পরকীয়ার শেষ পরিণতি পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব

0
731

#পরকীয়ার_শেষ_পরিণতি
#অন্তিম_পর্ব
#Shimul

আমার স্ত্রী আমার কথা শুনে আমার দু পা জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কান্না করতে করতে বলতে
লাগলো,,,,,,,,,,,,,

“আমাকে একটা বার ক্ষমা করে দাও, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার একটা সুযোগ দাও”

“তোকে কোন ক্ষমা করা যাবে না, আল্লাহর কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিস” কথাটা বলে আমি ধারালো ছুরিটা দিয়ে আমার স্ত্রীর শরীরে জুড়ে একটা টান দিলাম। সাথে সাথে আমার স্ত্রী ব্যথায় কুঁকড়িয়ে উঠলো, আর জোরে জোরে চিল্লাতে চিল্লাতে বলতে
লাগলো,,,,,,,,,,

“আমাকে ক্ষমা করে দাও, একটা বারের জন্য ক্ষমা করে দাও। আমি জীবনেও আর এরকম করবো না”

আমি আমার স্ত্রীর কোন আকুতি-মিনতি শুনছি না, মরণের নেশা আমায় চেপে ধরেছে। আমি ধারালো ছুরিটা দিয়ে আরেকটা পোছ দিব, তখনই আমার স্ত্রী হাত দিয়ে ছুরিটা ধরে ফেললো। হাত থেকে টগ বগ করে রক্ত পড়েছে, আমি ছুরিটা টান দিয়ে এনে এক কুপে আমার স্ত্রীর দেহ থেকে হাতটা বিচ্ছিন্ন করে ফেললাম। আমার স্ত্রী মেঝেতে পড়ে গিয়েছে, এক হাত দিয়ে আমার একটা পা জরিয়ে ধরে আছে।
আর বলছে,,,,,,,,,,,,,

“আমাকে তুমি একটা বার সুযোগ দাও”

আমি স্ত্রীর কোন কথায় শুনছি না। একটা পা হেছকা টান দিয়ে এনে, দেহ থেকে পা টা আলেদা করে ফেললাম।

আমার স্ত্রী আবার আকুতি-মিনতি সুরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,

“তুমি আমাকে একটা বার সুযোগ দিয়ে দেখ, আমি আল্লাহর কসম করে বলছি আমি ভালো হয়ে যাবো।তুমি আমার একটা হাত একটা পা কেটে ফেলেছো, আমার বাকি একটা হাত একটা পা দিয়ে সারা জীবন তোমার সেবা করবো। তোমার পায়ের কাছে পড়ে থাকবো, তিন বেলার চেয়ে এক বেলা খাবার দিও।

“তোকে যদি আমি ছেড়ে দেই, তুই আমার ছেলের সামনে মুখ দেখাবি কি ভাবে”

“আমি বাকিটা জীবন বোরকা পড়ে গোপন ঘরে বন্দি হয়ে থাকবো, আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবো আমার পাপের জন্য”

আমার স্ত্রীর বাঁচার জন্য আকুতি মিনুতি দেখে আমার একটু করুনা হলো। কারন এই ৬ বছরের সংসারের জীবনে তাকে অনেকটা ভালবেসে ফেলেছি।

হঠাৎ করে মুয়াজ্জিনের আল্লাহু আকবর আজানের ধ্বনি আমার কানে এসে লাগলো, প্রকৃতির পরিবেশ তখন নীরব। বাহিরে তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি নাই, টিপ টিপ করে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। সেই সাথে ঠান্ডা বাতাসে পরিবেশ’টাকে শান্ত করে তুলছে। জানালার পর্দার ফাক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস রুমের ভিতরে প্রবেশ করছে। সে ঠান্ডা বাতাস আমার উত্তাপ্ত গরম মাথাকে হিমশীতল করে তুলছে। আমি আসতে আসতে অবশ হয়ে যাচ্ছি, আমার হাত থেকে ছুরিটা পড়ে গেল।
আমি আমার স্ত্রীর হাত পা বিহীন শরীরের পাশে বসে কান্না করে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,,,,

“তুই কেন এমনটা করলি, কিসের অভাব ছিলো আমার? তোর যদি কাউকে ভালো লাগতো, তাহলে আমাকে বলতি। আমি তোকে ওর হাতে তুলে দিতাম।কিন্তু তুই কেন নোংরা খেলায় মেতে উঠলি”

আমার স্ত্রীর কথা বলার কোন শক্তি নাই। রক্ত দিয়ে আমার মেঝে ভেসে যাচ্ছে। আমি তারাতারি ওঁকে গাড়িতে তুলে হসপিটাল নিয়ে গেলাম। ওর ট্রিটমেন্টের সব টাকা দিয়ে আমি গ্রামের বাড়িতে চলে আসলাম।

এরপর এক’টানা ৬ টা মাস অধিবাহিত হয়ে গিয়েছে। প্রথম একটা মাস আমার ছেলে ওর আম্মুর জন্য কেদে কেদে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। সারাক্ষণ শুধু আম্মু আম্মু বলে ডাকে। আমার ছেলেটার মধ্যে সেই আগের চঞ্চলতা আর নেই, অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছে। আস্তে আস্তে ওর মা’র কথা ভুলিয়ে ওকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছি। এখনো মধ্যে রাতে আম্মু বলে চিৎকার দিয়ে উঠে।

আব্বু আম্মু আমাকে অনেক বুঝিয়েছে, আরেক টা বিয়ে করার জন্য। কিন্ত না, আমি আর কোন মেয়েকে বিশ্বাস করি না, আমার ছেলেকে নিয়ে আমি অনেক ভালো আছি।

___________________________

আজ আমার ছেলের জন্মদিন। ওর ৬ বছর পরিপূর্ণ হলো আজকে। ছেলেকে নিয়ে রানা প্লাজায় শপিং করতে গেলাম। শপিং করা শেষ করে গাড়ির কাছে আসা মাত্রই আমার ফোনটা বাজতে লাগলো, ফোন রিসিভ করে দেখি আমার এক বন্ধু।

আমার ছেলে আমার বাম হাতটা ধরে দাড়িয়ে আছে। বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে খেয়ালই নেই কখন ছেলে হাত ছেড়ে দিয়েছে। ছেলের কথা খেয়াল আসতেই, ফোন রেখে দিয়ে ছেলেকে খুজতে লাগলাম।

হঠাৎ খেয়াল করে দেখি রাস্তার মোড়ে একজন মহিলা আমার ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কপালে নাকে গালে চুমু দিচ্ছে, আর অঝোর নয়নে কান্না করছে। আমার ছেলেও মহিলা’টিকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে।

আমি মহিলা’টির কাছে গিয়ে বললাম,,,,,,,,,

“কি করছেন? ছাড়ুন আমার ছেলেকে”

কথাটা বলে আমি ছেলেকে ধরে টেনে নিয়ে আসতে চাইলাম। কিন্তু আমার ছেলে এবং মহিলা’টি কেউ কাউকে ছাড়ছেনা। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে মহিলা’টি বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,,

“প্লিজ আমার ছেলেকে কেড়ে নিয়েন না”

আমি মহিলার কন্ঠ সুর শুনে থমকে দাঁড়ালাম। কন্ঠটা খুব পরিচিত লাগছে, এই কন্ঠে’র সাথে যেন আমার কোথায় পরিচিত।

আমি মহিলা’টির কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, সাথে সাথে মহিলা আমার পায়ে পড়ে গেল। আর বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,,

“প্লিজ আমার ছেলেকে কেড়ে নিয়েন না”

কথাটা শুনে আমি মহিলা’টিকে
বললাম,,,,,,,,,,,,

“আপনার ছেলে মানে”

মহিলা’টি আমার দিকে মাথা তুলে তাকালো। কিন্তু আমি মহিলা’টিকে মুখে পর্দার কারনে তাকে চিনতে পারছিনা। কারণ তার মাথা থেকে পা অব্দি কালো বোরকা দিয়ে ঢাকা।

মহিলা’টি এবার মুখের পর্দাটা সড়ালো। আমি মহিলা’টির দিকে তাকিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে আশ্চর্য’জনক জিনিস’টা মনে হয় দেখলাম। কারণ এ যে আমার স্ত্রী। যাকে এখন অব্দি ডিভোর্স দেওয়া হয়নি। আমার স্ত্রী তার এক হাত দিয়ে আমার পায়ে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“আমাকে ক্ষমা করে দিন, জানি আমি ক্ষমার যোগ্য না। আমি আপনার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি। কিন্তু আপনি মাফ না করলে যে আল্লাহ তায়ালা আমাকে মাফ করবেন না। জানেন এখন আমি কোন পর পুরুষের দিকে তাকায় না, খুব ভয় পাই। আল্লাহর তায়া’লার দরবারে সারাক্ষণ কাদি আমার ব্যভিচারের জন্য, আমার পাপের জন্য। জানি না আল্লাহ তায়ালা আমাকে কোনদিন ক্ষমা করবেন কিনা! আমি আপনার পায়ে ধরে বলছি, আমার ছেলেটাকে ৫ মিনিটের জন্য আমার কাছে দেন! আমি কখনো কোনদিন আমার ছেলে’টাকে মন ভরে আদর করতে পারিনি” একথা বলে জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো।

আমি আর কোন কথা বললাম না। ওখান থেকে একটু দূরে চলে আসলাম। আমি বুঝতে পারছি যে, আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

“হাইরে মানুষ! স্বামী-সন্তান, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি সবই ছিল। রানীর মতো জীবন পেয়েছিল। আজ সে রাস্তার মোড়ে হুইল চেয়ারে বসে ভিক্ষা করে তার কৃত’কর্মের জন্য”

ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখি তার মাকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে। তার মাও বুকের সাথে জরিয়ে ধরে কান্না করছে।

আমি ৪-৫ মিনিট পর আমার ছেলেকে টেনে নিয়ে আসার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কেউ কাউকে ছাড়ছেনা। আমি একটু জোর করেই ছেলেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ছেলে জোরে জোরে চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“আমি আম্মুর কাছে যাবো! আমাকে ছেড়ে দাও, আমি আম্মুর কাছে যাবো”

ঐ দিকে আমার স্ত্রীও চিৎকার করে কান্না করতেছে, আর বলতেছে,,,,,,,,,,,,,

“প্লিজ আমার ছেলেকে নিয়ে যাই’য়েন না”

আমি কোন কথায় শুনলাম না, ছেলেকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় আসার পর থেকে ছেলের চিৎকারের আর কান্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেল। ছোট্ট বাচ্চা চিৎকার করতে করতে কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।

এগুলো দেখে আব্বু-আম্মু বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“বাবা যে অন্যায় করে নিজের ভুল বুঝতে পারে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। ক্ষমা করা হলো মহৎ কাজ। ক্ষমাকারী ব্যক্তি কে আল্লাহ তায়া’লা অনেক পছন্দ করেন । তুই বৌমাকে নিয়ে আয়, তার কৃত’কর্মের শাস্তি সে পেয়ে গেছে। তোর সন্তানের দিকে তাকিয়ে হলেও, তুই ওঁকে নিয়ে আয়” বাবা-মা আর সন্তানের দিকে তাকিয়ে ওঁকে খুঁজে নিয়ে আসলাম।

তারপর ৬ টা মাস চলে গেল। আমার স্ত্রী মনে হয় এই ৬ টা মাস বিছানায় পিঠ লাগাই নাই। সারাক্ষণ জায়’নামাজে দাঁড়িয়ে গভীর রাতে কান্নাকাটি করে তার কৃত’কর্মের জন্য, তার পাপের জন্য। পাশের রুম থেকে আমি তার কান্নার আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পাই। এই ৬ টা মাস আমি আমার স্ত্রীর মুখ একবারের জন্য ও দেখিনি, বা সে আমার সামনে আসেনি।

ইদানিং ওর কান্নার আওয়াজ আরো বেড়ে গেল। আশে পাশের লোক পর্যন্ত গভীর রাতে ওর কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। গভীর রজনীতে আমার পায়ের কাছে এসে কাঁদে আমি বুঝতে পারি। তার চোখের পানিতে আমার পা ভিজে যায়। কান্না করতে করতে অনেক সময় সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

আব্বু-আম্মু আমাকে প্রতি নিয়ত বুঝাচ্ছে। যে,,,,,,,,,

“ওর কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে দিনরাত কান্না কাটি করছে। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা হয়তো ওর আকুতি-মিনুতি, কান্নাকাটি দেখে ওকে মাফ করে দিয়েছে। তুই ও বাবা ওঁকে মাফ করে দে”

আমি মসজিদের সবচেয়ে বড় হুজুরের কাছে চলে গেলাম। গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম হুজুর কে? হুজুর আমার কথা শুনে বললো,,,,,,,,,,,

“কেউ যদি তার কৃত’কর্মের জন্য, তার পাপের জন্য আল্লাহ’র কাছে ক্ষমা চায়, কান্নাকাটি করে! তাহলে আল্লাহ তায়া’লা নিশ্চয়ই তাকে মাফ করে দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন— হে বান্দা তোমার গুনাহ যদি আকাশের মেঘ মালা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, আর তুমি যদি আমার কাছে তওবা করো, গভীর রাতে কান্নাকাটি করো, আমার কাছে মাথা নত করো! তাহলে তোমার নিজের ভুল স্বীকার করো। আর কখনো এ রকম কাজ করবে না। আমার নামে কসম করে প্রতিজ্ঞা করো! তাহলে আমি আল্লাহ সুবাহানু তায়ালা, তোমার সেই আকাশের মেঘ মালা পর্যন্ত গুনাহও আমি মাফ করে দেই”

তারপর পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাইতুল্লাহ তওয়াফে চলে গেলাম। কাবা শরীফের সামনে আমার স্ত্রী কান্না করতে করতে কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। জ্ঞান ফেরার পর আবার অঝোর নয়নে কান্না করতে থাকে। আর বলতে থাকে,,,,,,,,,,,,,

“হে আল্লাহ আমার মত পাপী, ব্যভিচারিণী আসমান এবং জমিনের মধ্যে নাই। আমি অনেক বড় পাপী, আমি আমার স্বামীর হক নষ্ট করেছি। শয়তানের ধুকাই পড়ে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছি। জানি আমি ক্ষমার যোগ্য না, তোমার কাছে আমি কোন মুখে ক্ষমা চাইবো? তোমার কাছে ক্ষমা চাইতেও যে আমার লজ্জা করে।কিন্তু তুমি ছাড়াতো আর ক্ষমাকারী কেউ নেই। তুমি যদি আমাকে তাড়িয়ে দাও, তাহলে আমি কার কাছে যাবো। তুমি ছাড়া যে আর দয়ালু কেউ নাই। আল্লাহ তুমি তোমার দরবার থেকে আমাকে তারিয়ে দিও না। আল্লাহ তোমার কাছে আমি পানাহা চাই, তোমার কাছে আমি ক্ষমা চাই” এভাবে কান্না করতে করতে মিনিট পাঁচেক পরে পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

বাইতুল্লাহ তওয়াফ শেষ করে তাকে নিয়ে চলে গেলাম সিঙ্গাপুর, পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত হসপিটালে।
কি করার জন্য নিয়ে গেছি, পাঠক/পাঠিকারা হয়তো বুঝতে পেরেছেন।

________________________

রঙের এই দুই দিনের দুনিয়ায় এসে, রং তামাশার খেলায় তুমি গেছো মিশে। পাপ-পূর্ণে ভরা জীবন তোমার, করেছো যিনা-ব্যভিচার। আরো করেছো সকল পাপের শোমিচার। সময় থাকতে ডাকো মাওলা’কে আজরাইল আগে আসি বার, আর না’হয় পাবে না সময় তুমি, মাওলা’কে ডাকি বার।

__________________সমাপ্ত_________________