প্রণয়ের সূচনা পর্ব-৭+৮+৯

0
231

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_০৭
___________________________
সকালের স্নিগ্ধ প্রহর। সূর্যের সোনালি আলোয় আচ্ছাদিত প্রকৃতির মায়াবী মুখশ্রী।ফজরের নামাজ পড়ে চা নিয়ে ছাদে এসেছে সূচনা।চেয়ার টেনে ছাদের মধ্যিখানে বসে পড়লো।মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে পাখির দল, কি মিষ্টিমধুর তাদের কলরব ধ্বনি।বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে সূচনার খোলা চুলগুলো উড়ছে।প্রাণ ভরে লম্বা করে শ্বাস নিল কয়েকটা সে।এখন ভালো লাগছে,শান্তি লাগছে একটু।মিনিট তিরিশেক সেভাবেই বসে রইলো।সূর্যের আলোর প্রখরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে আস্তে আস্তে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো সূচনা।ছাঁদ থেকে নেমে আসলো।বাসায় আসতেই দেখা হলো মিসেস দিশার সাথে।সূচনাকে দেখে বললেন-

–‘ আজকে তাড়াতাড়ি গোসল করে সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে নিবি।

সূচনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘এত সকালে কেন গোসল করবো আম্মু? আর তৈরী হব কেন?কেউ আসবে?

–‘একটু পরে গোসল করে তৈরি হয়ে যাবি।কে আসবে সেটা আসলেই দেখিস।

–‘কিন্তু আম্মু।

–‘বললাম তো যা আমি আসছি।অনেক কাজ আছে।

আর কিছু বললো না সূচনা।রুমে এসে থম মে’রে বসে রইলো।কে আসবে যার জন্য এত তাড়াহুড়ো?এত আয়োজন? যার জন্য দুই দিন আগেই তৈরি হয়ে থাকতে হবে?হুহ!নাস্তা করে ড্রয়িং রুমে টিভি দেখতে বসতেই মিসেস দিশা গর্জে উঠলেন যেন।হাতে খুন্তি নিয়ে তেড়ে এসে বললেন-

–‘তোকে না বললাম তাড়াতাড়ি গোসল করতে, রেডি হতে,আবার এটা নিয়ে পড়েছিস কেন?ওনারা দুপুরে খেয়েই রওনা দিবেন।যাহ তাড়াতাড়ি।

মায়ের এমন আচরণে সূচনা সেকেন্ডের জন্য ‘থ’ হয়ে গেল।কিন্তু কিছু বলার সাহস পেলনা।তড়িঘড়ি করে উঠে চলে আসলো সেখান থেকে। বেচারি তারাহুরো করতে যেয়ে টিভি অফ করতে ও ভুলে গেছে।রুমে এসে কাবার্ড থেকে নীল রঙের একটা থ্রি পিছ বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢু’কলো।শাওয়ার নিয়ে এসে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিয়ে,,এক পাশে সিঁথি করে খোলা রেখে দিল চুল।চোখে হালকা কাজল,আর ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক,কানে ছোট ছোট দুল।ব্যস!আয়নায় আরেকবার দেখলো নিজেকে।অতঃপর রুম ত্যাগ করে রান্নাঘরে গেল।মিসেস দিশা সূচনার দিকে তাকিয়ে বললেন-

–‘মাশা আল্লাহ, তোকে তো নীল রঙে অনেক সুন্দর লাগছে।

বিনিময়ে মুচকি হাসলো সূচনা।মিসেস দিশার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘এত খাবার কেন?কার জন্য রান্না করছো?

–‘বললাম না মেহমান আসবে।

–‘কে আসবে?

–‘যখন আসবে তখন দেখিস।

–‘কিন্তু,,

মিসেস দিশা ধরা গলায় বললেন-

–‘তুই রুমে যা।কাজ করছি আমি।

–‘এমন করছো কেন?আমি থাকলে কি সমস্যা? আমি তোমার হেল্প করি একটু।

–‘তুই রুমে যা।আমি করছি।হয়ে গেছে প্রায়।

–‘কিন্তু আম্মু।

–‘রুমে যা সূচি।কথা বাড়াসনা তো।

মন খা’রাপ করে সূচনা রুমে চলে আসলো আর মিসেস দিশা দ্তাকিয়ে রইলেন তার যাওয়ার দিকে।সে যেতেই আঁচলে মুখ চেপে কে’দে ফেললেন।
.
.
মিসেস দিশা সূচনাকে রুম থেকে বেরোতে দেয়নি আর।এমনকি দুপুরের খাবার টাও রুমে এসে নিজ হাতে খায়িয়ে দিয়ে গেছেন।প্রায় এক ঘন্টা পার হবার পরও মিসেস দিশা আর রুমে আসলেন না।এদিকে কে আসবে তা জানার জন্য সূচনার মন আ’কুপাকু করছে।এবার আর বসে না থেকে রুমের দরজা খুলে পা টিপে টিপে বের হলো রুম থেকে।ড্রয়িং রুম থেকে কথার আওয়াজ আসছে।মিসেস দিশা হেসে হেসে কথা বলছেন কারো সাথে। সূচনা মুখ বা’কিয়ে বিড়বিড় করে বললো-

–‘আমাকে একা রুমে রেখে আপনি আড্ডা দিচ্ছেন মিসেস দিশেহারা। নট ফেয়ার।

মাথার ঘোমটা টা ভালো মতো টেনে দিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়ালো সূচনা।ড্রয়িং রুমে যেতেই স্তব্ধ হয়ে গেল সে।কি দেখছে সে?দিনের বেলা তেও কি সপ্ন দেখছে নাকি আজকাল?চোখ ডলে আবার তাকালো সামনে। নাহ ঠিকই তো দেখছে।এক পাশের সোফায় প্রণয়, তার পাশে তার তিনবোন-ইরা,তিথি আর দিনা।আর তাদের অপর পাশের সোফায় বসে আছে প্রণয় ও ইরার মামা-মামি আর তিথি এবং দিনার বাবা-মা ইসহাক সাহেব আর মিসেস.আফিয়া।

–‘কেমন আছো মা?

ভাবনার মাঝেই আচমকা মায়া মিশ্রিত এক কণ্ঠ। সূচনা হকচকিয়ে গেল।চকিত কণ্ঠে ই বললো-

–‘আব,,বব,,আসসালামু আলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন?

মিসেস আফিয়া হেসে জবাব দিলেন-

–‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম।আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?

–‘জ্বি আলহামদুলিল্লাহ,, ভালো আছি।

মিসেস আফিয়া হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন-

–‘এদিকে এসে বসো তো একটু।

সূচনা একবার তার বাবা -মায়ের দিকে তাকিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো। কাচুমাচু মুখ করে বসে পড়লো তার পাশে।

মিসেস আফিয়া সূচনার মাথায় হাত রেখে বললেন-

–‘ভয় পাচ্ছ?নাকি নার্ভাস ফিল করছো?শোন একদম ভয় পাবে না।এখন তো আমরাও তোমার পরিবার,তোমার আপনজন।আর আপনজনদের সামনে আবার কিসের ভয়,কিসের সংকোচ।

তার কথার পিঠে ইসহাক সাহেব আরহাম সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন-

–‘তাহলে শুভ কাজ সারতে আর দেরি না করি বেয়াই সাহেব। কি বলেন?

–‘হ্যা,ঠিক বলেছেন।আর দেরি করা ঠিক হবে না।

সূচনা অবাক হয়ে তাকালো তার বাবার দিকে।

–‘লেট লতিফা এসে গেছে।

তিথির কথা শুনে সূচনা সামনে তাকাতেই দেখল মিহু কে।মিহু এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে তিথি, ইরাদের পাশে বসলো।অবাক হলো সূচনা।মিহু আগে থেকে তাদের চেনে?

–‘সূচনাকে রুমে নিয়ে যা মিহু।

মিহুর উদ্দেশ্যে কথাটুকু বললেন মিসেস দিশা।

–‘ঠিক আছে আন্টি।

সূচনাকে নিয়ে মিহু ড্রয়িংরুম থেকে তার রুমে চলে আসলো।রুমে এসেই সূচনা মিহুর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লো-

–‘তুই ওনাদের সাথে আগে থেকেই পরিচিত মিহু?

মিহু বিছানায় বসে গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো-

–‘আশ্চর্য ,, আমার ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় থাকবে না।

সূচনা চকিত নজরে তাকালো মিহুর দিকে। বিস্ময়াহত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

–‘তোর ভাই মানে?তোর তো একটাই ভাই তিয়াস ভাইয়া।তাহলে?

–‘প্রণয় ভাইয়া আমার কাজিন। আমার আম্মু আর প্রণয় ভাইয়ার আম্মু চাচাতো বোন ছিলেন।

–‘আগে তো কখনো বলিসনি?

–‘আহা!আমি জানতাম নাকি যে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড একসময় আমার ভাবি হয়ে যাবে।

মিহুর কথা শুনে সূচনা তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।তা দেখে মিহু বললো-

–‘এভাবে তাকাস না তো।অত সময় নেই।তাড়াতাড়ি তৈরী হও জান্স।মিস থেকে মিসেস হয়ে যাবে আজকে।হিহিহি।

মিহুর কথার প্রতিত্তোর করলোনা সূচনা।বিছানায় বসে রইলো চুপ করে।মিহু ও বসলো তার পাশে।তার কাধে হাত রেখে বললো-

–‘মন খারা’প করছিস?আগে বলিনি এজন্য।

–‘না,,তেমন কিছু না।

–‘তাহলে?

–‘প্রণয় কি রাজি আমার দেয়া শর্তে?

–‘গা’ধি একটা। রাজি না হলে কি আজকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

–‘তোর মনে হয় না অনেক বেশি তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে?

–‘তুই কি বিয়েতে রাজি না?

–‘হ্যা রাজি কিন্তু,, তাই বলে আজকেই?বলা নেই,কওয়া নেই।কেউ জানালো ও না আমাকে।এত তাড়াহুরো।

–‘তাড়াহুড়ো কিন্তু সব তোর ইচ্ছে মতোই হচ্ছে।

মিসেস দিশার কণ্ঠ পেয়ে দু’জন ই তাকালো দরজার দিকে।মিসেস দিশা এসে সূচনার আরেক পাশে বসলেন আর বললেন-

–‘আমি জানি একটু বেশি ই তাড়াহুড়ো তে সব হচ্ছে কিন্তু তুই যেমনটা বলেছিস তারা তাতেই রাজি হয়েছে।আর কিছু বলিসনা।একটু পর কাজি আসবে।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেয়।

সূচনা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো তার মায়ের দিকে।কান্নামাখা কণ্ঠে বললো –

–‘আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকব আম্মু?আর তুমি, তুমি আমাকে ছাড়া একা থাকতে পারবে?

মিসেস দিশা শক্ত কণ্ঠে বললেন-

–‘বিয়ে একটা সামাজিক প্রথা।প্রতিটা মেয়ের জীবনে এই আবেগঘন মূহুর্ত আসবে।নিজের চেনা পরিবেশ, চেনা মানুষজন সবকিছু ছেড়ে অন্য এক পরিবারে যেতে হয়।অচেনা পরিবেশ, অপরিচিত মানুষের মুখ,ভিন্ন রকমের সব পরিস্থিতি থাকে সেখানে।কিন্তু মানিয়ে নিতে হয়।একটা সময় এসে সে তার সেই নতুন পরিবার কেই নিজের জগৎ বানিয়ে নেয়।তিতা হলেও এটাই সত্যি যে বিয়ের পর একটা মেয়ের তার বাবার বাড়ি থেকে শশুর বাড়ির লোকজনের প্রতিই বেশি টান থাকে।শুরুতে হয়তো কষ্ট হবে কিন্তু আমার বিশ্বাস আমার সূচি ঠিকই মানিয়ে নিবে।সামলে নিবে সবটা।আমার বিশ্বাস রাখবি না?

সূচনা কান্নাভেজা মুখখাণা ওপর নিচ করলো।মানে হ্যা সে পারবে।মেয়ের হাত ধরে বললেন-

–‘এখন কান্নাকাটি বন্ধ কর।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেয়।

মিসেস দিশা উঠে চলে আসলেন সূচনার রুম থেকে।তার মনের যে বেহা’ল দশা।মেয়েকে তো ঠিকই বলে আসলেন কিন্তু সে কিভাবে থাকবে তাকে ছাড়া।

মিসেস দিশা যেতেই সূচনার রুমে একে একে প্রবেশ করলো ইরা,তিথি আর দিনা।ইরাকে আগে দেখলেও তিথি আর দিনাকে আজকেই প্রথম দেখেছে সূচনা।মিহু সূচনার দিকে তাকিয়ে বললো-

–‘সূচি এই তোর তিন ননদ।ইরাকে তো সেদিন দেখেছিস ই।ও তিথি আর ওইটা দিনাপু।প্রণয় ভাইয়ার মামাতো বোন এরা।দিনাপু এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে আর তিথি পিচ্চি এস.এস.সি পরীক্ষার্থী।আর আমি মিহু এইচএসসি দিয়ে আপাদত বে’কার।হিহিহি।

মিহুর কথা শুনে হাসলো সূচনা।এর মাঝেই তিথি ফুঁসে উঠলো।কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে বললো-

–‘এই মিহুপি তুমি আবারো আমাকে পিচ্চি বললে কেন?

–‘তো পিচ্চি কে পিচ্চি বলবনা।

–‘আমি মোটেও পিচ্চি না। আর দুই বছর পার হলেই আঠারো হয়ে যাবে।

–‘হ্যা তো যখন হবে তখন বলব বুড়ি এখন তো পিচ্চি ই বলব।

তিথি আর কিছু বলার আগেই থামিয়ে দিল দিনা।বললো-

–‘তোরা থাম ভাই।পরে ঝ’গড়া করিস।দুইটা একসাথে হলেই আদা জল খেয়ে ঝ’গড়া করতে নেমে যাস।হাতে সময় কম।মিহু বাচ্চাদের মতো ঝ’গড়া কেন করছিস?ও পিচ্চি সেটা জাতি জানে তোর মাইক নিয়ে বলতে হবে না।

দিনার কথা শুনে ইরা আর মিহু মুখ টিপে হাসতে লাগল।মিহু বললো-

–‘হ্যা আপি ঠিকই বলেছ।সূচি আজকে আমি সাজিয়ে দিব তোকে ঠিক যেমনটা বলেছিলি আমাকে।
.
.
কাজি আসতে আসতে মাগরিবের পরে আসলো।এসেই তাড়া দিলেন কনেকে নিয়ে আসতে।বর বেশে মেরুন রঙা শেরওয়ানি পড়ে বসে আছে প্রণয়।মিহু যেয়ে নিয়ে আসলো সূচনাকে।চুড়ির রিনঝিন আওয়াজে সামনে তাকালো প্রণয়।কিন্তু তার সামনে বড় করে টানানো একটা লাল পর্দা।তই সামনে তাকালেও কিছু দেখতে পারলোনা।

___________________________
বিয়ের পর্ব শেষ হয়ে গেছে। বহু কাঙ্খিত সেই শব্দ কবুল বলার মাধ্যমে। দু’জন মানুষ জুড়ে গেছে কোনো এক অদৃশ্য বন্ধনে।মাঝের পর্দা সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সূচনাকে মিহু প্রণয়ের পাশে বসিয়ে দিয়েছে মাত্রই।ঘাড় ঘুড়িয়ে সূচনার দিকে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো প্রণয়।মেরুন রঙের কাতান শাড়ি,তাতে গোল্ডেন রঙের জরির কাজ করা।সাথে ম্যাচিং করে মেরুন রঙের হিজাব আর তার ওপর মাথায় গোল্ডেন রঙের চুনড়ি।গহনার মধ্যে গলায় সীতা হার, মাথায় হিজাবের ওপর টায়রা, আংটি আর দু-হাত ভর্তি চুড়ি।মিহুর কাছ থেকে জেনে সব তার পছন্দ অনুযায়ী কিনেছে প্রণয়।অবশ্য এতআকম সময়ে সবকিছু ম্যানেজ করতে বেগ পেতে হয়েছে তাকে।কিন্তু সূচনাকে এখন এ রুপে দেখে তার হার্টবিট মিস হলো কয়েকটা।প্রণয়কে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইরা,তিথি দিনা মুখ চেপে হাসছে।সূচনা মাথা নিচু করে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে প্রণয়ের পাশে। প্রণয় তার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো-

–‘কেমন লাগলো শক মিস.রঙ্গন?তুমি কেমন বলতো একটা মানুষ স্বপরিবারে তোমার ড্রয়িংরুমে বসে আছে আর তুমি কিনা ভাবছ তোমার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। এটা কিছু হলো মিস.রঙ্গন।

প্রণয়ের কথা শুনে চোখ-মুখ খি’চে বন্ধ করে নিল সূচনা।তার বারংবার এই সম্বোধন যে অন্যরকম কিছু অনুভব করায়।অদ্ভুত কিছু আছে তাতে।

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_০৮
__________________________
অবশেষে আগমন সেই আবেগঘন মুহূর্তের যখন একটা মেয়ের বিচ্ছেদ হয় তার পরিবারের সাথে। সেই চিরচেনা পরিবার,যেখানে তার জন্ম, তার শৈশব, তার বড় হওয়ার মুহূর্ত,যেখানে জুড়ে আছে অজস্র স্মৃতি। সেই পরিবারকে ছেড়ে যাওয়ার মূহুর্ত।বিদায়ের মূহুর্ত।সবার মুখশ্রী তেই মন খা’রাপের ছাপ। মেয়েকে বু’কে নিয়ে শব্দহীন কান্না মিসেস দিশার।তাদের থেকে একটু দূরে চোখ-মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছেন আরহাম সাহেব।পুরুষ মানুষের কি অত সহজে কান্না করা মানায়?মিসেস দিশাকে জড়িয়ে ধরে ই সূচনা ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বললো –

–‘আম্মু আমি আজকে যাবনা।আজকে থাকতে দাও। কালকে চলে যাব।প্লিজ!

কান্নার মাঝেও মুচকি হাসলেন মিসেস দিশা। বললেন-

–‘পা*গলি মেয়ে।এমন হয় না।বিয়ে হয়ে গেছে এখন তো যেতে হবেই।কালকে তো আসবি আবার।

আরহাম সাহেব এগিয়ে এসে প্রণয়ের হাত ধরে বললেন –

–‘আমার আর ওর মা’য়ের কলি’জার টুক’রা, আমাদের একমাত্র প্রাপ্তি তোমার হাতে তুলে দিলাম।আগলে রেখো।

বিনিময়ে মুচকি হাসলো প্রণয়।সূচনার কাছে যেয়ে তার মাথায় হাত রেখে বললেন-

–‘আমি সেই দিনের অপেক্ষায় থাকব যেদিন তুই নিজে এসে আমাকে বলবি যে “বাবা আমার জন্য নেয়া তোমার আরেকটা বেস্ট ডিসিশন ছিল এটা।” মা’কে ছেড়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো সে।

ইসহাক সাহেব বললেন –

–‘আপনাদের মতো করে হয়তো রাখতে পারবনা বা ততটা আদর দিতে পারবনা কিন্তু তার চেয়ে কম ও হবেনা।আপনি চিন্তা করবেন না,আমাদের আরেক মেয়ে ও।এবার তাহলে আমরা আসি।

আরহাম সাহেব মাথা নাড়িয়ে সায় দিলেন।
.
.
প্রণয়দের বাসায় আসতে আসতে প্রায় তিন ঘন্টার মতো লেগে গেছে।রওনা হয়েছিল আটটায় আর এখন দশটা।রাস্তায় প্রচুর জ্যামের কারণেই এই দশা।প্রণয়দের বাসায় তেমন কোনো মানুষই নেই।বাসায় এসে মিনিট দশেকের মতো বসেছিল ড্রয়িং রুমে তারপর মিসেস আফিয়া সূচনাকে প্রণয়ের রুমে পাঠিয়ে দিয়েছেন।মিহু,ইরা,দিনা আর তিথি সূচনাকে রুমে দিয়ে চলে গেছে।মিহুও এসেছে সাথে।রুমে আসার আগে প্রণয়কে দেখেছিল তন্ময়ের সাথে কথা বলতে।কিন্তু তন্ময় তো তাদের বাসায় যায় নি।রুমের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে আছে সূচনা।চোখ ঘুরিয়ে দেখতে থাকে রুমটা।বেডের এক পাশে ছোট একটা টেবিল,আর এক পাশে কনসোল টেবিল যার ওপর দুইটা কাচের জারের মধ্যে মানি প্ল্যান্ট রাখা,ছোট শু র‍্যাক, মেহগনি উডেন স্লাইডিং ডোর আলমারি।অন্যপাশে একটা পড়ার টেবিল, তার পাশে লম্বা মতো একটা সেলফ, যাতে অনেকগুলো বই রাখা।টেবিলটা সূচনার কাছে নতুন ঠেকলো,তবে কি তার জন্য ই আনা?

–‘রুম পছন্দ হয়েছে?

আচানক কারো কণ্ঠ পেয়ে কেঁ’পে উঠল সূচনা।তা দেখে প্রণয় বললো –

–‘আরে রিল্যাক্স আমি।অন্য কেউ না।

পেছনে ঘুরে জোর পূর্বক হাসলো সূচনা।প্রণয় আবার জিজ্ঞেস করলো-

–‘বললে না তো?

সূচনা মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো –

–‘জ্বি হ’য়েছে।

–‘পছন্দ না হলেও সমস্যা নেই, তুমি নিজের মতো করে সাজিয়ে নিও।

জবাবে কিছু না বলে স্বল্প পরিসরে হাসলো সূচনা।

–‘ এবার এসব চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও।কাবার্ডে শাড়ি,থ্রি-পিস, টি-শার্ট,টপস সব আছে।যেটা তে কম্ফর্ট ফিল করো সেটাই পরো।ইট’স অল ইওরস।আমি অন্য রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসছি।

প্রণয়ের স্বাভাবিক কণ্ঠে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে
জামা-কাপড় নিয়ে রুম থেকে চলে গেল। সূচনা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো ড্রেসিং টেবিলের দিকে।গহনা, হিজাব,চুনড়ি খু’লে গেল কাবার্ডের দিকে।কাবার্ডে একপাশে তার আরেক পাশে প্রণয়ের জিনিসপত্র।আলাদা আলাদা করে শাড়ি,টপস,থ্রি-পিস,টি-শার্ট সব রাখা।বাসায় টি-শার্ট পড়লেও আজকের জন্য টি-শার্ট অপশন থেকে বাদ।টি-শার্টের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বললো-

–‘সরি জা’নু আজকে তোমাকে পড়তে পারবনা।শাড়ি পে’চিয়ে ঘুমাতে হবে আজকে।

একটা শাড়িতে চোখ আটকে গেল তার।হাতে নিয়ে নিল সেটা।হালকা গোলাপি রঙের শাড়িটা।সেটা নিয়েই তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে ঢু’কলো।প্রায় একঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বেরোলো সে।রুমে কেউ নেই।দরজাটাও আগের মতোই ভেড়ানো।ব্যালকনির প্রবেশ মুখে লাগানো গ্লাসটা খু’লে প্রবেশ করলো ব্যালকনিতে।ব্যালকনির দু’পাশে দু’টো মাঝারি সাইজের টব,তাতে আছে পাম ট্রি।ওপরে দুপাশে ঝোলানো দু’টো টবে ঝুমকোলতার গাছ।আর নিচে ছোট,বড়,ভিন্ন শেপের কতগুলো টব।সব মিলিয়ে ব্যালকনিতে নয়নতারা,পাথরকুচি,সন্ধ্যা-মালতি,পূর্তলিকা,
স্পাইডার প্ল্যান্ট,জবা,গোলাপ এর গাছ আছে।হাতের ডান পাশের দেয়ালে মানিপ্ল্যান্ট আর বাম পাশের দেয়ালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নীলকণ্ঠ গাছ।এত গাছ দেখে তার মনে প্রশ্ন জাগলো-“ছেলে মানুষ এত গাছ পছন্দ করে? “আবার নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দিলো- ” হ্যা সে করে হয়তো।” ডানপাশেই নিচে বসার জন্য একটা ম্যাট, তাতে দুইটা কুশন আর পাশে একটা জারের মধ্যে ফেয়ারি লাইট তবে জলন্ত না।ভেজা টাওয়ালটা ব্যালকনির রেলিং এ মে’লে দিয়ে পেছনে ঘুরতেই ধা’ক্কা খেল কারো সাথে।কেঁপে উঠলো সূচনা।মাথা তুলে ওপরে তাকাতেই দেখা গেল প্রণয়ের মুখশ্রী।দৃষ্টি তার সূচনার ওপরেই।সূচনা তার চোখে চোখ পড়তেই প্রণয়ের অদ্ভুত দৃষ্টি নজরে এলো।বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলোনা সে।চোখ নামিয়ে নিল।চোখ নামাতেই নিজের হাতের অবস্থান টের পেল।প্রণয়ের প্রশস্ত বু’কে তার বাম হাত।এখন হাত সরাতেও ইতস্তত বোধ হচ্ছে।তবুও আলতো ভাবে সরিয়ে নিল হাত।

–‘অযু করে আসো।নামাজ পড়ব দুই রাকা’ত।

তার ভাবনার মাঝে প্রণয়ের শীতল কণ্ঠে বলা উক্তি।
প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো সূচনা।ব্যালকনি থেকে ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিল একসাথে।নামাজ শেষ হলে প্রণয় ই আগে যেয়ে শুয়ে পড়লো। তারপর সূচনার উদ্দেশ্যে বললো-

–‘আমার রুমে কোনো সোফা নেই।আর এত ঠান্ডার মধ্যে তো আর আমি ফ্লোরে শুবোনা, তোমাকেও শুতে দিবনা তাই আই হোপ বুঝতে পারছ কোথায় শুবে।

প্রণয়ের কথার মানে বুঝতে দেরি হলো না সূচনার।ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো বেডের কাছে।প্রণয়ের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব রেখে গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো।লাইট অফ করে দিল প্রণয়।এই মূহুর্তে সূচনার অবস্থা সম্পর্কে অবগত প্রণয়। তাই আশ্বাস এর স্বরে বললো-

–‘প্রণয় অত খা’রাপ না।কথা যখন দিয়েছে, কথা রাখতেও জানে।নিশ্চিন্তে থাকো।স্ত্রী যখন আমার তাকে কাছে পাওয়ার সময় অনেক আছে,জোর করবোনা।তোমার স্বামী হওয়ার আগে বন্ধু হব।অন্তত সেই হিসেবেও বিশ্বাস রাখতে পারো।রিল্যাক্স।

নিজের পাশ থেকে দুজনের মাঝে একটা কোল’বালিশ রাখলো প্রণয়।

প্রণয়ের কথা শুনে স্মিত হাসলো সূচনা।তার কথার মাঝে আশ্বাস খুঁজে পেয়েছে।সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই নেমে আসলো ঘুম দু জোড়া চোখে।
__________________________________
ফজরের আযান পড়তেই জেগে গেল সূচনা।চোখ খুলতেই অবাক সামনে প্রণয়কে দেখে।এক মূহুর্তের জন্য মনে প্রশ্ন জাগলো “এটা কে?কোত্থেকে আসলো?” পরমুহূর্তেই মনে পড়লো ‘আরে এটাতো তারই বর,কালকেই তো বিয়ে হলো।ঘুম থেকে উঠলে যে নিজের মাথা ঠিক থাকেনা, উল্টাপাল্টা ব’কে সে সম্পর্কে অবগত সে।মাঝেমধ্যে তো মিসেস দিশা ঘুম থেকে উঠাতে গেলে তাকেই জিজ্ঞেস করতো “আন্টি আপনি কে?ডাকাডাকি করছেন কেন?” তারপর যখন মিসেস দিশা মাথায় চাটি মা’রতেন তখন হুশ ফিরত বোধহয়।নিজের মা’কেই যেখানে আন্টি বলতো সেখানে প্রণয়ের ক্ষেত্রে তো স্বাভাবিক।দুনিয়ায় বোধহয় সেই একমাত্র মানুষ যে ঘুমালে সেন্স হারিয়ে ফেলে।প্রণয়ের থেকে চোখ সরিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে চমকে গেল সূচনা।শাড়ির অবস্থা নাজে’হাল।কিসের কুঁচি, কিসের আঁচল।কোনোটাই জায়গা মতো নেই। তাড়াতাড়ি করে উঠে কোনো রকম ঠিক করে দৌড় লাগালো ওয়াশরুমে।নামাজ পরে বিছানায় আসল আবার। কিন্তু চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটা ও নেই।মিনিট বিশেক বিছানায় এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়লো। মাথা ধরেছে প্রচুর। এই মুহূর্তে চা না হলে অবস্থা বেগ’তিক হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। কিন্তু কি করবে?নতুন বউ বিয়ের প্রথম দিনই পারমিশন ছাড়া রান্নাঘরে ঢু’কে যাবে?ক্ষিদেও পেয়েছে প্রচন্ড।বিড়বিড়িয়ে নিজে ই নিজেকে বললো-ধুর ছাই “আসার সময় কাবার্ড থেকে চিপস আর চকলেট গুলো লাগেজে করে নিয়ে আসলেও তো এখন খেতে পারতাম।”ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সবে ছয়টা বেজেছে।বেচারি ভেবেছিল হয়তো আটটা সাতটা বাজে। সবাই উঠে পড়বে কিন্তু। উপায় না পেয়ে পা টিপে টিপে দরজার দিকে গেল সে।

–‘কোথায় যাচ্ছ?

সবে দরজার লকে হাত দিয়েছিল সূচনা।আচমকা প্রণয়ের কণ্ঠ পেয়ে চমকে ছেড়ে দিল লক,বু’ক কেঁপে উঠলো তার। ঘুমিয়ে ছিল সে,জাগলো কখন?বু’কে ফু দিয়ে কিছুটা রা’গী গলায় বললো –

–‘কি সমস্যা আপনার?এমন হুটহাট কোথা থেকে টপ’কান?ভয়ে আত্মা কে’পে উঠেছিল আমার।যতসব।

বলে আবারো ফু দিল বু’কে।

বো’কা বনে গেল প্রণয়। সে কি এমন বললো যে সূচনা এত ভয় পেল।প্রণয় চোয়াল ঝুলি’য়ে সূচনার দিকে তাকিয়ে বললো-

–‘আশ্চর্য! আমি কি এমন বললাম যে তোমার আত্মা কেঁ’পে উঠলো?

সূচনা কেমন করে যেন তাকালো তারপর বললো-

–‘কিছুনা,,

প্রণয় ও কথা বাড়ালো না। জিজ্ঞেস করলো-

–‘যাক গে।এত সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছিলে?

–‘বাইরে যাচ্ছিলাম।

–‘কেন?

মুখ লট’কে ‘ক্ষুধা লাগসে ভাই খাই’তে যেতাম’,কথাটা মনে মনে আওড়ালো সূচনা।কিন্তু মুখে বা কথায় প্রকাশ করলো না। বললো –

–‘ঘুম ভেঙে গেছে, নামাজ পড়ে শোয়ার পর আর ঘুম আসছিল না তাই বাইরে,,

–‘আচ্ছা,, তুমি এখন বাইরে গেলে যে আমার কত বড় ক্ষতি হত জানো?

সূচনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘আমি বাইরে গেলে আপনার ক্ষতি হবে মানে?

বিছানা থেকে উঠে সূচনার সামনে যেয়ে দাঁড়ালো প্রণয়।তারপর বললো-

–‘নরমালি বিয়ের পরেরদিন সকালে কাপলরা দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। ওয়াইফ এর ভেজা চুল,চেহারায় আলাদা গ্লো,লজ্জা আর খুশি খুশি ভাব থাকে যার মাধ্যমে মানুষ মনে করে যে তাদের মধ্যে স্পেশাল কিছু হয়েছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে তো কালকে তেমন স্পেশাল কিছু হয়নি বাট এট লিস্ট প্রিটেন্ড তো করতেই পারো যেমন-সকালে শাওয়ার নিবে,মুখে আলাদা খুশি বজায় রাখবে আর আমার সামনে আসলে লাজরাঙা হবে।এই তো।

প্রণয়ের কথা শুনে ইতিমধ্যে লাজরাঙা হয়ে গেছে সূচনা।তা দেখে প্রণয় বাঁকা হাসলো। বেড সাইড টেবিল থেকে ফোন নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল।

#চলবে

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_০৯
______________________________
প্রণয়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সূচনা।একবার সামনে থাকা ট্রেতে তো আরেকবার প্রণয়ের দিকে চোখ বুলাচ্ছে।ট্রেতে এককাপ চা আর একটা ছোট প্লেটে বিস্কিট।তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফিরোজা,প্রণয়দের কাজের মহিলা সে।সূচনার দৃষ্টি দেখে ফিরোজা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললো-

–‘আম্মা চা তো ঠান্ডা হইয়া যাইতাসে।তাড়াতাড়ি খায়া ফালান।

ফিরোজা বেগমের কথা শুনে সূচনা তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

–‘আপনি কিভাবে জানলেন যে আমার চায়ের দরকার?

ফিরোজা বেগম সেই হাসি বজায় রেখেই বললেন-

–‘কি যে বলেন না আম্মা,, আমি কেমনে জানতাম।আমারে তো আব্বা ফোন দিয়া কইলো আপনারে চা দিয়া যাইতে।আপনার সকালে ঘুম থেকা উইঠা ই নাকি চা খাওয়ার অভ্যাস।

সূচনা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো প্রণয়ের দিকে। প্রণয় কিভাবে জানল এ কথা?

–‘এভাবে তাকিয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি খাও।

সূচনার দিকে তাকিয়ে উক্ত কথাটুকু শোধালো প্রণয়।সূচনা সাত পাঁচ না ভেবে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক বসালো তাতে।হাহ!এখন শান্তি।

–‘শান্তি হয়েছে?

–‘হু।থ্যাঙ্কিউ।

–‘মাই প্লেজার।
.
.
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ির কুঁচি ঠিক করছিল সূচনা।শাড়ি পড়া শিখলেও অত ভালোভাবে পারেনা।সামলাতে গেলে হিমশিম খেতে হয়।নমুনা তো সকালেই দেখল। যাচ্ছে তাই অবস্থা।কালো ও লাইট লাল কালারের শাড়ি তার পড়নে।তাতে সুতোর কাজের মধ্যে মিরর ওয়ার্ক করা।বাইরে থেকে মিহু,আর তিথির গলা শোনা যাচ্ছে।ব্যালকনি থেকে সবে রুমে পা দিয়েছে প্রণয় তখনই গলা উঁচিয়ে বাইরে থেকে মিহু দুষ্টুমির স্বরে বললো-

–‘ভাবি রুম থেকে বের হবেন কখন?আপনার মুখ দর্শন করার জন্য যে আমরা অপেক্ষা করছি।ভাইয়া কি বের হতে দিচ্ছে না?

মিহুর কথা শুনে কাশি উঠে গেল সূচনার।হাত থেমে গেল তার।প্রণয় দরজার সামনে যেয়ে দরজানএকটু খুলে উঁকি দিল বাইরে।মিহু,দিনা,তিথি আর ইরা একসাথে দাড়িয়ে আছে।প্রণয় থমথমে গলায় বললো –

–‘তোরা কি আমার মানসম্মান কিছু রাখবিনা?
মিহুর দিকে তাকিয়ে বললো-

–‘ তোর কাজ -কাম নাই।পেত্নী একটা যাহ।

–‘দেখ আমাকে পেত্নী উপাধি তুই ই দিয়েছিস।আর পেত্নী নিশ্চয়ই ভালো কাজ করেনা তো আমি তো শুধু পেত্নীর রোলটা ঠিকঠাক রাখছি।হিহিহি।

প্রণয় মুখ বা’কিয়ে বললো-

–‘দোহাই বইন।তোর কোনো কাজ করতে লাগবেনা, তুই পেত্নীও না।কি লাগবে বল তবু তোর লাগামছাড়া কথাবার্তা কারো সামনে বলিসনা।

–‘এই তো কাজের কথা বলেছিস। সো লেট’স কাম টু দা পয়েন্ট।আমরা চারজন চাইছি একটু বাইরে যেতে,ঘুরতে আর কি।তো ইউ নো স্ট্রিট ফুড আমাদের অনেক পছন্দ।আর তুই যেহেতু বিয়ে করেছিস কালকেই তো ট্রিট চাই।

–‘আজকে তো ওদের ও বাসায় যাওয়ার কথা তাই না? (দিনা)

–‘জানিনা। ট্রিট চাই।(ইরা))

–‘ঠিক আছে যা দিবনে।(প্রণয়)

–‘ইয়াহু,,থ্যাঙ্কিউ (তিথি)

–‘এবার যা।

–‘হুহ যাচ্ছি!(ইরা)

দরজা লক করে পেছনে ঘুরতেই দেখল তার দু’কদম দূরে সূচনা। ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কি?

–‘বাইরে যাবনা?

মিনিট একের মতো চুপ করে তাকিয়ে দেখি সূচনার দিকে তারপর বললো-

–‘ঠিক আছে যাও।

প্রণয়কে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলেই টান পড়ল শাড়িতে। পা থেমে গেল তার।পেছনে তাকানোর আগেই কর্ণধার হলো পেছন থেকে শীতল কণ্ঠে বলা বাক্য-

–‘আমাকে কে নিবে?

সূচনার শাড়ির আঁচল ধরেই তার পাশে দাড়ালো প্রণয়।প্রণয়ের হাতে বন্দি আঁচলের কোণায় মৃদু বল প্রয়োগ করলো সে ছাড়ানোর জন্য।ছাড়াতে না পেরে নিচু স্বরে বললো-

–‘আপনি আমার শাড়ীর আঁচল নিয়ে টানাটানি করছেন কেন? আশ্চর্য!

প্রণয় কপাল কুঁচকে বললো-

–‘মেয়েরা নাকি নিজের বরকে শাড়ীর আঁচলে বে’ধে রাখতে চায় আর তোমাকে তো দেখছি নিজের বরকে আঁচল থেকে ছাড়াতে উঠে পড়ে লেগেছ।আশ্চর্য!

সূচনা চোয়াল ঝুলিয়ে তাকালো প্রণয়ের দিকে।বললো-

–‘আপনি আমার নকল কেন করছেন?আশ্চর্য!

–‘আমি তোমার নকল করতে যাব কেন? আশ্চর্য! আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।সরো সামনে থেকে লিলিপুট একটা।

প্রণয়ের শেষ কথাটুকু শুনে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো সূচনা।প্রণয়ের দিকে আঙুল তাক করে রাগা’ন্বিত স্বরে
বললো-

–‘কি বললেন আপনি?আমি লিলিপুট?হ্যা!

প্রণয় সূচনার দিকে একটু ঝুকে বললো-

–‘কোনো সন্দেহ?

প্রণয়ের দিকে চোখ গোল গোল করে তাকালো সূচনা।বলার মতো কিছু খু’জে পেলনা।মুখ বা’কিয়ে চলে আসলো।ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখা মিলল ইসহাক সাহেবের।সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছেন তিনি।সূচনা বিড়াল পায়ে এগিয়ে গেলো তার দিকে।মিহি স্বরে বললো-

–‘আসসালামু আলাইকুম,, মামা।

কারো কণ্ঠ পেয়ে ইসহাক সাহেব খবরের কাগজ নিচে নামালেন।চোখে তার চশমা। সূচনাকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে সালামের জবাব দিলেন-

–‘ ওয়া আলাইকুমুস সালাম।

খবরের কাগজ টা সামনের টেবিলে রেখে বললেন –

–‘এখানে বসো তো মা।

নত মস্তকে ইসহাক সাহেব এর অপর পাশের সোফায় বসলো সূচনা।ইসহাক সাহেব নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলেন –

–‘কোনো সমস্যা হচ্ছে এখানে?হলে বলবে,প্রণয় কে বলতে না পারলে তোমার মামিকে বলবে না হয় ইরা, দিনা আছে ওদের বলবে।ভয়,সংশয় বা সংকোচ বোধ করবেনা।আমার বোন মা’রা যাবার তিনদিন পর ই দুলাভাই মা’রা যান।তারপর দু’জনকে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। আমরা প্রণয়ের মামা-মামী তাই বলে পর ভেব না একদম। আমাদের কোনো ছেলে নেই।প্রণয়কে নিজের ছেলে হিসেবে বড় করেছি ভালোবাসা দিয়ে।আমাদের একমাত্র ছেলের বউ।তোমার পরিবার আমরা,আপনজন এই কথাটা মাথায় রাখবে।

সূচনা মাথা নাড়িয়ে বললো-

–‘হ্যা।

–‘ঠিক আছে। এখন তোমার মামির কাছে যাও।

–‘জ্বি।

ড্রয়িংরুম থেকে উঠে রান্নাঘরে আসলো সূচনা।মিসেস আফিয়া বোলের মধ্যে আটার কাই করছিলেন।আর ফিরোজা খালা ফ্লোরে বসে সবজি কাট’ছিলেন।রান্নাঘরের দরজার দিকে তাকাতেই সূচনার দিকে চোখ পড়ল।মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন-

–‘ওখানে দাড়িয়ে আছ কেন এখানে আসো।

মিসেস আফিয়ার অনুমতি পাওয়া মাত্রই পা বাড়ালো সূচনা।তার পাশে যেয়ে দাড়ালে মিসেস আফিয়া পাশ থেকে একটা টুল টেনে দিয়ে বললেন-

–‘এখানে বসো তো।

তার কথা অনুযায়ী টুলে চুপচাপ বসলো সূচনা।মিসেস আফিয়া বললেন-

–‘প্রণয় কি উঠেছে?

সূচনার নিচু স্বরের জবাব-

–‘জ্বি উঠেছেন।

মিসেস আফিয়া রুটি বেলতে বেলতে বললেন-

–‘মিহুর কাছ থেকে শুনেছিলাম তুমি নাকি অনেক চঞ্চল, ছটফ’টানো মেয়ে।কিন্তু এই দুই-তিনদিনে তো তার ছিটেফোঁটা ও লক্ষ্য করলামনা।এত সংকোচ কিসের বলোতো।শোন মানিয়ে নাও, এখন থেকে কিন্তু এটাই তোমার পরিবার। বুঝেছ?

–‘জ্বি।
কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালো সূচনা।এই পরিবারের মানুষগুলো কত ফ্রি, এক জন আরেকজনের প্রতি কতটা হেল্প ফুল।তাদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে অতটা কষ্ট হয়তো হবেনা।ভাবতেই শান্তির ঢেউ খেয়ে গেল মন গহীনে।একটা মেয়ে যখন নতুন পরিবারে আসে তখন স্বামীর সাথে সাথে সেই পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার আশা করে,তাদের সাথেও মানিয়ে নিতে হয়।মানুষগুলো যদি তার প্রতি সহানুভূতি না রাখে, বন্ধুত্বের হাত বা বাড়ায় তাহলে একা একা সম্পর্ক বানাতে বা টেকা’তে তো বেগ পেতে হয়।সে দিক দিয়ে সে হয়তো ভাগ্যবতী।হয়তো! দেখা যাক।

–‘সূচনা?

–‘জ্ব,,জ্বি(হকচকিয়ে)

–‘কি ভাবছিলে?

–‘কি,,কিছুনা মামি।

–‘আচ্ছা শোন।আজকে প্রণয় আর তুমি তোমাদের বাড়িতে যাবে। মিহু তো সাথে যাবে।আমি চাচ্ছি দুপুরে খেয়ে তারপর যাও।তুমি কি বলো?

–‘আপনি যেটা ভালো মনে করেন।

–‘ঠিক আছে তাহলে দুপুরের পরই যেও।তবে শোনো সবসময় আমার কথাই যে শুনতে হবে তেমন না।মাঝেমধ্যে আমি ভুল সিদ্ধান্ত ও নিতে পারি।নিজের মতামত সামনে রাখতে হবে তোমাকে।মাথায় থাকবে?

হাসিমুখে সায় দিল সূচনা।একে একে রান্নাঘরে দিনা,তিথি,ইরা আর মিহুর আগমন।দিনা সূচনাকে উদ্দেশ্য করে বললো-

–‘তুমি রান্নাঘরে কেন?রান্নাঘরে তোমার কাজ নেই,রুমে চলো।

মিসেস আফিয়া জবাবে বললেন –

–‘মাত্রই এসেছে,কথা বলছিলাম।ইরা তোর মামাকে প্রেশার এর ঔষধটা একটু দেয় তো। মানুষ টা খালি ভুলে বসে থাকে।দিনা তুই রুটি টা উল্টে দে আর আমি আসার আগ পর্যন্ত রুটি ভাজতে থাক।খবরদার! একটাও যেন না পু’ড়ে।সূচনা তুমি আসো আমার সাথে।

সূচনা মিসেস আফিয়ার পিছু পিছু পা বাড়ালো রান্নাঘর থেকে। মিসেস আফিয়ার রুমে বিছানায় বসে আছে সূচনা।আর উনি কাবার্ডের ভেতর কিছু একটা খুজছেন।একটু পরই হাতে একটা মাঝারি বর্গাকৃতির আকারের কাঠের বাক্স বের করে সূচনার সামনে রাখলেন।বিছানায় বসে বাক্স থেকে একটা লকেটসহ চেইন,ছোট ছোট এক জোড়া ঝুমকা আর দুইটা হাতের মোটা চুড়ি বের করলেন।স্বর্ণের সবগুলো।সূচনার দিকে তাকিয়ে বললেন-

–‘এগুলো তোমার শাশুড়ীর,মানে প্রণয়ের আম্মুর শেষ চিহ্ন।এতদিন যত্ন করে রেখে দিয়েছি আমার কাছে। ছেলের বউ হিসেবে এগুলো এখন তোমার।এগুলো তোমার দায়িত্ব।এই লকেট,ঝুমকো জোড়া আর চুড়ি দুইটা আপা সবসময় পড়তেন।তুমিও পড়বে।ঠিক আছে?

–‘জ্বি।

কাবার্ড থেকে একটা লাল রঙের বেনারসি শাড়ি আর সাথে একটা গহনার বাক্স বের করে সূচনার হাতে দিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন-

–‘এগুলো আমার তরফ থেকে দিলাম।আমার বিয়ের শাড়ী আর কিছু গহনা আমার ছেলের বউয়ের জন্য।আর কিছু আছে দিনা,ইরা আর তিথির জন্য।

চেইন আর চুড়ি দু’টো নিয়ে বাকিগুলো মিসেস আফিয়ার হাতে দিয়ে বললো –

–‘এ’দুটো আমি পড়ে রাখব আর এগুলো আপনার কাছে রাখলাম। এত মূল্যবান জিনিসের দায়িত্ব আমি সামলাতে পারবনা।তাই আপনার কছে রাখলাম। দরকার হলে আপনার কাছ থেকে নিয়ে নিব।

উত্তরে কিছু বললেন না মিসেস আফিয়া। শুধু মুচকি হেসে সূচনার মাথায় হাত রাখলেন।
.
.
.
সূচনাকে কেন্দ্র করে গোল হয়ে বসেছে দিনা,মিহু,ইরদ আর তিথি।পাচজনের মধ্যে সবথেকে ছোট এখানে তিথি।একের পর এক টপিকে আলোচনা হচ্ছে তাদের মধ্যে। তারওপর মিহুর লাগামছাড়া কথাবার্তা, হাসতে হাসতে সবক’টার লুটো’পুটি খাওয়ার’ অবস্থা।সূচনাও কথা বলছে টুকটাক। তবে নিশ্চুপ ইরা।ইরাকে প্রথম দেখেই সূচনার মনে হয়েছিল মেয়েটা চুপচাপ স্বভাবের।কিন্তু যতটা ভেবেছে তার থেকেও বেশি চুপচাপ সে।মিহু আর তিথির কথার এক পর্যায়ে দিনা জিজ্ঞেস করলো-

–‘ভাবি তুমি আর ইরা দু’জন ই তো এইচএসসি দিয়েছ।তো সামনের প্ল্যান কি?ভার্সিটি তে এডমিট হবে নাকি অন্য কোনো প্ল্যান আছে?

সূচনা জবাব দিল না। সে তো এসব ভাবার সময় ই পায়নি এত ঝামেলায়।তাকে চুপ থাকতে দেখে দিনা পুনরায় কিছু জিজ্ঞেস করতে নিবে তার আগেই মিহু বিরক্তি মাখা স্বরে বললো-

–‘আমি না বুঝি না জাওয়াদ ভাইয়ের সাথে তোমার প্রেম টা কিভাবে হলো?আর হলো তো হলো সেটা টি’কে আবার বিয়ে পর্যন্তই বা গড়া’লো কিভাবে?

দিনা লজ্জা পেল খানিক এভাবে সূচনার সামনে তার আর জাওয়াদের ব্যাপারে বলায়।আবার অবাক হলো মিহুর কথায়।কপাল কুঁচকালো। জিজ্ঞেস করলো-

–‘এখানে ওনার প্রসঙ্গ কোত্থেকে আসলো?

তিথি ফট করে উত্তর দিলো-

–‘স্বাভাবিক আসারই কথা।এত সুন্দর একটা পরিবেশ, চারটা ননদ তার ভাবির সাথে এত সুন্দর সুন্দর বিষয়ে নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে তার মধ্যে তুমি পড়ালেখা ঢু’কিয়ে দিচ্ছ।ব্যাপারটা এমন লাইক-“কীসের মধ্যে কী?পান্তা ভাতে ঘি।”

মিহু ও তাল মিলিয়ে বললো-

–‘হ্যা, তুমি হচ্ছো পাড়’হাকু টাইপ বোন,তোমার দ্বারা তো প্রেম অবিশ্বাস্য ব্যাপার ছিল কিন্তু সেই অবিশ্বাস্য ব্যাপারকে সাধন করেছে তুমি কিন্তু তবুও আমাদের সন্দেহ হয়।প্রণয় ভাইয়া যেমন পড়ালেখা করে প্রেমের বয়স পার করেছে তোমার থেকেও সেই এক্সপেকটেশন ই ছিল।কিন্তু তেমন তো হয়নি এজন্য মানতে একটু কষ্ট হচ্ছে। সমস্যা নেই বিয়ের পর এক বাচ্চা কোলে নিয়ে সামনে আসলে বিশ্বাস হয়ে যাবে।

–‘কিন্তু আমি তো চাচ্ছি তোকে আর তিথিকে বাচ্চাসহ ছেলের কাছে বিয়ে দিতে। বরের সাথে রেডিমেড বাচ্চা ফ্রী। ভালো হবে না ব্যাপারটা?

আচানকই পেছন থেকে বলে উঠলো কেউ।কণ্ঠস্বর চিনতে অসুবিধা হলো না কারো।মিহু আর তিথি পেছনে ঘুরকেই নজরে এলো প্রণয়ের কটম’টে দৃষ্টি।চুপসে গেল দু’জন।আমতাআমতা করে মিহু বললো-

–‘তিথি চল,,তুই না বলছিলি হেয়ার প্যাক বানিয়ে দিতে আয়। তাড়াতাড়ি।

–‘আব,,ব,,হ্যা হ্যা চলো চলো।

তিথিও মিহু কে’টে পড়েছে।ইরা আর দিনাও চলে আসলো রুম থেকে।তারা চলে গেলে প্রণয় হাল্কা কাশি দিয়ে গলা ঝেড়ে সূচনার উদ্দেশ্যে বললো-

–‘উল্টাপাল্টা কিছু বলেছে?

সূচনা না করতে যেয়েও করলোনা।হুট করেই মনে পড়লো সকালের কথা।আমাকে লিলিপুট বলা, না!দেখাচ্ছি মজা।শয়’তানি হাসি দিয়ে বললো-

–‘হ্যা বলেছো তো।কতকিছু ই তো বলেছো।

প্রণয় বোধহয় হালকা ঘাবড়ে গেল।তবু স্বাভাবিক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

–কি বলেছে?

–‘তা তো বলা যাবেনা।

প্রণয় কেমন তেড়াচোখে তাকালো।তারপর বললো-

–‘তোমার মনে হয় না মিস রঙ্গন তুমি আজকে একটু বেশিই কথা বলছো।এই তিন চার দিন তো গলা দিয়ে স্বর ও মনে হয় বের হতে কষ্ট হতো তোমার।

সূচনারও খেয়াল হলো-‘হ্যা সে আজকে স্বাভাবিক আচরণ করছে, প্রথম দুইদিন প্রণয়কে দেখে যেমন ইতস্তত বোধ হতো কথা বলতে আজকে তেমন হচ্ছে না।

সূচনার মুখের সামনে তুড়ি বাজি’য়ে প্রণয় ভাব নিয়ে বললো –

–‘এখন এটা নিয়ে গবেষণা করতে বলিনি তোমাকে।আমি এমনি ইউ নো,আমার সাথে কথা বলতে সবাই কম্ফার্ট ফিল করে। এখন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।শশুর বাড়ী যাব।দীর্ঘ আটাইশ বসন্ত পার করার পর শশুর বাড়ী যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।তাড়াতাড়ি করো।

#চলবে