প্রিয়া তুমি পর্ব-০৩

0
89

#প্রিয়া_তুমি
#পর্বঃ৩
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

তানিয়ার কথায় সামনে থাকা পুরুষটি হু হা করে হেসে উঠল। হাতটা ছাড়ার বদলে আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরল। বি’রক্ততে তানিয়ার চোখ মুখ কুঁচকে এলো। বাম হাতের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,
“হাতটা ছাড়তে বলেছি।

সামনে থাকা মানুষটা তানিয়ার দিকে একটু এগিয়ে এলো। ফিসফিসিয়ে তানিয়াকে বলল,
“ছেড়ে দিতে বলছো? একদিন বোধহয় এই হাতটাই ধরতে চেয়েছিলে।

তানিয়া চমকে তাকালো। হুট করে এমন কথায় খানিকটা অপ্র’স্তুত হয়ে পড়ল। তবে সামনে থাকা মানুষটার কাছে এই অপ্র’স্তুত ভঙ্গি প্রকাশ করতে চাইলো না। কাঠকাঠ গলায় বলল,
“আমি কখনো বলেছি আমি আপনার হাতটা ধরতে চাই?

মানুষটা আবারো ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। আগের মতোই বলে উঠল,
“বলতে হবে কেন? তোমার চোখ মুখ দেখলেই আমি বুঝতে পারি। তুমি বলতো? তোমার কি আমাকে ভালো লাগতো না?

তানিয়া দু’চোখ বন্ধ করে শ্বা’স ফেলল। হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
“দেখুন আমার কোনো কালেই আপনাকে ভালো লাগেনি। একটু ভালো ব্যবহার করলেই ভালো লাগা হয় না। আপনি ভুল করছেন। আর এই মুহূর্তে আপনার এইসব কথা সাজে না। আমি এখন বিবাহিত। আর তার চেয়েও বড় কথা আমি আপনার ভাইয়ের বউ। সম্পর্কে আপনার ভাবী হই।

রনিত এবার উচ্চ’স্বরে হেসে উঠল। তানিয়ার মুখ থেকে যেন মজার কোনো জোকস শুনেছে। হুট করে এমন হাসির কারণ তানিয়া ধরতে পারল না। রনিত আলগোছে তানিয়ার ধরে রাখা হাতটা ছেড়ে দিল। হাসি থামিয়ে তাচ্ছি’ল্যের স্বরে বলল,
“শুনলাম ভাইয়ের নাম্বার নাকি আজকাল ভাবীর ব্ল’ক লিস্টে থাকে?

তানিয়া চমকে উঠল। খানিকটা ঘাবড়ে গেল। এমন সত্যটা কী করে প্রকাশ পেল সেটাই ভাবতে লাগলো। তখনই মনে পড়লো রিমার কথা। রিমা মাস খানিক আগে যখন বেড়াতে এসেছিল তখন বান্ধবীর সাথে কথা বলবে বলে তানিয়ার ফোনটা নিয়েছিল। কিন্তু অ’দ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে রিমা তানিয়ার ফোনের ইমু, হোয়াটসঅ্যাপ চেক করে। রিমা যখন তানিয়াকে ফোনটা ফেরত দেয় তখন বলে,
“কী ব্যাপার ভাবী? ভাইয়ার নাম্বার ব্ল’ক লিস্টে যে?

তানিয়া রিমার কথায় অপ্র’স্তুত হয়ে পড়ে। কথা ঘুরানোর জন্য মুচকি হেসে বলে,
“আসলে আপু উনার সাথে একটু ঝগড়া হয়েছিল। তার জন্য ব্ল’ক করেছি। একটু পরেই খুলে দিব।

তানিয়ার কথায় রিমা খুশি হয়েছিল। তার চোখ জোড়া চিকচিক করে উঠেছিল। তানিয়াকে অবাক করে দিয়ে রিমা বলে উঠেছিল,
“না, না। ব্ল’ক থেকে খোলার দরকার নেই। ঝগড়া যেমন করছিলে তেমনি করে যাও।

রিমার কথায় তানিয়া অবাক হয়ে বি’স্মিত হয়ে তাকিয়ে ছিল। রিমার এমন কথার কারণ ধরতে পারল না। কিংবা কথাটা বুঝার চেষ্টা ও করলো না।

তবে কি রিমাই রনিতকে এই কথা জানিয়ে দিয়েছিল? তানিয়া শুকনো ঢোক গিলে। আবারো সত্যটা গোপন করতে পুনরায় মি’থ্যে বলতে উদ্যত হলো,
“ব্ল’ক লিস্টে নাম্বার থাকলে যে আন’ব্লক করা যায় না তেমনটা কিন্তু নয়। ঝগড়া হয়েছিল বিধায় নাম্বার ব্ল’ক করেছি। ঝগড়া মিটে গেছে নাম্বারও আন’ব্লক হয়ে গেছে।

রনিত ভ্রুঁ দুটো নাচিয়ে বলে উঠল,
“তাই নাকি? আন’ব্লক যে করেছো বিশ্বাস করবো কি করে? দেখি প্রমাণ দাও তো।

তানিয়া এবার রেগে গেল। রনিতের চোখের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলে উঠল,
“আপনি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছেন। আপনার সাহস হয় কি করে, আমার রুমে এসে আমার হাত ধরে টানাটানি করার? সেই সাথে এখন আবার আমার পার্সোনাল ব্যাপারে নাক গলাচ্ছেন। আমার স্বামীর নাম্বার আমি কি করবো না করবো সেটা একা’ন্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনি কে এসব ব্যাপারে নাক গলানোর? বেরিয়ে যান। এক্ষুনি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যান।

তানিয়ার এমন রাগী কন্ঠ’স্বর শুনেও রনিত হাসল। মুখে হাসি রেখে বলে উঠল,
“ভাল্লাগছে, তোমার এই তেজটা আমার সেই ভাল্লাগছে। কি সাহস ভাবা যায়? দুদিন হলো না এই বাড়িতে এসেছো। এখনই আমায় রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলছো? তবে ব্যাপার না। রুম থেকেই বের করতে পারবে। বাড়ি থেকে তো বের করে দিতে পারবে না।

রনিত কথাটা বলে ঠোঁট গোল করে চুমুর ইশারা করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তানিয়ার শরীরটা ঘৃ’ণায় রী রী করে উঠলো। রনিত চলে যেতেই তানিয়া বিছানায় গিয়ে থম মেরে বসে রইল। চোখ থেকে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। তানিয়া চোখ দুটো ব’ন্ধ করে বলল,
“আল্লাহ এই ঝামেলাটা এতদিন পর কোথা থেকে এলো?

আজানের শব্দে তানিয়া চোখ মেলে তাকাল। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলল। মেঝেতে পড়ে থাকা কাপড়টা উঠিয়ে ভাঁজ করে রেখে দিল। তারপর চলে গেল ওয়াশরুমে। ওযু করে নামাজ পড়তে হবে।
____________

রনিত তানিয়ার রুম থেকে বেরিয়ে রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা রিমার দিকে তাকাল। দুজনের মুখেই হাসি। একই কারণে একই আনন্দে দুজনের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটেছে। রনিত নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে বলল,
“আমি যে কারণে হাসছি তুমিও কি একই কারণে হাসছো?

রিমা ঝটপট মাথা নাড়ালো। ঠোঁটে হাসি রেখে বলে উঠল,
“দুজনের মধ্যে হয়তো এখনো সম্পর্ক ঠিক হয়নি। যদি সম্পর্ক ঠিক থাকত তাহলে তানিয়া মোবাইল থেকে ভাইয়ার নাম্বারটা দেখিয়ে দিত। ভাইয়ার নাম্বার এখনো ব্ল’ক লিস্টে আছে। তাইতো তানিয়া নাম্বার দেখানোর বদলে রেগে গেল।

রিমার কথায় রনিত হেসে বলল,
“বাহ, তোমার দারুণ বুদ্ধি তো। কি সুন্দর সব কিছু বুঝে গেলে।
_____________

আমেনা বেগমের পাশে তানিয়া বসে আছে। সকলে খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেছে। তবে রাফসান এখনো বাসায় ফিরেনি। সেই যে সন্ধ্যের আগে বেরিয়েছে এখনো ফেরার নাম নেই। রাত এখন ১১ টার ঘর ছেড়ে ১২ টার ঘরে পৌঁছাবে। আমেনা বেগম না খেয়ে ছেলের জন্য অপেক্ষা করছেন। শাশুড়িকে না খেয়ে বসে থাকতে দেখে তানিয়াও খেতে পারছে না। আর না এখান থেকে উঠছে পারছে। জিনিসটা বড্ড দৃষ্টি’কটু দেখায়।

তানিয়া শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আম্মা অনেক রাত হয়ে গেছে। আপনি খেয়ে রুমে যান আমি এখানে অপেক্ষা করছি।

আমেনা বেগম মুখ খুলতে নিলেই কলিং বেল বেজে উঠে। আমেনা বেগমের মুখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে। দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। দরজা মেলার জন্য তানিয়ার আগেই দরজার দিকে চলে গেল।

তানিয়া আ’ড়ষ্ট ভঙ্গি’তে দাঁড়িয়ে রইল। সারাদিনে অনেক তো পালাই পালাই করেছে। আর কতো? এবার যে পালানোর পথ নেই।

রাফসান আমেনা বেগমের সাথে ড্রয়িং রুমে এসেই তানিয়া দেখতে পায়। তিনটা বছর, দীর্ঘ তিনটা বছর প্রিয়তমাকে দেখতে পেয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তানিয়ার মুখের দিকে। তবে তানিয়া তাকাল না। একটা বারের জন্যও রাফসানের মুখের দিকে তাকাল না। দেখতে পেল না তার দিকে রাফসান কতটা মু’গ্ধটা নিয়ে, আকা’ঙ্ক্ষা নিয়ে তাকিয়ে আছে।

তানিয়া খাবার আনতে রান্নাঘরে চলে যায়। রাফসান চেয়ারে বসে পড়ে। রাফসানের পাশে আমেনা বেগমও বসে। তানিয়া খাবার এনে পরিবেশন করল। আমেনা বেগম তানিয়াকেও তাদের সাথে বসে পড়তে বলল।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাফসান রুমে চলে যায়। তানিয়া চলে যায় বাসন ধুতে। বাসন ধুয়া শেষ করে পা চালায় রুমের দিকে। কি হলো সারাদিন পালিয়ে? এবার তো একই রুমে, একই বিছানায় থাকতে হবে।

তানিয়া রুমে ঢুকে রাফসানকে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে মোবাইল টিপতে দেখে। রাফসানকে দেখেও না দেখার ভান করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যায়। চুল গুলো খুলে আঁচড়ে বেনী করতে থাকে।

রাফসান মোবাইল থেকে চোখ তুলে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তানিয়া চুল বেনী করা শেষ করে রাফসানের বিপরীত দিকে গিয়ে রাফসানের দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়ে। রাফসান তানিয়ার এহেন কান্ডে বলে উঠে,
“শুনেছি মেয়েরা নাকি কোমলতার প্রতীক। কিন্তু আমার বউ কেন এতো কঠিন?

তানিয়া রাফসানের কথাটা সম্পূর্ণ উ’পেক্ষা করতে গিয়েও উ’পেক্ষা করতে পারলো না। যেহেতু কথাটা তাকে ইঙ্গি’ত করে বলেছে তাই সে বলে উঠল,
“মেয়েরা যেমন কোমল, নমনীয় থাকে ঠিক তেমনি পরিস্থিতি তাদের কঠিন করে তুলে। একদম পাথরের মতো কঠিন। যাতে আঘাত করা যায় না, ক’ষ্ট দেওয়া যায় না।

রাফসান অবাক চোখে চেয়ে রইল। তার প্রতি মেয়েটা এতো কঠিন, এতোটা?

#চলবে