প্রণয়ের সূচনা পর্ব-১০+১১+১২

0
224

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_১০
__________________________
সকাল পেড়িয়ে দুপুর আর দুপুর পেড়িয়ে এখন প্রায় বিকেল ছুইছুই।সময়টা এখন প্রায় পৌনে চারটা।সূচনাদের বাসায় এসে সবাই পৌছেছে সবে পাঁচ কি দশমিনিট।মিহুর সাথে ইরা,দিনা আর তিথিকেও নিয়ে এসেছে সূচনা, তার ওপর মিসেস দিশার ও জোর গলার আদেশ -“চারজনকেই নিয়ে আসবি।ভুল যেন না হয়।” মায়ের আদেশ রাখতে আর নিজের ইচ্ছে দু’টো রক্ষার্থে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এসেছে চারজনকেই।ইরা টা তো আসতেই চাইছিলনা।সূচনা শুরুতে অবাক হয়েছিল। তার একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে অথচ তার মধ্যে কোনো উত্তেজনা নেই,না আছে কোনো কিছু নিয়ে আগ্রহ। প্রথমবার ভাইয়ের শশুর বাড়ী আসবে তা নিয়েও এত অনীহা।কিন্তু কেন?পরমুহূর্তে নিজেই নিজেকে শুধিয়েছে-“সবাই তো আর এক হয়না,সে তাদের পরিবারের নতুন সদস্য তাই হয়তো তার সাথে সহজ হতে ইরার সময় লাগছে।সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে।

ড্রয়িংরুমে মুখ লট’কে বসে আছে সূচনা।তার পাশে বসেছে দিনা,তিথি আর ইরা।তাদের সামনের সোফায় নিহাদ আর প্রণয়। টুকটাক কথা হচ্ছে তার আর প্রণয়ে মাঝে।মিহু আর মিসেস দিশা ব্যস্ত পায়ে রান্নাঘর টু ড্রয়িংরুম, ড্রয়িংরুম টু রান্নাঘর করতে ব্যস্ত।সূচনা একবার বলেছিল তাকে সাহায্য করার কথা।সবার সামনে ধম’ক খেয়ে ইজ্জতের যায় যায় অবস্থা। তাই দ্বিতীয় বার আর বলেনি। সূচনার লট’কানে মুখশ্রীর কারণ তার ফুপি মিসেস আফরোজা।আজকেই তাদের বাসায় এসেছে সে।সূচনা ভালো করেই জানে তার বাবা-মা’য়ের সাথে তার বিয়ের ব্যাপার নিয়ে সে কোনো না কোনো ঝামেলা করেছে।জানার জন্য মন আনচান করছে তার।

–‘তোমরা একটু বসো, আমি রান্নাঘর থেকে আসছি একটু।

ইরা,দিনা আর তিথিকে উদ্দেশ্য করে বললো সূচনা।
তারাও হাসি মুখে সায় জানালো।ড্রয়িং রুম থেকে রান্নাঘরে আসতেই দেখল মিসেস দিশা রান্না করতে ব্যস্ত।ঘামে ভিজে উঠলো একেবারে বা’জে অবস্থা।তার সাথে হাতে হাতে কাজ করছে আফরিন। নিহাদের স্ত্রী আফরিন।সূচনার দিকে চোখ পড়তেই আফরিন কাজ করতে করতেই জিজ্ঞেস করলো-

–‘কেমন আছো নন্দিনী?

–‘আলহামদুলিল্লাহ,, তুমি কেমন আছো?

–‘আলহামদুলিল্লাহ।

–‘হৃদু কোথায়?

–‘ও রিশার কাছে।

–‘আচ্ছা কিন্তু রিশাকে দেখলাম না তো।নিচেও আসলোনা।কোথায় দু’জন?

আফরিন কণ্ঠে একটু উদাস উদাস ভাব এনে বললো-

–‘রিশা ওপরের রুমে।ওরা দু’জন কিন্তু তোমার ওপর বেশ রে’গে আছে।হৃদু তো সেই অভিমান করেছে, বলেছে আর কথাই বলবেনা।

সূচনা মুখ ল’টকে বললো-

–‘কেন?কথা ই বলবেনা?

–‘যেখানে আমিই রে’গে আছি সেখানে আমার মেয়ের আর নাতনির রে’গে থাকা তো স্বাভাবিক।

পেছন থেকে উক্ত বাক্যটুকু কর্ণধার হলো সবার।সূচনা না দেখলেও কণ্ঠ ধরতে দেরি হলো না।চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল সাথে সাথে। পেছন ঘুরে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘আপনার এমন রে’গে থাকার কারণ কি?সেটা জানতে ইচ্ছুক না আমি।রা’গ ভাঙানোর ও কোনো ইচ্ছে নেই।

সামনে ঘুরে আফরিন আর তার মা’য়ের উদ্দেশ্যে বললো-

–‘আমি উপরে যাচ্ছি রিশা আর হৃদুর কাছে।

আবার মিসেস আফরোজার দিকে ঘুরে বললো-

–‘তাদের রা’গ ভা’ঙাতে।

সূচনার কথায় ফু’সে উঠলেন মিসেস আফরোজা।রা’গে ফুস’তে ফুস’তে মিসেস দিশা কে বললেন-

–‘কেমন পরিবারে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন ভাবি।দুইদিন না যেতেই ব্যবহারের এমন অধঃপতন।কেমন ছেলে না আছে মা না আছে বাবা।থাকে মামা-মামীর সাথে,আবার ছেলের নিজের বোন আছে।বোনপর দায়িত্ব নিতে হবে।কিভাবে বিয়ে দিলেন এমন ছেলের কাছে।কিভাবে টি’কবে সংসার?মেয়ের ব্যবহার দেখেছেন?অস’ভ্য!একদিনেই কি জা’দু করেছে ঔ ছেলে কে জানে!

রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ই যাচ্ছিল সূচনা কিন্তু মিসেস আফরোজার কথা শুনে থমকে দাড়িয়েছে।রা’গে তার মাথার র’গ ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম।মানুষের মানসিকতা এত নিচু?মা-বাবা নেই সেটা নিয়েও কথা শোনাতে হবে?মা-বাবা না থাকলে সে ঘরের ছেলে মেয়েদের কি বিয়ে হয়না?পুনরায় পেছন ঘুরে দাড়ালো মিসেস আফরোজার পেছনে।মিসেস দিশা বারবার বলছেন তাকে -“আপা এখন এসব কথা আর বলিয়েননা,কেউ শুনলে সমস্যা হবে।কিন্তু তার কথা কানে নিচ্ছেন না উনি।মনে মনে হয়তো নতুন কিছু কথা ঠিক করছেন শোনানোর জন্য।মিসেস দিশার কথা উপেক্ষা করে সূচনা শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো তার মা’য়ের দিকে।তারপর শীতল কণ্ঠে শোধালো তাকে-

–‘তুমি রিকোয়েস্ট করছ কেন আম্মু?হু ইজ সি?কোন অধিকারে কথা বলছে আমার বিষয়ে?বলে দাও আমার ব্যাপারে,প্রণয় আর ওনার পরিবারের ব্যাপারে কোনো ধরনের কথা যেন না বলে।এসেছেন ভাইয়ের বাড়িতে, খা’ক,ঘুমাক,থাকুক যতদিন মন চায় কিন্তু কোনোধরনের বাড়তি কথা যেন না বলে।আর হ্যা এমন নিচু মানসিকতার মানুষ প্রণয় বা তার পরিবার না।সুখে থাকার অধিকার সবারই আছে,মা-বাবা থাকুক আর না থাকুক।আর কে বলেছে ওনার মা-বাবা নেই?মামা-মামী আছেন ওনারাই তার আরেক বাবা-মা আর আমার শশুর শাশুড়ী।আর সংসার টেকা’তে হলে শশুর শাশুড়ীর দরকার হয়না।ভাবি আপনার সংসার টি’কে আছেনা।কেউ একজন তো শত কুট’নীতি, চাল চেলেও পারেনি আপনার সংসার ভাঙতে।তাহলে?কিছু মানুষের চিন্তা ধারাই লো ক্লাস মানুষদের মতো অথচ তারা আবার নিজেদের হাই ক্লাস সোসাইটির বলে দাবি করে।হাহ!

সূচনার কথাগুলো যে তার উদ্দেশ্যেই বলা ছিল তা বুঝতে বিন্দু পরিমাণ বেগ পেতে হলো না মিসেস আফরোজাকে।শীতল কণ্ঠে করা সেই অপমান।সূচনা আর এক সেকেন্ড ও দাড়ালো না সেখানে।রান্নাঘর থেকে বের হতেই দেখা হলো প্রণয়ের সাথে।প্রণয়কে এখানে দেখে ভ’য় পেয়ে গেল সূচনা।তবে কি প্রণয় কিছু শুনে ফেলেছে?শুনলে কি ভাববে সে?রা’গের পরিমান তার দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ হলো।এমন কেন এই মহিলাটা?সবসময় একটা না একটা ঝা’মেলা পা’কাবে।

–‘সূচনা?

আচমকা প্রণয়ের ডা’ক।হকচ’কিয়ে গেল সূচনা।তার চেয়ে বেশি অবাক হলো প্রণয়ের মুখে প্রথমবারের মতো নিজের নাম শুনে।

–‘সূচনা?

আবারো শান্ত কণ্ঠের ডা’ক।সূচনা নিচু স্বরে সাড়া দিল ডাকে’র-

–‘জ্বি বলুন।

–‘ফ্রেশ হব,,রুমে চলো।

–‘জ্বি।ইরা,তিথি ওরা কোথায়?

–‘মিহুর সাথে গেছে।

–‘ওও।

প্রণয়কে সাথে নিয়ে নিজের রুমে আসলো সূচনা।ব্যাগ থেকে তার জন্য ট্রাউজার,টি-শার্ট বের করে দিয়ে তার হাতে দিয়ে বললো-

–‘আপনি ফ্রেশ হন আমি রুমেই আছি,কিছু লাগলে বলবেন।

মাথা নাড়ালো প্রণয়।পা বাড়ালো ওয়াশরুমে।
.
.
–‘আম্মু ওনার সমস্যা কী?কেন এসেছেন উনি?নিশ্চয়ই আব্বুকে জেরা করতে।আম্মু তখন প্রণয় রান্নাঘরের বাইরেই ছিল।কিছু শুনেছেন কি না কে জানে।শুনলে কি হবে ভাবতে পারছ?বিয়ের পরেরদিন ই শশুর বাড়ী এসে এ ধরনের কথা নিশ্চয়ই আশা করে না।আগেই জানতাম আমি উনি আসবেন, আর ওনার উল্টা পাল্টা কথা তো বলবেনই। আম্মু ওনার আর একটা বোন ও তো আছেন কিন্তু ওই ফুপ্পি তো এমন না।প্রণয় যদি শুনে থাকে তাহলে কষ্ট পাবেন কারণ ওনার বাবা -মা কে নিয়ে কথা বলেছেন উনি।

একনাগাড়ে মিসেস দিশা কে কথা গুলো বললো সূচনা।মিসেস দিশা হালকা অবাক হলেন। মেয়ে এক রাতেই তার বর আর তাার পরিবার সম্পর্কে এত ভাবছে!ভালো ই তো।

–‘আম্মু তুমি কি শুনছো না আমার কথা?

কিছুটা বিরক্তিমাখা কণ্ঠে ই বললো সূচনা।

মিসেস দিশা হালকা হেসে বললেন-

–‘শুনছি তো।

–‘কী শুনছো?

–‘আমার বুদ্ধিমান মেয়ের কথা।আমার মেয়েটা কেমন যেন এক রাতেই হুট করে বড় হয়ে গেল।যাক গে শোন বাদ দে এসব উনি চলে যাবেন।তুই আয় তো আমার সাথে কথা আছে।

–‘চলো।
.
.
–‘কেমন আছিস বেলী রানী?

মিসেস দিশার সাথে কথা বলে নিজের রুমের দিকেই যাচ্ছিল সূচনা।আচানক পেছন থেকে কারো ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে করা উক্তি।পা থেমে গেল সূচনার।সে জানে মানুষটা কে।কিন্তু সময়,সম্পর্ক আর পরিস্থিতি ঠিক রাখার সুবিধার্থে মানুষটা এখন অচেনা।চোখ মুখ স্বাভাবিক রেখে পেছন ঘুরে তাকালো সূচনা।হ্যা সেই তো।কিন্তু আগের আর এখনের মধ্যে যে ফারাক স্পষ্ট।চোখ নামিয়ে নিল সে।করার কিছুই নেই এছাড়া।

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_১১
____________________________
নত মস্তকে নিশ্চুপ ভঙ্গিতে দাড়ানো সূচনা।সামনে থেকে আবারো প্রশ্ন –

–‘বললি না তো বেলী রাণী,কেমন আছিস?

নত মস্তক উপর করলো সূচনা।পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো অদ্ভুত মুখশ্রীর অধিকারী ইরাদের দিকে।এই মুহূর্তে তার মুখশ্রী সূচনার কাছে অদ্ভুত ই ঠে’কছে।কেমন যেন থমথমে চেহারা, চোখ জোড়ার নিচে কালি পড়েছে,চুলগুলো এলোমেলো,হালকা সাদা-গোলাপি রঙের ঠোঁট জোড়া কালচে বর্ণের হয়ে গেছে।সূচনা হালকা স্বরে জবাব দিলো –

–‘ আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?

ইরাদ বা’কা হাসলো।প্রাণহীন সেই হাসি। বু’কের বা পাশে হাত রেখে হাসতে হাসতে বললো-

–‘ভালো থাকার কি কথা? এই খানটা তো জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে বেলী রাণী। কিভাবে ভালো থাকব আমি?

সূচনা দৃষ্টি নত করলো।তাড়াহুড়ো করে বললো-

–‘আমার কাজ আছে ইরাদ ভাই আমি আসি।

পেছন ঘুরতে নিলে আবারও ইরাদ বললো –

–‘পালাচ্ছিস?এমনটা না হলেই কি হতো না?তুই তো জানতি সবটা, তাহলে?

সূচনা নিচু স্বরে বললো-

–‘দেখুন ইরাদ ভাই এখন এখানে এসব বলার সময় না।কেউ শুনলে তিল থেকে তাল বানাবে।আমি কোনো ঝা’মেলা চাই না।আমার বিয়ে হয়ে গেছে, এটাই সত্যি আর আমি মেনে নিয়েছি।আপনিও মেনে নিন,ভুলে যান আমাকে।

–‘আমার ভালোবাসায় খা’দ কি ছিল বলতে পারবি?

–‘আপনার ভলোবাসায় খা’দ ছিল না হয়তো তবে তা ছিল একতরফা।আমি কখনো আপনাকে ভালোবাসিনি,কখনো সেই নজরে দেখিনি। আমার জন্য নিহাদ ভাইয়া যেমন আপনিও তেমন।আসি।

সূচনা দ্রুতপায়ে প্রস্থান করল সেই স্থান।ইরাদ ব্যথাতুর নয়নে তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পানে।নিজের রুমে আর গেল না সূচনা।রিশা আর হৃদুর কাছে গেল,তখন ঘুমিয়ে ছিল দু’জন তাই আর যায়নি।রুমে যেয়েই দেখল দু’জন মনোযোগ দিয়ে ফোনের ভেতর কিছু দেখছে।সূচনা কে দেখেই রিশা আসল তার কাছে। বলল-

–‘তুমি এমন হুট করে বিয়ে করে ফেলেছ, তাই তোমার ওপর রা”গ করেছিলাম।

–‘এখন কি রা’গ ভেঙেছে।

–‘হ্যা।থ্যাঙ্কিউ এতগুলা চকলেটের জন্য। এখন আর রা’গ নেই।

সূচনা অবাক হলো।কীসের চকলেট?সে তো কোনো চকলেট দেয় নি।তাহলে?রিশা কে কিছু জিজ্ঞেস করতে নিবে তখনই আগমন ঘটে প্রণয়ের।তার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ যায় হৃদুর দিকে। মুখ গোম’রা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।সূচনা আহ্লাদী স্বরে বললো-

–‘আমার পিচ্চিপাখি টা বুঝি আমার সাথে রা’গ করেছে।কথা বলবেনা আমার সাথে?

তার কথা শুনেও না শুনার ভান করলো যেন।সূচনা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো-

–‘মিষ্টি কিন্তু চলে যাবে,তুমি কথা না বললে,

এবারো চুপ হৃদু।আবার শোধালো সূচনা-

–‘চলে গেলে কিন্তু আর আসবনা, তখন যেন কেউ মিস না করে।

কথাটুকু বলে সূচনা বসা থেকে উঠতে নিলেই ছুটে এলো হৃদুকা।মিনিট দুয়েক তার দিকে তাকিয়ে থেকে ঝা’পটে ধরল তাকে।কান্নার রোল তুলে দিল একেবারে। চোখ আর নাকের পানি মিলে একাকার অবস্থা।সূচনার কাধে মাথা রেখে তার ছোট হাত খানি কপোলে রাখল সূচনার।আধো আধো গলায় বললো –

–‘মিত্তি তুমি অনেত পতা,,একতু ও আদল কলো না লিদুকে।লিদুকে দেখতে যাওনা।

–‘ঠিকই বলেছো তোমার মিষ্টি অনেক প’চা।

হৃদুকার কথার পিঠে বললো প্রণয়।তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো সূচনা।কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো-

–‘আমি আপনাকে কি করেছি?প’চা বললেন কেন?

–‘চু’রি করেছো তুমি।

–‘কিহ?কি চু’রি করেছি আপনার?

–‘প্রণয়ের টিম,হার্জ,কোর চুরি করেছ তুমি। এটা কি কম কথা।

–‘এক সেকেন্ড,কিসের নাম বললেন এগুলো?খাবারের নাম তো মনে হয় না।তাহলে?

–‘বাচ্চা মানুষ বুঝবেনা।সময় হলে ক্লিয়ারলি বলব।

প্রণয়ের দিকে বা’কা চোখে তাকালো সূচনা।তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে হৃদুকার দিকে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে প্রণয় বললো-

–‘চলো আমরা ঘুরে আসি।প’চা মানুষের সাথে থাকতে হবে না।

সূচনার কোল থেকে প্রণয়ের কোলে চলে গেল হৃদুকা।সূচনা অবাক হয়ে গেলো। তাকে টা’ন দিয়ে নিজের কোলে নিয়ে নিল।বললো –

–‘ও যাবেনা।

প্রণয় আবার সূচনার কোল থেকে নিজের কোলে নিয়ে নিল।গাঢ় কণ্ঠে বললো –

–‘যাবে

–‘বললামনা যাবেনা।

তাদের টানাহেঁচড়া আর তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে বেচারি হৃদুকা কেঁদেই দিল।দুজনেই থতমত খেয়ে গেল।তাকে চুপ করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।সে চুপ হতেই আবার বাঁধলো তর্কাতর্কি।প্রণয়ের দিকে আঙুল তাক করে সূচনা বললো –

–‘আপনার জন্য কেঁদেছে ও।আপনি কাঁদিয়েছেন।

–‘তোমার সাহস তো কম না আমার দিকে আঙুল তাক করে আবার ব্লেম দিচ্ছ।তুমি কাঁদিয়েছ।

–‘আপনি কাঁদিয়েছেন।

–‘তুমি।

–‘আপনি,,

আবারো হৃদুর কান্নার আওয়াজ।প্রণয় আর সূচনা দুজন দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।হাঁটু মুড়ে তার সামনে বসে কানে ধরে দু’জন একসাথেই বলে উঠলো –

–‘সলিই পাখিই।

হৃদু আধো আধো গলায় ইংরেজিতে বললো-

–‘ইস ওকে।

তার কথা শুনে দুজনই হেসে দিল।প্রণয় তার গাল টেনে দিয়ে বললো-

–‘তুমি অনেক কিউট।কান্না করলে তো আরও কিউট লাগে।

সে কি বুঝল কে জানে।খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।সূচনার দিকে তাকিয়ে মন খা’রাপ করে বললো-

–‘মিত্তি মাম্মাম বলেতে দিদুন নাকি তোমাকে একা বের হতে দেয়না তাই তুমি লিদুকে দেখতে তার বাসায়,যাওনা।কিন্তু একন তো তোমাল বিয়ে হয়ে গেতে,একন গেলে তো দিদুন জানবে না।একন কি মিত্তি যাবেনা?

প্রণয়ের দিকে দৃষ্টি সূচনার,মৃদু হাসার চেষ্টা করলো।হৃদুর ছোট ফোলা গালে হাত রেখে বললো-

–‘মিষ্টি যাবে তার হৃদুকে দেখতে।

–‘মিষ্টি চলে গেলে আমার কি হবে পাখি?আমি বউ ছাড়া কি করে থাকব?

কথাটা ফট করে বলে উঠলো প্রণয়।তার কথা শুনে অজান্তেই লাজ রাঙা হলো সূচনা।হুট করেই খেয়াল হলো রিশার কথা৷সে তো এদিকে।চট করে মাথা তুলে প্রণয়কে নিচু হতে নিচু স্বরে বললো-

–‘আপনার আক্কেল নেই,,শা’লীর সামনে কি সব বলছেন এসব।ছোট একটা মেয়ে কি ভাববে?

প্রণয় মুখ বা’কিয়ে বললো-

–‘তোমার মতো বো’কা নাকি আমি।আমার শা’লী চকলেট পেয়ে চলে গেছে সেই কবে।এতক্ষণ কত ঝগড়া’ঝাটি করে ফেলেছ আর এখন হুশ হয়েছে।

রুমের চারিদিকে চোখ বুলালো সূচনা। রিশা নেই।অথচ তার এতক্ষণে একবার ও খেয়াল হয়নি।হৃদুর দিকে তাকাতেই দেখল সে তাকিয়ে আছে তার দিকে।সে তাকাতেই হৃদু হাসি হাসি মুখে বললো-

–‘এটা কি আমার ফুফা মিত্তি?

একপলক প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে সূচনা মাথা নাড়িয়ে বললো-

–‘হ্যা,,তোমার ফুফা।

সূচনা বলতেই প্রণয়ের গলা জড়িয়ে ধরলো হৃদু।তারপর আদুরে কণ্ঠে বললো –

–‘মিত্তির বিয়ে তো তোমাল সাতেই হয়েচে তো তুমি নিয়ে যাবে মিত্তিকে আমাদেল বাসায়।

প্রণয় আবারো তার গাল টেনে দিল।মুচকি হেসে বললো-

–‘তা ঠিক বলেছ। এই কিউট, মিষ্টি পরীটাকে আমি একটু কোলে নিতে পারি?

হৃদু আরও ভালো করে গলা জড়িয়ে ধরে প্রণয়ের কাধে মাথা রাখল।হাসিমুখে তাকে কোলে নিয়ে উঠে বেড়িয়ে গেল প্রণয়।তাদের যাওয়ার দিকে অনিমেষ তাকিয়ে রইলো সূচনা।সাথে মুচকি হাসলো।তখন প্রণয়ের বলা কথাটুকু বারবার কানে বাজছে তার-“বউ ছাড়া কি করে থাকবে সে?”
___________________________
সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু অবস্থা।হাল্কা বাতাস,কিছুটা নিরবতায়,আচ্ছন্ন প্রকৃতি।শরৎ এর আকাশের গুটি গুটি তুলোর ন্যায় মেঘগুলো মিলিয়ে গেছে।আকাশ ছেয়ে আছে গোলাপি আভায়।অদ্ভুত! আকাশে গোলাপি রঙের খেলা?আকাশ ও রঙ বেরঙের খে’লায় মত্ত।আর এদিকে ভাবনায় মত্ত সূচনা।ছাদের একপাশে রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে সে।অদূরেই তিথি,দিনা,ইরা,আফরিন,রিশা,মিহু আড্ডা দিচ্ছে।হৃদু এখনও প্রণয়ের কোলেই।তাকে কোলে নিয়ে প্রণয় ছাঁদ থেকে নিচের জিনিসগুলো দেখাচ্ছে হৃদুকে।তার একেকটা প্রশ্নের জবাব শান্ত ভাবে দিচ্ছে প্রণয়।চোখেমুখে বিরক্তির কোনো ছাপ নেই।সূচনার দৃষ্টি তার মধ্যে ই নিবদ্ধ ছিল।প্রণয় হুট করে তাকালো তার দিকে।চোখাচোখি হলো দুজনার।সূচনাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রণয় এক ভ্রু উঁচু করে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো- কী?

দুদিকে মাথা নাড়িয়ে সূচনা ও ইশারায় জবাব দিল -‘কিছু না।

প্রণয় থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো নিশ্চুপভাবে।একরাশ ভাবনা এসে হানা দিল মন মস্তিষ্কে।কিছু মানুষের জীবন কত এলোমেলো।জীবনের সব হিসাবের মেলবন্ধন হয়না।গণিতে যেমন এত বড় একটা অঙ্ক করার পরে শেষে যেয়ে উত্তর আসে শূন্য।ঠিক তেমনই কিছু মানুষের জীবন ও লম্বা এক অঙ্কের মতে যার শেষে যেয়ে উত্তর আসে শূন্য।লিখাতে হয় অপ্রাপ্তির খাতায় নাম।এই যে হুট করে একজন এলো তার জীবনে, অনুভূতির জোগান দিল,বুঝতে শেখালো তারপর ভেঙেচুরে দিয়ে হারিয়ে গেল।ইরাদ নামে কেউ তাকে ভালোবাসলো কিন্তু সেই মানুষটার প্রতি তার অনুভূতি জাগেনি কখনো।উল্টো তার অনুভূতি জানার পরে তার থেকে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখেছে।ক্লাস এইটের সেই কিশোরী মেয়েটা আলাভোলা মনে একবার জিজ্ঞেস করেছিলো-

–‘আপনি আমাকে বেলী রাণী কেন ডা’কেন ইরাদ ভাই?

সেদিন সেই মানুষটা হাসি টেনে সহসা উত্তর দিয়েছিল-

–‘বেলী আমার প্রিয় ফুল আর তুই আমার প্রিয় মানুষ তাই তোকে বেলী রাণী বলে ডাকি।

সেদিন তার কথার মানে বুঝতে না পারলেও বয়স আর সময়ের সাথে বুঝতে আর বেগ পেতে হয়নি।তারপর টানলো দূরত্ব।তাদের বাড়িতে একদিন হুট করেই আগমন ঘটলো তার। বিধ্বস্ত অবস্থায়।তার হাত ধরে ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে ব্যক্ত করলো তার অনুভূতি। সন্দেহ থেকে নিশ্চিত হলো সূচনা।দূরত্বের পরিমান বেড়ে হলো দ্বিগুণ। ফিরিয়ে দিল তাকে। স্পষ্ট বাক্যে ব্যক্ত করলো, ক্লিয়ার করল সব।কিন্তু সেই মানুষটা পিছু হাটে নি।মনের এক কোণে তার জন্য অনুভূতি নিয়ে চলছিল সে। মনের এক কোনে সুপ্ত আশা ছিল তাকে পাওয়ার।তারপর ঘটলো প্রণয় নামের সম্পূর্ণ অচেনা একজনের।তার আশার ইতি ঘটলো।নতুন #প্রণয়ের_সূচনা ঘটাতে হয়তো।যার সাথে জুড়ে গেল।হয়তো আজীবনের জন্য?জানে না সে।তবে এই সম্পর্কের বিচ্ছেদ ও চায়না সে যদি অতীত এর কারণ হয়।কারণ সেই অতীত কে তো কবেই পায়ে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে এসেছে।সেই অতীত যেন না আসে সামনে।না ফেলে প্রভাব তাদের সম্পর্কে।সব যেন স্বাভাবিক হ’য়ে যায়।

–‘আযান পড়ে গেছে।নিচে আসো তাড়াতাড়ি।

ভাবনায় মত্ত অবস্থার ইতি হলো।আচানাক কণ্ঠে এবার আর চম’কালো না সে।শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো –

–‘চলুন।

পা বাড়ালো দুজন একসাথে।তবে জীবন চলার পথেও কি দু জোড়া পা একসাথে মিলবে?নাকি আলাদা হবে পথ?

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_১২
___________________________
সন্ধ্যা সাতটা।প্রণয়,সূচনা,মিহু,ইরা,দিনা,রিশা,তিথি সবাই বাইরে এসেছে। হৃদু ও এসেছে প্রণয়ের সাথে।মূলত সে প্রণয়কে ছাড়বেই না তাই তাকে সাথে করে নিয়ে এসেছে।ইরাদ ও আছে সাথে।তবে নিজ ইচ্ছায় না।সবার জোর জবরদস্তিতেই এসেছে।বিশেষ করে প্রণয়ের।না হলে কে চায় তার এত বছরের ভালোবাসাকে নিজের চোখের সামনে তার বরের সাথে দেখতে।পু’ড়ে যায় বু’কের ভেতর।নি’দারুন য*ন্ত্র*ণা!সূচনা নিজেও চায়নি ইরাদ আসুক।কারণ এই অনুভূতি সম্পর্কে তো সে অবগত।কিন্তু সে তো বলতে পারে না আর সবার সামনে।আপাদত রেস্টুরেন্টে বসে আছে সবাই খাবারের অপেক্ষায়।মিসেস দিশার কড়া আদেশ “ভারি খাবার খাওয়া,যাবেনা।হালকা পাতলা খাবে। মেয়ের জামাই প্রথমবার বাড়িতে এসেছে একটু খা’ক বেশি খা’ক বাসায়ই খে’তে হবে।” তাই শুধু চিকেন স্যুপ,চিকেন ললিপপ আর সাথে কোল্ড ড্রিংক।আর হৃদুর জন্য চিকেন ফ্রাই আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।তাদের খাবার আসতে আসতে তন্ময় আর জাওয়াদ এসে হাজির।প্রণয় ফোন দিয়ে বলেছে তাদের।সবাই যাবে তাহলে তারা দুজন কেন যাবেনা।এমনিতেও তন্ময় তার এসিসট্যান্ট কম কাছের মানুষ।আর জাওয়াদ দিনার হবু বর মানে তার হবু বোন জামাই।তাই বাদ দেয়নি তাদের।শুরুতে দু’জনের একজনও আসতে রাজি হচ্ছিল না।কিন্তু প্রণয়ের কথার ওপর আর কিছু বলতে পারে নি।তাদের আসার প্রায় দশ মিনিটের মধ্যে ই আসলো তাদের খাবার।একপাশে তন্ময়,ইরাদ,তিথি,মিহু,জাওয়াদ আর দিনা।অন্যপাশে মানে তাদের সম্মুখেই ইরা,রিশা,সূচনা,প্রণয় আর সূচনা, প্রণয়ের মধ্যিখানে বসেছে হৃদু।সবাই খাওয়া শুরু করলেও খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে দিনা আর সূচনা।দিনার না খাওয়ার কারণটা জানে জাওয়াদ।তাকে দেখলে যে মেয়েটার ল’জ্জা বে’ড়ে যায় কয়েকগুণ।তার চোখে চোখ রেখে কথা বলতেও যেন রাজ্যের লজ্জা এসে হা*না দেয় মুখশ্রীতে।মাঝে মাঝে ভেবে পায়না সে “এত লজ্জা কেন তার প্রেয়সীর? বিয়ের পর কি হবে তাহলে?তাকে তো বোধহয় হালকা ছুয়ে দিলেই গ’লে যাবে মোমের ন্যায়।”
ভাবতেই হাসি পায় তার।অন্যদিকে সূচনাকে চামচ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দেখে প্রণয় নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো-

–‘খাচ্ছোনা কেন?কি হয়েছে?

প্রণয়ের কণ্ঠ শুনে তার দিকে আড়চোখে তাকালো সূচনা।তার দিকেই তাকিয়ে আছে প্রণয় হয়তো জবাবের আশায়।সূচনা নিচু স্বরে ই জবাব দিলো –

–‘ কিছুনা এমনি।খাচ্ছি।

কথাটুকু বলে এক চামচ স্যুপ মুখে নিল সূচনা।প্রণয় নিজে খাচ্ছে সাথে হৃদুকেও খায়িয়ে দিচ্ছে। সূচনা খাওয়ার ফাঁ’কে একপলক তাকালো তাদের দিকে।সুন্দর লাগছে এই দৃশ্য।দেখে মনে হবেনা তাদের পরিচয় ঘন্টা খানিকের মাত্র।কত সুন্দর করে সামলাচ্ছে প্রণয় তাকে।খাওয়ার সময়ে হৃদুর মুখের একপাশে মেয়োনেজ লেগে যায়।একসাথেই চোখে পড়ে দুজনের।দুজন ই উদ্বত হয় তা মু’ছে দিতে।যার দরুন আঙুলে আঙুলে হয় ক্ষণিকের অনাকাঙ্ক্ষিত এক স্পর্শ।প্রথম স্পর্শ।চ’ম’কে যায় দুজনেই।নিবদ্ধ হয় দুজোড়া চোখ।তবে ক্ষণিকের জন্য।সেই দৃষ্টি যে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে।সূচনা মাথা নিচু করে নিল।ল’জ্জা লাগছে তার।শুধু এটুকু স্পর্শে!প্রণয় স্বাভাবিক ভাবেই তার কাজে ব্যস্ত।মিহু, দিনা,তিথি,ইরা চারজনই মুখ টি’পে হাসছে।এই প্রথম ইরাকে হাসতে দেখা গেল।নজরে পড়ল সূচনার।কিছু বললো না আর।তন্ময়ের চোখেও পড়েছে ব্যাপারটা সাথে সূচনার ভাব ভঙ্গি ও।তাই সে তিথির দিকে তাকিয়ে চি*বিয়ে চি*বিয়ে বললো-

–‘তিথি এত হাসা ভালোনা,, দেখা যাবে হাসার জন্য দাঁত ই থাকবেনা।

তন্ময়ের কথা শুনে ফুসে উঠলো মিহু।সেও দাঁ’তে দাঁ’ত চে*পে বললো –

–‘তিথি আমাদের না হয় দাঁত থাকবেনা কারো যদি বলার জন্য মুখই না থাকে তখন?

পাল্টা জবাব তন্ময়ের –

–‘তিথি দেখ আমার মুখ আমি সামলে নিব।অত ফেল*না,কমদামি মুখ না আমার, এসব মোয়া টোয়ার জন্য আমি আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করি না।

–‘তিথি বল এসব তেলময়ের কথা শোনে না কেউ,,তাই কথা বলবেই কেন? ষু*হ ষু*হ হুঁশ।

–‘তিথি বলে দাও বেশি কথা বললে মোয়াকে মোয়ার মতে চি*বিয়ে খে*য়ে ফেলব।

–‘তিথি তাকেও বলে দেয় তেলময় কে তেলে ফ্রাই করে চি*লি সস দিয়ে খেয়ে ফে*লব একদম।

তন্ময় আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিথি ধমকের স্বরে বললো-

–‘উফফ থামুন তো , এই মিহুপু থামো। ঝ*গড়া করবেন করুন আমাকে টানা হচ্ছে কেন? আমি নির্দোষ।

এতক্ষণ সবাই অবাক চোখে একবার মিহুকে একবার তন্ময়কে দেখছিল।এবার মুখ খুললো প্রণয়। বললো-

–‘আজকের জন্য ঝ*গড়া এখানেই সমাপ্ত।বাকি পর্ব কালকে টেলিকাস্ট হবে।

সূচনা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো প্রণয়ের দিকে।বললো-.

–‘বাকি পর্ব কালকে মানে? আপনার মনে হয় মজা লাগছিল এতক্ষণ।

প্রণয় বা’কা হেসে নিচু স্বরে বললো-

–‘হ্যা ভালোই লাগছিল।আমার বউ তো আর ঝগ*ড়ুটে না যে তার সাথে ঝ*গড়া করব তাই এখন অন্যদেরটাই তো দেখতে হবে।কি করার।

শেষর কথা গুলো উদাস কণ্ঠে একেবারে নিচু স্বরে বললো প্রণয়।সূচনা গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিকে,,যেন কিছুই বোধগম্য হয়নি।প্রণয় হতাশ চোখে তাকালো।এমন আলাভোলা মেয়ে তার বউ,, ভাবা যায়।
.
.
রেস্টুরেন্ট থেকে সবাই বাসায় এসেছে ঘন্টাখানেক।ইরাদ পুরোটা সময় ছিল একেবারে নিশ্চুপ। একটা টু শব্দ ও করেনি।কেউ কিছু বললে শুধু হু হা করেছে।রেস্টুরেন্ট থেকে এসেই রুমে ঢুকেছে।ড্রয়িংরুমে ফ্লোরে ছোটরা সবাই গোল হয়ে বসেছিল।মিসেস দিশা, আরহাম সাহেব, মিসেস আফরোজা সোফায় বসে কথা বলছিলেন।তখনই আগমন ঘটলো ইরাদের।ইরাদ কে আড্ডায় ডা’কা হয়েছে কয়েকবার কিন্তু আসেনি সে,শরীর খা’রাপের বাহানা দিয়ে। ইরাদ মিসেস আফরোজার সামনে যেয়ে নিচু স্বরে বললো-

–‘আম্মু আমার একটু যেতে হবে।কালকে ভার্সিটি তে একটা ইম্পরট্যান্ট এক্সাম আছে। বাসায় যেয়ে পড়তে হবে।

মিসেস আফরোজার কপালে ভাজ পড়লো। চিন্তিত স্বরে বললো-

–‘রাত নয়টা বেজে গেছে এখন কোথায় যাবি বাবা,,এখন যেতে হবেনা। সকালে উঠে চলে যাব।

–‘বললাম তো আম্মু ইম্পর্ট্যান্ট এক্সাম।বাসায় যেয়ে এখন পরতে হবে।

–‘কিন্তু,,

–‘আম্মু তুমি চিন্তা করোনা।

–‘নিহাদকে নিয়ে যা তাহলে

–‘আমি যেতে পারব একা। কিছু হবেনা।
.
.
নিহাদ প্রণয় আসতে চেয়েছিল এমনকি তন্ময়কে সাথে পাঠানোর কথাও বলেছে প্রণয় কিন্তু ইরাদ রাজি হয়নি কিছুতেই।কোনোরকম জোর করে দু’টো খায়ি*য়ে দিয়েছ।সে কি করবে এখানে থাকাটা যে গার জন্য সম্ভব না।এই মুহূর্তে একা থাকতে পারলে হয়গো শান্তি লাগবে তাই পরীক্ষার বাহানা দেখিয়ে চলে এসেছে।ইরাদ বের হবার পর থেকেই হা হু*তাশ করছিলেন মিসেস আফরোজা। মিসেস দিশা অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে দিয়ে এসেছে রুমে।এখন সাড়ে এগারোটা বাজে প্রায়।ইরাদ ফোন দিয়েছে।সে পৌছে গেছে বাসায়।স্বস্তি পেয়েছেন মিসেস আফরোজা।এখন সবাই খে*য়ে রুমে চলে গেছে।সকালেই চলে যাবে সূচনারা।মিহু, ইরা,তিথি,দিনা,রিশা সবাই এক রুমেই।কেউ কাউকে ছাড়া শুবেনা এমন অবস্থা।তারওপর এখন গরমের পরিমানটা ও কমে এসেছে একটু।তাই এক রুমে শুতে খুব একটা সমস্যা হবে না। সূচনা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে আসতেই দেখল বিছানার এক পাশে হৃদু আর একপাশে প্রণয়। দুজনই গালে হাত দিয়ে বসে আছে।সূচনা কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কি হয়েছে?

প্রণয় কিছু বললো না।হৃদুই তার অস্ফুট ভাষায় বললো-

–‘মিত্তি আজকে লিদু তার মিত্তি আর ফুপার ছাতে ঘুমাবে।মাম্মাকে কিতু বলো মাম্মা আমাকে নিয়ে যেতে আথতে।আমি দাবনা।

সূচনা একপলক তাকালো প্রণয়ের দিকে।তারপর কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই রুমে আফরিনের প্রবেশ।আফরিন নিয়ে যেতে চাইলেও পারেনি।হৃদু যাবেনা তাই প্রণয় আর সূচনা ও রেখে দিয়েছে।আফরিন চলে গেলে প্রণয় দরজা লক করে সূচনাকে বললো-

–‘তুমি ওকে নিয়ে বিছানায় ঘুমাও আর আমি সোফাতে ঘুমাই।

হৃদু বিছানায় বসেছিল আর সূচনা বিছানার পাশেই দাড়িয়ে ছিল।তখনই প্রণয় উক্ত কথাটুকু বললো।তার সোফায় শোয়া নিয়ে সূচনা ঘোর আপত্তি জানাতে নিবে তার আগেই। হৃদু হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো-

–‘মিত্তি তুমি একানে আর ফুপা একানে ছুবে।আর লিদু মাঝখানে।

প্রণয় সাথে সাথে ই দৃষ্টি তাক করলো সূচনার পানে।সূচনা ও তার দিকেই তাকিয়ে ছিল।প্রণয়কে অবাক করে দিয়ে সূচনা মৃদু স্বরে বললো-

–‘এক বিছানা তেই তো ঘুমাতে হবে তাহলে একদিনের জন্য কেন সোফায় ঘুমাবেন।বিছানা তেই ঘুমাবেন।

সূচনার কথা মনে মনে হাসলো প্রণয়।তবে মুখে তার ছাপ পড়তে দিলনা।চুপচাপ এসে শুয়ে পড়ল বিছানার ডান পাশে, তার দেখা দেখি সূচনা ও শুয়ে পড়ল লাইট অফ করে।

#চলবে