পূণ্যতা নাকি শূন্যতা ২ পর্ব-০৪

0
263

#পূণ্যতা_নাকি_শূন্যতা
#সিজন_২
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_০৪

আমাদের নতুন বাড়ির সামনে আসতেই দেখলাম বাড়িটা অনেক বড় আর অনেক সুন্দর। আমাদের বাড়ির চেয়ে আরও বড় আরও বেশি সুন্দর। আমি গাড়ি থেকে নেমে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছি তখনই খালামনি বলেন,

– এটা তোমার বাড়ি। এতোটা বছর এই বাড়ির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছো আর নয়। এসো মা ভিতরে এসো।

আমি খালামনির সাথে ভিতরে প্রবেশ করলাম। খালামনি আম্মু আর আব্বু কে রুমে নিয়ে গেলান। আর সিদ্ধাত ভাইয়াকে বললেন,

– সিদ্ধাত, ঈশাকে ওর রুমে টা দেখিয়ে দে।

খালামনির মুখে কথাটা শুনেই আমার হার্ট বিট বেড়ে যায়। সবাই সবার রুমে চলে গেছে। আর আমি এখানো নিচেই দাঁড়িয়ে আছি। রাক্ষসের বাচ্চা সোজা সোফায় গিয়ে বসে পড়ে। আমাকে রুমে দেওয়া তো দূরের কথা আমার দিকে তাকাচ্ছে পযর্ন্ত না। উগান্ডার ভাল্লুক। মনে মনে এতো সয়তানি জানতাম না। কতক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে নিজেই বললাম,

– আমাকে রুম টা দেখিয়ে দাও না সিদ্ধাত ভাইয়া

অতঃপর দেখলাম আমার কথায় মিস্টার দৈত্য উঠে হাটা শুরু করলেন। আমিও উনার পিছু পিছু যাচ্ছি। শালা চরম সয়তান। একটু খালি ইগনোর করেছি দেখে সে আমার সাথে কথাই বলছে না। হুহ না বলল তাতে আমার কি? বয়েই গেছে কথা বলতে আমার। কিছুক্ষন পর দেখলাম আমাকে একটা রুমে নিয়ে আসলো। আমি রুমে প্রবেশ করতেই রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। আমি কিছু টা ভড়কে যাই। একটা ঢোক গিলে জিজ্ঞাসা করলাম

-দরজা লাগিয়েছো কেন সিদ্ধাত ভাইয়া?

এবার আমার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে। চোখ গুলো বড় বড়, মুখের রাগের ছাপ। দাতে দাত চেপে বলে,

– তুই আমার রুমে কেন এসেছিস?
– এটা তোমার রুম? আমি তো বললাম আমার রুম টা দেখিয়ে দিতে। তুমি এখানে কেন এনেছো? আমি কি তোমার রুমে আসতে চেয়েছি?
– আমি কি তোকে বলেছি আমার সাথে আয়। কেন এসেছিস?
– তুমি তো এটাও বলো আসিস না
– শাট আপ

এক ধমকে আমাকে ব‍্যাঙ বানিয়ে বসিয়ে রাখে। আমি ভয়ে ভয়ে আবারও বললাম,

– আচ্ছা সরো আমি নিজেই আমার ঘর খুজে নিচ্ছি।
– কেন এ ঘর কি পছন্দ হয় নি?
– এটা তো তোমার।
– তোরও।
-কিহ
-কিছু না।
সিদ্ধাত ভাইয়ার পাশ কাটিয়ে চলে আসছি তখন তিনি বলেন,

– আমার ঘর টা যদি তোর ঘর ও হয় তাতে কি খুব বেশি সমস্যা?

সিদ্ধাত ভাইয়ার এমন কথায় আমার পা দাঁড়িয়ে গেল। পিছনে ঘুরে তাকিয়ে উত্তর দিলাম,

– তোমার ঘরে অন্য কারো অধিকার সিদ্ধাত ভাইয়া। এটা আমার জন্য নয়।

বলেই বেরিয়ে এলাম। ঘুরতে ঘুরতে আম্মুর রুমে চলে গেলাম। সেখানে আব্বু, আম্মু, খালামনি ছিল। আমি যাওয়া মাত্রই খালামনি বলেন,
– কি রে এখনো ফ্রেস হস নি?
– তোমার বাদর ছেলে তো আমার ঘরটাই দেখিয়ে দিলো না ফ্রেস হবো কি করে?
– এই সিদ্ধাত টা না এমন হয়েছে কি বলবো আর। ওকে বলাটাই ভুল হয়েছে। আয় তো মা আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি।

খালামনির সাথে নিজের ঘরে গেলাম। আমার ঘর টা বেশ সুন্দর। আমি ঘুরে ঘুরে পুরো রুম টা দেখছি। অতঃপর ফ্রেস হয়ে নিলাম। মাথায় অনেক চিন্তা। সিদ্ধাত ভাইয়ার কথার আগা মাথা কিছু বুঝি না। এই বলে তার ভালোবাসার মানুষ আছে আবার এই আমার সাথে এইভাবে.. উফফ! নোভার কথা যদি সত্যি হয়? ইসস ভাবতেই বুক কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। সত্যি যদি সিদ্ধাত ভাইয়ার ভালোবাসার মানুষ টা আমি হই। তাহলে আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পেতো। উফফ লজ্জা লাগছে। না না এমন কিছুই হবে না। সব টা আমার ভাবনার ভুল। এরই মধ্যে খালামনির ডাক ভেসে এলো। রুম থেকে বের হয়ে নিচে যাবো তখনই সিড়িতে দৈত্যটা এসে দিলো এক ধাক্কা।

– উফফ! চোখ কি ঘরে রেখে এসেছো নাকি সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ধাক্কা খেতে ইচ্ছে করে?
– কিহ!
– কানে শুনতে পাও না
– দোষ ট তোর…
– আচ্ছা যাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
– তোর কাছে ক্ষমা চেয়েছে কে?
– আরে দোষ টা তো তোমার। সুন্দরী মেয়ে দেখেছো আর..
– ওয়েট ওয়েট ওয়েট। সুন্দরী মেয়ে!! কোথায় এখানে?
– কেন যে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে
– তুই? হাউ ফানি ঈশা। তুই নিজেকে সুন্দরী ভাবিস? লাইক সিরিয়াসলি?
– ভাবার কি আছে। আমি জানি আমি অনেক সুন্দর। ক্যাম্পাসের সবাই এই ঈশার জন্য পাগল বুঝলে? হুহ
– পচা জিনিসে মাছি বেশি আসে বুঝলে হুহ

বলেই রাক্ষসের বাচ্চা নিচে চলে গেল। আমি নাকি পচা জিনিস। কত বড় কথা। আমাকে বলে আমি নাকি পচা জিনিস। এতো বড় অপমান। এর শোধ তো আমি নিবোই। ফুসতে ফুসতে আমিও নিচে চলে গেলাম। সবাই ড্রইং রুমে বসে আছে। আমিও গিয়ে বসে পড়লাম। আমার সামনের সোফায় পাজি বাদর টা। একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে আর মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। গা জ্বলে যায় আমার। সবাই চা, নাস্তা খাচ্ছে। বড় চাচ্চু তখন বলেন,

আরিয়ান সাহেব: তা এবার তো আমাদের সিদ্ধাতের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে হবে কি বলো সবাই

সিদ্ধাত: প্লিজ বাবা! থামো না।

আয়ান সাহেব: হ্যাঁ তা তো বেশ ভালো কথা। একটা বউ মা আসার দরকার এবার।

আরিয়ান সাহেব: মেয়ে কিন্তু সিদ্ধাতের দেখাই আছে

আয়ান সাহেব: তাই নাকি? তাহলে বউ মা কবে আসছে?

সিদ্ধাত: হ্যাঁ চলে আসবে খুব তারাতারি

কথাটা বলেই সিদ্ধাত ভাইয়া চলে যায়। বাড়ির সবাই দেখলাম বেশ খুশি। তার মানে সিদ্ধাত ভাইয়ার সত্যি পছন্দের কেউ আছে। আর সেটা বড় চাচ্চু খালামনি সবাই জানে। আর সবাই রাজি ও। আমি শুধু শুধু উনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছি। এটা কখনই হওয়ার নয়। আম্মুও খুশি। আম্মু কিছু টা বুঝতে পেরেছিল আমাদের সম্পর্ক নিয়ে। কিন্তু যখন দেখলো যে সিদ্ধাত ভাইয়ার ভালোবাসা অন্য কেউ তখন আম্মুও খুশি। সবাই যখন তাদের ভালোবাসা সাপোর্ট করছে তাহলে আমার এই এক তরফা ভালোবাসা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বুকের ভিতরে চিন চিন ব্যাথা করছে। শ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হচ্ছে। গলা দিয়ে আর কিছু নামছে না। তাই আমিও উঠে এলাম। দৌড়ে নিজের ঘরে গেলাম চোখের পানি লুকানো মুশকিল। ঘরে ঢুকতেই দেখলাম আমার সুপ্ত ভালোবাসা আমার ঘরে বসে আছে। আমাকে দেখা মাত্র উঠে দাঁড়ায়। আমি কোনো মতে চোখের পানি লুকিয়ে বললাম,

– তুমি এখানে?
– তোর চোখে পানি কেন?
– কই! কিছু পড়েছে হয়তো।
– ঈশা!
– তুমি এখন আমার ঘর থেকে যাও তো। আমি ঘুমাবো।
– তুই যদি না বলিস কি হয়েছে তাহলে আমি যাবো না
– যাবে না তো? ঠিক আছে আমিই যাচ্ছি।

বলেই উল্টো ঘুরে বেরিয়ে যাবো তখনই সিদ্ধাত ভাইয়া আমার হাত টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়। অতঃপর নেশাক্ত কণ্ঠে বলে,

– কি ভেবেছিস আমি কিছু বুঝি না?
-(নিশ্চুপ)
– তোর চোখের পানির কারন কি সেটা আমি বুঝি।
– বোঝো তাহলে কাদাও কেন সিদ্ধাত ভাইয়া
– ঈশা!
– তুমি খুব পচা সিদ্ধাত ভাইয়া খুব পচা। তোমার সাথে আড়ি আমার। কথাই বলবো না
– ঠিক আছে কথা বলতে হবে না এভাবে বুকে থাকিস তাহলেই হবে।

যেই না সিদ্ধাত ভাইয়া কথাটা বলল, ওমনেই আমি সিদ্ধাত ভাইয়ার বুক থেকে উঠে পড়লাম।

– আবার কি হলো
– তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরলে কেন?
– ভুল করেছি নাকি?
– অবশ্যই। তুমি সেই ভাগ্যবতীকে ঠকাচ্ছো সিদ্ধাত ভাইয়া
– তোকে এতো জ্ঞান দিতে হবে না।
– তো ছোট বলে কি জ্ঞান দিতে পারবো না?
– না পারবি না। পারলে আদর করে দিস
– কিহ!
– হাহাহাহাহাহা
– পাজি, রাক্ষস, বাদর তোমার লজ্জা করে না?
– না তুই আদর করলে লজ্জা করবে না।
– এই যাও তো তুমি
– একটু আদর করে দে না
– কিহ!
– ঠিক আছে আমি করছি

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে তার পুরু ওষ্টোধর দিয়ে আমার অধর জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়। তার পুরুষালি শক্ত বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয় আমাকে। বুকের ভিতর যেন ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাচ্ছে। তার স্পর্শে আমার শরীর পাথর হয়ে আসছে। সিদ্ধাত ভাইয়ার বুকে খামচি দিয়ে টিশার্ট ধরে আছি।
নিজের জমিয়ে রাখা সব অভিমান যেন এক নিমিষেই ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে। বেশ কিছুক্ষন পর সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলেন,

– কি করলি এটা? দিলি তো আমার ভাগ্যবতীর অধিকারে ভাগ বসিয়ে? যত্ত সব।

বলেই হন হন করে বেরিয়ে যায়। আমি তো সিদ্ধাত ভাইয়ার কথায় পুরো বোকা বনে চলে গেলাম। কি বলল? আমি উনার ভাগ্যবতীর অধিকারে ভাগ বসিয়েছি? শালা খাটাসের বাচ্চা, উগান্ডার দৈত্য। আমার ঠোঁটের চৌদ্দ টা বাজিয়ে আবার আমাকেই দোষারোপ করে গেল। শালা তোর বউ জুটবে না। নিজেই আমার বরের অধিকারে ভাগ বসিয়েছে আবার আমাকে বলে। খবিশ কোথাকার। তোরে তো আমি দেখে নিবো। রাতের খাবি না? দেখ তোরে আজ কি খাওয়াই। হুহ।

রাতের খাবারের সময় খালামনি আমাকে ডাকতে পাঠালো সিদ্ধাতকে। আমিও পেয়েছি সুযোগ। নাচতে নাচতে সিদ্ধাত ভাইয়ার রুমে গেলাম। রুমের কোথাও সিদ্ধাত ভাইয়া নেই।

– সিদ্ধাত ভাইয়া, ও সিদ্ধাত ভাইয়া। সিদ্ধাত ভাইয়া
– আমি ওয়াসরুমে

ওয়াসরুম থেকে সিদ্ধাত ভাইয়া কথা টা বলে। আমি আস্তে করে ওয়াসরুমের দরজা বাহির থেকে লক করে দিয়েছি। অতঃপর ওয়াসরুমের লাইটটাও অফ করে দিলাম। ওপাশ থেকে ভেসে এলো,

– ক্যারেন্ট গেছে মনে হয় ঈশা আইপিএস টা অন কর তো
– হ্যাঁ? কিছু বলছো সিদ্ধাত ভাইয়া?
– বলছি আইপিএস ট অন কর
– ঠিক শুনতে পাচ্ছি না
– ঈশা! আইপিএস অন কর। আইপিএস
– সিদ্ধাত ভাইয়া কিছু শোনা যাচ্ছে না

সিদ্ধাত ভাইয়া এবার রেগেমেগে বের হতে গেল কিন্তু পারলো না।

– ঈশা! দরজা খোল
– কেন?
– কেন মানে? আমি কি এখানেই থাকবো?
– থাকো না। তুমি ওখানে থাকলে আমি একটু শান্তিতে থাকবো।
– ঈশা! দরজা খোল বলছি। লাইট টাও তুই অফ করেছিস তাই না?
– হিহিহি। এই তো বুঝে গেছো রাগী ছেলে।
– ঈশা! রাগ উঠাস না। দরজা খোল। না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।
– কে খারাপ করবে? তুমি? তুমি তো বের হতেই পারবে না খারাপ হবে কি করে হিহিহিহি
– গরম লাগছে ঈশা প্লিজ দরজা খোল
– বেশ তো সাওয়ার নিয়ে নাও গরম লাগবে না
– ঈশা! জাস্ট বের হই দেখ তোর কি অবস্থা করি
– আরে লেকচার কম ঝাড়ো। আগে তো বের হও
– তুই কি ভেবেছিস আমি বের হতে পারবো না? রেডি থাক। তোকে আমার হাত থেকে কে বাচায় সেটা দেখবো
– আগে নিজে তো বাচো তার পর আমার বাচার কথা ভেবো

এরই মধ্যে খালামনির ডাক এলো,

– ঈশা, সিদ্ধাতকে নিয়ে আয়।
– খালামনি সিদ্ধাত ভাইয়া খাবে না বলছে।
– তাহলে তুই চলে আয় মা
– আচ্ছা খালামনি আমি আসছি।

জোরে চিৎকার করে বললাম। ওয়াসরুম থেকে সিদ্ধাত ভাইয়া বলে,

– ঈশা আমার ক্ষুধা লেগেছে। খাবো না কেন বললি? দরজা খোল
– কেন খাইছো না সন্ধ্যায়? আমার বরের অধিকারে ভাগ বসিয়ে যা পাইছো সেটা খেয়েই আজকে রাত পার করো এই খানে
– ঈশা আমার গরম লাগছে প্লিজ খুলে দে
– ইসস সখ কত। আমি খুলে দেই আর তুমি আমাকে ধরে ফেলো। হুহ
– ঈশা আমি পুরো ঘেমে ভিজে গেছি। প্লিজ খুলে দে
– ঠিক আছে তুমি ১ ঘন্টা ওয়েট করো আমি খালামনি কে ২ ঘন্টায় পাঠাচ্ছি।

বলেই আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। নিচে গিয়ে খালামনি কে বললাম,

– গিয়ে দেখো তোমার ছেলে ওপরে কি করছে। যাও
– কি করছে?
– যাও না গিয়ে দেখো। আমি দেখে এসেছি তুমিও দেখে এসো।
– কি যে করে আমার ছেলেটা। আচ্ছা মায়া তুই এদিক টা দেখ আমি ওদিকে টা দেখে আসি

বলেই খালামনি ওপরে চলে যায়। আমি তারাতারি খেয়ে নিলাম। সিদ্ধাত ভাইয়ার যে অবস্থা তাতে সাওয়ার না নিয়ে বের হতে পারবে না। এই সুযোগে খেয়ে দৌড়ে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়েছি। উফফ এইবার শান্তি। পাজি দৈত্য টা আর আসতেও পারবে না।

চলবে?