পূর্ণতা পর্ব-০৮

0
491

#পূর্ণতা❤️
#লেখনীতে-তানজিলা তাবাচ্ছুম ❤️

৮.

তার আগেই লোকটা তার মুখ চেপে ধরলো।আর ছুরিটা দিয়ে_______

_________

ঘুম থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে ধপ করে উঠে বসলো তারা।কপালে ,নাকে,ঠোঁটের নিচে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলেছে তারা।হাতের তালু দ্বারা কপালের ঘাম ও মুখের ঘাম গুলো মুছে নিলো। এক সেকেন্ড এর জন্য তারার দম যেনো আটকে গেছিলো।আলোক !আলোক তাকে মারতে এসেছিল!!এটা তার স্বপ্ন ছিল?বার বার ঢোক গিলছে তারা।ব্যালকনির দিকে তাকাতেই দেখে দরজা টা লাগানো।তারা তার ক্ষত পায়ে এগিয়ে ব্যালকনিতে গেল। দরজাটা একটু খুলতেই শুনতে পেল,

‘তুমি সত্যি চাঁদের মতন।শুধু একটু কাছে এসে আবার দূরে চলে গেছো,বহুদূরে……!

বলে কিছুক্ষন থেমে আবারো বলতে লাগলো,

‘কি লাভ এত মায়া,আবেগ,ভালোবাসা রেখে? যখন একদিন তো সবাই চলে যাবে বহুদূরে….!হয় নিজের ইচ্ছায় নাহয় নিজের অনিচ্ছায়।

বলে আকাশের দিকে তাকালো আলোক।তারপর আবার তাকিয়ে বললো,

‘আচ্ছা তুমি কেনো গেছো?আমার উপর অভিমান করে তুমি কি নিজের ইচ্ছে করে দূরে গেছো??

‘জানি অনিচ্ছায় গেছো তুমি অনেক কষ্ট…..!’

বলে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথাটাকে রেলিং এ হেলান দিলো আলোক আর চোখ জোড়া বন্ধ করে নিল।তারপর বলতে লাগলো,

‘ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান,
ঘুমাও আমার কোল_________

তারপর থেমে হাসলো।হাসতে হাসতে বললো নিজেকে নিজে বললো,

‘আমার কোলে কেনো বলছি?’

হাসিটা যেনো তার মুখে মানাচ্ছে না। জোরপূর্বক যেনো হাসছে আলোক।তারপর আবার বলতে লাগলো,

‘ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান,
ঘুমাও মাটির নিচে…..
ভালোবাসার নাও ভাসাবো,
ভালোবাসি বলে…..’

তারা দরজা টাকে আরেকটু খুলে একটু উঁকি দিলো ।দেখলো চোখ বন্ধ করেই হাসছে আলোক।কিন্তু তার চোখ দিয়ে পানি বয়ে যাচ্ছে।তারার দেখে খুব খারাপ লাগলো।সে মনে মনে বলতে লাগল,’কখনো আপনার এই নম্র, ভদ্র, লাজুকতা দেখে এ মন বাধ্য করে আপনাকে ভালোবাসতে।আবার যখন আপনার ভয়ংকর কথা বার্তা, আচরন, কাজকর্ম গুলো মনে পড়ে তখন ইচ্ছে হয় আপনার থেকে দূরে কোথাও চলে যাই।’বলে একটা দীর্ঘশ্বাস হাফ ছাড়লো তারা।তার চোখ ছলছল করছে।চোখ বন্ধ করে তারা আর সাথে সাথে চোখ বয়ে পানি পড়লো।তারা আবারো বলতে শুরু করলো,’কে আপনি আলোক?কি আপনার আসল পরিচয়?কি আপনার আসল রূপ?’ তারা কাঁদতে লাগলো। এদিকে তার পায়ের রক্তে যে ব্যান্ডেজ ভিজে যাচ্ছে সে দিকে কোনো খেয়াল নেই তার।তারা আবার বলতে শুরু করল,’ আপনাকে দেখলে মনে হয় আপনি ধার্মিক দ্বীনি হবেন।আপনি কি সেই রকম হবেন? আপনার বাহ্যিক রূপ দেখলে তো তাই মনে হয়! কিন্তু আসলে কি আপনি ভিতরে তাই হবেন আলোক?’বলতে বলতে কাঁদছে তারা। এদিকে তার একটু আধটু ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।সে তার পায়ের দিকে তাকালো। দেখে বুঝতে পারল তারা এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক হবে না। তারা বিছানার দিকে পা বাড়ালো। বিছানায় শুতে যাবে তখন তার পায় বিছানায় লাগলো। লেখনীতে তানজিলা তাবাচ্ছুম। আর সাথে সাথে তার মুখ থেকে ‘আহ’ শব্দ বের হলো। তারার শব্দ টা একটু জোড়েই করেছিল। এদিকে তারার শব্দ শুনে আলোক চোখ মেলে তাকায়। তারপর উঠে ঘরে গিয়ে দেখে তারা ঘুমিয়ে আছে । আলোক ভাবছে আওয়াজ কোথা থেকে এলো? সে তো স্পষ্ট কারো আওয়াজ শুনতে পেরেছে। আলোক ভাবলো হয়তো তার মনের ভুল হবে। তাই সে আবারো মুখ ফিরিয়ে ব্যালকনিতে যাবে তখন তার নজর পড়ে তারার পায়ের দিকে। আলোক দেখল রক্তে তারার পায়ের ব্যান্ডেজ ভিজে গেছে। আলো ভাবল হয়তো তারা ব্যথা হচ্ছে আর এই জন্যই তারা ঘুমের মাঝে আওয়াজ করেছে। আলোক ফাস্ট এইড বক্স এনে আগের ব্যান্ডেজটা চেঞ্জ করে নতুন ব্যান্ডেজ করে দেয়। তারপর চলে যায় ব্যালকনির দিকে। এদিকে আলোক যেতেই তারার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরাতে লাগল।তারা ঘুরে তাকালো তারপর বলতে লাগল,’আপনি আসলেই কি এমন?’বলে থামল তারপর নিজেকেই নিজে বলতে লাগলো,’আচ্ছা কোথাও আমি ওনাকে ভুল ভাবছি না তো? আমার একবার ওনার সাথে কথা বলা উচিত।এভাবে তো থাকা যায় না।’ তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলতে লাগল,’ ‘যাকে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বিয়ে বাতিল”।ইমাম আবু হানিফা ( রহঃ) এ হাদিসের উপর ব্যাখ্যা করেছেন,কোনো নারীকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না। ইসলামে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া হারাম।কোন অভিভাবক যদি জোরপূর্বক কোন নারীকে বিয়েতে বাধ্য করে তাহলে ওই নারীর জন্য দুটো অপশন ।হয় উক্ত স্বামীর সাথে ঘর সংসার অব্যাহত রাখা অথবা বিবাহবিচ্ছেদ করা।উক্ত মহিলা যদি তার স্বামীর সংসার করতে অনাগ্রহী হয় বা স্বামীকে মেনে নিতে না পারে তাহলে তার জন্য খোলা তালাক এর মাধ্যমে বিয়ে ভঙ্গ করা বৈধ। এক্ষেত্রে সে স্বামীর নিকট অনুরোধ করবে তাকে তালাক দেওয়ার জন্য। আর যদি সে সমাজ, পরিবারের সম্মান এইসব দেখে তাকে মেনে নেয় তবে সেটাও পারবে সে। তার জন্য দুটো অপশন হয় বিচ্ছেদ হওয়া নাহয় সংসার অব্যাহত রাখা।’

বলে হাত দ্বারা চোখের পানি মুছলো তারা।তারপর আবার বলতে লাগলো,

‘এখন আমাকেও এই দুটো অপশনের মধ্যে যেকোনো একটি মেনে নিতে হবে! কিন্তু কি করবো আমি?আলোক কে মেনে নিবো?নাকি তার থেকে দূরে চলে যাবো?আর যদি যাই তাহলে কোথায় যাবো?কে বা আছে আমার। আচ্ছা আমি যদি আলোকের থেকে বিচ্ছেদ হতে চাই সে বিচ্ছেদ হবে?যদি একজন সৎ চরিত্রবান হয় তবে নিশ্চয়ই সে দিবে।তবে কালকে আমি তাকে বলবো বিচ্ছেদ এর জন্য!তাহলেই বোঝা যাবে আলোক কেমন মানুষ।’

বলে থামলো ।তারা ভাবছে কালকে কি করবে?তারা আবার নিজেকে প্রশ্ন করছে,’আচ্ছা বিচ্ছেদ না হয়ে থাকি না ওনার সাথে!যদি উনি খারাপ মানুষ হয় তবে আল্লাহ ওনার বিচার করবেন। আল্লাহ যা করবেন তাই ভালো হবে। আল্লাহ তায়ালার তাকদিরে তো বিশ্বাস রয়েছে।তাহলে নাহয় আমার তাকদিরে উপর ভরসা করে থাকি। বিচ্ছেদ হলে যাবো বা কোথায়?’

বলে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল তারা।তারপর আবার বলল,’কালকে আমি আলোকের সাথে কথা বলবো। যে ছেলেকে আমি এত আমার এত কথা শোনার পর চুপ থাকে,আমার এত কেয়ার করে সে কিভাবে একজন ভালো মানুষ হবে না? আমার মন বলছে নিশ্চয়ই হবে বাকিটা আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন।’ তারা মুখে একটু হাসি ফুটলো।সে ভাবতে লাগলো,’কালকে আমি আলোকের সাথে কথা বলবো ইন শা আল্লাহ।আর আমার মনের মিস আন্ডাস্টেনিং গুলোও দূর করবো। আপনি আমার বয়সের যত ই বড় হন না কেনো তাতে আমার কোনো যায় আসে না।যদিও প্রথম প্রথম আমাদের বয়সের ডিফারেন্স দেখে আমি আপনাকে চাইতাম না। কিন্তু এখন আমার এইসবে কোনো কিছুই আসে না।আর আপনি জেলে ছিলেন কেনো তা আমি জানি না আর জানতেও চাই না আলোক কারন মানুষের পাস্টে অনেক কিছুই থাকে ,অনেক গুনাহ থাকে কিন্তু সে যদি তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় ,রবের দিকে ফিরে আসে তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেন। সেখানে আমি কে?কে আমি যে আপনার অতীত নিয়ে পড়ে থাকবো?কাল হয় আমাদের বিচ্ছেদ হবে নাহয় মিল হবে আলোক।’ বলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করলো তারা। মনে মনে সে আল্লাহর কাছে দোয়া করছে যাতে তাদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যায়।আর এ আশা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল তারা।প্রায় মাঝ রাতে আবারো তারার ঘুম ভেঙ্গে গেল কিছু অস্পষ্ট আওয়াজে।সে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তারপর দেখে আলোক কথা বলছে।তারা শোনার চেষ্টা করলো শুধু শুনতে পারলো আলোক কারো সাথে ফোনে কথা বলছে,’কাজ হয়ে যাবে!’তারপর আর ভালো ভাবে শুনতে পারলো না।লেখনীতে তানজিলা তাবাচ্ছুম।তারার ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।আর সে আলোকের দিকে খেয়াল না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

________________

আজও তারার ঘুম ভাঙ্গলো কিন্তু আজানের শব্দে নয় ওইদিনের মত চেঁচামেচির শব্দে।তারা উঠলো।তারপর নিজের ক্ষত পা নিয়েই ব্যালকনির দিকে গেল দেখলো আলোক নেই। আরেকটু সামনে গিয়ে দেখল ওই বাড়িতে আজও লোক জড় হয়েছে আর সেখানে পুলিশ রয়েছে। তারা বুঝতে পারছে না আজ কেনো এমন আবার কি হলো ?নাকি ওই লোকটার খুনের জন্য এসেছে? তারা এতসব প্রশ্নের উত্তর জানে না। তাই সে ভাবল নিচে গিয়ে শুনবে। কিন্তু আশা তো তাকে বারন করতেছিল একা একা কোথাও না যেতে। তারা ভাবছে কি করবে সে?যাবে নাকি যাবে না? শেষমেষ ভাবল গিয়ে শোনা উচিত।আর যেই ভাবা সেই কাজ।তারা খুরে খুরে হাঁটতে হাঁটতে অনেক কষ্টে নিচে গেলো।দেখলো তাদের বাড়ির নিচেও অনেক মহিলা রয়েছে আর ওনারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।তারা তাদের কাছাকাছি যেতেই শুনতে পেলো,’আরে কয়েকদিন আগোত ওর বাপে খুন হইলো।আর কাইলকা ওই খুন হওয়া লোকটার মাইয়া রুমানারে খুন হইলো‌।’ আরেকজন মহিলা বলে উঠলো,’আরে খুন হইল কি?মাইয়াডা রে কাইল রাইত ধর্ষণ কইরা মাইরা ফেলছে।’ ব্যাস এতটুকু শোনার পর তারা আর দাঁড়িয়ে থাকার সাহস পেলো না। নিজের রুমে চলে গেল।আর ভাবতে লাগলো কয়েকদিন আগে তো ওই মেয়ের মা এসে বলেছিল মেয়েটার বিয়ে দেবে।আর তার পরের দিন ওর বাবা খুন হলো।আর কালকে রাতে মেয়েটা কে ধ_______। তারার চোখ বয়ে পানি পড়ছে।তখনি দরজার শব্দ পায় আর নিজের চোখ মুছে নেয় তারা। দেখে আলোক এসেছে কিন্তু ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। আলোক তারার দিকে তাকিয়ে আছে।আর তার দিকে তাকিয়ে থেকেই সে ফোনে বলল ,’কাজ হয়েছে’।তারপর ওপাশ থেকে হয়তো কিছু বলল আলোক হাসলো।আর হাসতে হাসতে চলে গেল ব্যালকনিতে।তারা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।তারার বুকের স্পন্দন খুব দ্রুত গতিতে চলছে। চারদিকে খোলা মুক্ত বাতাস থাকার পরও তার যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে।আলোক কিসের কাজ হয়েছে এর কথা বলছে?আর কালকে রাতেও আলোক কে এমন কিছু ফোনে কথা বলতে শুনেছিল। তাহলে কি আলোক?তারা বিছানার চাদর খামচে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,’না আপনি এমন করতে পারেন না আলোক।না। আজকে ভেবেছিলাম আপনার আমার সব কিছু নতুন ভাবে শুরু হবে কিন্তু তার আগেই সব শেষ করে দিলেন আলোক। না এমন করতে পারেন না আলোক।না’ বলে কাঁদতে শুরু করে তারা। হাউমাউ করে জোরে জোরে কাঁদতে লাগে।

__________

#চলবে….