প্রজাপতি উৎসব পর্ব-০৬

0
229

প্রজাপতি উৎসব
#প্রেমের_গল্প #প্রজাপতি_উৎসব
পর্ব ৬
মিতিকে রায়হান মগবাজারে লিটনের ফ্ল্যাটে নিয়ে এসেছে।
চামেলি টাওয়ারের আটতলায় লিটনের এক রুমের ফ্ল্যাট। লিটন ওর ছোট ভাই ছোটনকে নিয়ে এই ফ্ল্যাটে থাকে। ছোটন এন এস ইউতে ফার্স্ট ইয়ারে বিবিএ পড়ছে। ওর পড়ালেখার খুব চাপ। কিন্তু ছোটন এখন ফ্ল্যাটে নেই। সে ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্ডিয়া ট্যুরে গেছে। আগামী সপ্তাহে ফিরবে।
লিটন দরজা খুলে রায়হানকে দেখে খুশীতে বিগলিত হয়ে বললো,
-উফ দোস্ত। কতদিন পর দেখা বল তো?
-জাফরের জন্মদিনে শেষ দেখা হয়েছিল। ছ মাস চলে গেছে। ভাবা যায়? ফেস ট ফেস দেখা হবার মজা কি ফোনে কথা বলে পাওয়া যায়?
-হুম, একদম ঠিক। জাফর জাপানে মনবসু স্কলারশিপ পেয়েছে, শুনেছিস?
-না, শুনি নাই। গুড ফর হিম, ও সব সময় দেশ ছাড়তে চাইতো।
-তুইও তো হাসতে হাসতে কমনওয়েলথ পেয়ে যাবি।
-দেখা যাক, এসবে অনেক পলিটিক্স আছে।
লিটন এবার মিতির দিকে তাকিয়ে বললো,
-রায়হান তো ফোন করলে আপনার কথা বলতে বলতে মুখের ফেনা তুলে ফেলে।
-তাই নাকি?
-জি ভাবি। উফ, ভাবি বলে ফেললাম, মাইন্ড করেননি তো?
মিতি লজ্জা পেলো। রায়হান মিতির কাঁধে ডান হাত জড়িয়ে ধরে বললো,
-ইস, কেন মাইন্ড করবে? সব ঠিক থাকলে আগামী শীতে সেনাকুঞ্জে তুই আমাদের বিয়ের দাওয়াত পাবি। মিতিকে তুই চাইলে ভাবি ডাকতেই পারিস। কী মিতি ঠিক কিনা?
বন্ধুর সামনে রায়হানের ঘোষণায় মিতির মনে একটা আনন্দ শিহরণ বয়ে গেলো। মিতি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। লিটন মিতির দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
-ভাবী, রায়হান যেমন বলেছে আপনি কিন্তু সামনাসামনি তারচেয়ে অনেক সুন্দর।
রায়হান ঠাট্টা করে বললো,
-উফ লিটন, আর যাই কর, আমার ভাবী বধূর সঙ্গে ফ্লার্ট করবার চেষ্টা করবি না। যা বুঝতে পারছি তোর জন্যও পাত্রী যোগাড় করতে হবে।
-শিওর, ভাবি যদি ওনার মত পাত্রী যোগাড় করে দেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি। তার আগে আমার একটা চাকুরী লাগবে, হা হা হা।
রায়হান এবার মিতিকে লক্ষ্য করে বললো,
— আপনি নিশ্চয় শুনেছেন রায়হান ক্লাস থ্রি থেকে আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড? কলেজেও আমরা একসঙ্গে পড়েছি। এ কারণে আমরা দুজন দেখা হলে অনেক ঠাট্টা করি।
-জানি, রায়হান বলেছে। আপনারা মানিকজোড়।
-একদম। তাই বলছি যতক্ষণ আপনি এখানে আছেন, এই ফ্ল্যাটকে আপনার নিজের ফ্ল্যাট ভাববেন। চেয়ার ,টেবিল, সোফা, বিছানা সব আপনাদের। কিচেনে চা, কফি, বিস্কুট আছে। একটু খুঁজে নিজের মত নিয়ে নেবেন।
মিতি বললো,
-থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। কিন্তু আপনি কোথাও বেরোচ্ছেন নাকি লিটন ভাই?
-জি ভাবী। আর বলেন না, ড.নকিবের সাথে হঠাৎ একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পড়ে গেছে। ড.নকিবকে ধরা খুবই কঠিন ব্যাপার, ছ মাস আগে থেকে বুক্‌ড্‌ হয়ে থাকেন। ইচ্ছে ছিল আপনাদের সঙ্গে মুভি দেখবো। দুটো মুভি নেটফ্লিক্সে রেডি করে রেখেছি।
-আমি বুঝতে পারছি, এমন হতেই পারে। আপনি ডাক্তারের কাছে থেকে ঘুরে আসুন, তারপর একসাথে সিনেমা দেখি।
-থ্যাঙ্ক ইউ ভাবি, সেটাই বলতে চেয়েছি। এতদূর থেকে বেড়াতে এসেছেন, হুট করে চলে গেলে মন খারাপ করবো। আমার সব মিতিয়ে একঘন্টার বেশী লাগবে না।
লিটন এবার রায়হানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-স্যরি দোস্ত, এখন অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস করলে পরে আবার কবে দেবে কে জানে। একটু আরজেন্সি আছে।
-এত কারন দর্শাতে হবে না দোস্ত, তুই দৌড় দে।
-ওকে, আমি এই গেলাম আর এলাম।
লিটন তাড়াহুড়া করে একটা ব্যকপ্যাক নিয়ে বেরিয়ে গেলো। রায়হান ভেতর থেকে দরজা লক করে দিলো।
মিতি আর রায়হান এখন লিটনের ফ্ল্যাটে একা। বাইরের আকাশ ভারী মেঘে ঢেকে গেছে। যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে। রায়হান মিতির কাছে এসে কপালে একটা চুমু বসিয়ে বললো,
-দুজনে মুখোমুখি, গভীর দুঃখে দুখী, আঁধারে ঢেকে গেছে চারিধার।
-আমি মোটেও গভীর দুঃখে দুঃখী না, আমি গভীর সুখে সুখী।
-লিটনের অ্যাপার্টমেন্ট ভালো লেগেছে?
-হ্যাঁ। ছোট স্পেস কিন্তু এত পরিপাটি করে সাজানো। ছেলেরা যে এত গোছানো হয় আগে দেখিনি।
-কেন আমি?
-ইস, তুমি তো অগোছালোর রাজা, পড়ালেখা বাদে।
রায়হান মিতিকে ছেড়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বললো,
-মিতি আমি কিচেনে যাচ্ছি, চা নাকি কফি খাবে?
মিতি ব্যস্ত হয়ে বললো,
-না না, তুমি বসো, আমি চা বানাচ্ছি।
মিতি কিচেনে গিয়ে কাবার্ড খুলে দেখতে লাগলো কোথায় কী আছে। রায়হান পেছনে এসে দু হাত দিয়ে মিতির কাঁধ ধরে বললো বললো,
-আজ লাল শাড়িতে তোমাকে বেশী অ্যাট্রাক্টিভ লাগছে। মনে হচ্ছে বারবার তোমাকে চুমু খেতে থাকি।
-আহা, আগে চা বিস্কুট খাও।
-তারপর?
-চা খেতে খেতে আমরা দুজন আরাম করে একটা মুভি দেখবো।
রায়হান কড়া লিকার আর ঘন দুধের চা পছন্দ করে। শুধুমাত্র পরীক্ষার আগে রাত জাগার জন্য সে ব্ল্যাক কফি খায়। মিতির রায়হানের উল্টো। আদা কিংবা লেবুর পাতলা চা হলে মিতির আর কিছু চাই না। মিতি ফ্রিজ খুলে দেখলো নীচের শেল্ফে একটা অর্ধেক কাটা লেবু আছে। ওটা থেকে একটা স্লাইস নিয়ে ও রং চায়ে দিলো।
দু মগ ভরা চা হাতে ওরা ড্রইং রুমে এলো। ড্রইং রুমের সোফাটা বেশ বড়। চাইলে ওখানে রাতে ঘুমনো যায়। ওরা দুজন আরাম করে সোফায় গা এলিয়ে দিলো। মিতি রিমোটে চাপ দিয়ে টিভি অন করলো। নেটফ্লিক্সে হাজার হাজার মুভি কিন্তু ভালো একটা সিনেমা খুঁজে পেতে সমস্যা হয়ে যায়। মিতি আপাতত ঋতুপর্ণ ঘোষের একটা মুভি চালু করলো।
বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। এই আট তলায় রাস্তার শব্দ তেমন আসে না। মিনিট পাঁচেক যেতে না যেতেই ঝমঝম করে ভারী বৃষ্টি আরম্ভ হলো। কেমন একটা সোঁদা গন্ধ মাখা ভেজা ভেজা মদির বাতাস এখন ঘরে ঝাঁপটা দিচ্ছে। রায়হান মিতিকে টেনে গায়ে প্রায় লেপ্টে ফেললো। মিতি অনুযোগের সুরে বললো,
-ইস, ঠিক মত চা খেতেও দিচ্ছো না।
আধ কাপ চা শেষ হতে না হতেই রায়হান মিতির ঠোঁট জোড়া ওর ঠোঁটের কাছে টেনে নিলো। হবু হাজবেন্ডের এই মিষ্টি সোহাগ মিতি এখন অনেক উপভোগ করে। মিতির মনে হলো রায়হান যেন ওর ঠোঁটে তরল রূপা ঢেলে দিচ্ছে। বাইরে এখন বাজ পড়ার আওয়াজ তীব্র হচ্ছে, মেঘে মেঘে ঘষা লেগে থেকে থেকে আকাশে বাতাসে বিদ্যুৎ জ্বলে উঠছে। বৃষ্টি বঙ্কিম ছাঁটে ড্রইং রুমের লাগোয়া বারান্দা ভিজে ভেসে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন কে বারান্দার দরজা বন্ধ করবে?
মেঘের ডাকের সঙ্গে তাল মিতিয়ে রায়হানের আঙ্গুলগুলো কেমন অবাধ্যতা আরম্ভ করেছে। ইবনে বতুতার মত ওর হাত জোড়া মিতির ভূগোলে নতুন ভুখন্ড আবিষ্কারের নেশায় পাগলের মত বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়েছে। মিতির লাল শড়ির মিনা করা আঁচল সোফার একপাশে লুটিয়ে পরেছে।
মিতি নিজেও এই বৃষ্টিমেদুর দিনে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারছে না। চিরন্তন আদিম আকর্ষণে সে বিবশ, বিকল, বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মিতির সংযমের সব বাঁধ কামনার আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে ভেঙ্গে ভেসে যাচ্ছে। রায়হানে হঠাৎ মিতিকে দু হাতে তুলে নিয়ে বেডরুমের দিকে হাঁটা দিলো। মিতি এবার আর বাঁধা দিলো না। একটু পর ড্রইংরুমের দেয়ালে বেডরুমের বিছানা কাঁপার শব্দ সঞ্চারিত হলো।
টিভিতে কে গাইছে, আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়।
(চলবে)
#এশরারলতিফ