পূর্ণতা পর্ব-১২

0
419

#পূর্ণতা❤️
#লেখনীতে_তানজিলা_তাবাচ্ছুম❤️

১২.

তারার মাথায় শুধু একটা কথাই আসছে আলোক তাকে মেরে ফেলবে,আলোক খুনি।

ইরা আলোক কে ডাকার পর আলোক আর ইরা একসাথে কেবিনেট প্রবেশ করতেই অবাক বিয়ে যায়। ইরা বললো,

‘এক্ষুনি তো জেগে ছিল। এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো?’

আলোক শান্ত গলায় বললো,

‘আচ্ছা থাক।ওনার রেস্ট প্রয়োজন।’

ইরা আলোকের কথা শুনে হালকা হেসে মাথা নাড়ালো। ইরা চলে যাবে তখনি আলোক বলে উঠে,

‘আচ্ছা ওনাকে কবে নিয়ে যেতে পারবো?’

ইরা পিছনে ঘুরে তাকাতেই আলোক বললো,

‘আই মিন উনি ডিসচার্জ কবে পাবে?’

ইরা হেসে বললো,

‘চাইলে আজকেই নিয়ে যেতে পারেন ভাইয়া। তবে এখন গেলে সমস্যা হতে পারে।’

আলোক ভ্রু উঁচু করলো।

‘কারণ বাড়িতে গেলে কেউই সারাদিন শুয়ে,বসে থাকতে চাইবে না।তাই এখানে কয়েকদিন থাকাটা ভালো হবে।’

আলোক ছোট করে ‘ওহ’ বললো।তারপর ইরা বললো,

‘আচ্ছা ভাইয়া আপনি এখানে থাকেন। ওকে দেখেন।আমি কিছুক্ষন পর আবার আসবো।’

বলে চলে গেলো ইরা। আলোক তারার একটু কাছাকাছি গেলো।তারার মুখের সামনে একদম মুখ নিয়ে আসলো।তারপর একটু হেসে আবেগী কণ্ঠে বলল,

‘ক-তো__মি-ল_!’

এদিকে তারার ভয়ে শরীর কাঁপতে শুরু করেছে। জোড়ে জোড়ে শ্বাস ও নিতে পারছে না ,কারণ তাহলে আলোক বুঝে যাবে সে জেগে আছে।আলোকের নাম শুনেই তারার খুব ভয় করে এখন। তাই সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর অ্যাক্টিং করছিল তারা। কিন্তু আলোক তার এতটা কাছাকাছি আসায় সে মৃদু কাঁপছে। ইদানিং আলোককে সে খুব ভয় পায়।আগে আলোকের সামনে জোর গলায় কথা বলতে পারলেও এখন আলোকের দিকে তাকানোর সাহসও নেই তারার।তারা চোখ বন্ধ করেই একটা ঢোক গিলল।আলোক তারার সামন থেকে মুখ সরিয়ে নিতে নিতে কেমন গম্ভীর কন্ঠে বলল,

‘খু-ব__শী-ঘ্র-ই__মু-ক্তি__পা-বে-ন_'[টেনে টেনে]

কথাটা শুনে তারা পুরো ফ্রিজড হয়ে গেলো। আলোক কিসের মুক্তি র কথা বলছে?কিসের মুক্তি দিবে তাকে খুব শ্রীঘ্রই? দরজায় শব্দ হওয়াতে তারা ভাবলো আলোক বাহিরে গেছে।তারা তারাতাড়ি করে চোখ খুলে দীর্ঘশ্বাস নিতে লাগলো।

‘আপনার কিছু লাগবে তারা?’

হটাৎ পাশ থেকে আলোকের কণ্ঠ শুনে তারা ফ্রিজড হয়ে গেলো।পরপর ঢোক গিলতে লাগলো।কিন্তু সে পাশ দূরে তাকাতে পারলো না। ঘাড়ে আঘাত পাওয়ার কারণে ঘাড় ঘুরতে পারবে না এতে তারার সমস্যা হবে আর ব্যাথা লাগবে।আলোক তারার সামনে এসে বলল,

‘আপনার কিছু লাগবে তারা?’

প্রতিউত্তরে তারা কিছু বললো না।শুধু আলোকের দিকে চেয়ে আছে।আলোক আবার বললো,

‘আপনার কিছু লাগলে বলুন আমি এনে দিচ্ছি।’

তারা কিছু বললো না।

‘আপনি ঠিক আছেন তারা?’

‘কি লাগবে বলুন।নাকি কোনো নার্স কে ডাকবো?’

তারা হাত দিয়ে ইশারা করে পানির জগ টাকে দেখলো।আলোক তারাকে বলল,

‘আপনি পানি খাবেন?’

তারা মুখে স্লোলি ‘হু’ বললো।আলোক পানি নিয়ে এসে তারা কে দিলো।তারা অল্প খেয়ে তাড়াতাড়ি করে শুয়ে পড়লো।আলোক দেখে একটু অবাক হলো কারণ এত তাড়াহুড়া করে তারা শুলো তাতে তো তার ব্যাথা হবে।

_______________

এভাবে কেটে যায় ১ সপ্তাহের মতন।তারাকে এখনো ডিসচার্জ দেয়নি।কারণ তারা বাড়িতে যাবে না বলেছে।তাই এখনো এখানেই আছে।এখন প্রায় সন্ধ্যা ৭ টার মতন বাজে।তারা একটু সুস্থ হয়েছে।এখন চলাচল করতে পারে।তবে মুখ ঘুরাতে পারে না।তারা কেবিনে বসে আছে। এখান থেকে পালাবে ভেবেছে।না পালালে তো তাকে আলোকের সাথে আবার ওই বাড়িতেই যেতে হবে।তাই তারা ভেবেছে সে আজকে এখান থেকে পালিয়ে যাবে। তারা উঠে দাড়ালো তারপর ওড়না মাথায় দিয়ে মুখ টা ডাকার চেষ্টা করলো।।তারপর দরজা খুললে বের হলো।বের হতেই একজন নার্সের সাথে ধাক্কা খেতে খেতে বেছে যায়।তারা কয়েক পা বাড়াতেই দেখে সামনে ইরা কারো সাথে কথা বলছে আর তার কিছুটা দূরত্বে আলোক দাড়িয়ে।তারা ভাবছে এখন সে কি করবে? কেবিনে যাবে? ইরা আড়াল চোখ করে তাকাতেই তারা পিছনে ঘুরে তারপর স্বাভাবিক ভাবে যেতে ধরে তখনি ইরা ডাক দেয়,

‘তারা?’

ইরা র মুখে নিজের নামের ডাক শুনে থমকে দাড়িয়ে যায় তারা।চোখ দুটো চেপে বন্ধ করেছে।শেষমেশ ধরা পড়লো।তারা পিছনে ঘুরে তাকালো। ইরা তারার দিকে এগিয়ে আসলো।আলোক তারার নাম শুনেই তাকালো তারপর সেও এগিয়ে আসলো। ইরা এসে তারাকে প্রশ্ন ছুড়লো,

‘তারা তুমি এভাবে বাহিরে?কিছু___

ইরা কে থামিয়ে দিয়ে তারা বললো,

‘আসলে এখানে থাকতে আর ভালো লাগছে না।’

‘চলে যেতে চাও?’

তারা না চাওয়ার সত্বেও মাথা নাড়ালো। ইরা হেসে বললো,

‘আচ্ছা যেতে পারো।আলোক ভাইয়া ওকে নিয়ে যেত পারেন।আমি ওকে ডিসচার্জ দিয়ে দিচ্ছি।’

আলোক মাথা নাড়ালো।তারপর কেবিনে দিয়ে সব ঠিকঠাক করল।সব ঔষুধপত্র,আর তারার যা যা প্রয়োজন লাগতে পারে সব কিনে আনলো আলোক।তারপর ওরা দুজন ৮ হতে বের বের হলো।আলোকদের যে ড্রাইভিং করতে পারে তা তারার কাছে অজানা ছিলো।আলোক তার বন্ধু নিরবের কার টা নিয়েছে।আর সে ড্রাইভিং করছে।তারা শুধু এক দু’বার আলোকের দিকে তাকিয়েছিল তারপর মুখ ঘুরে জানালার দিকে তাকায়।তারার মনে হাজারো প্রশ্ন জাগছে,যাওয়ার পর কি হবে তার সাথে?সে কি থাকতে পারবে এই দুনিয়াতে?সামনে কি ভয়ংকর কিছু হবে তার সাথে? জানা নেই তারার।আর না আছে কিছু করার।তারা যখনি ডিসিশন নেয় সে আলোকের সাথে কথা বলে সব ক্লিয়ার করবে তখনি কিছুনা কিছু ঘটে যায় তার সাথে বা অন্য কিছুর মাধ্যমে। হসপিটাল থেকে বাড়িতে যেতে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টার ও বেশি সময় লাগবে যতটুকু তারা জানে।তারা জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।কেমন তন্দ্রা তন্দ্রা ভাব আসছে একটা।তারা মাথাটাকে হেলান দিল।তারা হেলান দিয়েই আচমকা আলোক গাড়ি টাকে ঘুরালো।তারা হকচকিয়ে উঠলো।তারা আলোকের দিকে তাকাতেই আলোক তারার দিকে না তাকিয়েই বললো,

‘সরি।’

তারা কিছু না বলে আবার জানালার দিকে তাকালো আর মনে মনে বললো নিশ্চয়ই তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য করেছে।তারা আবার মাথা হেলান দিলো।তারপর আস্তে আস্তে তারার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে ।

__________

তুমি সুঁতোয় বেঁধেছো ফুল,
নাকি তোমার মন?🥀

আমি জীবন বেঁধেছি,মরণ বেঁধেছি
ভালোবাসে সারাক্ষণ..🖤

চারিপাশে কেমন নিরবতা। আসেপাশে তেমন বেশি মানুষ নেই।রাস্তাটাও কেমন সুনশান, গাড়িঘোড়া খুব কমই চলাচল করছে।তারার ঘুম ভেঙ্গে গেল।সে আস্তে করে মাথা উঠালো তারপর দেখলো আলোক গাড়িতে নেই।সে একাই।তারা গাড়ি থেকে বের হলো।গাড়িটা একপাশে সাইড করা। তারা বেরিয়ে দেখলো সামনে রাস্তার ওপাশে একটা বড় ব্লিডিং হবে ৭ তলার মতন।আর সেখানে উপরের বড় করে সময় লেখা ১০:৪৫।মানে এখন ১০:৪৫ বাজে। তারা বুঝতে পারছে না এত রাতে আলোক তাকে গাড়িতে রেখে কোথায় গেলো।তারা আশেপাশে খুজতে লাগলো।তারা পিছনে ঘুরতেই হতভম্ব হয়ে গেলো ‌।তার পিছনে একটা বড় গেট আর সেখানে প্লাটে লেখা কবরস্থান।তারা একটু হকচকিয়ে গেল। কবরস্থানের সামনে কেনো গাড়ি?তারা একটা ঢোক গিলল।এত রাতে কবরস্থানে তার খুব ভয় করছে।যদি ভূত,আত্মা এইসবে তার বিশ্বাস নেই।তারা কবরস্থানের সামনে যেতেই দেখে গেট টা খোলা। অনেক গুলো কবর।তারার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল।কতো মানুষের প্রিয় জন শুয়ে আছে এই কবরে।প্রত্যেকটি মানুষের শেষ স্থান কবর।সবাই একদিন না একদিন এই কবরে আসতেই হবে। কিন্তু দুনিয়ার মানুষেরা আজ দুনিয়াবি কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত!তারা কিছু টা দূরে দেখলো একজন একটা কবরের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে।তারা ভাবে লক্ষ্য করতেই বলল,’আলোক!!আলোক কেনো?’তারার সাহস হচ্ছে না কবরস্থানে ঢোকার। তবুও তারা আয়াতুল কুরসি পড়তে পড়তে ঢুকলো।তারা আলোকের কাছে গেলো।আলোকের সামনে একটা কবর।কার তা জানা নেই।আলোক মাথা নিচু করে আছে।তারা পিছন থেকে ডাক দিলো,

‘আ__আ_আলোক__আলোক___

তারার কন্ঠ শুনে আলোক মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেলো।তারপর তারার দিকে ফিরলো। তারা দেখলো আলোকের চোখে পানি।আলোক নিজের চোখ মুখ মুছে নিয়ে তারাকে বলল,

‘আপ__আপনি! আপনি এখানে এসেছেন কেনো?’

তারা আলোক কাপাকাপি কন্ঠে বলল,

‘এ_এই প্রশ্ন __আম__আমার _আপনাকে করা উচিত!

আলোক কিছু তারার কথার উত্তর না দিয়ে পাশ কেটে গিয়ে বলল,

‘অনেক রাত হয়েছে চলুন।

তারা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আলোক হনহন করে চলে গেলো।

_________________

#চলবে….

[*রি-চেক হয়নি।]