প্রণয়লীলা পর্ব-০৬

0
313

#প্রণয়লীলা —[৬]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা

____________________________

-‘ বাড়ি থেকে এসেছেন এতোদূর পথ জার্নি করে কোথায় রুমে এসে ফ্রেশ হবেন আর আপনি তা না করে এখানে বসে আছেন অযথাই?’

-‘ আচ্ছা ঠিকআছে রুমে চলো।’

নিবিড় আস্তে আস্তে বুঝতে পারছে পূর্নিমা তার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে আর সে জন্যই লিলিকে নিবিড়ের সঙ্গে দেখলে পূর্নিমার রা’গ হয়। কালকের ব্যাপারটা এখনো মিটেনি যার দরুন নিবিড় পূর্নিমাকে রা’গা’তে চায়নি চুপচাপ রুমে চলে গেলো। রুমে যেতেই পূর্নিমা নিবিড়ের পিছু পিছু যাবে সেই সময়ই লিলির ডাক পড়লো,

-‘ তুমি নিজেকে নিয়ে কি এতো মনে করো হ্যাঁ? তোমার তো কোনো ফ্যামিলি ক্লাসও নেই। আর না আছে কোনো আধুনিকতা আর না অতোটা দেখতে সুন্দর। নিবিড় তোমাকে কি দেখে হুট করে বিয়ে করলো কিছুই বুঝছি না! আবার নিবিড়কে দূরে সরিয়ে রাখো আমার কাছ থেকে।’

-‘ সেটা না হয় নিবিড়কেই বলবেন কেমন? আমাকে এসব বলে ব্রিবত করবেন না।’

লিলির কথার সোজাসুজি উত্তর দিয়ে পূর্নিমা নিবিড়ের উদ্দেশ্য হাঁটা লাগায়। মনের মধ্যে একটাই খচখচানি তাহলে কি সে যা ভাবছে সত্যি?

-‘ আচ্ছা লিলির সঙ্গে কি আপনার আগে কোনো সম্পর্ক ছিলো?’

অফিসের একটা ফাইল দেখছিলো নিবিড় রুমে এসে পূর্নিমার হঠাৎ প্রশ্নে থমকে যায়! ভ্রুযুগল কুঁচকে পূর্নিমার সামনে এসে দাঁড়ায় নিবিড়।

-‘ হঠাৎ এরকম প্রশ্ন কেনো করছো?’

পূর্নিমার দৃষ্টি স্থির। সে আবারো প্রশ্ন নিক্ষেপ করলো নিবিড়ের দিকে।

-‘ যা বলছি উত্তর দিন।’

-‘ আমার সঙ্গে আছো ক’দিন? এক সপ্তাহ তো গড়ায় নি। আর লিলি তো সবে সবে এসেছে হঠাৎ এসব ভ্রান্ত ধারণা মনে হলো কেনো তোমার?’

-‘ দেখুন একটা মেয়ে একটা ছেলেকে কখনো জ’ড়িয়ে ধরে না বা তার দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকায় না। যে দৃষ্টি আমি লিলির চোখে দেখেছি আপনার জন্য তাই জিগেস করছি।’

-‘ হু যদি তাই বলো তাহলে তো সত্যি টা বলতেই হয়। হ্যাঁ লিলি আমাকে পছন্দ করে আমাদের বিয়ে হবার কথা ছিলো কিন্তু লিলিকে আমার কখনোই ভালো লাগেনি। মামা মামী সবাই চাইতো ও আমার বউ হোক কিন্তু ওই যে বললাম ওকে আমার ভালো লাগেনি, তাই ওকে বিয়ে করিনি।’

-‘ ওকে বিয়েটা করলেই পারতেন! সে আধুনিক, সুন্দরী বড়লোক বাবার মেয়ে সবধরনের সুবিধাই পেতেন। খামোখা আমার মতন একজনকে বিয়ে করলেন।’

পূর্নিমা আর কিছু না বলে রুম থেকে ত্যাগ করলো। নিবিড় এখনো তাকিয়ে আছে পূর্নিমার যাওয়ার দিকে চেয়ে। মেয়েটা হুট করে কি বলে কিছুই বুঝতে পারে না মাঝেমধ্যে!
——————-

সারাদিন কে’টে যায় পূর্নিমা রান্নাঘরে ভিন্ন রকমের কাজ দিয়ে। নিবিড় অফিস থেকে ক’দিন ছুটি নিয়েছে। পূর্নিমা নিবিড়ের থেকে যথাসম্ভব দুরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে আর নিবিড় ছ’টফট করছে কখন পূর্নিমা তার কাছে আসবে কিন্তু পূর্নিমা যেনো কাছে আসা তো দূর নিবিড়ের থেকে দূরে দূরে থাকাই তার প্রধান কাজ! সারাদিন এভাবেই কে’টে যায় পূর্নিমা বাহিরে নিবিড়ের থেকে দূরে দূরে থাকে। রাত্রেবেলা সব কাজ গুছিয়ে নিবিড় অপেক্ষায় আছে এবার বুঝি পূর্নিমার দেখা মিলবে। অবশেষে সেই সন্ধিক্ষণ আসলো,

-‘ শুনুন আজকে আমি আমি একটু ডলের সঙ্গে ঘুমাবো ও বায়না করেছে। আপনি শুয়ে পড়ুন আমার জন্য অপেক্ষা না করে।’

নিবিড়ের সমস্ত আশায় পানি ঢেলে দিয়ে পূর্নিমা চলে গেলো সেখান থেকে! ডল নিবিড়ের বোনের মেয়ে আজকেই এসেছে ছোট্ট মিষ্টি একটা বাচ্চা। একদিনে এসেই যেনো তার সমস্ত ভাব জমেছে পূর্নিমার সঙ্গে। সে জন্যই পূর্নিমা ডলের আবদার রাখতে ডলের সঙ্গে ঘুমাতে গেছে আর ওদিকে নিবিড় সারাদিনের অপেক্ষা শেষে যখন ভেবেছে পূর্নিমাকে কাছে পাবে তখুনি পূর্নিমা চলে যাওয়ার কারনে মন খারাপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো নিবিড়।
———————

রাতের আঁধার কে’টে সকালের রঙিন সূর্যদয় উঁকি দিয়েছে। চারদিকে স্নিগ্ধ কোমল পরিবেশ দেখে কারো মন খারাপ নিমিষেই ভালো হয়ে যাবে। জানলা ভেদ করে সূর্যের কড়া আলো চোখে পড়তেই নিবিড় চোখ মুখ কুচকে তাকায়। কোনো কোমল নারীর কন্ঠস্বর কানে যেতেই মস্তিষ্ক বুঝে নেয় এই নারীটিই তার প্রেয়সী! ঘুম থেকে ওঠেই পূর্নিমাকে নিজের রুমে দেখতে পায়।

-‘ কি ব্যাপার আজকে একেবারে সকাল সকাল?’

-‘ বলি বেলা তো আটটা বেজে গেছে আপনি এখনো ঘুমাচ্ছেন? কালকে সারারাত কি করেছেন ঘুমাননি তখন? তাড়াতাড়ি উঠুন। আজকে তো অফিসে যাবার কথা আছে আবার। আর কতোদিন বাড়িতে থাকবেন? এবার চলুন!’

পূর্নিমার কথা শুনে নিবিড়ের হুঁশ ফিরে। আসলেই তো কালকে দুপুরে খাবারের সময় সে নিজে পূর্নিমাকে আজকে অফিসে যাবার কথা বলছিলো অথচ আজকে নিজেই বেমালুম ভুলে গেছে সবটা? তড়িঘড়ি করে ওঠে ফ্রেশ হয়ে একেবারে নিচে নামলো। নিচে নিবিড়ের মা বসে ছিলো ছেলেকে দেখতে পেয়েই বলে ওঠেন,

-‘ বউমাকে সাবধানে নিয়ে যাস। চাকরি না করলেও হতো কিন্তু বউমার ভাইটা তো এখনো বড়ো হয়নি তোর শশুড়মশাই ও অসুস্থ। এই দু এক বছর চাকরিটা করুক ওই বাড়ির প্রতিও তো একটা দায়িত্ব আছে সে দায়িত্ব ও পাালন করুন নির্বিঘ্নে আমাদের কারোরই কোনো আপত্তি নেই। সাবধানে যাস দু’জন।’

পূর্নিমা মুগ্ধ হয়ে তার শাশুড়ির কথা শুনতে লাগলো। একটা শাশুড়ী মা যে নিজের মায়েরই আরেক প্রতিচ্ছবি সেটা বোধহয় নিবিড়ের মা’কে না দেখলে বুঝতো না। আসলেই বিয়েটা ভূল ছিলো না হয়তো নিবিড় একটু পা’গ’লা’মো করে কিন্তু তা তো পূর্নিমারই জন্য এটা ভেবে স্মিত হাসলো পূর্নিমা। মনে মনে উপর ওয়ালাকে শুকরিয়া জানালো এরকম একটা পরিবার দেবার জন্য। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে ওঠলো নিবিড়ের সঙ্গে। গাড়িতে ওঠেও পূর্নিমার যেনো সমস্ত ধ্যান ফোনের ভেতর, পাশে যে নিবিড় বসে আছে যেনো তার কোনো ইয়াত্তাই নেই। নিবিড় এতে মনঃক্ষুণ্ন হলো কালকে থেকে পূর্নিমা এরকম আশ্চর্যজনক ব্যবহার করলেও আজকে তাদের বাড়িতে এসেই যেনো পূর্নিমার এরকম ব্যাবহার বেড়ে গেছে। সে নিবিড়ের থেকে দূরে দূরে থাকছে দরকার ছাড়া কথাও বলছে না। এরূপ ব্যাপার নিবিড়ের মনে অশান্তির সৃষ্টি করলো!
————————

অফিসে ঢুকেই নিবিড় নিজের কেবিনে চলে যায় আর পূর্নিমাকে সবাই মিলে শুভেচ্ছা জানায় যারা রিসিপশনে যেতে পারেনি। এর ভেতর হঠাৎই একজন বলে ওঠলো,

-‘ তা বেশ করলে কিন্তু পূর্নিমা! তোমাদের অবস্থা অনুযায়ী নিবিড় স্যারকে টার্গেট করে বিয়েটা করলে সব দিক দিয়েই সুবিধা আর সুবিধা। কি করেছো তুমি? নিশ্চয়ই কোনো জাদু করেছো? নইলে নিবিড় স্যার তোমাকে বিয়ে করে কি করে?’

এতোক্ষণ ধরে সবার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বললেও এই কথাটি পূর্নিমার কানে যেতেই মুখের সমস্ত হাসি এক নিমিষেই মিলিয়ে গেল!

-‘ জাদু করতে হয়নি উনি নিজ থেকেই আমাদের বাড়িতে হুট করে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। এবার আমার মতন মেয়েকে উনি বিয়ে কেনো করলো এসব প্রশ্নের উত্তর উনার কাছ থেকে জেনে নিবেন?’

মনে এক রাশ খারাপ লাগা নিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করলো পূর্নিমা। কালকে সকালবেলা লিলির কথা তারপর আজকেই আবার এসব কথা সব মিলিয়ে পূর্নিমার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে! ওই বাড়িতে সবার আচরন দেখে মনে হয় খুব ভাগ্য করে পেয়েছে এরকম শশুড়বাড়ী। আবার কিছু লোকজনের কথা শুনে মনে হয় যেনো এই বিয়েটা না হলেই ভালো হতো! এসব কথা পূর্নিমা নিজের মনেই চে’পে রেখে দিয়ে উপরে উপরে সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলছে কিন্তু নিবিড়ের থেকে দুরত্ব বজায় রাখছে। একটা চাপা অভিমান তৈরী হয়েছে পূর্নিমার নিবিড়ের প্রতি এই ধরনের কথা শুনতে শুনতে। যদিও বা নিবিড় এসবের কিছুই জানে না তবুও অভিমানের পাহাড় যেনো দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে পূর্নিমার! সে জন্যই নিবিড়ের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলছে!

#চলবে