পদ্মফুল পর্ব-১৭+১৮+১৯

0
287

#পদ্মফুল
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|১৭|

‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?’

‘আমিও ভালো আছি।’

জবাব দিয়ে পদ্ম থামল। তারপর কিছুটা সময় নিয়ে আরাফাত আবার বললো,

‘আমি জানি আপনার খুব অস্বস্তি হচ্ছে, আর সত্যি বলতে আমারও খানিক অস্বস্তি হচ্ছে। এর আগে কখনও এইভাবে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা হয়নি তো, তাই। পদ্ম, আমি আপনার সম্পর্কে সব কিছুই জানি। আন্টি আমাকে সব বলেছেন। আপনার সব কিছু জেনে শুনেই আমার পরিবার এই সম্বন্ধে রাজি হয়েছে। এখন বাকি’টা আপনার উপর ডিপেন্ড করছে, আপনি যা চাইবেন তাই হবে।’

পদ্ম ভাবছে, জবাবে এখন সে কী বলবে। অনেকক্ষণ ভেবে চিন্তে সে জবাব দিল,

‘আসলে, আমি এখন এসবের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আর তাছাড়া আমি এই বাড়ির আশ্রিতা। সেই জন্য একটা অস্বস্তি আমার মধ্যে বরাবরই আছে। তবে আপনারা সবকিছু জেনে শুনেই কথা বলছেন, এটা জেনে আমি কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। আসলে, আমার সাথে এখন অবধি যা যা হয়েছে তার জন্য আমি ঠিক এখন আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। মনে হয়, সবাই যেন আমার সাথে অন্যায় করছে। কে আমার ভালো চায় আর কে আমার খারাপ চায় সেটাও আমি বুঝে উঠতে পারছি না। আমি জানি, জীবন এইভাবে যাবে না, আমি সারাজীবন এখানে থাকতে পারবো না। আমার একটা পরিচয় প্রয়োজন, একটা পরিবার প্রয়োজন আর তার জন্য আমাকে বিয়ে করতে হবে। আজকে না করলেও কোনো একদিন তো করতে হবে। আর আপনার সম্পর্কেও বড়ো মা আমাকে বলেছেন। উনিও আমার উপর কিছু চাপিয়ে দিচ্ছেন না; আমাকে ভাবার জন্য সময় দিয়েছেন। জানেন তো, উনারা আমার জন্য অনেক করছেন; উনাদের ঋণ হয়তো আমি কখনো চোকাতে পারবো না। কিন্তু হয়তো, এই বিয়েটা করে উনাদের কিছুটা হলেও খুশি করতে পারবো। আর তাছাড়া আমি নিজেও এই বাড়িতে আর থাকতে চাই না। পারলে এক্ষুণি এখান থেকে চলে যেতাম। (একটু থেমে) আচ্ছা, আপনারা আমাকে কেন পছন্দ করলেন বলুন তো? আমার তো মনে হয়, আমাকে পছন্দ করার মতো তো আমার মাঝে কিছু নেই। তাহলে?’

আরাফাত হাসল। বললো,

‘কে বলেছে, কিছু নেই? জানেন তো, আপনার মাঝে এক অদ্ভুত জিনিস আছে আর সেটা হলো আপনার এই সরলতা। আর এই জিনিসটা কিন্তু আর কারোর মাঝে নেই। আপনি খুব সৎ, আপনার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে। আসলে, আমি চাই এমন একজন-কে যে কখনো আমাকে ঠকাবে না, যে আমার পরিবারকে ভালোবাসতে পারবে। যার ভালোবাসার মাঝে কোনো প্রকার স্বার্থ থাকবে না। আর আমার মনে হয়, আপনি ঐরকম একটা মেয়ে যে আমার পরিবারকে ভালোবেসে আগলে রাখতে পারবেন। নিজের কাঁধে আমার পরিবারের দায়িত্ব তুলে নিতে পারবেন। আমার আর কিছু চাই না, চাই শুধু ভালো একটা মানুষ। আর আপনিই সেই ভালো মানুষ। যাকে আমি হয়তো চোখ বুজে বিনা দ্বিধায় ভরসা করতে পারবো। কি, পারবো না?’

পদ্ম বোধ হয় লজ্জা পেয়েছে। সে মাথা নিচু করে তার হাতের আঙ্গুল দেখছে। আরাফাত বললো,

‘আপনার যত খুশি সময় নিতে পারেন। আপনি যত বেশি সময় নিবেন ততটা গভীর ভাবে আমাকে চিনতে পারবেন। তখন আর আপনার মনের ভেতর কোনো দুটানা থাকবে না। তাই যথেষ্ট সময় নিন, সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন, কেমন?’

পদ্ম নরম সুরে বললো,

‘আচ্ছা।’

‘ঠিক আছে তাহলে, আজ রাখছি। আবার পরে কথা হবে। আল্লাহ হাফেজ।’

‘আল্লাহ হাফেজ।’

ফোনটা বিছানায় রেখে পদ্ম বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। মানুষ’টার ব্যবহার তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আর মানুষের ব্যবহার’ই তো বলে দেয় মানুষ’টা আসলে কেমন। উনার ব্যবহার ভালো, তার মানে উনিও ভালো। কিন্তু…কিন্তু সত্যিই কি শুধু মাত্র মুখের কথা দিয়ে একটা মানুষকে বিচার করা যায়? ব্যবহার তো ঐ আকবর সাহেবেরও ভালো ছিল। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে মানুষ’টা তো নিকৃষ্ট। তবে এটাও ঠিক, পৃথিবীর সবাই তো আর খারাপ না, এখনও অনেক ভালো মানুষ আছেন। হয়তো আরাফাতও তাদের মধ্যে একজন।

পদ্ম সবকিছু খুব পজিটিভলি নিল। আর কত খারাপ ভাববে সে? যত খারাপ ভাবছে তার সাথে ততই খারাপ হচ্ছে। এখন থেকে সবকিছু সে ভালো ভাববে আর খারাপ কিছু ভাববে না। চিন্তা ভাবনা ভালো হলেই জীবনে ভালো কিছু হবে, নয়তো না।
.
.
দুপুরের খাওয়া শেষ করে পদ্ম নিজের রুমে চলে এলো। রুবি হোসেন আর আকবর সাহেব তখনও খাচ্ছিলেন। পদ্ম রুমে এসে কী যেন একটা খুঁজছে। শেলফে রাখা বইগুলো উল্টে পাল্টে দেখছে সে। না নেই। সুজানার একটা ছবি ছিল, সেটা এখন পাচ্ছে না সে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “সঞ্চয়িতা” বইয়ের মাঝে ছবিটা পেয়েছিল সে। কিন্তু এখন আর সেখানে ছবিটা নেই। সে অনেক খুঁজেও পায়নি সেটা। হতাশ হয়ে বিছানায় বসলো সে। ছবিটা উধাও কী করে হয়ে গেল? এই বইয়ের মাঝেই তো ছিল, কোথায় গেল এখন? কেউ কি এখান থেকে নিয়ে গিয়েছে? কিন্তু কে’ই বা নিবে? তার রুমে তো তেমন কেউ আসে না, বড়ো মা আর আকবর সাহেব..আকবর সাহেবের কথা মনে পড়তেই পদ্ম’র মনটা যেন হঠাৎ কেমন করে উঠল। সুজানা নিখোঁজ, আজকে এতদিন। এত ভালো ভালো গোয়েন্দারাও তাকে খুঁজে বের করতে পারলো না, ব্যাপারটা খুব সন্দেহজনক। মেয়েটা যাবে তো যাবে কোথায়? আর হুট করে উধাও ই বা কী করে হয়ে গেল? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো গুরুতর কারণ আছে। আর সে গায়েব হওয়ার আগে ডাক্তারবাবুকে কিছু বলতে চাইছিল। সেটাই বা কী?

পদ্ম’র মাথায় অনেক ধরনের চিন্তা আসছে। যদিও এসব নিয়ে ভেবে সে লাভের লাভ কিছুই করতে পারবে না। তাও আজ হঠাৎ মেয়ে’টার কথা তার মনে পড়ল, আকবর সাহেবের মুখে তার নাম শুনে। নিচে তাকে নিয়ে কথা হচ্ছিল। হয়তো তারা ভেবেছিল, পদ্ম সুজানাকে চেনে না। তাই আকবর সাহেব পদ্ম’র সামনেই বলছিল,

‘বুঝলে তো রুবি, এই সুজানা চলে যাওয়ার পর থেকেই আমাদের ছেলের জীবন বদলে গিয়েছে। মেয়েটা আমাদের ছেলের জীবনের একটা বোঝা ছিল। সবসময় দেখতে না ওর পেছন পেছন কেমন ঘুরত, খালি সুবিধা ভোগ করার জন্য। কী যে লোভী ছিল মেয়েটা! আর দেখোই না এই যে আমাদের পদ্ম, কত ভালো একটা মেয়ে। বিন্দু মাত্র লোভ নেই ওর মাঝে। কত সুন্দর আমাদের সাথে মিশেছে, যেন আমাদের নিজের মেয়ে। ওর জায়গায় যদি এখন ঐ সুজানা থাকতো তাহলে এতক্ষণে রাক্ষসীর মতো আমাদের সম্পত্তি সব খেয়ে নিত।’

তখন আকবর সাহেবের কথার সাথে রুবি হোসেনও খুব সুন্দর করে তার মেলাচ্ছিলেন। পদ্ম ভীষণ অবাক হয় তাদের কথা বার্তাগুলো শুনে। সুজানা, মেয়েটা নিশ্চয়ই এতটা খারাপ ছিল না যেভাবে উনারা বলছেন। ডাক্তারবাবু তো মেয়েটাকে ভালোবাসতো; নিশ্চয়ই সবকিছু দেখে শুনেই ভালোবেসেছে? তাহলে উনারা এইভাবে কেন বলছেন? আর হয়তো তাই সুজানা হারিয়ে যাওয়াতে উনারা এত খুশি হয়েছেন। একটুও কি খারাপ লাগেনি উনাদের? এইভাবে একটা মেয়ে উধাও হয়ে গেল, আর তাতে উনাদের বিন্দু মাত্র খারাপ লাগল না? আশ্চর্য!

পদ্ম এখনও বসে বসে বইয়ের পাতা উল্টে যাচ্ছে। তখনই তার রুমে আকবর সাহেব এলেন। উনাকে দেখা মাত্রই পদ্ম রেগে যান। কাঠ কাঠ গলায় বলে,

‘কী চাই আপনার?’

আকবর সাহেবের চোখ মুখ যেন হঠাৎ শুকিয়ে উঠল। ধরা গলায় বললেন,

‘আমাকে ক্ষমা করবে, মা?’

পদ্ম এবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললো,

‘আবার কেন নাটক করছেন আপনি? আপনাকে না আমি বারণ করেছি, আমার সামনে এসব নাটক দেখাতে। আপনি কি চান আমি বড়ো মা’কে গিয়ে সবকিছু বলি?’

‘আমি নাটক করছি না মা। আমার ভুল হয়েছে। আমার তোমার সাথে ঐভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি। আমি জানি তোমার খারাপ লেগেছে। বিশ্বাস করো, এতদিন শয়তান আমাকে ধোঁকা দিচ্ছিল। এখন আমি বুঝেছি, আমি যা করেছি তা তো পাপ। তুমি আমার মেয়ের মতো, আর তোমার দিকে আমি ঐরকম দৃষ্টিতে…ছি ছি ভাবতে আমার নিজেরই খারাপ লাগছে এখন। আজ সকাল থেকেই আমার খুব খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল, খুব বড়ো অন্যায় করে ফেলেছি আমি; তাই ক্ষমা চেতে এসেছি তোমার কাছে। আমাকে ক্ষমা করে দাও মা। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আর এমন হবে না দেখো। প্লীজ আমায় ক্ষমা করে দাও।’

পদ্ম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। এই লোকটা এইভাবে হুট করে কিভাবে বদলে গেল? বদলে যাওয়া কি এতই সহজ? আদৌ কি উনি উনার ভুল বুঝতে পেরেছেন, নাকি এটা আবার উনার নতুন কোনো নাটক?

পদ্ম বললো,

‘আমি জানি না আদৌ আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন কিনা? কিন্তু, যেহেতু আপনি ক্ষমা চাচ্ছেন তাই আমি বলবো ক্ষমা করার আমি কেউ না। আজকে ক্ষমা করলে দেখা যাবে কাল আপনি আবার একই কাজ করবেন তখন আবার এসে ক্ষমা চাইবেন। অন্যায় করেছেন আর সেটা যেহেতু আপনি বুঝতে পেরেছেন তাই বলবো, শুধরে যান। বড়ো মা এসব শুনলে কষ্ট পাবেন তাই আমি উনাকে কিছু বলিনি। আপনি যদি শুধরে যান তাহলে আমি এই ব্যাপারে উনাকে কিছু বলবোও না। আপনাকে হেনস্থা করার কোনো উদ্দেশ্য আমার নেই। আপনি আমার বাবার বয়সী, আপনাকে আমি বাবার চোখে দেখি। তাই আশা করবো, আজ থেকে আপনিও আমাকে আপনার মেয়ের চোখেই দেখবেন।’

আকবর সাহেব মাথা হেলিয়ে মোলায়েম গলায় বললেন,

‘তুমি খুব ভালো মা, খুব ভালো। দেখো, আজ থেকে আমি একদম বদলে যাবো। একজন ভালো বাবা হয়ে দেখাবো।’

আকবর সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। পদ্ম এখনও ভেবেই চলছে, হলো’টা কী উনার। সত্যিই কি উনি আজ থেকে ভালো মানুষ হয়ে যাবেন? যদি এমনটা হয় তাহলে তো ভালো। অন্তত তাকে তো আর এইভাবে আর ভয়ে ভয়ে বাঁচতে হবে না…

চলবে…

#পদ্মফুল
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|১৮|

পদ্ম আজ সকাল থেকেই এদিক ওদিক ঘুরছে। তার যেন আজ বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না। কিছু একটা করতে মন চায়ছে। কিন্তু করবে টা কী সে? রুবি হোসেন তো তাকে কোনো কাজই করতে দেন না। এইভাবে আর কত বসে বসে খাবে? শরীরে তো জং ধরে যাচ্ছে। পদ্ম তাই সিদ্ধান্ত নিল, আজ কিছু একটা করবে সে।

কিছুদিন ধরে তার মন মেজাজ খুব ভালো। আকবর সাহেব সত্যিই নিজেকে বদলে নিয়েছেন। তিনি আর পদ্ম’র দিকে অমন করে তাকান না। খুব প্রয়োজন না পড়লে পদ্ম’র সাথে তেমন একটা কথাও বলেন না। পদ্ম খুশি তাতে। সে যেন এখন প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে। অবশ্য তার এই মন ভালো রাখার পেছনে আরেক জনের ও বিশেষ অবদান রয়েছে। তিনি হলেন, “আরাফাত”। আজকাল তার সাথে পদ্ম’র প্রায়ই কথা হচ্ছে। সময়ে অসময়ে দুজনেই মেতে উঠছে ফোনালাপে। আরাফাতের সাথে কথা বললে পদ্ম ভীষণ শান্তি পায়। মানুষটা তাকে বোঝে, তাকে বোঝায়। দুজনের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে বটে।
.
.

পদ্ম রুবি হোসেনের দরজায় নক করে বললো,

‘বড়ো মা, আসবো?’

‘হ্যাঁ পদ্ম, এসো।’

পদ্ম রুমের ভেতরে গেল। রুবি হোসেন চোখে চশমা এঁটে বই পড়ছিলেন। পদ্ম-কে দেখে চশমা নামিয়ে বললেন,

‘কিছু বলবে?’

পদ্ম অসহায় মুখে উনার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘বড়ো মা, আমার না আর এইভাবে বসে বসে খেতে ভালো লাগছে না। আমাকে কিছু কাজ দাও। যেকোনো কিছু। এত অবসর সারাদিন থাকা যায় বলো? আমি খুব বোর হচ্ছি, বড়ো মা।’

‘এক কাজ করো, আরাফাতকে নিয়ে বাইরে থেকে একটু ঘুরে এসো, দেখো সমস্ত বোরিংনেস কেটে যাবে।’

‘ধ্যাত, তুমি যে কী বল। আমি এত ঘুরাঘুরি করতে পারবো না। তার চেয়ে বরং আমি আজ একটু পুরো বাড়িটা পরিষ্কার করি, কী বলো?’

‘আরে মেয়ে, এসব করার জন্য তো খালা আছেই। তুমি কেন এসব করতে যাবে বলতো?’

‘প্লীজ বড়ো মা, এমন করো না। করি না একটু কাজ, কী হবে তাতে?’

রুবি হোসেন কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,

‘ঠিক আছে বাবা, করো গিয়ে পরিষ্কার।’

পদ্ম খুশিতে গদগদ হয়ে গলায় বললো,

‘থ্যাংক ইউ, বড়ো মা।’

যদিও পুরো বাড়ি যথেষ্ঠ পরিষ্কার তাও পদ্ম কোমরে ওড়না বেঁধে তার কাজে নেমে পড়লো। এই কাজটা তার ভীষণ পছন্দের। সবকিছু নিজের হাতে পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখার মাঝে একটা প্রশান্তি আছে।

পদ্ম একটা কাপড় নিয়ে সব রুমের আসবাবপত্র গুলো ভালো ভাবে মুছল। তারপর বিভিন্ন জায়গায় রাখা শো-পিস গুলোও ভালো ভাবে পরিষ্কার করলো। দেয়ালে টানানো ছবিগুলো মুছল। ড্রেসিং টেবিলের আয়না’টা পরিষ্কার করে সেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ঢং করলো। তারপর সে গেল আদিদের রুমের কাছে। এই রুম পরিষ্কার করার কোনো উপায় নেই। বাইরে থেকে লক করা। আদিদ আসলেই কেবল এই লক খোলা হয়। অন্যথায় এখানে হরহামেশাই এই লক বিদ্যমান থাকে। পদ্ম ঠোঁট উল্টে লিভিং রুমে চলে গেল। সেখানের কিছু সাফ সাফাই করে সে গেল ডাইনিং রুমে। ডাইনিং টা খুব ভালো ভাবে পরিষ্কার করলো সে। ড্রয়িং রুমের সোফাগুলোও মুছল। এদিকের সব কাজ শেষে সে রুবি হোসেনের রুমে গেল। রুবি হোসেন তাকে দেখে বললো,

‘আমার রুম পরিষ্কার করতে হবে না, পদ্ম। তুমি বাকি রুমগুলো পরিষ্কার করো।’

পদ্ম বললো,

‘কিন্তু ওগুলো তো শেষ। আর কী পরিষ্কার করা যায়…উমম।’

ভাবতে ভাবতেই পদ্ম’র হঠাৎ মনে পড়ল, ছাদের রুমটা তো খুব অপরিষ্কার। এত অপরিষ্কার যে বাইরে থেকেও খুব বাজে গন্ধ টের পাওয়া যায়। ঐ রুম’টা পরিষ্কার করলে কেমন হয়? পদ্ম কিছু না বলে রুবি হোসেনের রুম থেকে বেরিয়ে গেল। রুবি হোসেনও ব্যাপারটায় এত পাত্তা না দিয়ে নিজের বই পড়ায় আবার মনোযোগ দিলেন।

পদ্ম একটা ঝাড়ু আর কিছু কাপড় নিয়ে ছাদে উঠে গেল। সেই রুম’টার কাছে গিয়ে দেখল সেটা তালা দেওয়া। ধুর, এটার চাবি এখন আবার কই পাবে সে। বড়ো মা’র কাছে চাইলে বড়ো মা জীবনেও দিবে না সেটা সে জানে। উল্টো বলবে, ঐ রুম তোমার পরিষ্কার করতে হবে না, ঐখানে কেউ যায় না, অযথা কষ্ট করার কোনো দরকার নেই। পদ্ম তাই ঠিক করলো সে বড়ো মা’র কাছে আর যাবে না। বরং রুম’টা একেবারে সুন্দর করে গুছিয়ে তারপর বড়ো মা’কে এনে সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এখন আগে তাকে এই তালা খুলতে হবে। আর তার মাথায় যে ক্লিপ আছে সেটা দিয়ে সে ইজিলি এই তালা খুলতে পারবে। এর আগেও এইভাবে সে অনেক তালা খুলেছে। এটা তার জন্য কোনো ব্যাপারই না। যেই ভাবা সেই ভাব। ফট করে মাথা থেকে চিকন ক্লিপ’টা খুলে তালার ভেতর ঢুকালো সে। তারপর খুব কৌশলে তালার প্যাঁচ ভাঙতে লাগল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত শেষ পর্যন্ত গিয়ে সফল হতে পারলো না সে। পুরোনো তালা, জং ধরে আছে। এই তালা এইভাবে খোলা যাবে না। তাও পদ্ম আরো দুবার চেষ্টা করলো। কিন্ত, পারলো না। পদ্ম তাই বিরক্ত হয়ে তালা’টা ধরে দু একবার জোরে টান দিল। সে মনে মনে ভাবল, না সে আর হয়তো তার পরিকল্পনা সফল করতে পারবে না। কিন্তু, হয়তো সৃষ্টিকর্তা এখানে অন্যকিছু ভেবে রেখেছেন। পদ্ম চমকে গেল, যখন সে দেখল যে তালা’টা খুলে গিয়েছে। পদ্ম’র মুখে হাসি ফুটে উঠল। তালা’টা এত পুরোনো ছিল যে দু একবার টানা টানিতেই সেটা খুলে গিয়েছে। যাক ভালোই হয়েছে, এবার সে কোমর বেঁধে তার কাজে নামতে পারবে।

পদ্ম আস্তে করে রুমের ভেতর উঁকি দিল। ইশ, কী বিচ্ছিরি গন্ধ। নির্ঘাত ইঁদুর টিঁদুর মরে টরে পড়ে আছে। কেমন উটকো একটা গন্ধ। পদ্ম’র গা যেন গুলিয়ে উঠছে। সে তার ওড়না’টা নাকে মুখে বেঁধে নিল। তারপর ঝাড়ু’টা নিয়ে রুমের ভেতর ঢুকল। রুমে আলো নেই। আর অন্ধকারে কিছু দেখাও যাচ্ছে না। সে রুমের দেয়াল হাতড়ে সুইচ খুঁজে চলছে। অনেকক্ষণ খোঁজার পর হয়তো এবার পেল সে। সেখানে চাপ দিতেই ঢিম ঢিম আলোয় একটা লাইট জ্বলে উঠল। পদ্ম এবার বড়ো বড়ো চোখে তাকাল। রুম’টা তো বেশ বড়ো। কিন্তু এত ময়লা হয়ে আছে চারদিক যে এইখানে কী কী আছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। পদ্ম ঝাড়ু’টা হাতে নিয়ে এদিক ওদিক ঝাড়তে লাগল। অনেক্ষণ ঝেড়ে ঝুড়েও কিছুই তেমন পরিষ্কার করতে পারলো না সে। না, তার একার পক্ষে এটা সম্ভব ও না। খালাকে ডাকতে হবে, দুজনে মিলে করলে খুব তাড়াতাড়ি হবে কাজ’টা। এইভেবে পদ্ম নিচে নেমে গেল। রান্নাঘরে খালা কাজ করছিলেন। পদ্ম তাকে গিয়ে বললো,

‘খালা, আমার একটু সাহায্য লাগবে।’

খালা গম্ভীর গলায় জবাব দিলেন,

‘কী সাহায্য?’

‘আসলে, আমি ঐ ছাদের রুম’টা পরিষ্কার করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রুমে প্রচুর ময়লা, আমার একার পক্ষে ঐ রুম পরিষ্কার করা সম্ভব না। তাই তুমিও চলো না প্লীজ, আমাকে একটু সাহায্য করবে।’

খালা যেন ভুত দেখার মতো চমকে উঠলেন। ভয়ার্ত কন্ঠে বললেন,

‘ছাদের রুম? ঐ তালা দেয়া রুম’ডা?’

‘হ্যাঁ খালা, ঐটাই।’

খালা যেন এবার আঁতকে উঠলেন।

‘এইডা কী করসো, মাইয়া? তুমি কি খালাম্মার অনুমতি নিসো? খালাম্মার অনুমতি না নিয়ে এই কাজ করে থাকলে, তুমি শেষ। খালাম্মা জানে মাইরা ফেলবো তোমারে।’

পদ্ম যেন বোকা বনে গেল। সে হা করে তাকিয়ে বললো,

‘এসব কী বলছো, খালা? একটা সামান্য রুম খোলায়, বড়ো মা আমাকে মারতে যাবে কেন? তুমি যে কী বলো না।’

খালা ভীষণ আফসোসের সুরে তখন বললেন,

‘তোমার বোধ হয় নিজের জানের মায়া নাই। তাই তো এসব করতাছো। মাইয়া, সময় থাকতে চুপচাপ ঐ রুম আটকায় দিয়া আইসা চুপচাপ বইসা থাকো। কাউরে কিছু বলার দরকার নাই। যাও যাও, আমি যেডা কইছি ঐডা করো। নয়তো বাঁচতে পারবা না।’

পদ্ম’র এবার খটকা লাগে। খালা নিশ্চয়ই এমনি এমনি এসব বলছেন না, উনার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি নিশ্চয়ই মারাত্মক কিছু জানেন। যার জন্য উনি এমন করছেন। কিন্তু, ঐ রুমে কী এমন আছে যার জন্য খালা এমন করছেন? বড়ো মা জানলে কী হবে? ঐ রুমে দরজা খোলা নিষেধ কেন? ঐটা কি খুব স্পেশাল রুম? পদ্ম ভেবে পায় না। তবে এইটুকু বুঝে কিছু একটা রহস্য তো আছেই। আর সেটা তাকে অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। আপাতত সে খালার কথামতো চুপচাপ গিয়ে রুম’টা আটকে দিয়ে চলে এলো। এখন না, সময় আর সুযোগ মতে ঐ রুমের রহস্য উদ্ঘাটন করবে সে…

চলবে…

#পদ্মফুল
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|১৯|

পদ্ম লাল রঙের একটা জামদানী শাড়ি পরেছে। শাড়িটা রুবি হোসেন তাকে দিয়েছেন। সে এই প্রথম শাড়ি পরেছে। নিজেকে আয়নায় দেখে বারবার যেন বিস্মিত হচ্ছে সে। আজকে তাকে অন্যরকম লাগছে। কেমন যেন নতুন বউয়ের মত একটা ফিল হচ্ছে তার। শাড়ি পরা শেষে সে হালকা পাতলা কিছু জুয়েলারিও পরে নিল। এগুলোও রুবি হোসেন দিয়েছেন। তারপর চুলটা খোঁপা করে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়েছে। শাড়ির আঁচলটা টেনে এনে মাথায় ঘোমটা দিতেই মনে হলো এবার সত্যি সত্যিই তাকে বউ লাগছে। ইশ, এবার তো লজ্জা লাগছে তার! আরাফাতের সামনে কী করে যাবে, সেটাই ভাবছে সে। গেইট দিয়ে ঢুকার সময় পদ্ম একবার বারান্দা দিয়ে উঁকি দিয়ে তাকে দেখেছিল। পাঞ্জাবী গায়ে সুদর্শন লাগছে তাকে।

রুবি হোসেন রুমে এসে পদ্ম-কে তাড়া দিয়ে বললেন,

‘পদ্ম, হয়েছে তোমার? উনারা তো নিচে অপেক্ষা করছেন তোমার জন্য। চলো এবার..’

পদ্ম লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বললো,

‘আমি তৈরি, বড়ো মা।’

পদ্ম-কে তখন আপাদমস্তক দেখে রুবি হোসেন বললেন,

‘মাশাল্লাহ, কী সুন্দর লাগছে তোমায়! আরাফাত তোমাকে এইভাবে দেখলে তো আজই বিয়ে করে নিতে চাইবে।’

পদ্ম ভীষণ লজ্জা পেল। সে মাথা নিচু করে দু হাত কচলাতে লাগল। রুবি হোসেন হালকা হেসে বললেন,

‘থাক, আর লজ্জা পেতে হবে না। চলো, এবার নিচে চলো।’

তিনি পদ্ম-কে সাথে নিয়ে নিচে নামলেন। আরাফাত আর পদ্ম এই প্রথম মুখোমুখি হতে চলেছে। পদ্ম’র হৃৎস্পন্দন যেন ক্ষণে ক্ষণে বেড়েই চলছে। সে নিচে সবার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাম দিল। তখন তার সালামের জবাব দিয়ে একজন ভদ্রমহিলা বললেন,

‘এদিকে এসো, আমার পাশে এসে বসো মা।’

কথার ধরনে পদ্ম’র মনে হলো, উনি হয়তো আরাফাতের “মা”। পদ্ম-কে তিনি তার পাশে বসালেন। তার বরাবরই আরাফাত বসা। কিন্তু সে লজ্জায় তাকাতে পারছে না তার দিকে। সেখানে বেশি কেউ ছিল না। আরাফাতের মা, বাবা, বোন আর আরো একজন ভদ্রলোক, হয়তো উনি আরাফাতের চাচা হোন। সবাই তাকে টুকিটাকি এটা ওটা প্রশ্ন করলো। পদ্ম বেশ স্বাচ্ছন্দ নিয়ে সেসব প্রশ্নের জবাব দিল। একপর্যায়ে বলা হলো ছেলে আর মেয়েকে একটু আলাদা কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। কথা মতো দুজনকেই পাঠানো হলো পদ্ম’র রুমে। এতক্ষণ পদ্ম’র অস্বস্তি লাগলেও এখন কেন যেন তার খানিকটা ভয়ও করছে। তার গলা যেন শুকিয়ে উঠছে। আরাফাত তার রুমে এসে দাঁড়িয়ে আছে। পদ্ম সৌজন্যের খাতিরে বললো,

‘বসুন।’

আরাফাত হালকা হেসে বিছানার এক কোণে বসলো। তারপর সে পদ্ম-কে ও বসতে বললো। কিছুটা দূরত্ব রেখে পদ্মও তার পাশে গিয়ে বসলো। পদ্ম বুঝতে পারছে না তার এখন কিছু বলা উচিত নাকি চুপ করে থাকাটাই বেটার অপশন। ঐদিকে আরাফাতেরও তাই মনে হচ্ছে। দুজনেই এইভেবে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। একপর্যায়ে আরাফাতই তার সাথে প্রথম কথা বলার চেষ্টা করে বললো,

‘আপনার আর এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই তো?’

পদ্ম অপ্রস্তুত হাসল। মিনমিনিয়ে বললো,

‘না মানে আসলে, বড়ো মা যা বলবে তাই হবে।’

আরাফাত তখন হেসে বললো,

‘তার মানে আপনি রাজি?’

পদ্ম লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। আরাফাত তখন আবার প্রশ্ন করলো,

‘আপনার কি আমার সম্পর্কে আর কিছু জানার আছে?’

‘না, বড়ো মা আমাকে সব বলেছেন। আর তাছাড়া আপনিও তো আপনার সম্পর্কে সবই বলেছেন। আর কী জানার থাকতে পারে? তবে, আপনার যদি আমার সম্পর্কে কিছু জানার থাকে তবে প্রশ্ন করতে পারেন।’

আরাফাত আলতো হেসে জবাবে বললো,

‘আপনার সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি ততটুকুই যথেষ্ঠ। আমার আর কিছু জানার প্রয়োজন নেই।’

পদ্ম মনে মনে ভীষণ স্বস্তি পেল। অবশেষে তার জীবনে সুন্দর কিছু হতে চলছে। একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হতে চলছে। আহা, বুকের ভেতরটা ঢিপঢিপ করছে তার। যেন এতসব কিছু ভেবে সে অন্যরকম একটা সুখ পাচ্ছে।
.

নিচে বড়োদের অনেক আলোচনা হলো। কী আলোচনা হলো সেটা পদ্ম বা আরাফাত কেউই জানে না। তারা মাত্রই নিচে নেমেছে। আর নামা মাত্রই দেখল সবাই বেশ উৎসাহ নিয়ে একজন অন্যজনকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন। ইতিমধ্যেই আরাফাতের ছোট বোন পদ্ম’র মুখে এনে মিষ্টি পুরে দিল। পদ্ম বুঝে গেল এটা কিসের ইঙ্গিত। তারমানে সবাই রাজি। পদ্ম’র মতো আরাফাতও ভীষণ খুশি। মিষ্টি খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই আরাফাতের বাবা বললেন,

‘আমরা কিন্তু শুভ কাজে দেরি করতে চাই না, আপা। আপনারা রাজি থাকলে আগামী শুক্রবারেই বিয়েটা হয়ে যাক?’

রুবি হোসেন আর আকবর সাহেব দুজনেই এতে সম্মতি জানিয়ে বললেন,

‘আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে ছেলে মেয়েকে প্রশ্ন করুন, তাদের আবার কোনো সমস্যা নেই তো?’

আরাফাতের বাবা তখন পদ্ম আর আরাফাতের উদ্দেশ্যে বললেন,

‘তোমাদের কোনো আপত্তি নেই তো?’

পদ্ম লজ্জা পেয়ে মৌনতা গ্রহণ করলো। আরাফাত বললো,

‘না বাবা, আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

সবাই তখন সমস্বরে বলে উঠল, “আলহামদুলিল্লাহ।”

কিছুক্ষণ আগে মেহমান’রা সবাই চলে গিয়েছেনে। পদ্ম তার রুমে বসে বসে তার হাতের অনামিকা আঙ্গুলের আংটি’টা দেখছে। আজই এটা আরাফাতের মা তাকে পরিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। ভাবতেই অবাক লাগছে, তার অন্য আর চার পাশ’টা মেয়ের মতো স্বাভাবিক ভাবেই একটা বিয়ে হচ্ছে। কখনো ভাবেনি সে এমন কাউকে সে তার জীবন সঙ্গী হিসেবে পাবে। মামা, মামী তার জন্য যেসব ছেলে দেখছিল তাদের কথা ভাবতেই তো তার গা শিউরে উঠে। আরাফাত ভীষণ ভালো একটা ছেলে। হয়তো ভবিষ্যতে তাকে ভীষণ ভালোবাসবে…

______________________________________

আজ বৃহস্পতিবার। আর কালকে শুক্রবার। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এসেছে। বিয়ে নিয়ে পদ্ম’র উত্তেজনার কোনো কমতি ছিল না। তবে বাড়ি জুড়ে আলাদা কোনো হৈ চৈ ছিল না। সে রুবি হোসেনকে বলেছে, তাদের বিয়েটা নাকি মসজিদে হবে। খুব সাধারণ ভাবে। আর তার কথা মতোই তাদের বিয়ের ব্যবস্থা মসজিদেই করা হয়েছে। আজকের দিন পেরুলেই কাল নতুন আরেকটা দিন। যেই দিনটা অন্য দিনগুলোর মতো হবে না। মনে ভেতর ভীষণ অস্থিরতা আর ভয় কাজ করলেও পদ্ম নিজেকে সাহস দিচ্ছে এই বলে যে, এই বিয়ের পর হয়তো সত্যিই তার জীবন পাল্টে যাবে।
.
.

বিকেলের দিকে পদ্ম তার রুমে বসে আরাফাতের সাথে কথা বলছিল। হঠাৎ সে তখন বাইরে থেকে গাড়ির শব্দ শুনতে পায়। আর সেই শব্দ শোনা মাত্রই তার মন বলে উঠে, “ডাক্তারবাবু আসেনি তো?” পদ্ম বারান্দায় যায় দেখার জন্য। গেইট দিয়ে সেই পরিচিত গাড়িটা ঢুকতে দেখেই পদ্ম’র ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে চমৎকার হাসি। ডাক্তারবাবু এসেছেন। নিশ্চয়ই বড়ো মা তাকে তার বিয়ে উপলক্ষে আসতে বলছেন। এত দুশ্চিন্তার মাঝেও ডাক্তারবাবুকে দেখে পদ্ম আরো এক দফা স্বস্তি পেল। মনে মনে বললো, “ডাক্তারবাবু বাড়িতে থাকলে সব কিছু ভালোই ভালোই হবে…”

চলবে…