নোলক ২ পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
89

#নোলক_২
পর্ব ৫ (শেষ পর্ব)
#তানিয়া_মেধা

পদ্ম দিলোয়ারের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, ‘ ঐদিন যেই মহিলাটা শুভ্রর উপর অ্যাটাক করেছিল ঐ মহিলার হাতেও সেইম রিং ছিল এছাড়া ঐ হাতে আমার নকের আছড় লেগেছিল সেটা উনার হাতে এলো কি করে।’

এবার সাবিনা চুপ হয়ে যায়। নিজেকে বাঁচানোর আর কোন রাস্তা পায় নাহ। পদ্ম এবার কিছু ছবি তুলে দেয় রমজানের হাতে। রমজান সেগুলো ভালোভাবে দেখে বলে,’ তাহলে…..”

রমজানকে এখানেই থামিয়ে দিয়ে পদ্ম বলে, ‘ শিশু পাচারের সাথে আমার স্বামী নয় উনি যুক্ত ছিলেন। ‘

সাবিনার দিকে আঙ্গুল তুলে বলে। সবাই এবার ভীষণ অবাক হয়। এটা পদ্ম ছাড়া আর কেউ জানতো না। সাবিনা এতটা নিকৃষ্ট তা দিলোয়ারের কল্পনার বাইরে। এবার সাবিনা আর সহ্য করলো নাহ চিৎকার করে বলতে শুরু করে, ‘ হ্যা আমিই করেছি সব আমিই ছিলাম সব কিছুর পিছনে।’

দিলোয়ারের চোখ থেকে এবার টুপটুপ করে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। এবারের পানি ছিল মুনিরার জন্য। সে বুঝতে পারছে মুনিরার প্রতি সে কত অন্যায় করেছে। সাবিনা আবারও নিঃশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করে,’ আমি সত্যি বলছি আমি অনেক পাপ করেছি কিন্তু তোমার প্রতি ভালোবাসাট সত্যি ছিল।’

দিলোয়ার ভ্রু কুচকায় সাবিনার দিকে তাকিয়ে। তাচ্ছিল্য হেসে বলে, ‘ ও তাই তাহলে পরপুরুষের ছোয়া কেন তোমার গায়ে লাগিয়েছিলে?’

মুনিরা এতোক্ষণ চুপ করে বসে থাকলেও এবার মুখ খুলে। সাবিনার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ সব কিছুই তো বললে কিন্তু ওর সব থেকে বড় অপরাধের কথাটাই বলা হয় নি। সে এতটাই নিকৃষ্ট তার প্রেমিকদের সাথে মিশতে পারে না দেখে সে পানিতে ফেলে ছোট নিষ্পাপ রুখনকে মেরে ফেলে।’

এবার যেন পরিবেশটা থমথমে হয়ে গেলো। দিলোয়ার শুধু অবাক হচ্ছে সাবিনার এসকল রূপের সাথে পরিচিত হয়ে। সাবিনা তখন মাথা নিচু করে বসে আছে। তার বাঁচার আর কোন উপায় না দেখে এখন শান্ত হয়ে গেছে। তখনই আচমকা সাবিনা উঠে দাড়ায় টেবিলে থাকা ফলের ঝুড়ি থেকে ছুরি নিয়ে পদ্মর গলায় ধরে। শুভ্র চিৎকার করে উঠে। মুনিরা কান্না জড়ানো গলায় বলে, ‘ ছেড়ে দে ওকে।’

সাবিনা এবার অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে। পদ্মর গলায় ছুরিটা আরেকটু চেপে ধরে বলে, ‘ এই মেয়ের অনেক পাখা গজিয়েছে। সব নষ্টের মূল এই বেয়াদব মেয়ে। ‘

সাবিনা যখন ওদের সাথে এগুলো বলতে ব্যস্ত তখন রমজান উনার টিমের একজনকে ইশারা করে যেন সাবিনার কাছ থেকে পদ্মকে ছাড়াতে পারে। বেশ দক্ষতার সাথে সক্ষম ও হয় তারা পদ্মকে ছাড়াতে। পদ্ম ছাড়া পেতেই হাত মুচড়ে ধরে সাবিনার কানে কানে বলে, ‘ বলেছিলাম নাহ আমার স্বামীর শত্রুদের ঠিক খুঁজে বের করবো । ‘

সাবিনা কটমট চোখে তাকায়। পূ্ম সেদিকে ভ্রক্ষেপ করে নাহ। রমজা সাবিনাকে অ্যারেস্ট করে সকল প্রমাণ সহ থানায় নিয়ে যায়।

*******
পুরো পরিবেশটা থমথমে হয়ে আছে। পদ্ম আর শুভ্র চলে গেছে নিজেদের রুমে। বসার রুমে শুধু দিলোয়ার আর মুনিরা বসে আছে। দুজনই নিরব। মুনিরা আড় চোখে এক পলক দেলোয়ারের দিকে তাকায়। দিলোয়ার তখন নিরবতা ভেঙে বলে, ‘ মুনিরা কিছু বলতে চাই তোমায়?’

মুনিরার চোখে পানি চলে আসে। এই আকুতিভরা আদুরে ভাব গলাটা শোনার জন্য সে কতকাল অপেক্ষা করে আসছে। মুনিরা আড়ালে নিজের চোখের পানি মুছে বলে, ‘ কি বলবেন? ‘

দিলোয়ার অবাক হলো মুনিরার মুখে আপনি ডাক শুনে। দিলোয়ার মাথা নত করে বলে,’ দয়া করে আপনি করে ডেকো নাহ তুমি করেই ডাকো।’

মুনিরা হাসে দিলোয়ারের দিকে তাকিয়ে বলে,’ সেভাবে ডাকার অধিকার তো হারিয়ে ফেলেছি কারণ আমি তো খারাপ। ‘

মুনিরার কথা দিলোয়ারের বুকে তীরের মতো লাগে। চট জলদি মুনিরার হাত ধরে বলে, ‘ আমাকে ক্ষমা করে দাও মুনিরা। আমরা পুনরায় নিজেদের সংসার শুরু করি।’

মুনিরা এবার এক ঝটকায় নিজের হাতটা সড়িয়ে নেয়। চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘ হাহা সংসার আপনি সংসার করার যোগ্য! আজ অব্দি কখনো এতটুকু আমায় ভালোবেসেছেন? বাসেন নি কখনো বাসেন নি আমি ছিলাম আপনার চাহিদা মেটানোর বস্তু যখন ইচ্ছে জাগতো এসে চাহিদা মেটাতেন। ‘

দিলোয়ার চুপ করে আছে। কি বলবে সে মুনিরা তো সত্যিই বলছে। মুনিরা আবারও বলতে থাকে, ‘ আপনি আমাকে না ভালোবেসেছেন আর না বিশ্বাস করেছেন। আপনার সবটা জুড়ে ছিল সাবিনা তাই তো বিয়ের পরও তার সাথে পর কী য়া ই লিপ্ত ছিলেন । ব্যস অনেক হয়েছে আমি কারো অপচন হয়ে থাকতে চাই নাহ আজ আমি এই মুহূর্তে চলে যাবো। ‘

দিলোয়ার এবার পাগলের মতো করতে থাকে। নানাভাবে বুঝাতে থাকে যেন মুনিরা না যায়। কিন্তু মুনিরা তার কথা শুনে। মুনিরা উপরের দিকে তাকিয়ে পদ্ম আর শুভ্রকে ডাকতে থাকে। মায়ের ডাকে দুজনই ব্যাগ নিয়ে জলদি নিচে নামে। দিলোয়ার এসে শুভ্রর হাত ধরে বলে, ‘ বাবা তোরা যাস নাহ তোর মাকে বোঝা আমি একা থাকতে পারবো নাহ।’

শুভ্রর যেন এবার সহ্য হলো নাহ। জন্মদাতা পিতা তাই এতক্ষণ চুপ থাকলেও এখন আর পারলো নাহ। লাল চোখ গুলো দিলোয়ারের দিকে ফিরিয়ে বলতে থাকে,’ বাবা তুমি জানো কি তুমি ঠিক কতটা স্বার্থপর। তুমি কারো সাথে থাকার যোগ্যই নও। ‘

এতটুকু বলে পদ্মর হাত ধরে সামনে এগোতে থাকে। দিলোয়ার এবার পাগলামি বাড়িয়ে দিলো। সে একা থাকবে কি করে। দিলোয়ারের সকল চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে গেল। সবাই চলে গেলো তাকে একা করে দিয়ে। এই একা হয়েই থাকতে হবে এটাই তার শাস্তি। এটাই তার যোগ্য শাস্তি। পাগলের মতো ব্যবহার করতে থাকে দিলোয়ার।

********
পাঁচদিন পর

নতুন বাসায় সব গুছিয়ে নিয়ে আজ বড় করে অনুষ্ঠান করে আবারও বিয়ে করলো পদ্ম আর শুভ্র। মুনিরার কথায় সেদিন পদ্ম বের হয়ে এ বাড়ির ব্যবস্থা করে। সেদিন তাকে ডেকে নিয়ে কিছু সত্য বলছিল যাক এখন পদ্ম আর শুভ্র দরজায় দাড়িয়ে আছে। মুনিরা বরণ ডালা নিয়ে পদ্মকে বরণ করে এরপর পদ্মর নাকে নোলক পড়িয়ে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে,’ আমার যোগ্য বউমা।’

মুনিরার কথায় প্রতিত্তোরে মিষ্টি করে হাসে। আজ সে নিজের সম্মান অর্জন করে নিতে পেরেছে। এবার পদ্মকে একজন নিয়ে গিয়ে শুভ্রর ঘরে রেখে আসে।

মুনিরা পদ্মর যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হ্যা এই পাঁচ দিনে অনেকবারই লোকটার কথা মনে পড়ছে । ভালোবাসতো সে লোকটাকে। আর ভাবলো না চলে গেলো নিজের রুমে। তাকে ভালো থাকতে হবে এখন তার কষ্টের দিন চলে গেছে অতীত নিয়ে ভেবে আর কষ্ট পেতে চায় না সে। চলে যায় বেলকনিতে এখানে বসে নিজের চুলটা খুলে চোখ বন্ধ করে এই ঠান্ডা আবহাওয়া উপভোগ করতে থাকে।

*******
বার বার মেঘ ডাকছে। একা ঘরে শুভ্রর অপেক্ষায় বসে আছে পদ্ম। কিছুক্ষণ পর শুভ্র দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে। পদ্মর পাশে বিছানায় বস বলতে শুরু করে,’ বউ আজকের আবহাওয়াটা কিন্তু এই দিনের জন্য দারুণ।’

পদ্ম শুভ্রর কথা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, ‘ মানে?’

শুভ্র দুষ্ট হেসে পদ্মর কাছে গিয়ে বলে,’ জানে নাহ বুঝি।’

পদ্ম এবার বুঝতে পারে শুভ্র কি বলতে চায়। পদ্ম শুভ্রর গায়ে কয়েকটা মেরে বলে,’ চলুন এই আবহাওয়াটা উপভোগ করি। ‘

পদ্ম উঠে শুভ্রকে টেনে নিয়ে যায় বেলকনিতে। কিছুক্ষণ সেখানে থাকে বৃষ্টি শুরু হলে রুমে চলে আসে। দুজনই বিছানায় বসে আছে। আচমকা শুভ্র শাড়ির আচলে হাত দিয়ে বলে,’ মে আই?’

পদ্ম প্রথমে ভরকে গেলেও পরে হেসে সম্মতি জানায়। সম্মতি পাওয়ার পর শুভ্রকে আর পায় কে। সে তার প্রেয়সীকে নিজের করে পেতে থাকে৷ তাদের এই স্মৃতিময় রাত তাদের মতো করে কাটাতে থাকে।

সমাপ্ত