পূর্ণতা নাকি শূন্যতা ২ পর্ব-০৭

0
257

#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা
#সিজন_২
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_০৭

সিদ্ধাত: এই নাও তোমাদের আদরের বউমা চা বানিয়েছে খাও
মমতা বেগম: তুমি খেতে চেয়েছিলে তুমিই খাও বাবা
মায়া বেগম: এখন আর খাবে না বুবু।
মমতা বেগম : এখন আর কি করে খাবে যে স্যালাইন বানিয়েছে তোর মেয়ে।
সিদ্ধাত: এটা কি খাওয়া যায় নাকি। পালিয়ে গেলো না হলে ওকেই খাইয়ে দিতাম
মায়া বেগম: কেমন ভালোবাসো এটা খেয়ে প্রমান করো দেখি কি বলো বুবু
মমতা বেগম: হ্যাঁ একদমই তাই
সিদ্ধাত: কি ভেবেছো সস্তা ভালোবাসা নাকি আমার?

বলেই সিদ্ধাত এক চুমুকে সবটা খেয়ে নেয়। মায়া বেগম আর মমতা বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। অতঃপর সোজা ওপরে চলে যায় সিদ্ধাত।

মমতা বেগম: মায়ারে আমার ছেলে টা সত্যি সত্যি তোর মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে
মায়া বেগম : যা বলেছো। বুবু আমরা না মা? ছেলে মেয়েদের কে নিয়েও হাসাহাসি করছি?
মমতা বেগম: কেউ দেখে নি। কিছু হবে না।

বলেই দু বোন এক গাল হেসে উঠে। আর সিদ্ধাত সোজা ঈশার রুমে।

-আজকে ওইটারে একবার পাই খবর আছে। নুনে পোড়া চা খাইয়ে গলাটা একবারেই শেষ করে দিয়েছে। কানে ধরে যদি উঠবস না করাতে পারি তবে আমার নামও সিদ্ধাত না।

কিন্তু ঈশা নিজের রুমে নেই, সিদ্ধাতের রুমেও নেই ইনফ্যাক্ট ওপরে কোথাও নেই। নিশ্চয় ছাদেই থাকবে এই ভেবে সোজা ছাদে চলে যায় সিদ্ধাত। পুরো ছাদ ঘুরে কোথাও পায়। আজকে আবার তার লাস্ট এক্সাম। ঈশার ভার্সিটিতে না গেলেও চলবে বাট তাকে তো যেতে হবে। তাই সে দেরী না করে নিচে যায়। ওকে তো পরে দেখে নেব্ব এই ভেবে।

ওদিকে ঈশা ছাদের ট্যাংকির ওপর বসে পা দোলাচ্ছিলো এতোক্ষন। সিদ্ধাত চলে যাওয়ার পর এক লাফে নিচে নামে। আবারও মাথায় দুষ্টু বুদ্ধির আগমন হয় তার। ঈশা জানে সিদ্ধাত নিশ্চয় এখন ভার্সিটিতে যাবে তাই ট্যাংকির ওপর থেকে নিচে নেমে ছাদের সব ময়লা এক সাথে করে। এমন কি ফুলের টবের ময়লা গুলোও নেয়। একটা বালতির এক বালতি হয়েছে। উদ্দেশ্য এইগুলো সব সিদ্ধাতের মাথায় ফেলবে। কিছুক্ষন পর সিদ্ধাত ভাইয়া বাড়ি থেকে বের হচ্ছে আর ওমনেই বালতিটা উচু করে ময়লা ফেলে দেয়। আর সাথে সাথে সিদ্ধাত ওপরে তাকিয়ে দেখে চিৎকার করে বলল,

– ঈশাআআআ!

আর চিৎকার দেওয়া মাত্রই ঈশা এক সেকেন্ডও দেরী না করে দৌড় দিয়ে নিচে চলে আসে। রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। এখন সিদ্ধাতের হাতে ধরা পড়লো খবর আছে।

আর এদিকে একটা অন্ধকার ঘরে রকিং চেয়ারে বসে ধুমপানে মগ্ন কেউ। আর হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে এক যুবক। যুবককে দেখা মাত্র ই সে বলে,

– তুমি আমার প্লান সফল করতে পারবে তো?
– মামা তুমি নিশ্চিত থাকো।
– তাহলে কবে যাচ্ছো তুমি
– এই তো দাবার গুটি নিজেই আমাকে ডাকবে
– তা বেশ। আমিও দেখি তুমি কেমন ওকে আমার সামনে আনতে পারো
– চিন্তা করো না মামা চৌধুরী পরিবারের সম্মান ধুলিসাৎ না করতে পারলে আমার নামও….
– থাক আর বলতে হবে না। আগে কাজ টা করো ভাগ্নে তারপর তোমার এসব লেকচার শুনবো।
– ফুপির মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবোই মামা রক্তের বন্য বয়ে যাবে ও বাড়িতে
– এটাই তো চাই ভাগ্নে

☆☆এদিকে আমি আবারও ভিতরে এসে চেঞ্জ করে বেরিয়ে যাই। এখন আর সময় নেই ওর সাথে ফাইট করার। এক্সাম টা শেষ হোক আজকে। তারপর দেখে নেবো। আজকের এক্সামটাই শেষ হলেই ভার্সিটি লাইফ টাটা। একবারে জবে মন দেবো। কিন্তু তার আগে আজকের এক্সাম টা শেষ করি বাড়ি ফিরে মহারানির একটা ব্যবস্থা করি তারপর বাকি কাজ

◆◆বেলকানি থেকে দেখলাম সিদ্ধাত ভাইয়া চলে গেছে। নাচতে নাচতে নিচে এলাম। দেখলাম খালামনি আর আম্মু কিচেনে রান্না করছে। আমাকে ডেকে বলে,

খালামনি: ঈশা মা। এদিকে আয় তো হাতে হাতে একটু হেল্প কর
আম্মু: আয় রান্না শিখবি আয় এদিকে
আমি: আমি তো রান্না পারি না
খালামনি : সিদ্ধাতের জন্য রান্না করতে হবে না? বিয়ের পর কি খাওয়াবি আমার ছেলে টাকে?

খালামনির কথায় বেশ লজ্জা পেলাম। মাথা নিচু করে দূরে দাঁড়িয়ে আছি। আম্মু তখন বলে,

আম্মু: থাক আর লজ্জা পেতে হবে না। এসো এখন

আমিও কিচেনে চলে গেলাম। আম্মু আর খালামনি আমাকে রান্না শেখাচ্ছেন। সিদ্ধাত ভাইয়ার জন্য মুরগির মাংস রান্না করেছি। না না আমি একা নই আম্মু আর খালামনি বলে দিয়েছে আমি রান্না করেছি। খুব এক্সসাইটেড আমি। সিদ্ধাত ভাইয়া কি বলবে? খুশি হবে? নাকি বকা দেবে? উফফ আমার আর তর সয়ছে না।

খালামনি: ঈশা মা। সিদ্ধাত এক্ষুনি চলে আসবে ওর জন্য একটু লেবুর সরবত কর না মা।
আমি: ঠিক আছে খালামনি

আমি সিদ্ধাত ভাইয়ার জন্য লেবুর সরবত করে ফ্রিজে রাখলাম। উফফ অনেক মজা লাগছে প্রিয়জনের জন্য কিছু করতে। আরও কিছু বানাতে ইচ্ছা করছে। কি বানানো যায়, ভাবতে ভাবতে ফ্রিজ থেকে আম আর কমলালেবু বের করে জুস বানিয়ে ফেললাম। কিন্তু সব কিছু কি আর ঠিক করে বানাতে ইচ্ছা করে? তাই কমলা লেবুর জুসের ভিতর শুকনো মরিচের গুড়া মিশিয়ে দিলাম। জুস টা ফ্রিজে রেখে টিভি দেখছি তখনই কলিং বেল বাজে। বুঝলাম সিদ্ধাত ভাইয়া এসেছে। ছুটে গিয়ে দরজা খুলে আনন্দের সাথে বললাম,

– তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে সিদ্ধাত ভাইয়া
– কিসের সারপ্রাইজ?
– তুমি ফ্রেস হয়ে নাও আমি নিয়ে আসছি।

সিদ্ধাত ভাইয়া ওপরে চলে যায়। আর আমি জুস আর লেবুর সরবত নিয়ে সিদ্ধাত ভাইয়ার রুমে চলে যাই। সিদ্ধাত ভাইয়া ফ্রেস হয়ে বের হয়েছে মাত্র। আর তখনই আমি রুমে প্রবেশ করেই বলি,

– এই দেখো সিদ্ধাত ভাইয়া আমি তোমার জন্য কি বানিয়েছি?
– কি বানিয়েছিস?
– খেয়ে দেখো না
– পাগল নাকি। তুই কি খাওয়াতে না কি খাওয়াবি পরে মরে টরে যাবো।
– আরে না না। এই নাও এটা খাও

লেবুর সরবত টা এগিয়ে দিয়ে বললাম। সিদ্ধাত ভাইয়া হাতে নিয়ে সন্দেহসূচক দৃষ্টিতে বলে,

– কিছু নেই তো?
– আরে না।

সিদ্ধাত ভাইয়া ভয়ে ভয়ে একটু চুমুক খেয়ে বলে,
– আরে টেস্টি হয়েছে।

বলেই পুরো টা শেষ করে। আর আমি ওমনি আমের জুস টা এগিয়ে দিয়ে বললাম,

– এবার এটা খেয়ে বলো এটা কেমন হয়েছে?
– ওকে।

বলেই সিদ্ধাত ভাইয়া আমের জুস টা নিয়েও খেয়ে বাহবা দেয়। অতঃপর আমি আবারও কমলা লেবুর জুস টা এগিয়ে দিলাম।

– ঈশা! এখন আর নয়।
– প্লিজ সিদ্ধাত ভাইয়া। এটাই লাস্ট। তোমার জন্য আরও সারপ্রাইজ আছে।
– আচ্ছা সব পরে হবে। এটাও খাবো। বাট একটু পরে।
– না না না। সিদ্ধাত ভাইয়া প্লিজ।
– ঈশা। বাচ্চাদের মত করবি না। একসাথে আর কত খাবো আমি? পাঁচ মিনিট পর খাই।
– আচ্ছা আমি এখানে রেখে গেলাম তুমি খেয়ে নিও।

বলেই আমি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। নিচে এসে আম্মু আর খালামনি সাথে দুপুরের খাবার রেডি করছি।

খালামনি: ঈশা মা তুই সবাই কে ডেকে নিয়ে আয়।
আমি: আচ্ছা খালামনি

আমি ওপরে যাচ্ছি আব্বু আর বড় চাচ্চু কে ডাকতে। তখন সিড়িতে সিদ্ধাত ভাইয়া নিচে নামছে।
– কই যাস
– তোমার শশুর আর আমার শশুর কে ডাকতে যাই

বলেই দৌড়ে ওপরে চলে আসি। ইসস কিভাবে বললাম। লজ্জা লাগছে। সিদ্ধাত ভাইয়া সাথে সাথে কথা টা না বুঝলেও দুই সেকেন্ড পরে বুঝেছে। আর মুচকি হেসে চলে যায় টেবিলে। আমি আব্বু আর বড় চাচ্চুকে ডেকে নিচে আসি। সবাই একসাথে বসেছে আর আমি পরিবেশন করছি।

আম্মু: আজকে কিন্তু ঈশা রান্না করেছে
সিদ্ধাত: তাই নাকি
বড় চাচ্চু: দে দে আমাকে আগে দে। কেমন হয়েছে দেখি
খালামনি: আস্তে ধীরে দেবে সবাই কে দাড়াও না
আমি: হ্যাঁ চাচ্চু এই তো দিচ্ছি

আমি সবাইকে মাংস তুলে দিলাম।

বড় চাচ্চু: আরে এটা তো অসাধারন হয়েছে
আব্বু: দেখতে হবে না মেয়ে টা কার
খালামনি: কিরে সিদ্ধাত তুই কিছু বলছিস না যে
সিদ্ধাত: হুম? কি বলবো?
আমি: কি বলবে মানে? কেমন হয়েছে সেটা বলো
সিদ্ধাত: হ্যাঁ ভালোই। খাওয়া যাচ্ছে
আমি: খাওয়া যাচ্ছে মানে? এটা কেমন কমেন্ট সিদ্ধাত ভাইয়া
সিদ্ধাত: তো আর কি বলবো?

বলেই সিদ্ধাত ভাইয়া কারো কথার উত্তর প্রত্যাশা না করেই চলে যায়। আমি মন খারাপ করে তাকিয়ে আছি। আমি এতো সখ করে রান্না করলাম তার জন্য আর সে কোনো কিছু না বলেই চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলো।
আমিও রুমে যাচ্ছি তখন সিদ্ধাত ভাইয়ার ঘরে একটু উকি দিয়ে দেখলাম জুসের গ্লাসটা ওভাবেই পড়ে আছে। তাই নিজেই আবার জুস্ টা নিয়ে সিদ্ধাত ভাইয়াকে খাওয়াতে যাবো তখন কেউ একজন এসে বলে,

– সারপ্রাইজ!

তার কথায় আমি পিছনে ঘুরে তাকাই। আর সিদ্ধাত ভাইয়া সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে,

– তুই?

সিদ্ধাত ভাইয়ার কথায় মেয়েটা এসে সিদ্ধাত ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,

– কত দিন পর তোকে দেখছি কেমন আছিস?
– আই এম ফাইন। বাট তুই কিছু না জানিয়ে হঠাৎ?

মেয়েটার এমন আচরণে আমার হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে যায়। চোখের সামনে এমন কিছু দেখতে হবে কখনও ভাবি নি। গ্লাস ভাঙার শব্দে মেয়েটা সিদ্ধাত ভাইয়াকে ছেড়ে দিয়ে বলে।

– কে ও?

চলবে?