প্রণয়লীলা পর্ব-০৮

0
288

#প্রণয়লীলা — [৮]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা

_________________________

রাস্তা ধরে আনমনে হাঁটছিলো পূর্নিমা। কোনো খেয়াল নেই তার, মনে শুধু নিবিড়ের বলা কথাগুলোই যেনো কানে বাজছে। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে ফুটপাত ছেড়ে মেইন রোডে চলে এসেছে নিজেরও খেয়াল নেই বোধহয়। পিছন দিক দিয়ে ট্রাক হর্ন দিচ্ছে বারংবার! পূর্নিমা দু তিন বারের বেলায় শুনেনি যখন শুনলো ততক্ষণে ট্রাকটি পূর্নিমাকে ধা’ক্কা মে’রে চলে গেছে! রোডের মধ্যে পূর্নিমার নিথর দেহ পড়ে আছে। রাস্তা লাল র’ক্তে রঞ্জিত হয়ে আছে পূর্নিমার র’ক্তে! পূর্নিমা অজ্ঞা’ন হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। রাস্তার লোকজন ধরাধরি করে পূর্নিমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পূর্নিমার ফোনে লাস্ট কল নিবিড়ের ছিলো সে সূত্র ধরেই নিবিড়কে কল করা হয়।
————————-

হাসপাতালে পূর্নিমার বেডের পাশে কোনোমতে বসে আছে নিবিড়। রাত্রি এখন মধ্যাহৃ। ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে জানান দিচ্ছে রাত প্রায় ১ টা বাজতে চললো। চারিদিকে ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার। কোনো সাড়া শব্দ নেই। সবার অতল ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে। নিদ্রাহীন রয়েছে শুধু নিবিড়! নিবিড়ের চোখে ঘুম নেই, পূর্নিমাকে এভাবে দেখে বারবার সে নিজের কাছে নিজে ছোটো হচ্ছে। নিবিড়ের মনে হচ্ছে তার জন্যই আজকে পূর্নিমা এই অবস্থায় আছে! একসময় এভাবেই থাকতে থাকতে নিবিড়ও ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো। সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে রাত্রির শেষ প্রহরে যেনো শরীরটা আর চলছে, তাই নিবিড়ও ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।

সকাল সকাল ঘুম ভাঙলো পূর্নিমার। চারিদিকে আজানের মিষ্টি কলধ্বনি আর পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে ওঠেই দেখতে পায় মা’থা’য় ব্যা’ন্ডে’জ লাগানো তখুনি মনে পড়ে যায় কালকের ঘটনা। বেড থেকে ওঠতে চেয়েও ওঠতে পারছে না পূর্নিমা, মা’থাটা কিরকম যেনো ঘুরছে। চোখ পড়লো পাশেই বসে থাকা নিবিড়ের দিকে! মানুষটা একটা চেয়ারের উপর বসে থেকে কিরকম করে ঘুমিয়ে আছে। এরকম ভাবে থাকলে তো পরে শরীর ব্যা’থা করবে। পূর্নিমা নিবিড়কে ডাকার সিদ্ধান্ত নিলো। নিবিড়কে নাম ধরে দু বার ডাক দিতেই ওঠে গেলো ধরফড় করে। সামনে পূর্নিমাকে চোখ খুলে তাকাতে দেখতে পেলো।

-‘ পূর্নিমা তুমি কখন ওঠেছো ঘুম থেকে? তোমার কোথাও ব্যাথা করছে না তো? ডাক্তার ডেকে দিবো আমি? কি হয়েছে খুলে বলো?’

পূর্নিমা নিশ্চুপ হয়ে যায় মানুষটির এরকম ছটফটানি দেখে। এক রাত্রের মধ্যে নিজের কি হাল করেছে? চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে বোধহয় কালকে রাত্রে ঘুম হয়নি! চোখমুখোও কেমন লাগছে।

-‘ সকাল হয়েছে আর কতো ঘুমাবো? এখন চোখ খোলাটা কি স্বাভাবিক নয় বলুন? এতো ব্যস্ত হচ্ছেন কেনো বলুনতো আমাকে নিয়ে?’

নিবিড়ের মুখে স্মিত হাসি। আস্বস্ত হলো পূর্নিমার কথা শুনে।

-‘ হু আচ্ছা কোনো দরকার হলে বলো আমাকে কেমন? আমি তোমার জন্য খাবার আনছি একটু পর তো ওষুধ খেতে হবে তোমায় তাই না? তুমি একটু বসো।’

নিবিড় পূর্নিমাকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে যায় হাসপাতালের কেবিন থেকে! পূর্নিমা নিবিড়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে ভাবছে মানুষটা এরকম কেনো? কিরকম পা’গ’লাটে টাইপের আবার হুট করেই রে’গে যায় একে বোঝা যেনো দা’য় হয়ে পড়ছে পূর্নিমার পক্ষে! একটু পরেই নিবিড় ফিরে আসলো কতোগুলো খাবার নিয়ে। শুধু নিবিড় একা নয় সঙ্গে নিবিড়ের বাড়ির লোক পূর্নিমা মা বাবা সবাই এসেছে। সবাই পূর্নিমার সঙ্গে টুকটাক কথা বলে আবার চলেও গেছে বাকি রইলো নিবিড়।

-‘ অনেক কথা হয়েছে এবার খাওয়া দাওয়া ও তো করতে হবে।’

-‘ আপনি খেয়েছেন?’

পূর্নিমার কথা শুনে নিবিড়ের হাত থেমে যায় কিঞ্চিৎ মুহুর্তের জন্য। পরক্ষণেই আবার চামচ পূর্নিমার মুখের কাছে নিতেই পূর্নিমা হাত দিয়ে মানা করে দেয়।

-‘ এখন এরকম করছো কেনো? খেতে হবে তো? না হলে তুমি সুস্থ হবে কি করে?’

-‘ আপনাকে তো জিগেস করলাম আপনি খেয়েছেন কিনা আপনি তো কিছুই বলছেন না? আমি জানি আপনি খাননি কিচ্ছু দুপুর থেকে। সেটা আপনার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপনি আমাকে খাওয়াবেন ঠিকআছে তার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকেও খেতে হবে তবেই আমি খাবো।’

পূর্নিমার কথার পৃষ্ঠে নিবিড় কোনো কিছু বললো না আর। সে পূর্নিমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেতে লাগলো। খাওয়া শেষ হতেই পূর্নিমাকে ওষুধ খাইয়ে দেয়।

-‘ এখন কি রকম লাগছে?’

-‘ হু বেশ ভালোই লাগছে।’

-‘ আচ্ছা এভাবে রে’গে গেলে কেনো তখন? আমি না হয় একটু ওভাবে বলেইছি তার জন্য তুমি এভাবে চলে যাবে রে’গে? দেখলে তো এর ফল কি হলো?’

নিবিড়ের কথা শুনে পূর্নিমা কিচ্ছু বললো না। চুপ করে রইলো। ফের কিছুক্ষণ পর মুখ খুললো।

-‘ একটা ভূল বিয়ে ছিলো *

পূর্নিমাকে বাকি কথা শেষ করতে না দিয়ে নিবিড় পূর্নিমার মুখে হাত দিয়ে চে’পে ধরলো যার দরুন পূর্নিমা পুরো কথা শেষ করে ওঠতে পারেনি।

-‘ একদম বলবে না ওসব কথা! কিচ্ছু ভূল ছিলো বুঝলে কিচ্ছু ভূল ছিলো না। আমি সবটা জেনে শুনেই তারপর সব করেছি। আমি তখন রে’গে গিয়ে বলেছি এসব কথা তুমি ধরে বসলে কি করে হবে পূর্নিমা? জানো কালকে যখন তোমাকে খুঁজে পায়নি কি রকম অবস্থা হয়েছিলো আমার! মানুষ যে-ই যা খুশি বলুক না কেনো আমার শুধু তুমি হলেই চলবে আর কিচ্ছু না।’

পূর্নিমা নিবিড়ের কথা এক ধ্যানে শুনছে মনোযোগ সহকারে। মনে হচ্ছে না মানুষটা কোনো মিথ্যা বলছে। আসলেই তো যে যাকে ভালোবাসে শুধু সে থাকলেি হলো আর কি লাগে?

-‘ হয়েছে এবার যান তো বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। ডাক্তার তো বললোই আমাকে বিকেলে রিলিজ করে দিবে। আপনি বাড়িতে যান তারপর একেবারর বিকেলে আসবেন।’

-‘ যাবো কিন্তু বিকালে নয় এই দুপুরের আগেই চলে আসবো আমি। তোমাকে খাইয়ে দাইয়ে একেবারে বিকালে বাড়িতে নিয়ে যাবো দেখো। তুমি এখন রেস্ট করো আর কিচ্ছু লাগলে সিস্টারদের বলো কেমন? আমি খুব দ্রুতই ফিরে আসবো তোমার কাছে।’

নিবিড় চলে যেতেই পূর্নিমা নিজের আনমনে হেঁসে ওঠে। মানুষটা একটু বেশিই ভাবছে বোধহয় তাকে নিয়ে। তবে এই বেশি ভাবাটাও যেনো তার পরম প্রাপ্তি মনে হচ্ছে।
——————

দুপুরের প্রখর রোদ। সূর্য যেনো মা’থা’র উপর চড়ে বসেছে। খটখটে রোদ চারিদিকে। নিবিড় যাবার পর পূর্নিমা একটু ঘুমিয়েছিলো এখন ওঠলো। ঘড়িতে প্রায়ই বারোটা বেজে গেছে মানে একটু পরই নিবিড় চলে আসবে। পূর্নিমা সারাক্ষণ শুয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত বোধ করলো। নিবিড় থাকলে নাা হয় ওর সঙ্গে কথা বলতো ভাল্লাগতো কিন্তু এখন নিবিড়ও নেই তাই যেনো কোোন কিছুই ভালো লাগছে না। হেলান দিয়ে একটুখানি বসতেই রুমে তানভীরকে ঢুকতে দেখতে পেলো পূর্নিমা! এখন যেনো তার তানভীরকে দেখলেই রা’গ ওঠে যায় বিশেষ করে সেদিনের বলা কথাগুলো মনে পড়ে যায়।

-‘ কেনো এসেছো এখানে? চলে যাও বলছি।’

-‘ আরে চলেই যাবো কিন্তু তুমি হাসপাতালে আর আমি না এসে পারি? তাই তো এসেছি তোমাকে দেখতে। ‘

-‘ দেখেছো এবার চলে যাও। আমার স্বামী এসে তোমাকে দেখলে রে’গে যাবে।’

-‘ এরকম করছো কেনো পূর্নিমা? আমি একটুখানি খাবার খাইয়ে দিবো তোমাকে। দেখো দুপুর হয়ে গেছে এখন তো তুমি খাবে তাই না? একটুখানি খেয়ে নাও বলছি খাবারগুলো এনেছি ফিরিয়ে দিও না।’

তানভীরের আকুল আবেদন ফেরাতে পারলো না পূর্নিমা! আর যাই হোক খাবার মুখের সামনে ধরলে সেটা তো ফেরানো যায় না। এক গ্রাস মুখে নিতেই পূর্নিমা দেখে নিবিড় রুমে হাজির! তাহলে কি এবার নিবিড় ভূল বুঝবে পূর্নিমাকে?

#চলবে