পূর্ণতা পর্ব-১০

0
498

#পূর্ণতা ❤️
#লেখনীতে-#তানজিলা_তাবাচ্ছুম❤️

১০.

আলোক এখানে ঢুকেছে আর কান্নার আওয়াজ আসছে কেন? কে কাঁদছে? কি হচ্ছে? যেহেতু আলোকেই ঢুকতে দেখেছে সেহেতু তারা ভাবছে আলোক ই কাঁদছে। তার মাথা ঘুরছে! কেন কাঁদছে আলোক? তারা না চাইতেও তারার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। তারা নিজেকে খুব দুর্বল লাগছে।মাথাটা কেমন ঘুরে উঠছে, আশেপাশে সবকিছু সে ঝাপসা দেখছে। তারার কানে খালি কান্নার শব্দ আসছে। সাথে মাথাটা ঘুরে আসছে আর সবকিছু ঝাপসা। তারা দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে। তারপর আস্তে আস্তে করে নিজের রুমে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সে যেতে পারল না কিছুটা এগোতেই সে সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেল। এখনো তার কানে সেই কান্নার আওয়াজ বাজছে। ফ্লোরে উল্টো হয়ে পড়ে আছে তারা চোখগুলো একটু একটু খুলতেই সামনে একটা ঝাপসা আবছা দেখতে পেল। কিন্তু উঠতে আর পারল না তারপর তারার চোখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল ।

_________________

বিছানায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে তারা। কানে তার কান্নার শব্দ এখনো বাজছে। তারা আস্তে আস্তে চোখ মেলতে শুরু করে। চোখ খোলা কিছুক্ষণ পরেই দেখে তার পাশে আলোক একটা ছুরি নিয়ে নিজের হাতে স্লাইড করছে। এমনটা দেখে তারা ভয়ে একটা ঢোক গিলে সাথে নিচের ঠোঁট টা কামড়ে ধরে। তারা উঠে গেছে দেখতেই আলোক একটা আপেল নিয়ে এসে ছুরি দিয়ে কেটে তার আগে খেতে দিল। হঠাৎ আলোকের এমন কাজে তারা হতবাক হয়। তারা কাপাকাপি হাতে আপেলের পিস গুলো নিয়ে খেতে শুরু করে। খাওয়া শুরু করতেই আলোক গম্ভীর কন্ঠে বলে,

‘ওখানে কিছু শুকনো খাবার রাখা আছে। খিদে পেলে খেয়ে নিবেন।আর কিছু লাগলে আমাকে বলবেন। এই অবস্থায় বাইরে যাওয়ার দরকার নেই।’

তারা চোখ তুলে তাকাতেই আলোক আবার বলে,

‘আপনার পায়ের ক্ষত না শুকানো পর্যন্ত আপনার চলাচল করা দরকার নেই।ইরা মানা করেছেন আপনাকে।’

বলে আলোক ঘুরলো। তারা ভাবছে তারমানে আলোক ভেবেছে সে খিদে পাওয়ার কারণে বাহিরে গেছিল। কিন্তু তারা তো আলোকের পিছু পিছু গেছিল। তারা ভাব চালক কে কি জিজ্ঞেস করবে? কেন গিয়েছিল ওই ঘরে? আর কে কাঁদছিলো? আলোক? কেনই বা কাঁদছিল? আলোক যাবে তারা স্লোলি কন্ঠে পিছন থেকে বলে ওঠে,

‘আপনি ওই ঘরে___________

আচমকা আলোক ছুড়ি টাকে উপর থেকে ফেলে দেয়। জোরে শব্দ হয় তারা একটু ভয় পেয়ে যায়।তারা তার কথা সম্পূর্ণ করতে পারলো না। তারার আচমকা এমন হওয়ায় ভয় পেয়ে যায়।আলোক ছুড়ি টাকে উঠিয়ে পিছন ফিরে তারার দিকে তাকায়।তারা ভয়ে ঘাবড়ে আছে।আলোক তারার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে এগোতে লাগলো।তারার কাছাকাছি আসতে ছুড়িটা সামনে নেয়।তারা ভয়ে যেনো পাথর হয়ে যাচ্ছে।ঘা ঘামছে, জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।আলোক ছুড়িটা তারার মুখ বরাবর নিয়েই তারা ভয়ে চোখ বন্ধ করে না কেঁদে কেঁদে চিৎকার করে উঠে,

‘আলো__আল__আলোকক_পিল__প্লিজ_মারব__মানবেন ________

পাশ থেকে জোরে একটা শব্দ হলো ।তারা আসতে আসতে চোখ মেলতে শুরু করলো।দেখলো মেঝেতে একটা টিকটিকি পড়েছে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায়।তারা টিকটিকি টাকে দেখার পর আলোকের দিকে তাকালো।আলোক তার থেকে দূরে সরে গেল। তারপর তারা কে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘টিকটিকি তাকে মারতে ছিলাম আপনাকে না।’

এদিকে তারাতো ভয় ফ্রিজড হয়ে গেছিলো।এখনো তার ভয়ে পুরো শরীর কাঁপছে। তারা একটা ঢোক গিলল। আলোক তারাকে বলল,

‘আপনি কিছু বলছিলেন?’

তারা চোখ মুখ মুছে মাথা নাড়িয়ে না বলল।আলোক ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তারপর টিকটিকি টাকে উঠিয়ে বাহিরে গেলো।আলোক যেতেই তারা একটা বড় শ্বাস নিলো। যেনো তার জীবন ফিরে এলো।তারা ওড়না দিয়ে মুখ টা মুছলো।আলোক কে অনেকটা হিংস্র প্রানীর মত লাগছিলো তার। কিন্তু টিকটিকি মারা কোনো হিংস্রতা নেই।কারন টিকটিকি মারা জায়েয।উল্টা টিকটিকি মারা সওয়াবের কাজ।আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতে একটি টিকটিকি হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় আঘাতে এটি হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সওয়াব রয়েছে, যা প্রথম আঘাতে মারার তুলনায় কম। আর যে ব্যক্তি তৃতীয় আঘাতে তা হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সওয়াব রয়েছে, যা দ্বিতীয় আঘাতে হত্যার চেয়ে কম।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: শিষ্টাচার, অনুচ্ছেদ-১৭৬ টিকটিকি হত্যা করা সম্পর্কে, হা/৫২৬৩-সনদ সহিহ]।অন্য বর্ণনায় এসেছে:
“যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতেই একটি টিকটিকি মারবে, তার জন্য রয়েছে একশ সওয়াব, দ্বিতীয় আঘাতে মারলে রয়েছে তার চেয়ে কম সওয়াব, আর তৃতীয় আঘাতে মারলে রয়েছে তার চাইতেও কম সওয়াব।” (সহিহ মুসলিম ৫৯৮৩-৫৯৮৪ নং)।অন্য বর্ণনায় প্রথম আঘাতে হত্যা করলে ৭০ সওয়াবের কথা এসেছে -আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “প্রথম আঘাতে মারতে পারলে তার জন্য সত্তর সওয়াব রয়েছে।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: শিষ্টাচার, অনুচ্ছেদ-১৭৬ টিকটিকি হত্যা করা সম্পর্কে, হা/৫২৬৪-সনদ সহিহ]।

_____________

ব্যালকনিতে পায়চারি দিচ্ছে তারা। মাথা ভর্তি টেনশন আর চিন্তা। তারা ভেবে পাচ্ছে না কি করবে? কিভাবে আলোকের থেকে বিচ্ছেদ হবে ভাবছে। কালকে আলোক কে রাগান্বিত হয়ে বলেছিলো তারা। কিন্তু আলোক কোনো রেসপন্স করে নি।তাহলে কি আলোক তারাকে ডিভোর্স দিবে না?তারা সবচেয়ে বেশি রাগ লাগছে তার বাবা মার উপর।হয়তো দুনিয়ায় এইরকম বাবা মা খুব কম-ই আছে।তারার মনে হয় তার বাবা মায়ের কাছে থাকার থেকে সে যদি একটা অনাথ আশ্রমে থাকতো তাহলে খুব ভালো হতো।তার বাবা মায়ের সবসময় সব কথা না চাওয়ার সত্বেও মেনেছে। কিন্তু বিয়েটা করতে চায়নি তারা। কিন্তু তারা বাবা মা এতটাই অপছন্দনীয় যে তার ইচ্ছে বিরুদ্ধে তাকে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়েছে। অজ্ঞান করিয়ে বিয়ে দেওয়া জোরপূর্বক না।বরং তাকে বাধ্য করে,নানা রকম ভাবে ফোর্স ,ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে দেওয়া জোরপূর্বক বিয়ে।তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে করাতে বাধ্য করাই হলো জোরপূর্বক বিয়ে।তারা ভাবতে লাগলো তার বিয়ের দিনের কথা___

____

তারার তার বাবা মাকে বিয়ে ঠিক করার প্রথম দিনই বলেছে সে বিয়ে করবে না। কিন্তু তার বাবা মা তার কোনো কথা শুনে নি।তাই তারা শেষমেষ ডিসিশন নেয় সে পালিয়ে যাবে।বিয়ের দিন ভোরে সে পালানোর প্রস্তুতি নেয়।বাড়িতে বেশি লোকজন না থাকায় পালানো টা তার সহজ ছিলো । কিন্তু বাড়ি থেকে পালানোর কিছুটা দূরে যাওয়ার পরে তার বাবার হাতে ধরা পড়ে যায়।আর তার বাবা ওখানেই তাকে সবার সামনে থাপ্পর মারে তারপর টেনে টেনে বাড়িতে নিয়ে আসে।তারপর____

_____________

#চলবে…..