পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-০৯

0
5874

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা মাথায় হাত দিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে কেঁদে দেয়।ফারহাজ গাড়ি করে যাচ্ছিলো হঠাৎ করে ফিহাকে কাঁদতে দেখে সে গাড়ি থামিয়ে ফেলে।ফারহাজ গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি নেমে যায় এবং হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে যায় ফিহার দিকে। ফারহাজ ফিহার কাছে আসবে তার আগে কেউ এগিয়ে এসে বলে উঠে–

আর ইউ ওকে লিটেল প্রিন্সেস?

কারো কন্ঠস্বর এ ফিহা অশ্রুমাখা চোখ দিয়ে তার দিকে তাঁকায়। একজন ১৭-১৮ বছরের ছেলে দাঁড়িয়ে আছে যথেষ্ট স্মার্ট!
তার গাঁয়ে ক্রিকেটার এর ইউনিফর্ম!

সে আবারও বলে উঠে—
আমি সত্যি সরি! আসলে বুঝতে পারিনি আমার বল এতো দূরে চলে আসবে আর তোমার মাথায় লাগবে।

ফিহা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে—

পঁচা ছেলে একটা!

ছেলেটি বুঝতে পারছেনা সে কি করবে

তাকে দেখে ফারহাজ ও কিছুটা অবাক হয়।

ফারহাজঃ নিলয় তুই এখানে??

নিলয় ফারহাজ এর কাকার ছোট ছেলে।

সে পিছনে ঘুড়ে তাঁকায় নিজের বড় ভাইকে দেখে সেও কিছুটা অবাক হয়।

নিলয় ঃ ভাইয়া তুমি এইখানে?

ফারহাজকে দেখে ফিহা আরো জোড়ে কেঁদে দেয়।

কেন জেনো ফারহাজ এর ফিহার কান্না মোটেও ভালো লাগছেনা।

সে দ্রুত ফিহার দিকে এগিয়ে যায়।

ফারহাজঃ ফিহা তোমার কোথায় লেগেছে বলো!

ফিহার কপাল থেকে রক্ত পড়ছে ফিহার হাত-পা ছড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে।

নিলয় এগিয়ে এসে বলে উঠে—

তুমি প্লিয কেঁদো নাহ আমি এখুনি ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি!

আসলে স্টিলের বল তো তাই আর কি বেশি ব্যাথা পেয়েছে।

নিলয় ফিহার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে ফিহা ফারহাজ এর কাছে ঘেসে বলে উঠে–

আমি অই পঁচা ছেলের কাছে ওষুধ লাগাবো নাহ হুহ আমাকে ব্যাথা দিয়েছে!

ফারহাজ চোখের ইশারায় নিলয়কে নিষেধ করে

নিলয় থেমে যায়।

ফারহাজ বলে উঠে—

চলো চলো তোমাকে বরং হসপিটালে নিয়ে যাই!
চলো উঠো!

ফিহা বলে উঠলো—

আমার ব্যাথা করছে অ্যা অ্যা 😭

ফিহার কান্নার মোটেও সহ্য হচ্ছেনা ফারহাজ এর।

সে ফিহাকে কোলে নিয়ে হসপিটালের দিকে হাঁটা ধরে

সবাই ফারহাজ এর এমন কান্ডে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।

ফিহা কান্না করতে করতে হঠাৎ করেই থেমে যায় ফারহাজ এর মুখ দেখে।

সে একেবারে ফারহাজ এর বুকে লেপ্টে আছে।

এই মুহুর্তে যেনো সবথেকে বেশি ফিহা ফারহাজকেই ভরসা করতে পারে।

ফারহাজ এর বুকের প্রতিটা স্পন্দন শুনতে পারছে সে।

ফারহাজ এর মুখের দিকে তাঁকিয়ে হঠাৎ করেই যেনো সব ব্যাথা উধাও হয়ে যায়।

ফারহাজ এর ফর্সা মুখ একেবারে চিন্তার আধারে যেনো ঘিড়ে গেছে।

ডক্টর ফিহার কপালে ব্যান্ডিজ করে দেয়।

ফিহা আহ করে মৃদু চিৎকার করে উঠে!

ডক্টরঃ এইতো তোমাকে ব্যান্ডিজ করে দিয়েছি এখন

তাড়াতাড়ি সু্স্হ হয়ে যাবে তুমি!

ওষুধ ও দিয়ে দিবো ঠিক হয়ে যাবে।

ফারহাজঃ বাচ্ছে মেয়ে তো তাই ভয় পেয়ে গেছে ডক্টর!

ডক্টরঃ নিজের খেয়াল রেখো টেক কেয়ার!

ডক্টর হেঁসে চলে যায়।

ফিহা আবারোও গাল টা ফুলিয়ে বলে উঠে—

ফিহা ঃ ফিহা স্ট্রং গার্ল সে কোনোদিন কাঁদেনা।
সে যথেষ্ট ব্যাথা সহ্য করতে পারে।

ফারহাজঃ তো এতোক্ষন ভ্যা ভ্যা করে কে কাঁদলো??

ফিহা ঃ ও তো আমি একটু ভেবেছিলাম ব্যাথা পেলে তো একটু কান্না করতে হয় নাহলে তো
মানুষ পঁচা বলবে তাই আর কি!

ফারহাজঃ বাহ কি যুক্তি এই পুচকি মেয়ের!

ফিহা আর ফারহাজ এর কথা শুনে এইবার নিলয় কিছুটা হেঁসে ফেললো।

নিলয়ঃ ভাইয়া তুমি কি এই পিন্সেস কে চিনো??

ফারহাজ হাত ভাজ করে বলে উঠে—

একে চিনবো নাহ আবার।

ফিহা নিলয়ের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠে—

এই পঁচা ছেলে তুমি আমাকে প্রিন্সেস বলছো কেন?

আমি কি প্রিন্সেস? হুহ

ফারহাজ কিছুটা রসিকতার ছলে বলে উঠে–

একে পুচকি বলে ডাক। একে কি প্রিন্সেস এর মতো দেখতে নাকি???

নিলয়ঃ এইভাবে বলো নাহ। ও সত্যি একটা কিউট প্রিন্সেস এর মতো দেখতে( হেঁসে)

ফিহাঃ এইযে লাটসাহেব আপনি আমাকে ইন্সাল্ট করছেন???

আপনি নিজে কি?

আয়নায় নিজের ঘুমড়োমুখো চেহারা টা দেখুন গিয়ে।

ফারহাজ ফিহার দিকে রেগে তাঁকিয়ে বলে উঠে–

এই পুচকি মেয়েটা দেখি ভারি অকৃতজ্ঞ।
হসপিটালে নিয়ে আসলাম এখন আমাকেই কথা শুনাচ্ছে।

ফিহাঃ আপনার ভাই এর জন্যই তো আমার
এই অবস্হা আর আমাকেই কথা শুনাচ্ছেন বাহ!

ফারহাজ কে কিছু বলতে না দিয়ে নিলয় ফিহার কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে বলে উঠে—আমি সত্যি সরি লিটেল প্রিন্সেস আমাকে একটু ক্ষমা করা যায়?

ফিহা একবার ফারহাজ এর দিকা তাঁকায় গম্ভির মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

ফিহাঃ ঠিক আছে। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি এই লাটসাহেব এর মতো বদমেজাজী নাহ তাই ক্ষমা করে দিলাম আপনিও মনে রাখবেন এই ফিহা যথষ্ট দয়ালু।
হুহ

নিলয়ঃ যথা আজ্ঞা!

ফারহাজ এইবার বলে উঠে—

আর কতক্ষন ড্রামা টা চলবে আমাকে অফিসে যেতে হবে।

এই পুচকি মেয়েটাকে বাসায় পৌছে দিয়ে অফিসে যাবো।

নিলয়ঃ ভাইয়া আমিও তোমার সাথে যাবো।

ফারহাজঃ কোথায়? আমার থানায়??

নিলয় মাথা চুলকে বলে উঠে—

নাহ ফিহাকে বাসা পর্যন্ত পৌছে আমাকেও একটু বাসায় পৌছে দিবে। আমি আজকে আমার সাথে গাড়ি আনেনি!

ফারহাজঃ এই পুচকি তোমাকে কি হেল্প করতে হবে নাকি যেতে পারবে গাড়ি অব্দি!

ফিহাঃ আমি পারবো হুহ!

এই বলে ফিহা নেমে যায়।

ফারহাজ গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে।

নিলয় পিছনে বসে পড়ে। ফিহা ভাবছে আসার সময় তো সামনেই ফারহাজ তাকে সামনেই বসিয়েছিলো এখন কি সাম্নেই বসবে সে।

ফিহার ভাবনার মাঝেই নিলয় বলে উঠে—

প্রিন্সেস তুমি বরং আমার সাথে পিছনেই বসো ।
আমরা কিছুক্ষন গল্প করি!

ফিহা ফারহাজ এর দিকে তাঁকায় সে চুপ করে আছে।

ফিহা আর কিছু না ভেবে নিলয়ের সাথে বসে পড়ে।

ফারহাজ গম্ভির মুখ করে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

এদিকে,,

ইরিনা চারেদিকে পাইচারি করে যাচ্ছে এই মুহুর্তে তার কি করা উচিৎ সে বুঝতে পারছেনা আচ্ছা সে যদি ফারহাজ কে সব বলে দেয় তাহলে তো হয়।
ফারহাজ নিশ্চই তাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।

ইরিনা ফোনটা হাতে নিতে যাবে তখনি মিসেস রিহা প্রবেশ করলেন!

রিহা ঃ কিরে ইরিনা তুই এখানে???

ইরিনাঃ হুম কি হয়েছে মা?

রিহা ঃ একটু আয় আমার সাথে!

আজকে একটু শপিং এ যাবো

ইরিনাঃ কিন্তু

রিহা বলে উঠে—

কোনো কিন্তু নয় আয় তো

এই বলে রিহা ইরিনার হাত ধরে বাইরের দিকে নিয়ে গেলো।

।।।
হঠাৎ করে গাড়ি জোড়ে ব্রেক হওয়ায় নিলয় আর ফিহা কিছুটা ঝুকে পড়ে।

নিলয়ঃ ভাইয়া এইভাবে গাড়িটা ব্রেক করলে কেন?

ফারহাজঃ তাঁকিয়ে দেখ এই পুচকির বাড়ি চলে এসেছি।

নিলয়ঃ আসলে ভাইয়া খেয়াল করিনি!

ফারহাজঃ করবি কীভাবে? সারা রাস্তায় হু হা করলে খেয়াল কি থাকে?

আর এই পুচকি নামো।

ফিহাঃ দেখুন লাটসাহেব আমারও এতো শখ নেই এই গাড়িতে থাকার।

এই বলে ফিহা নেমে পড়ে।

সে বাড়ির দিকে চলে যায় গাল ফুলিয়ে।

চলবে,,