#পূর্ণতা❤️
#তানজিলা_তাবাচ্ছুম❤️
১৪.
মেঝেতে বিয়ের সাজে বসে আছে চাঁদ।আজকে তার বিয়ে হয়েছে। শশুর বাড়ির কিছুই চেনে, জানে না সে। অসহায়ের মত মেঝেতে বসে আছে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তার পা ব্যথা হয়েছে।সোফায় বসলে যদি কেউ বোকা বোকি করে সেই ভয়ে সোফায় বসে নি চাঁদ। চাঁদ অসহায়ের মতন আছে তার আশেপাশে কেউ নেই তার।
‘আরে বউমা তুমি এভাবে নিচে বসে আছো কেনো?’
চাঁদ তার শাশুড়ি আশার কথা শুনে একটা ঢোক গিলে উপরে চেয়ে তাকায়।আশা চাঁদের হাত ধরে তাকে উঠালো।তারপর বলল,
‘তুমি এখানে কেনো?তোমার রুমে যাও।’
চাঁদ অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।আশা বুঝতে পারলো চাঁদ কোথায় যাবে সেটা সে বুঝতে পারছে না।আশা একটু হেসে বলল,
‘আসো আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।’
তারপর চাঁদকে নিয়ে সিড়ি বয়ে উপরে আসলো।দরজার কাছে আসতেই আশা চাঁদকে বলল,
‘এটা তোমার রুম।বুঝেছো?’
চাঁদ মাথা নাড়ালো।আশা যেতে যেতে বলল,
‘আমি তোমার পাশের রুমেই আছি। কিছু লাগবে নির্দ্বিধায় এসে বলবা।ঠিক আছে?’
চাঁদ একটু হেসে মাথা নাড়ালো।আশা চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল। চাঁদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই কর্কশ কন্ঠে আলোক বলে উঠলো,
‘এই মেয়ে শুনুন আমি আপনাকে একদমই পছন্দ করি না।আর না আপনাকে স্ত্রী মানি।’
এতক্ষণ বিছানায় বসে ছিল আলোক। চাঁদ আলোকের কথা শুনেই মাথা নিচু করলো। চাঁদের চোখ ছলছল করছে।আলোক আবার বলে উঠলো,
‘এই সব কান্না কাটির ন্যাকামো আমার সামনে একদম করবেন না।যদি না মা অসুস্থ হত তাহলে আপনাকে আমি কখনোই বিয়ে করতাম না।’
এবার চাঁদের চোখ বয়ে পানি পড়তে লাগল।আলোক রাগী কন্ঠে বলল,
‘মেয়ে হয়েছেন একটু নিজের মধ্যে আত্মসম্মান রাখতে পারেন নি?আসলে আপনাদের মত থার্ড ক্লাস মেয়েরা এমন ই হয়।যখন শুনেছেন ছেলে ইন্জিনিয়ার ,টাকা আছে জীবনের কোনো কিছুতেই অভাব হবে না তখন আর অফার টা মিস করতে চাননি? নাচতে নাচতে বিয়ে করতে চলে এসেছেন?’
চাঁদের মুখে কোনো কথা নেই। চাঁদের খুব কষ্ট হচ্ছে বিয়ের প্রথম রাতেই এমন কিছু হবে সে কল্পনাও করে নি।
‘শুনুন আমি আপনাকে মানি নাহ।বুঝেছেন?’
জোরে চেঁচিয়ে বলতেই চাঁদ একটু কেঁপে উঠল তারপর মাথা নাড়ালো।
‘আর হ্যা আমার থেকে কোনো রকম এক্সপেক্ট রাখবেন না,গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।’
চাঁদে কাঁদতে দু’কদম এগিয়ে আসলো। আলোক বুঝতে পারলো চাঁদ হয়তো ঘুমানোর জন্য আসছে।আলোক ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
‘আপনার সাথে এক বেড তো কি এক রুমেও থাকতে পারবো না আমি।’
আলোকের এমন কথা শুনে চাঁদ চোখ তুলে আলোকের দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টি তে তাকালো দেখলো আলোক রাগী চাহনি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদ ঘরের চারদিক টা দেখলো তারপর ব্যালকনির দিকে চোখ যেতেই এগিয়ে গেল সেদিকে।তারপর ব্যালকনির কোনায় গিয়ে বসে পড়লো। মাথাটাকে পিছনে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো কিন্তু অবাধ্য চোখের পানি অনাবৃত পড়েই যাচ্ছে।আলোক চাঁদকে যেতে দেখেই একটা স্বস্তির শ্বাস নিল আর বলল,’যাক গায়ে পড়া মেয়ে নয়’ বলে আলোক শুয়ে পড়লো।পরের দিন আলোকের ঘুম ভেঙ্গে যায়।তারপর সে নামাজ পড়ে ল্যাপটপে কাজ করতে বসে।অন্যদিকে চাঁদ সকাল সকাল উঠে গেছে। কিন্তু ঘরের সাথেই যে ওয়াশরুম আছে তা চাঁদের জানা নেই।তাই সে ওয়াশরুম খুঁজতে বাইরে চলে গেছে।বাহিরে আসতেই আশার দেখা পায় চাঁদ।আর আশা তাকে বলে দেয় তার রুমের সাথেই এটাস্ট বাথরুম আছে।তারপর আশা চাঁদ কে নিয়ে নিজের রুমে এসে আলমারি থেকে খুলে নিজের একটা শাড়ি চাঁদ কে দেয়।কারন এখানে চাঁদের কোনো রকম জামাকাপড় নেই। চাঁদ আশার রুমেই ফ্রেশ, চেঞ্জ করে আশার সাথে কিচেনে যায়।আশা চাঁদকে চা বানাতে বলে। বানানো শেষে আশা চাঁদকে বলে আলোককে এক কাপ চা দিয়ে আসতে। চাঁদ আশার মুখের উপর না বলতে পারে নি।তাই হাতে চায়ের কাপ নিয়ে গেল।রুমের সামনে আসতেই মাথা নিচু করে ভিতরে ঢুকলো।দেখলো আলোক বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। চাঁদ আসতে আসতে হেঁটে আলোকের কাছে যেতেই আলোক বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে,
‘আপনি কি কানে কম শুনেন?কালকে কি বলেছি শুনেন নি?কি জন্য করছেন এইসব?’
চাঁদ মাথা নিচু করে আছে।
‘এইসব ন্যাকামো বন্ধ করূন।আর আমি আপনাকে বলেছি চা আনতে? ইচ্ছে করে দেখাচ্ছেন খুব কেয়ারিং, দায়িত্বশীল বউ?’
চাঁদের চোখ থেকে টুপ করে পানি গরিয়ে পড়লো।আলোক দেখলো। আলোকের কেমন লাগলো।আলোক চাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সামনে তাকিয়ে বলল,
‘নিয়ে যান আমি খাবো না।’
চাঁদ কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে যাবে তখনি শাড়ির সাথে পা লেগে চা আলোকের গায়ে আর ল্যাপটপে পড়ে সাথে চাঁদ ও আলোকের উপর পড়ে। চাঁদ আজকে আগে কখনোই শাড়ি পরে নি তাই শাড়ি পড়ে চলাচলের অভিজ্ঞতা নেই। এমন কিছু হওয়ায় আলোক প্রচন্ড রেগে গিয়ে চাঁদ কে নিজের উপর থেকে সরিয়ে উঠে যায়।তারপর উঠতেই চাঁদ কে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে একটা থাপ্পর মারে। চাঁদের গালে থাপ্পড় পড়তেই সে কিছুটা হেলে যায়। আলোক রাগী গলায় বলে,
‘ইউ স্টুপিড। ইচ্ছে করে করেছেন।বদলা নিচ্ছেন?’
চাঁদের পুরো শরীর কাঁপছে।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর কাঁদছে।
‘আসলে আপনাদের মত মেয়েরাই এইরকম।আপনাকে দেখতেই ইচ্ছে করছে না।গেট আউট ফ্রোম মাই রুম।’
চাঁদ কাপের ভাঙ্গা টুকরো গুলো কুড়িয়ে হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়। চাঁদ যেতেই আলোক বিছানায় বসে পড়ে দু হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে।যাই হোক না কেনো তার চড় মারা উচিত হয়নি বলে আলোক মনে করছে।নিজেকে কেমন জানি আলোকের অপরাধী মনে হচ্ছে।আলোক ভাবলো পড়ে চাঁদকে সরি বলবে।এদিকে চাঁদকে দেখতেই আশা অস্থির হয়ে যায়। চাঁদের কাছে গিয়ে বলে,
‘মামনি কি হয়েছে?তুমি কাঁদছো কেনো?’
চাঁদ মাথা নিচু করে আছে।আশা ভাঙ্গা কাপটা কে দেখতেই ফিক মেরে হেসে বলল,
‘ওহ কাপ ভেঙ্গেছে তাই কাঁদছো?’
চাঁদ মাথা তুলে তাকালো।আশা হেসে বলল,
‘এই পাগল মেয়ে কাপ ভাঙ্গার কারনে তোমাকে কেউ কিছু বলেছে?বোকেছে?তাহলে কাঁদছো কেনো?ভেঙ্গে গেছে এর জন্য কাঁদতে হবে?’
আশা তো বুঝছে না যে চাঁদ অন্য কারনে কাঁদছে।আশা নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে চাঁদের নাক,মুখ মুছে দিল।তারপর চাঁদের হাত থেকে ভাঙ্গা টুকরো গুলো নিয়ে ফেলে দিল।
___________
সোফায় গুটি মেরে বসে আছে চাঁদ। নতুন বউ হিসেবে আজ কে তাকে গ্রামের মানুষ দেখতে আসবে।গ্রামে প্রায় এইরকম হয়। কিন্তু চাঁদ কে দেখতে শুধুমাত্র মহিলারা আসবেন।তাই দুপুরে আশা চাঁদকে তার একটা ভালো জামদানি শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে।এখন বিকেল। আলোক দুপুরে ঘুম থেকে উঠে নিচে এসে দেখে চাঁদকে দেখে।বাদামি রঙের শাড়ি পড়েছে চাঁদ।আর চাঁদকে ঘিরে কয়েকজন মহিলা রয়েছে সাথে আশাও রয়েছে।আলোক দেখলো চাঁদকে একজন মহিলা তার নাম জিজ্ঞেস করলো।আশা উত্তর দিলো। কিন্তু দূরে থাকার কারনে আলোক শুনতে পেলো না।আলোক আরো দেখলো মহিলা গুলো চাঁদকে অনেক কিছুই বলছে কিন্তু চাঁদ কিছু বলছে না শুধু মৃদু হাসছে আর তার মা আশা মহিলা গুলোর প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে আসলো।মহিলা গুলো চলে গেল। চাঁদ একাই বসে আছে।আশা কাজে ব্যস্ত।আলোক পায়চারি দিচ্ছে।আশা আলোক কে ডেকে বলল,
‘আলোক চাঁদ মামনির কাছে যা না।দেখ কেমন একাই বসে আছে মেয়েটা।’
আলোক ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘কে?’
আশা হেসে আলোকের থুতনিতে হাত দিয়ে বলল,
‘ছোট থাকতে চাঁদ কে চেয়েছিলি না।তাই তোকে চাঁদ কেই এনে দিয়েছি।’
আলোক ভ্রু উঁচু করে বলল,
‘ওর নাম চাঁদ?’
আশা হেসে মাথা নাড়ালো।আলোক আড়াল চোখে চাঁদের দিকে তাকালো দেখলো একটা মহিলা তার কাছে এসেছে।মহিলা টি কথা বলছে। চাঁদ শুধু হাসছে আর তার কথায় মাথা নাড়াচ্ছে।আলোক তার মাকে প্রশ্ন ছুড়লো,
‘আচ্ছা মা মেয়েটা কথা বলছে না কেনো?তখন ও দেখেছিলাম ওর সব প্রশ্নের উত্তর তুমি দিচ্ছেলে।আর এখন ও কথাই বলছে না শুধু হাসে আর মাথা নাড়ায়!’
আশা একেবারে বলল,
‘ও তো কথা বলতে পারে না।’
আলোক শুনে হতবাক হয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘মানে?’
আশা হালকা হেসে বলল,
‘ও চাইলেও কথা বলতে পারবে না।কারন ও বোবা।’
#চলবে…..
#পূর্ণতা❤️
#তানজিলা_তাবাচ্ছুম❤️
Extra part.
‘ও চাইলেও কথা বলতে পারবে না।কারণ ও বোবা।’
কথাটা শুনে আলোক হকচকিয়ে গেল।আড়াল চোখে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ও_ও_বো_বো_বোবা!’
আশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।আলোক তার মাকে আবার বলল,
‘ওর বা_বাবা মা আসে নি?’
আশা এবারো হালকা হাসলো তারপর বলল,
‘ওর বাবা মাও নেই। চাঁদ অনাথ।’
আলোক চাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে তার মায়ের দিকে বড়সড় চোখ করে তাকালো।তাকাতেই আশা বলল,
‘মনে আছে কিছুদিন আগে হসপিটালে অসুস্থতার জন্য বমি করেছিলাম?নার্সরা বকাবকি শুরু করেছিল।তখন এই মেয়েটা কোনো রকম ঘৃণা ছাড়াই সব পরিষ্কার করে ছিল।হয়তো ও কোনো কাজে গেছিল। আল্লাহ আমায় ওকে মিলাই দিছেন।’
আলোক শুধু ছোট মুখে ‘ওহ আচ্ছা’ বলল।তারপর ‘আমি আসছি’বলে চলে গেল।আশা আলোকের এতটা শান্ত থাকাটা কেমন অদ্ভুত লাগলো।আশা ভেবেছিল এইসব শোনার হয়তো আলোক খুব রেগে যাবে, চেঁচামেচি করবে। কিন্তু আলোক এইরকম কিছুই করলো না।এতটা স্বাভাবিক থেকেছে। সন্ধ্যা হয়েছে এখন আজান দিবে আশা ভাবলো আলোক মাগরিবের নামাজ পড়তে গেছে।রাস্তায় বেখেয়ালি হয়ে হাঁটছে আলোক। এই মুহূর্তে তার নিজের উপর প্রচন্ড ঘৃনা হচ্ছে।কাল থেকে আজ পর্যন্ত চাঁদকে কি না কি বলছে তার সাথে কি না কি করছে!তার উপর রাগের বশে চড় ও মেরেছে।আলোকের চোখ বয়ে পানি আসছে।একজন অনাথের উপর জুলুম,অত্যাচার করেছে বলে মনে করছে আলোক।নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। মাগরিবের নামাজ পড়ে আলোক আর বাড়িতে গেল না। রাস্তায় হাঁটছে,আর কাঁদছে।নিজের বলা প্রত্যেকটি কথার জন্য খুব গিল্টি ফিল হচ্ছে তার।আলোক ধপ করে রাস্তায় বসে পড়লো।মাথা নিচু করে হাতের তালু দিয়ে মুখ চেপে ধরেছে।বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর আলোক আকাশের দিকে তাকালো।এভাবেই থাকলো অনেকক্ষন। দেখতে দেখতে এশার আজান ও দিল।আলোক নামাজ পড়তে গেল। নামাজ শেষে সে আবারো বাড়িতে যায় না ভাবতে থাকে কি করবে সে?যেই করেই হোক মেয়েটার কাছে ক্ষমা চেতেই হবে! কিন্তু চাঁদ তাকে ক্ষমা করবে তো?এতসব ভাবনার মধ্যে আলোক বাড়িতে গেল সাড়ে দশটার কাছাকাছি।তারপর না খেয়েই নিজের রুমে গেল।রুমে কোথাও চাঁদ কে দেখতে পেল না। আলোক ভাবলো হয়তো তার মায়ের কাছে আছে।তাই তার মায়ের ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে বাড়াতে থেমে গেল। আলোক ব্যালকনির দিকে গেল।যেতেই দেখলো চাঁদ এক কোনায় বসে আছে আকাশের দিকে মুখ করে। এখানে এভাবে বসে থাকতে দেখে আলোকের বুকে একটা মোচড় দিয়ে উঠলো।আলোক আর কিছু ভেবে না পেয়ে ধপ করে বসে পড়লো চাঁদের পাশে। হঠাৎ এমন কিছু হওয়ায় চাঁদ চমকে উঠলো।তারপর আলোককে দেখতেই মাথা নিচু করলো।আলোক স্বাভাবিক ভাবেই চাঁদকে বলল,
‘কি করছো এখানে?আকাশ দেখছো?’
চাঁদ মাথা নিচু করেই রইলো। আলোক আবার চাঁদকে বলল,
‘এই তোমার নাম কি?’
চাঁদ আগের মতই রয়েছে।
‘শুনতে পাও নি?’
চাঁদ মাথা তুলে তাকালো।আলোক চাঁদকে ইশারা করে বললো ,’কি’। চাঁদ আকাশের দিকে ইশারা করলো।আলোক আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আকাশি তোমার নাম?’
চাঁদ মাথা নাড়িয়ে না বলল।আলোক আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘মেঘ?’
চাঁদের দিকে তাকাতেই দেখে বুঝতে পারে এটা না।
‘মেঘলা?’
‘তারা?’
আলোক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘তাহলে চাঁদ?’
চাঁদ হেসে মাথা নাড়ালো।আলোক মাথায় হাত দিল।সে তো ভুলেই গেছিল ওর নাম।তখন আশা তাকে চাঁদের নাম বলেছিল কিন্তু আলোকের মনেই ছিল না।আলোক চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আকাশের চাঁদকে দেখছো?’
চাঁদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।আলোক প্রথমে চাঁদের দিকে তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কোন চাঁদ বেশি সুন্দর? আকাশের টা নাকি আমার পাশের টা?’
কথাটা শুনে চাঁদ মাথা নিচু করে ফেলল। চাঁদ ভাবলো আলোক তাকে ছোট করার জন্য হয়তো এইরকম বলল।কারন চাঁদ তো বেশি সুন্দর না।আলোক আকাশের দিকে তাকিয়েই বলল,
‘আমার কাছে তো আমার পাশের টাকে সুন্দর লাগে।’
তারপর চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ছোট থাকতে মায়ের কাছে চাঁদ চাইতাম। কিন্তু মা যে সত্যি সত্যি চাঁদ এনে দিবে ভাবতে পারি নি।’
বলে হাসলো।কিন্তু চাঁদের চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো। চাঁদ ভাবছে আলোক তাকে অপমান করার জন্য এইসব বলছো।আলোক চাঁদ কে প্রশ্ন ছুড়লো,
‘খেয়েছো?’
চাঁদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।আলোক আবার বললো,
‘ঘুমাবে না?’
চাঁদ মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ বললো।আলোক একটু কড়া হয়ে বললো,
‘তো এখানে কি করছো?যাও বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরো।’
চাঁদ চোখ তুলে তাকালো।
‘কি ওভাবে কি দেখছো? যাও!’
চাঁদ মাথা নাড়িয়ে না বললো।
‘যাবে না কেনো?’
চাঁদ আঙ্গুল দিয়ে আলোককে ইশারা করলো।আলোক জিভ কামড়ে ধরলো তারপর বলল,
‘আমি মানা করেছি তাই যাবে না?’
চাঁদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
‘এবার আমি বলেছি যাও।’
চাঁদ উঠলো না।আলোক জোরে কর্কশ কণ্ঠে বলল,
‘বললাম না যাও। একবার কথা শুন না?’
চাঁদ একটা ঢোক গিলে উঠে পড়লো।তারপর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল সাথে আলোক ও গেলো। বিছানায় শুয়ে আছে চাঁদ।চোখ খোলা।আলোক তার সামনাসামনি শুয়ে আছে।
‘চোখ বন্ধ করে ঘুমাও।’
চাঁদ আলোকের দিকে তাকালো।আলোক ভ্রূ উচুঁ করে বললো,
‘কি? তোমার চোখ সুন্দর তাই দেখাচ্ছো? চোখ বন্ধ করে ঘুমাও তাড়াতাড়ি।’
চাঁদ চোখ বন্ধ করলো।কিন্তু তার তো এখন ঘুম আসছে না।চাঁদ চোখের মনি বার বার নড়াচড়া করছে কিন্তু তার চোখ বন্ধ।আলোক একটু রাগী ভাবে বললো,
‘এত চোখ নরাচ্ছো কেনো? ঘুমাবে বাকি আমি অন্য কিছু করবো।’
চাঁদ এবার চোখ খুললো।কিছুক্ষন আলোকের দিকে তাকিয়ে তারপর ওপাশে মুখ ঘুরতে যাবে তখনি আলোক চেঁচিয়ে বলে,
‘ওপাশে মুখ ঘুরানোর সাহসও করো না।’
চাঁদ অসহায়ের মতো তাকালো।
‘পাঁচ মিনিটের মধ্যে যদি তুমি না ঘুমাও তাহলে তোমার মাইর হবে। দাড়াও স্কেলটা নিয়ে আসি।’
বলে উঠবে দেখে চাঁদ একদম ঘুমানোর অবস্থায় আছে। চোখ বন্ধ,কোনো নড়াচড়া নেই।আলোক আঁধ শোয়া অবস্থায় হয়ে ঠোঁট কামড়ে মুচকি হাসতে লাগলো।আলোক আর আজ রাতে খেলো না।সে ভেবেছিল হয়তো চাঁদ খায়নি, একসাথে খাবে।কিন্তু তা আর হলো না। ঘড়িতে রাত ১২:৪০ বাজে।আলোক এখনো ঘুমায় নি।আলোক চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদের বা’চোখের নিচে একটা তিল আছে যেটা আলোকের কাছে খুব ভালো লাগলো।আলোক কিছুটা কাছাকাছি গিয়ে যে গালে থাপ্পর মেরেছিল সেখানে দুটো আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো।আলোকের চোখের পানি চাঁদের মুখে পড়লো।কিন্তু চাঁদ ঘুমে মগ্ন তাই বুঝতে পারেনি। আলোক আর না ঘুমিয়ে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লো।
____________
সকালে ঘুম থেকে উঠেই আলোক দেখলো চাঁদ বিছানায় নেই।ফজরের নামাজ পড়ে এসে দেখেছিল চাঁদ নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছে আবার তাই আলোকও আবার ঘুমিয়েছে।আলোক উঠলো। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে তাই মাথাটা ঝাঁকালো।তারপর উঠে বের হলো।নিচে এসে সোফায় বসলো তারপর কিচেনে একটু উকি মারলো দেখলো সেখানে চাঁদ আর তার মায়া।আলোক একটা হাই তুলে তার মাকে বলল,
‘মা তোমার বউমাকে বলো আমাকে এক কাপ চা দিতে।’
কথাটা শুনে চাঁদ একটু হকচকিয়ে গেল।আশা ভ্রূ কুচকে বললো,
‘চা তো অনেক আগেই বানিয়েছে।’
তারপর চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘তুমি ওকে দেয়নি?’
চাঁদ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো।কারণ কালকে আলোক এইসব করতে মানা করেছিল তাই আজ আর দিতে যায়নি চাঁদ।আলোক বুঝতে পড়লো যে তাঁর কালকের ব্যবহারের জন্য চাঁদ আজকে চা দেওয়ার সাহস পায়নি।আলোক আবার জোড় কন্ঠে বলল,
‘মা আমি এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।এখন তাড়াতাড়ি দিতে বলো তোমার বউমাকে।’
আশা হাসলো।চাঁদ চা গরম করে ঢেলে আলোকের সামনে নিয়ে গেলো। চাঁদ মাথা নিচু করে আছে।আলোকের সামনে চায়ের কাপ টা এগিয়ে দিতে তার হাত কেমন কাপছে।যদি কালকের মত আবার কিছু হয় এই ভয়ে।আলোক চাঁদকে বললো,
‘চা বানাতে পারো তাহলে।’
‘সব ঠিকঠাক হয়েছে?’
চাঁদ মাথা নাড়ালো।
‘খেয়ে দেখেছো? বা মা খেয়েছে?’
চাঁদ মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বললো।আলোক তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বললো,
‘আগে নিজে খেয়ে দেখো সব ঠিক আছে কিনা!’
চাঁদ চোখ তুলে তাকাতেই আলোক বলে,
‘খাও।’
কিন্তু চাঁদ খেলো না।আলোক একটু রাগী ভাব করে বললো,
‘এই মেয়ে তুমি খুব খারাপ।এক কথায় শোনা না?খাও তারাতারি।[ধমক দিয়ে]
চাঁদ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছুটা খেয়ে নিল।
‘সব ঠিক আছে?’
চাঁদ মাথা নাড়ালো।আলোক চাঁদের হাত টেনে তার সামনে নিয়ে আসলো তারপর চাঁদের হাত ধরেই চা খেয়ে বললো,
‘নট ব্যাড।’
আলোকের মা আশা একটু মুখ দিয়ে শব্দ করতেই আলোক চাঁদের হাত ছেড়ে কাপ টা নিল।কেমন লজ্জা লাগছে তার।তার মা কি ভাববে তার সম্পর্কে ভেবেই আলোকের লজ্জা বোধ হচ্ছে।আলোক আর থাকতে পারলো না ওখান থেকে উঠে গেলো।আশা মিটমিট করে হাসতে লাগলো,সে বুঝতে পেরেছে তার ছেলে লজ্জা পেয়ে যাচ্ছে।
______________
কিচেনে আশা কিছু রান্না করছে আর চাঁদ তার পাশে থেকে দেখছে।আশা চাঁদকে রান্না করা শেখাচ্ছে।আশা চাঁদকে দেখতে বলে একটু কিচেন থেকে বের হয়ে গেলো।এদিকে আলোক এতক্ষণ উঁকি মারছিল তার মা যাওয়ার।আশা যেতেই আলোক ঢুকলো।চাঁদ দাঁড়িয়ে আছে আর খাবার গুলো দেখছে।হটাৎ চাঁদ অনুভব করলো তার পিছনে কেউ আছে।চাঁদ সাথে সাথে পিছনে ঘুরতেই আলোক তার মুখ চেপে ধরে বলল,
‘চেচি-ও না।’
চাঁদ একটু ভয় পেলো।আলোক মুখ ছাড়লো,সে তো ভুলেই গেছিল চাঁদ কথাই বলতে পারে না তাহলে চেঁচাবে কিভাবে।চাঁদ সামনে ঘুরল।আলোক পাশে গিয়ে হেলান দিয়ে বললো,
‘এই তোমার ফেভারিট কালার কি?’
চাঁদ চোখ তুলে তাকালো।আলোক ভ্রু কুঁচকে ইশারা করলো ‘কি? চাঁদ ওখান থেকে গিয়ে ফ্রিজ খুললো।তারপর হাতে একটা 🍆 বেগুন নিয়ে এসে আলোক কে দিল।আলোক বেগুন ধরে বললো,
‘কি বেগুনের ভাজি করবে?’
চাঁদ মাথা নাড়িয়ে না বললো।তারপর বেগুন টাকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেই আলোক বললো,
‘বেগুন ফ্রাই করবে।’
চাঁদ মাথা নাড়িয়ে না বলে প্রথমে নিজেকে তারপর বেগুন দেখলো।আলোক বুঝতে পারে বললো,
‘ওহ ফেভারিট কালার বেগুনি , পার্পল।’
আশা আসতে আসতে আলোক কে দেখে থেমে গেলো।আশা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।যাক আলোক তার মানে চাঁদকে মেনে নিয়েছে।তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে দেখে আশার ভালো লাগলো তাই সে আর গেলনা।
___________
এখন প্রায় রাত আটটার মতন বাজে। ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে আশা আর চাঁদ বাহির থেকে আসলো।দুপুরে আলোক খাওয়ার সময় বলেছিল চাঁদ কে নিয়ে বাহিরে যেতে।আর চাঁদের যেহেতু জামাকাপড় নেই সেগুলোও কিনে আনতে।তাই সন্ধ্যার পড়ে বেরিয়েছিল তারা।আশা খেয়ে দেয়ে তার রুমে চলে গেল।চাঁদ ও নিজের রুমে ভয়ে ভয়ে গেলো। দরজা খুলতেই চাঁদ অবাক হয়ে গেল ,হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
#চলবে…..