নোলক ২ পর্ব-৩+৪

0
79

#নোলক_২
পর্ব ৩
#তানিয়া_মেধা

ছেলে জন্মের পর থেকে তাকে নিয়েই দিন কেটে যায় তার। দেখতে দেখতে দুই বছর কেটে গেছে এর মাঝে অনেক কিছু ঘটে গেছে। আফসানা বেগম হঠাৎ মারা গেছে। মৃত্যুটা যেন একটা রহস্য হয়ে গেছে। কিন্তু মায়ের মৃত্যুতেও দেশের বাহির থেকে আসতে পারে নি দিলোয়ার

এসব ভাবছিল মুনিরা নিজের রুমে বসে। তখন বাহির থেকে শুভ্রর কান্নার চিৎকার ছুটে যায় বাহিরে। বাহিরে গিয়ে দেখে পুকুর পাড়ে কিনারায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে। আর তার পাশে দাড়িয়ে সাবিনার ছেলে রুখন তাকে খামচে ধরে আছে। মুনিরা ছুটে যায় সেখান থেকে রুখনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে শুভ্রকে কোলে তুলে নেয়। রুখন মাটিতে পড়ে কাঁদতে শুরু করে। মুনিরা এক নজর রাগ নিয়ে তাকিয়ে চলে যায় শুভ্রকে নিয়ে।

সেদিন ধাক্কা দিয়ে আসার পর রুখন পানিতে পরে যায়। বিকেলে তার লাশ পুকুর থেকে উদ্ধার করে। এরপর থেকে সাবিনা আমার প্রতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। সবার সামনে নিজে খারাপ হওয়ার মাটক করতে হলো সাবিনার কথায় নয়তো সে আমাকে শুভ্রর কাছ থেকে সরিয়ে নিবে। কিন্তু আমি সত্যি বলছি আমি ধাক্কা দেওয়াই রুখন মাটিতে পড়েছিল পানিতে নাহ।

এতটুকু বলে ডুকরে কাঁদতে শুরু করে মুনিরা। পদ্ম এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মুনিরার দিকে। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে শান্ত গলায় মুনিরার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ আপনার ধাক্কায় রুখন পানিতে পরে নি। আপনি কোন ভাবেই রুখনের মৃত্যুতে দায়ী নন।’

পদ্মর কথায় অবাক হয় মুনিরা। বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে বলে, ‘ কি বলছো তুমি!”

পদ্ম একই ভঙ্গিতে বলে,’ হুম যা বলছি একদম ঠিক সময় হলে জানতে পারবেন ।’

এতটুকু বলে উঠে যায় পদ্ম। ভের হয়ে গেছে চারদিকে ফজরের আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে। পদ্ম উঠে সোজা নিজের রুমে চলে আসে। রুমে এসে দেখে শুভ্র ফ্লোরে বসে আছে মাথা নত করে। পদ্ম অবাক হয়। এগিয়ে যায় শুভ্রর কাছে কাধে হাত রেখে বলে,’ কি হয়েছে এভাবে বসে আছেন কেন?’

পদ্ম কাধে হাত রাখতেই চোখ তুলে তাকায় শুভ্র। কান্না ভেজা গলায় বলে,’ আমি খুবই খারাপ সন্তান।’

পদ্ম বুঝতে না পেরে বলে,’ মানে? ‘

শুভ্র বলতে শুরু করে, ‘ এতদিন কি নাহ আমি আমার মাকে ভুল বুঝে তাকে অপমান করে এসেছি তার সাথে জঘন্য আচরণ করেছি।’

পদ্ম আরেকটু এগিয়ে যায় শুভ্রর দুইগালে হাত দিয়ে বলে, ‘ কি হয়েছে? ‘

শুভ্র অশ্রু ভেজা চোখ নিয়ে তাকায় পদ্মর দিকে। পদ্ম এবার কিছুটা বুঝতে পারে কি হয়েছে। এবার সোজা হয়ে বসে প্রশ্ন করে,’ সব শুনে নিয়েছেন। ‘

শুভ্র মাথা নাড়ায়। পদ্ম আর কিছু বলে নাহ উঠে ওয়াশরুমে চলে যায় ওযু করতে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নামাজে দাড়ানোর আগে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ ওযু করে নামাজ পড়ে মায়ের কাছে যান।’

এতটুকু বলে পদ্ম নামাজে দাড়িয়ে পড়ে।

******
সাবিনা নিজ রুমে পায়চারি করছে তার সাজানো খেলা ঘুরে যাচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারছে সে। আর এসকল কিছুর পিছনে কে আছে তাও সে বুঝতে পারছে। পদ্ম তার সকল খেলা ভেস্তে দিচ্ছে। এবার পা থামিয়ে দিলোয়ারের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকায় । এগিয়ে এসে গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজে নিজে বলতে শুরু করে, ‘ কি করি বলো তো। তোমাকে নিজের করে রাখার জন্যই তে এতসব নাটক। তোমার মায়ের জন্য আমরা একে অপরের হতে পারলাম না।’

এতটুকু বলে কাঁদতে শুরু করে। পরক্ষণেই আবার হাসতে শুরু করে। হাসতে হাসতে বলে,’ চিন্তা করো না সাবিনা খুব ভালো করেই জানে কিভাবে পথের কাটা সড়াতে হয়।’

******
নামাজের পর প্রচন্ড ঘুম পায় পদ্মর। হয়তো সারা রাত না ঘুমানোর জন্য। নামাজ শেষ করে বিছানায় গা হেলিয়ে দিতেই ঘুমে চোখ লেগে আসে তার।

তার ঘুমানোর কিছুক্ষণ পরেই রুমে সাবিনা প্রবেশ করে। হাতে তার ধারালো ছুরি। আস্তে আস্তে সে পদ্মর দিকে এগিয়ে যায়। পদ্ম তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সাবিনা যেই পদ্মকে আঘাত করতে যাবে তখনই রুমে শুভ্র প্রবেশ করে। সাবিনা দ্রুত ছুরিটা লুকিয়ে ফেলে। শুভ্র সাবিনাকে এসময় এই রুমে দেখে ভ্রু কুচকায়।

আচমকা শুভ্রকে দেখে ভীতিটা লুকাতে একটু হাসার চেষ্টা করে সাবিনা। শুভ্র ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করে, ‘ এসময় এখানে? ‘

সাবিনা মিথ্যা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে বলে,’ আজকে খাবারটা আমি রান্না করবো ভাবছিলাম তাই বৌমা কি খাবে জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম।’

শুভ্র মাথা থেকে টুপিটা খুলে বিছানার সাইডে রেখে বলে, ‘ ওহ কিন্তু পদ্ম তো ঘুমোচ্ছে। ‘

সাবিনা বলে,’ হ্যা আচ্ছা তুই কি খাবি?’

শুভ্র বিছানায় শুয়ে পড়ে বলে,’ সকালে কিছু খাবো না আমারও ঘুম পাচ্ছে। ‘

সাবিনা আর কিছু বলে নাহ। চুপিচুপি চলে আসে সেখান থেকে। আজ শুভ্র চলে না আসলে পদ্মর খেলা শেষ করে দিত।

******
সাবিনা চলে যেতেই শুভ্র দরজা লাগিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে পদ্মকে। তার হাত পা কাপছে। সে সাবিনার হাতের ছুরি দেখেছে সেটা সাবিনাকে বুঝতে দিতে চায় নাহ বলে স্বাভাবিক থাকার নাটক করছিল। তার হার্ট বিট বেড়ে গেছে। আজ যদি সে সময় মতো নাহ আসতো তাহলে সারাজীবনের জন্য সে পদ্মকে হারিয়ে ফেলতো এতটুকু মাথায় আসতেই তার বুকটা ছ্যাত করে উঠে।

পদ্মর ঘুম ভাঙে দুপুর ২ টায়। ঘুম থেকে উঠে সে শুভ্রর বুকে নিজেকে পায়। পদ্ম মাথা তুলে শুভ্রর দিকে তাকায়। শুভ্র তখন ঘুমাচ্ছে। পদ্ম এগিয়ে গিয়ে শুভ্রর কপালে একটা চুমু খায়। তারপর নিজেকে শুভ্রর বাহুবন্ধন থেকে ছাড়িয়ে চলে যায় নিচে।

নিচে নামতেই পদ্ম মুখোমুখি হয় সাবিনার। পদ্ম সাবিনার দিকে তাকিয়ে একটা জ্বালাময়ী হাসি দেয়। সাবিনা সেটা উপেক্ষা করে চলে যাচ্ছিল তখন পদ্ম সোফায় বসে বলে,’ বিকেলে এখানে চলে আসবেন বিশাল ধামাকা হবে। ‘

সাবিনা ভ্রু কুচকে বলে, ‘ কিসের ধামাকা? ‘

পদ্ম হেসে বলে, ‘ বিকেলেই দেখতে পাবেন। ‘

********
শুভ্র মুনিরার রুমের দরজায় নক করে। মুনিরা তখন বসে ছিল বিছানায়। দরজার দিকে তাকিয়ে শুভ্রকে দেখে তার আঁখিদ্বয় ছলছল করে উঠে। শুভ্র এগিয়ে এসে তার মায়ের পায়ের কাছে বসে। শুভ্রর চোখে পানি। মুনিরা তার কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,’ কাঁদছিস কেন বাবা?’

শুভ্র হঠাৎ করে পা জড়িয়ে কান্না শুরু করে । মুনিরাও কেঁদে দেয়। শুভ্র কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ আমায় ক্ষমা করে দাও মা আমি ভুল করেছি।’

মুনিরা কান্না জড়ানো গলায় বলে,’ দূর পাগল ছেলে তুই তো আমার নাড়ি ছেড়া ধন তোকে ক্ষমা না করে পারি আমি। তুই তো কলিজা আমার বিশ্বাস কর এক টুকরোও রাগ নেই আমার তোর প্রতি।’

শুভ্র পা ছেড়ে এবার মায়ের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। দরজায় দাড়িয়ে মা ছেলের এই দৃশ্য দেখছিল পদ্ম। এটা কতটা আনন্দের দৃশ্য তা একমাত্র পদ্মই বুঝতে পারছে। এবার তাকে আসল খেলা শুরু করতে হবে । আর দেরি করা যাবে না কোন বিপদ বাধাবে কে জানে। বিপদ বাধানোর আগেই ঝামেলা ঝেড়ে ফেলতে হবে।

চলবে

#নোলক_২
পর্ব ৪
#তানিয়া_মেধা

জমিদার বাড়িতে উপস্থিত হয়েছে পুলিশ। তখন ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ৪ টা বাজে। এমন সময় পুলিশ দেখে অবাক হয় দিলোয়ার। অফিসার রমজান দিলোয়ারের পাশে বসে বলে,’ কেমন আছেন? আজকে আমাদের দেখে অবাক হয়েছেন বুঝি আপনার বউ মা দাওয়াত দিলো তাই দাওয়াত খেতে আসলাম।’

দিলোয়ার ভ্রু কুচকায়। মুখে বিরক্তভাব স্পষ্ট রমজান সাহেবকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই সেখানে পদ্ম এসে পরে। অফিসার রমজানকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, ‘ আরে স্যার এসে গেছেন। ‘

পদ্মর কথায় রমজানও হেসে বলে,’ কি আর করবো সেই কবে বলে এসেছিলেন একদিন দাওয়াত দিবেন তাই আজকে দাওয়াত পেয়ে লোভ সামলাতে পারলাম নাহ তাই চলে এসেছি।’

এবার দিলোয়ার মুখ খুলে। পদ্মর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ পুলিশ কেন এনেছো তুমি?’

পদ্ম দিলোয়ার এর দিকে তাকায়। কথা বলতে ইচ্ছে করছে নাহ দিলোয়ারের সাথে তবুও মুখে হাসি রেখে জবাব দেয়, ‘ সেটা বুঝতে পারবেন কিছুক্ষণ পর। ‘

এরপর পদ্ম ওদেরকে বসতে বলে চলে যায় উপরে।

*****
সবাই বসে আছে ডাইনিং রুমে। সবার মুখে এক আকাশ সমান কৌতুহল প্রকাশ পাচ্ছে শুধু বিরক্তি নিয়ে বসে আছে সাবিনা। পদ্ম উঠে দাড়িয়ে এক পলক সাবিনার দিকে তাকিয়ে জ্বালাময়ী হাসি দিয়ে বলে, ‘ তা আমার সৎ শ্বাশুড়ি মা কি শুরু করবো আজকের অনুষ্ঠান।”

পদ্মর কথায় সাবিনা কটমট চোখে তাকায় তার দিকে। সেদিকে পদ্ম পাত্তা দেয় না। সাবিনাকে সৎ শ্বাশুড়ি বলায় দিলোয়ার ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে, ‘ সাবিনাকে সৎ শ্বাশুড়ি কেন বললে সৎ তো এই মুনিরা।’

পদ্মর এবার সহ্য হয় নাহ। দিলোয়ারের দিকে তাকিয়ে বলে,’ আপনার মতো কাল সাপ যেন কারো স্বামী না হয়। আপনি তো কারো যোগ্যই নাহ।’

পদ্মর এমন কথায় বেশ অপমানিত বোধ করে দিলোয়ার। পদ্মর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ মুখ সামলে কথা বলো মেয়ে।’

পদ্ম দ্বিগুণ হুংকার দিয়ে বলে,’ কি মুখ সামলে বলবো কথা! আপনার পেয়ারি ওয়াইফ সাবিনা কতটা নিকৃষ্ট এটা জানার পর নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন তো। ‘

দিলোয়ার ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে, ‘ কি বলতে চাও তুমি?’

পদ্ম হাসে এবার দিলোয়ারের দিকে তাকিয়ে। অফিসার রমজান এতোক্ষণ চুপ থাকলেও এখন বলে,’ মিসেস পদ্ম একটু জলদি বলুন পরে আবার খাবার খেয়ে অপরাধী নিয়ে থানায় ও যেতে হবে। ‘

রমজানের কথায় শব্দ করে হেসে দেয় পদ্ম। পদ্ম এবার সদর দরজার দিকে তাকায়। তখন শুভ্র বাড়িতে প্রবেশ করে। এতোক্ষণ সে শুভ্রর ই অপেক্ষা করছিল। শুভ্র এসে তার হাতে একটা ফাইল ধরিয়ে দিয়ে মুনিরার পাশে বসে পরে।

পদ্ম ফাইলটায় একবার চোখ বুলিয়ে বাকা হেসে বলতে শুরু করে,’ মিসেস সাবিনা যে কত বড় ক্রিমিনাল তা জানলে সকলে অবাক না হয়ে পারবেন নাহ। প্রথমে আসি আমার শ্বশুর মশাইয়ের ক্ষেত্রে। বিয়ের আগে আমার শ্বশুর মশাইয়ের সম্পর্ক ছিল সাবিনার সাথে। তিনি এ কথা তার মা আফসানা বেগমকে জানান। আফসানা বেগমের উনি ছাড়া আর কোন সন্তান ছিলো নাহ তাই একমাত্র ছেলের বউ আমার আগে একটু খোঁজ খবর নেয়। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে সাবিনা কতটা নোংরা। দিলোয়ারই নয় একাধিক পুরুষের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। ‘

এতটুকু বলতেই সাবিনা হুংকার দিয়ে উঠতে যাবে তার আগেই দিলোয়ার রাগী স্বরে বলে,’ কিসব বলছো মেয়ে মুখে লাগাম লাগাও বেয়াদব।’

পদ্ম এবার হুংকার ছেড়ে বলে,’ আমি যেই কথাটা বলেছি জিজ্ঞেস করুন এতটুকু পরিমাণ মিথ্যা আছে কি নাহ।’

পদ্মর এমন হুংকারে দমে যায় সাবিনা। দিলোয়ার সাবিনার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ এগুলো কি শুনছি সাবিনা।’

সাবিনা মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে,’ এগুলো মিথ্যা আমি করি নি।’

পদ্ম এবার শব্দ করে হেসে বলে, ‘ তাই কিন্তু আমার কাছে তো প্রমাণ আছে। ‘

পদ্মর এমন কথায় ঘাবড়ে যায় সাবিনা। আমতা আমতা করতে শুরু করে। সাবিনার এমন আমতা আমতা দেখে দিলোয়ারের বুঝতে বাকী রইলো নাহ পদ্ম যা বলেছে সব সত্যি। দিলোয়ার ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে সাবিনার দিকে তাকায়। পদ্ম সেদিক পাত্তা না দিয়ে আবারও বলতে শুরু করে, ‘ তাই আপনার মা আপনাকে অন্য জায়গায় বিয়ে করায় কিন্তু আপনি আপনার মায়ের কথা শুনলেন নাহ ঘরে বউ রেখে উনাকে বিয়ে করলেন। ‘

দিলোয়ার মাথা নিচু করে ফেলে। মুনিরা তখনও চুপ কিছু বলে নাহ। সবাই নিরব হয়ে আছে। সাবিনাও কিছু বলার সাহস পাচ্ছে নাহ। পদ্ম আবারও বলতে থাকে,’ আপনি কি জানেন সাবিনা আদৌ কোনো দিন প্র্যাগন্যান্টই হয়নি সব ছিল এই মহিলার সাজানো নাটক। ‘

দিলোয়ার আর চুপ থাকতে পারলো নাহ। সাবিনাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে সজোরে একটা থাপ্পড় মারে। রমজান এগিয়ে এসে বলে, ‘ মিস্টার নিজের হাতে আইন তুলে নিবেন নাহ।’

রমজানের কথায় দিলোয়ার থেমে গেলেও শান্ত হতে পারছে নাহ । সাবিনা বুঝতে পারছে নাহ কি করা উচিত। সে সব দিক থেকেই ফেসে গেছে বুঝতে পারছে । পদ্ম আবারও বলতে লাগে, ‘ এছাড়া আপনার মা অসুস্থ হয়ে মারা যায় নি উনাকে মেরেছেন এই মহিলা। এবার বাকি গুলো আপনি বলবেন নাকি আমিই বলবো?’

সাবিনার দিকে আঙ্গুল তুলে বলে। সাবিনা হাসফাস করতে লাগে। রমজান সেখানে ঠ্যাস দিয়ে বলে, ‘ এখন এতো হাসফাস করে কি হবে যে অন্যায় করেছেন সেগুলো স্বীকার করে নিন।’

সাবিনা নিজের ভীতিটা লুকিয়ে তেজি গলায় বলে, ‘ আমি কোনো অন্যায় করে নি।’

সাবিনার এমন মিথ্যা কথায় শুভ্র রেগে যায়। তেজি গলায় বলে, ‘ অন্যায় করোনি তাহলে আজ সকালে কেন পদ্মকে মারতে গিয়েছিলে?’

সাবিনা চমকায় তার মানে শুভ্র তার হাতের ছুরি দেখে নিয়েছিল। সাবিনা আমতা আমতা করে বলতে শুরু করে, ‘ কিসব বলছিস বাবা তুই। তুই আমার সন্তান আর বৌমা আমার মেয়ের মতো।’

পদ্ম এবার চিৎকার করে বলে, ‘ একদম মেয়ে বলবেন নাহ আপনার মতো বাজে মহিলার মেয়ে আমি হতে চাই না। আর আসি সন্তানের ব্যাপরে রুখন আপনার ছেলে ছিল নাহ আপনি হাসপাতাল থেকে চুরি করেছিলেন তাকে। আর শুভ্র তো আপনার ছেলে হওয়ার প্রশ্নই আসে নাহ। কারণ আপনি তো প্র্যাগনেন্টই ছিলেন না। ‘

সাবিনা কিছু বলতে নিবে তখন মুনিরা বলে,’ হ্যা পদ্ম ঠিকই বলেছে ঐদিন রাতে আমি ওর রুমে গিয়ে দেখি ও একদম স্বাভাবিক ওর পেটে কোন বাচ্চা নেই পাশে একটা নকল পেট ছিল।’

সাবিনা চিৎকার করে বলে, ‘ এসব মিথ্যা দিলোয়ার বিশ্বাস করো।’

দিলোয়ার কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে নাহ। কার কথা বিশ্বাস করবে আর কার কথা অবিশ্বাস করবে। কিন্তু সাবিনার জন্য তার মনে জমছে এক আকাশ পরিমাণ ঘৃণা।

পদ্ম হেসে বলে,’ মিথ্যা এগুলো! আপনি সব দিক দিয়ে ফেসে গেছেন। আচ্ছা আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে আমি আপনার কথা বিশ্বাস না করে মায়ের কথা কেন বিশ্বাস করলাম।’

সাবিনা এবার একটু সাহস পায়। গলার আওয়াজটা বাড়িয়ে বলে,’ আসাটা স্বাভাবিক নয় কি তুমি আমার কথা বিশ্বাস না করে ঐ মিথ্যাবাদীর কথা কেন বিশ্বাস করলে?’

মুনিরাকে মিথ্যাবাদী বলায় শুভ্র কিছু বলতে নিবে তখন পদ্ম ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বলে, ‘ হুম আচ্ছা আপনার মনে আছে শুভ্রর উপর একজন অ্যাটাক করেছিল তখন আমি ঐ আক্রমণকারীকে খুজতে খুঁজতে আপনার রুমের সামনে গিয়েছিলাম তখনই আপনি দরজা খুলে বাহিরে আসেন। তখন পর্যন্ত সব ঠিক ছিল কিন্তু আপনাকে ফাসিয়ে দিল আপনার হাতের ঐ আংটিটা। ‘

পদ্মর কথায় সাবিনা জলদি তাকায় ঐ আংটির দিকে। দিলোয়ার বলল,’ আংটি কিভাবে ফাঁসালে? ‘

পদ্ম তার শ্বশুরের এমন প্রশ্নে হাসে। দিলোয়ার এখনও চাইছে সাবিনা নির্দোষ প্রমাণ হোক। হায়রে মানুষ সোনা রেখে তামার জন্য পাগল।

চলবে