প্রিয়া তুমি পর্ব-১৮

0
102

#প্রিয়া_তুমি
#পর্বঃ১৮
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

স’ন্ধ্যে হতেই বাড়িতে এসে হাজির হলেন মনোয়ারা বেগম। রাফসানের মামী। হাতে একটা ব্যাগ সম্ভবত কাপড়-চোপড় আছে ওই ব্যাগে। মনোয়ারা বেগমের হাতে ব্যাগ দেখে আমেনা বেগম অবাক ক’ন্ঠে বললেন,
“ভাবী আপনি এখানে থাকবেন?

মনোয়ারা বেগম আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল,
“আমি তোমার বাসায় থাকবো বলে কি তুমি খুশি হওনি? মা মেয়ে তিনজন মিলে থাকবো বলে সমস্যা হলে আমায় বলে দাও। আমি ওদের নিয়ে চলে যাচ্ছি।

আমেনা বেগম মাথা নাড়ায়। মনোয়ারা বেগমের কথায় দ্বি’মত পোষন করে বলে,
“না, না ভাবী। আমি খুশি হব না কেন? আমি খুব খুশি হয়েছি। আপনার যত দিন মন চায় আপনি থাকেন। আসলে এতোদিন এ বাড়িতে এসে থাকেন নি তো তাই জিঙ্গেস করলাম।

মনোয়ারা বেগম চুপ করে শুনলেন। বিশেষ কোনো প্রতি’ক্রিয়া দেখালেন না। রিমা এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। রিতা তানিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের এমন কড়া কড়া বাঁকা কথা তার পছন্দ হচ্ছে না। ফুফু তো কথাটা খারাপ ভাবে বলেনি। তবে আম্মু কেন এমন বাঁকা কথা বলবে?

মনোয়ারা বেগম নিচ তলার সোফায় বসে আছেন। তাকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। মনোয়ারা বেগম আড়চোখে তানিয়াকে দেখছেন। পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিলেন। নিচতলার দক্ষিণ দিকের রুমের দিকে চোখ যেতেই হেসে বলে উঠলেন,
“আরে সালমা। এদিকে এসো। ওখানে দাঁড়িয়ে আছো যে।

সালমা বেগম এক গাল হেসে এগিয়ে এলেন। মনোয়ারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আপনি ভালো আছেন ভাবী?

মনোয়ারা বেগম নিজের পাশে জায়গা করে দিয়ে বললেন,
“ভালো আছি। বসো দেখি এইখানে।

সালমা বেগম বসে পড়লেন। রাফসান তখনই কড়া গলায় বলে উঠল,
“এখানে থাকার দরকার নেই মামী। আপনি উপরে আসুন। রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিন।

মনোয়ারা বেগম রাফসানের দিকে তাকালেন। শা’ন্ত, স্থি’র দৃষ্টিততে তাকিয়ে থেকে বললেন,
“কেন? এখানে থাকলে কি সমস্যা? এখন তো রনিত এখানে নেই যে তোমার বউয়ের গা’য়ে হাত দিতে যাবে।

তানিয়া মনোয়ারা বেগমের মুখের দিকে তাকাল। উনি কি করে জানলেন? মনোয়ারা বেগম আবারো বললেন,
“রিমা আমাকে ফোনে সব কথা বলেছে। এতোদিনের জোড়া সংসারটা এখন ভে’ঙ্গে গেছে। আমার স’ত্যি খুব খারা’প লাগছে। রনিত এখন কোথায়?

শেষের কথাটা সালমা বেগমের উদ্দেশ্যে বললেন মনোয়ারা বেগম। সালমা বেগমের মুখে নিমি’ষেই আঁধার নেমে এলো। চোখ মুখ মলিন করে অপ’রাধীর সুরে বললেন,
“রনিতকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছি। ওর মতো ছেলের আমার দরকার নেই। যার জন্য আমাদের বাড়ির বউয়ের সম্মান নিয়ে টানা’টানি হবে তার মতো ছেলের এই বাড়িতে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।

তানিয়া হত’ভম্ব হয়ে তাকাল। সালমা বেগমের কথাটা ঠিক হজম করতে পারছে না। কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না সালমা বেগম এই কথাটা বলেছে। উনি নিজের ছেলের বিপ’ক্ষে কথা বলছেন ভাবতেই কেমন অলৌকিক ঘটনা মনে হয়। সালমা বেগমের কথায় মনোয়ারা বেগম দুঃ’খী দুঃ’খী ভাব নিয়ে বললেন,
“আহারে! ছেলেকে কতো ক’ষ্টে বাড়ি থেকে বের দিতে হয় আমি বুঝতে পারছি। ছেলেটা যখন ভুল বুঝতে পারবে তখন ফিরে আসতে বলো কেমন?

রাফসান চোখ মুখ শ’ক্ত করে মনোয়ারা বেগমের আর সালমা বেগমের কথা শুনছে। মনোয়ারা বেগম এবার আবারো বলে উঠলেন,
“রনিত যখন বাড়িতে নেই তাহলে আমি যতদিন থাকি ততদিন আগের মতো একসাথে থাকলে হবে না? আলাদা আর কি? আলাদা থাকলে সালমা-ই আলাদা থাকবে। সালমা তো কোন দো’ষ করেনি। তাহলে ওকে আলাদা রাখার কি দরকার? এখন আগের মতো থাকলেই তো হয়। তোমাদের আলাদা দেখে ঠিক মানতে পারছি না।

রাফসান কড়া গলায় কিছু বলতে নিবে তখনই রিতা মায়ের কথায় অস’হ্য হয়ে বলল,
“একটা প্রবাদ আছে না? ‘যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়া পড়শীর ঘুম নেই ‘। তোমার ব্যাপারটা ঠিক তেমন হয়ে যাচ্ছে না আম্মু? ফুফুর বাড়ি, ফুফুর সংসার। ফুফু যেখানে সবকিছু মেনে নিয়েছে সেখানে এতোদিন পর এসে তোমার ক’ষ্ট হচ্ছে। ব্যাপারটা হাস্য’কর হয়ে যাচ্ছে না?

মনোয়ারা বেগম জ্ব’লত চোখে রিতার দিকে তাকাল। রিমাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল। রিতার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ঠা’স করে রিতার গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। উপ’স্থিত সকলে যেন আহা’ম্মক বনে গেল। রিতা ছল’ছল দৃষ্টিতে তাকাতেই মনোয়ারা বেগম বলে উঠলেন,
“খুব কথা শিখেছিস তাই না? মুখে মুখে কথা বলতে শিখে গেছিস। তোর ফুফু কিছু বলতে আমায়? সেখানে তুই কেন কথা বলেছিস? বেয়া’দব মেয়ে।

আমেনা বেগম রিতাকে এসে ধরলেন। মনোয়ারা বেগমের উদ্দেশ্যে বললেন,
“আপনি রিতাকে মারছেন কেন? ছোট মানুষ বুঝতে পারেনি। এর জন্য এভাবে মারবেন?

“মারব না তো আদর করবো? কথাটা কি বলেছে? যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা। কি বলেছি আমি? রনিতের কাজের জন্য তোমরা আলাদা থাকছো আলাদা খাচ্ছ। রনিত এখন বাড়িতে নেই। এখন তো আলাদা থাকার কোনো মানে হয়। সালমা একা একা কি করবে? এখন আলাদা থাকা মানে তো সালমাকে আলাদা করে রাখা। তাই আমি বলেছি আমি যতদিন থাকি ততদিন যেন একসাথে থাকো। আমি চলে গেলে তো বলব না একসাথে থাকার কথা।

আমেনা বেগম মনোয়ারার কথায় রাজি হলেন। কি দরকার মন কষা’কষি করার। কয়টা দিনেরই তো ব্যাপার। তাছাড়া রনিত এখন বাড়িতে নেই। (লক্ষী দেব -Luxmi deb পেইজে পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে) কোনো ভয়ও নেই। আমেনা বেগম মনোয়ারা বেগমের কথায় সায় দিয়ে বললেন,
“ঠিক আছে। এই কয়টা দিন না হয় একসাথেই থাকবো।

আমেনা বেগমের কথায় মনোয়ারা বেগম, সালমা বেগমের মুখে হাসি ফুটল।
_______________
রাফসান রান্নাঘরের দরজার ঠেস দিয়ে দাঁড়াল। চোখ দুটো তানিয়ার দিকে নি’বদ্ধ। তানিয়া রান্নাঘরের বেসিনে থালা-বাসন ধুচ্ছে। রাফসান যে এখানে এসেছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। রাফসান দরজার ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
“সারাদিন কি এতো কাজ করো? যে এখনও কাজ করতেই হচ্ছে।

আচমকা রাফসানের ক’ন্ঠে তানিয়া ভড়কে যায়। মাথা ঘুরিয়ে রাফসানকে দেখে স্ব’স্তির শ্বাস ফেলে। আবারো নিজের কাজে মন দিয়ে বলে,
“যখনের যেই কাজ তখন তো সেই কাজই করতে হবে। খাওয়ার আগে তো আর বাসন ধুতে পারব না। খাওয়া শেষ হলে ধুতে হবে। আমি এখন তাই করছি।

রাফসান দরজা থেকে ভেতরে গেল। তানিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“একটু তাড়াতাড়ি করো না।

তানিয়া ভ্রুঁ কুঁচকে ফেলল। রাফসানের এমন তাড়াহুড়ো করার কারণ বুঝতে পারল না। রাফসানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্না’তক ক’ন্ঠে বলল,
“কেন? এতো তাড়াতাড়ি করে কী হবে?

রাফসান মৃদু হেসে ঝটপট জবাব দিল,
“আমি ঘুমাবো।

তানিয়া অবাক হলো। ঘুমাবে ভালো কথা। আমি কী ধরে রেখেছি নাকি। ঘুমালে আমি কি করবো? তানিয়া প্রশ্নগুলো ভেবে রাফসানকে বলল,
“আপনার ঘুমাতে হলে আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। এখানে কেন এসেছেন?

“কীভাবে ঘুমাবো? ঘুমের ঔষুধ তো রান্নাঘরে। তাহলে ঘুমাবো কি করে বলো?

তানিয়া রাফসানের কথার ই’ঙ্গিতটা বুঝতে পেরে দুচোখ বন্ধ করে ফেলল। কয়েক সেকেন্ড পার হয়ে যেতেই চোখ মেলে তাকিয়ে বলল,
“আপনি এসব না বলে এখন রুমে যান তো।

তানিয়ার কথায় রাফসান হেসে উঠল। হাসি থামিয়ে বলল,
“আচ্ছা যাচ্ছি।

রাফসান চলে যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পর তানিয়া রুমে গেল। রাফসান তারই অপেক্ষায় ছিল। তানিয়া বিছানায় গিয়ে বসে রাফসানকে প্রশ্ন করল,
“মামী আপনার সাথে তো রিমা আপুর বিয়ের কথা বলেছিল। আপনি রাজী হলেন না কেন?

“রিমাকে বিয়ে করলে তোমাকে পেতাম না তাই।

তানিয়া ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে রাফসানের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“ধুর! এসব উল্টা-পাল্টা কথা বাদ দিয়ে বলুন তো কেন রাজী হননি।

রাফসান তানিয়ার কথার জবাব দিল না। বিছানা থেকে উঠে গেল। তানিয়া প্রশ্না’তক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। রাফসান রুমের লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় এলো। তানিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“রিমাকে বউ হিসেবে পছন্দ হয়নি তাই। এখন আর একটা প্রশ্নও করবেন না। প্রচুর ঘুম পেয়েছে ঘুমাবো আমি।

#চলবে