প্রণয়লীলা পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0
563

#প্রণয়লীলা — [৯]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা

____________________________

-‘ দেখো তানভীর আপাততো তোমার সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাইছি না মানে না! তুমি রুম থেকে জাস্ট আউট যাও বলছি।’

তানভীর নিবিড়কে কিছু বলতে চেয়েও নিবিড়ের রুডলি কথার কারনে আর সাহসে কুলোয়নি কিচ্ছু বলার ফলে তানভীর চুপচাপ রুম থেকে চলে যায়।

-‘ আপনি ভূল বুঝবেন না*

পূর্নিমাকে থামিয়ে দিয়ে নিবিড়ই বলা শুরু করলো,

-‘ আমি জানি তানভীর তোমাকে নানান সময়ে নানাভাবে সাহায্য করে এসেছে। তোমার বাবার চিকিৎসার খরচও জুগিয়েছে তাই তুমি না করতে পাো নি। সেসব বাদ দাও আমি জানি তুমি কিরকম তাই কোনরূপ সাফাই গাইতে হবে না তোমাকে।’

নিবিড় পূর্নিমার কাছে গিয়ে পূর্নিমার মা’থায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। পূর্নিমা কিচ্ছু বলছে না আগের ন্যায় চুপচাপ। খাবার খাইয়ে দিলো নিবিড় পূর্নিমাকে অতঃপর একটু পরেই পূর্নিমাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। বাড়িতে গিয়েই পূর্নিমা দেখে লিলি সোফায় বসে আছে। সবাইকে দেখে মুখে হাসি ফুটলেও লিলিকে দেখে যেনো পূর্নিমার হাসি মিলিয়ে গেলো মুখ থেকে! নিবিড় সেটা বুঝতে পেরে লিলির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

-‘ দেখ লিলি কে কি ভাবলো, কি হবার কথা ছিলো সেটা নিয়ে আমার কোনো মা’থাব্যাথা নেই। আমার বর্তমান ভবিষ্যৎ দু’টোই পূর্নিমা। তাই আমার মা’থাব্যাথা হবে যদি ওকে কিছু বলে তো। আশা করি তুই বুঝে গেছিস আমি ঠিক কি মিন করতে চাইছি তোকে? আর যদি ও না বুঝিস তাহলে শুনে রাখ তুই পূর্নিমার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলবি, এমন কোনো কথা বলবি না যাতে পূর্নিমা কষ্ট পাক। পূর্নিমা যেমনই ও আমার স্ত্রী আমি নিজে পছন্দ করে ওকে বিয়ে করেছি ওর সম্পর্কে কোনো কিছু শুনতে চাই না আমি বুঝেছিস তুই?’

হাসপাতাল থেকে এসেই যে নিবিড় লিলিকে এরকম ভাবে কথা শোনাবে সেটা লিলির কল্পনাতেও আসেনি! সকলে সামনে থাকায় লিলির নিজের অপ’মানে লেগেছে। লিলি কিচ্ছু না বলে উপরে চলে যায় নিজের রুমে। তারপরেই সে একেবারে বাড়ি ছেড়েই চলে যায়!
বাড়িতে গিয়ে পুরো দু’দিন নিবিড় পূর্নিমার জন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নেয় যাতে পূর্নিমার খেয়াল রাখতে পারে ভালো করে। এই দু’দিনে নিবিড় পূর্নিমার সঙ্গে যেনো ছাঁয়ার মতন মিশে ছিলো পূর্নিমা মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই নিবিড় সেটা পূর্নিমার মুখের সামনে হাজির করতো। পূর্নিমা এই দু’দিনে মুগ্ধ হয়ে দেখেছে মানুষটাকে। একটাই কথা কেবল একটা মানুষ কতোটা আকুল আর নিষ্পাপ হলে এতোটা ভাবতে পারে তার জন্য? এই মানুষটার প্রতি সে তো মায়ায় জড়িয়েই গেছে এবার সেই মায়া এই কয়দিনেই যেনো ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়েছে! কিন্তু সেটা এখনো তার মনের ভেতর অব্যাক্তই রেখেছে! আপাততো পূর্নিমা পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে গেছে, একটা মানুষ তার জন্য এতোকিছু করে চলেছে এর পরেও সুস্থ না হয়ে পারা যায়?

রাত্রেবেলা পূর্নিমা অপেক্ষা করছে কখন নিবিড় রুমে আসবে। নিবিড় বাহিরে গিয়েছে একটু সেই থেকেই পূর্নিমা অপেক্ষা করে যাচ্ছে নিবিড়ের জন্য। ছুটি দু’দিনের জন্য নিলেও আজকে নিয়ে যে সে ছুটি তিন দিন গড়িয়েছে সেটা বোধহয় নিবিড়ের খেয়াল নেই। এখন পূর্নিমা পুরোপুরি ভাবে সুস্থ আছে। নিবিড় বাহিরে যেতেই পূর্নিমা আলমারি থেকে একটা লাল নঙের টুকটুকে শাড়ি বের করে পরে নিলো। কেনো যেনো আজকে হুট করে সাজতে ইচ্ছে হচ্ছে। লাল শাড়ি, লাল চুড়ি, মা’থায় গাজরা, ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক সব মিলিয়ে পূর্নিমাকে বেশ লাগছে। সাজগোজ শেষ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রহর গুনছে কখন নিবিড় আসবে। নিবিড় বাড়িতে এসেই পূর্নিমাকে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় যায়। বারান্দায় যেতেই পূর্নিমাকে দেখতে পায়। এক মুহুর্তের জন্য নিবিড়ের চোখ আঁটকে গেলো পূর্নিমার উপর! মেয়েটাকে আজকে এতো সুন্দর লাগছে কেনো? হয়তো নিবিড় আজকে প্রথম পূর্নিমাকে এভাবে সাজে দেখতে পেলো তাই। কিন্তু পূর্নিমাকে যেনো অসম্ভব সুন্দর লাগছে নিবিড়ের কাছে। কিন্তু মেয়েটা এভাবে হঠাৎ সাজলো কেনো? আপাততো কিছু সময় মা’থা থেকে প্রশ্নগুলো বাদ দিয়ে নিবিড় পূর্নিমার কাছে গেলো।

পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো পূর্নিমাকে, পূর্নিমা বুঝতে পারলো এটা নিবিড়ের ছোঁয়া। সেও পরম আবেশে চোখ খানি বন্ধ করে নিলো। নিবিড়ের স্পর্শ অনুভব করছে আজ। নিবিড় কিছুক্ষণ সেভাবেই থেকে পূর্নিমাকে নিজের দিক ফিরিয়ে নেয়। আরো এক বার দু চোখ ভরে দেখে নেয় পূর্নিমাকে যেনো সত্যিই সমস্ত পূর্নিমার আলো পূর্নিমার সঙ্গে আছে!

-‘ তুমি জানতে চেয়েছিলে না পূর্নিমা আমি কেনো জোর করে ওসব মিথ্যা বা’হা’না দিয়ে তোমাকে বিয়ে করেছিলাম? তোমাকে ভালোবাসি বলে! হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবাসি তবে সেটা ক’দিনের নয় পুরো ছয় মাস জুড়ে আমি তোমাকে ভালোবেসে এসেছি। তুমি যেদিন অফিসে জয়েন করেছিলে সেদিন থেকেই তোমার ব্যাবহার, তোমার কাজ কর্ম সবকিছুই ভালো লাগতো। তোমাকেও ভাল্লাগতো আস্তে আস্তে সেটা ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে ভেবেছি তোমার কাছে সেটা প্রকাশও করবো কিন্তু তার আগেই জানতে পারি তানভীরের সঙ্গে না-কি তোমার সম্পর্ক আছে যদিও বা সেটা ভূল ধারনা যা এখন বুঝেছি, কিন্তু তখন তো জানতাম তুমি তানভীরকে ভালোবাসো, পরে ভাবলাম তুমি যার সঙ্গে ভালো থাকো তার কাছেই থাকো না হয় কিন্তু পরে জানতে পারি তানভীর মোটেও সুবিধার নয় ওর আরো অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে তখুনি সিদ্ধান্ত বদলে ফেলি। মনে মনে ভেবে নিই তোমাকেই বিয়ে করবো কিন্তু তুমি যেহেতু তানভীরকে ভালোবাসো সে জন্য আমার কাছে তোমাকে বাধ্য করা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। আর আজকে দেখো তোমাকে ওভাবে না বললে হয়তো আজকের দিনটা আসতোই না! পরিশেষে বলবো যা হয়েছে তার জন্য ক্ষমা করে দিও আমাকে। তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা মিথ্যা নয় কোনোমতেই এটা চিরন্তন সত্যি।’

একদমে সমস্ত কথাগুলো বলে দম নিলো নিবিড়। পূর্নিমা এতোক্ষণ মনযোগ সহকারে নিবিড়ের বলা কথাগুলো শুনেছে। মানুষটা তার জন্য এতোটা পা’গ’লামি করেছে! সবকিছুর জন্য তো পূর্নিমাই তাকে ঘিরেই নিবিড় এতোকিছু করেছে এটা পূর্নিমার কাছে সবটা পরিষ্কার! তাছাড়া এ কয়দিনে পূর্নিমা বেশ ভালো করেই বুঝেছে নিবিড় কি রকম মানুষ। শুধু ওই ঘটনাটা ছাড়া পূর্নিমা নিবিড়ের ভেতর আর কোনো দোষ পায়নি তাহলে ওই একটা কারন ধরে মানুষটাকে কি করে দূরে সরিয়ে রাখবে সে? যেখানে কারনটার মূল তো সে নিজেই! আর সত্যি বলতে পূর্নিমা নিজেও তো ওই মানুষটার মায়ায় পড়ে গেছে এটাও বা অস্বীকার করবে কি করে?

-‘ ভালোবাসি আপনাকে নিবিড় মাহমুদ ভালোবাসি বড্ড! হু তানভীরের সঙ্গে বন্ধুত্ব বিহীন কিচ্ছু নেই, মানবতার খাতিরে সেরকম কঠোর ও হতে পারিনি ওর সঙ্গে কিন্তু কখনো ওকে মনেও জায়গা দিই নি! আপনি যেটুকু করেছেন সেটা আপনার ভালোবাসার জন্য, আর এই ভালোবাসার কাছে সবকিছু তু’চ্ছ! ভূলে যান অতীত আসুন সবকিছু নতুন করে শুরু করি। আপনার প্রতি মায়া যে আমার এই জন্মেও কা’ট’বে না যা বুঝেছি আপনার সঙ্গে এই ক’দিন থেকে। জীবনে চলার জন্য আপনার মতন মানুষটাকে খুব করে দরকার! জানিনা আপনার মতন করে ভালোবাসতে পেরেছি কি-না তবু চেষ্টা করে যাবো আপনাকে আপনার থেকেও বেশি ভালোবাসার! ভালোবাসি আপনাকে।’

পূর্নিমার কথাগুলো নিবিড়ের কা’নে পৌঁছাতেই নিবিড়ের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে ওঠলো! খুশির চো’টে পূর্নিমাকে জড়িয়ে ধরে কোলে নিয়ে আসলো। এই কথাগুলোই তো সে শুনতে চেয়েছিলো আর আজ শুনতে পেলো। অবশেষে সকল অপেক্ষার অবসান ঘটলো। দুটি মনের মিলন ঘটলো। আর কোনো বাঁধা রইলো না। ভালো থাকুক ভালোবাসা সকলের তরে।

——————-#সমাপ্ত—————-