষ টির কথা খুব মনে পড়ছে। ইচ্ছে করছে এই মায়াপুরি রাজ্য থেকে ছোটে তার আব্বুর ছোট্ট কোঠরে ফিরে যাক। বললেই কি যাওয়া যাই। অনেক তো চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। বিপ্রতীতে করো মায়ার চাদরে মিশে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু এ যে অন্যায়। কারো সাথে পবিত্র বন্ধনে না জড়িয়েই তাকে মন দেওয়াটা যে অন্যায় এর মধ্যে পড়ে। সে যে পর পুরুষ বলে গণ্য হয়। কিন্তু তারই বা কি করার আছে। নব নতুন জাগ্রত অনুভূতি গুলো যে তার জন্য খুবই বিশেষ মনে হচ্ছে। যেটাকে হয়তো কারো প্রতি আসক্ত হাওয়ার অনুভূতি বলে।

অনেক্ষন ধরে মেঘার রুমের বেলকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসবই ভাবছিল আর চোখের অশ্রু পড়ছিল। তার আব্বুর সাথে এখানে আসা পর্যন্ত কথা হয়না। চুরি করে সার্ভেন্ট এর মোবাইল নিয়ে অনেক বার ফোনে দিয়েছিল। কিন্তু বার বার বন্ধই পেয়েছে। কি জানি কেমন আছে তার আব্বু টা। পরে আবার মনে পড়লো যে তার আব্বু তো বাইরের দেশে আছে সীম তো বাংলাদেশী হবে না। আর ঐখানের নম্বরও তো নেই। নিজের ফোন টা থাকলে হয়তো আব্বুর নতুন নম্বর থেকে কল আসতো। কিন্তু ফোনটাও তো কাছে নেই। কোথায় রেখেছে ওই গন্ডার টা কে জানে।

আদ্রিয়ান বাসায় এসেই সরাসরি মেঘার রুমে ঢুকে বেলকনিতে গেলো। এরপর মেঘাকে ডান বাহু শক্ত করে ধরে রুমে এনে সামনের দিকে ফিরিয়ে জোরে একটি থাপ্পড় মারলো। থাপ্পড়ের ছোটে মেঘা বিছানায় পড়ে গেলো।

হঠাৎ করে কি হলো কিছুই বুঝতে পারলো না। কিছু বোধ গম্য হওয়ার আগেই মেঘাকে শুয়া থেকে উঠিয়ে সামনে দাঁড় করিয়ে

উড়না ছাড়া বেলকনিতে কেনো দাড়িয়ে ছিলি? শরীর দেখানোর জন্য?

চিৎকার করে রক্ত রঞ্জিত চোখে বললো আদ্রিয়ান। তার কপালের রগ গুলো ফুলে সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে। চোখ মুখের অবস্থা দেখলে হয়তো কারো অবস্থা শোচনীয় থাকবে না। এতটাই ভয়ংকর লাগছে তাকে।

কি হলো? চুপ করে আছিস কেনো? চুল মেলে দিয়ে ওড়না ছাড়া তুই বেলকনিতে কেনো গিয়েছিলি বল? কার থেকে পারমিশন নিয়ে তুই এই বেশে গিয়েছিলি? বল

আদ্রিয়ান এর একেক টা চিৎকার মেঘা কে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। মেঘার অবশ্য ভয়ে আর ব্যাথায় কিছুই মাথায় ঢুকছে না। এক তো আদ্রিয়ান এর থাপ্পড় আর এখন বাহুতে জোরে চেপে ধরা। সব মিলিয়ে ছোট্ট জান টার, না জান বেরিয়ে যায়। তবুও বহু কষ্টে মেঘা অশ্রু সিক্ত চোখে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকালো

আ,, আ,, মি,, তো

মেঘা হিচকির জন্য কিছুই বলতে পারছে না। সব গলায় আটকে যাচ্ছে।

তোর এতই যখন শ*রীর দেখা*নোর ইচ্ছে তখন ঠিক আছে আমাকেই তোর শ*রীর দেখা

বলেই মেঘার কোনো কথা না শুনেই বিছানায় ফেলে দিলো। এরপর মেঘার উপর অর্ধ শুয়া হয়ে হাত দুটো মাথার উপরে জোর করে ধরে রেখে এলো পাথারী কি*স করতে লাগলো। এক পর্যায়ে কামিজের বু*কের অংশ হালকা টেনে গলায় কি*স করতে করতে জোরে জোরে কয়েক টা কামড় দিলো। মেঘা এতটাই ভয় পেলো যে সে কোনো প্রতিক্রিয়া করতেই ভুলে গেলো। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই যখন হুস আসলো তখন আদ্রিয়ান কে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু এই বলিষ্ঠ শরীরের সাথে পেরে উঠা অসম্ভব। আর এইসব হঠাৎ আক্রমণ, আর এখন এসব সব কিছুই ছোট্ট শরীর টা সহ্য করতে না পারায় এক সময় জ্ঞান হারায়।

কিন্তু তখনও আদ্রিয়ান এর হুস আসলো না। সেতো ব্যাস্ত তার রাগ মেটানোর। যদি সে তার হুশে থাকতো তাহলে হয়তো বুঝতে সে কত বড় ভুল করতে যাচ্ছে। যখন দেখলো ছোট্ট প্রাণ টা আর নরাচরা করছে না তখনই আদ্রিয়ান এর হুস আসে। আর সে মেঘার দিকে তাকিয়ে দেখলো তার চোখে মুখে কোনো নড়াচড়ার প্রাদুর্ভাব নেই। হঠাৎ করেই বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। এরপর আস্তে আস্তে মেঘার থেকে উঠে মেঘার বিছানার কিনারায় বসে মাথার চুল গুলো খামচে ধরলো। সে কি করতে নিচ্ছিলো ভেবেই অন্তর আত্মা শুকিয়ে গেলো। সে তার স্নিগ্ধ পরিকে অপবিত্র করতে যাচ্ছিলো। কি করতে যাচ্ছিলো সে?

ভেবেই নিচে বসে হাত টা টাইলসে জোরে জোরে বারি মারতে লাগলো। বারি মারতে মারতে হাতের নরম চামড়া গুলো ফেটে তার ভেতরের রঞ্জিত পদার্থ গুলো বের হতে লাগলো এবড়োথেবড়ো ভাবে। আর টাইলসেও তার বহিঃপ্রকাশ পেলো। হঠাৎ করেই মেঘার কথা মনে পড়লো। তাড়াতাড়ি মেঘার কাছে গিয়ে ধরতে লাগলে তাকে আর স্পর্শ করলো না। এই হাত যে তার পরিকে কষ্ট দিয়েছে। না এই হাত দিয়ে সে তার পরিকে আর স্পর্শ করবে না। এই হাত অপবিত্র। এই শরীর টাও অপবিত্র। বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আর রেখো গেলো ওই ছোট্ট জান টাকে যার উপর কিছুক্ষন আগের কোনো প্রভাব বিরাজমান নেই। কিন্তু সেই ক্ষতির আবাস গুলো তার শরীরের অল্প বিস্তর জায়গায় প্রবাহিত আছে।
যে ছিলো কিছুক্ষন আগে সম্মোহিত ভাবে সে আছে এখন এলোমেলো রূপে। হায় কি নিদারুণ পরিস্থিতি।

____________________

এক অন্ধকার গোডাউনে কারো আর্তচিৎকার ভাসছে ক্ষণে ক্ষণে। মনে হচ্ছে তার কোনো অঙ্গ হয়তো ধীরে ধীরে আলাদা হচ্ছে। আর সামনে লোকটির কোনো যাই আসছে না। কিন্তু তবুও হয়তো লোকটির এই লোকটার অঙ্গ একটু একটু কেটেও শান্তি হচ্ছে না। তাই তার গার্ড কে একটি বোতল দেওয়ার জন্য ইশারা করলো। আর সেই গার্ড টিও বোতল টি দিলো। এরপর হাতে গ্লাভস পরে বোতল টি খুলে আস্তে আস্তে সেইখান থেকে একটু একটু তরল পদার্থ লোকটির মুখে হাতে গলায় বুকে ফেলতে লাগলো। আর লোকটি মৃত্যু যন্ত্রণার মত চিৎকার করতে লাগলো। এরপর একটা চাকু গরম করে তা আগুনে পুড়ে চোখের ভেতর ঢুকিয়ে চোখ উঘলিয়ে ফেললো। এরপর অন্য চোখটিও উঘরালো। এরপর তাতেও তরল পদার্থ টি ঢাললো। কি এক জগন্য অবস্থা। গার্ড দের মধ্যে কেউ কেউ এসব দেখে মুহুর্তেই বমি করে দিলো। কিন্তু স্যারের ভয়ে তাড়াতাড়ি মুখ ধরে বাইরে বেরিয়ে গেলো। এরপর রিভলবার বের করে লোকটির কপালে পেটে বুকে পাঁচটা গুলি করলো।

এরপর লোকটি বের হয়ে গেলো সেই গোডাউন থেকে। গার্ড দের বলে গেলো যাতে লোকটিকে তার প্রিয় পোষা প্রাণী সিমজানো কে দিতো। যে আপাতত দুইদিন ধরে অভুক্ত। তাজা রক্তের মানুষ পেলে তারও খুব তৃপ্তি মিটবে। বলেই লোকটি গাড়িতে উঠে চলে গেলো। আর এই দিকে গার্ড রা তার কথা মত কাজ করতে গেলো।

_______________________

সকালের স্নিগ্ধ রোদের আলোড়নের প্রভাবে মেঘার ঘুম ভাঙলো। কিন্তু শরীরটা খুব দূর্বল লাগছে যার জন্য প্রথমে উটতে গেলে হঠাৎ করেই মাথা ঘুড়িয়ে উঠলো। বলা বাহুল্য কাল এত কিছুর প্রভাবে প্রচন্ড জরের শিকার হয়েছে।

এখন লাগছে তোমার মামনি?

হঠাৎ করেই মেয়েলি কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলো। এরপর বাম দিকে তাকিয়ে দেখলো একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা। খুবই লাবণ্য আছে মহিলাটির শরীরের প্রত্যেক অঙ্গে। যুবতী বয়সে নিঃসন্দেহে খুবই সুন্দরী ছিলেন। দেখে মনে হচ্ছে ডক্টর। মহিলাটি মেঘার পাশে বসে মেঘার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। এরপর ডক্টরী কিছু চেকআপ করে

জ্বর নেই এখন শরীরে। আপাতত কয়েক দিন রেস্ট নাও ঠিক হয়ে যাবে। আর হা একদম ঠান্ডা লাগাবে না। তানাহলে জ্বরটা আবার বাড়তে পারে।

আপনি কে আণ্টি? আপনাকে তো চিনলাম না

এই দেখো আমি তো তোমাকে পরিচয় ই দেইনি। আমি হচ্ছি এই ফ্যামিলির বয়স্ক জেস্টার ডক্টর। যার দেখাশুনা দশ বছর ধরে করছি। এখন তোমারও করছি। তুমি তো খুব মিষ্টি দেখতে। অবশ্য এর আগেও তোমাকে দেখে গিয়েছি আমি। তুমি তখন অসুস্থ ছিলে তাই পরিচিত হতে পারিনি। আচ্ছা শোনো আমার একটা এমার্জেন্সি অপারেশন আছে আমি এখন আসি। বিকেলে আবার আসবো। আমি রেনু খালাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছি। উনি তোমাকে ওষুধ পত্র খাইয়ে দিবে। লক্ষ্মী মেয়ে একটা

বলেই মাথায় হাত বুলিয়ে বের হয়ে গেলো। রেনু হচ্ছে এই পরিবারের বিশ্বস্ত কেয়ার টেকার। যে এতদিন গ্রামের বাড়িতে ছিল। কাল রাতেই আদ্রিয়ান জরুরি তলবে নিয়ে আসছে। রেনু খালাও তাড়াতাড়ি মেঘাকে ধরে ফ্রেশ করিয়ে দিলো। এরপর একটু বসতে বলে নিচে গেলো স্যুপ আনতে।

এইদিকে মেঘা ভাবছে অন্য কিছু। কাল রাতে হঠাৎ করেই এত কিছু হওয়ার পরও আদ্রিয়ান এর প্রতি রাগ না উঠে তার জন্য চিন্তা হচ্ছে। মনে হচ্ছে তার প্রেমিক পুরুষ টি কষ্টে আছে। এতক্ষন হয়ে গেলো কই তাকেতো দেখতে আসলো না । ঠিক আছে কি মানুষ টা?

#চলবে_কি?