প্রণয়লীলা পর্ব-০৭

0
286

#প্রণয়লীলা –[৭]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা

_________________________

কাজের মাঝখানে নিবিড় পূর্নিমাকে নিজের কেবিনে আসতে বললে পূর্নিমা আসে। দুপুরে খাবারও খায় না। সেজন্যই নিবিড় পূর্নিমাকে নিয়ে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে যাবে বলে ঠিক করেছে। পূর্নিমার কাছে গিয়ে পূর্নিমার হাত ধরর টে’নে এনে গাড়ির সামনে দাঁড় করালো। পূর্নিমা বাহিরেও আসতে চাইছিলো না কিন্তু অফিসের বাকি কলিগরা খারাপ মনে করবে বলে বাধ্য হয়ে এসে দাঁড়িয়েছে বাহিরে।

-‘ অনেক হয়েছে পূর্নিমা সেই তোমাদের বাড়ি থেকে দেখে আসছি তুমি আমাকে ইগনোর করে চলছো। যেনো আমাকে দেখতে না পেলেই তোমার শান্তি! লুকিয়ে আছো আমার থেকে। আজকে কতোবার তোমাকে আসতে বলেছি একবারো আসলে না আবার দুপুরে খেলেও না হয়েছে টা কি তোমার খুলে বলবে আমাকে?’

পূর্নিমা নিরুত্তর ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আদৌ কি সে বলবে নিবিড়কে মনের কথা যে কারনে সে নিবিড়ের থেকে দূরে দূরে থাকছে।

-‘ আপনি বোধহয় আমাকে বিয়েটা না করলেই পারতেন। তাহলে সবকদিক দিয়ে ভালো হতো।’

নিবিড় আশা করেছিলো পূর্নিমা উত্তর দিবে কিন্তু পূর্নিমা যে এরকম ভাবে কোনো উত্তর দিবে নিবিড়কে সেটা নিবিড়ের মনেও আসে নি! এবার যেনো ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে নিবিড়ের। এবার গলার স্বর খানিকটা কড়া করেই পূর্নিমার সঙ্গে কথা বলার প্রয়াস নিলো নিবিড়।

-‘ খুলে বলবে আমাকে? এবার আর পারছি না তোমার ইগনোর এসব সহ্য করতে।’

-‘ আপনি পারছেন না তো আমি করে পারবো? কালকে আপনার মামাতো বোন লিলি উপস শুধু তো তাই নায় বলা যায় আপনার এক্স গার্লফ্রেন্ড সে বারবার করে বলছিলো আমি আপনার যোগ্য নই, না সৌন্দর্যের দিক দিয়ে আর না ফ্যামিলির দিক দিয়ে। সেটা বাদ দিলাম মা’থা থেকে। কিন্তু আজকে অফিসে আসতেও সেই একই কথা! মানে আমি আমার পরিবারের সুযোগ নিয়ে আপনার মতন বড়োলোক বাড়ির ছেলেকে বিয়ে করেছি যাতে নিজের পরিবারের সু্বিধা হয়! শুধু তা-ই নয় আমি নাকি আপনাকে জাদু করেছি যাতে আপনি আমাকে বিয়ে করেন মোটকথা আপনাকে বিয়ে করে আমি নিজের আখেরও গুছিয়ে নিচ্ছি আবার পরিবারের ও লাভ করছি এই কথাগুলো আমি কেনো শুনতে যাবো বলুনতো? কেনো শুনবো আমি? যেখানে বিয়েটা আপনি এসে করেছেন আমাকে আমি আপনাকে বিয়ে করতে যায়নি বরং আপনি জানতেন আমি রাজি হবো না সেজন্য সেদিন অফিসে ওসব কীর্তিও করেছেন এই এতোকিছু আমি কেনো সহ্য করবো এবার এটার জবাব দিন দেখি?’

এক দমে কথাগুলো বলে এবার থামলো পূর্নিমা! মনের সব রা’গ যেনো এবার নিবিড়ের উপর ঝেড়ে ফেলছে! নিবিড় অবাক হয়ে পূর্নিমার সব কথা শুনে যাচ্ছে! সে জানতো সবকিছুই কিন্তু নিবিড়েরই যখন কোনো প্রবলেম নেই তখন এসব কথা কেনো? নিবিড় এবার বেশ বুঝতে পারছে পূর্নিমা কেনো তার উপর এতোটা রা’গ! কেনো এড়িয়ে চলছে নিবিড়কে এখন নিবিড়ের কাছে সবটা পরিষ্কার।

-‘ দেখো পূর্নিমা যে-ই যা বলুক না কেনো আমার তো সে রকম কোনো উদ্দেশ্য নেই বলো? আমি তোমার সঙ্গে থাকতে চাই বলেই তো বিয়েটা করছি। কে কি বললো কেনো বললো এসবে মা’থা ঘামিও না। আমার কোনো সমস্যা নেই তোমাকে নিয়ে।’

নিবিড় পূর্নিমাকে যথেষ্ট বোঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পূর্নিমা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নিবিড় যেনো তাতে আরও দুশ্চিন্তায় পড়লো। পূর্নিমা কিছু বললে সে উত্তর দিতে পারতো কিন্তু তা না করে পূর্নিমা চুপচাপ আছে মানে ঝ”ড় ওঠবার আগে আগাম বি’প’দ সংকেত যাকে বলে!

-‘ সবকিছুই তো হয়েছে আপনার জন্য! শুধু আপনার জন্য!’

এবার পূর্নিমার বদলে নিবিড় রে’গে গেলো! বোঝানোর বদলে নিজেই রে’গে গেছে!

-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ আমার জন্যই তো হয়েছে! সবকিছুর ন’ষ্টের মূল তো আমিই। তুমি ঠিকই বলছো। সবকিছুর নষ্টের মূল আমি যে তোমাকে বিয়ে করেছি। আসলেই তোমাকে বিয়ে করাটা সবচেয়ে বড়ো ভূল হয়েছে শুনেছো তুমি?’

পূর্নিমা এবার না চাইতেও কান্না করে দেয়। এতোক্ষণ চুপ করে থাকলেও এবার কান্নাটা যেনো আর বাঁধ মানছে না। পূর্নিমার সবচেয়ে বেশি যন্ত্রনাদায়ক লেগেছে নিবিড়ের শেষোক্ত লাইনের কথা গুলা শুনে! এই বাক্য যেনো পূর্নিমার মনে বেশ আ’ঘা’ত করেছে। পূর্নিমা মনের অভিমান থেকে কথাগুলো বলেছে নিবিড়কে কিন্তু নিবিড় কেনো কথাগুলো বললো তাকে? কেনো জানি পূর্নিমার নিজের কাছে নিজেকে কেমন যেনো লাগছে! সইতে পারছে না নিবিড়ের বলা কথাগুলো।

-‘ বেশ তবে ভূল যেহেতু করেইছেন তাহলে আর কি করবেন বলুন? ভূল শুধরানোর চেষ্টা করুন আমাকে যখন বিয়ে করে আপনার এতোই ভূল হয়েছে!’

পূর্নিমা ভূল বুঝলো নিবিড়কে! তৎক্ষনাৎ অফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তা ধরে হাঁটা ধরলো, এই পাঁচ ছয় দিনেই যেনো মানুষটার প্রতি বেশ মায়া ধরে গেছে পূর্নিমার, সে জন্যই তো যখন নিবিড় বললো তাকে বিয়ে করা ভূল হয়েছে তখন যেনো হৃদয় ক্ষ’ত বি’ক্ষ’ত হওয়া শুরু করলো। সে না হয় লোকের কথা শুনে একটু অভিমানী হয়ে নিবিড়কে কথা গুলো বলে ফেলেছে কিন্তু নিবিড় কেনো এভাবে বললো? আসলেই কি নিবিড়ের সঙ্গে বিয়েটা একটা ভূল বিয়ে? পূর্নিমা বেরিয়ে যাবার পরই নিবিড় অনুধাবন করতে লাগলো সে ঠিক কি বলে ফেলরছে পূর্নিমাকে! নিজের রা’গ কন্ট্রোল করতে না পেরে মা’থা’র চুলগুলো এক হাত দিয়ে চে’পে ধরে মাটিতে বসে পড়লো! কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়ে গিয়ে বাহিরে উঁকি মে’রে দেখতে পেলো পূর্নিমা আশেপাশেও নেই! মানে কোথাও একটা বেরিয়ে গেছে নিশ্চয়ই। নিবিড় আর দেরি না করে পূর্নিমার নম্বরে ডায়াল করলো পরপর কয়েকবার রিং হতেই পূর্নিমা রিসিভ করলো। পূর্নিমার গলার স্বরের আওয়াজ শুনে নিবিড়ের মন শান্ত হলো।

-‘ পূর্নিমা তুমি কোথায় গেলে? ফিরে এসো তাড়াতাড়ি ভুল বুঝছো তুমি আমাকে একটাবার শোনো আমার কথা?’

-‘ ভূল বিয়ে শুধরানোর সুযোগ দিচ্ছি আপনাকে সুযোগ কাজে লাগান। আমার পিছনে সময় নষ্ট করবেন না।’

নিবিড়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পূর্নিমা ফোন কে’টে দিলো। রে’গে আছে বেজায় পূর্নিমা হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে আছে! রাস্তায় উল্টাপাল্টা ভাবে হেঁটে যাচ্ছে পূর্নিমা। নিবিড় কি করবে বুঝে ওঠতে পারছে না। একে তো সবার ওভাবে কথা বলা তার উপর সে নিজেও পূর্নিমাকে ওভাবে বলায় পূর্নিমার বেশ কষ্ট লেগেছে এটা এখন অনুধাবন করতে পারছে নিবিড়। কিন্তু এখন সে কি করবে?
———————-

সারাদিন কা’টে নিবিড়ের পূর্নিমার প্রতি অস্থিরতায়! ঘড়ির কাঁটায় আটটা বাজতে চললো এখনো নিবিড় দিশেহারা হয়ে পূর্নিমাকে খুঁজে চলছে! পূর্নিমার বাপের বাড়ি সব জায়গায় ফোন করেও যখন জানলো পূর্নিমা সেখানে যায়নি তখন নিবিড়ের মনে থাকা ভ’য়টা বেশ গাঢ়ো হচ্ছে! তাহলে কি পূর্নিমার কোনো বি’পদ হলো? মন উদ্বিগ্ন হয়ে আছে পূর্নিমার কথা ভেবে নিবিড়ের। হঠাৎই মুঠোফোন বেজে ওঠলো নিবিড়ের। নিবিড় ফোনটি ধরতে হ্যালো বলতেই সঙ্গে সঙ্গে ফোনটি হাত থেকে মাটিতে ফেলে দিলো! ধপ করে বসে পড়লো মাটিতে! তাহলে কি সে আর ফিরে পাবে না পূর্নিমাকে? একটাবার তো সুযোগ দেওয়া উচিত ছিলো পূর্নিমার নিবিড়কে! নিবিড় চুপচাপ যেনো বাক্য নেই মুখে। অধিক শোকে পাথর যাকে বলে। হবারই তো কথা যার জন্য এতোকিছু সে-ই যদি না থাকে তাহলে?

#চলবে?