#পূর্ণতা❤️
#লেখনীতে-তানজিলা তাবাচ্ছুম❤️
৭.
আশা আর রায়হান কে এগিয়ে দেওয়ার জন্য তারা বাহিরে বের হয়।তারা নিজের ওরনা টাকে মাথায় ভালো করে দেয় একদম ঘোমটার মতন করে।আশা হাঁটছে আর তারার পিঠে হাত রেখে বলছে,
‘মন খারাপ করো না মা।এখন তোমার বিয়ে হয়েছে। ভবিষ্যতে তো আমরা তোমার সাথে থাকবো না,থাকবে আলোক।তাই এখন থেকে ওর সাথে একাই থাকার অভ্যাস করে নাও।’
বলে একটুখানি হাসলো আশা। তারপর আবারো বলতে শুরু করল,
‘আমি জানি তুমি আলোককের সাথে কখনো বোর হবা না।দেখবা ও তোমাকে অনেক হাসিখুশি রাখবে।’
তারা আশার দিকে তাকাতেই আশা চোখ গুলোকে একটু ছোট করে বলে,
‘এইটুকু তো আমি নিজের ছেলে কে জানিই।জানো তো আলোক না খুব নরম মনের একটা ছেলে।কাউকে যদি একটু উঁচু গলায় কথা বলত,পরে ও সেটার জন্য কাঁদতো।কারন আলোক খুব গিলটি ফিল করতো।ওই মানুষ টা তার কথায় কতটা কষ্ট পেয়েছে ভেবে নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে করতো, নিজেকে খুব অপরাধী মনে করতো।’
তারা আগের মতন থাকলো।
‘তুমি আবার ভেবো না নিজের ছেলে বলে বলছি। আলোক আমার ছেলে না হলেও_____
তারা চোখ তুলে তাকাতেই আশা চুপ হয়ে যায়।আশা কথাটা সম্পূর্ণ না হতেই সে চুপসে গেল।তারা ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘আলোক আপনার ছেলে ন____
তারার কথা শেষ হওয়ার আগে একজন এসে বলে,
‘এননেরা কেডা?’
আশা ,তারা মুখ ফিরে তাকালো।আশাকে মহিলাটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে বলল,
‘আহে আশা না?’
আশা হাসি মুখে উত্তর দেয়,
‘জ্বি।’
মহিলাটি মৃদু হেসে বলল,
‘এত বছর কই ছিলা?’
তারপর তারার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আর এইডা কে?আলোক বাবা কি আবার বিয়ে করছে নাকি?’
তারা মহিলা টির কথা শুনে’থ’মেরে দাঁড়িয়ে আছে।আশা হিমশিম খাচ্ছে।আশা মহিলাটার হাত ধরে সামনে হাঁটতে শুরু করল তারপর বলল,
‘যেতে যেতে কথা বলি!’
বলে খুব দ্রুত গতিতে হাটা শুরু করলো আশা সাথে মহিলাটিও।তারা তাদের পিছন থেকে আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করল কিন্তু তাদের কথা কোপন শুনতে পেলো না।তারা নিজের ভাবনা তে ব্যস্ত। হঠাৎ তারা হচট খেয়ে পড়ে গেলো।সে ভাবনাতে এতটাই ডুবে ছিলো যে সামনে থাকা গর্ত খেয়াল করে নি।তারা পড়ে যেতেই পিছন থেকে আলোক চেঁচিয়ে বলে উঠে,
‘এই তারাআআআ____
আলোকের চেঁচানো শুনে আশা , মহিলাটা আর রায়হান পিছনে ঘুরে তাকায়।তারপর দ্রত গতিতে তারার কাছে চলে আসে।তারা মাটির উপরে পড়ে আছে।হাতে ,গায়ে জামায় ময়লা লেগেছে।হাতে আর পায়ে মাটিতে থাকা গুটি গুটি ইটের টুকরা গুলোর সাথে ঘষা খেয়ে ছিলে গেছে।ব্যাথায় তারা কুঁকড়ে উঠেছে।চোখ বন্ধ করে আছে কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তার।আশা তারার কাছে এসে একটু ঝুঁকে বলে,
‘তারা তুমি ঠিক আছো?’
‘হাতে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে।ওই দেখো রক্ত বের হচ্ছে।’
রায়হান এসে বলল।আলোক এসে হাঁটু ভাঁজ করে বসলো দেখলো তারার চোখ বন্ধ কিন্তু সে কাঁদছে।যেনো কারো বলা কথা তারার কানে পৌঁছচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর তারা চোখ খুলে ।
‘এদিকে সময় হয়ে গেছে আর এখন তারার এই অবস্থা।’
কথাটা রায়হান বলে মাথায় হাত দিলো।আশা কিছু বলল না। তাদের সাথে থাকা মহিলাটি বলল,
‘আপনারা যান ভাইজান।সময় হইয়া গেছে যেহেতু।আলোক বাবা তো আছেই’
‘কিন্ত________
রায়হান বলার আগে আশা তারাকে বলল,
‘তারা তুমি বাড়িতে গিয়ে রেস্ট করো।আলোক ওকে নিয়ে যা।’
তারা উঠার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।পায়ে ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখলো স্যান্ডেলের ভিতর দিয়ে কাঁচ ঢুকেছে।ওই গর্তে কয়েকটা কাঁচের টুকরো ছিল।হাতের থেকে পায়ে বেশি আঘাত পেয়েছে তারা।আশা আর মহিলাটি মিলে তারাকে উঠানোর চেষ্টা করলো।তারা উঠলো কিন্তু ডান’পা ফেলতে পারছে না উচুঁ করে আছে।এক পায়ে দাঁড়ালো তারা।তারার এমন অবস্থা দেখে রায়হান অলোককে বলল,
‘বাবা ওকে কোলে করে নিয়ে যাও। যেহেতু পায়ে বেশি আঘাত পেয়েছে।’
কথাটা শুনেই তারার চোখ জোড়া রসগোল্লার মত হয়ে গেছে।তাই হোক নিজের শশুরেরে মুখে এইরকম কথা শুনে সে অনেক লজ্জা পেয়েছে। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিলো না।মাথা নিচু করলো।এদিকে হতবাকের মত আছে।তার মুখে লজ্জার প্রতিছবি ফুটে উঠেছে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।আর আশা জানে আলোক এইসবে লজ্জা বোধ করে। লজ্জা ছেলে-মেয়ে উভয়ের ই ভূষণ।আশা কর্কশ কন্ঠে বলল,
‘আহ আলোক এটা লজ্জা পাওয়ার সময় নয়।ওর অবস্থা দেখো।’
আলোক মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়াচ্ছে।
‘আলোক বাবা আমাদের দেরি গিয়ে যাচ্ছে।তুমি ওকে নিয়ে যাও।আর আশেপাশে কেউ নেই।’
রায়হান বললো। এবার মহিলাটি ভ্রু কুঁচকে বললেন,
‘নিজের বউরে নিয়া যাইতে এত কিসের লজ্জা আলোক বাবা? আর ছোয়াল দের লজ্জা পাইতে নাই।’
আলোক মাথা উচুঁ করে তারার দিকে তাকালো।তারার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ওনাদের কোথায় অখুশি। তারার প্রচন্ড ব্যাথা লাগলেও সে জোরপূর্বক মুখে হাসি এনে বললো,
‘আরে না-না ।কোনো সমস্যা নেই আমি যেতে পারবো।আপনারা যান আপনাদের লেট হয়ে যাচ্ছে।’
আশা এবার রাগী দৃষ্টিতে আলোকের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘আমার কথা কি তোর কানে যায়নি আলোক?’
আলোকের মুখে কোনো কথা নেই।সে চুপ করেই আছে।
‘আলোককক___!!'[রাগান্বিত কন্ঠে]
আলোক এবার তারার দিকে তাকিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসলো।তারা বুঝতে পেরে নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়।আলোক তারাকে কোলে নেয়। আজ প্রথম আলোক তারাকে স্পর্শ করলো।আজ প্রথম তারা আলোকের স্পর্শ পেলো।তারার কেমন এক অনুভূতি হচ্ছে।সে চোখ বন্ধ করেই রয়েছে।
‘তুমি ওকে সাবধানে নিয়ে যাও।আর ওর খেয়াল রেখো বাবা।আমরা আসি।’
রায়হান বললো।আশা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো,
‘ওকে আপাতত কোনো কিছু করতে দেস না ।যতদিন না পর্যন্ত আঘাতটা শুকিয়ে যায়।’
আলোক মাথা নাড়ালো।তারপর হাঁটতে শুরু করলো।
‘আর শুন যেহেতু কাঁচ ঢুকেছে।সেহেতু ওটা ডক্টর কে দেখাস। ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
আলোক কিছু বললো না। মৃদু গতিতে হাঁটতে আছে সে।
‘আর যদি বেশি ব্যাথা পেয়ে থাকে তাহলে আজই ডক্টর কে দেখিও।’
রায়হান পিছন থেকে বললো।আলোক তাদের কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে হেঁটেই চলছে।কিছুটা দুর যাওয়ার পর আলোক আপনাআপানি বলে উঠলো,
‘এই আঘাত ,এই ব্যাথা তো কিছুই নয়।সামনে যেই আঘাত আসবে সেটা সহ্য করার সক্ষমতা থাকবে তো?থাকবে না।’
আলোকের মুখে আচমকা এমন কথা শুনে তারা চোখ খুলে আলোকের দিকে তাকায়।আলোকের কথাটা শুনে তারার বুক ধড়পড় করতে শুরু করেছে।তারা আলোকের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ আলোককে এতটা কাছ থেকে দেখলো সে।আলোকের মুখ মাঝারি আকারের দাড়ি।দেখতে ফর্সা নয় শ্যামলা । আলোকের ডান চোখের নিচে কোনায় একটা তিল আছে লক্ষ্য করলো তারা। হটাৎ আলোক সামনে তাকিয়েই ভ্রু কুঁচকে চোখ জোড়া ছোট ছোট করলো। লেখনীতে তানজিলা।তারা একটা ঢোক গিললো।তার খুব ভয় করছে আলোক কে। এই ইনোসেন্ট লুক এর পিছনে কি রয়েছে টা একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালা ই ভালো জানেন।তারা পর পর ঢোক গিলেই যাচ্ছে।আলোক তারা কে নিজে বাড়িতে ঢুকে নিজেদের রুমে চলে এলো।তারপর তারাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কোথাও চলে গেলো।আলোক যেতেই তারা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলতে লাগলো,’হে আল্লাহ ।রক্ষা করো।এই সাধারণ,লাজুক চেহারার পিছনে কি আছে তুমি ভালো করে জানো। আল্লাহ তু_____
বাকিটুকু বলার আগেই আলোক ঘরে প্রবেশ করলো। হাতে একটা ইলেকট্রনিক কেটলি আর একটা পানির জগ।আলোক এসে কেটলিটার সুইচ লাগিয়ে পানি গরম করতে দিলো।তারপর আবার বাহিরে গিয়ে একটা বড় বাটি নিয়ে আসলো। পানি কুসুম গরম হলে সেটাকে নিয়ে তারার পায়ের কাছে বসে।তারপর বাটিটাকে পায়ের নিচে রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে পায়ের থাকা রক্ত ধুয়ে দিলো।তারপর ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এসে হাতে ,পায়ে ব্যান্ডেজ করিয়ে দিল।তারা আর কিছু বলে নি।সে ‘আলোক’ নামে এই লোকটাকে ঠিক বুঝতে পারছে না। আলোক কি চায় কেমন মানুষ ঠিক বুঝতে পারছে না তারা।ব্যান্ডেজ করা শেষে আলোক আবার বাহিরে চলে যায় জিনিস পত্র গুলো রাখতে।তারা শুয়ে পড়ে।আর ভাবছে আলোকের সম্পর্কে।একবার আলোকের এত নম্র,ভদ্র ,লাজুক স্বভাব দেখে তার ইচ্ছে করছে সব ভুলে আলোকের সাথে থাকতে আবার যখন আলোকের অদ্ভুত কথা বার্তা,আলোকের আগের বউ আর সে কোথায়,সেই দিন সকালে ওই লোকটার বাড়িতে যাওয়া,আর রাতে রক্ত সহকারে দেখা তারপরের দিন ওই লোকটার খুন হওয়া,আর আজকে আলোকের কথা বলার ভঙ্গি পরিবর্তন হওয়াটা এইসব ভাবলে তারার আলোকের সাথে এক মুহুর্ত ও থাকতে ইচ্ছে করছে না উল্টো তার খুব ভয় করে আলোক কে।
.
.
_________________
রাত ১২ টা বাজবে।হাতে একটা ছুড়ি নিয়ে একজন এগিয়ে আসছে তারার দিকে।ঘরটা অন্ধকার থাকার জন্য ঠিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে না।তারা ঘুমে মগ্ন। আস্তে আস্তে করে তারার কাছাকাছি চলে এলো।তারার মুখের সামনে ঝুঁকে তাকে গভীর ভাবে দেখছে আর ছুড়িটা দিয়ে তার গালে স্লাইড করছে।ঘুমের মধ্যে কারো উষ্ণ শ্বাস অনুভব করছে তারা।মনে হচ্ছে কেউ তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে যে বাতাস তার কাছে আসতে পারছে না।গালে কিছু একটার স্পর্শ পাচ্ছে তারার ঘুম খুবই গভীর তাই সে এখনো চোখ মেলে তাকায় নি।আস্তে আস্তে তার ঘুম হালকা হয়ে আসছে ।চোখ খুলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছুড়িটি আর তার পিছনে থাকা চেনা মুখটি।তারার হার্ট বিট যেন বন্ধ হয়ে গেছে।সে শুধু জোরে চেঁচিয়ে উঠলো,
‘আলোককককককক_________’
তার আগেই লোকটা তার মুখ চেপে ধরলো।আর ছুড়িটা দিয়ে__________
_________
#চলবে…
[ *রি-চেক করা হয়নি।ভূল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]