নোলক ২ পর্ব-০১

0
95

#নোলক_২
পর্ব ১
#তানিয়া_মেধা

শুভ্র নিজেকে আয়নায় কুটিয়ে কুটিয়ে দেখছে। দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ে করতে যাচ্ছে সে। সেদিনের পর থেকে পদ্মকে সে খোঁজে পায় নি। সে পাগলের মতো খুঁজেছে কিন্তু পায়নি। শুভ্র এখন অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। সাবিনার কথায় সে উঠে বসে। মুনিরা তার চোখের বিষ। হঠাৎই এমন পরিবর্তন শুভ্রর। মুনিরা এখন ঘরের এক কোণে পরে থাকে।

শুভ্র ভিতর থেকে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে টেবিলের দিকে তাকায়। পদ্মর হাতে লিখা একটা চিঠি পড়ে আছে। সেখানে লিখা আছে পদ্ম ফিরে আসবে। পদ্মর জন্য অপেক্ষা করতে সে রাজি কিন্তু সাবিনার চাপে সে এই বিয়েতে রাজি হতে বাধ্য হয়েছে। শুভ্র চিঠিটা একটা ড্রয়ারে রেখে বেরিয়ে আসে।

রাজকীয় চেয়ারে বসে ছিল সাবিনা। শুভ্রকে নামতে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেন। চেয়ার থেকে উঠে শুভ্রর কাছে গিয়ে বলে, ‘ বাহ আমার ছেলেকে তো দার লাগছে। ‘

সাবিনার কথায় শুভ্র হাসে। সাবিনার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ ধন্যবাদ মা।’

সাবিনা আর শুভ্র দাড়িয়ে নানা আলাপ করছে। তখন সদর দরজা দিয়ে দিলোয়ার প্রবেশ করেন। তাদের দুজনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলেন,’ তোমরা কি এখানে দাড়িয়েই দিন পাড় করে দিবে?’

দিলোয়ারের কথায় সাবিনা তার দিকে তাকায়। একটু হেসে বলে,’ খেয়ালই ছিলো নাহ চল শুভ্র।’

শুভ্রর হাত ধরে এগিয়ে যেতে থাকেন। শুভ্রও মাথা নেড়ে তার সাথে যেতে শুরু করে। দূর থেকে এগুলো দেখে মুনিরা।

শুভ্রকে দেখে হাসে। ছেলেকে যে দেখতে পেয়েছে এটাই তার কাছে অনেক বলে মনে হচ্ছে। তার চেহারা শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। ঐগুলো জানার পর দিলেয়ারও কখনো তার কাছে যায় নি হয়তো তাকে ভালোইবাসে নি।

******
কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ে পড়ানো শুরু হবে। কাজী খাতায় সব তথ্য তুলে নিয়েছেন। ছেলেকে কবুল বলতে বললে। শুভ্র যখন কবুল বলতে যাবে তখনই একটা মেয়েলি গলায় আওয়াজ আসে, ‘ এই বিয়ে হবে নাহ।’

সবাই আওয়াজের উৎসের দিকে তাকায়। এই কথা বলা ব্যক্তিটিকে দেখে শুভ্রর যেন দেহে প্রাণ ফিরে এলো। কারন মেয়েটা ছিল পদ্ম। পদ্ম এগিয়ে এসে আবারও তেজি গলায় বলে,’ এই বিয়ে হবে না কারণ আমি উনার স্ত্রী।’

এবার যেন বিয়ে বাড়িতে হৈ-হুল্লোড় লেগে গেলো। চারদিকে কানাঘুষা শুরু হলো। কিন্তু শুভ্রর দৃষ্টি শুধু পদ্মর দিকে। কতদিন পর দেখছে এই প্রিয় মুখ। এতক্ষণে কনের বাবা এগিয়ে আসেন পদ্মর। দেখতে ভদ্রলোক মনে হচ্ছে। কনের বাবা এগিয়ে এসে অসহায় সুরে পদ্মকে বলেন,’ কে মা তুমি দয়া করে আমার মেয়ের এত বড় ক্ষতি করো নাহ।’

পদ্ম ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ আমি আপনার মেয়ের জীবন বাচাতে বলছি আমি সত্যি উনার স্ত্রী বিশ্বাস না হলে শুভ্রকে জিজ্ঞেস করেন। ‘

ভদ্রলোক শুভ্রর দিকে তাকায়। শুভ্র মাথা নেড়ে হ্যা জবাব দেয়। ব্যস এতটুকু তে পুরো বিয়ে বাড়িতে হৈচৈ পড়ে গেল৷ কনের বাড়ির লোকেরা নানাভাবে অপমান করলো তাদের। কিন্তু এতে পদ্মর একটুও মাথা ব্যথা নেই।

****
পদ্ম ছাদে দাড়িয়ে আছে। তার পাশে এসে শুভ্র দাড়িয়ে আছে অনেক্ষণ হলো কিন্তু পদ্ম কোনো কিছু বলছে। শুভ্র ইতস্ত বোধ করছে। কি করে বলবে সে কথা যেখানে এই কয়টাদিন অপেক্ষা করতে পারলো নাহ। পদ্ম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শুভ্রর পানে তাকিয়ে বলে, ‘ আর কিছু দিন অপেক্ষা করলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত আপনার?’

শুভ্র মাথা নিচু করে রাখে তার তো বলার ভাষা নেই। পদ্ম তাচ্ছিল্য হেসে আবার সামনের দিকে সেই নদীর পাড়ের দিকে তাকায়। শুভ্র আড় চোখে একবার পদ্মকে দেখে। পদ্মর চোখে পানি, পদ্ম কাঁদছে। শুভ্র চট করে জড়িয়ে ধরে পদ্মকে। মাথাট শুভ্রর বুকের সাথে লাগিয়ে বলে,’ আমি সরি। আমি বাধ্য হয়েছি মায়ের জোরাজোরিতে।’

পদ্ম জোর কাটায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে কিন্তু পারে না। সেভাবেই থেকে বলে, ‘ মায়ের জোরাজোরি তে রাজি হয়েছেন আমি যদি ঠিক সময়ে না আসতাম তাহলে কি হতো ভেবে দেখেছেন।’

শুভ্রকে বেশ ভাবায় পদ্মর কথাটা। সত্যি তো পদ্ম যদি না আসতো সময় মতো তাহলে হয়তো বিয়েটা হয়ে যেত তার। শুভ্রর চিন্তা ভাবনার মাঝে তার হাত হালকা হয়ে যায়। এই সুযোগে পদ্ম নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে বলে,’ এই ভালোবাসেন আমায় যে একটু অপেক্ষা সহ্য হলো নাহ আপনার আমার জন্য। ‘

শুভ্র এগিয়ে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পদ্ম ইশারায় চুপ করিয়ে দেয়। পিছন ঘুরে চলে যায় ছাদ থেকে।

*******
পদ্ম আর মুনিরা সামনাসামনি বসে আছে। এ সময় বাসায় কেউ নেই। সাবিনা আর দিলোয়ার বাহিরে গেছে হাওয়া খেতে আর শুভ্র গেছে কাজে। এখন ঘড়িতে বাজে বিকাল ৪ টা। দুজনের মাঝেই নিরবতা বিরাজ করছে। পদ্ম কুটিয়ে কুটিয়ে দেখছে মুনিরাকে। অনেকটা শুকিয়ে গেছে মুনিরা। আগের মতো শরীর স্বাস্থ্য তার নেই। পদ্ম প্রথমে মুনিরার এই রুপ দেখে বেশ অবাক হয়েছিল। মুনিরা মাথা নিচু করে বসে আছেন। এবার পদ্ম নিরবতা ভেঙে বলে,’ এবার তো দয়া করে বলুন কি হয়েছে? ‘

মুনিরা মাথা নিচু করে বলেন, ‘ কি জানতে চাও?’

পদ্মর সোজা উত্তর আসে,’ সত্যটা জানতে চাই।’

মুনিরা সেই আগের ন্যায় বসেই বলে,’ সত্যটা জেনে সেই ভুলই বুঝবে চলে যাও এখান থেকে।’

পদ্ম তেজ নিয়ে বলে,’ আমি জেনেই যাবো। ‘

মুনিরা আর কোন উপায় না পেয়ে বলতে শুরু করে অতীতের সকল ঘটনা।

*****
চারদিকে গ্রীষ্মের রোদ। পালকিতে করে বধূ সেজে জমিদার বাড়ির বউ হয়ে যাচ্ছে মুনিরা। দিলোয়ার তার পাশেই হেটে যাচ্ছে। মুনিরা পালকির পর্দার ফাঁক দিয়ে একবার দিলোয়ারকে দেখে। পুরুষ মানুষ এতো সুন্দরও হয় বুঝি। চুল গুলো একটু ছোট ছোট। তবে এতেই দারুণ লাগছে লোকটাকে। লজ্জায় মুখ ঢাকলো মুনিরা। মনে মনে হাজার স্বপ্ন সাজাতে লাগলো। কিন্তু কে জানতো তার স্বপ্ন গুলো অবাস্তব।

বরণ করে ঘরে তুলে নিয়ে গেলেন মুনিরার শ্বাশুড়ি আফসানা বেগম। নতুন বাড়িত ঢুকতেই আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করতে শুরু করে। বাড়িতে বউ নিয়ে আসতে বেলা বয়ে যায়। রাত প্রায় হয়ে যায়। তাই বরণ করে মুনিরাকে সোজা দিয়ে আসে দিলোয়ারের ঘরে।

মুনিরা ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় বসে দিলোয়ারের অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু দিলোয়ার আসার নাম ই নেই। অপেক্ষা করতে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে ১৭ বছরের কিশোরী। বিয়েটা তার অল্প বয়সেই হয়ে যায়। ঘুমে চোখটা কখন লেগে যায় বুঝতে পারে নাহ। ঘুমানোর কিছুক্ষণ পর দিলোয়ার ঘরে আসে। এসে মুনিরাকে ঘুমোতে দেখে রাগী দৃষ্টিতে মুনিরার দিকে তাকিয়ে তার মাকে চিৎকার করে ডাকতে থাকে। দিলোয়ারের চিৎকারে লাফিয়ে উঠে মুনিরা। ঘুম ঘুম চোখে বুঝতে চেষ্টা করে কি হয়েছে ।

ছেলের গলা ফাটানো চিৎকারে দ্রুত বেগে আফসানা বেগম ছেলের ঘরে আসে । এসে ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, ‘ কি হয়েছে চিৎকার কেন করছিস?’

দিলোয়ার তেজি গলায় বলল,’ জোর করে যেই মেয়েকে বিয়ে করালে ঐ মেয়ে কিসের ভালো বউ হবে যে কিনা স্আানীর জন্য বাসর রাতেও একটু অপেক্ষা করতে পারলো নাহ ঘুমিয়ে গেলো।’

দিলোয়ারের কথায় মুনিরা মাথা নিচু করে ফেলে বেশ লজ্জা পেয়েছে। আফসানা বেগম ছেলের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। মুনিরার লজ্জায় চোখে পানি চলে আসে। এই এতটুকু কারণে এভাবে লজ্জায় ফেলল তাকে।

চলবে