পূর্ণতা নাকি শূন্যতা ২ পর্ব-০৫

0
266

#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা
#সিজন_২
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_০৫

রাতে কারো স্পর্শে ঘুম ভেঙে যায়। স্পর্শ গুলো নরমাল নয়। অনুভব করলাম কেউ একজন আমাকে কিস করছে। কিন্তু চোখ খুলে দেখার সাহস হচ্ছে না। ভুত হয় যদি। আরে ধুর ভুত কি কিস করবে নাকি। ঘাড় মটকাবে তাই ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে দেখি জমরাজা। উঠে বসেই চিৎকার দিয়েছি। কিন্তু চিৎকার টা দিতেই আমার মুখ চপে ধরে বলে,

– চিল্লাচ্ছিস কেন?
– উমম
– এইবার বল (মুখ ছেড়ে দিয়ে)
– এই চোর তুমি আমার ঘরে কি করো?
– বলেছিলাম না বের হতে পারলে খুব খারাপ হবে
– মা-মানে?
-কি যেন বলেছিলি। রাতে কি খেয়ে থাকবো?
– এই রে তুমি এসব মনে রেখেছো? ধুর বোকা ছেলে আমি তো মজা করেছি। যাও যাও নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ো।
– চুপ থাক তুই। রাতে কিন্তু ডিনার করি নি।
-কেন করো নি? আমি কি ডিনার করতে মানা করেছি?
-আসলে সন্ধ্যার খাবারের টেস্ট এতো বেশি যে অন্য কিছু আর ভালোই লাগছে না। তাই চলে এলাম ডিনার করতে
– এ-এই তু-তুমি কি বলতে চাইছো?
– ক্ষুধা লেগেছে
– ওহ এই ব্যাপার। চলো আমি তোমাকে এক্ষুনি খাবার দিচ্ছি। আরে যে কাউ…
– পেটের ক্ষুধা তো খাবার দিয়ে নিবারন করা যাবে মনের ক্ষুধা কি দিয়ে মিটাবি?
-মানে?
– সন্ধ্যার খাবার
-তুমি তো আচ্ছা পাজি। আজকেই এলাম এবাড়িতে আর তুমি আজই আমার সাথে এসব কি শুরু করেছো।
-হাহাহা
– তুমি এমন চরিত্রহীন আগে জানতাম না
– ঈশা! মুখ সামলে কথা বল

আমি চুপ হয়ে গেলাম। সিদ্ধাত ভাইয়া মূহুর্তেই রেগে যাবে বুঝতে পারি নি। আড় চোখে বার বার দেখছি উনি রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। আমি আবার একটু পাকনামি করে বললাম,

– তুমি এখনো নির্লজ্জর মত এখানে দাড়িয়ে আছো? এতো ছ্যাচড়া কেন তুমি? মাঝ রাতে একটা অবাবিহিত মেয়ের ঘরে ঢুকে তাকে কিস করো। লজ্জা করে না?

আমি কথা গুলো বলতেই সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে এক ধাক্কায় বিছানায় শুইয়ে দেয়। অতঃপর আমার ওপরে উঠে দুহাত বিছানার সাথে শক্ত করে চেপে ধরে বলে,

– শুধু তো মাত্র কিস করেছি এখন তোর এমন অবস্থা করবো জীবনে কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবি না। চরিত্রহীন তাই না? দেখ চরিত্রহীনরা কত ভয়ংকর হতে পারে।

– সিদ্ধাত ভাইয়া!

সিদ্ধাত ভাইয়া এবার আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেই।গভীর ভাবে কিস করতে থাকে। অতঃপর আস্তে আস্তে আমার ওষ্ঠজোড়া দখল করে নেয়। কিছুক্ষন পর ছেড়ে দেয়। অতঃপর আমার ওপর থেকে উঠে পড়ে। আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলতেই আমাকে কোলে তুলে হাটা শুরু করে।

– ছাড়ো সিদ্ধাত ভাইয়া
– চুপ
– ছাড়তে বলছি তো।
– চুপ থাকতে বলছি তো
– আজিব! ছাড়ো আমায়

এর মধ্যেই সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে ওয়াসরুমে নিয়ে সাওয়ার অন করে দেয়।

– হায় হায় কি করছো সিদ্ধাত ভাইয়া।
– গরম লাগলে সাওয়ার নিতে হয় তাই না?
– ইস!
– কেমন লাগে?
– খুবই বাজে
– হাহাহা। একা একা সাওয়ার কেমনে নেই বল,তাই তোর সাথে নিলাম। ভালো হলো না এখন?
– রাক্ষসের বাচ্চা, খাটাস তোরে দেখ কি করি। একবার সুযোগ পাই
– ওকে প্রানপাখি সুযোগ পাও তার পর

বলেই সিদ্ধাত ভাইয়া আবার গলায় মুখ ডুবিয়ে কিস করতে থাকে। মুহূর্তেই আমি শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে যাই। সিদ্ধাত ভাইয়ার চুল গুলো মুষ্টিবদ্ধ করে নেই দুহাতে। দুজনই নেশায় ডুবে যাচ্ছি। হঠাৎই সিদ্ধাত ভাইয়ার হাত আমার কামিজের ভিতর প্রবেশ করতেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।

-কি করছো তুমি? লিমিট ক্রস করো না সিদ্ধাত ভাইয়া

আমার কথায় ধ্যান ভাঙে তার। নেশার ঘোর কাটিয়ে বলে,

– আ-আই এম স-সরি
– এখান থেকে যাও প্লিজ
– ঈশা আমার কথা…
– প্লিজ যাও

সিদ্ধাত ভাইয়া হনহন করে বেরিয়ে যায়। আমি সাওয়ার অন করে বসে পড়ি। খুব কান্না পাচ্ছে। অসহায় লাগছে। বার বার এ কোন নেশায় ডুবছি। আর আজ… ছিহ!

সকালে নাস্তা করে বেরিয়ে যাই। খালামনির কথা মত সিদ্ধাত ভাইয়ার সাথেই বের হতে হলো। উনি ড্রাইভ করছে আর আমি পাশে বসে আছি। একটা কথাও বলি নি সারা রাস্তা। উনি কথা বলেছে কিন্তু আমি কোনো কথায় উত্তর দেই নি। বাড়ি ফেরার সময় একটা রিক্সা নিয়ে চলে এসেছি। বলেও আসি নি উনাকে। এভাবে তিন দিন চলে যায়। আমি একটা কথাও বলি নি। সব সময় ইগনোর করে চলে এসেছি। একই বাড়িতে আছি কিন্তু কথা বলি না। চোখের সামনে সব সময় দেখছি সে নিজেকে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দিচ্ছে। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া ও করে না। যখনই দেখি উনি একা আছে তখনই হাতে সিগারেট। সবার সাথে রেগে কথা বলে। সবসময় খিটখিটে মেজাজ। চলতি মাস শেষের দিকে আর কিছু দিন পর উনি চলে যাবে। ভালোই হবে চোখের সামনে না থাকলে আমারও এতো কষ্ট হবে না।
বেলকানিতে একা মনে এসবই ভাবছি তখনই আম্মু আর খালামনির প্রবেশ হয় আমার রুমে,

আম্মু: ঈশা
ঈশা: হ্যাঁ আম্মু
আম্মু: মন খারাপ? এখানে একা একা বসে আছিস
ঈশা: না আম্মু। এমনি বসে ছিলাম। তা তোমারা হঠাৎ আমার ঘরে? কিছু হয়েছে?
খালামনি: না মা কিছু হয় নি। তোমাকে একটা কথা বলতে এলাম।
আমি: কি কথা খালামনি?
আম্মু: দেখ মা। মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছিস স্বামীর ঘরে তো যেতেই হবে। আর তুই তো এখন আর ছোট নেই। বিয়ের বয়স ও হয়েছে। তাই….
আমি: তাই তোমারা আমাকে বিয়ে দিতে চাও তাই তো?
খালামনি: বড় হয়েছো বিয়ে তো দিতেই হবে
আমি: কিন্তু আমার চেয়ে সিদ্ধাত ভাইয়া বেশি বড়। আগে সিদ্ধাত ভাইয়ার বিয়ে দাও তার পর আমি বিয়ে করবো
খালামনি : সিদ্ধাতের জন্য আমাদের চিন্তা করা লাগবে না। সিদ্ধাতের জন্য পছন্দ করাই আছে ওর।

খালামনি কথায় বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো। সিদ্ধাত ভাইয়া অন্য কারো। এটা ভাবতেই প্রচন্ড কষ্ট হয়। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, মাথা ঘুরছে, চোখে যেন সব অন্ধকার দেখছি। তখনই আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

আম্মু: আজকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে। তুই আর না করিস না মা। ছেলে কে আমাদের সবার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।
আমি: তোমাদের পছন্দ হয়েছে তাই বলে যে আমারও পছন্দ হবে এমন টা তো নাও হতে পারে আম্মু
খালামনি: তোর পছন্দ না হলে এই বিয়ে হবে না মা। ছেলে যদি তোর পছন্দ হয় তাহলেই এই বিয়ে হবে না হলে হবে না
আমি: আগে সিদ্ধাত ভাইয়ার বিয়ে দাও। পাত্রী তো ঠিক করাই আছে। তাহলে এতো দেরী কেন করবা
খালামনি: দেবো তো। কিন্তু মেয়ে কে এখনো আমারা দেখি নি। সিদ্ধাত বলেছে মেয়ে কে নিয়ে আসবে একদিন। তখন দেখা যাবে। এখন ওর কথা বাদ দে।
আম্মু: এই যে এই শাড়ী টা পরবি আজকে সন্ধ্যায়।

একটা শাড়ি এগিয়ে দিয়ে কথা টা বলে আম্মু। আমার পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসছে। সিদ্ধাত ভাইয়া অন্য কাউ কে ভালোবাসে তাহলে আমার কাছে কেন আসে? আবার আমার বিয়ে ঠিক করেছে তাও সিদ্ধাত ভাইয়া কিছু বলছে না। নিরব কেন আছে? খালামনি কে বললাম,

– খালামনি আমি আম্মুর সাথে কিছু কথা বলবো
– হ্যাঁ হ্যাঁ বল। আমি চলে যাচ্ছি

খালামনি চলে যাওয়ার পরপরই আম্মু বলে,

– আমি জানি তুমি কি বলতে চাইছো। সিদ্ধাত কে নিয়ে আর ভেবো না। অনেক কষ্টের পর ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগিয়েছি তোমার জন্য তা আর ভাঙতে পারবো না।
– কিন্তু আম্মু…
– কোনো কিন্তু নয়। সিদ্ধাত কে ভুলে যাও। সিদ্ধাতের জন্য মেয়ে ঠিক করাই আছে।
– তাহলে আমার জীবন কেন এসেছে তোমাদের সিদ্ধাত?
– ভুলে যাও আর নতুন জীবনে পা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হও

বলেই আম্মু বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আমি অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি। বুকের ভিতর চিন চিন ব্যাথা করছে। এই সব ভালোবাসা খুবই খারাপ জিনিস। পূর্ণতা না পেলে বড্ড কষ্ট হয়। না ভালোবাসার মানুষ কে অন্য কারো সাথে সহ্য করা যায়, না নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়। কিন্তু সিদ্ধাত ভাইয়া যখন অন্য কাউ কে ভালোবাসে তখন আমি কেন উনাকে নিয়ে ভাববো। এই বিয়ে টা আমি করবো। ছেলে পছন্দ হোক বা না হোক।

সন্ধ্যায় আমি আম্মুর দেওয়া শাড়ী টা পরে বসে আছি। বুকের ভিতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সিদ্ধাত ভাইয়া নিশ্চয় জানে আজকে আমাকে দেখতে আসছে। তাও কিছু বলল না। উনিও চায় হয়তো আমার বিয়ে হয়ে যাক। এতে উনার কিছু যায় আসে না। কারণ উনি তো সত্যি অন্য কাউকে ভালোবাসে।

কিছুক্ষন পর আম্মু আমাকে নিয়ে নিচে যায়। ছেলে পক্ষের লোক সবাই নিচে আছে। আমাকে একটা ছেলের পাশে বসিয়ে দেয়। তখনই একজন ভদ্র মহিলা বলেন,

– বাহ! কি সুন্দর মানিয়েছে দুজনকে। যেন দুজনকে দুজনের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

উনার কথায় সবাই বেশ খুশি হয়। অতঃপর এক ভদ্রলোক বলেন,

– মেয়েকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। তাই আজই আংটি বদল টা শেষ করতে চাই। আপনারা কি বলেন?

আব্বু: এ তো আনন্দের কথা।
বড় চাচ্চু: তাহলে একটা ভালো দিন ক্ষন দেখে ওদের চার হাত এক করে দেই কি বলেন
ভদ্রলোক : হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই

তাদের এসব কথায় আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আর কোনো উপায় নেই সবাই রাজি। সবাই কত্ত খুশি। আমি এদের এই খুশি নষ্ট করতে পারবো না। আমিও বিয়ে টা করে নেবো। হঠাৎই বড় চাচ্চুর কথায় আমার হার্ট বিট বেড়ে গেল

বড় চাচ্চু: এই তো সিদ্ধাত চলে এসেছে। আয় আয় এদিকে আয়।

আব্বু: এসো বাবা। ভালো সময়ে এসেছো। ঈশার বিয়ের পাকা কথা চলছে। আমাদের সবার খুব পছন্দ ছেলে কে। তোমার মতামত টাও দাও

সিদ্ধাত: হোয়াট?? ঈশার বিয়ে?

খালামনি: হ্যাঁ। আসলে তোকে কিছু বলা হয় নি। তুই এই কয়েকদিন তো একা একা থাকছিস তোর মন মেজাজ ও তেমন ভালো নেই তাই আর কি তোকে কিছু বলা হয় নি।

সিদ্ধাত: তাই বলে এতো বড় একটা ডিসিশন নিলে আর একটা বার আমাকে বললে না?

আম্মু: তুই তো আমাদের সাথে কথাই বলিস না ঠিক করে। কি করে বলতাম? আচ্ছা যা হয়েছে হয়েছে। এখন আয় দেখ তো ঈশার বর কে পছন্দ হয়েছে কি না

সিদ্ধাত: প্লিজ মায়া মা। আজ এই পযর্ন্ত থাক । তোমাদের সবার সাথে আমার খুব জরুরি কথা আছে।

সিদ্ধাত ভাইয়ার এমন কথায় আমি উঠে দাঁড়িয়ে বেহায়ার মতো বললাম,

– তোমার কথা আমরা কেউ শুনতে চাই না। এই বিয়েতে আমি নিজেই রাজি। তুমি একদম বাধা দেবে না সিদ্ধাত ভাইয়া

কথা টা বলতেই সিদ্ধাত ভাইয়া তেড়ে এসে সজোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আমার গালে। অতঃপর বলে,

– এতো দিন ধরে শুরু তোর ন্যাকামি দেখে আসছি। কিছু বলি নি। কিন্তু আজ তুই সীমা অতিক্রম করে গেছিস ঈশা।

খালামনি: সিদ্ধাত! কি হচ্ছে এসব?

সিদ্ধাত: চুপ করো তুমি। কেউ কোনো কথা বলবে না। আমি কারো কথা শুনতে চাই না।

বড় চাচ্চু: সিদ্ধাত! কি হয়েছে তোমার?

সিদ্ধাত: আব্বু তুমি দেখতে চেয়েছিলে না তোমার বউ মা কে? সবার খুব জানার ইচ্ছা তাই না?

খালামনি: কে? কে সে?

সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে এক হ্যাচকা টানে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বলে,

– এই আমার ভালোবাসা। যাকে আমি ভালোবাসি। তোমাদের হবু বউমা। আমার নিশ্বাস, আমার বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। যার জন্য আমার সব কিছু। হ্যাঁ ঈশাকে আমি ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। নিজের জীবনের চেয়েও অনেক বেশি ভালোবাসি ওকে আমি। এই সেই মেয়ে যার কথা এতো দিন তোমাদের বলেছি।

সিদ্ধাত ভাইয়ার এমন কথায় আমি যেন গাছের মগডাল থেকে ধপাস করে নিচে পড়ে গেলাম। বাড়ির সাবার সামনে আমাকে এক হাতে এভাবে জড়িয়ে নিয়ে ভালোবাসার কথা বলছে। সবাই যেন আকাশ থেকে পড়ল আমার মত। সবাই বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। অতঃপর বাড়ির সবাই উচ্চ স্বরে হেসে দেয়।

চলবে?