পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-০৬

0
5888

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারহাজ ফোনটা বিছানাতে ছুড়ে ফেলে। প্রচন্ড রাগ উঠছে তার। সে বারান্দায় চলে যায়। বারান্দায় ইজি চেয়ার বসে স্মোকিং করতে থাকে। এই মুহুর্তে মাথাটা ঠান্ডা করার দরকার। ফারহাজ আকাশের ছোট্ট চাঁদের দিকে তাঁকায় আচ্ছা ইরিনা কি চাঁদের মতো?
সে চাঁদের দিকে তাঁকায় ফিহার সেই ভয়ার্ত মুখখানা ভেঁসে উঠে। ফারহাজ কি করছে বুঝতে পারছেনা সে মাথাটা খামচে ধরে তার ভাবনায় কেন বার বার সেই পুচকি মেয়েটা ধরা দেয়? সে তো ইরিনা কে নিয়ে ভাবতে চেয়েছিলো। তখনি ফারহাজ এর ফোনটা বেঁজে উঠে —
ফারহাজ তাঁকিয়ে দেখে ইরিনা ফোন করেছে।

প্রচন্ড অভিমান হচ্ছে ইরিনার প্রতি।

সে ভেবে রেখেছে আজ ইরিনার সাথে একটুও
ধরবেনা।

কিন্তু ফোন বেজেই যাচ্ছে।

অনেক্ষন বেজে ফোনটা বন্ধ হয়ে গেলো।

তখনি ভয়েস মেসেজ পাঠালো ইরিনা!

ইরিনাঃ আমার সাহেব এর রাগ হয়েছি বুঝি???

জানি রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আচ্ছা বাবা আমার ফোনটাকি এবার দয়া করে ধরা যায়?

প্লিয???

ইরিনা অনেক কিউট করে বলছে আর রাগ পুষে রাখতে পারলো নাহ ফারহাজ খানিক্টা হেঁসে ফোনটা রিসিভ করে।

ইরিনা ঃ যাক বাবাহ মশাই ফোনটা ধরেছে !

ফারহাজ চুপ হয়ে রয়েছে!

ইরিনাঃ আমি জানি তুমি আমাকে অনেকবার ফোন করেছো কিন্তু ফারহাজ আমি একটু বিজি ছিলাম তাই আর কি!
আসলে অনেকদিন পরে একটা পুরনো ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছিলাম।
সরি!!

ফারহাজ এখন আর চুপ থাকতে পারলো খানিক্টা রাগি গলায় বলে উঠলো—

হ্যা এখন তো ফ্রেন্ড ই সব!

সত্যি আমার থেকে তোমার কাছে ফ্রেন্ড বেশি ইম্পোর্টেন্ট!

ফারহাজ কথা কথা শুনে
মুচকি হাঁসে ইরিনা।

সে বলে উঠে—

তুমি বড্ড হিংসুটে হয়ে গেছো সাহেব!

ফারহাজ ও হেঁসে দেয়!

তাও বলে উঠে—
সরি গ্রেন্টেট নয়!

ইরিনা ঃ কি করলে গ্রেন্টেট হবে!

ফারহাজঃ কালকে সুন্দর করে তুমি সেঁজে থাকবে বিকজ!

ইরিনাঃ বিকজ???

ফারহাজঃ মা এবং দাদিজান আসবে কালকে আমিও আসছি!
আমাদের বিয়ের কথা বলতে

ইরিনা খুশি হয়ে বলে—

সত্যি??? ফারহাজ ইউ নো আম সো হেপ্পি!

ফারহাজঃ ফাইনালি আমরা একে অপরেরে হবো।

ইরিনা লজ্জায় মিয়ে পড়ে।
।।।।

ফিহা কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
তার সামনেই বেত হাতে দাঁড়িয়ে আছে পটকা।

পটকা ভয়ংকর রেগে আছে তা তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে

ফিহা শুকনো ঢুক গিলল।

ফিহা ঃ দোস্ত এইবার থাম না রে।

১০০ বার কান উটবস করেছি আর পারবো নাহ কমরে ব্যাথা করছে যে।

পটকাঃ ১০০ বার কিরে তোকে তো ১০০০ বার করানোর দরকার!

তুই শেষমেষ এতো বড় অপবাদ দিলি আমি প্রতিদিন এসে তোর খাবার খেয়ে ফেলি???

জানিস আমার মা আমাকে কত মার মেরেছে শুধুমাত্র তোর জন্য ।

ফিহা কাঁদুকাঁদু ফেস করে বলে উঠে—

মোটু

দোস্ত দেখ তুই তো আমার দোস্ত তাইনা???

আর একজন দোস্ত এর কর্তব্য হলো তার দোস্ত এর সাহায্য করা!

পটকাঃ তাই বলে এতো বড় অপবাদ!

আজ একটু খাই বলে এইরকম করতে পারলি???

ফিহা বলে উঠে—

মোটকুরে বেশি করলে কিন্তু একটা থাপ্পড় খাবি।

পটকা কোমরে হাত রেখে বলে উঠে—

কিহ বললি

ফিহা কেবলামার্কা হাঁসি দিয়ে বলে উঠে—
আচ্ছা কি করলে তুই আমাকে মাফ করবি???বল তাই করবো।

পটকাঃ আমার একটা শর্ত আছে।

ফিহাঃ কি শর্ত??

পটকা আর টিউপ শয়তানি হাঁসি দেয়।

সিমি শুকনো ঢুক গিলল।

কেননা পটকা আর টিউপ এমন কিছু প্ল্যান করেছে যা ফিহার জন্য অনেক টাই ভয়ংকর হবে।

হ্যাডমাস্টার স্যার ঘুমিয়ে আছেন ডেস্কে।

উনার প্রায় একটা কাজ হলো
ঘুমিয়ে পড়া। সারাদিন ঘুমাতেই থাকে।

ফিহা তার অফিসে ঢুকে। পিছনে পিছহে পিছনে টিউপ আর পটকাও ঢুকে।

ফিহাকে পটকা শর্ত দিয়েছে হ্যাডমাস্টার স্যার কে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে হবে।

ফিহার বেশ ভয় করছে কেননা স্যারকে যে একবার জাগায় তার উপর দিয়ে টর্নেডো যায়।

ফিহা একবার স্যার এর কাছে যেতে গিয়েও থেমে যায়।

পিছনে তাকিয়ে দেখে পটকা চোখ গরম করে তাঁকিয়ে আছে।

ফিহাঃ শয়তান গুলা।
আমারও দিন আসবে।

(মনে মনে)

ফিহা আস্তে আস্তে গিয়ে হ্যাডমাস্টার স্যার এর কানে জোড়ে একটা চিৎকার করে বলে —
স্যার আপনার বউ পালিয়ে গেছে।

স্যার ধরফরিয়ে উঠে বসে।

ততক্ষনে ফিহা, পটকা আর টিউপ দেয় দৌড়!

স্যারঃ কিহ আমার বউ পালিয়ে গেছে কি হবে এখন।

স্যার দেয় দৌড় একেবারে
নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

পটকা, টিউপ হেঁসেই যাচ্ছে।

ফিহা পটকার কান মুলে বলে উঠে—

৷ মোটুরে তোর জন্য যদি আজকে ধরা খাইতাম তোরে যে কি করতাম নিজেও জানিনা।

পটকাঃ আচ্ছা ধরা তো খাস নি তাইনা?

এখন চল!

ফিহাঃ কোথায়???

টিউপঃ কোথায় আবার তোর বাড়িতে!

পটকাঃ এইবার সত্যি গিয়ে ভালো করে খেয়ে আসবো।

তোর বাড়িতে।

ফিহার মাথায় হাত

ফিহাঃ এরা এখন আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর খাবার একসাথে খাবে।

টিউপ ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয়।

টিউপঃ দেখেছিস কীভাবে আমাদের খোটা দিচ্ছে।

পটকাঃ যাই করুক আজকে ওর বাড়িতেই দুপুরের খাবার খাবো।

।।।।।।

ফারহাজ, ফারহাজ এর দাদি আর মিসেস প্রিয়া আজকে ইরিনার বাসায় যাচ্ছে। আপতত বিয়ের কথা বলতে।

ফারহাজ আজকে অনেকটাই খুশি!

দাদি ঃ দেখেছো বউমা আজকে কিন্তু আমার নাতিটা কত খুশি।

মিসেস প্রিয়াঃ হবেনা মা! আজ আমরা বিয়ের কথা বলতে যাচ্ছি তাই!

ফারহাজ মাথা চুলকে বলে উঠে—

এমন কিছুই নাহ দাদি!

দাদি মুচকি হেঁসে বলে উঠে—

বুঝি বুঝি সব বুঝি।

।।।।(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

এদিকে,,

ফিহাকে দেখেই পামকিন তার কাছে ছুটে যায়।

ফিহা পামকিন কে আদর করে
নিজের স্কুলের ব্যাগ রেখে তার মায়ের কাছে গিয়ে বলে উঠে—

মা আজকে পটকারা আসবে।দুপুরে ওদের দাওয়াত দিয়েছি!

ফাতেমাঃ তাতো ভালো কথা!
আসুক সমস্যা নেই! আচ্ছা শুন

একটা খুশির খবর আছে।

আজকে ইরিনা মার বিয়ের জন্য কথা বলতে আসবে।

ফিহা খুশিতে হাত তালি দিয়ে বলে উঠে—

সত্যি মা??
তার মানে অনেক আনন্দ হবে।

ফাতেমাঃ হুম রে!

ইরিনা মায়ের বিয়েতো ছোটবেলা থেকেই ঠিক করে রেখেছে।

ইরিনা মা এতোদিন বিদেশে ছিলো তাই বিয়েটা আটকে ছিলো।
তাছাড়া ইরিনা আর ফারহাজ বাবা একে অপরকে বড্ড ভালোবাসে।

ফারহাজ নাম টা শুনে ফিহা অবাক হয়ে যায়।

ফিহাঃ মা!
ইরিনা আপুর সেই হবু বর এর নাম কি ফারহাজ??

ফাতেমা চুলা থেকে ভাতের পাতিল টা নামিয়ে চুলাটা অফ করে বলে উঠে—-

হ্যা কেন???

ফিহা ঃ সে কি থানার অফিসার?

ফাতেমাঃ হুম তুই কীভাবে জানলি!

ফিহা এইবার শেষ।

সেই লাটসাহেব তাহলে ইরিনা আপুর হবু বর!

তাহলে তো সে জেনে যাবে
ফিহা তাকে মিথ্যে বলেছে
এইবার তাহলে ফিহাকে সত্যি সত্যি জেলে যেতেই হবে।

ভাবতেই কান্না চলে আসছে ফিহার।

এদিকে,

ফারহাজ৷ ইরিনার বাড়ির সামনে গাড়িটা রাখে।

ফারহাজ এর দাদি ও মা আগে নামে

কিছু সার্ভেনট রা মিস্টি হাতে নেমে পড়ে।

ফারহাজঃ দাদিজান আর মা তোমরা যাও আমি গাড়িটা পার্ক করে আসছি।

দাদিঃ ঠিক আছে দাদুভাই!

ফারহাজ গাড়িটা পার্ক করে সাইডে রাখে।

তখনি টিউপ আর পটকা আসে।

টিউপ আর পটকা কে দেখে

ফারহাজ কিছুটা অবাক হয়।

ফারহাজ ঃ এরা তো সেইদিন এর মেয়ের বন্ধুগুলো ওরা এখানে কি করছে?

তারা গেটে ঢুকবে তখনি ফারহাজ বলে উঠে—

এই শুনো!

পটকা আর টিউপ
পিছনে তাঁকিয়ে দেখে সেইদিন এর পুলিশ টা!

তারা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।

তখন ফিহা আসে।

ফারহাজ কে দেখে সে তাড়াতাড়ি লুকিয়ে পড়ে।

ফারহাজ টিউপ আর পটকার
কাছে এসে বলে উঠে–

তোমরা এখানে কি করছো???

টিউপঃ আমাদের বন্ধু ফিহা ওর বাড়িতে দাওয়াত খেতে এসেছি

(মেকি হাঁসি দিয়ে)

ফারহাজঃ ওয়াট?????(অবাক হয়ে)

ফিহাঃ বলদ রে

এদের জন্য আমাকে এইবার ঠিকই জেলে যেতে হবে
😢😢


চলবি কি?

কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু 💙