নেশা লাগিল রে পর্ব-৩+৪

0
274

#নেশা_লাগিল_রে। পর্ব- ৩
লেখক- ইতি চৌধুরী
(কোনো ক্রমে কপি করা যাবে না।)

এবাড়ি থেকে খবর পেয়ে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করেননি মাহাপারার মা সায়মা ও বাবা আব্দুর রহমান। তারা আসার পূর্বেই ওহীর বাবা নিয়াজ গোনী এশার নামাজ পড়ে বাসায় এসে ছেলের সঙ্গে ভাগনীকে দেখে যা বুঝার বুঝে গেছেন। নিয়াজ গোনীও আর রা শব্দ করতে পারেননি। মূলত ইচ্ছা করেই করেননি। মাথা গরম করে আপাতত কিছু বলতে চান না তিনি। কিছু কিছু বিষয় মাথা ঠান্ডা করে হ্যান্ডেল করতে হয়। নিয়াজ গোনী সারাজীবনই ঠান্ডা মেজাজের মানুষ। হুটহাট তাকে মাথা গরম করতে সচারাচর দেখা যায় না। বরং সালমা বেগমকে ঠান্ডা হয়ে বসে থাকতে দেখেই বেশি অবাক হচ্ছেন তিনি। সামান্য বিষয়ে কীভাবে বাড়ি মাথায় তুলতে হয় তা ভালো করেই জানে তার বউ। সামান্য বিষয়ে চিৎকার, চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তোলা মানুষটা ঠান্ডা হয়ে বসে আছে এটা ভেবে ভেবেই মনে মনে কিঞ্চিৎ অস্থির হচ্ছেন নিয়াজ গোনী। বউয়ের ভাব ভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারছেন না।
মেয়ের কান্ড দেখে মাহাপারার বাবা-মার মুখে কোনো কথা নেই। দুই পরিবারের কেউই কখনো ঘুনাক্ষরেও টের পাননি এদের ভেতরে ভেতরে এমন কিছু চলছে। বউরা তো বউরা ছেলেদের মুখেও টু শব্দ নেই আজ।
লম্বা সময় বিরতির পর সালমা বেগম উঠে দাঁড়ান। তাকে দাঁড়াতে দেখে মাহাপারও উঠে দাঁড়ায়। কাউকে কিছু না বলেই জোর কদমে এগিয়ে যান নিজের রুমের দিকে। সালমা বেগম ড্রইং রুম থেকে প্রস্থান করলে নিয়াজ গোনী উঠতে নিলে তাকে বাঁধা দিয়ে মাহাপারা বলে,
‘আপনি বসেন আমি দেখছি।’
সালমা বেগম নিজের ঘরে এসে বিছানার কার্নিশ ঘেষে বসতেই রুমে এসে উপস্থিত হয় মাহাপারা। খালার মুখোমুখি বসে কোনো ভনিতা ছাড়াই বলে,
‘তুমি আমার সাথে রাগ করছ কেন খালামনি? রাগ যদি করতেই হয় তাহলে নিজের ছেলের সাথে করো।’
সালমা বেগম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন কেবল মুখে রা করেন না। খালার দৃষ্টির জিজ্ঞাসা টের পেয়ে মাহাপারা যেন মনে মনে সাহস পায়। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বলে,
‘সব দোষ তো তোমার ছেলের। আমি কত করে বললাম সবাইকে সব বলে দেই। কিন্তু না, সে বলবে না। তোমাদের বললে নাকি তোমরা রাজি হবা না। প্রথমে তো ভালোবাসি, ভালোবাসি করে পাগল করেছে আমি বাসি না তা না। আমিও বাসি। কিন্তু তোমার পাগল ছেলে বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লেগেছে। কত করে বললাম সবাইকে বলে দেই। নিজেদের মধ্যে তো এটাই প্রথম বিয়ে। ধুমধাম করে অনুষ্ঠান হবে, আত্মীয়-স্বজনরা সবাই আসবে, কত হৈ-হুল্লোড় হবে, আনন্দ হবে কিন্তু না। তার এক কথা, বাসা বললে কেউ রাজি হবে না। কেন রাজি হবানা বলো তো?’
এগিয়ে এসে আলতো করে সালমা বেগমের হাত চেপে ধরে আরও বলে,
‘তুমি আমাকে এত ভালোবাসো তাহলে কেন রাজি হবানা বলো? তোমার ঘাড় ত্যাড়া ছেলেকে বুঝাতেই পারলাম না। তাই বাধ্য হয়ে তার কথাই মেনে নিতে হলো। ভালো তো তাকে আমিও কম বাসি না। তাই ফিরায় দিতে পারলাম না।’
এতটুকু বলে থামে মাহাপারা। খালার মুখের দিকে তাকিয়ে বুুঝার চেষ্টা করে তাকে কনভিন্স করতে পেরেছে কিনা। কিন্তু সালমা বেগমের মুখের ভাবভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন না পেয়ে বুঝতে পারে তার কথায় তেমন কোনো কাজ হয়নি। কথার ডোজ বাড়িয়ে দিতে হবে। এবার দুই হাতে খালার হাত চেপে ধরে আগের চাইতে আরও বেশি মায়া মায়া মুখ করে, কন্ঠের আবেগ বাড়িয়ে নিয়ে বলে,
‘তুমি কি সত্যি সত্যি রাগ করেছ? আমাকে মেনে নিবা না? সত্যিই আমাদের বাসা থেকে বের করে দিবা?’
‘কে বলল বের করে দিব?’ বেফাঁস প্রশ্নটা সালমা বেগমের মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো। এতে করে মাহাপারাও বুঝতে পারে তার এবারের ডোজে কাজ হচ্ছে। তাই আরও বেশি অসহায় ভাব চোখেমুখে ফুটিয়ে তুলে বলে,
‘তোমার ছেলে বলেছে। তুমি আমাকে মেনে নিবানা। আমাদের বাসা থেকে বের করে দিবা। সেজন্য তো হাউজ রেন্ট এজেন্সিকে বলে রেখেছে বাসা দেখে রাখতে। কিন্তু আমিও বলে দিয়েছি আমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাব না। তুমি তাড়িয়ে দিলেও যাব না। প্রয়োজনে তোমার পা জড়িয়ে ধরে থাকব যতক্ষণ না তোমার রাগ ভাঙছে।’
এর মধ্যেই চোখ ছলকে একটা ফোঁটা পানিও বেরিয়ে গেছে মাহাপারার গাল বেয়ে। মাহাপারা ভীষণ আদরের সালমা বেগমের। বোনের মেয়ে হলেও কখন সে মাহাপারাকে নিজের মেয়ের চাইতে কম ভাবেনি, ভালোবাসেননি। আদরও কম করেননি। পরপর চারজন পুত্র সন্তানের জন্মের পর কন্যা সন্তানের সব রকম আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। যদিও মনের ভেতর সুপ্ত আকাঙ্খা ছিল তার একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান হবে৷ কিন্তু তা আর হলো কই। ওহীর চার বছরের ছোট মাহাপারা। ছোটবোনের কোল জুড়ে যখন মাহাপারা এলো তখন বোনের চাইতে সালমা বেগমই বেশি খুশি হয়েছিলেন। আনন্দে কেঁদেও ছিলেন তিনি কোলে নিয়ে। এমনকি মাহাপারার নামটাও তারই দেয়া। জন্মের পর থেকে আদরের শেষ নেই। তারপর যখন ওহীর জন্মের সাত বছর পর তার নিজের কোল জুড়ে মেয়ে সন্তান এলো তখনও মাহাপারার জন্য বিন্দুমাত্র আদর কমেনি তার মনে। বরং দুই মেয়ে এসে যেন আদর বেড়েছে বহুগুণ। সেই মেয়ের চোখে পানি দেখে বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠে সালমা বেগমের। কিন্তু মুখে কিছু বলেন না তিনি। মাহাপারা চাপাচাপি করতে থাকে। তখনই রুমে প্রবেশ করেন নিয়াজ গোনী। এগিয়ে এসে মাহাপারার মাথায় একটা হাত রেখে বলেন,
‘মা তুমি একটু সবার সঙ্গে গিয়ে বসো। আমি তোমার খালামনির সাথে কথা বলবো।’
কিছু না বলেই চুপচাপ বেরিয়ে যায় মাহাপারা। তার বুঝতে অসুবিধা হয় না কি বিষয় কথা হবে এখানে। বরং এই মুহূর্তে তার এখান থেকে প্রস্থান করাটাই উচিত মনে করে।
মাহাপারা বেরিয়ে যেতেই নিয়াজ গোনী বউয়ের মুখোমুখি বসে সরাসরি বলেন,
‘এখন বলো তুমি কি চাও?’
‘আমার চাওয়া না চাওয়ায় কিছু পরিবর্তন হবে এখন?’
এতক্ষণে কথার খৈ ফুটে সালমা বেগমের মুখে। কথা যেন তার ভেতর উত্তপ্ত লাভার মতো বলকাচ্ছিল। এখন সুযোগ পেয়ে তা ফেটে বেরিয়েছে।
‘আহা আমি তো পরিবর্তন হওয়ার কথা বলছি না। ছেলে বিয়ে করেছে অন্যায় তো কিছু করেনি। বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে তুমি চুপ করে থাকলে তো চলবে না। তুমি ভালো করেই জানো এই ঘর সংসারে তোমার, তোমার কথার মূল্য কতটা।’
‘হ্যাঁ, সেজন্যই তো ছেলে কাউকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে। তাও মেয়েটা কে? মাহাপারা! যাকে আমি সবসময় নিজের মেয়ের মতো দেখে এসেছি।’
‘মেয়ের মতো দেখে এসেছ কিন্তু মাহাপারা তোমার বোনের মেয়ে। ওরা খালাতো ভাইবোন তাই ওদের মাঝে পছন্দের সম্পর্ক হওয়া বা বিয়ে হওয়াটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু ওদের মেনে না নিলে সেটা আমাদের দোষ হবে, অন্যায় হবে।’
‘হ্যাঁ, মেনে না নিলে তো আলাদা বাসা নিয়ে নিবে।’
‘ওহো রিসালাতের মা, না মেনে নেয়ার কথা আসছে কেনো। আলাদা বাসার কথাই বা কেন আসছে?’
‘আপনার ছেলে আলাদা বাসা নেয়ার কথা ভাবছে আর আমি বলতেও পারব না?’
‘ওরা ভয় পেয়েছে। হয়তো ভাবছে আমরা মেনে নিব না। সেজন্যই হয়তো আলাদা বাসা নেয়ার কথা ভাবছে। তোমার ছেলেকে তুমি চিনো না? বউ নিয়ে শশুরবাড়ি উঠার মতো মানুষ তোমার ছেলে নয়। তাছাড়া বউ নিয়ে সে নিশ্চয়ই রাত পথে কাটাবে না তাই সম্ভবত ভাবছে। কিন্তু কেবল ভাবছে নিচ্ছে তো না, এটা নিয়ে তুমি কেন চিন্তা করে নিজের প্রেসার বাড়াচ্ছ। আমরা মেনে নিলেই আর এমন কিছু হবে না।’
‘এত সহজে মেনে নেয়ার কথা বলছেন আপনি?’
‘ওরা আমাদেরই সন্তান রিসালাতের মা।’
‘তাই বলে ওদের অন্যায়কেও প্রশ্রয় দিব? অসম্ভব। আমাদের বাড়ির শেষ বিয়ে এভাবে চোরের মতো হয়ে গেল। এটা মেনে নিতে বলছেন আপনি? দশজন দেখলো না, জানলো না।৷ কোনো আনন্দ নেই, হৈ-হুল্লোড় নেই। সব মেনে নিতে বলছেন?’
‘শেষ বিয়ে কেন বলছ? বানী তো এখনো আছে। আর ওকে বিয়ে দিতেও দেরি আছে।’
‘বানী তো মেয়ে। ওহী আমার ছোট ছেলে, সব ভাইদের মধ্যে সবার ছোট, কত আদরের। আপনি বলুন, আপনার ছোট ছেলের বিয়ে নিয়ে আপনার কোনো শখ, আহ্লাদ ছিল না?’
‘শখ, আহ্লাদ তো আমরা চাইলে এখনো পূরন করতে পারব রিসালাতের মা। ওরা তো বিয়ে করে পালিয়ে যায়নি৷ বাসায় চলে এসেছে। আমাদের শখ, আহ্লাদ সব পূরণ করতে পারব আমরা। তুমি শুধু হাসি হাসি মুখ করে ওদের মেনে নাও।’
‘কিন্তু…’
বউকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দেন না নিয়াজ গোনী।
‘ওরা আমাদেরই সন্তান। একে অপরকে ভালোবাসে। ভয় পেয়েছে, ভেবেছে আমরা মেনে নিব না। সেজন্য একটা ছোট ভুল করে ফেলেছে। তাই বলে আমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে হবে বলো? উঠে গা ঝাড়া দাও রিসালাতের মা, আর বসে থেকো না। সায়মাকে দেখেছ? আসার পর থেকে একটা কথাও বলেনি। তোমার মেজাজ সম্পর্কে ওরা ভালো করেই জানে। এখন যাও গিয়ে সব কিছু সামলে নাও। হাসি মুখে ছেলের বউকে গ্রহন করো। মাহাপারা ওর বাবা-মার একমাত্র মেয়ে। এভাবে চলে গেলে ওদের কিন্তু আজ রাতে মেয়ের চিন্তায় আর ঘুম হবে না। যাও, একমাত্র তুমিই পারবে সবকিছু স্বাভাবিক করতে। ভুলে যেও না এই সংসারের কর্তী তুমি।’
স্বামীর কথা শুনে এবার দ্বিধায় পড়ে যান সালমা বেগম। কি বলবেন, কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।
রুমের দরজায় কড়া নড়তে দু’জনেই সেদিকে একবার তাকান। ভেজিয়ে রাখা দরজা ঠেলে মাহাপারার বাবা-মা প্রবেশ করেন। মাহাপারার মা সায়মা বেগম যে মনে মনে যথেষ্ট আতংকিত তা তার চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। দরজার কাছটায় দাঁড়িয়ে থেকেই মাহাপারার মা বলেন,
‘আপা, দুলাভাই রাত তো অনেক হয়ে যাচ্ছে। আমরা আজ না হয় আসি৷ আর মাহাপারাকেও সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। পরে না হয় ঠান্ডা মাথায় বসে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।’
সায়মা বেগম থামতে না থামতেই গম্ভীর স্বরে স্বাভাবিক ভাবেই সালমা বেগম বলেন,
‘কাকে নিয়ে যাবি?’
‘মাহাপারাকে।’
‘আমার বাড়ির বউ কোথাও যাবে না।’
‘কিন্তু আপা…’
‘এদিকে আয়।’
বড় বোন কাছে ডাকতেই সময় বিলম্ব না করে সায়মা বেগম এগিয়ে যান। ছোট বোন কাছে আসতেই সালমা বেগম তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলেন,
‘মাহাপারা যতটা তোর মেয়ে ততটা আমারও। আর এখন তো আমার কেবল মেয়েই নয় পুত্রবধূও। আমার ওহীর বউ।’
বড় বোনের মুখে এমন কথা শুনে চোখ ভরে ওঠে সায়মা বেগমের। বুকের ভেতর থেকে ভার নেমে যায়। এতক্ষণ গুমোট হয়ে থাকা ভাবটা কেটে যায় সঙ্গে সঙ্গেই। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে ঘরে উপস্থিত সকলেই। এই একজন মানুষের মেনে নেয়া মানে সব ঠিক হয়ে গেছে আর কোনো চিন্তার কারণ নেই।
কিন্তু মুখে বলে দিলেও সালমা বেগমের ভেতরে একটা খচখচ রয়েই গেল। ছোট ছেলের বিয়ে নিয়ে, বউ নিয়ে মনে মনে অনেক রঙের জল্পনাকল্পনা করে রেখে ছিলেন তিনি। তবে এটাও শতভাগ সত্যি আজ মাহাপারার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে কিছুতেই এই বিয়ে তিনি মেনে নিতেন না। তাকে কেউ রাজি করাতে পারতো না সয়ং তার স্বামী নিয়াজ গোনীও নয়। ছেলেকে ঘর থেকে বের করে দিতে হলেও আপত্তি করতেন না সালমা বেগম। তার শাসনে, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা অনুমতি ছাড়া কেউ কিছু করবে সেটা সে কোনোভাবেই মেনে নিবেন না। এতটা স্বাধীনতা তিনি তার কোনো ছেলেমেয়েকেই দেননি। যে ছেলেমেয়েরা স্কুল কলেজে থাকা অবস্থায় কারো সাথে বন্ধুত্ব করার সময় মাকে হাজারবার বলেছে তার সেই সন্তানদের মাঝে একজন তাও সব চাইতে আদরের ছোট ছেলে তাকে না জানিয়ে, না জিজ্ঞেস করে বিয়ের মতো এত বড়ো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এমনকি বিয়ে করে বউ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে বিষয়টা এখনো ধাতস্থ হতে পারেননি সালমা বেগম। এখনো এই সত্যিটা মেনে নিতে মনে সংশয় কাজ করছে তার। মেনে নিতে না পারলেও আপাতত আজকের দিনের এটাই কঠিন সত্যি তার ওহী তাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে।

চলবে…

#নেশা_লাগিল_রে। পর্ব-৪
লেখক- ইতি চৌধুরী
(কোনো ক্রমে কপি করা যাবে না।)

ঘড়িতে রাত পনে একটা বাজে। সবেই সবাই রাতের খাওয়া দাওয়া সেরেছে। এই বাড়িতে অবশ্য রাত দশটা নাগাদ খাওয়া দাওয়ার পাট চুকে যায় কিন্তু আজকের দিনটাও তো অন্য সব দিনের মতো নয়৷ এই পরিবারের ইতিহাসে যে ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি তেমন কিছু আজ ঘটেছে, সেক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম হওয়া তো স্বাভাবিক। মাহাপারার বাবা-মা এগারোটার পরেই বেরিয়ে গেছেন। যদিও তাদের বলা হয়েছিল খাওয়া দাওয়া করে যেতে এমনকি তাদের জন্য অল্প সময়ের মধ্যে রিসালাতের বউ তাইয়েবা বাড়তি দুই পদ রান্নাও করে ফেলেছিল। কিন্তু আকস্মিক এই ঘটনা হজম করে উঠতে পারেননি এখনো সায়মা বেগম। তাই আপাতত তার গলা দিয়ে খাবার নামবে না। সবার অনেক জোরাজুরির পরেও তারা না খেয়েই চলে গেছেন। সালমা বেগম অবশ্য বোনের এত প্যানিক হওয়ার কারণ টের পেয়েছেন। আর টের পেয়েছেন বলেই আর বাড়তি চাপ দেননি। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওহী চলে গিয়েছিল ছাঁদে, দুটো সুখ টান দিতে। চেইন স্মোকার না হলেও মোটামোটি ভালো স্মোকিং এর অভ্যাস ওহীর আছে। সেই দিনের বেলা মাহাপারার সাথে দেখা হওয়ার আগে লাস্ট সিগারেট হাতে উঠেছিল আজ তার। তারপর মাহাপারার সাথে দেখা করা। ওকে সবটা বুঝিয়ে বলা। একের পর এক ঘটনা চোখের সামনে এমন ভাবে ঘটে গেছে যে বেচারা আর সময় পায়নি একটা সিগারেটে হাত দেয়ার। সারাদিনে ছোটোখাটো আকারের হলেও একটা টর্নেডো গেছে তার উপর দিয়ে৷ বাহিরে না দেখালেও ভেতরে ভেতরে ওহী অল্প বিস্তর হলেও নার্ভাসছিল। তার নার্ভাস হওয়াটাও স্বাভাবিক। সামনের মানুষটা আর কেউ নয় স্বয়ং তার মা। সালমা বেগম যথেষ্ট বিচক্ষণ একজন মহিলা। তাকে বোকা বানানো বা তার চোখে ধুলো দেওয়া ওতটাও সহজ ব্যাপার নয়। সামান্য এদিক সেদিক হলেই তিনি ধরে ফেলবেন৷ তাই মায়ের সামনে কোনোক্রমেই ভুল করা যাবে না। সব কিছু ঠিকঠাক হবে কিনা, করতে পারবে কিনা এসব ভেবেই বুক শুকিয়ে ছিল ওহীর। আপাতত আজকের মতো সব ভালোয় ভালোয় মিটেছে এটাই অনেক তার জন্য, বাকি পরেরটা পরে দেখা যাবে। তবে কালকের দিন শুরু হওয়ার আগে মাহাপারাকে আরেকবার ব্রিফ করতে হবে। পুনরায় সব বুঝিয়ে দিতে হবে যেন কোনো ভুল না হয়। একটা ভুল হলেই সব ভেস্তে চলে যাবে। বিয়ের আসল কাহিনি মা জেনে ফেললে সর্বনাশ হতে সময় লাগবে না। সবে সিগারেটটার আধা খাওয়া হয়েছে ওহীর। সিগারেট শেষ হওয়ার অপেক্ষা টুকুও করতে তর সইছে না যেন তার। তাই আধো খাওয়া সিগারেটটা নিচে ফেলে পায়ে পিষে আবার তুলে ছুঁড়ে দূরে ফেলে দেয়। মা যদি জানতে পারে বা দেখতে পারে তাহলে তাদের চার ভাইয়ের কপালে শনি আছে তো আছেই সঙ্গে তার বাবার কপালেও শনি আছে। বাড়িতে সিগারেট খাওয়া নিয়ে কঠিন নিষেধাজ্ঞা আছে সালমা বেগমের। বাড়ির পেছনের দিকে ছোটো বাগানের মতো আছে। বাগান বলতে খালি জাগায় সেখানে কিছু এলোভেরার চারা লাগো আর কয়েকটা ফুলের টব এই, এর বেশি কিছু না। অবশ্য দুইটা বড়ো বড়ো আম ও কাঁঠালের গাছ আছে। এদিকটা প্রতিদিন বাড়ির দারোয়ান পরিষ্কার করে রাখে। তাকে ওহীই বলে রেখেছে সিগারেটের বাগ টাগ পেলে ফেলে দিতে। কেউ যেন টের না পায় বিশেষ করে মা। বিনিময়ে সে দারোয়ানকে প্রতিমাসে পাঁচশ টাকা বকশিসও দেয় সবার দৃষ্টির আড়ালে।
আধো খাওয়া সিগারেটটা নিভিয়ে দূরে ছুঁড়ে মেরে নিচে নামে ওহী। ভালো রাত হয়েছে, মাহাপারা ঘুমিয়ে পরার আগে কথা বলে নিতে হবে। নিজের ঘরে ঢুকতেই দেখতে পায় মাহাপারাকে যেমন রেখে গিয়েছিল আপাতত সে আর সেই বেশ ভুসায় নেই। কাপড় বদলে একটা লেডিস ট্রাউজার প্যান্ট ও ঢিলাঢালা লেডিস গ্যাঞ্জি পরে নিয়েছে। চুলগুলো বেনি করে পেছনের দিকে রেখেছে। চেহারা সুরত দেখে বুঝা যাচ্ছে হাত মুঝ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে৷ পার্লার থেকে করা মেকাপের ছিটে ফোঁটাও নেই এখন মুখে। মিরের সামনে দাঁড়িয়ে মুখে কি যেমন মাখছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে তেলতেলে কিছু হবে হয়তো। মুখটা এখন থেকে গ্লো করছে। দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে ভেতরের দিকে কদম বাড়ালেই তাতে টোকা পরে। থেমে গিয়ে ভেজিয়ে দেয়া দরজা টেনে ধরে ওহী। এই সময় বানীকে নিজের ঘরের দরজায় দেখে সামান্য অবাক হয় বটে তবে তা সে নিজের মুখোবয়ে প্রকাশ করে না। স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করে,
‘কিরে তুই এই সময়?’
‘বাবা তোমাকে ডাকছে। স্টাডি রুমে আছেন।’
‘ঠিক আছে তুই যা, আমি দেখছি।’
এক মুহূর্তও আর অপেক্ষা করে না বানী। দ্রুত কদম চালিয়ে সেখান থেকে সরে পরে। মাহাপারার সাথে যথেষ্ট সখ্যতা তার কিন্তু আজ এখন অব্দি তাদের কথা হয়নি৷ যদিও মনে মনে বেশ ক্ষিপ্ত সে। তলে তলে তারই ভাইয়ের সাথে ডুবে ডুবে জল ঘোলা করেছে অথচ তাকে বলেনি কখনো। কখনো-সখনো প্রেম-ট্রেমের কথা উঠলেও তা দক্ষতার সহিত এড়িয়ে গেছে। এমন একটা ভাব করেছে যেন প্রেম কি, খায় না মাথায় দেয় তাই জানে না। ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না এমন একটা ভাব করে চলেছে সবসময়। অথচ আজ সেই মেয়েই কিনা এত বড়ো ঘটনা ঘটিয়ে বসেছে। অবশ্য ঘটনা সে একা ঘটায়নি। সে যাই হোক। আপাতত এসব নিয়ে মনে মনে ভীষণ দুঃখ পেয়েছে বানী। তাই সে ঠিক করেছে মাহাপারা নিজ থেকে এসে তার সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত সেও আগ বাড়িয়ে কথা বলবে না। নাটকের ননদগুলো যেমন ভিলেইন হয় সেও এবার ভিলেইন ননদ হবে তবে তা কেবল মাহাপারার ক্ষেত্রে। অন্যথায় সে তার ভাবীদের যথেষ্ট ভালো পায়। অন্যান্য ননদ, ভাবীদের মতো তাদের কখনো কিছু নিয়ে লাগে না।
স্টাডির রুমটা খোলাই ছিল। তাই ওহী এসে সরাসরি ভেতরে ঢুকে, ভেতর থেকে দরজাটা লক করে দেয়। এগিয়ে এসে বাবার মুখোমুখি একটা সোফায় বসে বলে,
‘আমাকে ডেকেছিলে বাবা?’
ডায়েরি থেকে চোখ তুলে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস ছেড়ে নিয়াজ গোনী বলেন,
‘কংগ্রাচুলেশনস, আমি যা আশা করেছিলাম তুমি তার চাইতেও বেশি করে দেখিয়েছ।’
এবার বাপ-ছেলে দু’জনেই কিছুক্ষণ হেসে নেয়। যুদ্ধ ময়দানে নেমে প্রথম বিজয়ের হাসি এটা তাদের। হেসে নিয়ে ওহী বলে,
‘তুমি ভরসা করে একটা দায়িত্ব দিয়েছ আমি কি সেটা হেলায় ফেলতে পারি বলো? তাছাড়া প্রতিপক্ষ যখন শক্তিশালী তখন নিজেদেরও তো শক্ত হয়েই ময়দানে নামতে হবে তাই না।’
‘একদম ঠিক৷ আমি ভুল মানুষকে চুজ করিনি। ইনফ্যাক্ট সঠিক উইপেনটাই হাতে নিয়েছি। তোমরা পাঁচ ভাই-বোনই তোমার মায়ের জন্য বিশেষ তবে তোমার জন্য তোমার মায়ের আদর, মহব্বত বরাবরই বেশি। বেশি হবে বাই না কেন? ডাক্তাররা তোমার বাঁচার সম্ভাবনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তোমার মা আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে, দয়া ভিক্ষা করে ফিরিয়ে আনলো তোমায়। এত কষ্ট সহ্য করে জন্ম দেওয়া সন্তান তুমি তার। তাই বরাবরই সে তোমার প্রতি অন্যদের তুলনায় বেশি দূর্বল।’
‘আর মায়ের এই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তুমি বাজি মাত করলে।’
‘অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না। কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছি কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই এই পথটা বেছে নিতে হয়েছে আমায়।’
‘হুম,’
‘তবে এক্ষেত্রে তোমার মাকে আমি দোষ নেই না। সে যা দেখেছে সেটাই শিখেছে। আমার সাথে বিয়ে হয়ে এই সংসারে আসার পর থেকে দেখেছে আমার মায়ের হুকুম ছাড়া রান্নাটাও হয় না। আমার মা এসব শিখেছেন দাদীজানের থেকে আর তোমার মা শিখেছে আমার মায়ের থেকে। আমরা ভাইয়ে আলাদা হয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম হয়তো সব বদলে যাবে। কিন্তু না কিছুই বদলায়নি। আমি অনেক চেষ্টা করেও আমার মাকে বদলাতে পারিনি। কিন্তু তোমার মাকে বদলাতে হবে যা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি বেঁচে থাকতে এই পরিবর্তন দেখে যেতে চাই। সংসারটা সবার তাই একজনের রাজ্যত্ব আর নয়। যেহেতু সংসারটা সবার তাই এখানে মন খুলে কথা বলার, মতামত দেয়ার, মন মত সংসার করার অধিকার সবাইকে দেয়া হবে। তোমার মাকে এটা বুঝতে হবে। যেটা কথায় হয়নি সেটা এবার কাজে হবে।’
‘চিন্তা করো না বাবা এবার পরিবর্তন আসবেই। তবে আমার মনে হয় কি জানো? কেবল আম্মুর একা নয়, ভাইয়াদেরও পরিবর্তন প্রয়োজন।’
‘সময় মতো ওদেরও সাইজ করে দেয়া যাবে। পরেছে বাপের পাল্লায় সাইজ না হয়ে যাবে কোথায়।’
বাবার মুখে এমন কথা শুনে ওহী না হেসে পারে না। নিয়াজ গোনী আরও বলেন,
‘তবে তুমিও কিন্তু কিছু কম নও বাবা।’
‘আমি!’ অবাক হয় ওহী।
‘সব রেখে মাহাপারাকেই কেনো বেছে নিলে? রহস্যটা কি?’
‘কোনো রহস্য নেই বাবা। আমি যেমন মায়ের দূর্বলতা তেমনি মাহাপারাও তার আরেকটা দূর্বলতা। নয়তো ভাবো যত সহজে আম্মু মাহাকে৷ মেনে নিয়েছে ওর জায়গায় অন্য কেউ হলে এতক্ষণে আমাকেসহ বাসা থেকে বের করে দিত। একমাত্র মাহা বলেই এখনো আমি এই বাড়িতে আছি বউসহ।’
‘হুম, কথা ভুল বলোনি বাবা। তবে যেহেতু আমি তোমার বাবা তাই তুমি না বললেও বুঝতে পারছি তুমি সুযোগ পেয়ে এক ঢিলে দুউ পাখি শিকার করেছ। কিন্তু আমার জানতে চাওয়াটা হচ্ছে পাখিটা শিকার করলে কীভাবে? নিশ্চয়ই কোনো গেইম খেলেছ।’
‘খুব বেশি বুঝতেছ বাবা। এমন কিছুই নয়। আমি জাস্ট একটা পার্ফেক্ট প্ল্যান করেছি ব্যস। আর এই প্ল্যানে মাহা আমার ট্রাম কার্ড।’
‘তুমি বলতে না চাইলে ছেড়ে দিচ্ছি। বাবা হিসেবে প্রাউড ফিল করছি তোমাকে যতটা যোগ্য ভেবেছিলাম তুমি তার চাইতে যথেষ্ট বেশি যোগ্য। ইউ মেইড মি প্রাউড টু ডে।’
একটা হাসি প্রশস্ত হয় ওহীর চোয়াল জুড়ে। বাবার মুখে এমন কথা শুনে বুক চওড়া হয় তার। বসা থেকে উঠতে উঠতে বলে,
‘অনেক রাত হয়ে গেছে বাবা গিয়ে শুয়ে পরো। কালকের জন্য তৈরি হতে হবে আমাদের।’
আর অপেক্ষা করে না ওহী। নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পরার উদ্যোগ নেয়। পেছনে নিয়াজ গোনী ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে পেছন ডাকেন। বাবার ডাকে থেমে গিয়ে তার দিকে তাকালেই নিয়াজ গোনী বলেন,
‘বেস্ট অফ লাক মাই সান। উইস উই এ ভেরি হ্যাপি লাইফ।’
বাবার কথার কোনো জবাব দেয় না ওহী। বেড়িয়ে যায় সময় বিলম্ব না করে। স্টাডি রুম থেকে বেরিয়েই হাফ ছেড়ে বাঁচে সে। এই এক্ষুনি সে বাবার কাছে হাতে নাতে ধরা পরে যাচ্ছিলো। একেই বলে বাপ। মুখ দেখেও সন্তানের মন পড়ে ফেলতে পারে। এগিয়ে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখা জগ থেকে ঢেলে নিয়ে পানি খায় সে। এমন সুযোগ বারবার আসে না। এমন হাতের লক্ষি পায়ে ঠেলে দেওয়ার মতো বোকা ওহী নয়। সেজন্যই বাবার সাথে এই পরিকল্পনা করার সময়ই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যেভাবেই হোক সে মাহাপারাকেই বিয়ে করবে। পরেরটা পরে দেখা যাবে। আপাতত নামে হলেও তার মাহাকেই চাই। বুঝ হওয়ার পর থেকে তার ভালো লাগার সবটা জুড়ে থেকেছে মাহাপারা। এরপর যখন ভালোবাসা এলো জীবনে সেটা মাহাকে ঘিরেই। যদিও কখনো বলার সাহস হয়নি। সাপ, নেউলে সম্পর্ক তাদের সেখানে ভালোবাসার কথা বলবে কীভাবে? মাহাপারা তো কখনো বুঝতে পারেনি কতটা ভালোবেসে সে তাকে মাহা বলে ডাকে। অথচ তার মুখে মাহা শুনলেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে সবসময়। এই মেয়েকে ভালোবাসার কথা বলে গালমন্দ খাওয়ার শখ কখনো হয়নি বলেই আগ বাড়িয়ে কখনো নিজের মনের অনুভূতিদের প্রকাশ করেনি ওহী। থাক অনুভূতিরা নিজেদের মতো আড়ালে, আবডালে। সময়ের টা সময়ে দেখা যাবে ভেবে সময়ের হাতে সব ছেড়ে রেখেছে সবসময়। আজ সময়ও তার কাজ করেছে। মাহাপারার দূর্বলতাটাও ওহীর জানাছিল বলেই সরাসরি গিয়েছিল সে মাহাপারার সাথে কথা বলতে। ওহী ভালো করেই জানতো যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও মাহাপারা বাহিরে যেতে চায়। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে সে। এরপর কি হবে সেটাও সময়েরটা সময়ে দেখা যাবে। হোক নামে তবু এক সঙ্গে তো থাকবে, এক ঘরে তো থাকবে, এতটাও সহজ হবে মাহাপারার পক্ষে তাকে ফেলে চলে যাওয়া? আর গেলেই বা কী? গেলে ফিরেও আসা যায়। সে না হয় অপেক্ষা করবে ততদিন। মাহাপারা নিজের স্বপ্ন পূরন করে তার কাছে ফিরে আসবে। দিন শেষে পাখি যেমন তার নীড়ে ফিরে তেমনি একদিন মাহাপারাও ফিরবে ওহীর কাছে। মনে মনে এসব ভেবে কিঞ্চিৎ উচ্ছ্বসিত হয় ওহী। আবার নিজেকে সামলে নিয়ে ভাবে দূর এখনই কি যা নয় তা ভাবা শুনে দিয়েছে সে। পথ তো সবে শুরু। বহু দূর যেতে হবে তাকে। মাহাপারার মনের শূন্য জমিনে নিজের জন্য একটা ঘর করতে হবে আগে। তারপর চিরবাস্থানের কথা চিন্তা ভাবনা করা যাবে। ভাবতেই হাসি পায় ওহীর। বাচ্চাদের মতো কিসব আবোলতাবোল ভাবছে সে। ভালোবাসলে বুঝি মানুষ এমনই হয়ে যায়! মনে মনে আকাশ-কুসুম ভেবে তাজমহল গড়ে ফেলে। আগের চাইতে আরও বেশি হাসি পায় ওহীর কিন্তু এই জায়গাটা আপাতত সেইফ নয় হাসার জন্য। নিজের ঘরে গিয়ে তারপর হাসা যাবে মন খুলে। মাহার সাথেও কথা আছে তার। বাবার সাথে কথা বলার চক্করে বড্ডো দেরি হয়ে গেল। এতক্ষণে ঘুমিয়ে পরেছে কিনা কে জানে।

চলবে…