পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-০৫

0
4717

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারহাজ বাইক চালাচ্ছে। ফিহা এর আগে কখনো বাইকে চড়েনি। সে খামচে ধরে ফারহাজ এর কাধ। এতে ফারহাজ কিছুটা ব্যাথা পেলেও চুপ থাকে। বাচ্ছা মানুষ তাই হয়তে ভয় পাচ্ছে। ফিহার কথা অনুযায়ী ফারহাজ বাইকটা ৩নং বাড়ির কাছে রাখে। ফারহাজ বলে উঠে— এসে পড়েছি তোমার বাড়ি নামো। ফারহাজ এর বলার সাথে সাথেই ফিহা পামকিন কে নিয়ে নেমে পড়ে।
ফারহাজ ও বাইকটা সাইডে রেখে বলে উঠে–
চলো বাড়িতে রেখে আসি।
ফিহাঃ এইরে এখন যদি উনি আমার সাথে যায় তাহলে তো বুঝে যাবে এইটা আমার বাড়ি নাহ। আর যদি জেনে যায় আমি মিথ্যে বলেছি তাহলে তো
সত্যিই জেলে পাচার করে দিবে। নাহ নাহ আমি জেলে যাবো নাহ!

ফিহা বলে উঠে—

আমি অইটুকু পথ যেতে পারবো। কোনো সমস্যা হবেনা লাটসাহেব!

ফারহাজঃ ঠিক আছে।
এখুনি যাও ফাস্ট!

ফিহাঃ অ্যা?

ফারহাজঃ অ্যা নয় হ্যা! বাড়িতে চলে এসেছো এখন যাও। নাকি রাস্তায় থাকবে?

ফিহা ঃ নাহ নাহ আমি যাচ্ছি।

এই বলে সে গেটের দিকে পামকিনকে নিয়ে দেয় একটা দৌড়!

ফারহাজ এক পলক সেখানে তাঁকিয়ে বাইক টা স্টার্ট দেয়।

ফিহা কোনোরকম দৌড়ে বাড়ির কলিং বেল চাপে।

তখনি কেউ বের হয়ে বলে উঠে—

আরে ফিহা তুই এখানে?? এখন!

কোনো সমস্যা??

ফিহাঃ সিমি দোস্ত অনেক সমস্যা এখানেই দাঁড় করিয়ে রাখবি???

ভিতরে আসতে দে।

সিমি ঃ ওহ হ্যা আয়!

আসলে ফিহা ফারহাজ কে তার বান্ধুবি সিমির বাসার ঠিকানা বলেছে।

ফিহা দেখে সিমির মা বলে উঠে—

আরে ফিহা যে এতো রাতে কোনো সমস্যা হয়েছে???

ফিহাঃ আসলে মানে?

এইরে এখন আন্টিকে কি কমু??

(মনে মনে)

ফিহা পেটে হাত দিয়ে বলে উঠে—-

।আসলে আমি তিনদিন ধরে কিছুই খাইনি
থুড়ি ২ দিন ধরে কিছুই খাইনি।

সিমির মাঃ সে কি? ফাতেমা ভাবি তোমাকে ২দিন ধরে খাওয়াইনি।

সিমিঃ কি মিথ্যুক রে বাবা আজকেও
৩ প্লেট বিরিয়ানি+ মমো খাইছে

(মনে মনে)

ফিহাঃ কি আর বলবো
দুঃখের কথা

(অসহায় ফেস করে)

সিমির মা ঃ নাহ মা হ বলো বলো।

ফিহাঃ আসলে পটকা আছেনা আমাদের বন্ধু!
মোটা করে দেখতে পটকা মাছের মতো।

সিমির মাঃ হ্যা হ্যা পটকা তো?

ফিহাঃ ওকে ওর মা খেতে দেয়না।

আসলে অনেক মটু হয়ে যাচ্ছে তো তাই যাতে শুকিয়ে যায়।

এখন পটকা তো না খেয়ে থাকতে পারেনা তাই আমাদের বাড়ি এসে প্রতিদিন লুকিয়ে আমার খাবার খেয়ে যায়।

মাকেও কিছু বলতে পারিনা যদি মা আন্টিকে কিছু বলে দেয় তাই! তাই চলে আসলাম খেতে।

সিমিঃ কি ডাহা মিথ্যে বলে এই মেয়ে।
(মনে মনে)

সিমির মা ঃ আহারে মেয়েটা কতদিন ধরে খায়না।

আসো আসো তোমাকে খেতে দেই।

আজকে বাড়িতে পোলাও করেছি।

ফিহা হাত তালি দিয়ে বলে—

হ্যা হ্যা আন্টি দিন !

সিমি ঃ কি মেয়েরে বাবা!

।।।।।

ফারহাজ বাড়িতে ঢুকার সাথে সাথেই দেখে।

তার দাদু মিঃ রাইজাদা মির্জা রেগে ফায়ার

ফারহাজ এর কাকি কেঁদে যাচ্ছে যাকে বলে ন্যাকা কাদুনি!

মিসেস প্রিয়া( ফারহাজ এর মা) বলে উঠেন—

আর ন্যাকা কেঁদে কি হবে???

মেয়েকে তো মানুষ করতে পারিস নি।

এতো রাতে মির্জা বাড়ির মেয়ে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরেছে সবাই শুনলে ছিহ ছিহ ছিহ করবে।

ফারহাজ বুঝতে পেরেছে ইশিকা আবারো ও মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরেছে তাই দাদুন রেগে আছে।

ফারহাজ এর ছোট কাকার মেয়ে ইশিকা অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী।

বাবা-মেয়ের আস্কারা এতোটা বিগড়ে গেছে সারাদিন শুধু নাইট -ক্লাব।

ফারহাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে—

এখন আর কি করার। আমার মনে হয় কালকে ইশিকার সাথে কথা বলার উচিৎ!

প্রিয়াঃ তার মধ্যে তোর বাবা আর কাকাও নেই আজ বাড়িতে।

দাদু ফারহাজ কে দেখে উপরে চলে গেলে গটগট করে।

ফারহাজ তার দিকে তাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো

কেননা সে যখন আসে তখনি তার দাদু সেখানে থাকেনা।

পুলিশে জয়েন হওয়ার সাথে সাথেই দাদুর সাথে একটা দুরুত্ব সৃস্টি হয়ে গিয়েছে।

কেননা রাইজাদা মির্জা কখনো চাইনি তার নাতি পুলিশে জয়েন করুক।

তার পিছনে কারনটা আজোও কেউ জানতে পারেনি।

মিসেস প্রিয়াঃ এই ছোটো যাহ তো এতো ভ্যা ভ্যা না করে
ঘরে যা দেখ মেয়ে কি করছে।

ফারহাজ এর কাকি আর কিছু না বলে চলে যায়।

মিসেস প্রিয়াঃ কিরে ইরিনাএ সাথে দেখা হয়েছে???
সারপ্রাইজ টা কেমন লাগলো?

ফারহাজঃ তুমি সব জানতে তাইনা??

আমাকে বললে নাহ কেন???

মিসেস প্রিয়াঃ ইরিনা বলেছিলো তোকে সারপ্রাইজ দিবে তাই!
(মুচকি হেঁসে)

ফারহাজঃ সত্যি আমি এতোটা খুশি হয়েছি কি বলবো।

মিসেস প্রিয়াঃ তোর বাবা আসলে রিহার বাসায় গিয়ে বিয়ের দিন ঠিক করে আসবো কি বলিস???

ফারহাজ মৃদু হেঁসে চলে যায়।

ছেলের হাঁসিটা যে সম্মতির লক্ষন তা বুঝতে বাকি রইলো
মিসেস প্রিয়ার!

তিনি একটা প্রশান্তির হাঁসি দিলেন।

এইবার যত তাড়াতাড়ি ইরিনা আর ফারহাজ এর বিয়ে দিতে হবে।

ফারহাজ আজকে অনেক খুশি কতদিন পর সে তার ভালোবাসাকে পেয়েছে।

কিন্তু অই পুচকি মেয়েটার ইনোসেন্ট এখনো চোখের সামনে ভাঁসছে ফারহাজ এর।

বাচ্ছা মেয়েটা সত্যি বোকা কীভাবে ফারহাজ এর কথা বিশ্বাস করলো ভাবতেই হেঁসে দেয় ফারহাজ।

ফারহাজ নিজের কোট টা কাবার্ডে রেখে হঠাৎ ই
ভাবে আচ্ছা অই পুচকি মেয়েটার কথা সে এতো ভাবছে কেন???

নাহ নাহ এখন ইরিনার সাথে কথা বলার দরকার।

ফারহাজ ফোনটা বের করে ইরিনাকে কল

করে কিন্তু ইরিনার ফোন ওয়েটিং!!!

ফারহাজঃ ইরিনা কার সাথে কথা বলছে???

এদিকে,,

ইরিনা কাউকে বলে উঠে—

দেখুন আমাকে এইভাবে ডিস্টার্ব করবেন নাহ।

অজানা কেউ বলে উঠে—
অবশ্যই করবো তুমি কি ভেবেছো?বাংলাদেশে এসে বেঁচে যাবে
।।।

।।।।।।।

নিজের ঘরে বসে আছে ফিহার মা।

ফিহার মা প্রচন্ড টেনশন করছে।

ফিহা বাগানেও নেই!

তখনি
রিহা এসে বল উঠে—

কিগো ফাতেমা রিহাকে পেলে???

ফাতেমাঃ নাহ ! আপা!

আমার মেয়েটার কোনো ক্ষতি হলো না তো???

রিহাঃ একটা কাজ করো ওর বন্ধুদের ফোন করে দেখো। ওরা হয়তো কিছু জানতে পারে।

তেমন কিছু হলে আমি এখুনি ইরিনার বাবাকে বলছি একটু খুঁজে দেখতে।

ফাতেমাঃ হ্যা আমি বরং ওর বন্ধুদের একটা ফোন দেই।

তখনি ফাতেমার ফোন বেঁজে উঠে।

ফাতেমা তাঁকিয়ে দেখে সিমির মা ফোন করেছে।

ফাতেমাঃ হ্যালো ভাবি!

সিমির মা সব খুলে বলে।

মুহুর্তেই রেহে উঠে ফাতেমা।

ফাতেমাঃ কই অই মেয়ে কই আজকে যদি ঝাটাপিটা আমি না করেছি ওকে।

সিমির মাঃ আরে ভাবি এইভাবে বলিয়েন নাহ ছোট মানুষ না খেয়ে ছিলো।

ফাতেমাঃ আমি এখুনি আসছি!

রিহাঃ কি হয়েছে ফাতেমা???

ফাতেমাঃ আর বলবেন নাহ আপা।

এই বাদর মেয়েটাকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো।

দুইদিন ধরে ওর বন্ধু পটকা ওর সব খাবার খেয়ে নিচ্ছে কিন্তু একবারও আমাকে বলেনাহ।

এখন ক্ষিদে সহ্য করতে না পেরে
খাবার খাওয়ার জন্য বান্ধুবির বাড়ি গেছে।

রিহাঃ এমা! কি বলছো ফাতেমা!

ফিহার উচিৎ ছিলো আমাদের বলার!

এদিকে ফিহা কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সিমি এসে ফিহার কানে কানে বলে উঠে—

দোস্ত কি হয়েছে বলবি একটু???

ফিহাঃ আরে বলিস নাহ অই লাটসাহেব এর জন্য আবারোও ফেঁসে গেলাম।

সিমিঃ মানে???

ফিহা সব খুলে বলল।

সিমিঃ এখন কি হবে রে.

তুই তো পুলিশ সাহেবকেও মিথ্যে বলেছিস।

আবার আমার মা কেও মিথ্যে বলেছিস তাও পটকাকে নিয়ে বেচারা তো এইসব এর কিছুই জানেনা।

শুধু শুধু ওকে ফাঁসিয়ে দিলি। আমার মা আবার তোর মাকে ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছে।
তোর মা যদি পটকার মা কে ফোন করে তখন কি হবে??
তুই তো ধরা পড়ে যাবি।

ফিহার মাথায় হাত সেই জেল থেকে বাঁচার জন্য কতভাবে ফেঁসে গেলো।

সব হয়েছে অই ব্যাটা পুলিশ লাটসাহেব এর জন্য

ফিহার ইচ্ছে করছে ভ্যা ভ্যা কাঁদতে আজকে বাড়ি গেলে নিশ্চিত ঝ্যাটার বারি পড়বে।




।চলবে কি?